জনি ক্যাশ

জন আর.

"জনি" ক্যাশ (জন্মকালে নাম রাখা হয়েছিল জে.আর. ক্যাশ; ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৩২ – ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৩) একজন আমেরিকান গায়ক ও গীতিকার, গিটারিস্ট, অভিনেতা এবং লেখক ছিলেন। তিনি সর্বকালের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত হওয়া সংগীত শিল্পীদের একজন, বিশ্বব্যাপী তার ৯০ মিলিয়নেরও বেশি রেকর্ড বিক্রি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কান্ট্রি মিউজিক আদর্শ হিসাবে তাকে স্মরণ করা হলেও তার ঘরানার ব্যাপ্তি কেবল ওখানেই শেষ নয়। রক অ্যান্ড রোল, রকব্যাবিলি, ব্লুজ, ফোক এবং গসপেল প্রভৃতি শাখাতেও তিনি করেছেন অবাধ বিচরণ। এই বিরল প্রতিভার কারণে ক্যাশ ফোক, রক এবং রোল এবং গসপেল মিউজিক হলস অফ ফেমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিরল সম্মান অর্জন করেছেন।

জনি ক্যাশ
জনি ক্যাশ
১৯৭০ সালে ক্যাশের একটি আলোকচিত্র
জন্ম
জে. আর. ক্যাশ

(১৯৩২-০২-২৬)২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৩২
মৃত্যুসেপ্টেম্বর ১২, ২০০৩(2003-09-12) (বয়স ৭১)
ন্যাশভিল, টেনিসি, যুক্তরাষ্ট্র
সমাধিহেন্ডারসনভাইল মেমরি গার্ডেনস, টেনিসি, যুক্তরাষ্ট্র
পেশা
  • গায়ক ও সঙ্গীত রচয়িতা
  • গিটারিস্ট
  • অভিনেতা
  • গ্রন্থকার
কর্মজীবন১৯৫৪-২০০৩
দাম্পত্য সঙ্গী
  • ভিভিয়ান লিবার্টো (বি. ১৯৫৪; বিচ্ছেদ. ১৯৬৬)
  • জুন কার্টার (বি. ১৯৬৮; মৃ. ২০০৩)
সন্তান5, রোজেন and জন কার্টার উল্লেখযোগ্য
আত্মীয়টমি ক্যাশ (ভাই)
সঙ্গীত কর্মজীবন
ধরন
বাদ্যযন্ত্র
  • Vocals
  • guitar
লেবেল
  • Sun
  • Columbia
  • Mercury
  • American
  • House of Cash
  • Legacy
ওয়েবসাইটjohnnycash.com

ক্যাশ তার গভীর, শান্ত কণ্ঠের জন্য পরিচিত ছিলেন। ট্রেনের মতো দ্রুতলয়ের গিটারের ছন্দ তার টেনেসি থ্রি ব্যাকিং ব্যান্ডকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে, বিদ্রোহী ধাঁচের সঙ্গে মিলেছে ক্রমবর্ধমান বেদনা ও বিনয়, সেই সঙ্গে বিনা পারিশ্রমিকেই তিনি কারাগারে কনসার্ট করেছেন। জন ক্যাশের পরিচিতির সঙ্গে আলোচ্য আরেকটি বিষয় - তার স্বতন্ত্র পোশাক, যেটি একসময় জনসমাজে ট্রেডমার্ক হয়েছিল। স্টেজে ওঠার সময় তিনি আপাদমস্তক কালো রঙের পোশাক পরতেন, জনসমাজে একসময় তাকে দ্য ম্যান ইন ব্ল্যাক নামে পরিচিতি পান। কনসার্টে গিয়ে তিনি "হ্যালো, আমি জনি ক্যাশ," বলেই শুরু করতেন, তারপর বাজাতেন তার সিগনেচার সং ফলসাম প্রিজন ব্লুজ

ক্যাশের অধিকাংশ কাজে দুঃখ, নৈতিক দুর্দশা এবং মুক্তি বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে, বিশেষত পরবর্তী জীবনে তিনি এই ঘরানায় বেশি কাজ করেছেন। তার অন্যান্য সিগনেচার সংয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য "আই ওয়াক দ্য লাইন", "রিং অফ ফায়ার", "গেট রিদম" এবং "ম্যান ইন ব্ল্যাক"। তিনি "ওয়ান পিস অ্যাট আ টাইম" এবং "এ বয় নেমড স্যু" এর মতো রসাত্মক গানও রেকর্ড করেছেন; আরো আছে তার ভাবী-স্ত্রী জুন কার্টারের সাথে একটি ডুয়েট, "জ্যাকসন" (তাদের বিয়ের পরে আরো অনেক গান তারা একসাথে করেন); এবং "হেই, পোর্টার", "কমলা ব্লসম স্পেশাল", এবং "রক আইল্যান্ড লাইন" সহ রেলপথের গানগুলো উল্লেখযোগ্য। তার ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে, ক্যাশ বিংশ শতাব্দীর বেশিরভাগ রক শিল্পীদের গানে কভার দিয়েছিলেন, নাইন ইঞ্চ নখের " হার্ট " এবং সাউন্ডগার্ডেনের " রাস্টি কেইজ " তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

