তরঙ্গ ব্যতিচার: আলোর ব্যাতিচার

পদার্থবিজ্ঞানে ব্যতিচার (ইংরেজি: Interference) বলতে দুটি তরঙ্গের উপরিপাতনের ফলে সৃষ্ট নতুন তরঙ্গের বিস্তারের পর্যায়ক্রমিক হ্রাস-বৃদ্ধির ঘটনাকে বোঝানো হয়। এটি দুটি তরঙ্গের মধ্যকার একটি আন্তঃক্রিয়া যেখানে তরঙ্গ দুটি সুসংগত উৎস থেকে নির্গত হয়ে থাকে। এই ঘটনাটি তখনই সম্ভব হয় যদি তরঙ্গদুটির উৎস একই হয়ে থাকে বা তাদের কম্পাঙ্ক প্রায় কাছাকাছি মানের হয়। ব্যতিচার যেকোন ধরনের তরঙ্গের ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে। যেমনঃ আলো, শব্দ, বেতার তরঙ্গ, তারে সৃষ্ট তরঙ্গ, জলের উপরিতলের তরঙ্গ ইত্যাদি।

তরঙ্গ ব্যতিচার: আলোর ব্যতিচার, কার্যপ্রনালী, ব্যতিচারের শর্তাবলি
পানির উপরিতলে দুটি উৎসের দ্বারা ব্যতিচার সৃষ্টি।

আলোর ব্যতিচার

দুটি সুসঙ্গত উৎস থেকে নিঃসৃত দুটি আলোক তরঙ্গের উপরিপাতনের ফলে, আলোক তীব্রতার হ্রাস-বৃদ্ধির ঘটনাকে, আলোর ব্যতিচার (Light interference) বলে। এটি মূলত দুই প্রকার। যথাঃ

১.গঠনমূলক ব্যতিচার (Costructive interference) দুটি সুসঙ্গত উৎস থেকে নিঃসৃত একই বিস্তার ও তরঙ্গদৈর্ঘ্যের দুটি তরঙ্গ সমদশায় উপরিপাতিত(মিলিত) হলে, আলোক উজ্জ্বল অঞ্চল সৃষ্টি হয়, একে গঠনমূলক ব্যতিচার বলে! অর্থাৎ যখন একই কম্পাঙ্কের দুটি তরঙ্গ সমদশায় উপরিপাতিত হয়, তখন গঠনমূলক ব্যতিচার তৈরি হয়। ২.ধ্বংসাত্মক ব্যতিচার (Destructive interference): দুটি সুসঙ্গত উৎস থেকে নিঃসৃত একই বিস্তার ও তরঙ্গদৈর্ঘ্যের দুটি তরঙ্গ বিপরীত দশায় উপরিপাতিত(মিলিত) হলে, অন্ধকার অঞ্চল সৃষ্টি হয়, একে ধ্বংসাত্মক ব্যতিচার বলে। অর্থাৎ যখন সুসঙ্গত উৎস থেকে আগত একই কম্পাঙ্কের দুটি তরঙ্গ বিপরীতদশায় উপরিপাতিত হয়, তখন ধ্বংসাত্মক ব্যতিচার তৈরি হয়।

সুতরাং পরীক্ষালব্ধ ফলাফল হলো: গঠনমূলক ব্যতিচার সৃষ্টি হলে আলোক উজ্জ্বল অঞ্চল দেখা যায় এবং ধ্বংসাত্মক ব্যতিচার সৃষ্টি হলে অন্ধকার অঞ্চল দেখা যায়।

কার্যপ্রনালী

তরঙ্গের উপরিপাতনের সূত্রানুযায়ী, দুটি তরঙ্গের উপরিপাতনের ফলে যে নতুন তরঙ্গের সৃষ্টি হয় তার সরণের মান হল- উপরিপাতিত তরঙ্গ দুটির বিস্তারের সমষ্টির সমান। এই কারণে দুটি তরঙ্গ যেসব স্থানে একই দশায় মিলিত হয় সেসকল স্থানে, লব্ধি তরঙ্গের বিস্তার সর্বোচ্চ হয় এবং তীব্রতা বেশি হয়, ফলে আলোক উজ্জ্বল অঞ্চলের সৃষ্টি হয়, যাকে গঠনমূলক ব্যতিচার বলা হয়। দুটি তরঙ্গ বিপরীত দশায় মিলিত হলে, লব্ধি তরঙ্গের বিস্তার সর্বনিম্ন হয় এবং তরঙ্গের তীব্রতা সর্বনিম্ন হয়, ফলে অন্ধকার অঞ্চলের সৃষ্ট হয়, যাকে ধ্বংসাত্মক ব্যতিচার বলা হয়।

