জার বোম্বা

জার বোম্বা (রুশ: Царь-бомба) পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ ও শক্তিশালী পারমাণবিক বোমারূপে বিবেচিত। এএন৬০২ হাইড্রোজেন বোমার সংক্ষিপ্ত নাম এটি। ১৯৫৩ সালে এটি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের রাশিয়ায় আবিষ্কৃত হয়। জার বোম্বাকে সকল বোমার জনক বলে ঘোষণা করা হয়। কুজকিনা ম্যাট (রুশ ভাষায়: Кузькина мать বা কুজকা'র মা) নামেও এটি পরিচিত। ১৯৬০ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এক হাত দেখিয়ে নেয়ার ঘোষণায় নিকিতা ক্রুশ্চেভ কুজকিনা ম্যাট শব্দগুচ্ছটি ব্যবহার করেছিলেন। রাশিয়ার এই জনপ্রিয় উক্তিটি অনুবাদজনিত সমস্যায় খসড়া আকারে আমরা দেখাবো নামে ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হয়। অর্থাৎ, আমরা দেখাবো শব্দগুচ্ছকে বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায় যে, এমন কিছু উপহার দিব যা পূর্বে কখনো আপনারা দেখেননি।

জার বোম্বা
জার বোম্বা
দৃশ্যে রাশিয়ার সারভে একটি জার বোম্বা।
প্রকার টেলার-উলাম নকশা
উদ্ভাবনকারী সোভিয়েত ইউনিয়ন
উৎপাদন ইতিহাস
নকশাকারী জুলি বোরিসোভিচ খারিতোন, আন্দ্রে শাখারভ, ভিক্টর এডামস্কি, ইউরি বাবায়েভ, ইউরি সিরোনভ এবং ইউরি ত্রুতনেভ
উৎপাদন সংখ্যা ১ (অতিরিক্ত আরো একটি খেলনা বোমা)
তথ্যাবলি
ওজন ২৭,০০০ কিলোগ্রাম (৬০,০০০ পা)
দৈর্ঘ্য ৮ মিটার (২৬ ফু)
ব্যাস ২.১ মিটার (৬.৯ ফু)

বিস্ফোরণের ফলন ৫০ মেগা টন টিএনটি (২১০ পেজু)

বিশিষ্ট সোভিয়েত পরমাণু বিজ্ঞানী, ভিন্নামতাবলম্বী এবং মানবাধিকার কর্মী আন্দ্রে শাখারভ উক্ত হাইড্রোজেন বোমা'র জনক হিসেবে ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।

ব্যবহার

১৯৫৩ সালে জার বোম্বা সোভিয়েত ইউনিয়নের রাশিয়ায় আবিস্কৃত হয়। নোভেয়া জেমলিয়া দ্বীপপুঞ্জে ৩০ অক্টোবর, ১৯৬১ সালে এ বোমার সাফল্যজনক পরীক্ষাকার্য্য সম্পন্ন হয়। বিস্ফোরণের ফলে বোমা থেকে নির্গত হয় ৫৬ মেগাটন টিএনটি। বিস্ফোরণ পরবর্তী সময়ে মাশরুম আকৃতির বিরাট কৃত্রিম মেঘমালা ১৬০ কি.মি. দূর থেকেও দৃশ্যমান হয়েছিল। এছাড়াও, ৫৬ কি.মি. উঁচু স্থান থেকে স্পষ্ট দেখা গিয়েছিল এ মেঘমালা। প্রকৃতপক্ষে বোমার নকশা তৈরী করা হয় ১০০ মেগাটন বোমার উপযোগী করে কিন্তু বিস্ফোরণ উপযোগী পরিবেশ না থাকায় এবং কারিগরী ত্রুটির কারণে এর শক্তি ৫৬ মেগাটনে নামিয়ে আনা হয়। বোমাটি তিন স্তরবিশিষ্ট হাইড্রোজেন বোমাবিশেষ। এ ধরনের ২টি বোমা তৈরী করা হয়েছিল। তন্মধ্যে একটি ছিল খেলনাপ্রকৃতির যা মূলতঃ বিশ্ববাসী তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণসহ সোভিয়েত ইউনিয়নের পারমাণবিক শক্তিমত্তা প্রদর্শনের জন্য প্রস্তুত করা হয়।

প্রেক্ষাপট

১৯৪৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইগোর কুর্চাতোভ এবং ইগোর ট্যামকে সাথে নিয়ে সোভিয়েত আণবিক বোমা প্রকল্পে অংশ নেন আন্দ্রে শাখারভ। ২৯ আগস্ট, ১৯৪৯ সালে প্রথমবারের মতো সোভিয়েত আণবিক অস্ত্র পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। ১৯৫০ সালে সারোভে তিনি প্রথমবারের মতো মেগাটন-দূরত্বের সোভিয়েত হাইড্রোজেন বোমা নক্সার মান উন্নয়নে প্রধান ভূমিকা নেন। এ নক্সাই পরবর্তীকালে শাখারভের তৃতীয় চিন্তা নামে রাশিয়ায় এবং টেলার-উলাম নক্সা নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৫৫ সালে আরডিএস-৩৭ নামে প্রথম পরীক্ষা চালানো হয়। এরচেয়েও ব্যাপক মাত্রায় এবং একই নক্সায় শাখারভ কাজ করেছিলেন।

