পরিবার

পরিবার পিতা মাতা ও তাদের সন্তান-সন্ততিদের কেন্দ্র করে হতে পারে, দ্বিতীয়ত একসঙ্গে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজন সমবায়ে একটি প্রসারিত পরিবারও হতে পারে। তৃতীয় ধরনের পরিবার হলো একটি বৃহৎ সংসার, যেখানে অন্যান্য আত্মীয় ও ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কিংবা তাদের ছাড়া অনাত্মীয়রাও যুক্ত হয়। পরিবার প্রায়শ সন্তানসহ বা সন্তানবিহীন এক বা একাধিক দম্পতির ছোট সংসার নিয়ে গঠিত। এর আর্থিক ভিত্তি রয়েছে। এই ভিত্তিকে কেন্দ্র করে আত্মীয়, সামাজিক সম্পর্ক ও প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে এবং ঐক্যবদ্ধ কাজের মাধ্যমে তা রূপায়িত হয়। পরিবারের বিকাশে সন্ধানযোগ্য বংশগত সম্পর্ক সাধারণত জ্ঞাতি সম্পর্কের চেয়ে অগ্রাধিকার পায়। এই শৃঙ্খলার মধ্যে সদস্যরা সমাজের আর্থিক ও সামাজিক উপ-প্রথাগুলি গড়ে তোলে।

পরিবার
(বাম থেকে ডানে) নবজাতক, মা, মাতামহী এবং প্রমাতামহী
পরিবার
মাতা-পিতা এবং সন্তানঃ জেনেভার প্যালেস অফ ন্যাশনস এর বাগানে পরিবার (Family) ভাস্কর্য।

বিশ্বের পরিবারও রক্তসম্পর্ককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। বিশ্বের যেকোন পরিবারের অধিকাংশই স্বামী-স্ত্রী ও তাদের অবিবাহিত ছেলেমেয়েদের নিয়ে গঠিত। স্বামীস্ত্রী, অথবা বিবাহিত জীবনের এই দুই অংশীদারের যে-কেউ একজন সংসারের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ-কর্মের চালক। পরিবার প্রধানের দিক থেকে বংশানুক্রমিক সদস্যদের মধ্যে দাদা, দাদি, বাবা, মা, স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, ছেলের বউ, নাতি, নাত-বউ এবং নাতনি অন্তর্ভুক্ত। অনুরূপভাবে, জ্ঞাতি সদস্যদের মধ্যে রয়েছে চাচা ও চাচী, চাচার ছেলে ও মেয়ে, ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী, ভাইয়ের ছেলেমেয়ে এবং এই ধারাবাহিকতায় অন্যান্যরা। বংশীয় ও জ্ঞাতিগত উভয় শ্রেণীতে পরিবার প্রধানের সকল সন্ধানযোগ্য পূর্ব-পুরুষ ও উত্তরপুরুষ বিগত দিনের অব্যাহত সদস্যতা এবং ঘনিষ্ঠতার পারস্পরিক অনুভবের ভিত্তিতে পরিবারের সদস্য হওয়ার স্বীকৃতি লাভ করতে পারে।

বিশ্বে বংশের পরিজনরা পিতা থেকে পুত্র ক্রমিকতায় অর্থাৎ পুরষ পরম্পরার নিম্নগামী ধারায় সংজ্ঞায়িত ও পরিচিত। পিতৃতান্ত্রিক সূত্র নববিবাহিত দম্পতিকে স্বামীর ঘরে ও সংসারে বসবাসের প্রথার সঙ্গে যুক্ত করে। এই উপ-প্রথাসমূহ অনেকগুলো খণ্ডরূপে প্রতিফলিত, যেমন বাড়ি (একটি উঠানকে কেন্দ্র করে বহু লোকজন নিয়ে গঠিত), পাড়া (চারদিকে অনেকগুলি বাড়ি নিয়ে গঠিত প্রতিবেশ) এবং সমাজ (ক্ষুদ্র মানবগোষ্ঠী যেখানে সাধারণভাবে সামাজিক, আর্থিক ও ধর্মীয় সুবিধাদি লভ্য)। সম্ভবত সমাজ সদস্যদের খুঁজে নেওয়া যায় কয়েকটি সাধারণ পূর্বপুরুষের বংশ-পরম্পরায়। বাংলাদেশের মানব সম্প্রদায়গুলোর এই বিভাজিত সংগঠনকে এক সূত্রীয় বংশগতির নিয়ম অবলম্বন করতে হয়েছিল। বিশ্বের পরিবারগুলি পিতৃতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের অনুশীলনকারী। ব্যাপক অর্থে তারা এক একটি মুক্ত দল। বিবাহিত দম্পতির বন্ধন আত্মীয়বর্গের অন্যান্য ক্ষেত্রেও সম্প্রসারিত। স্বামী-স্ত্রী দুজনের যেকোন একজন আত্মীয়দের দায়-দায়িত্ব বহন করে।

বিশ্বে পরিবারের লোকজনদের চেনা যায় একই খানা বা চুলার অংশীদার হিসেবে। একজন বিবাহিত পুরুষনারী মিলিয়ে একটি সমাজ একক। তাদের সংহতি, অভিন্ন স্বার্থ ও কর্তব্য তাদের যেকোন একজনের অন্যবিধ সম্পর্কজাত দায় ও স্বার্থ থেকে অধিক পূর্বাধিকার পায়। তাদের বংশধররা পারস্পরিক স্বার্থে যুক্ত এবং বিবাদরত। পরিবারের সদস্যরা একে-অপরের ওপর নির্ভরশীল এবং সম্পদ, শ্রমআবেগ-অনুভূতিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তারা জীবনের সামাজিক, আর্থিক ও রাজনৈতিক দিকগুলি পরিচালনা করে।

