চিবচ্যান দেশসমূহের উপর স্পেনীয় অভিযান (স্পেনীয়: Conquista de Colombia) বলতে স্পেনীয় সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণাধীন চিবচাভাষী দেশসমূহের উপর পরিচালিত অভিযানকে বুঝানো হয়েছে। চিবচাভাষীর লোকজন মূলতঃ মুইস্কা ও তাইরোনা জনগোষ্ঠীর। আমেরিকা অঞ্চলে স্পেনীয় উপনিবেশবাদ শুরু হলে বর্তমানের কলম্বিয়ায় তারা বসবাস করতো।
মেসোআমেরিকান সদস্যদেরকে অভিবাসনের মাধ্যমে কলম্বিয়ায় পাঠানো হয় যারা কলম্বিয়ার প্রথম অধিবাসী ছিল। খ্রিস্ট-পূর্ব আনুমানিক ১২০০ সালের পর আরও দুইবার আনুমানিক খ্রিস্ট-পূর্ব ৫০০ এবং ৪০০ থেকে ৩০০ খ্রিস্ট-পূর্বাব্দে তাদেরকে এখানে পাঠানো হয়েছিল। পরবর্তীতে দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চল থেকে আরাওয়াক জনগোষ্ঠী বর্তমান এলাকায় আসে। তৃতীয় দফায় অভিবাসনকারী জনগোষ্ঠী আসে। যুদ্ধপ্রিয় কারিবদেরকে নিচুভূমিতে ও মেসোআমেরিকানদেরকে পার্বত্য এলাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। বর্তমানের কলম্বিয়ার দক্ষিণাঞ্চল ইনকা সাম্রাজ্যের অংশ ছিল।
স্পেনীয় অভিযানকালীন দুইটি প্রধান উপজাতি সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সফলতা লাভ করে। মুইস্কা ও তাইরোনা উপজাতি চিবচান দেশসমূহে বসবাস করতো।
১৬শ শতাব্দীতে চিবচারা দুইটি প্রধান দলে বিভক্ত হয়। মুইস্কারা কান্দিনামারাকা ও বয়াকা উপত্যকায় বসবাস করতে থাকে ও তাইরোনারা বর্তমানের মাগদালেনা, সিজার ও লা গুয়াজিরা ডিপার্টমেন্টের সিয়েরা নেভাদা দে সান্তা মার্তার উত্তরাঞ্চলীয় পর্বতের গুহায় বসবাস করে।
স্পেনীয় নৌঅভিযাত্রী আলোন্সো দে ওজেদা ১৪৯৯ সালে এ অঞ্চলটি আবিষ্কার করেন। তবে তিনি ভূমি স্পর্শ করেননি। এর স্বল্পকাল পর অন্য স্পেনীয় অভিযাত্রী জুয়ান দে লা কোসা ভূমিতে অবতরণ করেন যা বর্তমানের গুয়াজিরা উপদ্বীপের কাবো দে লা ভেলা এলাকা। ১৫০২ সালে বর্তমান কলম্বিয়ার ইউরাবা উপসাগরের কাছে আরও একটি উপকূলে স্পেনীয় অভিযাত্রী ভাস্কো নানেজ দে বালবোয়া আবিষ্কার করেন ও আত্রাতো নদীর কাছের এলাকাটি দখল করেন। সেখানে আনুমানিক ১৫০৯ সালে তারা সান্তা মারিয়া লা অ্যান্টিগুয়া দেল দারিয়েন ও আনুমানিক ১৫০৮ থেকে ১৫১০ সময়কালে বর্তমানে বিলুপ্ত শহর স্যান সেবাস্তিয়ান দে ইউরাবা প্রতিষ্ঠা করেন। এ দুটোই আমেরিকা অঞ্চলে প্রথম উঁচুভূমিতে ইউরোপীয় বসতি স্থাপন ছিল।
২৯ জুলাই ১৫২৫ তারিখে কলম্বিয়ার উত্তর উপকূলবর্তী সান্তা মার্তা শহরটি রদ্রিগো দে বাস্তিদাস দখল করে নেন।
এপ্রিল, ১৫৩৬ সালে স্পেনীয় দখলকারী গঞ্জালো জিমেনেজ দে কুসাদা আন্দ্রিজের প্রধান স্থানে মূল আঘাতে নেতৃত্ব দেন। তিনি প্রায় ৮০০ স্পেনীয় সৈনিক ও ৮৫টি ঘোড়া নিয়ে হাজির হন। সেখানে মুইস্কা কনফেডারেশনের অবস্থান ছিল। সুস্কা ও নেমোকন দ্য দে কুসাদায় আবাসনকালে এ অভিযানটি প্রথমবারের মতো মুইস্কারা মার্চ, ১৫৩৭ সালে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলে। মুইস্কা ‘জিপা’ তিস্কুসুসা দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যর্থ আক্রমণ হানেন ও দখলকারীরা তাদের প্রথম সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন করে।
