বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অফিসার-ক্যাডেটদের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এটি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস-এর অধিভূক্ত। এটি চট্টগ্রাম শহরের নিকটবর্তী ভাটিয়ারী নামক স্থানে, যা দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত। ১৯৭৪ সালে পাহাড় এবং সমুদ্রবেষ্টিত অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বেষ্টিত স্থানে বিএমএ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিবছর একটি গ্রীষ্মকালীন ব্যাচ এবং একটি শীতকালীন ব্যাচ সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করে। মিলিটারী একাডেমিতে একজন জেন্টেলম্যান ৩ বছরের সামরিক প্রশিক্ষন গ্রহণ করে। এতে অস্ত্রবিদ্যা, ম্যাপ রিডিং, শারীরিক দক্ষতা, সামরিক কৌশল (ট্যাকটিস) এবং অন্যান্য সামরিক বিষয়ের সাথে অবশ্যই বিইউপির অধীনে স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। বর্তমানে এই একাডেমীর দায়িত্বে আছেন মেজর জেনারেল এস এম কামরুল হাসান।
নীতিবাক্য | চির উন্নত মম শির |
---|---|
ধরন | সামরিক প্রতিষ্ঠান |
স্থাপিত | ১৯৭৪ |
কমান্ড্যান্ট | মেজর জেনারেল এস এম কামরুল হাসান |
শিক্ষায়তনিক ব্যক্তিবর্গ | ৬০০–৬০০ (সাধারণ এবং সামরিক - উভয়ই) |
স্নাতক | ১৫৫০-১৬৫০ |
অবস্থান | , |
শিক্ষাঙ্গন | ১,৮৫০ একর (৭৫০ হেক্টর) পল্লী এলাকা |
পোশাকের রঙ | সবুজ এবং লাল |
ওয়েবসাইট | bma.army.mil.bd |
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো সব পশ্চিম পাকিস্তানেই অবস্থিত ছিলো। স্বাধীনতা অর্জনের পরে ১৯৭৪ সালের ১১ই জানুয়ারি প্রথমে কুমিল্লায় বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি প্রতিষ্ঠা করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতার একটি পঙ্ক্তি চির উন্নত মম শির-কে বিএমএ'র মূল মন্ত্র হিসাবে গ্রহণ করা হয়। ভাটিয়ারীতে বর্তমান স্থানে একাডেমীটি সরিয়ে আনা হয় ১৯৭৬ সালে। নিয়মিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের সূচনা হয় ১৯৭৮ সাল থেকে। বিএমএ'র প্রথম অফিসার ব্যাচ পাস করে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করে ১৯৭৯ সালে। ১৯৮৩ সাল থেকে এটি বাংলাদেশ নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসাবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।
বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি পাহাড়ের কোল ঘেঁষে অবস্থিত। এছাড়া রয়েছে লেক। তাছাড়া সূর্যাস্ত এবং সূর্যদয়ের সময়ে পাহাড়ের ওপর যখন সূর্য রশ্নি পড়ে তখন তা দেখতে সুন্দর লাগে। বি এম এ কে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। এ কারণে নিয়মমাফিক কর্মচারিরা তা পরিষ্কার করেন।
