জুলের সূত্র

১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী জুল সর্বপ্রথম পরিবাহীতে তড়িৎ-প্রবাহের ফলে তাপের সৃষ্টি সম্পর্কে তিনটি সূত্র প্রকাশ করেন, এই সূত্রগুলোকে জুলের সূত্র বলা হয় |

জুল
একক পদ্ধতিএসআই উদ্ভূত একক
যার এককশক্তি
প্রতীকJ
যার নামে নামকরণজেমস প্রেসকট জুল
একক রূপান্তর
১ J ...... সমান ...
   এসআই একক   কেজিমিসে−২
   সিজিএস একক   ×১০ erg
   কিলোওয়াট ঘণ্টা   ২.৭৮×১০−৭ kW⋅h
   কিলোক্যালরি (থার্মোরাসায়নি)   ২.৩৯০×১০−৪ kcalth
   ব্রিটিশ থার্মাল একক   ৯.৪৮×১০−৪ ব্রিতাএ
   ইলেক্ট্রন-ভোল্ট   ৬.২৪×১০১৮ eV

সূত্রগুলি নিচে দেওয়া হল :-

প্রবাহমাত্রার সূত্র কোন পরিবাহীর রোধ এবং প্রবাহমাত্রার সময় অপরিবর্তিত থাকলে পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ ওই পরিবাহীর প্রবাহ মাত্রার বর্গের সমানুপাতিক হয়

রোধের সূত্র কোন পরিবাহীর প্রবাহ মাত্রা এবং প্রবাহমাত্রার সময় অপরিবর্তিত থাকলে পরিবাহিত উৎপন্ন তাপ পরিবাহীর রোধের সমানুপাতিক

সময়ের সূত্র কোন পরিবাহীর প্রভাবমাত্রা এবং রোধ অপরিবর্তিত থাকলে উৎপন্ন তাপ পরিবাহীর মধ্য দিয়ে প্রবাহ মাত্রার সময়ের সঙ্গে সমানুপাতী হয়

জুলের সূত্র

  • জুলের প্রথম সূত্র: পরিবাহীর রোধ (R) এবং তড়িৎ প্রবাহের সময় (t) অপরিবর্তিত থাকলে, পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ (H) তড়িৎ প্রবাহের (C) বর্গের সমানুপাতিক হয় |
                                           অর্থাৎ, H  ∝C2 যখন R এবং t স্থির |                               উদাহরণ: পরিবাহীর রোধ ও সময় অপরিবর্তিত রেখে পরিবাহী প্রবাহমাত্রা দ্বিগুণ করলে পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ পূর্বের তাপের চার গুণ | 
  • জুলের দ্বিতীয় সূত্র: পরিবাহীর প্রবাহমাত্রা (C) এবং তড়িৎ প্রবাহের সময় (t) অপরিবর্তিত থাকলে পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ (H) পরিবাহীর রোধ (R) সমানুপাতিক হয় |
                                           অর্থাৎ, H  ∝R যখন C এবং t স্থির |                                উদাহরণ:প্রবাহমাত্রা এবং তড়িৎ প্রবাহের সময় অপরিবর্তিত রেখে পরিবাহীর রোধ দ্বিগুণ করলে পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ উৎপন্ন তাপ পূর্বের তাপ দ্বিগুণ হবে | 
  • জুলের তৃতীয় সূত্র :পরিবাহীর প্রবাহমাত্রা (C) এবং রোধ (R) অপরিবর্তিত থাকলে পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ (H) পরিবাহীর তড়িৎ প্রবাহের সময়ের (t) সমানুপাতিক হয় |
                                          অর্থাৎ, H ∝ t যখন C এবং R ধ্রুবক |                                                    উদাহরণ: পরিবাহীর প্রবাহ মাত্রা এবং রোধ অপরিবর্তিত রেখে তড়িৎ প্রবাহের সময় দ্বিগুণ করলে পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ পূর্বের তাপের দ্বিগুণ হবে | 

