অ্যাংলো-আইরিশ বংশোদ্ভুত সমাজকর্মী, লেখিকা, শিক্ষিকা এবং সর্বোপরি স্বামী বিবেকানন্দের শিষ্যা, ভগিনী নিবেদিতার বাসভবন ছিল ১৬ নম্বর বোস পাড়া লেন (বর্তমানে ১৬এ মা সারদামণি সরণি), বাগবাজার। এই ঐতিহাসিক বাসস্থানটি ২০০৫ সালে কলকাতা পৌরসংস্থা হেরিটেজ ভবন হিসাবে চিন্তিত করে । বর্তমানে ভারতীয় পুরাতত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগ দ্বারা এই বাসভবনটির সংরক্ষণের কাজ চলছে।
ভগিনী নিবেদিতার বাসভবন | |
---|---|
সাধারণ তথ্য | |
অবস্থা | সংরক্ষণের কাজ চলছে |
ধরন | ঐতিহ্যবাহী স্থান |
ঠিকানা | ১৬ নম্বর বোস পাড়া লেন (বর্তমানে ১৬এ মা সারদামণি সরণি), বাগবাজার |
শহর | কলকাতা |
দেশ | ভারত |
স্থানাঙ্ক | ২২°৩৬′১০.৮″ উত্তর ৮৮°২২′১.০১″ পূর্ব / ২২.৬০৩০০০° উত্তর ৮৮.৩৬৬৯৪৭২° পূর্ব |
স্বত্বাধিকারী | রামকৃষ্ণ সারদা মিশন |
১৮৯৮ সালের ২৮শে জানুয়ারি ভগিনী নিবেদিতা প্রথমবারের জন্য কলকাতায় আসেন এবং চৌরঙ্গী অঞ্চলের একটি বাসভবনে মাস কয়েক বসবাস করেন। পরে বেলুর মঠের একটি কুটিরে মিস ম্যাকলয়েড ও মিসেস বুলের সাথে থাকেন। ১৮৯৮ সালের ১১ই মে বিবেকানন্দ ও তাঁর সঙ্গীদের সাথে নিবেদিতা উত্তর ভারত পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন ।
১৮৯৮ সালের ১ নভেম্বর ভগিনী নিবেদিতা দ্বিতিয়বারের জন্য কলকাতায় আসেন । হাওড়া স্টেশন থেকে তিনি সোজা বাগবাজারে রমাকান্ত বসু - স্ট্রীটে শ্রী বলরাম বসুর গৃহে চলে আসেন যেখানে সেই সময় স্বামী বিবেকানন্দ অবস্থান করছিলেন । নিবেদিতার ইচ্ছা অনুসারে স্বামীজি শ্রীমা সারদা দেবীর ১০|২ বোসপাড়া লেনের বাসভবনে তাঁর অস্থায়ী থাকার ব্যবস্থা করেন । এই বাসভবনে তিনি ৮-১০ দিন ছিলেন। তার পর স্বামী বিবেকানন্দের প্রচেষ্টায় ১৬ নম্বর বোসপাড়া লেনের দোতলা বাসভবনে ভগিনী নিবেদিতার পাকাপাকি থাকার ব্যবস্থা হয় ।
এই বাসভবনে ভগিনী নিবেদিতা জুন ১৮৯৯ পর্যন্ত বসবাস করেছিলেন। ২০ জুন ১৮৯৯, তিনি তাঁর স্কুলের জন্য অর্থ সংগ্রহের হেতু স্বামী বিবেকানন্দ এবং স্বামী তূরিয়ানন্দের সাথে ইংল্যান্ড অভিমুখে রওয়ানা দেন। নিবেদিতা কলকাতায় ১৯০২ সালের ২৬শে জুন পুনরাগমন করেন| এইবার তাঁর বাসস্থান ছিল ১৭ নম্বর বোসপাড়া লেনের বাড়ি।
১৮৯৮ সালের ১২ই নভেম্বর বলরাম বসুর গৃহে শ্রীরামকৃষ্ণের ভক্তদের সাথে নিবেদিতার বালিকা বিদ্যালয় সূত্রপাত করার বিষয়ে আলোচনা হয় ।
১৮৯৮ সালের ১৩ই নভেম্বর কালীপূজার দিন শ্রীমা সারদা দেবী ১৬ নম্বর বোসপাড়া লেনের বাড়িতে নিবেদিতার বালিকা বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন । বিদ্যালয় উদ্বোধন করার সময় শ্রীমা বিদ্যালয়ের ভাবী ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন 'আমি প্রার্থনা করছি, যেন এই বিদ্যালয়ের উপর জগন্মাতার আশীর্বাদ বর্ষিত হয়, এবং এখান থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত মেয়েরা যেন আদর্শ বালিকা হয়ে ওঠে'| স্বামী বিবেকানন্দ ও অন্যান্য সন্ন্যাসীরা সেদিন উপস্থিত ছিলেন ।
