কিরণ খের (হিন্দি: किरण खेर, জন্ম: কিরণ ঠাকর সিং, ১৪ জুন ১৯৫৫) হলেন একজন ভারতীয় মঞ্চ, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অভিনেত্রী। অভিনয় জীবনে তিনি দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন, প্রথমবার সর্দারী বেগম (১৯৯৬) চলচ্চিত্রের জন্য বিশেষ জুরি পুরস্কার এবং দ্বিতীয়বার বাড়িওয়ালি (২০০০) চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার। কিরণ অভিনীত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হল দেবদাস (২০০২), খামোশ পানি (২০০৩), রং দে বাসন্তী (২০০৬), কুরবান (২০০৯) ও পাঞ্জাব ১৯৮৪ (২০১৪)।
কিরণ খের এমপি | |
---|---|
किरण खेर | |
চণ্ডীগড়ের সংসদ সদস্য | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ১৬ মে ২০১৪ | |
পূর্বসূরী | পবন কুমার বনসল |
উত্তরসূরী | নির্ধারিত হয়নি |
সংখ্যাগরিষ্ঠ | ৬৯,৬৪২ (১৫.৪০%) |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | কিরণ ঠাকর সিং ১৪ জুন ১৯৫৫ বোতাড়, পাঞ্জাব, ভারত |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
রাজনৈতিক দল | ভারতীয় জনতা পার্টি |
দাম্পত্য সঙ্গী | গৌতম বেরি (বি. ১৯৭৯; বিচ্ছেদ. ১৯৮৫) অনুপম খের (বি. ১৯৮৫) |
সন্তান | সিকন্দর খের |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়, চণ্ডীগড় |
পেশা | অভিনেত্রী, রাজনীতিবিদ |
ধর্ম | শিখ |
অভিনেতা অনুপম খের তার স্বামী। কিরণ ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সদস্য। ২০১৪ সালে মে মাসে তিনি ভারতীয় সংসদের নিম্ন আসন লোকসভা নির্বাচনে চণ্ডীগড় থেকে নির্বাচিত হন।
কিরণ ঠাকর সিং ১৯৫৫ সালের ১৪ই জুন চণ্ডীগড়ে এক জাট শিখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ও বেড়ে ওঠেন। কিরণের এক ভাই ও দুই বোন রয়েছে। তার ভাই চিত্রশিল্পী অমরদ্বীপ সিং ২০০৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার এক বোন হলেন অর্জুন পুরস্কার বিজয়ী ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় কনওয়াল ঠাকর কাউর এবং অন্য বোন শরনজিত কাউর সান্ধু ভারতীয় নৌবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার স্ত্রী।
কিরণ মধ্য প্রদেশের জবলপুরে বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং চণ্ডীগড়ে তার বিদ্যালয়ের অধ্যয়ন শেষ করেন। পরে তিনি চণ্ডীগড়ের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় নাট্যকলা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
কিরণ ১৯৭৯ সালের মার্চ মাসে মুম্বই ভিত্তিক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী গৌতম বেরির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই বিবাহ পরবর্তী তিনি 'কিরণ বেরি' নাম ধারণ করেন। তাদের এক পুত্র সিকান্দার খের। ১৯৮০-এর দশকে কিরণ মুম্বইয়ে চলচ্চিত্রে যোগ দেওয়ার চেষ্টায় রত ছিলেন। এই সময়ে চলচ্চিত্রে কাজ পেতে তিনি প্রযোজকদের দ্বারস্ত হতে থাকেন এবং সে সময়ে তারই মত প্রযোজকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকা অনুপম খেরের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা হয়। এছাড়া একই মঞ্চ সার্কের সাথে চলতে গিয়ে তারা চান্দপুরি কি চম্পাবাঈ নাটকে একত্রে অভিনয় করেন। ১৯৮৫ সালে অনুপম সারাংশ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সফলতা পেলে কিরণ গৌতম বেরির সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করেন এবং অনুপম খেরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। খেরের সাথে বিয়ের পর তিনি তার কুমারী নামের সাথে তার স্বামীর নামের শেষাংশ যোগ করে 'কিরণ ঠকর সিং খের' নামে পরিচিত হন। পরবর্তী জীবনে তিনি জ্যোতিষশাস্ত্রে বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন এবং ২০০৩ সালে ৪৮ বছর বয়সে জ্যোতিঃগণনা অনুসারে তার কুমারী নাম বাদ দেন এবং 'কিরণ খের' নামে পরিচিতি অর্জন করেন।