জুলের সূত্রের গাণিতিক রূপ

উপরে সূত্র তিনটি কে একত্রিত করলে পাওয়া যায় যে, উৎপন্ন তাপ(H) হলে HαC2Rt,যখন তড়িৎ প্রবাহ(C) রোধ (R) এবং তড়িৎ প্রবাহের সময়(t) এই তিনটি ই পরিবর্তনশীল |অতএব,H=(C2Rt/J) যেখানে  J একটি ধ্রুবক| এই J ধ্রুবক এর মান C, R এবং t এর এককের উপর নির্ভর করে | এখানে C2Rt পরিবাহীতে তড়িৎ এর দ্বারা কৃতকার্য পরিমাণকে  বোঝায় | 
  • এখানে H কে ক্যালরি, C কে অ্যাম্পিয়ার ,R কে ওহম এবং t কে সেকেন্ড এককে প্রকাশ করলে পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় যে , J=4.2 জুল /ক্যালরি |

অতএব, H=(C2Rt/4.2) ক্যালরি অথবা , H=0.24 C2Rt ক্যালরি | এটি জুলের সূত্রের গাণিতিক রূপ |

জুলের সূত্র থেকে জানা যায় যে

  • কোন পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ(H), প্রবাহমাত্রা (C), রোধ (R),সময়(t) এবং বিভব-প্রভেদ(V) হলে জুলের সূত্র থেকে আমরা পাই H=0.24C2Rt,

আবার ওহমের সূত্র থেকে আমরা পাই :

কোন পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব প্রভেদ (V)=পরিবাহীর রোধ (R)* তড়িৎ প্রবাহ(C)

অর্থাৎ, V=R*C অথবা C=(V/R) | প্রবাহমাত্রার এই সমীকরণকে জুলের সূত্র বসিয়ে আমরা পাই H=0.24(V/R)2Rt

অথবা H=0.24(V2/R)t অথবা ,H α V2 (যখন R এবং t স্থির)

অর্থাৎ ,পরিবাহীর রোধ এবং তড়িৎ প্রবাহের সময় অপরিবর্তিত থাকলে, পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ তড়িৎ প্রবাহের বর্গের সমানুপাতিক হয়  
  • পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ পরিবাহী দুই প্রান্তের বিভব প্রভেদের বর্গের সমানুপাতিক হাওয়ায় পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ পরিবাহীর তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ নির্ভর করে না | তাই পরিবাহীতে সম প্রবাহ (D.C) বা পরবর্তী প্রবাহ(A.C) উৎসের সঙ্গে যুক্ত করলে উভয় ক্ষেত্রে পরিবাহীতে তাপের সৃষ্টি হয় |এইজন্যই ইলেকট্রিক হিটার বা বাল্ব D.C থেকে A.C উভয়ই প্রবাহেই কাজ করে -বাজারে D.C থেকে A.C হিটার বা বাল্ব আলাদা করে পাওয়া যায় না|
  • একই উপাদান ও দৈর্ঘ্যের সরু তারের রোধ মোটা তারের রোধ এর চেয়ে বেশি | তাই একই তড়িৎ প্রবাহ একই সময়ের জন্য পাঠালে সরু তারটি মোটা তারটি চেয়ে বেশি উত্তপ্ত হয় | কারণ  : R=রোধ, H=উৎপন্ন তাপ ,A=প্রস্থচ্ছেদ হলে :
                           পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ রোধের সমানুপাতিক হবে অর্থাৎ H α R                            আবার পরিবাহীর রোধ পরিবাহীর প্রস্থচ্ছেদের ব্যস্তানুপাতিক হবে অর্থাৎ R α(1/A)                           এই সমীকরণ দুটিকে একসঙ্গে করলে পাওয়া যায়  H α (1/A) অর্থাৎ ,পরিবাহীর প্রস্থচ্ছেদ কমলে পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপের পরিমাণ বাড়বে এবং প্রস্থচ্ছেদ বাড়লে পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ কমবে | 
  • একই পরিমান তড়িৎ প্রবাহ হলে একই উপাদান ও প্রস্থচ্ছেদের একটি ছোট তারের চেয়ে একটি লম্বা তার বেশি উত্তপ্ত হবে,কারণ ছোট তারটির তুলনায় লম্বা তারটির রোধ বেশি | R=পরিবাহীর রোধ H= পরিবাহীর  উষ্ণতা এবং L=দৈর্ঘ্য  হলে:
                                                     ওহমের সূত্র থেকে পাই : R α L                                                      আবার ,জুলের সূত্র থেকে পাই : H α R  এই সূত্র দুটোকে একইসঙ্গে করে পাই  H α L,অর্থাৎ পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ দৈর্ঘ্যের সমানুপাতিক হয় পরিবাহীর দৈর্ঘ্য বাড়লে পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপের পরিমাণও বেড়ে যাবে| 

