চন্দ্রযান–৩ হল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) কর্তৃক পরিচালিত ভারতের চন্দ্রাভিযান কর্মসূচির অন্তর্গত তৃতীয় চন্দ্রান্বেষণ অভিযান ও চন্দ্র পৃষ্ঠে প্রথম অবতরণ। এই অভিযানের উদ্দেশ্য হলো চন্দ্রপৃষ্ঠে নিরাপদ ও সুরক্ষিত অবতরণ, রোভারের নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ানোর সক্ষমতা যাচাই এবং বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পাদনা করা। চন্দ্রযান-৩ এর অবতরণস্থল হিসাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুকে বেছে নেওয়া হয়। এর কারণ হল ইসরোর বিজ্ঞানীগণ আশা করেছিলেন যে, এর দক্ষিণ মেরু থেকে চাঁদ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কোনো বৈজ্ঞানিক তথ্য আবিষ্কার সম্ভব হবে।
চন্দ্রযান-৩ | |||||
---|---|---|---|---|---|
অভিযানের ধরন | ল্যান্ডার, রোভার | ||||
পরিচালক | ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) | ||||
সিওএসপিএআর আইডি | ২০২৩-০৯৮এ | ||||
এসএটিসিএটি নং | ৫৭৩২০ | ||||
ওয়েবসাইট | চন্দ্রযান ৩ | ||||
অভিযানের সময়কাল | ৯ মাস ও ১৬ দিন (অতিবাহিত)
| ||||
মহাকাশযানের বৈশিষ্ট্য | |||||
প্রস্তুতকারক | ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) | ||||
উৎক্ষেপণ ভর | ৩৯০০ কেজি | ||||
পেলোড ভর | প্রপালশন মডিউল: ২১৪৮ কেজি ল্যান্ডার মডিউল (বিক্রম): ১৭২৬ কেজি রোভার (প্রজ্ঞান): ২৬ কেজি মোট: ৩৯০০ কেজি | ||||
ক্ষমতা | প্রপালশন মডিউল: ৭৫৮ ওয়াট ল্যান্ডার মডিউল: ৭৩৮ ওয়াট রোভার: ৫০ ওয়াট | ||||
অভিযানের শুরু | |||||
উৎক্ষেপণ তারিখ | জুলাই ১৪ ,২০২৩ | ||||
উৎক্ষেপণ রকেট | উৎক্ষেপক যান মার্ক ৩ | ||||
উৎক্ষেপণ স্থান | দ্বিতীয় উৎক্ষেপণ মঞ্চ সতীশ ধওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র | ||||
ঠিকাদার | ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) | ||||
চাঁদ অরবিটার | |||||
কক্ষপথীয় সন্নিবেশ | ৫ অগাস্ট ২০২৩ | ||||
কক্ষপথীয় পরামিতি | |||||
অণুসূর উচ্চতা | ১৫৩ কিমি (৯৫ মা) | ||||
অপসূর উচ্চতা | ১৬৩ কিমি (১০১ মা) | ||||
চাঁদ ল্যান্ডার | |||||
মহাকাশযানের উপাদান | বিক্রম ল্যান্ডার | ||||
অবতরণের তারিখ | ২৩ আগস্ট ২০২৩আইএসটি, (১২:৩২ ইউটিসি) | , সন্ধ্যা ৬ টা ২ মিনিট||||
অবতরণ স্থল | ৬৯°২২′০৩″ দক্ষিণ ৩২°২০′৫৩″ পূর্ব / ৬৯.৩৬৭৬২১° দক্ষিণ ৩২.৩৪৮১২৬° পূর্ব (মানজিনাস সি ও সিম্পেলিয়াস এন গহ্বরের মধ্যবর্তী স্থানে) | ||||
চাঁদ রোভার | |||||
অবতরণের তারিখ | ২৩ আগস্ট ২০২৩ | ||||
|
