লুইস ফ্লেচার: মার্কিন অভিনেত্রী

এস্টেল লুইস ফ্লেচার (ইংরেজি: Estelle Louise Fletcher; ২২ জুলাই ১৯৩৪ - ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২) একজন মার্কিন অভিনেত্রী। তিনি নাট্যধর্মী ওয়ান ফ্লু ওভার দ্য কুকুস নেস্ট (১৯৭৫) ছবিতে নার্স রেচেড চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সর্বাধিক পরিচিত। এই কাজের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কার, বাফটা পুরস্কার ও গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার অর্জন করেন। অড্রি হেপবার্ন ও লাইজা মিনেলির পর তিনি তৃতীয় অভিনেত্রী যিনি নির্দিষ্ট একটি কাজের জন্য এই তিনটি পুরস্কার অর্জন করেছেন।

লুইস ফ্লেচার
লুইস ফ্লেচার: প্রারম্ভিক জীবন, কর্মজীবন, ব্যক্তিগত জীবন ও মৃত্যু
১৯৫৯ সালে ফ্লেচার
জন্ম
এস্টেল লুইস ফ্লেচার

(১৯৩৪-০৭-২২)২২ জুলাই ১৯৩৪
বার্মিংহাম, অ্যালাবামা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মৃত্যুসেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২(2022-09-23) (বয়স ৮৮)
মোঁদ্যুরোস, ফ্রান্স
পেশাঅভিনেত্রী
কর্মজীবন১৯৫৭ - ২০১৭
পরিচিতির কারণওয়ান ফ্লু ওভার দ্য কুকুস নেস্ট
উচ্চতা৫ ফুট ১০ ইঞ্চি (১.৭৮ মি)
দাম্পত্য সঙ্গীজেরি বিক (বি. ১৯৬০; বিচ্ছেদ. ১৯৭৭)
সন্তান

১৯৫৮ সালে ইয়ান্সি ডেরিঙ্গার টেলিভিশন ধারাবাহিক দিয়ে তিনি অভিনয় জগতে প্রবেশ করেন। তিনি ১৯৫৯ সালে ওয়াগন ট্রেন টিভি ধারাবাহিকে অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেন এবং ১৯৬৩ সালে আ গ্যাদারিং অব ঈগলস্‌ দিয়ে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়। প্রায় এক দশক অভিনয় থেকে দূরে থাকার পর তিনি ১৯৭৪ সালে রবার্ট আল্টম্যানের থিভস্‌ লাইক আস ছবিতে অভিনয় করেন। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হল একসরসিস্ট টু: দ্য হেরেটিক (১৯৭৭), ব্রেইনস্ট্রর্ম (১৯৮৩), ফায়ারস্টার্টার (১৯৮৪), ফ্লাওয়ার ইন দি অ্যাটিক (১৯৮৭), টু ডেজ ইন দ্য ভ্যালি (১৯৯৬) ও ক্রুয়েল ইনটেনশন্স (১৯৯৯)।

তার কর্মজীবনের পরবর্তীকালে তিনি টেলিভিশনে কাজ করেন। তিনি স্টার ট্রেক: ডিপ স্পেস নাইন (১৯৯৩-১৯৯৯) ধারাবাহিকে উইন অ্যাডামি চরিত্রে অভিনয় করেন, এবং পিকেট ফেঞ্চেস (১৯৯৬) ও জোয়ান অব আর্কাডিয়া (২০০৪) ধারাবাহিকে অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেন প্রাইমটাইম এমি পুরস্কারে মনোনীত হন। তিনি ২০১১-১২ সালে শোটাইম টেলিভিশনের শেমলেস ধারাবাহিকে ফ্র্যাঙ্ক গ্যালাগার ভূমিকায় এবং নেটফ্লিক্সের গার্লসবস (২০১৭) ধারাবাহিকে রোজি ভূমিকায় অভিনয় করেন।

