জুমার নামাজ

জুমার নামাজ (আরবি: صَلَاة ٱلْجُمُعَة সালাত আল-জুমুআহ, শুক্রবারের সালাত) ইসলামের অন্যতম একটি নামাজ। جُمُعَة (জুমুআহ) শব্দটি আরবী, এর অর্থ একত্রিত হওয়া, সম্মিলিত হওয়া, কাতারবদ্ধ হওয়া। যেহেতু, সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন শুক্রবারে প্রাপ্তবয়স্ক মুমিন-মুসলমান একটি নির্দিষ্ট সময়ে একই স্থানে একত্রিত হয়ে জামায়াতের সাথে সে দিনের জোহরের নামাজের পরিবর্তে এই নামাজ ফরযরূপে আদায় করে, সে জন্য এই নামাজকে জুমার নামাজ বলা হয়। সময় একই হলেও যোহরের সাথে জুমার নামাজের নিয়মগত কিছু পার্থক্য রয়েছে।

জুমার নামাজ
জুমার নামাজ
আনুষ্ঠানিক নামالجمعة صلاة
পালনকারীমুসলিম বিশ্ব
ধরনইসলাম
শুরুদুপুর
সমাপ্তিবিকাল
সংঘটনসাপ্তাহিক
সম্পর্কিতনামাজ, ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ
জুমার নামাজ
মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে জুমার নামাজ।
জুমার নামাজ
কসোভোর একটি মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিগণ।

ইতিহাস

ইসলামের নবী মুহম্মাদ মক্কা ছেড়ে মদিনায় চলে গেলেন, পৌঁছানোর দিনটি ছিল ইয়াওমুল আরুবা (শুক্রবার)। সেদিন তিনি বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় গেলে জোহর নামাজের সময় হয়। সেখানে তিনি জোহর নামাজের পরিবর্তে জুমার নামাজ আদায় করেন। এটাই ইতিহাসের প্রথম জুমার নামাজ। তবে আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় আরও পরে। মুহাম্মাদের মদিনায় যাওয়ার পর এবং জুমার নামাজ ফরজ হওয়ার আগে একবার মদিনার আনসার সাহাবিরা আলোচনায় বসেন। তারা বললেন, ইহুদিদের জন্য সপ্তাহে একটি দিন নির্দিষ্ট রয়েছে, যেদিনে তারা সবাই একত্র হয়। নাসারারাও সপ্তাহে এক দিন একত্র হয়। সুতরাং আমাদের জন্য সপ্তাহে একটি দিন নির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন, যেদিনে আমরা সবাই সমবেত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করব, নামাজ আদায় করব। অতঃপর তারা আলোচনায় বললেন, শনিবার ইহুদিদের আর রবিবার নাসারাদের জন্য নির্ধারিত। অবশেষে তারা ইয়াওমুল আরুবা শুক্রবারকে গ্রহণ করলেন এবং তারাই এদিনকে জুমার দিন নামকরণ করলেন (সিরাতুল মুস্তাফা ও দারসে তিরমিজি)।

বাধ্যবাধকতা

নামাজ মুসলিম জাতির প্রতি ফরজ (অবশ্যপালনীয় ) একটি ইবাদত ।


কুরআনে উল্লেখ

কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে:

"হে বিশ্বাসীগণ, যখন তোমাদের শুক্রবারের নামাজের (জুমার নামাজ) জন্য আহ্বান করা হয়, তখন আল্লাহকে স্মরণ করো এবং ক্রয় বিক্রয় পরিত্যাগ করো; যদি তোমরা বুঝে থাকো, তবে এতেই তোমাদের পক্ষে কল্যাণ। যখন নামাজ সমাপ্ত হয়, তখন পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর করুণার (জীবিকা) সন্ধান করো এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করো; সম্ভবত [এতেই] তোমাদের মুক্তি রয়েছে।

হাদিস

আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যাক্তি জুম্মার দিন জানবাত গোসলের ন্যায় গোসল করে এবং সালাত-এর জন্য প্রথমে আগমন করে সে যেন, একটি উট কুরবানী করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে সে যেন, একটি গাভী কুরবানী করল। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কুরবানী করল। চতুর্থ পর্যায়ে আগমন করল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করল। পরে ইমাম যখন খুতবা প্রদানের জন্য বের হন তখন ফিরিশতাগণ জিকর শোনার জন্য হাজির হয়ে থাকেন। (বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৮৩৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৮১)

