নেপালি সেনাবাহিনী (নেপালি: नेपाली सेना, অনুবাদ 'নেপালী সেনা') হচ্ছে নেপালের একমাত্র সামরিক বাহিনী; এটা নেপালি সশস্ত্র বাহিনী হিসেবেও পরিচিত, নেপাল একটি স্থলবদ্ধ রাষ্ট্র, দেশটির কোনো নৌবাহিনী নেই এবং কোনো বিমান বাহিনীও নেই; নেপালি সেনাবাহিনীই নেপালের একমাত্র সশস্ত্র বাহিনী। ১৭৬২ সালে নেপালের রাজকীয় শাসক পৃথ্বীনারায়ণ শাহ এই সেনাবাহিনী তৈরি করেছিলেন। ২০০৮ সালে পর্যন্ত এই সেনাবাহিনীর নাম 'রাজকীয় নেপালি সেনা' ছিলো। ২০০৮ সালের ২৮শে মে রাজকীয় নেপালি সেনা 'নেপালি সেনা' হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এই সেনাবাহিনী কখনো ব্রিটিশদের প্রশিক্ষণ পায়নি কারণ নেপাল রাষ্ট্রটি কখনো ব্রিটিশদের উপনিবেশ ছিলোনা যদিও নেপালের গোর্খারা ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে সৈনিক হতো এবং সেনাবাহিনীটিতে গোর্খাদের জন্য আলাদা রেজিমেন্ট গঠন করা হয়েছিলো তবে সেটা নেপাল তার নিজস্ব সেনাবাহিনীতে আত্তীকরণ করেনি এবং নেপালি সেনাবাহিনী ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর অনুকরণ করে গড়ে ওঠেনি যদিও বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে নেপালের তরুণদেরকে যুক্তরাজ্যের স্যান্ডহার্স্টে অফিসার প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো শুরু হয়েছিলো। নেপালি সেনাবাহিনীতে কোনো ধরণের ইংরেজি শব্দ ব্যবহৃত হয়না, সকল সৈনিক এবং কর্মকর্তাদের পদবীও নেপালি ভাষাতে চলে যদিও ইংরেজি ভাষাতে পদবীগুলোর অনুবাদ আছে।
নেপালী সেনা | |
---|---|
नेपाली सेना | |
প্রতিষ্ঠা | ১৭৬২ |
দেশ | নেপাল |
ধরন | সামরিক বাহিনী |
ভূমিকা | স্থল যুদ্ধ |
আকার | ৯৮,০০০ সৈন্য |
অংশীদার | নেপালি সশস্ত্র বাহিনী |
সদর দপ্তর | জাঙ্গি আড্ডা, ভদ্রকলী, কাঠমান্ডু, বাগমতী প্রদেশ |
নীতিবাক্য | ভীতু থাকার চেয়ে যুদ্ধ করে বীরের মতো মরা ভালো |
বার্ষিকী | মহা শিবরাত্রি |
যুদ্ধসমূহ | তালিকা:
|
ওয়েবসাইট | nepalarmy.mil.np |
কমান্ডার | |
নেপালি সেনাবাহিনী প্রধান | জেনারেল প্রভু রাম শর্মা |
উপ সেনা প্রধান | লেঃ জেনারেল সরোজ প্রতাপ রানা |
সহকারী সেনা প্রধান | লেঃ জেনারেল সিতারাম খাদকা |
উল্লেখযোগ্য কমান্ডার |
|
নেপালি সেনাবাহিনীতে মোট আটটি ডিভিশন ফরমেশন রয়েছে যদিও এগুলোর গঠন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর মতো নয় এবং নেপালি সেনাবাহিনীতে কোনো ব্রিটিশ শৈলীর রেজিমেন্ট বা কোর নেই।
নেপাল একীকরণ অভিযান ছিলো নেপালি সেনাবাহিনীর ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। যেহেতু শক্তিশালী সেনাবাহিনী ছাড়া একীকরণ সম্ভব ছিল না, তাই সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনা ব্যতিক্রমী হতে হয়েছিলো। কাঠমান্ডুর প্রমিত মল্ল-যুগের মন্দির ছাড়াও সেনাবাহিনী গোর্খায় নিজেদের সংগঠিত করেছিলো। যুদ্ধের উপকরণ তৈরির জন্য কারিগরি পেশার লোক ও বিশেষজ্ঞ আনতে হতো। ১৭৪৪ সালে গোর্খালি সৈন্যরা কাঠমান্ডুর পার্বত্য উত্তরের অংশ (কান্তিপুর) নুওয়াকোট দখল করার পর, গোর্খালি সেনাবাহিনী রাজকীয় নেপালি সেনা নামে পরিচিত হয়।