রূপান্তর ও গুণিতক

SI multiples for জুল (J)
Submultiples Multiples
মান প্রতীক নাম মান প্রতীক নাম
১০−১ J dJ ডেসিজুল ১০ J daJ ডেকাজুল
১০−২ J cJ সেমিজুল ১০ J hJ হেক্টজুল
১০−৩ J mJ মিলিজুল ১০ J kJ কিলোজুল
১০−৬ J µJ মাইক্রোজুল ১০ J MJ মেগাজুল
১০−৯ J nJ নানোজুল ১০ J GJ গিগাজুল
১০−১২ J pJ পিকোজুল ১০১২ J TJ টেরাজুল
১০−১৫ J fJ femtoজুল ১০১৫ J PJ petaজুল
১০−১৮ J aJ attoজুল ১০১৮ J EJ exaজুল
১০−২১ J zJ zeptoজুল ১০২১ J ZJ zettaজুল
১০−২৪ J yJ yoctoজুল ১০২৪ J YJ yottaজুল
অতি পরিচিত গুণিতকসমূহ গাঢ় করা রয়েছে

১ জুল সমান (প্রায়, অন্যথায় উল্লেখিত)

  • ×১০ erg (সমান)
  • ৬.২৪১৫০৯৭৪×১০১৮ eV
  • ০.২৩৯০ cal (গ্রাম ক্যালরি)
  • ২.৩৯০×১০−৪ kcal (খাদ্য ক্যালরি)
  • ৯.৪৭৮২×১০−৪ ব্রিতাএ
  • ০.৭৩৭৬ ft⋅lb (ফুট-পাউন্ড)
  • ২৩.৭ ft·pdl (ফুট-পাউন্ডাল)
  • ২.৭৭৭৮×১০−৭ kW⋅h (কিলোওয়াট-ঘণ্টা)
  • ২.৭৭৭৮×১০−৪ W⋅h (ওয়াট-ঘণ্টা)
  • ৯.৮৬৯২×১০−৩ l·atm (litre-atmosphere)
  • ১১.১২৬৫×১০−১৫ g (by way of mass-energy equivalence)
  • ×১০−৪৪ foe (সমান)

পরিমাপা

পরিমাপা একক এসআই এককের মান
শক্তি eV ১.৬০২১৭৬৬৩৪×১০−১৯ জু
ভর eV/c2 ১.৭৮২৬৬২×১০−৩৬ কিg
ভরবেগ eV/c ৫.৩৪৪২৮৬×১০−২৮ kg·m/s
তাপমাত্রা eV/kB ১.১৬০৪৫১৮১২×১০ K
সময় ħ/eV ৬.৫৮২১১৯×১০−১৬ s
দূরত্ব ħc/eV ১.৯৭৩২৭×১০−৭ মি

তাপের যান্ত্রিক তুল্যাঙ্ক

জুল তার বৈদুতিক মোটরের পরীক্ষা করে পরিমাপ করেন যে এক পাউন্ড জলের তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি ফারেনহাইট বৃদ্ধি করতে যে পরিমান কাজ করতে হয় তা ৪.১৮৬২ জুল প্রতি ক্যালোরির সমতুল্য। এই পরিমাপকেই তাপের যান্ত্রিক তুল্যাঙ্ক বলা হয়ে থাকে।

শুরুতে জুলের এই তত্ত্ব বিঞানীরা মেনে নেন নি। অন্যদিকে জুল তাপ ও যান্ত্রিক কর্মের মধ্যে সরাসরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্যে বদ্ধপরিকর ছিলেন। তিনি তার নিজের তৈরী যন্ত্রে জলকে একটি সচ্ছিদ্র সিলিন্ডারের মধ্যে বলপূর্বক পাঠিয়ে পরীক্ষা শুরু করেন এবং ফলস্বরূপ তাপের পরিবর্তন পরিমাপ করেন। এই পরীক্ষায় তিনি পরিমাপ করেন তাপের যান্ত্রিক তুল্যাংক ৭৭০ ফুট-পাউন্ড বল প্রতি ব্রিটিশ থার্মাল একক।

