ডাকাতি

ডাকাতি এক ধরনের অপরাধ। কোনো মানুষের উপর বল প্রয়োগ করে, বল প্রয়োগের ভয় দেখিয়ে অথবা তাকে ভয়ভীত অবস্থার মধ্যে ফেলে, তার থেকে মুল্যবান দ্রব্যাদি সরিয়ে ফেলাই ডাকাতি। সাধারণ আইন অনুসারে ডাকাতিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এভাবে যে, কোনো ব্যক্তি থেকে তার এখতিয়ারে থাকা সম্পত্তি নেওয়া বা কোনো ব্যক্তিকে ভয় বা বলপূর্বক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা নামই ডাকাতি। দেশভিত্তিক আদালতের আইন অনুসারে ডাকাতির সংজ্ঞা সম্পুর্ণভাবে নাও মিলতে পারে। ডাকাতি তার হিংস্র স্বভাবের জন্য চুরি থেকে আলাদা।

ডাকাতি
মুখোশধারী ব্যক্তি, বন্দুক হাতে একজন মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে
ডাকাতি
১৮৬০ সালের কাছাকাছি সময়ে জাপানে বণিকদের ঘরে রনিন ডাকাতির চিত্র

বিভিন্ন ধরনের ডাকাতির মধ্যে একটি ডাকাতি হল, অস্ত্রসহ ডাকাতি, যেখানে অস্ত্রের ব্যবহার করা হয়। কিছু ডাকাতি আছে যেখানে মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। হাইওয়েতে অনেকসময় ডাকাতি করা হয় বা অনেকসময় পথচারীকে নির্বোধ বানিয়ে ডাকাতি করা হয়। এ ডাকাতিগুলো জনসমাগম আছে (যেমন: হাটতে হাটতে, পার্কে, রাস্তায় ইত্যাদিতে) এধরনের জায়গায় হয়। গাড়ি ডাকাতিও এমন এক ধরনের ডাকাতি, যেখানে বলপূর্বক বৈধ মালিকের থেকে গাড়ি ছিনিয়ে নেওয়া হয়। চাঁদাবাজিও এক ধরনের অবৈধ কাজ, যেখানে জোর করে দ্রব্যাদি ছিনিয়ে নেওয়া হয়, এবং কোনো অর্থ পরিশোধ করা যায় না। এই চাঁদাবাজির ক্ষেত্রে অস্ত্রের পরিবর্তে প্রাথমিক ভাবে শব্দ ব্যবহার করা হয়। এ ভাষাকে অপরাধীর অপভাষা বলা হয়। এছাড়া চলন্ত ট্রেনে ডাকাতি ও অনেক দেশে দেখা যায়।

কানাডায়

কানাডার অপরাধ আইন অনুসারে ডাকাতি করা গুরুতর অপরাধ। এর ফলে ব্যক্তির যাবজ্জীবন কারাদন্ড হতে পারে। যদি কেও ডাকাতি করার সময় অস্ত্রের ব্যবহার না করে, এবং তার বিরুদ্ধে সেটাই প্রথম অভিযোগ হয়, সে ক্ষেত্রে তার নূন্যতম পাঁচ বছরের কারাদন্ড হয়, কিন্তু যদি তার বিরুদ্ধে এর আগেও পুলিশের রেকর্ডে অভিযোগ থেকে থাকে, তাহলে তার সাতবছরের কারাদন্ড হয়।

আয়ারল্যান্ড

আয়ারল্যান্ডে 'ডাকাতি' সংবিধান মতে গুরুতর অপরাধ। ২০০১ সালের ১৪(১) ধারা অনুসারে ডাকাতি বলা যাবে নিম্নোক্ত ঘটনাকে:

একজন ব্যক্তি সে ছেলে হোক বাবা মেয়ে, পূর্বে চুরি করার সময়, বা যেকোনো সময় চুরি করতে অথবা চুরি করার উদ্দেশ্যে যদি বল প্রয়োগ করে, অথবা কোনো ব্যক্তিকে বল প্রয়োগের হুমকি দিয়ে ভয়ভীত করে তবে তাকে ডাকাতি বলা হবে।