পূর্ববর্তী চন্দ্রযান-২ একটি অরবিটারকে সফল ভাবে চাঁদের কক্ষপথে স্থাপন করেছিল, কিন্তু ল্যান্ডারের সফট ল্যান্ডিংয়ের প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছিল। এই ঘটনার পরে, সফট ল্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে চাঁদে অবতরণের জন্য ইসরো "চন্দ্রযান-৩" আরও একটি চন্দ্র অভিযানের কর্মসূচি শুরু করে। অভিযানে প্রোপালশন মডিউল, ল্যান্ডার (বিক্রম) ও রোভার (প্রজ্ঞান) ব্যবহৃত হয়েছে, তবে কোনো কৃত্রিম উপগ্রহ পেরিত হয়নি। অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের শ্রীহরিকোটায় অবস্থিত সতীশ ধবন মহাকাশ কেন্দ্র থেকে ২০২৩ সালের ১৪ই জুলাই চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের সফল উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।
উৎক্ষেপণের ৯৬৯.৪২ সেকেন্ড পরে পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ১৭৯.১৯২ কিমি উচ্চতায় উপগ্রহ পৃথকীকরণ ঘটে এবং মহাকাশযানটি পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপিত হয়। মহাকাশযানটি পৃথক পৃথক পাঁচটি কক্ষপথে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করার পরে ১ আগস্ট ‘ট্রান্সলুনার ইঞ্জেকশন’-এর মধ্যমে পৃথিবীর আকর্ষণের বাধা কাটিয়ে চাঁদের পথে যাত্রা শুরু করেছিল। এটি ৫ আগস্ট সফলভাবে ১৬৪ কিমি x ১৮,০৭৪ কিমি পরিমাপের চন্দ্র কক্ষপথে প্রবেশ করেছিল। মহাকাশযানটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের আগে পাঁচবার প্রদক্ষিণ করে, এবং পঞ্চম প্রদক্ষিণ সম্পূর্ণ করার পরে ল্যান্ডার থেকে প্রপালশান মডিউল পৃথক হয়ে যায়।
চন্দ্রযান-৩ ২০২৩ সালের ২৩শে আগস্ট চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে অবতরণ করে। অভিযানের মাধ্যমে পূর্বসূরী ইউএসএসআর, নাসা ও সিএনএসএ-এর পরে ইসরো চাঁদে সুরক্ষিত অবতরণে সক্ষম চতুর্থ মহাকাশ সংস্থায় পরিণত হয়।
চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলটি বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের জন্য বিশেষ আগ্রহ রাখে, কারণ সেখানে চন্দ্রযান-১-এর মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে বরফের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। পাহাড়ী ভূখণ্ড ও অপ্রত্যাশিত আলোক পরিস্থিতি শুধুমাত্র বরফকে গলে যাওয়া থেকে রক্ষা করে না, বরং সেখানে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের অবতরণকে একটি চ্যালেঞ্জিং উদ্যোগ করে তোলে। এই বরফের মধ্যে কঠিন অবস্থার যৌগ থাকতে পারে যা সাধারণত চাঁদের অন্য কোথাও উষ্ণ পরিস্থিতিতে গলে যায়, এই যৌগগুলি চাঁদ, পৃথিবী ও সৌরজগতের ইতিহাসের অজানা তথ্য প্রদান করতে পারে। বরফের সন্ধান লাভের পরে, ইসরো চন্দ্রযান কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্বে একটি ল্যান্ডার ও রোভার চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করানোর কার্যক্রম শুরু করেছিল। বিজ্ঞানীদের মতে ভবিষ্যতের মনুষ্য চালিত অভিযান ও ঘাঁটির জন্য বরফকে পানীয় জলের উৎস এবং হাইড্রোজেনকে জ্বালানি হিসাবে ও অক্সিজেনের ব্যবহার করা যেতে পারে।