নিয়ম

জুমার নামাজে দুই রাকাত ফরজ রয়েছে। এছাড়া ফরজ নামাজের পূর্বে চার রাকাত কাবলাল জুমা এবং পরে চার রাকাত বাদাল জুমা (সুন্নত নামাজ) আদায় করতে হয়। জোহরের নামাজের মতো ব্যক্তি চাইলে এসময় অতিরিক্ত নফল নামাজ আদায় করতে পারে। তবে এসকল নফল নামাজ জুমার অংশ হিসেবে পড়া হয় না এবং তা আবশ্যকীয়ও নয় বরং ব্যক্তি তা স্বেচ্ছায় করতে পারে এবং না করলে তার দোষ হয় না।

জুমার নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা আবশ্যিক এবং তা একাকী আদায় করার নিয়ম নেই। কুরআনে জুমার নামাজের সময় হলে কাজ বন্ধ করে নামাজের জন্য মসজিদে যাওয়ার প্রতি তাগিদ দেয়া হয়েছে। তবে কোনো ব্যক্তি যদি যুক্তিসঙ্গত কারণবশত (যেমন খুব অসুস্থ ব্যক্তি) জুমা আদায় করতে না পারে তবে তার ক্ষেত্রে জোহরের নামাজ আদায় করা নিয়ম। তাছাড়া কিছু ক্ষেত্রে সুস্থ ব্যক্তির উপর, যেমন ভ্রমণকারী (মুসাফির) অবস্থায় জুমার আবশ্যকতা থাকে না এবং সেক্ষেত্রে জোহরের নামাজ আদায় করলে তা গ্রহণীয় হয়। তবে ভ্রমণকারী চাইলে জুমা আদায় করতে পারে।

বিশুদ্ধতা

কোন স্থানে জুমআর নামায বিশুদ্ধ হবার জন্য বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। যথা-

  • শহর বা উপশহর হতে হবে। জনমানবহীন স্থানে জুমআর নামায শুদ্ধ হবে না।
  • জামাআত হতে হবে।
  • যোহরের সময় হতে হবে।
  • সকলের জন্য অনুমতি থাকতে হবে।
  • খুতবা দিতে হবে।

এক্ষেত্রে, গ্রাম বলতে এমন এলাকাকে বুঝায়, যেখানে রাষ্ট্রীয় কোন প্রতিনিধি, মানুষের নিত্তপ্রয়োজনীয় আসবাব সহজলভ্য নয়। এমন সুবিধাবঞ্চিত এলাকাকে মূলত গ্রাম বলা হয়।

সুতরাং প্রচলিত গ্রাম যেখানে রাষ্ট্র প্রতিনিধিসহ আবশ্যকীয় সুবিধা বিদ্যমান, সেটাকে গ্রাম বলা যাবে না। বরং তা উপশহরের স্থলাভিষিক্ত হবে। সেই হিসেবে জনবহুল এলাকা থেকে দূরের মরু বিয়াবানেও জুমআর নামায পড়া যাবে না। যেমন সেনাবাহিনীর কোন ক্যাম্প যা গহীন পাহাড়ে স্থাপন করা হল। কিংবা মরু অঞ্চলের কোন বিয়াবনে ট্রেনিং এর জন্য সেনা ক্যাম্প করা হল। এসব স্থানে জুমআ পড়া যাবে না। যোহরের নামায আদায় করবে। কারণ, তা শহর বা উপশহর নয়।

عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: «لَا جُمُعَةَ وَلَا تَشْرِيقَ إِلَّا فِي مِصْرٍ جَامِعٍ»

অনুবাদ: আলী ইবনে আবি তালিব থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, শহর ছাড়া জুমআ ও ঈদের নামায নেই।

عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ: «لَيْسَ عَلَى أَهْلِ الْقُرَى جُمُعَةٌ، إِنَّمَا الْجُمَعُ عَلَى أَهْلِ الْأَمْصَارِ، مِثْلِ الْمَدَائِنِ»

অনুবাদ: হুজায়ফা বিন মিহসান থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, গ্রামে জুমআর নামায নেই। জুমআ হবে শহরে। যেমন মাদায়েন।

ইমাম শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী বলেনঃ

وَقد تلقت الْأمة تلقيا معنويا من غير تلقي لفظ أَنه يشْتَرط فِي الْجُمُعَة الْجَمَاعَة وَنَوع من التمدن، وَكَانَ النبى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. وخلفاؤه رَضِي الله عَنْهُم. وَالْأَئِمَّة المجتهدون رَحِمهم الله تَعَالَى يجمعُونَ فِي الْبلدَانِ، وَلَا يؤاخذون أهل البدو، بل وَلَا يُقَام فِي عَهدهم فِي البدو، ففهموا من ذَلِك قرنا بعد قرن وعصرا بعد عصر أَنه يشْتَرط لَهَا الْجَمَاعَة والتمدن

