ফুসবল-ক্লুব বায়ার্ন মিউনিখ ইভি (জার্মান উচ্চারণ: ); সাধারণত এফসি বায়ার্ন মিউনিখ (জার্মান উচ্চারণ: ), এফসিবি, বায়ার্ন মিউনিখ, ফুটবল ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ অথবা এফসি বায়ার্ন নামে পরিচিত) হচ্ছে মিউনিখ ভিত্তিক একটি জার্মান পেশাদার ফুটবল ক্লাব। এই ক্লাবটি বর্তমানে জার্মানির শীর্ষ স্তরের ফুটবল লিগ বুন্দেসলিগায় খেলে। ফুটবল ছাড়াও বায়ার্ন মিউনিখের দাবা, হ্যান্ডবল, বাস্কেটবল, জিমন্যাস্টিকস, বোলিং ও টেবিল টেনিস খেলার দল রয়েছে। এই ক্লাবটি ১৯০০ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি তারিখে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বায়ার্ন মিউনিখ তাদের সকল হোম ম্যাচ মিউনিখের অ্যালিয়াঞ্জ এরিনায় খেলে থাকে; যার ধারণক্ষমতা হচ্ছে ৭৫,০০০। বর্তমানে এই ক্লাবের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন ইয়ুলিয়ান নাগেলসমান এবং সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন কার্ল-হাইনৎস রিমেনিগে। জার্মান গোলরক্ষক মানুয়েল নয়ার এই ক্লাবের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
পূর্ণ নাম | ফুসবল-ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ ইভি | |||
---|---|---|---|---|
ডাকনাম | ডার এফসিবি (এফসিবি) ডি বায়ার্ন (বাভারীয়) স্টার্ন ডেস সুডেন্স (দক্ষিণের তারকা) ডি রটেন (লাল) এফসি হলিউড | |||
সংক্ষিপ্ত নাম | বায়ার্ন, এফসিবি | |||
প্রতিষ্ঠিত | ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯০০ | |||
মাঠ | অ্যালিয়াঞ্জ এরিনা | |||
ধারণক্ষমতা | ৭৫,০০০ | |||
সভাপতি | হার্বার্ট হাইনার | |||
সভাপতি | কার্ল-হাইনৎস রিমেনিগে | |||
ম্যানেজার | টমাস টুখেল | |||
লিগ | বুন্দেসলিগা | |||
২০২১–২২ | ১ম (চ্যাম্পিয়ন) | |||
ওয়েবসাইট | ক্লাব ওয়েবসাইট | |||
| ||||
ঘরোয়া ফুটবলে, বায়ার্ন মিউনিখ এপর্যন্ত ৬৪টি শিরোপা জয়লাভ করেছে; যার মধ্যে ৩০টি বুন্দেসলিগা, ২০টি ডিএফবি-পোকাল এবং ৮টি ডিএফবি-সুপারকাপ শিরোপা রয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়, এপর্যন্ত ১৩টি শিরোপা জয়লাভ করেছে; যার মধ্যে ৬টি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ, ১টি উয়েফা ইউরোপা লিগ এবং ১টি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ শিরোপা রয়েছে।
বর্তমানে বায়ার্নের সাফল্য যেকোনো ক্লাবের জন্য ঈর্ষণীয় হলেও ক্লাবটির শুরুটা ছিল খুবই সাদামাটা। ক্লাবটির জন্ম ১৯০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে, মিউনিখ সিটি সেন্টারের রেস্টুরেন্ট গিসেলাতে। মাত্র ১৭ জন ব্যক্তির দলিল স্বাক্ষরের মাধ্যমে জন্ম হয়েছিল এই জার্মান জায়ান্টের। এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ফ্রানৎস জন নামের এক জার্মান ফটোগ্রাফার, যিনি বায়ার্নের প্রথম ক্লাব প্রেসিডেন্ট।
বুন্দেসলিগার উদ্ভব হয় ১৯৬৩ সালে। মজার ব্যপার হচ্ছে, এই প্রথম বুন্দেসলিগাতে বায়ার্ন মিউনিখকে খেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। কারণ তখন বায়ার্ন নয়, বরং মিউনিখের আরেকটি ক্লাব '১৮৬০ মিউনিখ' ছিল শহরের সবচেয়ে প্রতাপশালী ক্লাব। মোট ১৬টি ক্লাব নিয়ে জন্ম নেওয়া বুন্দেসলিগার প্রথমে নিয়ম ছিল কোনো শহর থেকে একের বেশি ক্লাব অংশ নিতে পারবে না। আর তাই জার্মানির সবচেয়ে সাফল্যময় ক্লাবের স্থান হয়নি বুন্দেসলিগার প্রথম আসরে।