চাঁদের পৃষ্ঠে সফট ল্যান্ডিংয়ের জন্য চন্দ্রযান কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্বে ইসরো উৎক্ষেপক যান মার্ক ৩ রকেটের দ্বারা একটি অরবিটার, ল্যান্ডার ও রোভারের সমন্বয়ে গঠিত চন্দ্রযান-২কে ২০১৯ সালের ২২শে জুলাই উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। রোভার প্রজ্ঞানকে চন্দ্র পৃষ্ঠে স্থাপন করা জন্য ল্যান্ডারটির ২০১৯ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করার কথা ছিল। ল্যান্ডারটি পৃথিবীর (ইসরো) সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও অবতরণের চেষ্টা করার সময় তার অভিপ্রেত গতিপথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার কারণে শেষ পর্যন্ত বিধ্বস্ত হয়েছিল। চন্দ্রযান-২ বিধ্বস্ত হওয়ার পরে, একই উদ্দেশ্যের নিয়ে ইসরো চন্দ্রযান-৩-এর কার্যক্রম শুরু করেছিল।
ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ইএসএ) দ্বারা পরিচালিত ইউরোপিয়ান স্পেস ট্র্যাকিং নেটওয়ার্ক অভিযানটিকে সমর্থন করেছিল। একটি নতুন পারস্পরিক-সমর্থন ব্যবস্থার অধীনে, ইএসএ ট্র্যাকিং সমর্থন আসন্ন ইসরো অভিযানগুলির জন্য প্রদান করা যেতে পারে যেমন ভারতের প্রথম মানব মহাকাশযান কর্মসূচি, গগনযান ও সৌর গবেষণা অভিযান আদিত্য-এল১, বিনিময়ে ইএসএ কর্তৃক ভবিষ্যতে পরিচালিত অভিযানগুলি ইসরো-এর নিজস্ব ট্র্যাকিং স্টেশনগুলি থেকে অনুরূপ সমর্থন পাবে।
চন্দ্রযান-৩-এর সম্ভাব্য অবতরণ স্থলগুলির জন্য কঠোর মানদণ্ড ছিল, যেখানে বৈজ্ঞানিক আগ্রহ একটি প্রধান কারণ ছিল: স্থানগুলিকে চন্দ্র দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের মধ্যে থাকতে হয়েছিল, পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান চন্দ্র পৃষ্ঠের অংশের পরিধিগুলিতে নয়; এগুলিকে তুলনামূলকভাবে সমতল হতে হয়েছিল এবং ল্যান্ডার অবতরণ স্থলের কাছে পৌঁছালে স্থানগুলি থেকে উড়ে আসতে না পারে এমন কোন প্রকার বস্তু অনুপুস্থিতি ল্যাংমুয়ার প্রোব (এলপি) দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছিল।
চন্দ্রযান-২-এর অরবিটারের অরবিটার হাই-রেজোলিউশন ক্যামেরা (ওএইচআরসি) দ্বারা পূর্বে ধারণকৃত চিত্রগুলির উপর ভিত্তি করে সুনির্দিষ্ট ৪ কিমি (২.৫ মাইল) বাই ৪ কিমি (২.৫ মাইল) পরিমাপের অবতরণ ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছিল।
চন্দ্রযান-৩-এর উৎক্ষেপণের জন্য এলভিএম৩-এম৪ রকেট ব্যবহার করা হয়েছিল, যার ওজন ৬,৪২,০০০ কেজি ও উচ্চতা ৪৩.৫ মিটার ছিল। এটি উৎক্ষেপণের সময়ে মহাকাশযানে ওজন ৩,৯০০ কেজি ছিল, চন্দ্রযান-২-এর ওজন ৩,৮৫০ কেজি অপেক্ষা বেশি।