উম্মত শাব্দিকভাবে না হলেও মৌনভাবে এ বিষয়টি নির্ধারণ করেছে যে, জুমআর জন্য জামাআত এবং এক প্রকার সভ্যতা শহর থাকা শর্ত। আর নবী মুহাম্মাদ এবং খুলাফায়ে রাশেদীন এবং আইয়িম্মায়ে মুজতাহিদীন শহরেই জুমআ আদায় করতেন। আর গ্রামের অধিবাসীদের না পড়ার কারণে কোন দোষারোপ করতেন না। শুধু তাই নয়; তাদের যুগে গ্রামে জুমআর নামায আদায় করা হতো না।

খুতবা

জুমার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো খুতবা। এতে ইমাম সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা ও কুরআন এবং হাদিসের আলোকে দিকনির্দেশনা দেন। যে ইমাম খুতবা দেন তাকে বলা হয় খতিব। এসময় দুইটি খুতবা দেয়া হয়। দুই খুতবার মাঝখানে অল্প কিছু সময়ের বিরতি নেয়া হয়। মসজিদের প্রতিদিনের ইমাম খুতবা দিতে পারেন বা জুমার দিন বিশেষ কেউ খুতবা দিতে পারেন। খুতবা সাধারণত আরবি ভাষায় দেয়া হয়। তবে কিছু স্থানে স্থানীয় ভাষায় খুতবা দেয়ার প্রথা দেখা যায়। যেমন- বাংলাদেশের মসজিদসমূহে খুতবার প্রথমাংশ বাংলা ভাষায় দেওয়া হয়ে থাকে।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

জুমার নামাজ ইতিহাসজুমার নামাজ বাধ্যবাধকতাজুমার নামাজ কুরআনে উল্লেখজুমার নামাজ হাদিসজুমার নামাজ নিয়মজুমার নামাজ বিশুদ্ধতাজুমার নামাজ খুতবাজুমার নামাজ তথ্যসূত্রজুমার নামাজ বহিঃসংযোগজুমার নামাজআরবি ভাষাযোহরের নামাজশুক্রবার

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

লালনলালসালু (উপন্যাস)আকিজ গ্রুপবাংলাদেশের রাজনৈতিক দলসমূহের তালিকাইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিঅমর্ত্য সেনটাইফয়েড জ্বরকুমিল্লাতাপমাত্রাবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাপলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমসরকারি বাঙলা কলেজবাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীবাংলা ভাষা আন্দোলনকবিতাজসীম উদ্‌দীনবাংলাদেশের পোস্ট কোডের তালিকাসুকান্ত ভট্টাচার্যবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সেক্টরসমূহঘূর্ণিঝড়রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন (১৮৬১–১৯০১)ক্রিকেটবাংলাদেশের প্রশাসনিক অঞ্চলআসমানী কিতাবঅ্যান্টিবায়োটিক তালিকারক্তগজলজাতিবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিপশ্চিমবঙ্গে ভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪জরায়ুবাংলাদেশের অর্থনীতিপশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীদের তালিকাবাঁশআসসালামু আলাইকুমলক্ষ্মীপুর জেলানোরা ফাতেহিমেয়েক্যান্সারপলাশীর যুদ্ধসিলেট বিভাগইস্তেখারার নামাজকলকাতা নাইট রাইডার্সসবচেয়ে বেশি গোলকারী ফুটবলারের তালিকাজালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমিরামপ্রসাদ সেনভারত বিভাজনকমনওয়েলথ অব নেশনসচন্দ্রগুপ্ত মৌর্যধর্ষণগৌতম বুদ্ধব্যাংক সমন্বয়বাংলাদেশের জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২২৩ এপ্রিলশিবা শানুজ্ঞানইংরেজি ভাষাইনডেমনিটি অধ্যাদেশরক্তশূন্যতাফজরের নামাজঅস্ট্রেলিয়াশামসুর রাহমানহনুমান (রামায়ণ)কুরআনের সূরাসমূহের তালিকাব্যাকটেরিয়ামনসামঙ্গলবাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসাদিকা পারভিন পপিজেলা প্রশাসকহরমোনস্মার্ট বাংলাদেশজগদীশ চন্দ্র বসুআকবরবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীপূরণবাচক সংখ্যা (ভাষাতত্ত্ব)শাকিব খানমীর মশাররফ হোসেন🡆 More