প্রারম্ভিক জীবন

জনি ক্যাশ 
আরাকানসাসের ডাইস নগরের এই বাড়িতে তিনি ছেলেবেলা কাটিয়েছেন। ১৯৩৫ সালে তিন বছর বয়স থেকে ১৯৫০ সালে উচ্চ বিদ্যালয় শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বাড়িতে বসবাস করেন। ২০১৩ সালে চিত্রিত সম্পত্তিটি ঐতিহাসিক স্থানগুলির জাতীয় নিবন্ধে তালিকাভুক্ত হয়েছে ।

জনি ক্যাশ ০২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩২ সালে আরকানসাসের কিংসল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ক্যারি ক্লোভারি (ন্যা রিভার্স) এবং রে ক্যাশের সাত সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ: রয়, মার্গারেট লুইস, জ্যাক, জে.আর., রেবা, জোয়ান এবং টমি (যিনি পরবর্তীতে সফল কান্ট্রি আর্টিস্ট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন)। । জন মূলতঃ ইংরেজ এবং স্কটিশ বংশোদ্ভূত। বড় হয়ে তিনি নিজের পারিবারিক নামের সঙ্গে একাদশ শতকের ফাইফ উপদ্বীপের সংযোগ আবিষ্কার করেন। এই তথ্য তাকে জানিয়েছিলেন তৎকালীন ফলল্যান্ডের লেয়ার্ড মেজর মাইকেল ক্রিকটন স্টুয়ার্ট। ক্যাশ লক এবং ফাইফের অন্যান্য কিছু জায়গার নামের সঙ্গে তার পূর্বপুরুষদের নাম মিশে আছে।

জন্মের সময় ক্যাশের নাম ছিল জে.আর. ক্যাশ। পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনীতে যোগদানের সময় প্রথম নাম হিসাবে আদ্যক্ষর ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়নি, কাজেই জে.আর. ক্যাশ নামটিকে জন আর. ক্যাশে পরিণত করতে বাধ্য হন। ১৯৫৫ সালে সান রেকর্ডসে স্বাক্ষর করার সময়, তিনি জনি ক্যাশ নামটি ব্যবহার শুরু করেন।

১৯৩৫ সালের মার্চ মাস, ক্যাশের বয়স তখন মাত্র তিন বছর, পরিবারটি আরকানসাসের ডাইসে বসবাস শুরু করে। ওটা ছিল একটি নিউ ডিল কলোনি, দরিদ্র পরিবারগুলোকে জমি দেওয়া হচ্ছিল যেটা পরে তাদের হয়ে যাবে। পাঁচ বছর বয়স থেকে, ক্যাশ তার পরিবারের সাথে তুলো চাষ করতেন, গলা ছেড়ে গান করতেন ফসলের জমিতে। ডাইসে একবার বন্যা হয়, এতে ক্যাশ শস্যভান্ডার বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, এর প্রেক্ষিতে ক্যাশ "ফাইভ ফিট হাই অ্যান্ড রাইজিং" গানটি লিখেছিলেন । মহামন্দার সময় তার পরিবারের অর্থনৈতিক ও ব্যক্তিগত লড়াই তার অনেক গানকে অনুপ্রাণিত করেছিল, বিশেষত যারা একই রকম সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন তারা এসব গানের মধ্যে নিজেদের খুঁজে পেতেন। ফলস্বরূপ, ক্যাশের সব কাজেই দরিদ্র ও শ্রমিক শ্রেণির প্রতি সহানুভূতি ফুটে উঠেছে।

ক্যাশের বড় ভাই জ্যাক ছিলেন তার বেশ ঘনিষ্ঠ। ১৯৪৪ সালে জ্যাক কর্মক্ষেত্রে তিনি এক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। ওক কাঠের বেড়া কাটার টেবিল-স'তে এই দুর্ঘটনা ঘটে। জ্যাক প্রায় দুইটুকরো হয়ে যান, ফলে এক সপ্তাহ পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ভাইয়ের এই দুঃখজনক মৃত্যুর কারণে ক্যাশ গ্লানি অনুভব করেছিলেন, এ ব্যাপারে প্রায়ই কথা বলেছেন জীবনের বিভিন্ন সময়। ক্যাশ : দ্য অটোবায়োগ্রাফি বই থেকে এ ব্যাপারে জানা যায়, তার বাবা সেদিন সকালে বাড়ি ছিলেন না। জনি, তার মা, এমনকি জ্যাক নিজেও সেদিন ভাবছিলেন খারাপ কিছু ঘটবে। তার মা জ্যাককে কাজে না গিয়ে ভাইয়ের সাথে মাছ ধরার জন্য অনুরোধ করেছিলেন, তবে পরিবারটির তখন টাকার খুব প্রয়োজন। জ্যাক একরকম জোর করেই সেদিন কাজে যান এবং আহত হন। মৃত্যুর আগে জ্যাক বলেছিলেন যে তিনি স্বর্গ ও ফেরেশতাদের দেখতে পাচ্ছেন। কয়েক দশক পরে, ক্যাশ বলেছিলেন স্বর্গে তার ভাইয়ের সাথে তিনি দর্শনপ্রত্যাশা করেন।

প্রাথমিক জীবনে ক্যাশ গসপেল সংগীত এবং রেডিওর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। মা এবং শৈশবের এক বন্ধু শিখিয়েছিলো গিটার, ক্যাশ ১২ বছর বয়সেই গান বাজানো এবং লেখা শুরু করেন। তরুণ বয়সে ক্যাশের উচ্চ-কণ্ঠ ছিল, পরবর্তীতে তা পাল্টে তার বাস-ব্যারিটোন ধাঁচে রূপান্তরিত হয়।

উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় তিনি একটি স্থানীয় রেডিও স্টেশনে গান গেয়েছিলেন। কয়েক দশক পরে তিনি চিরায়ত গসপেল গানের একটি অ্যালবাম প্রকাশ করেছিলেন, যার নাম মাই মাদারস হিম বুক । ডেনিস ডের সাপ্তাহিক জ্যাক বেনি রেডিও প্রোগ্রামে পরিবেশিত প্রচলিত আইরিশ সংগীত শুনে তিনি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন।

সামরিক সেবা

১৯৫০ সালের জুলাইয়ের ৭ তারিখ মার্কিন বিমান বাহিনীতে যোগ দেন তিনি।। টেক্সাসের স্যান আন্তোনিওতে ল্যাকল্যাণ্ড এয়ার ফোর্স বেসে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ এবং ব্রুকস এয়ার ফোর্স বেসে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণের পরে ক্যাশকে জার্মানির ল্যান্ডসবার্গে মার্কিন বিমান বাহিনী সুরক্ষা পরিষেবার দ্বাদশ রেডিও স্কোয়াড্রন মোবাইলে নিয়োগ করা হয়েছিল। তিনি সোভিয়েত আর্মির রেডিও ট্রান্সমিশন ঠেকাতে মোর্স কোড অপারেটর হিসাবে কাজ করেছিলেন। ল্যান্ডসবার্গে থাকাকালীন তিনি তার প্রথম ব্যান্ড "দ্য ল্যান্ডসবার্গ বার্বারিয়ানস" তৈরি করেছিলেন। ১৯৫৪ সালের ৩ জুলাই তাকে স্টাফ সার্জেন্ট হিসাবে সম্মানজনকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং তিনি টেক্সাসে ফিরে আসেন। সামরিক চাকরির সময়, তিনি সিস্ট অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচারের টেবিলে একবার গিয়েছিলেন। একারণে চোয়ালের ডানদিকে চিরস্থায়ী একটি দাগ রয়ে যায়।

বিবাহ এবং পরিবার

১৯৫১ সালের ১৮ জুলাই বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ চলাকালীন ক্যাশ তার স্থানীয় সান আন্তোনিওতে রোলার স্কেটিং রিঙ্কের সময় ১৭ বছর বয়সি ইতালিয়ান-আমেরিকান ভিভিয়ান লিবার্তোর সাথে পরিচিত হন। ক্যাশকে তিন বছরের ট্যুরের জন্য জার্মানিতে মোতায়েন করার আগে তিন সপ্তাহের জন্য তারা প্রেম করেন। এই সময়ের মাঝেই এই প্রেমিকযুগলটি কয়েকশ পৃষ্ঠার প্রেমের চিঠি আদান-প্রদান করে। ১৯৫৪ সালের আগস্টে বিমানবাহিনীর অব্যহতির এক মাস পরেই তারা সান আন্তোনিওয়ের সেন্ট অ্যান রোমান ক্যাথলিক গির্জার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। অনুষ্ঠানটি তার চাচা ভিনসেন্ট লিবার্তো আয়োজন করেছিলেন। তাদের চার কন্যা ছিল: রোজান, ক্যাথি, সিন্ডি এবং তারা। ১৯৬১ সালে, জনি সপরিবারে ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাসিটাস স্প্রিংস হাইওয়ে ৩৩ এর ওজাইয়ের দক্ষিণে একটি ছোট্ট শহরে পাহাড়চূড়োর বাড়ীতে বসবাস শুরু করেন। এর আগে তিনি তার পিতামাতাকে জনি ক্যাশ ট্রেলার পার্ক নামে একটি ছোট ট্রেলার পার্কটি চালানোর জন্য এই অঞ্চলে নিয়ে গিয়েছিলেন। জনির মদ্যপানের ফলে স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে তার কয়েকবার টক্কর লেগে যায়। পরে লিবার্তো বলেছিলেন যে ক্যাশের অতিরিক্ত মাদক গ্রহণ ও অ্যালকোহলের অপব্যবহার, সার্বক্ষণিক ঘোরাঘুরি, অন্যান্য মেয়েদের সাথে প্রেমের সম্পর্ক এবং জুন কার্টারের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে ১৯৬৬ সালে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেছিলেন। তাদের চার কন্যা তখন থেকে মায়ের কাছে বড় হয়েছিল।

জনি ক্যাশ 
জনি ক্যাশ এবং তার দ্বিতীয় স্ত্রী, জুন কার্টার, 1969

ট্যুরে ভ্রমণের সময় বিখ্যাত কার্টার পরিবারের গায়িকা জুন কার্টারের সাথে ক্যাশের পরিচয় হয় এবং দু'জন একে অপরের প্রতি মোহিত হন। ১৯৬৮ সালে, প্রথম সাক্ষাতের (গ্র্যান্ড অলে ওপ্রেতে ব্যাকস্টেজে) ১৩ বছর পর অন্টারিওর লন্ডনে লাইভ পারফরম্যান্সের সময় জুনকে বিয়ের প্রস্তাব দেন ক্যাশ এই দম্পতি কেনটাকি ফ্র্যাঙ্কলিনে ৬৮র পয়লা মার্চে বিয়ে করেছিলেন। তাদের একটি সন্তান জন্ম নেয় ৭০ সালের তেসরা মার্চে, জন কার্টার ক্যাশ। জনি এবং জুন দুজনেরই ক্ষেত্রে সে ছিল প্রথম সন্তান।