রকেটের মূল উপাদানগুলি হল এস২০০ সলিড রকেট বুস্টার, এল১১০ তরল পর্যায় ও সি২৫ ক্রায়োজেনিক পর্যায়। রকেটের সঙ্গে ৩.২ মিটার (১০ ফুট) চওড়া, ২৬.২২ মিটার লম্বা ২ টি এস২০০ যুক্ত ছিল, এবং এগুলি জ্বালানী হিসাবে হাইড্রোক্সিল-টার্মিনেটেড পলিবুটাডিয়ান ভিত্তিক প্রোপেল্যান্ট তিনটি অংশে বহন করেছিল। ২ টি বিকাশ ২ ইঞ্জিন দ্বারা চালিত এল১১০ পর্যায়টি ২১.৪ মিটার লম্বা ও ৪ মিটার (১৩ ফুট) চওড়া এবং এটি জ্বালানী হিসাবে অপ্রতিসম ডাইমিথাইলহাইড্রাজিন ও নাইট্রোজেন টেট্রোক্সাইড ব্যবহার করেছিল। ক্রায়োজেনিক পর্যায়ের (সি২৫) সঙ্গে মহাকাশযানটি সংযুক্ত ছিল। এই পর্যায়টি ৪ মিটার (১৩ ফুট) ব্যাস বিশিষ্ট এবং ১৩.৫ মিটার (৪৪ ফুট) লম্বা ছিল।
চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানটি প্রপালশান মডিউল, ল্যান্ডার (বিক্রম) ও রোভার নিয়ে গঠিত ছিল। প্রপালশান মডিউলে একটি থ্রাস্টার রয়েছে, যা লুনার মডিউলকে (ল্যান্ডার ও রোভার) সি২৫ ক্রায়োজেনিক পর্যায় থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরে বহন করেছিল। শঙ্কু আকৃতির আন্তঃমডিউল অ্যাডাপ্টার প্রপালশান মডিউল ও লুনার মডিউলের মধ্যে কাঠামোগত সংযোগ প্রদান করে।
ল্যান্ডার বিক্রম-এর চারটি তির্যক পা ও থাকবে।চারটি ল্যান্ডিং থ্রাস্টার (ইঞ্জিন) রয়েছে। চন্দ্রযান-২-এর তুলনায় চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডারের পা বা ইমপ্যাক্ট লেগ আরও শক্তিশালী এবং যন্ত্রের অপ্রয়োজনীয়তা আতিশয্য উন্নত করা হয়েছিল। এটির সঙ্গে মোট তিনটি পেলোড সংযুক্ত রয়েছে, যেগুলি হল রম্ভা (রেডিয়ো অ্যানাটমি অফ মুন বাউন্ড হাইপারসেন্সিটিভ আয়নোস্ফিয়ার অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ার), চ্যাস্টে (লুনার'স সারফেস থার্মোফিজ়িক্যাল এক্সপেরিমেন্ট) ও ইলসা (ইনস্ট্রুমেন্ট ফর লুনার সিসমিক অ্যাক্টিভিটি)। নাসার তৈরি একটি প্যাসিভ লেজার রেট্রোরিফ্লেক্টর অ্যারে ল্যান্ডারে স্থাপন করা হয়েছিল, যেটি চাঁদে লেজার রেঞ্জিং অধ্যয়নের নিয়োজিত ছিল। অ্যারে (লেজ়ার রেট্রোরিফ্লেক্টর)। ল্যান্ডারে তির্যক ভাবে সংযুক্ত রয়েছে সোলার প্যানেল, যা সৌরশক্তি ব্যবহার করে ৭৩৮ ওয়াট শক্তি উৎপন্ন করতে সক্ষম। ল্যান্ডারের এক পার্শ্বে রোভারটি একটি র্যাম্প সহ যুক্ত করা হয়েছিল। ইসরো ল্যান্ডারের কাঠামোগত দৃঢ়তা উন্নত করেছিল, যন্ত্রগুলিতে পোলিং বৃদ্ধি করেছিল, ডেটা ফ্রিকোয়েন্সি ও ট্রান্সমিশন বৃদ্ধি করেছিল এবং অবতরণ ও অবতরণের সময় ব্যর্থতার ক্ষেত্রে ল্যান্ডারের টিকে থাকার ক্ষমতা উন্নত করার জন্য অতিরিক্ত একাধিক কন্টিনজেন্সি ব্যবস্থা সংযুক্ত করেছিল।
২৬ কেজি ওজনের রোভারটি ৬ টি চাকাযুক্ত। রোভার পরিচালনার জন্য রোভারের সঙ্গে সংযুক্ত একটি ৫০ ওয়াটের একটি সৌর প্যানেল থেকে প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করা হয়েছিল। আলফা পার্টিকেল এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার (এপিএক্সএস) ও লেজার ইনডিউসড ব্রেকডাউন স্পেকট্রোস্কোপ (এলআইবিএস) নামের দুটি পেলোড রোভারের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছিল।