দুই মৌসুম পরে প্রমোশন পেয়ে বায়ার্ন যোগ দেয় বুন্দেসলিগাতে। ক্লাবটিকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। রেকর্ডসংখ্যক ২৭টি বুন্দেসলিগা শিরোপা ও ১৮টি ডিএফবি পোকাল কাপ নিয়ে বায়ার্ন অবিসংবাদিতভাবে জার্মান ফুটবলের সবচেয়ে সেরা ক্লাব। লিগ জয়ের দিক দিয়ে বায়ার্নের কাছে আছে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড ও বরুসিয়া মুনশেনগ্লাডবাখ, যারা প্রত্যেকে মাত্র পাঁচবার লিগ জিততে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে প্রধান ক্লাব শিরোপা ডিএফবি পোকালের দিক দিয়ে বায়ার্নের নিকটাত্মীয় এসভি ভের্ডার ব্রেমেন, যারা মাত্র ৬ বার এই শিরোপা জিতেছে।
বায়ার্নই জার্মানির একমাত্র ফুটবল ক্লাব যারা ট্রেবল জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করতে পেরেছে। ২০১২-১৩ মৌসুমে তৎকালীন ম্যানেজার জাপ হেইঙ্কেসের নেতৃত্বে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে হারিয়ে তারা একই মৌসুমে প্রধান ৩ ক্লাব শিরোপা (বুন্দেসলিগা, ডিএফবি পোকাল ও উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ) জয়ের গৌরব অর্জন করে। ক্লাবটি সর্বমোট ৫ বার জয় করেছে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ। শুধুমাত্র রিয়াল মাদ্রিদ (১৩ বার) ও এসি মিলান (৭ বার) বায়ার্নের থেকে বেশি বার ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের এই লড়াই জিততে সক্ষম হয়েছে।
বর্তমানে বায়ার্নের অর্থনৈতিক কাঠামো যেকোনো ক্লাবের জন্য আদর্শ হলেও একসময় ক্লাবটির এমন সুসময় ছিল না। অর্থনৈতিক দৈন্যতায় জর্জরিত হয়ে ক্লাবটি একসময় সিদ্ধান্ত নেয় দামী তারকা কেনার বদলে তরুণ খেলোয়াড় গড়ে তোলার, যাদের হাতেই থাকবে বায়ার্নের ভবিষ্যৎ। আর এই প্রকল্প থেকেই বের হয়ে আসেন ক্লাবটির 'সোনালি ত্রয়ী' হিসেবে পরিচিত তিন বিশ্বমানের ফুটবলার জার্ড মুলার, সেপ মেইয়ার ও ফ্রানৎস বেকেনবাওয়ার।
বায়ার্ন এই মুহূর্তে বিশ্বের চতুর্থ ধনী ফুটবল ক্লাব। কিন্তু নিজেদের তরুণ ফুটবলার গড়ে তোলার প্রকল্প থেকে তারা এখনো সরে আসেনি। থমাস মুলার, ম্যাটস হামেলস, টনি ক্রুস, বাস্তিয়ান শোয়েনস্টেইগার, ডেভিড আলাবা- বর্তমান এই তারকা ফুটবলারদের ক্যারিয়ার শুরু হয়েছে বায়ার্নের একাডেমি থেকে। বিশ্বকাপ জয়ী ডিফেন্ডার ফিলিপ লামের সারা জীবন কেটেছে বায়ার্ন মিউনিখেই। মাত্র ১১ বছর বয়সে ক্লাবে যোগ দেওয়া এই ফুটবলার যখন অবসর নেন, ততদিনে তিনি বায়ার্নের হয়ে খেলে ফেলেছেন মোট ৫১৭টি ম্যাচ!
বায়ার্ন মিউনিখের সাথে তাদের সমর্থকদের সম্পর্ক ঠিক অন্য দশটা ক্লাবের মতো নয়। বায়ার্নের মতে, সমর্থকরাই তাদের ক্লাবের হৃদয়। সমর্থকরা বায়ার্নের কাছে ম্যাচের দ্বাদশ ফুটবলার। আর তাই এই সমর্থকদেরকে উদ্দেশ্য করেই বায়ার্ন তাদের ১২ নাম্বার জার্সি উৎসর্গ করেছে তাদের প্রতি সম্মান জানানোর জন্য।
বায়ার্নের রয়েছে প্রায় ২,৯০,০০০ অফিসিয়াল ক্লাব সমর্থক, যা ১০ বছরে বেড়েছে দ্বিগুণ। অফিসিয়াল সমর্থক সংখ্যার দিক দিয়ে কোনো ইউরোপিয়ান ক্লাব এই জার্মান জায়ান্টের ধারেকাছেও নেই। জার্মান ক্লাবগুলোর মধ্যে শালকে ও বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের রয়েছে ১৫০,০০০ অফিসিয়াল সমর্থক, যা বায়ার্নের প্রায় অর্ধেক। সোশাল মিডিয়া সাইট টুইটার, ফেইসবুক ও ইন্সটাগ্রামে বায়ার্নের রয়েছে ৬৫ মিলিয়নেরও বেশি ফলোয়ার। জার্মানির দ্বিতীয় জনপ্রিয় ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের সে তুলনায় আছে মাত্র ২৪ মিলিয়ন ফলোয়ার।