যুক্তরাজ্য

ইংল্যান্ড এবং ওয়ালস

ইংল্যান্ড এবং ওয়েল্স্ ডাকাতি সংবিধিবদ্ধ মতে অপরাধ। ১৯৬৮ সালের সাধারণ আইন এর ৮(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে

একজন ব্যক্তি সে ছেলে হোক বাবা মেয়ে, পূর্বে চুরি করার সময়, বা যেকোনো সময় চুরি করতে অথবা চুরি করার উদ্দেশ্যে যদি বল প্রয়োগ করে, অথবা কোনো ব্যক্তিকে বল প্রয়োগের হুমকি দিয়ে ভয়ভীত করে তবে তাকে ডাকাতি বলা হবে

চৌর্যবৃত্তির অবনতি

চুরির চেয়ে নিকৃষ্টতম অপরাধ হল ডাকাতি।

চৌর্যবৃত্তি

১৯৬৮ সালে চৌর্যবৃত্তি আইনের ১(১) নং অনুচ্ছেদ অনুসারে কোনো ঘটনাকে চৌর্যবৃত্তি বলতে হলে, তার জন্য অনুচ্ছেদে উল্লেখিত; প্রমাণ করার-যে সুনির্দিষ্ট ধারা তার সাথে মিল থাকতে হবে। আর ভি রবিনসনের ক্ষেত্রে এমনটাই হয়েছিল। রবিনসন একজন মহিলার কাছে প্রথমে কিছু অর্থ ধার চায়, মহিলাটি তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়, এবং তার স্বামীর সাথে রবিনসনের বাদানুবাদ হয়। এরপর রবিনন ছুরি হাতে তাদের আক্রমণের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে মহিলাটির স্বামী পকেট থেকে কিছু অর্থ মাটিতে পড়ে যায়। রবিনসন তা তুলে নিজের পকেটে রেখে দেয়। রবিনসনের বিরুদ্ধে ডাকাতির মামলা হয়। কিন্তু আদালত কর্তৃক এ আপিল খারিজ করে দেওয়া হয়, আদালত তাদের পর্যবেক্ষণে বলেন, রবিনসনের ব্যাখা করা যায় না এরকম ধারণা, কিন্তু সৎ বিশ্বাস ছিল যে ভদ্রমহিলা তাকে অর্থ ধার দিবে। তাই এটি ডাকাতির মামলাগুলোর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না।

আর ভি হালে (১৯৭৮) এর ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগ এবং চুরি ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় হয়েছিল। বিচারক একে ডাকাতি বলেই আখ্যা দিয়েছিল। আর ভি লকলি (১৯৯৫) এর ক্ষেত্রে বিচারক আর ভি হালেকে ই অনুসরণ করেছে। এই কেসের বেলায় মুল ঘটনা ছিল দোকানদারের মালামাল সব নিয়ে যাওয়ার পরে তার উপর জোরজবরদস্তি করা হয়েছিল। তবে আর ভি গোমেজ (১৯৯৩), এর ক্ষেত্রে আদালত ঘটনাটিকে ডাকাতি নয় বরং চুরি হিসেবেই সাব্যস্ত করেছে।

সরাসরি বা হুমকি দিয়ে বলপ্রয়োগ

'হুমকি' অথবা 'বল প্রদর্শন' চুরির পূর্বে অথবা চুরির সময়ে অবশ্যই করতে হবে। যদি চুরি সম্পন্ন হয়ে যাবার পরে বল প্রদর্শন করা হয়, তবে সে চৌর্যবৃত্তিকে ডাকাতি বলা যাবে না।

যদি বল চুরি হবার পর তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োগ করা হয়, তাহলেওতাকে ডাকাতি বলা হবে। এই 'তাৎক্ষণিক পরে' (immediately after) শব্দটি সাধারণ চুরি আইন ১৯১৬ এর ২৩(১) অনুচ্ছেদে প্রথমবারের মত উল্লেখ করা হয। এই শব্দটি ৮(১) অনুচ্ছেদ থেকে বাদ দিয়ে ২৩(১) এ সন্নিবেশিত করা হয়েছে।

"আর্চবোল্ড" নামক বই অনুসারে আর ভি হারমান এর সেই ঘটনাটি যদি ১৬২০ সালে ডাকাতি হিসেবে না ধরা হ, তাহলে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে তাকে এখনো ডাকাতি বলা যাবে না।

