পাকিস্তান স্মৃতিস্তম্ভ (উর্দু: یادبود پاکستان) হলো পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের পশ্চিম শাকারপারিয়ান টিলায় অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ এবং ঐতিহ্য জাদুঘর। পাকিস্তানি জাতির ঐক্যের স্মারক হিসেবে স্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়। পাকিস্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য বর্তমানকে উৎসর্গকারী পাকিস্তানের জনগণের স্মরণে এটি নির্মিত হয়। উঁচু এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় ইসলামাবাদ-রাওয়ালপিন্ডি মহানগর এলাকার বিশাল অংশ জুড়ে স্মৃতিস্তম্ভটি দৃশ্যমান হয়। এছাড়া এটি পাকিস্তানের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ।
পাকিস্তান স্মৃতিস্তম্ভ পাকিস্তান মনুমেন্ট | |
---|---|
یادبود پاکستان | |
সাধারণ তথ্য | |
ধরন | সাধারণের জন্য উন্মুক্ত স্মৃতিস্তম্ভ |
স্থাপত্য রীতি | মুঘল |
অবস্থান | ইসলামাবাদ, পাকিস্তান |
স্থানাঙ্ক | ৩৩°৪১′৩৬″ উত্তর ৭৩°০৪′০৬″ পূর্ব / ৩৩.৬৯৩৪৫° উত্তর ৭৩.০৬৮৩০৯° পূর্ব |
নির্মাণকাজের আরম্ভ | ২৫ মে ২০০৪ |
নির্মাণকাজের সমাপ্তি | ২৩ মে ২০০৭ |
স্বত্বাধিকারী | সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় |
ভূমিমালিক | ইসলামাবাদ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ |
নকশা এবং নির্মাণ | |
স্থপতি | আরিফ মাসুদ (শিল্পকর্ম: গুছরুং) (মার্বেল ও গ্রানাইট কর্ম: স্টোন ফোরেভার প্রাইভেট লিমিটেড) |
প্রকৌশলী | সৈয়দ মাহমুদ খালিদ |
কাঠামো প্রকৌশলী | মুশতাক ও বিলাল |
অন্যান্য নকশাকার | খিজর হায়াত আসগর |
প্রধান ঠিকাদার | ইউনিভার্সাল কর্পোরেশন (প্রকল্প ব্যবস্থাপক: ব্রিগেডিয়ার মকবুল আহমদ খান এসআই(এম)) |
পাকিস্তান স্মৃতিস্তম্ভ প্রায় ২.৮ হেক্টর (৬.৯ একর) জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত। এর স্থাপত্যের মূল ধারণা ভারতীয় উপমহাদেশের মুঘল স্থাপত্যশৈলীতে অঙ্গীভূত। স্মৃতিস্তম্ভের পাপড়ি সদৃশ কাঠামো ঐতিহ্যবাহী মুঘল মুকারনাস থেকে আগত। স্থপতির ভাষ্যে, "আমাদের ইতিহাস থেকে শেখা উচিত, কিন্তু ইতিহাসে আবদ্ধ থাকা উচিত নয়।" তিনি ঐতিহাসিক মুকারনাস কাঠামোকে বর্তমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করে আধুনিক রূপ দান করেন। ফলস্বরূপ পাপড়িসদৃশ কাঠামো পাকিস্তানের জনগণের ঐক্য ও একতায় জোর দেয়। চারটি পাপড়ি পাকিস্তানের চারটি প্রদেশের বদলে (ভুল ব্যাখ্যা অনুসারে) পাকিস্তানের চারটি ভিন্ন সংস্কৃতির জনগণের প্রতীকায়ন করে। চারটি বৃহৎ পাপড়ি চারটি বৃহৎ জাতি - পাঞ্জাবি, বেলুচ, সিন্ধি ও পাঠান জাতিকে নির্দেশ করে। তিনটি ছোট পাপড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, আজাদ কাশ্মীর ও গিলগিত বালতিস্তানের পরিচয় বহন করে। এই সাতটি পাপড়ি একে অপরের থেকে পৃথক থেকে পাকিস্তানিদের ঐক্যের নিদর্শন বহন করে। একত্রিত থেকে এরা পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার চাঁদ-তারাকে ধারণ করে। স্তম্ভে পতাকার তারাটি চকচকে গ্রানাইট পাথরে নির্মিত, এবং এর মাঝের সোনালি তারা পাকিস্তানের জন্য জীবন উৎসর্গকারী ব্যক্তিদের প্রতিনিধিত্ব করে। স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি অর্ধচন্দ্রে কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ ও আল্লামা ইকবালের অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য খোদাইকৃত। পাপড়িগুলো গ্রানাইটে (প্রসারিত খিলান থেকে ঝুলন্ত, এশিয়ার সর্ববৃহৎগুলোর অন্যতম) নির্মিত, এবং এর ভেতরের দেয়ালে পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থান ও ভূ-বৈশিষ্ট্যের শিল্পকর্ম সংবলিত। এই স্থান ও ভূ-বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: লাহোর দুর্গ, বাদশাহি মসজিদ, খাইবার পাস ও মিনারে পাকিস্তান। সাধারণের স্মৃতিস্তম্ভের সাথে এখানে একটি জাদুঘরও আছে, যা পাকিস্তান সৃষ্টির কাহিনী ও ইতিহাস বর্ণনা করে। এই দুইটি স্থাপনা একটি দীর্ঘ সংযোগ পথ দ্বারা সংযুক্ত, যা ফ্রিডম প্লাজা নামে পরিচিত। মূল প্লাজার প্রবেশমুখের প্রধান ফলকে স্থপতি আরিফ মাসুদের নাম খোদাই করা হলেও, তিনি এর নির্মাণকাজে অংশ নেওয়া সকল শ্রমিকদের সম্মান প্রদানের জন্য ফ্রিডম প্লাজার দুই পাশের লম্বা দেওয়ালে তাদের হাতের ছাপ সংরক্ষণ করেন। কমপ্লেক্সের সবচেয়ে দূরবর্তী প্রান্তে অবস্থিত পরিদর্শন মঞ্চ থেকে ইসলামাবাদ শহরকে পাখির দৃষ্টিতে দেখার সুযোগও রয়েছে।
স্মৃতিস্তম্ভের পাশেই একটি মোমের জাদুঘরসহ পাকিস্তান স্মৃতিস্তম্ভ জাদুঘর অবস্থিত, যেখানে পাকিস্তান আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা প্রদর্শন করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য সুবিধার মধ্যে রয়েছে একটি রেফারেন্স গ্রন্থাগার, অডিও-ভিজুয়াল আর্কাইভ ও অধিবেশন কক্ষের সাথে প্যানোরামা হল নামে পরিচিত ৬২ জনের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন মিলনায়তন। দৈনিক গড়ে ১৫০০ জন পর্যটকসহ ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে কমপ্লেক্সে মোট প্রায় ০.৫৭ মিলিয়ন দর্শনার্থী যাতায়াত করে। আকাশ থেকে স্মৃতিস্তম্ববটিকে অর্ধচন্দ্র (পাপড়িসদৃশ দেয়াল) ও তারার (কেন্দ্রীয় স্থাপনা) মতো দেখা যায়, যা পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার চাঁদ তারা নির্দেশ করে। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে এর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ মার্চ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জেনারেল পারভেজ মোশাররফ এর উদ্বোধন করেন।
২০০২ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি পারভেজ মোশাররফ ও তার সাথে মমতাজ মুফতির ছেলে উক্সি মুফতি পাকিস্তানের জন্য একটি জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভের পরিকল্পনা করেন। রাষ্ট্রপতি মোশাররফ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে পাকিস্তান স্থপতি ও পৌর পরিকল্পনাবিদ কাউন্সিল এর মাধ্যমে স্তম্ভের নির্মাণ কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম পাকিস্তান রাষ্ট্রের জনগণের শক্তি, ঐক্য ও আত্মদানকে প্রতীকায়িত করার জন্য একটি স্থাপনার নকশা আহ্বান করা হয়। এর মধ্যে মোট ২১টি নকশা জমা দেওয়া হয় এবং ক্ষুদ্র তালিকায় ৩টিকে নির্বাচন করা হয়। সবশেষে স্থপতি আরিফ মাসুদের নকশাটিকে চূড়ান্ত করা হয়।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article পাকিস্তান স্মৃতিস্তম্ভ, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.