শাফী ইমাম রুমী

শাফী ইমাম রুমী (জন্ম: ২৯ মার্চ, ১৯৫১ - নিখোঁজ: ৩০ আগস্ট, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন গেরিলা যোদ্ধা। তিনি ছিলেন শহীদ জননী খ্যাত জাহানারা ইমামের জ্যেষ্ঠ পুত্র। জাহানারা ইমাম রচিত একাত্তরের দিনগুলি গ্রন্থে রুমী অন্যতম প্রধান চরিত্র হিসেবে দেখা দেয় এবং তাঁর মৃত্যুর জন্য জাহানারা ইমাম শহীদ জননী উপাধি পান।

শাফী ইমাম রুমী
শাফী ইমাম রুমী
জন্ম২৯ মার্চ, ১৯৫১
সিলেট
মৃত্যু৩০ আগস্ট, ১৯৭১ (নিখোঁজ) ও ১৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ (মৃত্যু)
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্বশাফী ইমাম রুমী পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
শাফী ইমাম রুমী বাংলাদেশ (১৯৭১ সালের পর)
আত্মীয়জাহানারা ইমাম (মা)
শরীফ ইমাম (বাবা)

প্রারম্ভিক জীবন

শাফী ইমাম রুমী ১৯৫১ সালের ২৯ মার্চ শরীফ ও জাহানারা ইমামের উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আই.এস.সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর ১৯৭১‌ সালের মার্চ মাসে রুমী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন। এছাড়া, বিশেষ অনুমতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর অর্থনীতি বিভাগ এ ক্লাস করতেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন তুখোড় তার্কিক।

তিনি ইলিনয় ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে সুযোগ পেলেও যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবার পর আদর্শগত কারণে দেশকে যুদ্ধের মধ্যে রেখে বিদেশে নিরাপদ আশ্রয়ে নিজের ক্যারিয়ারের জন্য পড়তে যাননি।

মুক্তিযুদ্ধ

প্রাণপ্রিয় পাশা মামা,
অবাক হয়ো না। এটা লেখা হয়েছে আর তােমার কাছে পৌছেছে। আর পড়ার পর চিঠিটা নষ্ট করে ফেলো। এ নিয়ে আম্মাকেও কিছু লিখো না। তা হলে তাঁদের বিপদে পড়তে হবে। তাড়াহুড়া করে লিখলাম। আমার হাতে সময় খুব কম। বেস ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে কাল এখান থেকে চলে যেতে হবে।
আমরা একটা ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধ লড়ছি। আমরা জয়ী হব। আমাদের সবার জন্য দোয়া করো। কী লিখবো বুঝতে পারছি না- কত কী নিয়ে যে লেখার আছে। নৃশংসতার যত কাহিনী তুমি শুনছ, ভয়াভয় ধংশের যত ছবি তুমি দেখছ, জানবে তার সবই সত্য। ওরা আমাদের নৃশংসতার সঙ্গে ক্ষতবিক্ষত করছে, মানব ইতিহাসে যার তুলনা নেই। আর নিউটন আসলেই যথার্থ বলেছেন, একই ধরনের হিংস্রতা নিয়ে আমরাও তাদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ব। এরই মধ্যে আমাদের যুদ্ধ অনেক এগিয়ে গেছে। বর্ষা শুরু হলে আমরা আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়ে দেব।
জানি না আবার কখন লিখতে পারব। আমাকে লিখাে না। সােনার বাংলার জন্য সর্বোচ্চ যা পারো, করো। এখনকার মতাে বিদায়।

—সৈয়দ মোস্তফা কামাল পাশাকে লেখা চিঠিতে শফি ইমাম রুমী

যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে, রুমী ধারাবাহিকভাবে তার মা ও বাবাকে নিজের যুদ্ধে যাবার ব্যাপারে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। ১৯৭১ সালের ১৯ এপ্রিল মাকে অবশেষে রাজি করিয়ে সীমান্ত অতিক্রমের সুযোগ খুজছিলেন। পরে ২ মে রুমী সীমান্ত অতিক্রমের প্রথম প্রয়াস চালান। কিন্তু প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে তাকে ফেরত আসতে হয় এবং দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় সফল হন। তিনি সেক্টর-২ এর অধীনে মেলাঘরে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এই সেক্টরটির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন খালেদ মোশাররফ ও রশিদ হায়দার। প্রশিক্ষণ শেষ করে তিনি ঢাকায় ফেরত আসেন এবং ক্র্যাক প্লাটুনে যোগ দেন। ক্র্যাক প্লাটুন হল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা আক্রমণ পরিচালনাকারী একটি সংগঠন। রুমী ও তার দলের ঢাকায় আসার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন হামলা করা। এ সময় তাকে ঝুঁকিপূর্ণ আক্রমণ পরিচালনা করতে হয় যার মধ্যে ধানমণ্ডি রোডের একটি আক্রমণ ছিল উল্লেখযোগ্য। সেখানে একটি পাকিস্তানি সেনা জিপ তাদের বহনকারী গাড়ির পিছু নিলে তিনি গাড়ির পেছনের কাচ ভেংগে "'দেখো দেখো, একটি জিপ আমাদের অনুসরণ করছে"' বলে স্টেন গান ব্রাশফায়ার করেন। তার গুলিতে পাকিস্তানি জিপের ড্রাইভার নিহত হয় এবং গাড়ি ল্যাম্পপোস্টে যেয়ে ধাক্কা খায়। বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা তার গুলিতে মারা যায়।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দ্বারা গ্রেফতার ও পরিণতি