২০০৩ সালের মে মাসে জুনের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কার্টার আর ক্যাশ একসাথে সন্তানকে বড় করা, সংগীত তৈরি এবং একসাথে ভ্রমণ চালিয়ে যান। বিয়ের পর থেকেই জুন ক্যাশকে অ্যাম্ফিটামিনের নেশা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। মাঝে মধ্যেই টয়লেটে ওসব ফেলে ফ্ল্যাশ করে দেওয়ার ঘটনা তিনি ঘটিয়েছেন। ক্যাশকে একাধিকবার রিহ্যাবে যেতে হয়েছে তাও, পুরোটা সময় জুন তার সঙ্গেই ছিলেন। জুনের মৃত্যুর পরে ক্যাশ বলেছিলেন তার বেঁচে থাকার একমাত্র কারণ এখন সংগীত। স্ত্রীর মৃত্যুর পর ক্যাশ মাত্র চার মাস বেঁচেছিলেন।

পেশা

প্রারম্ভিক কর্মজীবন

জনি ক্যাশ 
সান রেকর্ডস, ১৯৫৫ সালের পাবলিসিটি ফটো

১৯৫৪ সালে ক্যাশ আর ভিভিয়ান টেনেসির মেমফিসে বসবাস শুরু করেন। বেতারঘোষকের কাজে অধ্যয়নের যাবতীয় সরঞ্জাম তিনি এখানে এসে  বিক্রি করে দেন।  প্রতিরাতে গিটারিস্ট লুথার পার্কিনস ও বেজিস্ট মার্শাল গ্রান্টের সাথে সঙ্গীত চর্চা করা শুরু করেছিলেন তখন। পার্কিন্স এবং গ্র্যান্টকে মানুষ টেনেসি টু নামে চিনত। এক পর্যায়ে তিনি সান রেকর্ডস ষ্টুডিওতে যাওয়ার সাহস অর্জন করলেন। আশা করছিলেন রেকর্ডিংয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে পারবেন। স্যাম ফিলিপসের  সঙ্গে তার প্রথম অডিশন হয়েছিল। সেখানে তিনি মূলতঃ গেয়েছিলেন গসপেল। ফিলিপস জানালেন এখন আর তারা গসপেল রেকর্ড করেন না।  শোনা যায় ফিলিপসবাই ক্যাশকে এমনটাও বলেছিলেন, “বাড়ি গিয়ে কিছু পাপ করে এস, তারপর হয়ত এমন গান তোমার থেকে বের হবে যা আমি বাজারজাত করতে পারব।” অবশ্য ২০০২ সালের এক সাক্ষাতকারে ক্যাশ ফিলিপসের এমন কোনও বক্তব্য অস্বীকার করেন। পৰৱর্তীতে ক্যাশ ঠিকই ভিন্ন গান গেয়ে প্রডিউসার সাহেবের মন জয় করে নেন। সান থেকেই তিনি তার প্রথম রেকর্ডিং বের করেন, জুন মাসে রিলিজ পাওয়া “হেই পোর্টার” এবং “ক্রাই! ক্রাই! ক্রাই!” কান্ট্রি হিট হিসেবে ব্যাপক সফলতা পায়।

১৯৫৬ সাল। ডিসেম্বরের ৪ তারিখে ফিলিপসের ষ্টুডিওতে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য এসেছিলেন এলভিস প্রিসলি। তখন কার্ল পার্কিন্স নতুন এক গান নিয়ে কাজ করছিলেন, জেরি লি ছিলেন পিয়ানোতে। ষ্টুডিওতে ক্যাশও ছিলেন, চারজন মিলে জ্যাম সেশন শুরু করেছিলেন তারা। ফিলিপস রেকর্ডিং শুরু করে দিয়েছেন ততক্ষণে, অর্ধেকই গসপেলধর্মী গান। তখন থেকেই তারা “মিলিয়ন দলের কার্লেট” নাম রিলিজ পেতে শুরু করেন। ক্যাশ: দ্য অটোবায়োগ্রাফি বইয়ে তিনি লিখেছেন, এলভিসের সাথে গলা মেলানোর জন্য তিনি মাইক্রোফোন থেকে যত সম্ভব দূরে অবস্থান নিয়েছিলেন, তারপর গেয়েছিলেন হাই পিচে।

ক্যাশের পরবর্তী রেকর্ড, “ফলসম প্রিজন ব্লুজ” কান্ট্রি টপ ফাইভে স্থান করে নেয়। তার “আই ওয়াক দ্য লাইন” কান্ট্রি সং তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে, ঢুকে যায় পপ তালিকার শ্রেষ্ঠ বিশেও। এরপর রিলিজ পায় জুলাই ১৯৫৭ সালে রেকর্ড করা  “হোম অফ দ্য বলুজ।” এ বছরই ক্যাশ প্রথম সান আর্টিস্ট হিসেবে দীর্ঘ সময়সীমার অ্যালবাম বের করেন। সান ষ্টুডিওর সর্বাধিক বিক্রিত গায়ক হওয়ার পরও লেবেলে তার পরিকায় করানো হচ্ছে এই বিষয়টি ক্যাশকে পীড়া দিচ্ছিলো। ফিলিপস গসপেল রেকর্ড করতে তেমন একটা উৎসাহী ছিলেন না। সাধারণতঃ গায়কদের যে ৫% দেওয়া হয় তার বদলে ক্যাশ পাচ্ছিলেন ৩%। প্রিসলি ততদিনে সান থেকে বিদায় নিয়েছেন। ফিলিপসের পূর্ণ মনোযোগ তখন লুইসের প্রতি।