প্রারম্ভিক জীবন

ফ্লেচার ১৯৩৪ সালের ২২শে জুলাই অ্যালাবামা অঙ্গরাজ্যের বার্মিংহামে জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতা এস্টেল (জন্মনাম: কাডওয়েল) এবং পিতা রেভারেন্ড রবার্ট ক্যাপার্স ফ্লেচার এর‍্যাবের একজন এপিসকোপালিয়ান মিশনারি। তার পিতামাতা দুজনেই বধির ছিলেন এবং বধির ও যারা কানে কম শুনেন তাদের নিয়ে কাজ করতেন। ফ্লেচারের পিতা অ্যালাবামায় বধিরদের জন্য চল্লিশের অধিক গির্জা প্রতিষ্ঠা করেন।

ফ্লেচার তার পিতামাতার চার সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। ফ্লেচার ও তার ভাইবোন - রবার্টা, জন, ও জর্জিয়ানা কেউই কানে শুনতে সমস্যা নিয়ে জন্মাননি। ফলে তাদেরকে কথা বলতে শিখান তাদের একজন আত্মীয়।

কর্মজীবন

লুইস ফ্লেচার: প্রারম্ভিক জীবন, কর্মজীবন, ব্যক্তিগত জীবন ও মৃত্যু 
মাভেরিক (১৯৫৯) টিভি ধারাবাহিকে জেমস গার্নার ও ফ্লেচার

১৯৫৮ সালে ইয়ান্সি ডেরিঙ্গার টেলিভিশন ধারাবাহিক দিয়ে তিনি অভিনয় জগতে প্রবেশ করেন। এরপর তিনি লম্যান (১৯৫৮) ও মাভেরিক (১৯৫৯) ধারাবাহিকে অভিনয় করেন। জেমস গার্নারের সাথে "দ্য সাগা অব ওয়াকো উইলিয়ামস" ছিল মাভেরিক ধারাবাহিকের সর্বোচ্চ রেটিংপ্রাপ্ত পর্ব। তিনি ১৯৫৯ সালে ওয়াগন ট্রেন টিভি ধারাবাহিকে অতিথি চরিত্রে এবং মূল আনটাচেবলস ধারাবাহিকের দ্বিতীয় পর্বে রবার্ট স্ট্যাকের সাথে এবং মা বার্কার অ্যান্ড হার বয়েজ ধারাবাহিকে এলুইজি চরিত্রে অভিনয় করেন। ফ্লেচার ওয়েস্টার্ন ঘরানার কাজের তার সফলতার পিছনে তার উচ্চতাকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন:

"আমি ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি (১.৭৮ মি; ১৭৮ সেমি) উচ্চতা বিশিষ্ট ছিলাম, এবং টেলিভিশন প্রযোজকেরা মনে করতেন এত লম্বা নারী কারও কাছে যৌন আকর্ষক হবে না। আমি শুধু ওয়েস্টার্ন ঘরানার কাজ পেতাম কারণ সেই অভিনেতারা আমার থেকেও লম্বা ছিল।"

— লুইস ফ্লেচার (নভেম্বর ১৯৭৫)

১৯৬০ সালে ফ্লেচার দুটি অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেন, প্রথমটি হল পেরি মেসন ধারাবাহিকের "দ্য কেস অব দ্য মিথিক্যাল মাঙ্কিজ" পর্বে গ্ল্যাডিস ডয়েল চরিত্রে এবং "দ্য কেস অব দ্য লার্সেনস লেডি" পর্বে সুজান কনলি চরিত্রে। ১৯৬০ সালের তিনি টেট টিভি ধারাবাহিকের "দ্য বাউন্টি হান্টার" পর্বে রবার্তা ম্যাকনেল চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৬৩ সালে আ গ্যাদারিং অব ঈগলস্‌ দিয়ে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়।

লুইস ফ্লেচার: প্রারম্ভিক জীবন, কর্মজীবন, ব্যক্তিগত জীবন ও মৃত্যু 
৪৮তম একাডেমি পুরস্কার অনুষ্ঠানে ফ্লেচার

