বরিশাল জিলা স্কুল এশিয়া মহাদেশের অন্যতম প্রাচীন, বরিশাল বিভাগ তথা দক্ষিণবঙ্গের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান৷ ঐতিহ্যবাহী বরিশাল জিলা স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা মি.
এন. ডব্লিউ গ্যারেট। ১৮২৯ সালে 'বরিশাল ইংলিশ স্কুল' নামে বিদ্যাপীঠটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৫৩ সালে ব্রিটিশ সরকার এর ব্যয়ভার ও পরিচালনার দায়িত্ব নেয়, তখন থেকে নাম হয় 'বরিশাল জিলা স্কুল'।
বরিশাল জিলা স্কুল | |
---|---|
ঠিকানা | |
সদর রোড ৮২০০ | |
স্থানাঙ্ক | ২২°৪১′৫৩″ উত্তর ৯০°২২′০৮″ পূর্ব / ২২.৬৯৮° উত্তর ৯০.৩৬৯° পূর্ব |
তথ্য | |
ধরন | রাষ্ট্রীয় বিদ্যালয় |
নীতিবাক্য | "পড় তোমার প্রভুর নামে" |
প্রতিষ্ঠাকাল | ২৩ ডিসেম্বর ১৮২৯ |
বিদ্যালয় বোর্ড | মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, বরিশাল |
ইআইআইএন | ১০০৭৪২ |
প্রধান শিক্ষক | পাপিয়া জেসমিন |
কর্মকর্তা | ১২ |
শিক্ষকমণ্ডলী | ৫১ |
শ্রেণী | তৃতীয় - দশম |
লিঙ্গ | বালক বিদ্যালয় |
শিক্ষার্থী সংখ্যা | ২৫০০+ |
ভাষা | বাংলা |
শিক্ষায়তন | বর্তমানে ২o একর |
ক্যাম্পাসের ধরন | শহুরে |
রং | |
ক্রীড়া | ক্রিকেট, ফুটবল, বাস্কেটবল, চাকতি নিক্ষেপ, ১০০ মিটার দৌঁড়, ৪০০ মিটার দৌঁড়, দাবা, ভলিবল |
ডাকনাম | BZS, বিজেসানস |
বর্ষপুস্তক | সবুজ পাতা |
বিশেষ প্রকল্প | ব্রিটিশ কাউন্সিল এর অধীনে ক্লাস পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। |
ওয়েবসাইট | bzsb |
বর্তমানে বরিশাল জিলা স্কুলে প্রভাতী ও দিবা দুটি শাখায় তৃতীয় শ্রেনী থেকে দশম শ্রেনী পর্যন্ত পাঠদান করা হয়।
বরিশাল জিলা স্কুল বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন স্বনামধন্য স্কুল এবং এটি বরিশাল বিভাগে প্রতিষ্ঠিত প্রথম স্কুল। মূলত ঐতিহাসিক বরিশাল জিলা স্কুল তৎকালীন বরিশাল জেলার জজ ও ম্যাজিস্ট্রেট মি. এন. ডব্লিউ গ্যারেট এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নির্মিত হয়। তার নির্দেশনায় ১৮২৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর স্থানীয় জনসাধারণের আর্থিক সহায়তায় শ্রীরামপুর মিশনের মাধ্যমে বরিশাল ইংলিশ স্কুল নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। মাত্র আটজন ছাত্র নিয়ে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয় ও ছাত্রসংখ্যা সেবছর ২৭ জনে গিয়ে দাঁড়ায়।
প্রথম দিকে বিদ্যালয়টি মিশন কর্তৃক পরিচালিত হত। সেসময় বিদ্যালয়টি (প্রোটেস্ট্যান্ট গীর্জার পশ্চিম দিকে) স্থানীয় জমিদার মি. লুকাসের জমির মধ্যে স্থাপিত হয়। পরবর্তীতে ব্রাউন কম্পাউন্ড এবং ১৮৪২ সালে বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত হয়। ওই জমির মালিক ছিলেন মি. স্পেনসার। তৎকালীন বাংলার গভর্নর এর নির্দেশ মোতাবেক জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং স্কুলের