আর ভি ডাওসন এবং জেমস(১৯৭৮) এর অভিযোগকে সুচিত করে বলা যায় যে, বলপ্রয়োগ একটি সাধারণ ইংরেজি শব্দমাত্র এবং ঘটনার প্রকারভেদে এর অর্থ কী হবে তা আদালতের বিচারকই ঠিক করবে। দুইটি ঘটনা যেমন আর ভি ক্লাওডেন (১৯৮৫) এবং করকোরান ভি এণ্ডারটন (১৯৮০),কে উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়। দুই ক্ষেত্রেই বলপ্রয়োগ করে বালক কর্তৃক হাতব্যাগ ছিনতাই করা হয়েছে। কিন্তু আদালতের বিচারকরা এই ঘটনাকে ডাকাতির মামলায় অন্তর্ভুক্ত করেন নি। তাদের রায়ে বলা হয়েছে যেহেতু এটা যে নিয়ম বহির্ভূত অনৈতিক কাজ, তা এই বালক জানে না, তাই এঘটনাদ্বয় ডাকাতির মামলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না।

হুমকি

যে স্থানে সম্পত্তি বলপ্রয়োগ করে বাজেয়াপ্ত করা হবে সে ঘটনাটিকে ডাকাতি বলার জন্য ওই সম্পত্তির মালিক বা তার প্রতিনিধিকে উপস্থিত থাকতে হবে। ডাকাতি করার সময় ডাকাত দ্বারা হুমকি এমনভাবে দেওয়া হয়, যাতে সম্পত্তির মালিক ভয়ভীত হন।

ডাকাতি নানাভাবে ঘটতে পারে। যেমন: মোবাইল ফোনকে জবরদস্তিভাবে তার গ্রাহকের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া এক প্রকার ডাকাতি। অথবা হাতে ধাতব অস্ত্র যেমন: ছুরি হাতে মোবাইল ফোনের মালিককে জখমের হুমকি দিয়ে তার কাছ থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নিতে পারে। সবসময় ডাকাত যে সম্পত্তির মালিককেই ভয়ভীত করে সম্পত্তি নিবে এমন কোনো কথা নেই, সম্পত্তির মালিকের আত্মীয়-স্বজনকে ভয় দেখিয়ে তাদের জীবনের উপর হামলার ভয় দেখিয়েও সম্পত্তির মালিক থেকে সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে পারে।

অনেকসময় ৩য় পক্ষের উপর বলপ্রয়োগ করে বা হুমকি দিয়েও ডাকাতি করা হতে পারে। যেমন: জুয়েলারী বা অলংকারের দোকানে ক্রেতার উপর হামলার হুমকি দিয়ে বিক্রেতা থেকে ডাকাতি করা হয়। ভবিষ্যতে ক্ষতি করা হবে, এই ধরনের হুমকি দিয়ে যে চৌর্যবৃত্তি করা হয়, তাকে ডাকাতি নয় ব্ল্যাকমেইল বলা হয়।

অসততার সাথে সম্পত্তির ব্যবসায়িক লেনদেন করার পর তা ডাকাতি করাকে হ্যাণ্ডলিং বলে।

শাস্তির দণ্ডবিধি

ডাকাতিকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে ধরা হয়।

শাস্তি

ডাকাতি 
পর্যটকদের উপর লুটেরা কর্তৃক আক্রমণ, চিত্রটি এঁকেছেন জ্যাকুয়াস কোর্টইস

ডাকাতির জন্য মাত্রাভেদে বিভিন্ন শাস্তি থেকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড পর্যন্ত হয়। অপরাধীর ন্যায় বিচার ২০০৩ অনুসারে এই শাস্তির বিধান দেওয়া হয়। ২০০৬ সালের ২৫শে জুলাই গাইডলাইন কাউন্সিল ডাকাতির শাস্তি কীরুপ হতে পারে, তার একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন প্রকাশ করেন।

আর ভি মিটছেল (২০০৫) অল ই.আর(ডি) ৭৪, অনুসারে শাস্তির নির্দেশিকা সন্নিবেশিত হয়েছে এটর্নি জেনারেলের তথ্যসূত্র(২০০২) নামে। নভেম্বর ২০০৫ সালে ডাকাতির শাস্তিস্বরুপ নতুন গাইডলাইনের খসড়া জারি করা হয়।

