আলমগীর (জন্ম: ৩ এপ্রিল, ১৯৫০) বাংলাদেশের জনপ্রিয় চলচ্চিত্রাভিনেতা। তার পৈতৃক বাড়ি নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। আলমগীর আশি ও নব্বইয়ের দশকে দাপটের সঙ্গে কাজ করেছেন। পারিবারিক টানাপোড়েন, সামাজিক অ্যাকশন, রোমান্টিক অ্যাকশন, ফোক ফ্যান্টাসিসহ সব ধরনের চলচ্চিত্রে তিনি ছিলেন সফল। অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজক, গায়ক ও পরিচালক হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন। তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা বিভাগে ৯ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। তিনি ২০২৪ সালে একুশে পদকপ্রাপ্ত হিসেবে বিবেচিত হন।
আলমগীর | |
---|---|
জন্ম | মহিউদ্দিন আহমেদ আলমগীর ৩ এপ্রিল ১৯৫০ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
পেশা | অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক, উপস্থাপক |
কর্মজীবন | ১৯৭৩–বর্তমান |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | পূর্ণ তালিকা |
দাম্পত্য সঙ্গী | খোশনূর আলমগীর (বি. ১৯৭৩; বিচ্ছেদ. ১৯৯৯) রুনা লায়লা (বি. ১৯৯৯) |
সন্তান | আঁখি আলমগীর (খোশনূর আলমগীর এর কন্যা) আরও এক মেয়ে ও এক ছেলে আছে |
পুরস্কার | জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (৯ বার), একুশে পদক (২০২৪) |
আলমগীরের চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ১৯৭৩ সালে আমার জন্মভূমি দিয়ে। জিঞ্জীর (১৯৭৮) চলচ্চিত্রে রাজ্জাক ও সোহেল রানার সাথে অভিনয় করে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৮৫ সালে নিষ্পাপ চলচ্চিত্র দিয়ে তার পরিচালনায় অভিষেক হয়। মা ও ছেলে (১৯৮৫) ছবিতে দীপক চৌধুরী চরিত্রে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে তার প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। পরবর্তীতে অপেক্ষা (১৯৮৭), ক্ষতিপূরণ (১৯৮৯), মরণের পরে (১৯৯০), পিতা মাতা সন্তান (১৯৯১), অন্ধ বিশ্বাস (১৯৯২), দেশপ্রেমিক (১৯৯৪) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে আরও ছয়টি জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি নির্মাণ করেন। ২০১৮ সালে তার পরিচালিত তৃতীয় চলচ্চিত্র একটি সিনেমার গল্প মুক্তি পায়।
আলমগীর ১৯৫০ সালের ৩ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা কলিম উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে দুদু মিয়া ঢালিউডের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশ এর একজন অন্যতম প্রযোজক।গ্রামের বাড়ি নবী-নগর
আলমগীর অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র আলমগীর কুমকুম পরিচালিত যুদ্ধভিত্তিক আমার জন্মভূমি ১৯৭৩ সালে মুক্তি পায়। তার অভিনীত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ছিল দস্যুরাণী (১৯৭৪)। ১৯৭৫ সালে তিনি শাবানার বিপরীতে চাষীর মেয়ে ও কবরীর বিপরীতে লাভ ইন শিমলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। পরের বছর তিনি আলমগীর কুমকুম পরিচালিত গুন্ডা চলচ্চিত্রে রাজ্জাক ও কবরীর সাথে একটি ছোট চরিত্রে এবং তাহের চৌধুরী পরিচালিত মাটির মায়া চলচ্চিত্রে ফারুক ও রোজিনার সাথে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৭৮ সালে দিলীপ বিশ্বাস পরিচালিত জিঞ্জীর চলচ্চিত্রে রাজ্জাক ও সোহেল রানার সাথে অভিনয় করেন। তিনি আসাদ চরিত্রে কামাল আহমেদ পরিচালিত রজনীগন্ধা (১৯৮২) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এতে তার সহশিল্পী ছিল রাজ্জাক, শাবানা ও অঞ্জনা। ১৯৮৪ সালে তিনি আমজাদ হোসেন পরিচালিত ভাত দে ও সখিনার যুদ্ধ চলচ্চিত্রে কাজ করেন। দুটি ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন শাবানা এবং এর মধ্য দিয়ে শাবানার সাথে তার জুটি গড়ে ওঠে, যা পরবর্তী এক দশক বাংলা চলচ্চিত্রে রাজত্ব করে। ভাত দে ছবিতে তিনি একজন দরিদ্র বাউলের শিষ্য গহর চরিত্রে অভিনয় করেন।
