ফররুখ আহমদ: বিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশী কবি

সৈয়দ ফররুখ আহমদ (জুন ১০, ১৯১৮ – অক্টোবর ১৯, ১৯৭৪) একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশি কবি । এই বাঙালি কবি 'মুসলিম রেনেসাঁর কবি' হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি বাংলা কাব্যজগতের সর্বাধিক সনেট রচয়িতা। তার কবিতায় বাংলার অধপতিত মুসলিম সমাজের পুনর্জাগরণের অনুপ্রেরণা প্রকাশ পেয়েছে। বিংশ শতাব্দীর এই কবি ইসলামি ভাবধারার বাহক হলেও তার কবিতা প্রকরণকৌশল, শব্দচয়ন এবং বাক্‌প্রতিমার অনন্য বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। আধুনিকতার সকল লক্ষণ তার কবিতায় পরিব্যাপ্ত। তার কবিতায় রোমান্টিকতা থেকে আধুনিকতায় উত্তরণের ধারাবাহিকতা পরিস্ফুট। 'সাত সাগরের মাঝি' কাব্যগ্রন্থে তিনি যে-কাব্যভাষার সৃষ্টি করেছেন তা স্বতন্ত্র এবং এ-গ্রন্থ তার এক অমর সৃষ্টি।

সৈয়দ ফররুখ আহমদ
সৈয়দ ফররুখ আহমদ
সৈয়দ ফররুখ আহমদ
জন্ম(১৯১৮-০৬-১০)১০ জুন ১৯১৮
মাঝাইল, শ্রীপুর, মাগুরা, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু১৯ অক্টোবর ১৯৭৪(1974-10-19) (বয়স ৫৬)
ঢাকা, বাংলাদেশ
পেশাকবি, সম্পাদক, বেতার শিল্পী
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্বব্রিটিশ ভারতীয় (১৯১৮-১৯৪৭)
পাকিস্তানি (১৯৪৭-১৯৭১)
বাংলাদেশি (১৯৭১-১৯৭৪)
সময়কালবিংশ শতাব্দী
ধরনকবিতা, ছড়া, গল্প, শিশু সাহিত্য
বিষয়মানবতাবাদ, ইসলামি ঐতিহ্য
সাহিত্য আন্দোলনরোমান্টিকতা
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিসাত সাগরের মাঝি

সিরাজাম মুনীরা
হাতেম তায়ী

মুহূর্তের কবিতা
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারবাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬০),
একুশে পদক (১৯৭৭),
স্বাধীনতা পদক (১৯৮০)
দাম্পত্যসঙ্গীসৈয়দা তৈয়বা খাতুন (লিলি)

স্বাক্ষরফররুখ আহমদ: জন্ম ও পরিবার, শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন

জন্ম ও পরিবার

সৈয়দ ফররুখ আহমদের জন্ম ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে (তৎকালীন যশোর জেলার অন্তর্গত) মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মাঝাইল গ্রামের সৈয়দ বংশে। তার বাবা সৈয়দ হাতেম আলী ছিলেন একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর। ফররুখ আহমদের মায়ের নাম রওশন আখতার।

১৯৪২ সালের নভেম্বর মাসে আপন খালাতো বোন সৈয়দা তৈয়বা খাতুন (লিলি)-এর সঙ্গে ফররুখ আহমদের বিয়ে হয়। তার নিজের বিয়ে উপলক্ষে ফররুখ 'উপহার' নামে একটি কবিতা লেখেন যা সওগাত পত্রিকায় অগ্রহায়ণ ১৩৪৯ সংখ্যায় ছাপা হয়।

ফররুখ আহমদের ছেলে-মেয়ে এগারো জন। তারা হলেন: সৈয়দা শামারুখ বানু, সৈয়দা লালারুখ বানু, সৈয়দ আবদুল্লাহল মাহমুদ, সৈয়দ আবদুল্লাহেল মাসুদ, সৈয়দ মনজুরে এলাহি, সৈয়দা ইয়াসমিন বানু, সৈয়দ মুহম্মদ আখতারুজ্জামান (আহমদ আখতার), সৈয়দ মুহম্মদ ওয়হিদুজ্জামান, সৈয়দ মুখলিসুর রহমান, সৈয়দ খলিলুর রহমান ও সৈয়দ মুহম্মদ আবদুহু।

