অ্যালার্জি অতিপ্রতিক্রিয়া

অতিপ্রতিক্রিয়া বা ইংরেজি পরিভাষায় অ্যালার্জি (ইংরেজি: Allergy) বলতে পরিবেশে অবস্থিত কতগুলি বস্তুর উপস্থিতিতে কিছু কিছু ব্যক্তির দেহের প্রতিরক্ষাতন্ত্রের অতিসংবেদনশীলতার কারণে সৃষ্ট কতগুলি তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়াকে বুঝায়। এই বস্তুগুলি অধিকাংশ ব্যক্তির ক্ষেত্রে সাধারণত কোনো সমস্যা তৈরি করে না। এই বিরূপ প্রতিক্রিয়াগুলিকে একত্রে অতিপ্রতিক্রিয়াজনিত ব্যাধি বলে। অতিপ্রতিক্রিয়ার উদাহরণ হিসেবে হে জ্বর, খাদ্যে অতিপ্রতিক্রিয়া, অতিপ্রতিক্রিয়াজনিত ত্বকপ্রদাহ (এটপিক ডার্মাটাইটিস), অতিপ্রতিক্রিয়াজনিত হাঁপানি ও বিষম অতিপ্রতিক্রিয়া (অ্যানাফাইল্যাক্সিস) উল্লেখযোগ্য। লক্ষণগুলো হলো চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানিযুক্ত ফুসকুড়ি, রাইনোরিয়া বা নাক দিয়ে অনবরত পানি পড়া, শ্বাসকষ্ট অথবা ফুলে যাওয়া। খাবার সহ্য না হওয়া ও খাদ্য বিষক্রিয়া দুটি আলাদা বিষয়।

অতিপ্রতিক্রিয়া / অ্যালার্জি
অ্যালার্জি অতিপ্রতিক্রিয়া
রক্তস্ফোট, লাল ফুসকুঁড়ি বা ছুলি অতিপ্রতিক্রিয়ার একটি সাধারণ উপসর্গ
বিশেষত্বঅতিসংবেদনশীলতা এবং অনাক্রম্যবিজ্ঞান
লক্ষণলাল চোখ, চুলকানিসহ লাল ফুসকঁড়ি, নাক থেকে পানি পড়া, শ্বাসাল্পতা, ফুলে যাওয়া, হাঁচি
প্রকারভেদদেহে জ্বর, খাদ্যে অতিপ্রতিক্রিয়া, অতিপ্রতিক্রিয়াজনিত ত্বকপ্রদাহ, অতিপ্রতিক্রিয়াজনিত হাঁপানি, বিষম অতিপ্রতিক্রিয়া
কারণজিনগত এবং পরিবেশগত কারণ
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতিউপসর্গের উপর ভিত্তি করে, ত্বক-খোঁচানো পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা
পার্থক্যমূলক রোগনির্ণয়খাদ্যে অসহিষ্ণুতা, খাদ্যে বিষক্রিয়া
প্রতিরোধসম্ভাব্য অতিপ্রতিক্রিয়া-উৎপাদকদের সাথে ছোটবেলায় সংস্পর্শে আসা
চিকিৎসাজ্ঞাত অতিপ্রতিক্রিয়া-উৎপাদকদের এড়িয়ে চলা, ঔষধ, অতিপ্রতিক্রিয়া-উৎপাদক অনাক্রম্য চিকিৎসা
ঔষধস্টেরয়েডসমূহ, অ্যান্টিহিস্টামিন, এপিনেফ্রিন, মাস্তুল কোষ স্থিতিকারক, অ্যান্টিলিউকোট্রিন
সংঘটনের হারসাধারণ


কারণ ও রোগনির্ণয়

পরাগ বা পুষ্পরেণু ও কিছু খাবার খুব সাধারণ কিছু অতিপ্রতিক্রিয়া-উৎপাদক (Allergen অ্যালার্জেন)। ধাতবসহ অন্যান্য বস্তুও সমস্যা তৈরি করতে পারে। খাবার, কীটপতঙ্গের হুল ও ঔষধ তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির জন্য দায়ী। বংশগত ও পরিবেশগত কারণে এ সকল বিক্রিয়া হয়ে থাকে। শরীরের অনাক্রম্যতন্ত্রের এক ধরনের প্রতিরক্ষিকা (অ্যান্টিবডি) ইমিউনোগ্লোবিউলিন-ই (IgE) এক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে। এর এক অংশ অতিপ্রতিক্রিয়া-উৎপাদক বস্তুর সাথে এবং অপর অংশ মাস্ট কোষ বা ক্ষারাকর্ষী শ্বেতকণিকার (বেসোফিল) গ্রাহকের (রিসেপ্টর) সাথে বন্ধন তৈরি করে, যার ফলে উক্ত কোষসমূহ থেকে প্রদাহ সৃষ্টিকারী কতকগুলো রাসায়নিক পদার্থ (যেমন হিস্টামিন) বের হয়। রোগনির্ণয় মূলত রোগের ইতিহাসের উপর নির্ভরশীল। মাঝে মাঝে চর্ম ও রক্তের কিছু পরীক্ষাও করা হয়। কোনো ব্যক্তির কোনো নির্দিষ্ট বস্তুর প্রতি সংবেদনশীলতার পরীক্ষার ফলাফল ইতিবাচক হলেও ঐ ব্যক্তির যে উক্ত বস্তুর প্রতি তাৎপর্যপূর্ণ অতিপ্রতিক্রিয়া রয়েছে তা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায় না।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