বিএমএ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যাটালিয়ন যা প্রথম বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ন বলে পরিচিত। একজন মেজর জেনারেল বা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদের কর্মকর্তা কম্যান্ড্যান্ট বা অধিনায়কের দায়িত্বে থাকেন আর একজন কর্ণেল ব্যাটালিয়ন কমান্ডারের দায়িত্বে থাকেন। ক্যাডেট ব্যাটালিয়নের পাশাপাশি একটি ট্রেনিং সাপোর্ট কোম্পানী (নিয়মিত সৈন্য) থাকে। প্রথম বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ন (ক্যাডেট ব্যাটালিয়ন) ৪টি কোম্পানী, ১৬টি প্ল্যাটুন এবং শর্ট কোর্সের ক্যাডেটদের নিয়ে অতিরিক্ত একটি প্ল্যাটুন নিয়ে গঠিত। ফাইনাল টার্মের সবচেয়ে চৌকষ ক্যাডেট ব্যাটালিয়নের সিনিয়র আন্ডার অফিসার হিসাবে থাকেন। এছাড়া ৪টি কোম্পানী ৪জন বীরশ্রেষ্ঠ - জাহাঙ্গির, রউফ, হামিদ এবং মোস্তফা-এর নামানুসারে গঠিত। ফাইনাল টার্মের চারজন চৌকষ ক্যাডেট চার কোম্পানীর সার্বিক দায়িত্বে থাকেন যাদের কোম্পানী সিনিয়র আন্ডার অফিসার বলা হয়। এছাড়া ব্যাটালিয়ানের অন্য কর্মকান্ডের দায়িত্বে থাকেন ব্যাটালিয়ন জুনিয়র আন্ডার অফিসারগণ। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান এবং বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের নামে দুটি একাডেমিক ভবন নামাঙ্কিত। ক্যাডেট ব্যাটালিয়নের সকল কর্মকাণ্ড ও শৃঙ্খলা দেখেন সাধারণ মেজর পদের এডজুটেন্ট। প্রতিটি ব্যাচের ক্যাডেটদের চারটা প্ল্যাটুনে ভাগ করে কোম্পানীগুলোতে সমবণ্টন করে দেয়া হয়, তাদের সামরিক শিক্ষার দায়িত্বে থাকেন একজন করে প্ল্যাটুন কমান্ডার আর পুরো ব্যাচের দায়িত্বে থাকেন একজন টার্ম কমান্ডার।
বিএমএ-তে বর্তমানে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) অধীনে ৩ বছরের লং কোর্সে (দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ) প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে। বিএমএ ত্রি-মাত্রিক প্রশিক্ষণ পদ্ধতি অবলম্বন করে, যার মধ্যে সামরিক প্রশিক্ষণ, শিক্ষায়তনিক উৎকর্ষ এবং চরিত্র গঠন অন্তর্ভুক্ত। একাডেমী প্রধানত বাংলাদেশ সেনা বাহিনীতে কমিশন প্রাপ্তির লক্ষ্যে জেন্টালম্যান ও জেন্টালওম্যান ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। অধিকন্তু, এই একাডেমী বাংলাদেশ জনপ্রশাসন (বিসিএস) কর্মকর্তাগণের জন্য পরিচিতি কোর্স এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) অধ্যাপক/শিক্ষক কর্মকর্তাগণের জন্য প্রাক-কমিশন প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে। লং কোর্সের (সেনা) ক্যাডেটগণ বিইউপির পাঠ্যক্রমানুসারে এই একাডেমী হতে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন।
বিএমএ-তে নিম্নলিখিত প্রশিক্ষণসূচী অনুসরণ করা হয়:
কৌশলগত প্রশিক্ষণ: এতে যুদ্ধের সকল ধরনের ছোট বড় অপারেশনের বিষয়ে লেকচার, টিউটরিয়াল ডিসকাশন, মডেল ডিসকাশন, সৈন্যবিহীন কৌশলগত প্রশিক্ষণ, ডেমনেস্ট্রেশন এবং ফিল্ড ট্রেনিং এক্সারসাইজ অন্তর্ভুক্ত। ফিল্ড ট্রেনিং এক্সারসাইজগুলো হলো:
ক. অনুশীলন পদক্ষেপ-১: দুঃসাধ্য ভূমির উপর দিয়ে দ্রুততর অগ্রগমনের মাধ্যমে ক্যাডেট/প্রশিক্ষণার্থী অফিসারগণের শারীরিক ও মানসিক সহ্য ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
খ. অনুশীলন পদক্ষেপ-২: ক্রস-কান্ট্রি রুট/টেরেন দিয়ে দ্রুততর অগ্রগমনের মাধ্যমে ক্যাডেটগণের শারীরিক ও মানসিক সহ্য ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