নির্দিষ্ট বংশধারায় সাধারণত একজন নারী বিভিন্ন বংশের কোন একজন পুরুষের সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হয়। বিয়ের পর সে নিজের বাপের বাড়ি ত্যাগ করে শ্বশুরবাড়িতে যুক্ত হয় এবং সন্তান লাভ করে। শিশুটি পিতা-মাতা উভয় দিকের বংশানুগতির অংশী হয়। উভয় দিক থেকে পরিজাত বলে পিতা-মাতার এই সন্তান মামার বাড়িতে গিয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে। বিবাহিত কন্যার বংশ-পরিচিতি অভিব্যক্ত হয় পিতৃসম্পত্তিতে তার অধিকারে এবং প্রধানত তার প্রথম সন্তানের জন্ম, ঘরে ধান আসা, ভাই-বোনের বিয়ে ও প্রধান প্রধান নৈমিত্তিক উৎসব-অনুষ্ঠান উপলক্ষে বাপের বাড়িতে আগমনে।

প্রকারভেদ

পরিবার প্রধানত ৬ প্রকার ৷ যথা :-

• স্বামী-স্ত্রীর সংখ্যার ভিত্তিতে পরিবার ৷ এধরনের পরিবার আবার ৫ ভাগে বিভক্ত।যথা-১/একপত্নী পরিবার ২/বহুপত্নী পরিবার ৩/বহুপতি পরিবার,৪)উপপতি পরিবার ও ৫)উপপত্মী পরিবার

• কর্তৃত্বের ভিত্তিতে পরিবার ৷ এধরনের পরিবার তিন প্রকার।যথা-১/পিতৃতান্ত্রিক বা পিতৃপ্রধান পরিবার ২/মাতৃতান্ত্রিক বা মাতৃপ্রধান পরিবার,৩)গোত্রতান্ত্রিক বা গোত্রপ্রধান পরিবার

• আকারের ভিত্তিতে পরিবার ৷ আকারের ভিত্তিতে পরিবার তিন প্রকার।যথা-১/একক পরিবার ২/যৌথ পরিবার ৩/বর্ধিত পরিবার।

• বংশ মর্যাদা ও সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ভিত্তিতে পরিবার ৷ এ ধরনের পরিবার তিন প্রকার।যথা-১/পিতৃসূত্রীয় পরিবার ২/মাতৃসূত্রীয় পরিবার,৩) উত্তরাধিকারসূত্রীয় পরিবার

• বিবাহোত্তর স্বামী -স্ত্রীর বসবাসের ভিত্তিতে পরিবার ৷ এধরনের পরিবার তিন প্রকার।যথা-১/পিতৃবাস পরিবার ২/ মাতৃবাস পরিবার ৩/নয়াবাস পরিবার।

• পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের ভিত্তিতে পরিবার ৷ এ ভিত্তিতে পরিবার তিন'ধরনের।যথা-১/বহির্গোত্র পরিবার ২/অন্তর্গোত্র পরিবার,৩)উভয়র্গোত্র পরিবার • অন্তর্গোত্র পরিবার আবার দু প্রকার।যথা-১/অনুলোম বিবাহভিত্তিক পরিবার ২/প্রতিলোম বিবাহভিত্তিক পরিবার।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় (নবম- দশম শ্রেণী)

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

Tags:

পরিবার প্রকারভেদপরিবার আরও দেখুনপরিবার তথ্যসূত্রপরিবার আরও পড়ুনপরিবার বহিঃসংযোগপরিবারপিতামাতাসন্তান

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

পুরুষে পুরুষে যৌনতাসূরা ইয়াসীনচেন্নাই সুপার কিংসবিদ্রোহী (কবিতা)ভারতের রাষ্ট্রপতিদের তালিকাঠাকুরমার ঝুলিব্রহ্মপুত্র নদব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলকনডমআয়তন অনুযায়ী ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহের তালিকাজাতিসংঘের মহাসচিবমুহাম্মাদ ফাতিহসচিব (বাংলাদেশ)স্বামী বিবেকানন্দটাইফয়েড জ্বরবটপাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারলগইনডিএনএবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলধর্মস্বাস্থ্যের উপর তামাকের প্রভাবপ্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরআসসালামু আলাইকুমবাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসবাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীদের তালিকাচাঁদপুর জেলাযৌনাসনঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানরাগ (সংগীত)বাংলাদেশের জেলাসমূহের তালিকাসুফিয়া কামালকুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টসরকারি বাঙলা কলেজওপেকরশিদ চৌধুরীগায়ত্রী মন্ত্রমুহাম্মাদের বংশধারাঅষ্টাঙ্গিক মার্গরাজশাহীথাইল্যান্ডপুলিশবদরের যুদ্ধইশার নামাজটুইটারতারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়শিবম দুবেতিতুমীররেনেসাঁজাপানরুয়ান্ডাহামপায়ুসঙ্গমবাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসক্রেটিসপ্রধান পাতানেপোলিয়ন বোনাপার্টভারতদৈনিক ইনকিলাবতাজউদ্দীন আহমদজনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় (বাংলাদেশ)দিনাজপুর জেলাগেরিনা ফ্রি ফায়ারইরানবাংলা সাহিত্যের ইতিহাসউমাইয়া খিলাফতবাংলা সাহিত্যধরিত্রী দিবসঅপারেশন সার্চলাইটন্যাটোফজরের নামাজভারতের ইতিহাসদৈনিক প্রথম আলোশাহ জাহানইংরেজি ভাষাসাইপ্রাসজার্মানিস্ক্যাবিস🡆 More