২৩শে জানুয়ারী ১৮৯৯ স্বামী বিবেকানন্দ ভগিনী নিবেদিতাকে তাঁর ব্রাহ্ম বন্ধুদের ১৬ নম্বর বোসপাড়া লেনের বাসভবনে চায়ের নিমন্ত্রণ করতে বলেন| নিমন্ত্রিতদের তালিকায় ছিলেন সস্ত্রীক জগদীশচন্দ্র বসু, সস্ত্রীক ড: প্রসন্নকুমার রায়, মোহিনীমোহন চট্টোপাধ্যায়, সরলা ঘোষাল, তাঁর মা স্বর্ণকুমারী দেবী এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । এই চা চক্রটি অবশেষে ২৮ জানুয়ারী ১৮৯৯ শনিবার অনুষ্ঠিত হয় যেখানে অতিথিরা বেশ জমকালো পোশাক করে এসেছিলেন| যদিও নিমন্ত্রিতদের তালিকাভুক্ত সকলে উপস্থিত ছিলেন না । মিস যোসেফিন ম্যাকলয়েডকে লেখা নিবেদিতার একটি চিঠি থেকে জানা যায় যে নিমন্ত্রিতদের মধ্যে ছিলেন প্রসন্নকুমার রায়ের স্ত্রী সরলা দেবী, মি: মুখার্জি নামক জনৈক তরুণ, মি: মোহিনীমোহন চট্টোপাধ্যায়, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ড: মহেন্দ্রলাল সরকার এবং স্বামী বিবেকানন্দ ,। এইদিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর তিনটি স্বরচিত গান পরিবেশন করেন ।
এই বাসভবন পাঁচ কাঠা জমির উপরে অবস্থিত ছিল। এই বাড়িতে একটি উঠান রয়েছে যেখানে বসে শ্রীমা সারদা দেবী ভগিনী নিবেদিতার সাথে বসে আলাপচারিতা করতেন । এখানে দুটি সিঁড়ি রয়েছে, যার একটি নিবেদিতার শোওয়ার ঘরে যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হত এবং অন্য সিঁড়িটি দিয়ে বাড়ির ন্যাড়া ছাদে যাওয়া যেত । নিবেদিতার শোওয়ার ঘরটি খুব বড় ছিল না, কিন্তু মিসেস এরিক হ্যামন্ডকে লেখা নিবেদিতার চিঠি থেকে জানা যায় যে তাতে আটটি দরজা ছিল ।
বর্তমানে বোসপাড়া লেনের নাম মা সারদামণি সরণি হিসাবে পরিবর্তন করা হয়েছে অর্থাৎ এই বাড়ির ঠিকানা ১৬এ মা সারদামণি সরণি।
১৬এ মা সারদামণি সরণি তে অবস্থিত ভগিনী নিবেদিতার এই ঐতিহাসিক বাসস্থানটি ২০০৫ সালে কলকাতা পৌরসংস্থা হেরিটেজ ভবন হিসাবে চিন্তিত করে । এরপর ১৬ মার্চ, ২০১৩ পশ্চিম বাংলার তৎকালীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকার এই বাসভবনকে অধিগ্রহণ করে রামকৃষ্ণ সারদা মিশনকে সমর্পণ করে । এরপর ভারতীয় পুরাতত্ব সর্বেক্ষণকে এই বাড়িটি সংরক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় । বর্তমানে সেই সংরক্ষণের কাজ অনেকটাই সম্পূর্ণ হয়েছে ।
বাড়িটি সংরক্ষণের কাজে কোনওভাবেই সিমেন্টের ব্যবহার হয়নি । তার বদলে চিরাচরিত চুন সুরকি ব্যবহার হয়েছে ।
সংরক্ষণের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর এই বাসভবনে একটি সংগ্রহশালা হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে যেখানে ভগিনী নিবেদিতার নানা জিনিস, বিশেষ করে তাঁর চিঠিপত্র প্রদর্শন করার কথা ।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article ভগিনী নিবেদিতার বাসভবন, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.