আর এই বিশাল সংখ্যক সমর্থক থাকার পিছনে এক বিশাল কারণ হচ্ছে টিকেটের মূল্য নির্ধারণে কর্তৃপক্ষের উদার মনোভাব। এত জনপ্রিয় একটি ক্লাব হওয়া সত্ত্বেও বায়ার্নের সিজন টিকেট পাওয়া যায় মাত্র ১৪০ ইউরোতে, যা দিয়ে আপনি প্রতি মৌসুমে অ্যালিয়েন্স এরিনাতে অনুষ্ঠিত ১৭টি হোম লিগ ম্যাচের সবগুলোই উপভোগ করতে পারবেন। জার্মান ফুটবলের সবচেয়ে সফল ও জনপ্রিয় ক্লাব হচ্ছে বায়ার্ন মিউনিখ। শুধু জার্মানি নয়, ইউরোপেরই অন্যতম প্রভাবশালী ক্লাব এই বায়ার্ন। সারাবিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ক্লাবটির সুবিশাল সমর্থক গোষ্ঠী। এমনকি খোদ বাংলাদেশেই আছে বায়ার্নের অফিসিয়াল অানঅফিসিয়াল ফ্যান গ্রুপ ও পেইজ
মিউনিখ শহর বিখ্যাত তাদের 'অক্টোবর বিয়ার ফেস্ট' নামক এক উৎসবের জন্য। প্রতি বছর প্রায় ৭ মিলিয়ন লিটার বিয়ার পান করা হয় এই উৎসবে। মেলা ও বিয়ার উৎসব ছাড়াও থাকে নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন, যেখানে বিশ্বের বড় বড় সেলিব্রিটিরা পারফর্ম করে থাকেন। সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ৭ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এই উৎসবে অংশ নিয়ে থাকেন, যার ফলে এই 'অক্টোবর ফেস্ট' বিশ্বের সবচেয়ে বড় লোকউৎসব হিসেবে পরিচিত। আর বায়ার্নের ফুটবলাররাও এই উৎসবের সাথে একাত্মতা দেখিয়ে প্রতি বছরই অক্টোবর ফেস্টিভ্যালে সরাসরি অংশ নিয়ে থাকেন।
আপাতদৃষ্টিতে বায়ার্নের ফুটবলারদের এই ঠাসা সময়সূচীর মধ্যে বিয়ার ফেস্টিভ্যালে অংশ নেয়া অহেতুক মনে হতে পারে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, কোনো অদ্ভুত কারণে এত বিয়ার পান সত্ত্বেও বায়ার্ন মিউনিখের পারফরম্যান্সে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না। টানা ৮ মৌসুম জুড়ে অক্টোবর ফেস্টিভ্যালের সময়কার ম্যাচে বায়ার্ন মিউনিখ জিতে আসছে। এখন পর্যন্ত এই উৎসবের সময় অনুষ্ঠিত মোট ৯০টি ম্যাচের মধ্যে ৫৯টিতেই জিতেছে তারা। এমনকি বর্তমান সময়কার অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডস্কি ভলফসবুর্গের বিপক্ষে একই ম্যাচে ৫ গোল করেছিলেন ২০১৫ সালের অক্টোবর ফেস্টিভ্যালের সময়েই। যেন বাভারিয়ান বিয়ারের ভরে বায়ার্নের ফুটবলাররা আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন।
বায়ার্ন মিউনিখের এই সাফল্য একদিনে আসেনি। অতি সাধারণ অবস্থা থেকে আজকের এক বিশাল মহীরূহে পরিণত হবার পেছনে রয়েছে বায়ার্নের বহু ফুটবলার ও সমর্থকদের ত্যাগ-তিতিক্ষা। এর বদৌলতেই আজ মানুষ জার্মান ফুটবল বলতে বায়ার্ন মিউনিখকেই বুঝে থাকে।
৩ অগাস্ট, ২০২১ পর্যন্ত টীকা: পতাকা জাতীয় দল নির্দেশ করে যা ফিফার যোগ্যতার নিয়মের অধীনে নির্ধারিত হয়েছে। খেলোয়াড়দের একাধিক জাতীয়তা থাকতে পারে যা ফিফা ভুক্ত নয়।
|
|
টীকা: পতাকা জাতীয় দল নির্দেশ করে যা ফিফার যোগ্যতার নিয়মের অধীনে নির্ধারিত হয়েছে। খেলোয়াড়দের একাধিক জাতীয়তা থাকতে পারে যা ফিফা ভুক্ত নয়।
|
|
টীকা: পতাকা জাতীয় দল নির্দেশ করে যা ফিফার যোগ্যতার নিয়মের অধীনে নির্ধারিত হয়েছে। খেলোয়াড়দের একাধিক জাতীয়তা থাকতে পারে যা ফিফা ভুক্ত নয়।
|
|
পূর্বসূরী বরুসিভা ডর্টমুন্ড | উয়েফা কাপ উইনার্স কাপ বিজয়ী ১৯৬৭ রানার্স আপ: রেঞ্জারস | উত্তরসূরী এ.সি. মিলান |
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article ফুটবল ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.