বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ হলো বাংলাদেশের বগুড়া জেলার শাজাহানপুর উপজেলার বগুড়া সেনানিবাস এর অভ্যন্তরে অবস্থিত একটি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
নীতিবাক্য | "হে প্রভু, আমাকে জ্ঞান দাও" |
---|---|
ধরন | প্রা, বিদ্যালয় সংযুক্ত উচ্চ বিদ্যালয় |
স্থাপিত | ১৯৭৯ |
অধ্যক্ষ | কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ, বিপিএম, বিজিওএম, জি |
শিক্ষার্থী | ৫৯৭৬ (ডিসেম্বর,২০২২-এর হিসাবানুসারে) |
অবস্থান | বগুড়া সেনানিবাস, মাঝিড়া, বগুড়া, বাংলাদেশ |
ওয়েবসাইট | bcpsc |
সেনানিবাসে কর্মরত সেনাসদস্যদের সন্তান-সন্ততি ও পোষ্যদের যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদানের জন্য অন্যান্য সেনানিবাসের মতো বগুড়া সেনানিবাসে ১৯৭৯ সালে ‘ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠানটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সেনানিবাসসমূহ মূল শহর হতে দূরবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে উন্নীত হয়। ‘বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ’ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে অন্যতম এবং উত্তরবঙ্গের একটি স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে শ্রেণি কার্যক্রমকে প্রভাতি ও দিবা দুই শাখায় বিভক্ত করা হয়েছে। এর আওতায় নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণিকে প্রভাতি শাখায় এবং ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিকে দিবা শাখার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সকাল ৭.৩০ থেকে ১০.৪০ পর্যন্ত প্রভাতি শাখা এবং ১১.০০ থেকে ৩.৩০ ঘটিকা পর্যন্ত দিবা শাখার ক্লাস পরিচালিত হয়। এছাড়া কলেজ শাখায় একটি শিফটেই ৮.৩০ থেকে ২.০০ পর্যন্ত ক্লাস পরিচালিত হয়। প্রতিটি শাখা, শ্রেণি ও ফরম যথাক্রমে উপাধ্যক্ষ, ইনচার্জ ও শ্রেণিশিক্ষকের তত্ত্বাবধাননে পরিচালিত হয়। সময়োপযোগী পাঠদান ও শিক্ষার্থীর শিক্ষণ কার্যক্রমকে ফলপ্রসূ করতে প্রতিষ্ঠানের শ্রেণীকক্ষসমূহকে সম্পূর্ণ মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষে পরিণত করা হয়েছে। এর সাথে যুক্ত করা হয়েছে হাই ডেফিনিশন সাউন্ড সিস্টেম। ফলে একযোগে সকল শ্রেণীকক্ষে যেকোনো নোটিশ প্রদানসহ বিশেষ অবস্থায় শ্রেণীকক্ষে প্রাত্যহিক সমাবেশ আয়োজন করা যায়।
সমগ্র প্রতিষ্ঠানে ১৮৬ জন শিক্ষকমণ্ডলী প্রভাতি, দিবা এবং কলেজ শাখায় দায়িত্বরত রয়েছেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের দাপ্তরিক কাজ পরিচালনার জন্য প্রশাসনিক বিভাগে ১৬১ জন স্টাফ-কর্মচারী রয়েছেন। এছাড়া সমগ্র প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে পরিচালনা পর্ষদ ও সম্পাদনা পর্ষদ। ১১ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ও বগুড়া এরিয়ার কমান্ডার মেজর জেনারেল মোঃ খালেদ-আল-মামুন, পিবিজিএম, এনডিসি, পিএসসি বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের সম্পাদনা পর্ষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। এছাড়া ১১১ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম খায়ের উদ্দীন, এএফডব্লিউসি, পিএসসি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি এবং কর্নেল তুুুুুহিন মোহাম্মদ মাসুদ, বিপিএম, বিজিওএম, জি অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। এঁদের পাশাপাশি দুজন অভিভাবক প্রতিনিধি ও দুজন শিক্ষক প্রতিনিধির সমন্বয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠিত ।
