পাগলা দাশু একটি ছোটদের গল্প সংকলন। এটি লিখেছেন সুকুমার রায়। এটি লেখকের প্রথম গল্প সংকলন। তিনি ছোটদের জন্য অনেক লিখেছেন। গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যের খুব বিখ্যাত একটি গল্পগ্রন্থ। এ গ্রন্থটিতে মোট ২৫টি ছোটগল্প সংকলিত হয়েছে। এগুলির মধ্যে কয়েকটি গল্প হাসক্যর চরিত্র দাশুকে নিয়ে লেখা। সবাই তাকে ডাকে ‘পাগলা দাশু’। দাশুর হাস্যরস উদ্রেককারী কাণ্ডকারখানা এসব গল্পের বিষয় বস্তু। ছোটদের নিকট আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য এ গ্রন্থে ২৫টি হাতে আঁকা ছবি সংযোজিত হয়েছিল। এগুলির মধ্যে ১৫টি ছবি এঁকেছিলেন সুকুমার রায় নিজে। বাকী ১০টি এঁকেছিলেন চিত্রশিল্পী হিতেন্দ্রমোহন বসু।
লেখক | সুকুমার রায় |
---|---|
অঙ্কনশিল্পী | সত্যজিৎ রায় |
দেশ | ব্রিটিশ ভারত |
ভাষা | বাংলা |
ধরন | ছোটগল্প |
প্রকাশক | এম, সি, সরকার অ্যান্ড সন্স লিঃ, কবিপ্রকাশনী |
প্রকাশনার তারিখ | ২২ নভেম্বর ১৯৪০ |
পৃষ্ঠাসংখ্যা | ১২৮ |
আইএসবিএন | ৯৭৮-৯৮৪-৯৪৮৯৭-৩-৩ |
‘পাগলা দাশু’-’র গল্পগুলো সুকুমার রায়ে স্বীয় জীবদ্দশায় তাঁর সম্পাদিত ছোটদের সাহিত্য পত্রিকা সন্দেশ-এ প্রকাশ করেছিলেন। ২২ নভেম্বর ১৯৪০ তারিখে গ্রন্থাকারে এ গল্পগুলো প্রকাশ করেন এম, সি, সরকার অ্যান্ড সন্স লিঃ নামীয় প্রকাশনা সংস্থার পক্ষে সুধীরচন্দ্র সরকার। বইটির মূল্য ধার্য করা হয়েছিল দশ আনা মাত্র। গ্রন্থের প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন সত্যজিৎ রায়। এটি সত্যজিৎ রায়ের আঁকা জীবনের প্রথম প্রচ্ছদ। প্রচ্ছদের লেখকের নাম সুকুমার রায়চৌধুরী মুদ্রিত হয়েছিল। পাগলা দাশু’র ১৯৪০ সালে প্রথম সংস্করণে ২৫টি গল্প ছাপা হয়। ১৯৪৬ সালে মুদ্রিত দ্বিতীয় সংস্করণে ১৯টি গল্প প্রকাশিত হয়। তৃতীয় সিগনেট প্রেস সংস্করণে যুক্ত হয় আরো একটি গল্প যার নাম ‘আশ্চর্য কবিতা’। এর পরের মুদ্রণগুলোতে ২০টি গল্প নিয়েই প্রকাশিত হয়ে আসছে ‘পাগলা দাশু’। তবে বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত সংস্করণে মূল সংস্করণ অনুযায়ী ২৫টি গল্পই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
'দাশু' হলো কেন্দ্রীয় চরিত্র “দাশরথি”র সংক্ষেপ। দাশুর চোখ দুটি গোল গোল, কান দুটি অনাবশ্যক রকমের বড়, মাথায় একবস্তা ঝাঁকড়া চুল। লেখকের বর্ণনা অনুযায়ী, "ক্ষীণ দেহ , খর্বকায়, মুণ্ড তাহে ভারী / যশোরের কই যেন নরমূর্তিধারী।" দাশুর চেহারায়, কথাবার্তায়, চাল-চলনে বোঝা যেত যে তার মাথায় একটু 'ছিট' আছে। দাশু ছিল সকলের ঠাট্টাতামাশা পাত্র। সকলে তার বুদ্ধি ও চেহারা সম্বন্ধে অপ্রীতিকর সমালোচনা করতো। কিন্তু এতে সে কখনও বিরক্ত হতো না। বরং অনেক সময় সে নিজেই অন্যের অপ্রীতিকর মন্তব্যের ওপর রঙ চড়িয়ে নিজের সম্বন্ধে নানারকম অদ্ভুত গল্প বলতো। একদিন সে বলেছিল: “ভাই, আমাদের পাড়ায় যখন কেউ আমসত্ত্ব বানায় তখনই আমার ডাক পড়ে। কেন জানিস ?” বন্ধুর দল বললো, “খুব আমসত্ত্ব খাস বুঝি ?” দাশু বললো, “তা নয়। যখন আমতত্ত্ব শুকোতে দেয়, আমি সেইখানে ছাদের উপর বার দুয়েক চেহারাখানা দেখিয়ে আসি। তাতেই ত্রিসীমানার যত কাক সব ত্রাহি ত্রাহি করে ছুটে পালায় কাজেই আর আমসত্ত্ব পাহারা দিতে হয় না।”