ইতিহাস

ডাকাতি 
"১৯১৪ সালে অস্ট্রেলিয়াতে গেটাওয়ে গাড়ি ব্যবহার করে ডাকাতির ঘটনাপ্রথম রেকর্ড করা হয়
সাধারণ আইন

ইংল্যাণ্ডে ডাকাতি গুরুতর অপরাধ। ম্যাথিউ হালে এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেন

ডাকাতি হচ্ছে এক ধরনের হিংস্রতা আর বেআইনিভাবে কারো সম্পত্তি এবং অর্থ ছিনিয়ে নেওয়া, তাকে ভীতসন্ত্রস্ত করা

১৯৬৯ এর পূর্বে ডাকাতির জন্য আলাদা কোনো সুনির্দিষ্ট আইন ছিল না।

সংবিধিবদ্ধ আইন

চুরি সংক্রান্ত আইন ১৮৬১ এর ৪০ থেকে ৪৩ নং অনুচ্ছেদ দেখুন

অপহৃত ধারা ১৯১৬ এর ২৩ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে:

23.-(১) যেকোনো ব্যক্তি-

    (ক) যদি ডাকাতির উদ্দেশ্যে কোনো ধরনের জনস্বার্থে ক্ষতিকর যন্ত্র বা অস্ত্র বহন করে, অথবা একের অধিক ব্যক্তির সাথে একত্রিত হয়ে
    (খ) যদি ডাকাতির ত্বরিত আগমুহুর্তে বা পরবর্তীতে কারো উপর শারীরিক হানি পৌছায়, তাহলে সে যেই হোক না কেন তার এ অপরাধকে গুরতর অপরাধ বলে ধরে নেওয়া হবে। এবং সে যদি পুরুষ হয়, তাহলে তাকে গোপনে বেত্রাঘাত করা হবে।

(২)যে কোনো ব্যক্তি যদি ডাকাতি করে এবং আদালত কর্তৃক প্রমাণ হয়, তাহলে তাকে দোষী হিসাবে মানা হবে এবং তার সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সাজা হবে।

(৩) যদি কেও ডাকাতির উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে থাকে, কিন্তু সফল না হয়, তথাপি তাকে দোষী মানা হবে এবং তার সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

এই অনুচ্ছেদ অনুসারে ডাকাতির বিভিন্ন ধরনের উপর ভিত্তি করে আদালত অর্থ জরিমানা করে থাকে, এই অর্থদণ্ড ডাকাতির ধরনের উপর ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্ন হয়

বলপূর্বক ডাকাতি সংক্রান্ত নিম্নোক্ত কেস গুলো আদালত দ্বারা নিষ্পত্তি হয়েছিল:

  • আর ভি ল্যাপিয়ার ১ লিচ ৩২০
  • আর ভি মুরে (১৭৮৪) ২ ইস্ট ৩৩৫
  • আর ভি ডেভিস (১৮০৩) ২ পূর্ব পি সি ৭০৯
  • আর ভি মেসন (১৮২০) আর এণ্ড আর ৪১৯
  • আর ভি গ্নোসিল (১৮২৪) ১ সি এণ্ড পি ৩০৪
  • আর ভি ওয়ালস এবং হুগহেস (১৮৪৫) ২ সি এবং কে ২১৪

ডাকাতির উদ্দেশ্যে শারীরিক আক্রমণ

যদি কোনো ডাকাতি সম্পন্ন হবার পূর্বেই ভণ্ডুল হয়ে যায়, তখন ১৮৬৮ আইন ৮(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে বিকল্পভাবে শারীরিক আক্রমণের অভিযোগ তোলা হয়। যেখানে বলা হয়েছে, ডাকাতির উদ্দেশ্যে যদি এমন কোনো কাজ ইচ্ছাকৃত বা বেপরোয়াভাবে করা হয়, যার ফলে ব্যক্তি ভীত হয়, বা তার উপর বেআইনিভাবে বল প্রয়োগ করা হয়, তবে তা শারীরিক আক্রমণ বলে গণ্য হবে।