তাদের কর্মদক্ষতা তাদের শত্রুদের এতটাই প্রভাবিত করেছিলো যে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের বাহিনীতে নেপালি সৈন্যদের নিয়োগ করতে শুরু করে। দেশীয় ব্রিটিশ সৈন্যরা নতুন সৈন্যদের "গুর্খা" বলে ডাকতো। ১৮০৯ সালে গুর্খা-শিখ যুদ্ধ শুরু হয়।
প্রাক্তন ভারতীয় সেনাপ্রধান এবং ফিল্ড মার্শাল, শ্যাম মানেকশ’ একবার বলেছিলেন যে: "যদি কেউ বলে যে সে মরতে ভয় পায় না, সে হয় মিথ্যা বলছে নয়তো সে গোর্খালি।"
২০০৬ সালের আগে, রাজকীয় নেপালি সেনা নেপালের রাজার নিয়ন্ত্রণে ছিল। ২০০৬ সালের গণতন্ত্র আন্দোলনের অনুসরণ করে ১৮ মে, নেপালি সংসদ কর্তৃক রাজকীয় ক্ষমতা হ্রাস করে একটি বিল পাস করা হয়েছিলো, যার মধ্যে সেনাবাহিনীর নাম পরিবর্তন করে কেবল নেপালি সেনাবাহিনী রাখা ছিলো।
২০০৪ সালে, নেপাল তার সামরিক বাহিনীতে ৯৯.২ মিলিয়ন ডলার (তাদের জিডিপির ১.৫%) ব্যয় করেছিলো। ২০০২ এবং ২০০৬ সালের মধ্যে, রাজকীয় নেপালি সেনা নেপালি গৃহযুদ্ধে জড়িত ছিল। ২০০৬ সালের গণতন্ত্র আন্দোলনের সময় সেনাদেরকে গণতন্ত্রপন্থী প্রতিবাদকারীদের দমন করতেও ব্যবহার করা হয়েছিলো।
নেপালি সেনাবাহিনীর সব শাখাই রাজকীয় নেপালি সেনাবাহিনীর তৈরি করা অষ্টাদশ এবং উনবিংশ শতাব্দীতে, যদিও বিংশ শতাব্দীতে কয়েকটি নতুন শাখা তৈরি করা হয়। এছাড়াও ১৯৬৫ সালে নেপালি সেনাবাহিনী বিমান শাখা নামের একটি শাখা তৈরি করা হয়।
নেপালি সেনাবাহিনীতে আটটি ডিভিশন আছে, এগুলোকে নেপালি ভাষায় 'পৃতনা' (নেপালি: पृतना) বলা হয়। ২০০১ সালের ২৯শে নভেম্বর সর্বপ্রথম উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় ডিভিশন নেপালিদের নিজস্ব রীতি অনুয়ায়ী তৈরি করা হয়, এর আগে নেপালি সেনাবাহিনীর কোনো ডিভিশন ফরমেশন ছিলোনা।
এছাড়াও সেনা সদরের অধীনে (সরাসরি অধীনে) ফরমেশন রয়েছে, এগুলো হলোঃ
নেপালের সেনাপ্রধান ১৭৬২ সাল থেকে রাজকীয় পরিবারের সদস্যরা (বেসামরিক) হতেন; ১৯৬০-এর দশকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মতো সামরিক কর্মকর্তাদেরকে সেনাপ্রধান করা হবে; ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমীতে ১৯৬৭ সালে সর্বপ্রথম একটি ক্যাডেট ব্যাচ প্রশিক্ষণের জন্য যায় (এর আগে পঞ্চাশের দশকে স্বল্প পরিমাণে কিছু নেপালি তরুণ সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য ব্রিটেনে প্রেরিত হতো) এবং ২০০৬ সালে রুকমানগাদ কাটাওয়াল ঐ ব্যাচ থেকে কমিশনপ্রাপ্ত (১৯৬৯ সালে কমিশনপ্রাপ্তি) প্রথম নেপালি সামরিক প্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন, এর আগে নেপালের একজন রাজকীয় পরিবারের সদস্যই নেপালের সেনাপ্রধান হতেন তাছাড়া ২০০৮ সাল পর্যন্ত নেপাল সেনাবাহিনীর নাম 'রাজকীয় নেপালি সেনা' ছিলো। ১৯৭৯ সাল থেকে নেপালে সামরিক কর্মকর্তারাই নেপালের সেনাপ্রধান হচ্ছেন। নেপালের সেনাপ্রধানকে নেপালি ভাষায় প্রধান সেনাপতি মহারথী (নেপালি: प्रधान सेनापति महारथी) বলা হয়। অন্যদিকে প্রায়শই ভারতীয় সেনাপ্রধানদেরকে নেপালি সেনাবাহিনী তাদের 'জেনারেল' পদমর্যাদা দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করে। আবার নেপালি সেনাপ্রধানদেরকেও ভারতের সম্মানসূচক 'জেনারেল' পদমর্যাদা প্রদান করা হয়। এটা নেপাল এবং ভারত দুই দেশের একটা প্রথা হিসেবে চালু করা হয়েছে।