পাগলা দাশু গ্রন্থটির জন্য একটি ভূমিকা লিখেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এ ভূমিকায় তিনি লিখেছিলেন: “সুকুমারের লেখনী থেকে যে অবিমিশ্র হাস্যরসের উৎসধারা বাংলা সাহিত্যকে অভিষিক্ত করেছে, তা অতুলনীয়। তাঁর সুনিপুণ ছন্দের বিচিত্র ও স্বচ্ছন্দ গতি, তাঁর ভাব-সমাবেশের অভাবনীয় অসংলগ্নতা পদে পদে চমৎকৃতি আনে। তাঁর স্বভাবের মধ্যে বৈজ্ঞানিক সংস্কৃতির গাম্ভীর্য ছিল, সেই জন্যেই তিনি তার বৈপরীত্য এমন খেলাচ্ছলে দেখাতে পেরেছিলেন। বঙ্গসাহিত্যে ব্যঙ্গরসিকতার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত আরো কয়েকটি দেখা গিয়েছে। কিন্তু সুকুমারের অজস্র হাস্যোচ্ছ্বাসের বিশেষত্ব তাঁর প্রতিভার যে স্বকীয়তার পরিচয় দিয়েছে, তার ঠিক সমশ্রেণীর রচনা দেখা যায় না।”
এ গ্রন্থে ছোটগল্পের সংখ্যা ২৫। ধারাক্রম অনুযায়ী সেগুলির নাম উল্লেখ করা হলো:
আমাদের ইংরাজি পড়াইতেন বিষ্টুবাবু। জগবন্ধু তাঁহার প্রিয় ছাত্র। পড়াইতে পড়াইতে যখনই তাঁহার বই দরকার হয়, তিনি জগবন্ধুর কাছে বই চাহিয়া লন। একদিন তিনি পড়াইবার সময় ‘গ্রামার’ চাহিলেন, জগবন্ধু তাড়াতাড়ি তাহার সবুজ কাপড়ের মলাট দেওয়া ‘গ্রামার’ খানা বাহির করিয়া দিল। মাস্টার মহাশয় বইখানি খুলিয়াই হঠাৎ গম্ভীর হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “বইখানা কার ?” জগবন্ধু বুক ফুলাইয়া বলিল, “আমার”। মাস্টার মহাশয় বলিলেন, “হুঁ— নতুন সংস্করণ বুঝি ? বইকে-বই একেবারে বদলে গেছে।” এই বলিয়া তিনি পড়িতে লাগিলেন— ‘যশোবন্ত দারোগা— লোমহর্ষক ডিটেকটিভ নাটক।’ জগবন্ধু ব্যাপারখানা বুঝিতে না পারিয়া বোকার মতো তাকাইয়া রহিল। মাস্টার মহাশয় বিকট রকম চোখ পাকাইয়া বলিলেন, “এই সব জ্যাঠামি বিদ্যে শিখছ বুঝি ?” জগবন্ধু আম্তা আম্তা করিয়া কি যেন বলিতে যাইতেছিল, কিন্তু মাস্টার মহাশয় এক ধমক দিয়া বলিলেন, “থাক্ থাক্, আর ভালমানুষি দেখিয়ে কাজ নেই— ঢের হয়েছে।” লজ্জায় অপমানে জগবান্ধুর দুই কান লাল হইয়া উঠিল— আমরা সকলেই তাহাতে বেশ খুশি হইলাম। পরে জানা গেল যে, এটিও দাশু ভায়ার কীর্তি, সে মজা দেখিবার জন্য উপক্রমণিকার জায়গায় ঠিক ঐরূপ মলাট দেওয়া একখানা বই রাখিয়া দিয়াছিল।
— পাগলা দাশু, সুকুমার রায় (গ্রন্থের প্রথম গল্প)
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article পাগলা দাশু (গ্রন্থ), which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.