আদালতের নিম্নোক্ত রায় এর সাথে প্রাসঙ্গিক:

  • আর.ভি.ট্রাস্টি এবং হাওয়ার্ড (১৭৮৩) ৪১৮ পৃষ্ঠা
  • আর ভি সারিন (১৭৮৫) ৪২১ পিসি

শারীরিক আক্রমণের জন্য আদালতের আইন ও দণ্ডবিধি

ডাকাতি করার সময় শারীরিক আক্রমণ করা হলে তার জন্য স্বল্প মাত্রায় কারাদন্ড থেকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড পর্যন্ত হতে পারে।

ক্রিমিনাল জাস্টিস ২০০৩ অনুসারে শাস্তির মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়।

উত্তরাঞ্চলীয় আয়ারল্যাণ্ড

উত্তরাঞ্চলীয় দ্বীপের চৌর্যবৃত্তি আইন ১৯৬৯ এর ৮নং অনুচ্ছেদ অনুসারে উত্তরাঞ্চলীয় আয়ারল্যান্ডে ডাকাতি সংবিধিবদ্ধ অপরাধ।

ইসলামে ডাকাতি ও লুটতরাজের বিধান

কুরআনের পরিভাষায় ডাকাতি ও লুটতরাজকে মুহারিব বলা হয়। এদের শাস্তি সম্পর্কে কুরআনে উল্লেখিত হয়েছে,

"যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং যমীনে ফাসাদ করে বেড়ায়, তাদের আযাব কেবল এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে কিংবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত ও পা কেটে ফেলা হবে অথবা তাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেয়া হবে। এটি তাদের জন্য দুনিয়ায় লাঞ্ছনা এবং তাদের জন্য আখিরাতে রয়েছে মহাআযাব।" - কুরআন, সূরা মায়িদাহ ৩৩

ইসলামে ডাকাতির ৪ ধরনের শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যথা:

১. হত্যা ২. শূলবিদ্ধকরণ ৩. হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেওয়া ৪. নির্বাসিত করা।

ইসলামের ফুকাহায়েকেরাম বলেন, ডাকাতের অপরাধ অনুপাতে যে কোনো একটি শাস্তি প্রয়োগ করতে হবে। যে ডাকাত শুধু হত্যা করে ধন-সম্পদ না নেয়, তাকে হত্যা করা হবে। যে শুধু ধন-সম্পদ অপহরণ করে কিন্তু কাউকে হত্যা করে না, তাকে হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হবে। যে হত্যাও করে আবার ধন-সম্পদও নিয়ে যায়, তাকে শূলে চড়িয়ে হত্যা করা হবে। আর যে শুধু মানুষকে ভয় দেখায়, হত্যা বা ধন-সম্পদ নিয়ে যায় না, তাকে নির্বাসিত করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্র

সাধারণ আইন অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রতে ডাকাতিকে চুরির গুরুতর পর্যায় বলে ধরা হয়। ডাকাতির উপাদানগুলো হল:

  1. বিপদগ্রস্থ ব্যক্তি বা শিকারের উপস্থিতিতে
  2. বলপর্বক অথবা বলের ভয় দেখিয়ে
  3. অনধিকার প্রবেশ করে
  4. চুরির অভিপ্রায়ে
  5. সে ব্যক্তির
  6. সম্পদ/অধিকৃত বস্তু
  7. নেওয়া এবং
  8. নিয়ে পালিয়ে যাওয়াই ডাকাতি।

প্রথম দুটি উপাদান বাদ দিলে বাকি উপাদান গুলোকে যুক্তরাষ্ট্র এর সাধারণ আইন অনুসারে চুরি বলেই ধরা হয়। কিন্তু বাকি দুইটি উপাদানকে একত্রিত করলে সেই অপরাধটি ডাকাতি বলেই বিবেচিত হয়।