নামকরণ

জার বোম্বা'র নামটি বিভিন্ন দলিল-দস্তাবেজে বিভিন্ন নামে উপস্থাপন করা হয়েছে। তন্মধ্যে - প্রজেক্ট ৭০০০, প্রোডাক্ট কোড ২০২ (ইজদেলিয়ে ২০২), আর্টিক্যাল ডেজিগনেশন আরডিএস-২২০ РДС-220), আরডিএস-২০২ (РДС-202), আরএন২০২, এএন৬০২; কোড নাম - ভেনিয়া; ডাক নাম - বিগ আইভান, জার বোম্বা, কুজকিনা ম্যাট।

জার বোম্বা অন্য দুইটি বৃহদাকারের রুশ বস্তুর পাশাপাশি চিত্রিত হয়ে আছে। জার কোলোকল বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঘণ্টা এবং জার পুশকা বিশ্বের সর্ববৃহৎ কামানরূপে বিবেচিত। সিআইএ জার বোম্বা পারমাণবিক পরীক্ষার নামকরণ করেছে জো ১১১ নামে।

বোমাটির বহিরাবরণের অংশবিশেষ রুশ পারমাণবিক অস্ত্র যাদুঘর, সারোভ (আর্জামাস-১৬) এবং অল-রাশিয়ান রিসার্চ ইন্সটিটিউট অব টেকনিক্যাল ফিজিক্স-এর পারমাণবিক অস্ত্র যাদুঘরে রক্ষিত আছে।

নকশা প্রণয়ন

টেলার-উলাম নকশায় প্রণীত হাইড্রোজেন বোমা হিসেবে জার বোমাটি ছিল তিন স্তরবিশিষ্ট ৫০ মেগা টন টিএনটি (২১০ পেজু) ওজনের; কিন্তু এর সর্বাধিক সক্ষমতা ছিল ১০০ মেগা টন টিএনটি (৪২০ পেজু)। এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা ছিল হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমাবর্ষণের তুলনায় প্রায় ১,৪০০ গুণ বেশি। এছাড়াও, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত সকল ধরনের অস্ত্র, বোমা প্রয়োগের চেয়ে এর ক্ষমতা ছিল দশ গুণ বেশি।

সোভিয়েত বিজ্ঞান একাডেমীর একদল পদার্থবিদ ইউলি বোরিসোভিচ খারিতোনের নেতৃত্বে আন্দ্রে শাখারভ, ভিক্টর এডামস্কি, ইউরি বাবায়েভ, ইউরি সিরনোভ এবং ইউরি ত্রুতনেভ বোমার প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর বিন্যাসক্রম পর্যবেক্ষণ ও নকশা প্রণয়ন করেন। জার বোম্বার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণের অল্পকিছুদিন পরেই আন্দ্রে শাখারভ পারমাণবিক অস্ত্রের তৈরীর বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেন। এরফলে তিনি সোভিয়েত ভিন্নমতাবলম্বীরূপে চিহ্নিত হন।

পরীক্ষণ-পর্ব

বিশেষভাবে তৈরী তুপোলেভ টিইউ-৯৫ভি বিমানের সাহায্যে জার বোম্বাকে পরীক্ষাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়। বিমানচালক ছিলেন আন্দ্রেই দুরনোভসেভ। কোলা পেনিনসুলা থেকে অন্য আরেকটি টিইউ-১৬ পর্যবেক্ষক বিমানকে সাথে নিয়ে উড্ডয়ন করা হয়। টিইউ-১৬ পর্যবেক্ষক বিমানের কাজ ছিল বাতাসের নমুনা সংগ্রহসহ পরীক্ষাকার্য্যের চলচ্চিত্ররূপ ধারণ করা। তাপের হাত থেকে রক্ষাকল্পে উভয় বিমানকেই বিশেষ প্রতিফলনবাহী সাদা রঙের মাধ্যমে রংকরণ করা হয়।