১৯৮৩ সালে পাঞ্জাবি চলচ্চিত্র অস্ত্র প্যায়ার দা চলচ্চিত্র দিয়ে কিরণ খেরের চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় এবং তিনি বিপুল সমাদৃত হন। তার পরবর্তী চলচ্চিত্র ছিল পেস্তোনজি (১৯৮৭), এতে তিনি তার দ্বিতীয় স্বামী অনুপম খেরের সাথে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করে। এরপর তিনি ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত চলচ্চিত্রে অভিনয় থেকে দূরে ছিলেন।
১৯৯০-এর দশকে তিনি মঞ্চ অভিনয় দিয়ে অভিনয়ে ফিরেন এবং নাট্যকার জাভেদ সিদ্দিকীর রচনায় ও ফিরোজ আব্বাস খানের নির্দেশনায় সালগিরাহ নাটকে অভিনয় করেন। তিনি এই সময়ে তিনটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন। জি টিভির পুরুষক্ষেত্র অনুষ্ঠানটি প্রথমবারের মত বিপরীত যৌনতা বিষয়ক আলোচনা ও নারী সম্পর্কিত বিষয়াবলি আলোকপাত করার জন্য তা দর্শক মহলে সাড়া ফেলে। অন্য দুটি অনুষ্ঠান ছিল কিরণ খের টুডে এবং জাগতে রাহো উইথ কিরণ খের।
১৯৯৬ সালে তিনি শ্যাম বেনেগালের সর্দারী বেগম দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিনয়ে ফিরে আসেন। এই কাজের জন্য তিনি ১৯৯৭ সালে প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে বিশেষ জুরি পুরস্কার অর্জন করেন।
তিনি ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত বাংলা চলচ্চিত্র বাড়িওয়ালি (১৯৯৯) চলচ্চিত্রে মধ্য বয়সী একাকী নারী বনলতা চরিত্রে অভিনয় করে সমাদৃত হন এবং শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি এই চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য ঘোষিত হলে বিতর্কের সৃষ্টি হয় এবং বাংলা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রিতা কৈরাল দাবী করেন তিনি কিরণের চরিত্রের অংশটুকুর বাংলা ডাবিং করেছেন, ফলে তিনিও এই পুরস্কারের সমান দাবীদার। কিরণ যুক্তি দেখান তিনি তার চরিত্রের সংলাপ ক্ষেপণের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন এবং অবশেষে পুরস্কারটি ভাগ হয়নি।
২০০২ সালে তিনি সঞ্জয় লীলা ভন্সালী পরিচালিত দেবদাস চলচ্চিত্রে শাহরুখ খান, ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন ও মাধুরী দীক্ষিতের সাথে অভিনয় করেন। এই ছবিতে ঐশ্বর্যা অভিনীত পারু চরিত্রের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন এবং শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে আইফা পুরস্কার অর্জন করেন।
খামোশ পানি (২০০৩) চলচ্চিত্রে ভারত বিভাজনের সময় একজন শিখ নারী অপহরণের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, এতে তার চরিত্রটি তার পরিবারের কথামত আত্মহত্যা থেকে বিরত থাকে, তার অপহরণকারীকে বিয়ে করে এবং তার মৃত্যুর পর স্থানীয় শিশুদের কোরআন শিক্ষার মাধ্যমে উপার্জনের ব্যবস্থা করে। পরে ১৯৭৯ সালে জিয়া-উল-হকের শাসনামলে ও তার পাকিস্তানের ইসলামিকরণ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে তার পুত্র ইসলামি জঙ্গীবাদে যোগ দেয়। এই কাজের জন্য তিনি সুইজারল্যান্ডের লোকার্নো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউন ও করাচি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন এবং চলচ্চিত্রটি লোকার্নোর গ্র্যান্ড প্রাইজ গোল্ডেন লিওপার্ড জয় করে।