বিপদগ্রস্থ ব্যক্তি বা শিকারের উপস্থিতিতে - ডাকাতির অর্থ হল: সম্পত্তি যা সরাসরি কোনো ব্যক্তি থেকে তার উপস্থিতিতেই নিয়ে নেওয়া হয়, তাই ডাকাতি। সম্পত্তি মাত্রই যে নগদ অর্থ হবে এমন নয়, সম্পত্তি পরিধানও করা যায়। যেমন: শরীরে কোনো ধরনের অলঙ্কার পরিধান করা, হাতে ঘড়ি থাকলে তা বলপ্রয়োগ করে ছিনিয়ে নেওয়াও এক প্রকার ডাকাতি। যার কাছ থেকে ডাকাতি হয়, সে সর্বদাই সচেষ্ট থাকে, কীভাবে ডাকাতিকে বা উদ্ভূত পরিস্থিতিকে প্রতিরোধ করা যাবে।

বল প্রয়োগ করে অথবা বল প্রয়োগের ভয় দেখিয়ে – বল প্রয়োগ করে অথবা বল প্রয়োগের হুমকি দেখানোকে ডাকাতির অন্যতম আনুষঙ্গিক উপাদান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রতে দেখা হয়। যুক্তরাষ্ট্রতে চৌর্যবৃত্তির মত কুকর্মকে ডাকাতি হিসেবে তখনি গণ্য করা হবে, যদি চুরি করার সময় বল প্রয়োগ বা প্রয়োগের হুমকি দেওয়া হয়। শুধুমাত্র ব্যক্তি থেকে তার সম্পত্তি (যেমন: কানের দুল) ছিনতাই করে পালিয়ে যাওয়াকে পর্যাপ্ত বলপ্রয়োগ হিসেবে ধরা হয় না, ফলে এ ঘটনা ডাকাতির মামলায় আওতাভুক্ত হবে না।

একটি ঘটনাকে ডাকাতি তখনি ধরা হবে, যখন বিপদগ্রস্থ নিরীহ ব্যক্তি ক্ষতির আশঙ্কায় এবং ডাকাতির ভয়ে ভয়ভীত হবেন। হুমকি(জীবন বা পরিবারের ক্ষতি করার হুমকি) দিয়েই যে ডাকাতি করা হয়, সে হুমকিকে অবশ্যই তাৎক্ষণিকভাবেই দিয়ে করতে হয়, যদি ভবিষ্যতের জন্য হুমকি দেওয়া হয়, তবে তা ডাকাতি নয়।

ক্যালিফোর্নিয়া

পেনাল ২১৩ (১) (ক) ধারা অনুসারে ক্যালিফোর্নিয়াতে ডাকাতির শাস্তি ৯ বছর।

চৌর্যবৃত্তিতে বলের প্রয়োগ হয় না যদি বলপ্রয়োগে চৌর্যবৃত্তি করা হয়, তাহলে তা চুরি থাকে না, ডাকাতি হয়ে যায়।

পরিসংখ্যান মতে ডাকাতি

দেশভিত্তিক ডাকাতি

জাতিসংঘ এ বিষয়ে বিবৃতি দেয় "এই পরিসংখ্যান ব্যবহার করে সকল দেশকে তুলনা করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ প্রত্যেকটা দেশে ডাকাতির ঘটনা রেকর্ড সঠিক ভাবে হয় না, এবং ডাকাতির ঘটনাকে প্রশাসনের নথিভুক্ত করার পদ্ধতিও ভিন্ন।" এছাড়াও প্রত্যেকটি ডাকাতির ঘটনা সংরক্ষিত না হবার দুইটি অর্থ হয় (১) এখানে ডাকাতির যে অনুপাত দেখা যাচ্ছে, বাস্তবিক অনুপাত তার চেয়ে বেশি (২) যেসব দেশে ডাকাতির ঘটনা সঠিকভাবে নথিভুক্ত করা হয় না, সেসব দেশে বিপদের আশঙ্কা অন্য দেশের তুলনায় বেশি, উদাহরণস্বরূপ – একটা দেশে যে পরিমাণ ডাকাতি হয় তার হয়তো ৮৬% প্রশাসনের কাগজে নথিভুক্ত হয়, পক্ষান্তরে অন্যদেশে ডাকাতির ঘটনার হয়তো ৬৭% নথিভুক্ত হয়। তাই ৬৭% ডাকাতির ঘটনা নথিভুক্ত হওয়া দেশ তালিকানুসারে নিরাপদ দেশ হিসেবে প্রতীয়মান হতেও পারে, কিন্তু বাস্তবে তা নয়। জাতিসংঘের এই বিবৃতির সর্বশেষে উল্লেখ করা হয়েছে, একটি দেশে সকল অঞ্চলে ডাকাতির পরিমাণ সমান নয়। এখানে যে তালিকাটি উল্লেখ করা হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে একটি গড়পড়তা হিসাব। এই হিসাব থেকে রাষ্ট্রের সব অঞ্চলে ডাকাতি কেমন, তা জানা যাবে না।