রানা রাজবংশের শাসনের আগে নেপালি সেনাবাহিনীর প্রধানরা বেশিরভাগই গোর্খা রাজ্যের সম্ভ্রান্ত ছেত্রী পরিবার যেমন পান্ডে রাজবংশ, কুনওয়ার পরিবার, বাসন্যাত রাজবংশ এবং থাপা রাজবংশ থেকে এসেছিলেন। শাহ রাজতন্ত্রের সময়, কর্মকর্তারা এই সম্ভ্রান্ত পরিবার থেকে তৈরি হয়েছিল। রানা রাজবংশের সময়, রানারা এই অবস্থানটিকে তাদের জন্মগত অধিকার বলে দাবি করেছিল। এর প্রথম সেনাপ্রধান ছিলেন রাজা পৃথ্বী নারায়ণ শাহ যিনি সেনাবাহিনীর খসড়া প্রণয়ন ও কমান্ড করেছিলেন। প্রথম বেসামরিক সেনাপ্রধান ছিলেন কালু পান্ডে, একজন কাজী যিনি একীকরণ অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। সেনাবাহিনীর দায়িত্ব ও দায়িত্ব পালনের কারণে তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে বিবেচিত হন, আনুষ্ঠানিক উপাধি দ্বারা নয়।
ভীমসেন থাপা, ১৮০৬ থেকে ১৮৩৭ সাল পর্যন্ত মুখতিয়ার, প্রথম ব্যক্তি যিনি সেনাবাহিনীর প্রধান হিসাবে সর্বাধিনায়ক পেয়েছিলেন। রাজা রাজেন্দ্র বিক্রম শাহ ভীমসেনকে এই পদে নিযুক্ত করেন এবং জাতির জন্য তাঁর দীর্ঘ সেবার জন্য তাঁর প্রশংসা করেন। যাইহোক, ১৮৩৭ সালের ১৪ জুন, রাজা বিভিন্ন দরবারের দায়িত্বে নিযুক্ত সমস্ত ব্যাটালিয়নের কমান্ড গ্রহণ করেন এবং সর্বাধিনায়ক হন। ১৮৩৭ সালে থাপাদের কারারুদ্ধ হওয়ার পরপরই, দলভঞ্জন পান্ডে এবং রানা জং পান্ডে সামরিক প্রশাসনের যুগ্ম প্রধান ছিলেন। তিন মাস পর ১৮৩৭ সালের অক্টোবরে রানা জংকে অপসারণ করা হয়।
মুখতিয়ার ভীমসেনের কমান্ডের পর থেকে, ১৯৫১ সাল পর্যন্ত মাত্র সাতজন সেনাপ্রধান ছিলেন অ-রানা ছেত্রী, যার মধ্যে শাহসহ ছিলেন। জেনারেল প্রতাপ সিং শাহের শাসনামল থেকে সেনাপ্রধান (সিওএএস) দ্বারা কমান্ডার-ইন-চিফ পদবি প্রতিস্থাপিত হয়েছিলো।
নেপালি সেনাবাহিনী পদবীগুলো নেপালি ঐতিহ্য অনুযায়ীই তৈরি এবং ব্রিটিশ শৈলীর পদবীপদ্ধতি নেপালে নেই; যদিও ব্রিটিশ শৈলীর পদবীগুলোর সমপর্যায়ের পদবী রয়েছে সেনাবাহিনীটিতে, সেনাবাহিনীটিতে নিজস্ব শৈলীর নাম এবং পদচিহ্ন ব্যবহার করা হয়।
নেপালের সরকার জার্মানী, ব্রিটেন, সুইডেন ইত্যাদি দেশ থেকে বন্দুক, কামান এবং সাঁজোয়া যান কেনে; তাছাড়া তারা চীনা অস্ত্রও ব্যবহার করে; ১৯৬০ সালে নেপালি সেনাবাহিনী সর্বপ্রথম বেলজিয়াম থেকে বন্দুক কিনেছিলো।
নেপালি সেনাবাহিনীর অনেক যুদ্ধের অভিজ্ঞতা রয়েছে; নেপালি সেনারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলো এবং ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছিলো নেপালি সৈন্যরা।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article নেপালি সেনাবাহিনী, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.