১৯৫৮ সালে কলম্বিয়া রেকর্ডসের দারুণ এক অফার লুফে নেন, সেই সঙ্গে শেষ হয় তার সান রেকর্ড ক্যারিয়ার। “টেক ইওর গানস টু টাউন” তার সর্বাধিক জনপ্রিয় একক অ্যালবামের  একটিতে পরিণত হয়, কলাম্বিয়ার জন্য অ্যালবাম তিনি গসপেল গেয়েই রেকর্ড করেন। এদিকে সান ছেড়ে এলেও অনেক অপ্রকাশিত গান তখনও ওখানে রয়ে গেছিল। কাজেই ফিলিপস সেসব প্রকাশ করতে শুরু করলেন, একদম ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত সেই রিলিজ চলতে  থাকে। ক্যাশ এখানে দুটো লেবেল থেকে প্রকাশিত হওয়ার এক বিরল সুজোগ পেয়ে জান. সান থেকে প্রকাশিত ১৯৬০ সালের “ওহ লোনসাম মি”র কাভার সি&ডব্লিউ চার্টের ১৩ তম স্থান অধিকার করে।

(আরসিএ ভিক্টর প্রিসলিকে সাইন করানোর সময় তার সান রেকর্ড মাস্টারগুলোও কিনে নিয়েছিল, তবে ক্যাশ প্রসঙ্গে ফিলিপস সান মাস্টার বিক্রি করতে রাজি হননি। কাজেই কলাম্বিয়া কিছু রেকর্ডিংয়ের মরণোত্তর স্বত্ব  কিনে রাখে।)

জনি ক্যাশ 
১৯৬৩ সালে দ্য টেনিসি থ্রির সাথে ক্যাশ

ক্যারিয়ারের প্রথমদিকে ক্যাশকে তার সহকর্মীর মজা করে “আজরাইল” বলে ডাকতেন। কারণ, তিনি সব সময় কালো জামা পরে গান করতে অভ্যস্ত ছিলেন। এর ব্যাখ্যায় তিনি জানান, দীর্ঘ টুরে কালো পড়লে সব সময় পরিচ্ছন্ন দেখায়।

ষাটের দশকের শুরুতে ক্যাশ কার্টার পরিবারে সঙ্গে কিছু টুরে  গিয়েছিলেন। মেবিলির মেয়েরাও সেখানে ছিল: অনিতা, জুন এবং হেলেন। পরবর্তীতে জুন মনে করতে পারেন এই টুরের পুরো সময়টিই দূর থেকে মুগ্ধতা নিয়ে ক্যাশকে দেখেছিলেন তিনি। ষাটের দশকে স্বল্প সময়ের জন্য পিট্ সিগারের টেলিভিশন সিরিজ রেইনবো কুয়েস্টে অংশও নেন ক্যাশ। ফাইভ মিনিটস টু লিভ নামক এক চলচ্চিত্রের প্রারম্ভ সঙ্গীত লিখেছিলেন, কণ্ঠও দিয়েছেন। পরবর্তীতে এই গানটি ডোর টু ডোর ম্যানিয়াক নাম আলাদা করেও বাজারে এসেছিল।

লন্ডন ও অন্টারিওর প্রমোটার সল হলিফ ক্যাশের ক্যারিয়ারের দেখভাল করছিলেন তখন।  তাদের এই সম্পর্ক নিয়েই পরবর্তীতে সলের ছেলে একটি বায়োপিক নির্মাণ করেন, নাম “মাই ফাদার এন্ড দ্য ম্যান ইন ব্ল্যাক।” .

আউটল ইমেজ

পঞ্চাশের দশকে যখন ক্যারিয়ারে নানা রকম সফলতার দেখা পাচ্ছিলেন, একই সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেলেন অত্যধিক  মদ্যপানে। আসক্ত হয়ে পড়েন অ্যাম্ফিট্যামিন ও বারবিচুরেটে। সাময়িক সময়ের জন্যতিনি ন্যাশভিলের এক আপার্টমেন্টে বসবাস করেন, সেখানে ছিল ওয়েলন  জেনিংস, একজন অ্যাম্ফিট্যামিন আসক্ত। বন্ধুরা তার অল্পে ঘাবড়ে যাওয়া আর অস্থিরতা নিয়ে মজা করত। তখন কেউ বুঝতে পারেননি তা ছিল মাদকাসক্তিতে আরও গভীরভাবে ডুবে যাওয়ার লক্ষণ।

এতো সমস্যায় জড়িয়েও তিনি তার কাজে সৃজনশীলতার অনবদ্য স্বাক্ষর রেখেই যাচ্ছিলেন। “রিং অফ ফায়ার” গানটির অনুবাদটি দারুণ হিট হয়েছিল। কান্ট্রি চার্টে আবারও প্রথম হল গানটি, ঢুকে গেল পপ গানের শ্রেষ্ঠ বিশে। গানটি মূলতঃ করেছিল জুনের বোন, তবে ক্যাশ তার নিজস্ব ধাঁচের ম্যারিয়াকি স্টাইলের স্বাক্ষর রাখার কারণেই তা অন্যে এক উচ্চতায় পৌঁছে যায়। পরবর্তীতে ক্যাশ বলেন, গানটি স্বপ্নে পেয়েছিলেন তিনি। ভিভিয়ান লিবার্তো অবশ্য আরেকটা গল্প বলেছেন তার “আই ওয়াকড দ্য লাইন: মাই লাইফ উইথ জনি” বইয়ে. সেখানে তিনি উল্লেখ করেন গীতিকারের কৃতিত্ব অর্ধেকটা কার্টারকে দেওয়ার পেছনে অর্থনৈতিক ভূমিকা ছিল।