দেশভেদে ডাকাতির সময়ে নরহত্যা

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে ডাকাতি

মিডিয়ার কল্যাণে ডাকাতিও কখনো জনপ্রিয় সংস্কৃতি এবং ডাকাতরাও বনি-ক্লাইড এবং জন ডিলিঞ্জার এর মত পপ আইকন এ পরিণত হতে পারে। নিচে উদাহরণ দেওয়া হল:

চলচ্চিত্রে

  • স্ট্যানলি কুবরিকচলচ্চিত্র দ্য কিলিং (১৯৫৬) এর পরিচালক। লিওনেল হোয়াইটের ক্লিন ব্রেক উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে এটি নির্মিত।
  • ওয়াক আপ এণ্ড ডাই (১৯৬৬): একটি ইতালিয় চলচ্চিত্র। যার পরিচালক ছিলেন কার্লো লিজানি, এ চলচ্চিত্রটি লুচিয়ানো লুটরিং এর জীবনীর উপর নির্ভর করে বানানো হয়েছে।তিনি তার অস্ত্র কে বেহালার বাক্সে রাখতেন।
  • টেক দ্য মানি এণ্ড রান (১৯৬৯), চলচ্চিত্রটির নির্মাতা ছিলেন উডি এলেন। এখানে ডাকাতির সময়ের কৌতূহল উদ্দীপক ঘটনাকে ফুটিয়ে তুলা হয়েছিল।
  • লি গিটান (Le Gitan) (১৯৭৫),জস জিওভানির দ্বারা পরিচালিত একটি ছবি। এ চলচ্চিত্রটিও লুচিয়ানো লুটরিং এর জীবনীর উপর নির্মিত হয়েছে।
  • রেসারভোইর ডগস (১৯৯২) চলচ্চিত্রটি কোয়েন্টিন টারান্টিনো পরিচালনা করেছেন। এ চলচ্চিত্রে ডাকাতির পরে ডাকাতদের জীবনযাত্রায় কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, তার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।

সাহিত্যে

  • |লুচিয়ানো লুটরিং (১৯৩৭ সালের ৩০ডিসেম্বর -১৩ই মে ২০১৩) "মেশিনগান ধারী গায়ক" নামে ব্যাপক পরিচিত, কারণ তিনি তার অস্ত্র সর্বদা ভায়োলিনের বাক্সে রাখতেন। তিনি ইটালিয় ক্রিমিনাল, লেখক এবং চিত্রকর ছিলেন। তিনি যখন ডাকাতি করতেন, সর্বদা একাই তার কাজ সিদ্ধ করতেন(যা ডাকাতির জগতে খুব একটা দেখা যায় না)।
  • লিওনেল হোয়াইট এর গোয়েন্দা রহস্যের বই ক্লিন ব্রেক (১৯৫৫)। এই বইয়ের ছায়া অবলম্বনে স্ট্যানলি কুবরিকের দ্য কিলিং(১৯৫৬) রচিত হয়েছে।

ভিডিও গেমসে

পেডে হেইস্ট এবং পেডে উভয় ভিডিও গেমস এর মুল কাহিনী হল, মুল্যবান দ্রব্যাদি চুরি করতে হবে। সেটা ব্যাংক থেকে হোক, গ্যালারী থেকে হোক, সাজোয়াযুক্ত যুদ্ধবাজ গাড়ি থেকে হোক বা অন্য কোনো জায়গা থেকে হোক।