প্রায় এক দশক অভিনয় থেকে দূরে থাকার পর তিনি ১৯৭৪ সালে তার স্বামী জেরি বিক ও রবার্ট অল্টম্যানের প্রযোজিত ও অল্টম্যানের পরিচালিত থিভস্‌ লাইক আস ছবিতে অভিনয় করেন। ইতোমধ্যে পরিচালক মিলশ ফরমান থিভস্‌ লাইক আস চলচ্চিত্রে তার অভিনয় দেখে তাকে ওয়ান ফ্লু ওভার দ্য কুকুস নেস্ট চলচ্চিত্রের নার্স রেচেড চরিত্রের জন্য নির্বাচন করেন। ফ্লেচার তার এই চরিত্রের জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন এবং শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কার, বাফটা পুরস্কারগোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি অড্রি হেপবার্নলাইজা মিনেলির পর তৃতীয় অভিনেত্রী হিসেবে একই কাজের জন্য এই তিনটি পুরস্কার অর্জন করেন। ফ্লেচার অস্কার গ্রহণকালে তার পিতামাতাকে ধন্যবাদ জানাতে ইশারা ভাষার ব্যবহার করেন।

ওয়ান ফ্লু ওভার দ্য কুকুস নেস্ট-এর পর ফ্লেচার চলচ্চিত্রে মিশ্র সফলতা অর্জন করেন। তিনি কয়েকটি ব্যবসাসফল ও সমাদৃত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এবং বাকিগুলো বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। তিনি একসরসিস্ট টু: দ্য হেরেটিক (১৯৭৭), দ্য চিপ ডিটেকটিভ (১৯৭৮), দ্য লেডি ইন রেড (১৯৭৯), দ্য ম্যাজিশিয়ান অব লুবলিন (১৯৭৯), ব্রেইনস্ট্রর্ম (১৯৮৩), ফায়ারস্টার্টার (১৯৮৪), ইনভেডার্স ফ্রম মার্স (১৯৮৬), ফ্লাওয়ার ইন দি অ্যাটিক (১৯৮৭), টু মুন জাংকশন (১৯৮৮), বেস্ট অব দ্য বেস্ট (১৯৮৯), ব্লু স্টিল (১৯৯০), ভার্চুওসিটি (১৯৯৫), হাই স্কুল হাই (১৯৯৬), টু ডেজ ইন দ্য ভ্যালি (১৯৯৬) ও ক্রুয়েল ইনটেনশন্স (১৯৯৯) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

ফ্লেচার টিভি চলচ্চিত্র দ্য ক্যারেন কার্পেন্টার স্টোরি (১৯৮৯)-এ ক্যারেন ও রিচার্ড কার্পেন্টারের মা অ্যাগনেস চরিত্রে অভিনয় করেন। এছারা তিনি নাইটমেয়ার অন দ্য থার্টিন্থ ফ্লোর (১৯৯০), দ্য হন্টিং অব সিক্লিফ ইন (১৯৯৪) ও দ্য স্টেপফোর্ড হাসবেন্ডস (১৯৯৬)-এ অভিনয় করেন। তিনি স্টার ট্রেক: ডিপ স্পেস নাইন (১৯৯৩-১৯৯৯) ধারাবাহিকে ধর্মীয় প্রধান কাই উইন অ্যাডামি চরিত্রে অভিনয় করেন। তিনি পিকেট ফেঞ্চেস (১৯৯৬) ধারাবাহিকের "বাই বাই, বে বে" পর্ব এবং জোয়ান অব আর্কাডিয়া (২০০৪) ধারাবাহিকে "ডু দ্য ম্যাথ" পর্বে অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেন প্রাইমটাইম এমি পুরস্কারে মনোনীত হন। ২০০৯ সালে তিনি হিরোজ ধারাহিকে এমা কুলিজ চরিত্রের চিকিৎসক মা চরিত্রে অভিনয় করেন। তিনি ২০১১-১২ সালে শোটাইম টেলিভিশনের শেমলেস ধারাবাহিকের চারটি পর্বে ফ্র্যাঙ্ক গ্যালাগারের মা গ্র্যামি গ্যালাগারের ভূমিকায় অভিনয় করেন, যিনি মেথ ল্যাব বিস্ফোরণের ফলে মানুষ হত্যার দায়ে জেল খাটছেন। তিনি নেটফ্লিক্সের গার্লসবস (২০১৭) ধারাবাহিকে রোজি ভূমিকায় অভিনয় করেন।