সেক্রেটারি ই জে বার্টন সরকারকে বিদ্যালয়টি উন্নয়নের জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দিতে থাকেন। তিনি নিজ প্রচেষ্টায় অভিজাত ব্যক্তিবর্গের নিকট থেকে ৩৮,৮১৭ টাকা চাঁদা তোলেন এবং তা সরকারের কাছে হস্তান্তর করেন। ফলাফল স্বরূপ বিশাল পরিমাণ জমির উপর বরিশাল জিলা স্কুল নির্মিত হয়। এটি বর্তমানে পুনঃসংস্কারের জন্য ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।
১৮৫৩ সাল থেকে ১৮৯১ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকার এই বিদ্যালয়ের ব্যয়ভার গ্রহণ করে এবং তখন থেকে এর নামকরণ হয় বরিশাল জিলা স্কুল সে সময় স্কুলের ছাত্র সংখ্যা ছিল প্রায় ৬০০ জন। বরিশাল শহরে কয়েকটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে ১৮৯২ সালে সরকার জিলা স্কুলকে বেসরকারি ঘোষণা করা হয়। সায়েস্তাবাদের জমিদার সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন বাংলার গভর্নরকে স্কুলের জন্য অর্থ ও জমি প্রদানের আশ্বাস দেওয়ার পর ১৯০৬ সালে পুনরায় এটিকে সরকারিকরন করা হয়।
১৮২৯ সালে এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন মি. জন স্মিথ। ১৯৬১ সাল থেকে এই স্কুলকে পাইলট স্কুলে পরিণত করা হয়। তখন আমেরিকান বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে এর নানাবিধ পরিবর্তন ও সম্প্রসারণের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে এই স্কুলের ছাত্ররা গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রাখে।
প্রায় দুইশ বছরের প্রাচীন বিদ্যালয়টির জমির পরিমাণ ২০ একর। বিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ভবনসহ একাডেমিক ভবনের সংখ্যা ৬টি। স্কুলে ১টি মসজিদ, ১টি ছাত্রাবাস, প্রধান শিক্ষকের বাসভবন ও ২টি খেলার মাঠ রয়েছে।
প্রায় দুইশ বছরের পুরনো বিদ্যালয়টির ছিল না কোন মাস্টার প্লান রবং কাগজ-পত্রেরও অভাব ছিল। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঢাকা কেন্দ্রীয় ভুমি অফিস থেকে মৌজা বগুড়া আলেকান্দা নং-৫০ সিট নং-১১ এর মুল নকশা সংগ্রহ করে।পরবর্তিতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরিশাল শিক্ষা প্রোকৌশল বিভাগের সহায়তায় বেশ কয়েকদিন সরেজমিন পর্যবেক্ষেণ ও পরিমাপ করার পর একটি মাস্টার প্লান তৈরি করে যা ছিল শতাব্দির চ্যালেঞ্জ। এখন সেই নকশা অনুযায়ী সকল অনুপস্থিত অবকাঠামো বাস্তবায়িত হছে।
বরিশাল জিলা স্কুলের পূর্ব পার্শ্বে রয়েছে সার্কিট হাউস, দক্ষিণে পুলিশ লাইনস্, পশ্চিমে টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, উত্তরে ব্রাউন কম্পাউন্ড আবাসন এলাকা। স্কুলটি বরিশাল সিটি কর্পরেশনের ১৬ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত। বিদ্যালয়ের তিন তলা বিশিষ্ট তিনটি একাডেমিক ভবন রয়েছে যা দেখতে অনেকটা ইংরেজি অক্ষর ইউ (U) এর মত। দক্ষিণমূখী মূল ভবনের নীচ তলায় শ্রেণিকক্ষ, স্পোর্টস্ রুম, স্কাউট ডেন, বিএনসিসি কক্ষ; দ্বিতীয় তলায় প্রশাসনিক কার্যক্রম - প্রধান শিক্ষকের কক্ষ, সহকারী প্রধান শিক্ষকের কক্ষ, অফিস কক্ষ, টিফিন রুম, এডি সফ্ট কম্পিউটার কক্ষ, শিক্ষক মিলনায়তন, পদার্থবিজ্ঞান ল্যাব; তৃতীয় তলায় মাল্টিমিডিয়া প্রোজেক্ট কক্ষ, জীববিজ্ঞান ল্যাব, শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। পশ্চিম ভবনের নিচতলায় রয়েছে শ্রেণিকক্ষ এবং রয়েছে পানির কক্ষ যেখানে শিক্ষার্থীদের সুপেয় পানি পানের ব্যবস্থা আছে, দ্বিতীয় তলায় শ্রেণিকক্ষসহ রয়েছে মাল্টিমিডিয়া প্রোজেক্ট কক্ষ; তৃতীয় তলায় শ্রেণিকক্ষের সাথে রয়েছে রসায়ন ল্যাব ও গণিত ল্যাব। পূর্ব ভবনের নীচ তলায় রয়েছে অডিটোরিয়াম যেখানে সাংবাৎসরিক কার্যক্রমঃ সভা, কর্মশালা, বার্ষিক মিলাদ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়, দ্বিতীয় তলায় রয়েছে লাইব্রেরি ও কম্পিউটার ল্যাব, তৃতীয় তলায় রয়েছে শ্রেণিকক্ষ।বিদ্যালয়ের মূল ভবন বা দক্ষিণমূখী ভবনের সামনে ফুলের বাগান রয়েছে, বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে রয়েছে খেলার মাঠ, মসজিদ, বাস্কেটবল গ্রাউন্ড। পশ্চিম ভবনের পশ্চিমে একপাশে একটি পুকুর অন্যপাশে প্রধান শিক্ষকের বাসভবনসহ রয়েছে একটি কোয়াটার ভবন; তারও পশিমে রয়েছে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ যা স্থানীয়ভাবে পরেশ সাগর মাঠ নামে পরিচিত, ছাত্রাবাস, কলেজ ভবন যেখানে বরিশাল কালেক্টরেট স্কুল এর অস্থায়ী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
বিদ্যালয়ে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের জন্য একটি আধুনিক ল্যাবরেটরি রয়েছে। বিদ্যালয়ে ২ শিফটে মোট ২৫০০ ছাত্র লেখাপড়া করছে। এখানে ৫৩ জন শিক্ষক আছেন ছাত্রদের জন্য রয়েছে বিজ্ঞানাগার, গ্রন্থাগার, শিল্পকলা বিভাগ, বিএনসিসি, কাব ও স্কাউট কার্যক্রম। এছাড়া ছাত্রদের জন্য বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং শিক্ষা সফরের আয়োজন করা হয়, বার্ষিক মিলাদ ও বিভিন্ন জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান পালিত হয় এবং ম্যাগাজিন (সবুজপাতা) প্রকাশিত হয়। ২০০৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় পাশের হার ৯৭.২৭% এবং ২০০৮ সালে পাশের হার ৯৯.৩০%।
স্কুলের নির্দিষ্ট পোশাক হল সাদা শার্ট, সাদা প্যান্ট ও সাদা জুতো। শার্ট ফুল হাতা বা হাফ হাতা দুটোই গ্রহণযোগ্য। এছাড়া শীতকালে নীল রঙের সোয়েটারও ইউনিফরমের অন্তর্ভুক্ত। শার্টের পকেটে স্কুলের মনোগ্রামযুক্ত ব্যাজ থাকা আবশ্যক।
যে সব খ্যাতিনামা ব্যক্তিরা এই বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, তাদের মধ্যে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হলো-
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article বরিশাল জিলা স্কুল, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.