টেলিভিশনে

দ্য সরপ্রানোস নামক একটি জনপ্রিয় টিভি সিরিজে বারবার ডাকাতির চিত্র উঠে এসছে।

  • আর্মড ডাকাতি,
    • ৩ নং মৌসুমের সমাপ্তিপর্বে ("আর্মি অব ওয়ান"), এ জ্যাকি এবং ডিনো জিরিল বন্দুক তাক করে ইউগেনের উপর।
  • ৬ নং মৌসুমের ৩য় পর্ব("মায়হাম") এ পল এবং ভিটো, কলম্বিয়ান ড্রাগ ডিলার থেকে ডাকাতি করে।
  • গাড়ি ডাকাতি
    • পাইলট এপিসোডে, ক্রিস্টোফার মল্টিসান্টি এবং ব্রেণ্ডন ফাইলোন, জুনিয়ত সোরপ্রানো এর ট্রাক হাইজ্যাক করে।
    • ১ নং মৌসুমের ২য় পর্বে ("৪৬ লং"), ব্রেণ্ডন আরেকটি গাড়ি ডাকাতি করে।
  • চাঁদাবাজি
    • ৬ষ্ঠ সিরিজের অষ্টম পর্বে("জনি কেকস"), এবং বার্ট গারভাসি স্টারবাকস রেস্টুরেন্ট থেকে চাঁদাবাজির চেষ্টা চালায়
  • ছিনতাই
    • ৬ষ্ঠ সিরিজের ৭ম পর্বে ("লাক্সারি লাউঞ্জ"), ক্রিস্টোফার লরেন বাকেলকে ঘুষি মারে এবং তার গিফটের ঝুড়ি চুরি করে।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  • Matthew Hale. Historia Placitorum Coronae. 1736. 1800 Edition. Volume 1. Chapter XLVI. Pages 532 to 538.

Tags:

ডাকাতি কানাডায়ডাকাতি আয়ারল্যান্ডডাকাতি যুক্তরাজ্যডাকাতি ইসলামে ও লুটতরাজের বিধানডাকাতি যুক্তরাষ্ট্রডাকাতি পরিসংখ্যান মতে ডাকাতি জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে ডাকাতি টেলিভিশনেডাকাতি আরও দেখুনডাকাতি তথ্যসূত্রডাকাতিঅপরাধ

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

শেখ মুজিবুর রহমানজাকির নায়েকমুহাম্মদ ইউনূসনীল বিদ্রোহঘূর্ণিঝড়পাখিহনুমান চালিশাআইনজীবীবায়ুদূষণমামুনুর রশীদঅ্যালবামবিপন্ন প্রজাতিসিপাহি বিদ্রোহ ১৮৫৭নামাজের বৈঠকপ্রাণ-আরএফএল গ্রুপক্রিকেটওবায়দুল কাদেরশয়তানফজরের নামাজতুরস্কমাতৃভাষীর সংখ্যা অনুসারে ভাষাসমূহের তালিকাএম এ ওয়াজেদ মিয়াব্রিটিশ ভারতপ্রযুক্তিজামালপুর জেলাবাংলা স্বরবর্ণআডলফ হিটলারপশ্চিমবঙ্গের জেলাইসলাম ও অন্যান্য ধর্মবঙ্গবন্ধু-১জাতীয় স্মৃতিসৌধতায়াম্মুমলোহিত রক্তকণিকাশব্দ (ব্যাকরণ)ভূগোলইউটিউবসুনামগঞ্জ জেলাঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরবাংলা ভাষাউর্ফি জাবেদমুহাম্মাদের মৃত্যুবিজ্ঞানআমসৌরজগৎপরীমনিহনুমান (রামায়ণ)আল্প আরসালানবাংলাদেশের সংবিধানের সংশোধনীসমূহপুঁজিবাদযক্ষ্মাখালিদ বিন ওয়ালিদচাকমাজুবায়ের জাহান খানপর্নোগ্রাফিইজিও অডিটরে দা ফিরেনজেকন্যাশিশু হত্যামারবার্গ ফাইলসাতই মার্চের ভাষণসাঁওতালবাংলাদেশ ছাত্রলীগআবু বকরআফ্রিকানীল তিমিপাঠান (চলচ্চিত্র)সেলজুক সাম্রাজ্যচট্টগ্রামপাকিস্তানঋতুরমাপদ চৌধুরীতাওরাতফুলবাংলাদেশের জেলাইসলামের ইতিহাসমোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনভারতফিফা বিশ্বকাপ ফাইনালের তালিকাঅতিপ্রাকৃত কাহিনীওয়ালাইকুমুস-সালাম🡆 More