শিক্ষাজীবন

ফররুখ আহমদ খুলনা জিলা স্কুল থেকে ১৯৩৭ সালে ম্যাট্রিক এবং কলকাতার রিপন কলেজ থেকে ১৯৩৯ সালে আই.এ. পাস করেন। এরপর স্কটিশ চার্চ কলেজে দর্শন এবং ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি বামপন্থী রাজনীতিতে ঝুঁকে পড়েন। তবে চল্লিশ-এর দশকে তার রাজনৈতিক বিশ্বাসে পরিবর্তন আসে। তিনি ভারত বিভাগ তথা পাকিস্তান আন্দোলন সমর্থন করেন।

কর্মজীবন

ফররুখ আহমদের কর্মজীবন শুরু হয় কলকাতায়। তিনি ১৯৪৩ সালে আই.জি.প্রিজন অফিসে, ১৯৪৪ সালে সিভিল সাপ্লাইতে এবং ১৯৪৬ সালে জলপাইগুড়িতে একটি ফার্মে চাকরি করেন। ১৯৪৫ সালে তিনি মাসিক মোহাম্মদীর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। তবে শেষ পর্যন্ত স্থায়ীভাবে চাকরি করেন ঢাকা বেতারে। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে ফররুখ আহমদ কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে এসে ঢাকা বেতারে যোগ দেন। এখানেই প্রথমে অনিয়মিত হিসেবে এবং পরে নিয়মিত স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।

মৃত্যু

ফররুখ আহমদ ১৯৭৪ সালের ১৯শে অক্টোবর ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। তিনি তার কবিতায় সমাজের অবহেলিত মানুষের কথা লিখে গেলেও তার জীবনে তাকে বহু দুঃখ কষ্ঠের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করতে হয়েছে। মূলত ইসলামী আদর্শ লালন করার কারনেই তাকে এত ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। ঢাকা বেতার থেকে তার চাকুরী চলে যায়। তার এক ছেলে ডাক্তারি পড়ছিল, টাকার অভাবে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়। চিকিৎসার অভাবে এক মেয়ে মারা যায়। তখন রমজান মাস ছিল। টাকার অভাবে ও শারীরিক অসুস্থতার কারনে না খেয়েই রোজা রাখতেন তিনি। ২৭শে রমজান ইন্তেকাল করেন কবি। তাকে কোথায় দাফন করা হবে তা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। প্রখ্যাত সাংবাদিক আসাফউদ্দৌলা রেজাসহ অনেকেই সরকারিভাবে কোন জায়গা পাওয়া কিনা চেষ্টা করলেন। কিন্তু সরকারিভাবে কোন জায়গা পাওয়া যায়নি। অবশেষে কবি বেনজীর আহমদ তার শাহজাহান পুরের পারিবারিক গোরস্থানে কবিকে দাফন করার জায়গা দান করেন। কবি ফররুখ আহমদের করুণ পরিণতি দেখে আহমদ ছফা লেখেন- “আজকের সমগ্র বাংলা সাহিত্যে ফররুখ আহমদের মত একজনও শক্তিশালী স্রষ্টা নেই। এমন একজন স্রষ্টা অনাহারে রেখে তিলে তিলে মরতে বাধ্য করেছি আমরা। ভবিষ্যত বংশধর আমাদের ক্ষমা করবে না।”

রচনাশৈলী

ফররুখ আহমদ-এর "কাঁচড়াপাড়ায় রাত্রি", প্রথম প্রকাশ: সওগাত, ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ

সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও তার প্রধান পরিচয় 'কবি'। ফররুখ আহমদ সনেটও রচনা করেছেন। তার রচনায় ধর্মীয় ভাবধারার প্রভাব দেখা যায়। এছাড়া আরবিফারসি শব্দের প্রাচুর্য তার লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ইসলামি ঐতিহ্যের প্রতি ছিল তার অগাধ আস্থা। তবে তিনি পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার সমর্থন করতেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই কবি ফররুখ আহমদ মাসিক সওগাতের আশ্বিন ১৩৫৪ (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৪৭) সংখ্যায় পাকিস্তান : রাষ্ট্রভাষা ও সাহিত্য নিবন্ধে লেখেন,