প্রতিষ্ঠানের সহশিক্ষা কার্যক্রমের জন্য রয়েছে বিতর্ক, সাধারণ জ্ঞান, গণিত অলিম্পিয়াড, বিজ্ঞান ক্লাব, ভাষা ক্লাব, তায়কোয়ান্দো, হাতের লেখা, চিত্রাঙ্কন, উপস্থিত বক্তৃতা, নাচ, গান, আবৃত্তি ইত্যাদি বিভিন্ন ক্লাব। প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শিক্ষার্থী এগুলোর যেকোনো একটি ক্লাবের সঙ্গে জড়িত। সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার টিফিনের পরবর্তী দুইটি পিরিয়ডে শিক্ষার্থীদের জন্য ক্লাব অনুযায়ী আলাদা আলাদা 'হবি সোসাইটি' ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি খেলাধুলার জন্য রয়েছে প্রতিষ্ঠানের ফুটবল, ক্রিকেট, বাস্কেটবল ও টেবিল টেনিস দল। এই দলগুলো প্রতিবছর বিভিন্ন আন্তঃক্যান্টনমেন্ট ও আন্তঃপ্রতিষ্ঠান পর্যায়ের খেলায় অংশগ্রহণ করে। এছাড়া অত্র প্রতিষ্ঠানে বিএনসিসি, রোভার স্কাউট ও গার্ল গাইডসের মতো সংগঠনগুলোর শাখা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী এই সকল সংগঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। বিগত বছরগুলোতে বেশ কয়েক বার অত্র প্রতিষ্ঠানের বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট দল বিদেশের মাটিতে এই দেশ ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করেছে। প্রায় প্রতিবছর অত্র প্রতিষ্ঠানের রোভার স্কাউট শাখা হতে এক বা একাধিক শিক্ষার্থী মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট থেকে পিএস (প্রেসিডেন্ট স্কাউট) অ্যাওয়ার্ড লাভ করে। ২০১৮ সালে অত্র প্রতিষ্ঠানের কলেজ শাখার শিক্ষার্থী স্কাউট জুনায়েদ আনজুম পিএস অ্যাওয়ার্ড অর্জনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ২৪তম বিশ্ব স্কাউট জাম্বুরীতে অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করেন।
বর্তমানে বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ এর কলেজ শাখায় (একাদশ ও দ্বাদশ) ৩টি বিভাগ রয়েছে। যথা-
এছাড়া স্কুল শাখায় ৯ম ও ১০ম শ্রেণিতে ২টি বিভাগ রয়েছে। শাখাগুলো হল,
বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের সম্পূর্ণ ক্যাম্পাসের ক্ষেত্রফল ১৪.৫ একর। ক্যাম্পাসে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ শাখা মিলিয়ে মোট ৩ টি ভবন রয়েছে, যেগুলো যথাক্রমে শিক্ষাভবন-১, ২ ও ৩ নামে পরিচিত। প্রতিটি ভবনের সামনে রয়েছে সুবিশাল খেলার মাঠ এবং প্রতিটি ভবনে একটি করে মোট তিনটি লাইব্রেরি ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য বিভিন্ন ল্যাবরেটরি রয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কার্যাদি পরিচালনার জন্য রয়েছে প্রশাসনিক ভবন। প্রতিষ্ঠানটির মূল ফটক প্রতিষ্ঠানের পূর্ব দিকে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানের গাড়িগুলো পার্কিং-এর জন্য রয়েছে পৃথক গ্যারেজ। এছাড়াও রয়েছে মসজিদ, ক্যান্টিন , অডিটোরিয়াম, শহিদ মিনার, অভিভাবক বিশ্রামাগার ও বাস্কেটবল গ্রাউণ্ড। সম্পূর্ণ ক্যাম্পাসটি সিসিটিভি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এটি একটি পরিচ্ছন্ন ও ধূমপানমুক্ত ক্যাম্পাস। প্রতিদিন দক্ষ পরিচ্ছন্ন কর্মী দ্বারা ক্লাসরুম, ভবনের করিডোর, ওয়াশ রুম, খেলার মাঠ ও প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য স্থান পরিষ্কার করা হয়। এর পরিচ্ছন্ন ও সবুজ পরিবেশ যেকোনো কাউকে মুগ্ধ করে তোলে। প্রতিষ্ঠানের বৃক্ষ গুলোর মধ্যে নারকেল, পাম, কাঁঠাল, বড়ই, মেহগনি, কামরাঙ্গা, আমলকী, হরিতকি , তেঁতুল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থানে বাহারি রঙের ও নানা প্রজাতির ফুলের বাগান করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের মালিগণ পরম যত্নের সঙ্গে ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে বাগানগুলোর পরিচর্যা করেন। ২০২০ সালে মাঝিড়া ক্যান্টনমেন্ট ও জাহাঙ্গীরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট-এর সকল মেজর ইউনিটের মাঝে ফুল বাগান প্রতিযোগিতায় বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ ১ম স্থান অধিকার করে।