১৯৬৫ সালের জুন মাসে লস পাদ্রেস ন্যাশনাল ফরেস্টে এক মাছধরার প্রমোদভ্রমণে গিয়েছিলেন তিনি, সঙ্গে ছিল ভাতিজা ডেমন ফিল্ডার। ক্যাশের ক্যাম্পারে সেবার আগুন ধরে যায়. সেখান থেকে ছড়িয়ে যায় গোটা বনেই। সে যাত্রায় আরেকটু হলেই প্রাণ হারিয়েছিলেন তিনি। ক্যাশ দাবী করেন, আগুনটা ধরেছিল তার ক্যাম্পারের ত্রূটিপূর্ণ এগজস্ট সিস্টেমের কারণে। তার বক্তব্য অবশ্য ফিল্ডার গ্রহণ করেননি। তিনি মনে করেন আগুনটা ক্যাশ নিজেই ধরিয়েছিলেন, মাতাল অবস্থায় উষ্ণতার খোঁজে। পরবর্তীতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায়  তা-ই ছড়িয়ে গেছে বনের মধ্যে। বিচারক যখন ক্যাশকে প্রশ্ন করলেন তিনি কেন এমনটা  করেছেন,উত্তরে তিনি বলেছিলেন “আমি তো করিনি। করেছে আমার ট্রাক। সে এখন বেঁচে  নেই, কাজেই তাকে আপনি কোনও প্রশ্ন করতে পারছেন না।”

এই দাবানলে ৫০৮ একর বনভূমি ধ্বংস হয়েছিল, তিনটি পাহাড়ের সব পর্ণরাজি পুড়ে চাই হয়ে যায়, সেই সাথে বিপন্নপ্রায় ৫৩ ক্যালিফোর্নিয়ার শকুনের ৪৯ টিই গৃহহীন হয়ে যায়। তথ্যটি জানার পর ক্যাশকে মোটেও অনুতপ্ত হতে দেখা যায়নি। বরং তিনি কেবল বলেছিলেন, “তোমাদের ওসব হলুদ পাখি নিয়ে আমার কোনও মাথাব্যথা নেই!” ফেডারেল গভর্নমেন্ট তার থেকে ১২৫,১৭২ ডলার ক্ষতিপূরণ দাবী করে, শেষতক মামলাটা মিটমাট হয়েছিল ক্যাশ ৮২,০০১ ডলার দেওয়ার পর। ২০১৭ সালের হিসেবে অনুসারে গোটা বিশ্বেই বন্য এবং সংরক্ষিত সব মিলিয়ে মাত্র ৪৬৩টি ক্যালিফোর্নিয়া কনডোর রয়েছে।

এমন এক আইনবিরোধী ইতিহাস থাকার পরও ক্যাশকে কখনও জেলে যেতে হয়নি। সাত বার আদালতে হাজির হয়েছিলেন তিনি, অথচ প্রতিবার হাজতে মাত্র এক রাত কাটিয়েই বেরিয়ে গেছেন তিনি। ১৯৬৫ সালের মে মাসের ১১ তারিখ তাকে স্টার্কভাইলে গ্রেফতার করা হয়েছিল। অপরাধ: অন্যের জমিতে ঢুকে ফুল তুলছিলেন। এই ঘটনার কথা তিনি লিখেছিলেন স্টার্কভাইল সিটি জেইল গানে। একই বছর অক্টবরের ৪ তারিখ টেক্সাসে গ্রেফতার হয়েছিলেন নারকোটিক স্কোয়াডের হাতে। তাদের সন্দেহ ছিল মেক্সিকো থেকে তিনি হেরোইন পাচার করছিলেন। তার বদলে ওরা গায়কের গিটারের মধ্যে খুঁজে পেল ৬৮৮টি ডেক্সাড্রাইন ক্যাপসুল (মূলতঃ অ্যাম্ফিট্যামিন) আর ৪৭৫টি ইকুয়ারিল (সিডেটিভ)। অবৈধ মাদকদ্রব্যর বদলে প্রেসক্রিপশন ড্রাগস নিয়ে ধরা পড়েই বেঁচে গেলেন তিনি। স্বল্প সময়ের জন্য সাজা হল সে যাত্রা। ১৫০০ ডলারের  একটি বন্ড স্বাক্ষর করে তবেই ছাড়া পেয়েছিলেন তিনি।