একই বছরের এপ্রিল মাসে বোগোতা সাভানার অধিকারের বিষয় নিয়ে ধারাবাহিকভাবে তিস্কুসুসার বাহিনীর কাছ থেকে আক্রমণের শিকার হচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি প্রতিপক্ষীয় বিভিন্ন আদিবাসী প্রধানদের কাছ থেকে সমর্থন নিয়ে সুবিধা নিচ্ছিলেন। চিয়া ও সুবারা স্পেনীয়দের সাথে হাত মেলায়। অন্যদিকে সাধারণ কাঠের অস্ত্রাদি: দীর্ঘ কাঠের হাতলে লোহার ফলা, শাবল, তীরের ন্যায় অস্ত্র নিয়ে তিস্কুসুসা ক্রমাগতভাবে পরাজিত হচ্ছিলেন এবং ঘোড়া, কুকুর ও আগ্নেয়াস্ত্র সহযোগে স্পেনীয়দের রুখতে ব্যর্থ হচ্ছিল। তবে, তিস্কুসুসা ক্রমাগতভাবে স্পেনীয়দেরকে ক্রমাগতভাবে বিরক্ত ও আক্রমণ করে চলছিলেন। ১৫৩৭ সালের শেষদিকে তার দেহাবসান হলে স্পেনীয়রা জানার পূর্বেই খুব দ্রুত তার সম্পদ সড়িয়ে ফেলে।
তিস্কুসুসা’র উত্তরাধিকারী ভাইপো ‘সাকুসাজিপা’ নামে পরিচিত সাগিপা দ্রুত দখলকারীদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। তবে, স্পেনীয় ও সাগিপা’র মধ্যকার সম্পর্ক দ্রুত ভেঙ্গে যায়। সাগিপাকে হারানো সম্পদসহ আটক করে বিচারপ্রক্রিয়ায় আনা হয়। স্পেনীয়দের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থেকে রক্ষাকল্পে তাকে বিশাল গুপ্ত কোষাগার উদঘাটনের বিনিময়ে ক্ষমা ঘোষণা করা হয়।
অবশেষে ৬ আগস্ট, ১৫৩৮ তারিখে ‘সান্তা ফে দে বোগোতা’ নামে পরিচিত বোগোতা শহরের গোড়াপত্তন ঘটানো হয়। মুইস্কার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজধানী বাকাতায় এ শহরের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়।
বোকোতা জনগোষ্ঠী বোগোতা বা বাগলেয়ার নামে পরিচিত ছিল। তারা পানামার আমেরিন্ডিয়ান আদিবাসী জনগোষ্ঠীর। বোকাস দেল তরো ও ভেরাগুয়াসের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকায় তারা বসবাস করে। বোকোতা ইন্ডিয়ানেরা তেরাইব বা নাসো ইন্ডিয়ান্সের একই অঞ্চলে রয়েছে।
২০০০ সালের তথ্য অনুযায়ী পানামায় ৯৯৩জন বোগোতা জনগোষ্ঠী বসবাস করছেন। তারাই পানামার ক্ষুদ্রতম উপজাতি ও দেশের পশ্চিমাঞ্চলে বসবাসরত।
১৫৩৭ সালে মুইস্কাদের উপর স্পেনীয় দখলদারিত্বের পূর্বেকার শতাব্দীগুলোয় কলম্বীয় আন্দ্রিজের পূর্ব চূড়ার উঁচু এলাকা আল্তিপ্লানো কান্দিবোয়াসেন্সে মুইস্কা জনগোষ্ঠী বসবাস করতো। মূলতঃ কৃষিকাজ ও ব্যবসার ন্যায় উন্নত সভ্যতার দিকে অগ্রসর হয়।
মায়া, অ্যাজটেক ও ইনকাদের পাথুড়ে স্থাপত্যকলার ন্যায় মুইস্কারা একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতো না। বাড়ীঘর, মন্দির, তীর্থক্ষেত্রগুলো কাঠ ও মাটির সমন্বয়ে তৈরি করতো। তারা ‘লবণ মানবরূপে’ পরিচিত ছিল। জিপাকুইরার আল্তিপ্লানোর বিভিন্ন লবণ ক্ষেত্র থেকে তাদের সংগ্রহের কুশলতার কারণেই তারা এ নামে পরিচিতি পায় এবং জিপাকুইরা, নেমোকন ও তোসা’র উপর খবরদারিত্ব করতো।