কাব্যগ্রন্থ

  • সাত সাগরের মাঝি (ডিসেম্বর, ১৯৪৪)
  • সিরাজাম মুনীরা (সেপ্টেম্বর, ১৯৫২)
  • নৌফেল ও হাতেম (জুন, ১৯৬১)-কাব্যনাট্য
  • মুহূর্তের কবিতা (সেপ্টেম্বর, ১৯৬৩)
  • ধোলাই কাব্য (জানুয়ারি, ১৯৬৩)
  • হাতেম তায়ী (মে, ১৯৬৬)-কাহিনীকাব্য
  • নতুন লেখা (১৯৬৯)
  • কাফেলা (অগাস্ট, ১৯৮০)
  • হাবিদা মরুর কাহিনী (সেপ্টেম্বর, ১৯৮১)
  • সিন্দাবাদ (অক্টোবর, ১৯৮৩)
  • দিলরুবা (ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৪)

শিশুতোষ গ্রন্থ

  • পাখির বাসা (১৯৬৫)
  • হরফের ছড়া (১৯৭০)
  • চাঁদের আসর (১৯৭০)
  • ছড়ার আসর (১৯৭০)
  • ফুলের জলসা (ডিসেম্বর, ১৯৮৫)

পুরস্কার

১৯৬০ সালে ফররুখ আহমদ বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। কবি ফররুখ আহমদ ১৯৬৫ সনে প্রেসিডেন্ট পদক প্রাইড অব পারফরমেন্স এবং ১৯৬৬ সালে পান আদমজী সাহিত্য পুরস্কারইউনেস্কো পুরস্কার। ১৯৭৭ ও ১৯৮০ সালে তাকে যথাক্রমে মরণোত্তর একুশে পদকস্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়।

তথ্যসূত্র

পাদটীকা

গ্রন্থপঞ্জী

বহিঃসংযোগ

Tags:

ফররুখ আহমদ জন্ম ও পরিবারফররুখ আহমদ শিক্ষাজীবনফররুখ আহমদ কর্মজীবনফররুখ আহমদ মৃত্যুফররুখ আহমদ রচনাশৈলীফররুখ আহমদ কাব্যগ্রন্থফররুখ আহমদ শিশুতোষ গ্রন্থফররুখ আহমদ পুরস্কারফররুখ আহমদ তথ্যসূত্রফররুখ আহমদ বহিঃসংযোগফররুখ আহমদবাংলাদেশ

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

পূর্ণিমা (অভিনেত্রী)নৈশকালীন নির্গমনবাজিউদ্ভিদকোষর‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নবৃহস্পতি গ্রহতুরস্কজ্ঞানবাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকলি যুগইহুদিবাংলা উইকিপিডিয়াসূরা ইয়াসীনক্রিস্তিয়ানো রোনালদোসিরাজগঞ্জ জেলাসময়রেখাঢাকা জেলাহিমালয় পর্বতমালা২০২০-২৩ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগরেনেসাঁপ্যারিসভুট্টাকাঁঠালআল-আকসা মসজিদবান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়স্নায়ুতন্ত্রনারায়ণগঞ্জ জেলামৌলিক সংখ্যাবাংলার ইতিহাসব্রিটিশ ভারতপদ্মা সেতুডেভিড অ্যালেনইসলামি সহযোগিতা সংস্থাপরমাণুব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলজনসংখ্যা অনুযায়ী সার্বভৌম রাষ্ট্র ও নির্ভরশীল অঞ্চলসমূহের তালিকাএস এম শফিউদ্দিন আহমেদএ. পি. জে. আবদুল কালামআবু বকরকুয়েতইশার নামাজসংস্কৃত ভাষাবাংলাদেশের জেলাপ্লাস্টিক দূষণসাইপ্রাসঅনুসর্গরূহ আফজাফুটবলফিলিস্তিনদশাবতারজীবনমাটিআবদুর রহমান আল-সুদাইসবাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীসেন্ট মার্টিন দ্বীপসূরা লাহাববাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনমৃত্যু পরবর্তী জীবনঅকাল বীর্যপাতবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহফোরাতইতালিসোডিয়াম ক্লোরাইডরাজশাহী বিভাগভারতীয় জনতা পার্টিবাংলাদেশের ডেন্টাল কলেজসমূহের তালিকামুহাম্মাদের বংশধারাতরমুজসেলজুক সাম্রাজ্যরঙের তালিকাসিঙ্গাপুররোমান সাম্রাজ্যদৈনিক প্রথম আলোইউসুফহাইড্রোজেনদেব (অভিনেতা)শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭০আওরঙ্গজেব🡆 More