ষাটের দশকের মাঝামাঝি ক্যাশ বেশ কয়েকটি কনসেপ্ট অ্যালবাম প্রকাশ করেন। তার বিটার টিয়ার্স (১৯৬৪) অ্যালবাম তিনি নেটিভ আমেরিকানদের জন্য লিখেছিলেন, বলেছিলেন সরকারের করা তাদের প্রতি যত অনাচারের কথা। হিট চার্টে গানগুলি বেশ জনপ্রিয়তা পেলেও তীব্র সমালোচনা হয়েছিল রেডিও ও ভক্তদের মধ্যে। তাদের ধারণা ছিল এই গানগুলো থেকে সমাজে বিতর্ক জন্ম নিতে পারে। ২০১১ সালে এক বইয়ে এই অ্যালবামের কথা লেখা হওয়ার আগে ব্যাপারটি মানুষ ভুলেই গিয়েছিল। পরবর্তীতে পুরো অ্যালবামটিকেই সমসাময়িক  গায়কদের সহায়তায় রি-রেকর্ড করা হয়। নির্মিত হয় এই অ্যালবামের জন্য ক্যাশের প্রচেষ্টা নিয়ে এক প্রামাণ্যচিত্রও। ২০১৬র ফেব্রূয়ারি ও নভেম্বরে সেই ফিল্ম সম্প্রচারিত হয় পিবিএসে। তার “হিজ সিংস  দ্য ব্যালাডস অফ দ্য টু ওয়েস্ট (১৯৬৫)” ছিল এক পরীক্ষামূলক কাজ, ওখানে প্রান্তিক গায়কদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছিলেন ক্যাশ।

ধ্বংসাত্মক এই কাজগুলোর পাশাপাশি মাদকের আসক্তির কারণে প্রথম বিয়েটা টিকল না আর। শুধু বৈবাহিক জীবনই নয়, ক্যাশ বেশ কয়েকটি শো ক্যান্সেল করতে বাধ্য হন একই কারণে। অবশেষে ১৯৬৭ থেকে আবারও সফলতার দেখা পেতে শুরু করলেন তিনিম জুন কার্টারের সাথে জ্যাকসন গানে ডুয়েট করে একটি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড পেয়ে যান তিনি।

শেষবার ক্যাশ গ্রেফতার হয়েছিলেন ১৯৬৭ সালে, জর্জিয়ার ওয়াকার কাউন্টিতে। সেবার গাড়ি দুর্ঘটনার পর যথারীতি এক ব্যাগ প্রেসক্রিপশন ড্রাগস পাওয়া গেল, পরিস্থিতি আরও খারাপ করতেই হয়ত তিনি সেই পুলিশ অফিসারকে ঘুষ সেধে বসলেন। নীতিপরায়ণ এই পুলিশ সেই ঘুষটি নেননি। বিখ্যাত গায়কের সেই রাতটা জর্জিয়ার লাফ্যায়াটের জেলে। শেরিফ রালফ জোনস তাকে ছাড়ার আগে দীর্ঘ এক ভাষণ দিয়ে তবেই  ছাড়লেন,মনে করিয়ে দিলেন তিনি কীভাবে নিজের প্রতিভা নষ্ট করছেন। পরবর্তীতে এই ঘটনাটিকে তার পরিবর্তনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে স্বীকার করেছেন ক্যাশ। এমনকি লাফ্যায়াটেতে এক বেনিফিট কনসার্টের আয়োজন করেছিলেন তিনি। লোক এসেছিল ১২,০০০ অথচ শহরের অধিবাসীর সংখ্যাই তখন ৯০০০ এর কম। ৭৫,০০০ ডলার উঠেছিল সেই কনসার্ট থেকে। পুরোটাই চলে গেছিল হাই স্কুলের জন্য। ১৯৯৭ সালের এক ইন্টারভিউয়ে তিনি অতীতের কথা মনে করতে গিয়ে বলেছিলেন, “শুরুতে আমি পিল  খেতাম,পরে পিলগুলোই আমাকে খেতে শুরু করল।”

১৯৬৭ সালের এক ঘটনার কথা জানা যায়, অবশ্য কেউ এই ঘটনার সত্যতা নিরূপণ করতে পারেননি, নিক্যাজ্যাক গুহায় তিনি অলৌকিক দর্শনের দেখা পেয়েছিলেন। গুজব অনুসারে, মাদকাসক্তির এক পর্যায়ে ক্যাশ আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। গুহার গভীরে ঢুকে নিজেকে ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি, বাইরে আর ফেরার ইচ্ছে তার ছিল না। মরতে তিনি অবশ্য পারেননি, বরং জ্ঞান হারিয়ে পরে ছিলেন মেঝেতে। ক্রমভাবে হতাশ হয়ে তিনি হৃদয়ের মধ্যে যিশুর উপস্থিতি অনুভব করেন এবং এক সময় অনুভব করেন অদ্ভুত এক আলো তাকে গুহার বাইরে যাওয়ার পথ দেখাচ্ছে। তার মনে হয়েছিল-এই ঘটনার মাধ্যমে তিনি পুনর্জন্ম লাভ করেছেন। জুন, মেবেল আর এজরা কার্টার ক্যাশের প্রাসাদে চলেই এলেন তাকে আসক্তি থেকে দূরে থাকায় সাহায্য করতে। এরপর ১৯৬৮ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারিতে লাইভ পারফরম্যান্সে স্টেজের ওপরই জুনকে বিবাহপ্রস্তাব দেন তিনি। সেই প্রস্তাবনার এক সপ্তাহ পরেই কানাডার অন্টারিওতে এই প্রেমিকযুগল বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ক্যাশ নেশার পথ থেকে সরে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরই জুন সে প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন বলে তিনি পরবর্তীতে জানান।

