অরুণা আসফ আলী (১৯০৯-১৯৯৬) ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগ্রামী ও একজন সমাজকর্মী ছিলেন। অরুণা আসফ আলীকে আন্তঃরাষ্ট্রীয় বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে ১৯৯১ সালে জওহরলাল নেহরু পুরস্কার প্রদান করা হয়। ১৯৯৭ সালে ভারত সরকার তাকে দেশের সর্ব্বোচ্চ সম্মান ভারত-রত্ন উপাধিতে সম্মানিত করে আর ১৯৬৪ সালে তাকে আন্তঃরাষ্ট্রীয় লেলিন শান্তি পুরস্কারে বিভূষিত করা হয়। সমাজে প্রগতি আর শান্তির চেষ্টার কারণে ১৯৫৫ সালে তাকে সোভিয়েট দেশে নেহরু পুরস্কারে সম্মানিত করে। তিনি দিল্লী মহানগরের প্রথম মহিলা মেয়র ছিলেন। তিনি জাতীয় মহিলা ফেডারেশনের সভানেত্রীও ছিলেন। তিনি জাতীয় মহিলা কনফারেন্সের সাথে জড়িত থাকার কারণে দিল্লী কংগ্রেস কমিটীর সভানেত্রী হন।
অরুণা আসফ আলী | |
---|---|
জন্ম | অরুণা গাঙ্গুলি ১৬ জুলাই, ১৯০৯ |
মৃত্যু | ২৯ জুলাই ১৯৯৬ | (বয়স ৮৭)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
মাতৃশিক্ষায়তন | স্যাক্রেড হার্ট কনভেন্ট |
পেশা | শিক্ষক, সমাজতান্ত্রিক, ভারতের মুক্তি সংগ্রামী, রাজনীতিবিদ, সংবাদপত্র প্রকাশক |
রাজনৈতিক দল | ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি |
দাম্পত্য সঙ্গী | আসফ আলী (বি. ১৯২৮; মৃ. ১৯৫৩) |
পুরস্কার | ভারতরত্ন (১৯৯৭) |
অরুণা আসফ আলীর জন্ম হয় ১৯০৯ সালের ১৬ জুলাই তারিখে তখনকার পঞ্জাব প্রদেশের কালকা নামক শিবালিক পর্বতের পাদদেশের এক ছোট শহরে। তার পূর্ব নাম ছিল অরুণা গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন এক বাঙালী ব্রাহ্ম পরিবারের মেয়ে। গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের আদি নিবাস পূর্ব বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশের) বরিশাল জেলায়। পিতা নাম উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, মাতা অম্বালিকা দেবী ব্রাহ্ম সমাজের নেতা ও ব্রহ্ম সঙ্গীত রচয়িতা ত্রৈলোক্যনাথ সান্যালের কন্যা। অরুণার এক কাকা নগেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কনিষ্ঠা কন্যা মীরা দেবীর বিবাহ হয়, আরেক কাকা ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় 'বম্বে টকিজে'র চলচ্চিত্র পরিচালক। ১৯২৮ সালে তিনি অধিবক্তা, মুক্তি সংগ্রামী, দেশকর্মী আসফ আলীর সাথে বিবাহ পাশে আবদ্ধ হন।
১৯৪২ সালের ৮ আগস্ট নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটি ভারত ছাড়ো প্রস্তাব গ্রহণ করলে অরুণা আসফ আলী দেশবাসীকে এই শেষ সংগ্রামটিতে অংশগ্রহণ করতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই খবর পাওয়ার সাথে সাথে ব্রিটিশ সরকার মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু প্রমুখ দেশনেতাদের গ্রেপ্তার করার সাথে সাথে চারিদিকে বিদ্রোহ আরম্ভ হয়। দেশের জনতা রাজপথে বেরিয়ে এসে বন্দে মাতরম, মহাত্মা গান্ধী কী জয়, ব্রিটিশ ভারত ছাড়ো ধ্বনিতে আকাশ কাঁপিয়ে তোলে। তারপর বহু নেতা আত্মগোপন করেন। আত্ম গোপন করা সকলের ভিতরে ছিলেন- জয়প্রকাশ নারায়ণ, রাম মনোহর লোহিয়া, অচ্যুৎ পট্টবর্ধন, অরুণা আসফ আলী আদি। আত্মগোপনকারী সকলেই কিছু সংখ্যক সন্ত্রাসমূলক কাজে লিপ্ত হন। এই সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৭০ টা রেল স্টেশন, ৫৫০ টা পোষ্ট অফিস, ৭০ টা পুলিশ স্টেশন, এবং ৮৫ টা অন্যান্য সরকারি আবাসগৃহের ক্ষতি সাধন করেন। অনেক জায়গায় রেল লাইন, টেলিফোন, টেলিগ্রাফ লাইন সংযোগহীন করে দেওয়া হয়। সেই সময় অসমের সড়কপথ আর জলপথে রেল বগির উপরে আর উড়োজাহাজ ঘাঁটিতে অগ্নি সংযোগ করা হয়। সেই সময়ে অসমে আত্ম গোপন করা সকলের ভিতরে ছিলেন-শঙ্কর বরুয়া, জ্যোতিপ্রসাদ, ব্রজ শর্মা, লক্ষ্মীপ্রসাদ গোস্বামী, গহণ চন্দ্র গোস্বামী আদি। অরুণা আসফ আলী আত্ম গোপন করেন সাতারা, বালিয়া, নাগপুর আদি জায়গায় ঘুরে সেইসব জায়গায় সমান্তরাল সরকার গঠন করার চেষ্টায় । অরুণা আসফ আলী অসমেও আসেন আর অসমে সন্ত্রাসবাদী কার্য করার পরামর্শ দেন।
অরুণা আসফ আলী ছিলেন মুক্তি সংগ্রামের পুরোধা। বিশেষ করে বিয়াল্লিশের আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন। অরুণা আসফ আলী ৯ আগস্ট বোম্বাই (মুম্বাই) গোয়ালিয়া টেংক ময়দানে ইউনিয়ন জেক নামিয়ে এনে তার জায়গায় ত্রিরঙা পতাকা উড়িয়ে সংগ্রামী সকলের মাঝে উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলেন। তাকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কয়েকবার জেলে যেতে হয়েছিল। পরে তিনি কংগ্রেসের প্রতি আস্থা হারিয়ে জাতীয় কংগ্রেস ত্যাগ করে সোসিয়ালিস্ট দলে যোগদান করেন। ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পর, তিনি গরিব জনসাধারণের সাথে মিলে কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সমাজে প্রগতি আর শান্তি আনতে তার প্রচেষ্টার কারণে ১৯৫৫ সালে তাকে সোভিয়েট দেশ নেহরু পুরস্কারে সম্মানিত করে। তিনি দিল্লী মহানগরের প্রথম মহিলা মেয়র হন যদিও কিছুদিন পরে সেই পদবী ত্যাগ করেন। তিনি জাতীয় মহিলা ফেডারেশনের সভামন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। তিনি জাতীয় মহিলা কনফারেন্সের সাথেও জড়িত হয়ে পড়েছিলেন।
বিয়াল্লিশের যুগান্তকারী সংগ্রামী অরুণা আসফ আলীর মৃত্যু হয় ১৯৯৬ সালের ২৯ জুলাই।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article অরুণা আসফ আলী, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.