মুইস্কা বর্ষপঞ্জিকার সাহায্যে তারা শস্য বপন, ফসল উত্তোলন ও গান, নৃত্য ও বাদ্যযন্ত্র সহযোগে উৎসব পালন করতো। তাদের জাতীয় পানীয় চিচা ব্যাপকভাবে উৎপাদিত হতো ও পান করতো।
সম্প্রদায়ের সবচেয়ে সম্মানিত সদস্যকে মমিকৃত অবস্থায় রাখা হতো। মমিগুলোকে সমাহিত করা হতো না। কখনোবা মন্দিরে রাখা হতো ও স্বাভাবিক অবস্থান হিসেবে খাঁচায় রাখা হতো ও যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুদেরকে আশ্চর্যান্বিত করার উদ্দেশ্যে তাদের পিঠে নিয়ে বহন করা হতো।
তাদের শিল্পকলা সংস্কৃতির জনপ্রিয়তার কথা জানান দেয়। বসবাসকারী এলাকা, মন্দির ও অন্যান্য স্থাপনাগুলো স্পেনীয়রা ধ্বংস করে দেয় ও মুইস্কা অঞ্চলগুলোকে উপনিবেশে পরিণত করে। চমৎকার স্বর্ণের কাজ জানতো তারা। মুইস্কারা প্রচুর স্বর্ণ ব্যবহার করে স্বর্ণালঙ্কার, ‘তুম্বাগা’, সিরামিক ও তুলার কারুকাজ তৎকালীন দক্ষিণ মুইস্কার রাজধানী বোগোতার মিউজিও দেল অরোয় রক্ষিত আছে।
মুইস্কা অভিযানটি শ্রেষ্ঠ আমেরিকান সভ্যতায় পরিচালিত চারটি স্পেনীয় অভিযানের মধ্যে সর্বোত্তম ছিল। এক বছরব্যাপী এ অভিযানে অংশগ্রহণকারী ৮০% সৈনিক ও ঘোড়া মুইস্কা কনফেডারেশনের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকায় পৌঁছতে পারেনি। ১৫৩৭ থেকে ১৫৩৯ সালের মধ্যে স্পেনীয়রা অনেকগুলো বসতি স্থাপন করতে সক্ষম হয়।
সুতাগাও জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা চিবচাভাষী। আদিবাসী এ সম্প্রদায়ের লোকেরা ফুসাগাসুগা, বোগোতা সাভানা, কান্দিনামারাকা, কলম্বিয়া অঞ্চল থেকে আগত। সুতাগাওদের সমন্ধে লুকাস ফার্নান্দেজ দে পাইদ্রাহিতা অসম্ভব জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন।
স্পেনীয়দের আগ্রাসনের পূর্বে সুতাগাও জনগোষ্ঠী উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থানকারী মুইস্কা জনগোষ্ঠীর সাথে সংঘর্ষে অবতীর্ণ হয়। আনুমানিক ১৪৭০ সালের দিকে পাস্কার যুদ্ধে সুতাগাও যোদ্ধারা পরাজিত হলে জিপা সাগুয়ামানচিকা সুতাগাও এলাকা দখল করে নেন। ফলশ্রুতিতে গঞ্জালো দে কুসাদা’র নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনাকারী জুয়ান দে সেসপেদেস সুতাগাওয়ে নতুন গ্রানাডা রাজতন্ত্রের নতুন শাসনের বিষয়টির নিষ্পত্তি ঘটান।
৫ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৫৯২ তারিখে বার্নারদিনো আলোবর্নজ নতুন শহর প্রতিষ্ঠা করার পূর্ব-পর্যন্ত সুতাগাও জনগোষ্ঠী এ অঞ্চলে বসবাস করতে থাকে। মিগুয়েল দে ইবারা এলাকা পরিদর্শনে গেলে সেখানে তিনি ৭৫৯জন আদিবাসীকে ফুসাগাসুগায় বসবাস করতে দেখতে পান।
ফেব্রুয়ারি, ১৭৬০ সালে আরোস্তিকুই এলাকায় অবতরণ করেন। তখন এ সংখ্যা কমে গিয়ে মাত্র ৮৫-তে চলে যায় ও সেখানে ১০৯টি পরিবারে ৬৪৪জন নতুন বসতিস্থাপনকারীকে দেখতে পান।
|তারিখ=
(সাহায্য)This article uses material from the Wikipedia বাংলা article চিবচ্যান দেশসমূহে স্পেনীয় অভিযান, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.