২০২১ সালে সার্বিক মান বিবেচনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজসমূহের মধ্যে অত্র প্রতিষ্ঠানের স্কুল শাখা ‘১ম রানারআপ’ হিসেবে ২য় স্থান অর্জন করে ও কলেজ শাখা সার্বিক মান বিবেচনায় ৯ম স্থান অর্জন করে। বিগত ২০২০ ও ২০১৯ সালে স্কুল শাখা ‘শ্রেষ্ঠ স্কুল’ হিসেবে ১ম স্থান অর্জন করে ও কলেজ শাখা ‘প্রথম রানারআপ’ হিসেবে ২য় স্থান অর্জন করে। এছাড়াও স্কুল শাখা ২০০৬ সালে ২য় স্থান, ২০০৭ সালে ১ম স্থান, ২০১১ সালে ১ম স্থান, ২০১২ সালে ২য় স্থান, ২০১৩ সালে ১ম স্থান, ২০১৪ সালে ২য় স্থান, ২০১৫ সালে ৩য় স্থান, ২০১৬ সালে ২য় স্থান, ২০১৭ সালে ২য় স্থান, ২০১৮ সালে ২য় স্থান এবং কলেজ শাখা ২০১০ সালে ২য় স্থান, ২০১১ সালে ১ম স্থান, ২০১২ সালে ২য় স্থান, ২০১৩ সালে ৩য় স্থান অর্জন করে। বর্তমানে আন্তঃক্যান্টনমেন্ট সহ উপজেলা, জেলা, বিভাগ এমনকি জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অধিকার করে অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছে। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে চ্যানেল আই-এ প্রচারিত ‘ইস্পাহানি মির্জাপুর বাংলাবিদ’ প্রতিযোগিতার ৩য় বর্ষের ‘সেরা বাংলাবিদ’ নির্বাচিত সাজেদুর রহমান শাহেদ অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। ২০২২ সালে NASA কর্তৃক আয়োজিত 'International Talent Hunt Competition' এ সমগ্র বাংলাদেশের মাঝে ১ম স্থান অর্জন করে আমেরিকায় প্র্রশিক্ষণ ও শিক্ষাবৃত্তির সুযোগ লাভ করেন অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী জারিফ-জাবির আখতার। এছাড়া ২০১৮ সালে রাশিয়ার মস্কোতে অনুষ্ঠিত Aloha Mental Arithmetic International Competition-এ গ্র্যাণ্ড চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে অত্র প্রতিষ্ঠানের ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থী তামজিদ মিরাজ। সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি একাডেমিক কার্যক্রম ও বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলেও 'বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ' এক উজ্জ্বল নাম। পিইসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় প্রতিষ্ঠানটি বেশ কয়েক বার ‘রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড’-এ প্রথম স্থান অধিকার করেছে। বিগত ২০১৯ সালের পিইসি, জেএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় যথাক্রমে ৯১.৮৮%, ৮০.২৯% ও ৫০.৩৩% এবং ২০২০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ৯৬.৮৬% A+ সহ শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। এছাড়া প্রতিবছর অত্র প্রতিষ্ঠান থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শিক্ষার্থী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, বুয়েট, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ইত্যাদি ক্ষেত্রে পড়াশোনা ও চাকরির সুযোগ পেয়ে থাকে।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.