আলমগীর কামাল আহমেদ পরিচালিত মা ও ছেলে (১৯৮৫) চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। এই ছবিতে দীপক চৌধুরী চরিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে তিনি তার প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র নিষ্পাপ। ১৯৮৭ সালে তিনি শাবানার বিপরীতে অভিনয় করেন মায়ের দোয়া, দিলীপ বিশ্বাস পরিচালিত অপেক্ষা ও সুভাষ দত্ত পরিচালিত স্বামী স্ত্রী চলচ্চিত্রে। অপেক্ষা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি দ্বিতীয়বার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। পরের বছর অভিনয় করেন হাফিজ উদ্দীন পরিচালিত পথে হল দেখা চলচ্চিত্রে। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন অঞ্জনা রহমান। পরবর্তীতে ক্ষতিপূরণ (১৯৮৯), মরণের পরে (১৯৯০), পিতা মাতা সন্তান (১৯৯১), ও অন্ধ বিশ্বাস (১৯৯২) চলচ্চিত্রের জন্য টানা চারবার তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এসময়ে তার অভিনীত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হল সত্য মিথ্যা (১৯৮৯), রাঙা ভাবী (১৯৮৯), দোলনা (১৯৯০), অচেনা (১৯৯১), সান্ত্বনা (১৯৯১) ও ক্ষমা (১৯৯২)। ১৯৯৪ সালে অভিনয় করেন কাজী হায়াৎ পরিচালিত নাট্যধর্মী দেশপ্রেমিক, শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত যুদ্ধ-নাট্যধর্মী ঘাতক, ও গাজী মাজহারুল আনোয়ার পরিচালিত পারিবারিক-নাট্যধর্মী স্নেহ চলচ্চিত্রে। দেশপ্রেমিক-এ একজন চলচ্চিত্র পরিচালকের ভূমিকায় অভিনয় করে তিনি সপ্তমবারের মত শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এই বছর তিনি নির্মাণ করেন নির্মম। এতে তার সাথে অভিনয় করেন শাবানা, শাবনাজ ও বাপ্পারাজ। ছবিটি সমাদৃত হয় এবং শাবনাজ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৯৫ সালে তিনি দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত কন্যাদান চলচ্চিত্রে পার্শ্ব ভূমিকায় অভিনয় করেন। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন সালমান শাহ ও লিমা। পরের বছর তিনি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন রচিত পোকা মাকড়ের ঘরবসতি উপন্যাস অবলম্বনে আখতারুজ্জামান পরিচালিত পোকা মাকড়ের ঘরবসতি চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়া পার্শ্ব চরিত্রে সোহেল রানা অভিনীত অজান্তে, সালমান শাহ অভিনীত মায়ের অধিকার ও সত্যের মৃত্যু নাই, ইলিয়াস কাঞ্চন অভিনীত দুর্জয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
আলমগীর ২০১০ সালে শাহাদাত হোসেন লিটন পরিচালতি জীবন মরনের সাথী চলচ্চিত্রে আশরাফ চৌধুরী চরিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। পরের বছর অভিনয় করেন কে আপন কে পর, হৃদয় ভাঙ্গা ঢেউ ও তার নিজের প্রযোজিত মাটির ঠিকানা চলচ্চিত্রে। কে আপন কে পর-এ অভিনয়ের জন্য তিনি টানা দ্বিতীয়বারের মত শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৩ সালে ৩৫ বছর পর এফ আই মানিক পরিচালিত জজ ব্যারিস্টার পুলিশ কমিশনার চলচ্চিত্রে পুনরায় রাজ্জাক ও সোহেল রানার একসাথে কাজ করেন। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন শাকিব খান ও পূর্ণিমা। ছবিতে আলমগীরকে একজন পুলিশ কমিশনার চরিত্রে দেখা যায়।
তিনি কণ্ঠশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন। আগুনের আলো চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম কণ্ঠ দেন। এরপর তিনি কার পাপে, ঝুমকা ও নির্দোষ চলচ্চিত্রেও গান গেয়েছেন।
তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি হিসেবেও দায়ীত্ব পালন করেন।
আলমগীরের প্রথম স্ত্রী ছিলেন গীতিকার খোশনুর আলমগীর। তাকে বিয়ে করেন ১৯৭৩ সালে। গায়িকা আঁখি আলমগীর তাদের কন্যা। খোশনুরের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের পর আলমগীর ১৯৯৯ সালে গায়িকা রুনা লায়লাকে বিয়ে করেন।
বছর | বিভাগ | চলচ্চিত্র | ফলাফল |
---|---|---|---|
১৯৮৫ | শ্রেষ্ঠ অভিনেতা | মা ও ছেলে | বিজয়ী |
১৯৮৭ | শ্রেষ্ঠ অভিনেতা | অপেক্ষা | বিজয়ী |
১৯৮৯ | শ্রেষ্ঠ অভিনেতা | ক্ষতিপূরণ | বিজয়ী |
১৯৯০ | শ্রেষ্ঠ অভিনেতা | মরণের পরে | বিজয়ী |
১৯৯১ | শ্রেষ্ঠ অভিনেতা | পিতা মাতা সন্তান | বিজয়ী |
১৯৯২ | শ্রেষ্ঠ অভিনেতা | অন্ধ বিশ্বাস | বিজয়ী |
১৯৯৪ | শ্রেষ্ঠ অভিনেতা | দেশপ্রেমিক | বিজয়ী |
২০১০ | শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা | জীবন মরণের সাথী | বিজয়ী |
২০১১ | শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা | কে আপন কে পর | বিজয়ী |
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article আলমগীর (অভিনেতা), which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.