গ. অনুশীলন ধুমকেতু: ক্যাডেট/প্রশিক্ষণার্থী অফিসারগণকে ঝটিকা হামলার পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও পরিচালনা বিষয়ে ব্যাবহারিক শিক্ষা দেওয়া।
ঘ. অনুশীলন পূর্বকোণ: ক্যাডেট/প্রশিক্ষণার্থী অফিসারগণকে অতর্কিতে আক্রমণ বা এমবুশের পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও পরিচালনা বিষয়ে ব্যাবহারিক শিক্ষা দেওয়া।
ঙ. অনুশীলন লৌহকপাট: ক্যাডেটগণকে পদাতিক ব্যাটালিয়ন কাঠামোয় কোম্পানি পর্যায়ে অবস্থানগত আত্মরক্ষার কৌশল ও কার্যসাধন-পদ্ধতি বিষয়ে ব্যাবহারিক শিক্ষা দেওয়া।
চ. অনুশীলন রণগতি: প্লাটুন কার্যক্রমকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কোম্পানি পর্যায়ে ক্যাডেটগণকে দিনে অগ্রসর হওয়া ও আক্রমণ বিষয়ে ব্যাবহারিক শিক্ষা দেওয়া।
ছ. অনুশীলন লালঘোড়া: ক্যাডেটগণকে শত্রু সীমারেখার অভ্যন্তরে নিজ বাহিনীর সরবরাহ ও সাহায্য ছাড়া ক্ষুদ্রায়তনে আক্রমণ পরিচালনার পদ্ধতি বিষয়ে ব্যাবহারিক শিক্ষা দেওয়া।
জ. অনুশীলন কষ্টিপাথর: ক্যাডেটগণকে যুদ্ধে সকল প্রকার ব্যাপক আক্রমণ পরিচালনার পদ্ধতি বিষয়ে ব্যাবহারিক শিক্ষা দেওয়া।
অস্ত্র প্রশিক্ষণ: বিভিন্ন প্রকার অস্ত্র চালনা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ব্যাবহারিক শিক্ষা দেওয়া এবং লক্ষ্যভেদের উৎকর্ষ সাধন করা হয়।
শারীরিক প্রশিক্ষণ: শারীরিক দক্ষতার সর্বোচ্চ মান অর্জন করা।
সিগন্যাল প্রশিক্ষণ: তারবিহীন ও সিগন্যাল যন্ত্রপাতি সম্বন্ধে কার্যকর জ্ঞান অর্জন করা।
ইঞ্জিনিয়ার প্রশিক্ষণ: ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান অর্জন করা।
কম্পিউটার প্রশিক্ষণ: সরাসরি কম্পিউটার পরিচালনার জ্ঞান অর্জন করা যার মধ্যে অফিস প্যাকেজ হিসেবে - এমএস ওয়ার্ড, পাওয়ার পয়েন্ট এবং ইন্টারনেট ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত।
শিক্ষায়তনিক প্রশিক্ষণ: এই প্রশিক্ষণ প্রধানত পরিচালিত হয় লং কোর্স ক্যাডেটগণকে বিএ/বিএসসি (পাস কোর্স) পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার প্রস্তুতি হিসাবে। অধিকন্তু, শিক্ষায়তনিক প্রশিক্ষণের আরও লক্ষ্য হলো বাংলা এবং ইংরেজিতে কথা ও লেখার মাধ্যমে ভাব বিনিময়ের উৎকর্ষ সাধন, চলমান জাতীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ঘটনা প্রবহ সম্বন্ধে সচেতনতা তৈরি করা ও মানসিকতা এবং উপলব্ধি ক্ষমতার সম্প্রসারণ।
ট্রেনিং ভিজিট: প্রতি টার্মে ফাইনাল টার্ম ক্যাডেটদের জন্য ট্রেনিং ভিজিট পরিচালিত হয়।
একাডেমী তিন বৎসরের শিক্ষায়তনিক পাঠ্যক্রমের সাথে সামরিক শিক্ষা দিয়ে থাকে। এটি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস-এর অধিভূক্ত এবং তারা ৩ বছরের স্নাতক (পাস) ডিগ্রী প্রদান করে থাকে।
প্রতিষ্ঠানটির ফার্স্ট বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ন নামে একটি ব্যাটালিয়ন রয়েছে। ব্যাটালিয়নের অধীনে চারটি কোম্পানী রয়েছে -
বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি দু'টি প্রকাশনা বের করে। উভয় প্রকাশনাই বৎসরে একবার প্রকাশ করা হয়।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.