২৭ টন ওজনবিশিষ্ট বোমাটি ৮ মিটার বা ২৬ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ২ মিটার বা ৬.৬ ফুট ব্যাসার্ধ আকৃতির ছিল। এর বিপুল আয়তনের প্রেক্ষাপটে টিইউ-৯৫ভি বিমানের বে ডোর এবং জ্বালানী ট্যাঙ্ক অপসারণ করতে হয়। এছাড়াও পরীক্ষা-পর্ব সুচারূরূপে সম্পাদনের জন্য ৮০০ কিলোগ্রাম ওজনের প্যারাস্যুট সংযু্ক্ত করা হয়। মূলতঃ গ্রাউন্ড জিরো এলাকা থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরবর্তী পর্যবেক্ষক বিমানের সুবিধার্থে প্যারাস্যুট ব্যবহার করা হয়েছিল। যখন বোমাটির বিস্ফোরণ হয় তখন এক কিলোমিটার সামনে চলা টিইউ-৯৫ভি বিমানে মৃদু ধাক্কা অনুভূত হয়।

পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া

৩০ অক্টোবর,১৯৬১ এ বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। অগ্নিগোলক প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূর থেকেও দেখা গিয়েছিল। সুখো নোজ পরীক্ষা এলাকার গ্রাউন্ড জিরো থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরবর্তী সেভার্নি গ্রামের কাঠ এবং ইট দিয়ে তৈরী সকল ভবন সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এছাড়াও শত শত কিলোমিটার ব্যাসার্ধে জেলার কাঠের ঘর-বাড়ীগুলোর দরজা-জানালা ধ্বংস হয়। বেতার যোগাযোগ ব্যবস্থা কমপক্ষে এক ঘণ্টার জন্যে ব্যাঘাতের সম্মুখীন হয়। একজন অংশগ্রহণকারী কালো চশমা পড়ে পরীক্ষাকার্য দেখেন। এর অতি উজ্জ্বল আলো ২৭০ কিলোমিটার দূর থেকেও দৃশ্যমান হয়।

তথ্যসূত্র

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

Tags:

জার বোম্বা ব্যবহারজার বোম্বা প্রেক্ষাপটজার বোম্বা নামকরণজার বোম্বা নকশা প্রণয়নজার বোম্বা পরীক্ষণ-পর্বজার বোম্বা পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াজার বোম্বা তথ্যসূত্রজার বোম্বা আরও দেখুনজার বোম্বা বহিঃসংযোগজার বোম্বাআবিষ্কারজাতিসংঘ সাধারণ পরিষদনিকিতা ক্রুশ্চেভপারমাণবিক অস্ত্রবোমামার্কিন যুক্তরাষ্ট্ররাশিয়ারুশ ভাষাসোভিয়েত ইউনিয়ন

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

প্রাকৃতিক পরিবেশকোকা-কোলাহোমিওপ্যাথিপ্রাকৃতিক দুর্যোগম্যানচেস্টার সিটি ফুটবল ক্লাবরাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড স্কুল এন্ড কলেজআস-সাফাহদ্বৈত শাসন ব্যবস্থাসমাসবাংলার ইতিহাসরক্তের গ্রুপআবু হানিফামহেন্দ্র সিং ধোনিগীতাঞ্জলিব্যক্তিনিষ্ঠতাবাস্তুতন্ত্রভোটঢাকা জেলাভগবদ্গীতাজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়বিষ্ণুবাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবইউক্রেনমহাদেশহস্তমৈথুনবনলতা সেন (কবিতা)ইসলামে যৌনতামেঘনা বিভাগহিন্দুধর্মের ইতিহাসসূর্যওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবআলিঅর্থনীতিবদরের যুদ্ধগোত্র (হিন্দুধর্ম)বিসিএস পরীক্ষারংপুরআরসি কোলাদৌলতদিয়া যৌনপল্লিবাংলা বাগধারার তালিকাবিশ্ব দিবস তালিকাবাঁশলালবাগের কেল্লাবাংলা ভাষামিজানুর রহমান আজহারীজীববৈচিত্র্যউসমানীয় খিলাফতবাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসরকারি বাঙলা কলেজবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানইন্সটাগ্রামপলাশীর যুদ্ধপুরুষে পুরুষে যৌনতাবাংলাদেশ আওয়ামী লীগহেপাটাইটিস বির‍‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নহারুন-অর-রশিদ (পুলিশ কর্মকর্তা)যুক্তফ্রন্ট২০২২–২৩ নিউজিল্যান্ড পুরুষ ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর (এপ্রিল ২০২৩)হানিফ সংকেতচাঁদসুভাষচন্দ্র বসুপথের পাঁচালীঢাকা বিভাগজাযাকাল্লাহদক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থারবীন্দ্রসঙ্গীতবাংলাদেশের সংবাদপত্রের তালিকাদৈনিক যুগান্তরআশারায়ে মুবাশশারাহাদিসহারুনুর রশিদফরিদপুর জেলাবাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের বিচারকবৃন্দঊষা (পৌরাণিক চরিত্র)মূত্রনালীর সংক্রমণকুষ্টিয়া জেলাফারাক্কা বাঁধ🡆 More