অল্পবয়স থেকেই সম্ভাব্য অতিপ্রতিক্রিয়া-উৎপাদক বস্তুর (অ্যালার্জেন) সংস্পর্শে থাকাকে উপকারী মনে করা হয়। অতিপ্রতিক্রিয়া (অ্যালার্জি) চিকিৎসার মূল দিক হলো যে বস্তুটি অতিপ্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী তা থেকে দূরে থাকা। কর্টিকোস্টেরয়েড ও অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধসমূহ অতিপ্রতিক্রিয়া থেকে আরোগ্য লাভের জন্য ব্যবহার করা হয়। খুব তীব্র প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে অ্যাড্রেনালিন সূচিপ্রয়োগ করা হয়। এছাড়া কোনও কোনও ক্ষেত্রে অতিপ্রতিক্রিয়ার চিকিৎসায় অতিপ্রতিক্রিয়া-উৎপাদক অনাক্রম্য চিকিৎসা (Allergen immunotherapy অ্যালার্জেন ইমিউনোথেরাপি) ব্যবহার করা হয়।খাদ্যে অতিপ্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে অনাক্রম্য চিকিৎসার (ইমিউনোথেরাপি) কার্যকারিতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

অনেক ব্যক্তিই অ্যালার্জি বা অতিপ্রতিক্রিয়া সমস্যায় ভুগে থাকেন। উন্নত বিশ্বে প্রায় ২০% ব্যক্তি অতিপ্রতিক্রিয়াজনিত নাসিকাপ্রদাহ (রাইনাইটিস) বা সর্দিতে ভুগছেন। প্রায় ৬% ব্যক্তির অন্তত একটি খাদ্যে অতিপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। ২০% ক্ষেত্রে অ্যাটপিক ডার্মাটাইটিস হয়। দেশভেদে প্রায় ১-১৮% ব্যক্তি অ্যাজমা বা হাঁপানিতে আক্রান্ত। ০.০৫-২% ক্ষেত্রে বিষম অতিপ্রতিক্রিয়া (অ্যানাফিল্যাক্সিস) হয়। অতিপ্রতিক্রিয়ায় ভুক্তভোগী রোগীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। ১৯০৬ সালে "allergy" শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন Clemens von Pirquet।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

অ্যালার্জি অতিপ্রতিক্রিয়া কারণ ও রোগনির্ণয়অ্যালার্জি অতিপ্রতিক্রিয়া প্রতিরোধ ও চিকিৎসাঅ্যালার্জি অতিপ্রতিক্রিয়া তথ্যসূত্রঅ্যালার্জি অতিপ্রতিক্রিয়া বহিঃসংযোগঅ্যালার্জি অতিপ্রতিক্রিয়াঅনাক্রম্যতন্ত্রইংরেজি ভাষাহাঁপানি

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

প্লাস্টিক দূষণচাণক্যখালেদা জিয়াঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকৃষ্ণজারুলবিদীপ্তা চক্রবর্তীভারতে নির্বাচনমিজানুর রহমান আজহারীউত্তম কুমারভারতবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলকিরগিজস্তানভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকম্পিউটারভারতীয় সংসদপানি দূষণগ্রীষ্মসিরাজগঞ্জ জেলাকাজী নজরুল ইসলামের রচনাবলিউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগফোর্ট উইলিয়াম কলেজবাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়জনগণমন-অধিনায়ক জয় হেপশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীদের তালিকাসেলিম আল দীনটেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকামরুল হাসানআগরতলা ষড়যন্ত্র মামলারাহুল গান্ধীজাপানঅবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরযমুনা নদী (বাংলাদেশ)ইন্দিরা গান্ধীবাংলাদেশে হিন্দুধর্মগোপাল ভাঁড়২০২২ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জিম্বাবুয়ে সফরপ্রধান পাতারাইলি রুশোআতিকুল ইসলাম (মেয়র)ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনকোকা-কোলাচট্টগ্রাম জেলারবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্মক্যামেরানিউটনের গতিসূত্রসমূহআওরঙ্গজেবআসামসুকুমার রায়মুঘল সাম্রাজ্যআরবি বর্ণমালাআনারসআন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থালালনজুম্মা মোবারকতামান্না ভাটিয়াফরিদপুর জেলামোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনসৌদি আরবকালিদাসমাটিবিদায় হজ্জের ভাষণসুনীল নারাইনধর্মআবদুল হাকিমপাগলা মসজিদদীপু মনিবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানমুজিবনগর সরকার২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপব্রাজিলবাল্যবিবাহপারমাণবিক ভরের ভিত্তিতে মৌলসমূহের তালিকামাযহাবপশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন, ২০২১বর্তমান (দৈনিক পত্রিকা)রক্তশূন্যতা🡆 More