খামোশ পানি পরবর্তী তিনি বেশিরভাগ পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন, তন্মধ্যে কয়েকটি সফল চলচ্চিত্র হল ম্যাঁয় হুঁ না (২০০৪), হাম তুম (২০০৪), বীর-জারা (২০০৪) এবং মঙ্গল পাণ্ডে: দ্য রাইজিং (২০০৫), এই ছবিগুলোতে তার কাজ বিপুল প্রশংসিত হয়। রং দে বাসন্তী (২০০৬) ছবিটি হিট হয় এবং তিনি তার দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন এবং শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে স্ক্রিন পুরস্কার অর্জন করেন। ফনা (২০০৬) ও কভি আলবিদা না কেহনা (২০০৬) ছবিতে তার অভিনয় প্রশংসিত হয়। ২০০৭ সালে তিনি একাধিক তারকা সমৃদ্ধ ওম শান্তি ওম চলচ্চিত্রে নাম ভূমিকায় অভিনয় করা শাহরুখ খানের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন। ২০০৮ সালে তিনি সিং ইজ কিং, সাস বহু অউর সেনসেক্স এবং দোস্তানা ছবিতে কৌতুক চরিত্রে অভিনয় করে।
২০০৯ সালে তিনি গট ট্যালেন্ট ধারাবাহিকের ভারতীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি ইন্ডিয়াস গট ট্যালেন্ট অনুষ্ঠানের বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। একই বছর তিনি কুরবান (২০০৯) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে অপ্সরা পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৪ সালে তিনি পাঞ্জাব ১৯৮৪ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে পিটিসি পাঞ্জাবি চলচ্চিত্র সমালোচক পুরস্কার অর্জন করেন।
কিরণ খের অলাভজনক আন্দোলন লাডলি (নারীর প্রতি সহিংসতা দমনের আন্দোলন) ও রোকো ক্যান্সার (ক্যান্সার বিষয়ক সচেতনতামূলক আন্দোলন)-এর সাথে জড়িত। তিনি ২০০৯ সালে ভারতীয় জনতা পার্টিতে (বিজেপি) যোগদান করেন। তিনি নির্বাচনের সময় দেশব্যাপী এই দলের জন্য জনসংযোগ করেন, তন্মধ্যে রয়েছে ২০১১ সালের চণ্ডীগড় মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন নির্বাচন। তিনি বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদী প্রার্থীতা লাভের আগে থেকেই তার সমর্থক ছিলেন। বিজেপি তাকে ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে চণ্ডীগড় থেকে লোকসভা নির্বাচনের জন্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়। তিনি ২০১৪ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১,৯১,৩৬২ ভোট পেয়ে পূর্ববর্তী সাংসদ কংগ্রেস নেতা পবন বনসলকে পরাজিত করে বিজয়ী হন।
চণ্ডীগড়ের সংসদ সদস্য হিসেবে এবং চলচ্চিত্র শিল্পে তার যোগাযোগের সূত্র ধরে কিরণ চণ্ডীগড়ে একটি চলচ্চিত্র নগরী গড়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু নির্বাচনে বিজয়ের পর তিনি জানান যে চণ্ডীগড়ে জমি অধিগ্রহণে সমস্যা রয়েছে। তবে চণ্ডীগড় প্রশাসন তার প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে এবং চণ্ডীগড়ের সরংপুরে চলচ্চিত্র নগরী স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
চণ্ডীগড়ে অটোরিকশায় উঠে চালক ও তার সহযোগীদের দ্বারা এক তরুণী গণধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনায় তিনি নারীদের আরও সতর্ক হতে এবং অপরিচিত কারো সাথে ভ্রমণ পরিহার করতে পরামর্শ দিলে বিরোধী দল থেকে ও সামাজিক মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article কিরণ খের, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.