তিনি বলেন ১৮৪৩ সালে বলেন, "যখনই কোন যান্ত্রিক কর্ম করা হয় সমতুল্য তাপ উৎপন্ন হয়।।"

সম্মাননা

জুল একাধিক সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ

জুলের সূত্র 
জুলের তাপের যান্ত্রিক তুল্যাঙ্ক পরিমাপের যন্ত্র
  • রয়েল সোসাইটির সদস্যপদ (১৮৫০)
  • রয়েল পদক (১৮৫২)
  • কোপলে পদক (১৮৭০)
  • ম্যাঞ্চেস্টার লিটারারি এন্ড ফিলোজফিক্যাল সোসাইটির সভাপতি (১৮৬০)
  • ব্রিটিশ অ্যাসোশিয়েশান ফর দি অ্যাডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্সের সভাপতি (১৮৭২, ১৮৮৭)
  • ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড সিপ বিল্ডার্সের সাম্মানিক সদস্যপদ (১৮৫৭)

তথ্যসূত্র

Tags:

জুলের সূত্র জুলের সূত্রজুলের সূত্র ের গাণিতিক রূপজুলের সূত্র জুলের সূত্র থেকে জানা যায় যেজুলের সূত্র রূপান্তর ও গুণিতকজুলের সূত্র পরিমাপাজুলের সূত্র তাপের যান্ত্রিক তুল্যাঙ্কজুলের সূত্র সম্মাননাজুলের সূত্র তথ্যসূত্রজুলের সূত্রজেমস প্রেসকট জুল

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

ইউরোপীয় দেশগুলো ও অধীনস্থ ভূভাগের তালিকাপানিরুকইয়াহ শারইয়াহমুসাসূর্যপথের পাঁচালী (চলচ্চিত্র)বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের তালিকাচ্যাটজিপিটিআল-আকসা মসজিদজনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় (বাংলাদেশ)প্রোফেসর শঙ্কুপ্রীতি জিনতাচতুর্থ শিল্প বিপ্লবভাষা আন্দোলন দিবসময়মনসিংহ বিভাগহযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরঅর্থনীতিবাস্তুতন্ত্রমুখমৈথুনখুলনাযোগাযোগকুরআনকৃষ্ণবেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা বাংলাদেশঅর্থ (টাকা)রাজশাহীপায়ুসঙ্গমবাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীরংপুর বিভাগমিল্ফআমার সোনার বাংলাফজরের নামাজজালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমিসাধু ভাষাপানিপথের প্রথম যুদ্ধবীর উত্তমরোহিত শর্মাওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবআইজাক নিউটনস্পেন জাতীয় ফুটবল দলসরকারবাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রমচাকমাইসলামে বিবাহব্রাজিলবাংলা একাডেমিবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মরত জেনারেলদের তালিকাবাংলাদেশ বিমান বাহিনীজীবনানন্দ দাশশর্করাছোলাবঙ্গবন্ধু সেতুফুসফুসজাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদপ্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারপশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন, ২০২১ভারতের রাষ্ট্রপতিআবুল আ'লা মওদুদীধানগোলাপডাচ্-বাংলা ব্যাংক পিএলসিমাহিয়া মাহিউসমানীয় সাম্রাজ্যসূরা কাহফনীলদর্পণপুণ্য শুক্রবারখ্রিস্টধর্মসিফিলিসজনসংখ্যা অনুযায়ী সার্বভৌম রাষ্ট্র ও নির্ভরশীল অঞ্চলসমূহের তালিকাআয়তন অনুযায়ী ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহের তালিকাজাতিসংঘের মহাসচিবমূলদ সংখ্যাবসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রশেখ মুজিবুর রহমানমৌলিক সংখ্যাবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ২০২৩কুরআনের সূরাসমূহের তালিকা🡆 More