ক্যাশের জীবনী প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, খ্রিস্টান ধর্মে নতুন করে ফিরে আসার এক ইতিহাস তার আছে। এভানজেল মন্দির নামক ন্যাশভিলের এক ছোট চার্চে তিনি অল্টার কল নিয়েছিলেন। যাজক রেবারেন্ড জিমি রজার স্নো সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ভদ্রলোক আবার কান্ট্রি মিউজিক লিজেন্ড হ্যাংক স্নোর ছেলে। মার্শাল গ্র্যান্টের তথ্য মোতাবেক ক্যাশ অবশ্য ১৯৬৮ সালে অ্যাম্ফেটামিনের অপব্যবহার বন্ধ করেননি। তিনি একেবারে ১৯৭০ পর্যন্ত অন্য সব মাদক নিয়ে গেছেন, তারপর সাত বছর এসব থেকে দূরে ছিলেন। গ্র্যান্ট বলেছিলেন জন ও জুনের প্রথম সন্তান জন কার্টার ক্যাশের জন্মের পর তিনি মাদক থেকে সরে আসার জন্য যথেষ্ট অণুপ্রেরণা পেয়েছিলেন।

১৯৭৭ সালে তিনি আবারও অ্যাম্ফেটামিনের জগতে ফিরে আসেন। এ দফায় তিনি এত বেশি আসক্ত হয়ে পড়েন যে ১৯৮৩ সালে বেটি ফোর্ড ক্লিনিকে তাকে ভর্তি হতে হয়। তারপর আবারও কয়েক বছর ড্রাগস থেকে দূরে থাকার পর আবারও পদস্খলন হয় তার। ১৯৮৯ সালে আবারও মাদকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন তিনি। তারপর ন্যাশভাইলের কাম্বারল্যান্ড ফাইটস অ্যালকোহল অ্যান্ড ড্রাগস ট্রিটমেন্ট সেন্টারে আবারও ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৯২ সালে লোমা লিন্ডা বিহ্যাভিওরাল মেডিকেল সেন্টার ছিলো তার সর্বশেষ রিহ্যাব। এর কয়েক মাস পর অবশ্য একই ফ্যাসিলিটিতে তার ছেলেও চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন।

মৃত্যু

ন্যাশভাইলের ব্যাপ্টিস্ট হসপিটালে ভর্তি থাকা অবস্থাতেই ডায়াবেটিসের কারণে মারা যান তিনি। মৃত্যুর সময় ছিলো রাত দুটো, সেপ্টেম্বরের ১২ তারিখ, ২০০৩ সাল। ৭১ বছর বয়সে স্ত্রীর মৃত্যুর চার মাসেরও কম সময়ের মধ্যে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কার্টারের পাশেই তাকে টেনিসির হেন্ডারসনভিল মেমরি গার্ডেনসে কবর দেওয়া হয়।

আত্মজীবনীতে ক্যাশ লিখেছিলেন ১৯৭৭ সালে নিউ ইয়র্কের এক ট্রিপে থাকা অবস্থায় তার দেহে শাই-ড্র্যাগার সিনড্রোম ধরা পড়েছিল।

তথ্যসূত্র

Tags:

জনি ক্যাশ প্রারম্ভিক জীবনজনি ক্যাশ সামরিক সেবাজনি ক্যাশ বিবাহ এবং পরিবারজনি ক্যাশ পেশাজনি ক্যাশ মৃত্যুজনি ক্যাশ তথ্যসূত্রজনি ক্যাশগিটাররক অ্যান্ড রোল হল অব ফেমসঙ্গীত ধারাসর্বোচ্চ-বিক্রি সঙ্গীত শিল্পী তালিকা

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

জিৎ অভিনীত চলচ্চিত্রের তালিকাসেশেলসজাতীয় স্মৃতিসৌধসিলেটহাইড্রোজেনবাংলাদেশের সংবিধানের সংশোধনীসমূহমৃত্যু পরবর্তী জীবনইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজিনীল বিদ্রোহদারুল উলুম দেওবন্দউত্তর চব্বিশ পরগনা জেলালোহাবিজয় দিবস (বাংলাদেশ)আইনজীবীভারতের প্রধানমন্ত্রীদের তালিকাআল পাচিনোকুয়েতমাশাআল্লাহমৌলিক পদার্থের তালিকাহিন্দুধর্মবেলারুশবীর শ্রেষ্ঠবিশ্ব ব্যাংকপায়ুসঙ্গমবীর্যস্বাধীনতাআসরের নামাজমুজিবনগর সরকারমামুনুর রশীদজানাজার নামাজসূরা মাউনক্যালাম চেম্বার্সমনোবিজ্ঞানমাহিয়া মাহিখোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরসোমালিয়ামাইকেল মধুসূদন দত্তভিটামিনবাংলাদেশের উপজেলার তালিকাভূগোলসামরিক বাহিনীক্রিটোসামন্ততন্ত্রপাখিবাংলা ভাষামানব মস্তিষ্কস্লোভাক ভাষামিশরহেপাটাইটিস বিজ্ঞানউদ্ভিদকোষসংযুক্ত আরব আমিরাতশিয়া ইসলামবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়মিয়া খলিফাঅ্যাসিড বৃষ্টিআসসালামু আলাইকুমসাইপ্রাসরক্তের গ্রুপবঙ্গভঙ্গ আন্দোলনপাঠশালাফরিদপুর জেলাকাঁঠালপল্লী সঞ্চয় ব্যাংকশিক্ষাপদার্থবিজ্ঞানসালোকসংশ্লেষণবগুড়া জেলাপর্যায় সারণী (লেখ্যরুপ)ইসলামের ইতিহাসশ্রীবিজয়া এয়ার ফ্লাইট ১৮২গ্রামীণ ব্যাংকওমানউইকিবইরাষ্ট্রমুসাডেঙ্গু জ্বর🡆 More