উৎপত্তি

দুইটি তরঙ্গের যোগফলের সমীকরন নির্ণয় করে আলোর ব্যতিচার ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। x-অক্ষ বরাবর ডানদিকে প্রবাহিত কোনো সাইন তরঙ্গের বিস্তারকে নিম্নের সমীকরনের মাধ্যমে প্রকাশ করা যেতে পারে

তরঙ্গ ব্যতিচার: আলোর ব্যতিচার, কার্যপ্রনালী, ব্যতিচারের শর্তাবলি 
যেখানে তরঙ্গ ব্যতিচার: আলোর ব্যতিচার, কার্যপ্রনালী, ব্যতিচারের শর্তাবলি  তরঙ্গের বিস্তার, তরঙ্গ ব্যতিচার: আলোর ব্যতিচার, কার্যপ্রনালী, ব্যতিচারের শর্তাবলি  হলো তরঙ্গসংখ্যা এবং তরঙ্গ ব্যতিচার: আলোর ব্যতিচার, কার্যপ্রনালী, ব্যতিচারের শর্তাবলি  হলো তরঙ্গটির কৌণিক কম্পাঙ্ক। ধরা যাক একই বিস্তার ও কম্পাঙ্কবিশিষ্ট আরেকটি তরঙ্গ ভিন্ন দশায় ডানদিকে প্রবাহিত হচ্ছে
তরঙ্গ ব্যতিচার: আলোর ব্যতিচার, কার্যপ্রনালী, ব্যতিচারের শর্তাবলি 
যেখানে তরঙ্গ ব্যতিচার: আলোর ব্যতিচার, কার্যপ্রনালী, ব্যতিচারের শর্তাবলি  হলো রেডিয়ান এককে তরঙ্গদুটির মধ্যে দশা পার্থক্য। তরঙ্গদুটির উপরিপাতনের ফলে নতুন তরঙ্গ উৎপন্ন হবে
তরঙ্গ ব্যতিচার: আলোর ব্যতিচার, কার্যপ্রনালী, ব্যতিচারের শর্তাবলি 
দুইটি কোসাইনের যোগফলের ত্রিকোণমিতিক সমীকরন তরঙ্গ ব্যতিচার: আলোর ব্যতিচার, কার্যপ্রনালী, ব্যতিচারের শর্তাবলি  ব্যবহার করে উপরোক্ত সমীকরণকে লেখা যায়,
তরঙ্গ ব্যতিচার: আলোর ব্যতিচার, কার্যপ্রনালী, ব্যতিচারের শর্তাবলি 
উপরোক্ত সমীকরনটি মূল তরঙ্গের কম্পাঙ্কবিশিষ্ট একটি তরঙ্গকে নির্দেশ করে যা এর উৎস তরঙ্গের ন্যায় ডানদিকে প্রবাহিত হয় এবং যার বিস্তার তরঙ্গ ব্যতিচার: আলোর ব্যতিচার, কার্যপ্রনালী, ব্যতিচারের শর্তাবলি  এর কোসাইনের সমানুপাতিক।
  • গঠনমূলক ব্যতিচার: যদি দশা পার্থক্য π এর জোড় গুণিতক হয়: তরঙ্গ ব্যতিচার: আলোর ব্যতিচার, কার্যপ্রনালী, ব্যতিচারের শর্তাবলি  তাহলে তরঙ্গ ব্যতিচার: আলোর ব্যতিচার, কার্যপ্রনালী, ব্যতিচারের শর্তাবলি , সেক্ষেত্রে উৎপন্ন তরঙ্গের বিস্তার মূল তরঙ্গদ্বয়ের বিস্তারের দ্বিগুন হয়।