ধানমণ্ডি রোডের অপারেশনের পর রুমী তার সহকর্মীদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯৭১ সালের ২৯ আগস্ট তিনি তার নিজের বাড়িতে কাটান, এবং এই রাতেই বেশকিছু গেরিলা যোদ্ধার সাথে তিনি পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী একটি অজ্ঞাত উৎস থেকে তথ্য নিয়ে বেশ কিছুসংখ্যক যোদ্ধাকে গ্রেফতার করেন যার মধ্যে ছিলেন আলতাফ মাহমুদ, আবুল বারাক, আজাদ ও জুয়েল। রুমীর সাথে তার বাবা শরীফ ইমাম এবং ভাই সাইফ ইমাম জামীকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের স্থানে রুমীকে ভাই ও বাবাসহ একঘরে আনলে রুমী সবাইকে তার যুদ্ধে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করতে বলেন। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন যে, পাক বাহিনী তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সচেতন এবং এর সব দায়-দায়িত্ব তিনি নিজেই নিতে চান। ৩০ আগস্টের পর রুমী ও তার সহযোদ্ধা বদী এবং জুয়েলকে আর দেখা যায়নি।

ইয়াহিয়া খান ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিলে অনেক আত্মীয় তার জন্য আবেদন করতে বলেন। কিন্তু রুমী যে বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ধরা পড়েছে, তাদের কাছেই ক্ষমা চাইতে রুমীর বাবা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী, দেশপ্রেমিক শরীফ ইমাম রাজি ছিলেন না।

হত্যার বিচার

২০১৩ সালের ১৭ই জুলাই, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ-এর বিরুদ্ধে গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা, রুমী হত্যা ও নির্যাতন ইত্যাদিসহ মোট উত্থাপিত ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টিতে দোষী প্রমাণিত হয়। এর মাঝে দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদন্ড আদেশ দেয়া হয়।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

শাফী ইমাম রুমী প্রারম্ভিক জীবনশাফী ইমাম রুমী মুক্তিযুদ্ধশাফী ইমাম রুমী পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দ্বারা গ্রেফতার ও পরিণতিশাফী ইমাম রুমী হত্যার বিচারশাফী ইমাম রুমী আরও দেখুনশাফী ইমাম রুমী তথ্যসূত্রশাফী ইমাম রুমী বহিঃসংযোগশাফী ইমাম রুমীআগস্ট ৩০একাত্তরের দিনগুলিজাহানারা ইমামমার্চ ২৯

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

ঋতুজাপানবিশ্ব ব্যাংককারকঅর্থনীতিঠাকুর অনুকূলচন্দ্রইসলামের ইতিহাসচর্যাপদবঙ্গবন্ধু সেতুনারী ক্ষমতায়নইউরোপীয় ইউনিয়নঅকালবোধনবলপৃথিবীর ইতিহাসইংরেজি ভাষাচাশতের নামাজ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপমঙ্গল গ্রহমরিশাসপ্রথম উসমানরেনেসাঁহনুমান (রামায়ণ)সূরা আরাফদক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থাইজিও অডিটরে দা ফিরেনজেআসরের নামাজইলেকট্রনমানিক বন্দ্যোপাধ্যায়মরক্কো জাতীয় ফুটবল দলনীল তিমিমরক্কোবেগম রোকেয়াবাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীদের তালিকাফেরদৌস আহমেদসূরা আর-রাহমানমহাবিশ্বমৃত্যু পরবর্তী জীবনপ্রবালমসজিদে নববীরোমানিয়ারাষ্ট্রমৌলিক পদার্থের তালিকাডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডঅর্শরোগকুলম্বের সূত্ররাধাহিন্দি ভাষাকিশোরগঞ্জ জেলাবাংলাদেশের বিমানবন্দরের তালিকাতায়াম্মুমইশার নামাজহরিপদ কাপালীমালদ্বীপঢাকাপ্রযুক্তিএশিয়াপিরামিডখাদ্যসংযুক্ত আরব আমিরাতঅণুজীবইফতারইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউননৈশকালীন নির্গমনকোষ বিভাজনপর্যায় সারণীভারতের সংবিধানইসলামের নবি ও রাসুলসালেহ আহমদ তাকরীমডিম্বাশয়স্নায়ুতন্ত্রপর্তুগালসূরা আল-ইমরানশাহ জাহানক্রিয়েটিনিনছায়াপথস্লোভাক ভাষাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সেক্টরসমূহ🡆 More