ব্যক্তিগত জীবন ও মৃত্যু

ফ্লেচার ১৯৬০ সালে সাহিত্যিক প্রতিনিধি ও প্রযোজক জেরি বিককে বিয়ে করেন। ১৯৭৭ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। এই দম্পতির দুই সন্তান ছিল, তারা হলেন জন ড্যাশিয়েল বিক ও অ্যান্ড্রু উইলসন বিক। ফ্লেচার তাদেরকে লালনপালন করার জন্য অভিনয় থেকে ১১ বছরের বিরতি নেন।

ফ্লেচার ১৯৮২ সালে গালোদেত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিগ্রি অর্জন করেন।

ফ্লেচার ২০২২ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর ৮৮ বছর বয়সে ফ্রান্সের মোঁদ্যুরোসে তার নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

লুইস ফ্লেচার প্রারম্ভিক জীবনলুইস ফ্লেচার কর্মজীবনলুইস ফ্লেচার ব্যক্তিগত জীবন ও মৃত্যুলুইস ফ্লেচার তথ্যসূত্রলুইস ফ্লেচার বহিঃসংযোগলুইস ফ্লেচারঅড্রি হেপবার্নইংরেজি ভাষাওয়ান ফ্লু ওভার দ্য কুকুস নেস্ট (চলচ্চিত্র)গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার (সেরা অভিনেত্রী - নাট্য চলচ্চিত্র)লাইজা মিনেলিশ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য একাডেমি পুরস্কারশ্রেষ্ঠ প্রধান চরিত্রে অভিনেত্রী বিভাগে বাফটা পুরস্কার

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

মুতাওয়াক্কিলপশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন, ২০২১জাপানবাংলাদেশের নদীবন্দরের তালিকাতানজিন তিশাপর্তুগিজ ভারতকিরগিজস্তানসূরা ইয়াসীননেপালবেলি ফুলজাতীয় সংসদ ভবনটাঙ্গাইল জেলাভারতীয় সংসদশক্তিসতীদাহআর্দ্রতাশায়খ আহমাদুল্লাহশাকিব খানমহাত্মা গান্ধীপ্রাকৃতিক দুর্যোগপৃথিবীভৌগোলিক নির্দেশকঅর্শরোগভারতের জাতীয় পতাকাঊষা (পৌরাণিক চরিত্র)মূত্রনালীর সংক্রমণতাপপ্রবাহফুসফুসবাংলাদেশের সিটি কর্পোরেশনের তালিকাসালমান বিন আবদুল আজিজইবনে সিনাপ্রথম ওরহানজনগণমন-অধিনায়ক জয় হেউপজেলা পরিষদপশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীদের তালিকাআল-আকসা মসজিদজলবায়ুসুলতান সুলাইমাননিজামিয়া মাদ্রাসাউত্তম কুমারআসমানী কিতাবকুরআনের সূরাসমূহের তালিকাময়ূরী (অভিনেত্রী)ইসতিসকার নামাজকোষ বিভাজনদক্ষিণ এশিয়াবঙ্গবন্ধু-২বাংলাদেশের পোস্ট কোডের তালিকানূর জাহানমীর জাফর আলী খানবারো ভূঁইয়াদক্ষিণবঙ্গইবনে বতুতাবাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রমহিরণ চট্টোপাধ্যায়ভাইরাসবৃত্তজ্ঞানবঙ্গবন্ধু-১গ্রীষ্মফিলিস্তিনের ইতিহাসজন্ডিস১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনবাবরকুরআনমুহাম্মাদগোপালগঞ্জ জেলাকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভারত বিভাজনআল্লাহর ৯৯টি নামইশার নামাজসার্বজনীন পেনশনমিজানুর রহমান আজহারীসৈয়দ সায়েদুল হক সুমনমুঘল সাম্রাজ্যক্রিস্তিয়ানো রোনালদোসূর্যবাংলাদেশের জাতিগোষ্ঠী🡆 More