তরঙ্গ ব্যতিচার: আলোর ব্যতিচার, কার্যপ্রনালী, ব্যতিচারের শর্তাবলি 
  • ধ্বংসাত্মক ব্যতিচার: যদি দশা পার্থক্য π এর বিজোড় গুণিতক হয়: তরঙ্গ ব্যতিচার: আলোর ব্যতিচার, কার্যপ্রনালী, ব্যতিচারের শর্তাবলি  তাহলে তরঙ্গ ব্যতিচার: আলোর ব্যতিচার, কার্যপ্রনালী, ব্যতিচারের শর্তাবলি , সেক্ষেত্রে উৎপন্ন তরঙ্গের বিস্তার শূন্য।

তরঙ্গ ব্যতিচার: আলোর ব্যতিচার, কার্যপ্রনালী, ব্যতিচারের শর্তাবলি 

ব্যতিচারের শর্তাবলি

ব্যতিচারের জন্য নিম্নলিখিত শর্তাবলির প্রয়োজন-

১। আলোক উৎস দুটি সুসঙ্গত হতে হবে।

২। উৎস দুটি ক্ষুদ্র ও সূক্ষ্ম হতে হবে।

৩। উৎস দুটি পরস্পরের খুব নিকটে হতে হবে।

৪। তরঙ্গ দুটির বিস্তার সমান বা প্রায় সমান হতে হবে।৫। পর্যায়ক্রমিক উজ্জ্বল ও অন্ধকার বিন্দুর জন্য পথ-পার্থক্য যথাক্রমে অর্ধতরঙ্গদৈর্ঘ্যের (9/2) যুগ্ম ও অযুগ্ম গুণিতক হতে হবে।

উপরোক্ত শর্তসমূহ পালিত হলে ব্যতিচার পাওয়া যাবে।

তথ্যসূত্র

Tags:

তরঙ্গ ব্যতিচার আলোর ব্যতিচারতরঙ্গ ব্যতিচার কার্যপ্রনালীতরঙ্গ ব্যতিচার ব্যতিচারের শর্তাবলিতরঙ্গ ব্যতিচার তথ্যসূত্রতরঙ্গ ব্যতিচারআলোইংরেজি ভাষাকম্পাঙ্কতরঙ্গবিস্তার (পদার্থবিজ্ঞান)বেতার তরঙ্গশব্দ

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

ব্রহ্মপুত্র নদআলেপ্পোশিবা শানু২৭ এপ্রিলনোরা ফাতেহিবাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেলএভারেস্ট পর্বতঋতুসিলেট বিভাগব্র্যাকবাংলাদেশী টাকাজাতীয় সংসদডেল্টা প্ল্যান-২১০০বিভিন্ন ধর্ম ও বিশ্বাসের তালিকাফাতিমানরসিংদী জেলাবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়হরে কৃষ্ণ (মন্ত্র)ব্রাজিলজিয়াউর রহমানঈদুল আযহাআন্দ্রে রাসেলভোটজীবনানন্দ দাশআবুল খায়ের গ্রুপবাংলা লিপিপাকিস্তানবাংলাদেশে হিন্দুধর্মসৈয়দ সায়েদুল হক সুমনতাহসান রহমান খানমুহাম্মাদ ফাতিহদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধইউরোপীয় ইউনিয়নসানরাইজার্স হায়দ্রাবাদকুমিল্লারামকোণউসমানীয় খিলাফতভারতের রাষ্ট্রপতিদের তালিকাআব্বাসীয় খিলাফতবাংলার প্ৰাচীন জনপদসমূহকম্পিউটার কিবোর্ডক্রিস্তিয়ানো রোনালদোবাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষযোনিভারতের রাজনৈতিক দলসমূহের তালিকাকুমিল্লা জেলাসংযুক্ত আরব আমিরাতবিন্দুবাঙালি জাতিরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাবব্যাংকবাংলাদেশ গণপরিষদশিশ্ন বর্ধনপশ্চিমবঙ্গবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ঈমানহামাসপূর্ববঙ্গ আইনসভা নির্বাচন, ১৯৫৪তানজিন তিশামহাত্মা গান্ধীক্ষুদিরাম বসুনেপালমোশাররফ করিমঢাকা মেট্রোরেলবাংলাদেশ-ভারত ছিটমহলঅশ্বত্থহৃৎপিণ্ডতাপমাত্রাপ্রথম উসমানমৃত্যু পরবর্তী জীবনবর্তমান (দৈনিক পত্রিকা)বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নবাংলাদেশ ব্যাংকবন্ধুত্বরাম মন্দির, অযোধ্যাউসমানীয় সাম্রাজ্যঅ্যান্টার্কটিকা🡆 More