চন্দ্রযান-৩ ২০২৩ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই জুলাই ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের শ্রীহরিকোটায় অবস্থিত সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে ভারতীয় সময় ২ টা ৩৫ মিনিটে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। দুটি এস২০০ রকেট বুস্টারের কঠিন জ্বালানি ১২৭ সেকেন্ড ধরে জ্বলে, এবং ৬২.১৭১ কিমি উচ্চতায় বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। উৎক্ষেপণের ১০৮ সেকেন্ডের মধ্যে এল১১০ তরল জ্বালানি পর্যায়টি জ্বলতে শুরু করেছিল, এটি ২০৩ সেকেন্ড ধরে রকেটটি চালনা করেছিল। সি২৫ ক্রায়োজেনিক পর্যায়টি ৩০৭.৯৬ সেকেন্ডে ১৭৬.৫৭৩ কিমি উচ্চতায় চালু হয়েছিল, এবং মহাকাশযানটি ৯৬৯.৪২ সেকেন্ডে ১৭৯.১৯২ কিমি উচ্চতায় রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন ও সুনির্দিষ্ট কক্ষপথে স্থাপিত হয়েছিল।
চাঁদের পথে যাত্রা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় গতি অর্জনের জন্য মহাকাশযানটি পৃথিবীকে পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন পরিমাপের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করেছিল। কক্ষপথ-উত্থাপনের কৌশলের (পৃথিবী-বাউন্ড পেরিজি ফায়ারিং) মধ্যমে মহাকাশযানকে একটি কক্ষপথ থেকে পরবর্তী কক্ষপথে স্থাপন করা হয়েছিল, এই প্রক্রিয়া মোট ৪ বার প্রয়োগ করা হয়েছিল। আরও একটি কক্ষপথ উত্থাপন কৌশল ২৫শে জুলাই চালু করা হয়েছিল।
প্রপালশান মডিউল দ্বারা ট্রান্স-লুনার ইনজেকশন বার্নটি ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই শুরু হয়েছিল, এবং মহাকাশযানকে ১ আগস্ট ট্রান্সলুনার ইনজেকশনের মাধ্যমে ২৮৮ কিমি x ৩,৬৯,৩২৮ কিমি পরিমাপের ট্রান্সলুনার কক্ষপথ স্থাপন করা হয়েছিল, যা মহাকাশ যানটিকে চাঁদের দিকে নিয়ে যায়।
চন্দ্রায়ন-৩ ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট ১,৮৩৫ সেকেন্ডের প্রচেষ্টায় চাঁদের ১৬৪ কিমি X ১৮০৭৪ কিমি কক্ষপথে প্রবেশ করে। পঞ্চম চন্দ্র কক্ষপথে, মহাকাশযানের কক্ষপথকে ১৫৩ কিমি বাই ১৬৩ কিমি পরিমাপে বৃত্তাকার করার জন্য ১৬ই আগস্ট আরেকটি বার্ন হয়েছিল এবং পরবর্তী ধাপে, প্রপালশান মডিউল পৃথক করার প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। ল্যান্ডার মডিউলকে সফলভাবে প্রপালশন মডিউল থেকে ১৭ই আগস্ট আলাদা করা হয়েছিল। ল্যান্ডার মডিউলের গতিকমানোর জন্য প্রথম ডিবুস্টিং ১৮ই আগস্ট চালু করা হয়েছিল, এবং ১৯শে আগস্ট ১১৩ কিমি বাই ১৫৭ কিমি পরিমাপের কক্ষপথে স্থাপিত হয়েছিল। দ্বিতীয় ডিবুস্টিং ২০ই আগস্ট চালু করা হয়েছিল, এবং ল্যান্ডার মডিউলটি ১১৩ কিমি বাই ১৫৭ কিমি পরিমাপের কক্ষপথে স্থাপিত হয়েছিল।
ল্যান্ডার বিক্রম তার কক্ষপথের নিম্ন বিন্দুর কাছে আসার সঙ্গে সঙ্গে ২৩শে আগস্ট সন্ধ্যা ৫টা ৪৫ মিনিটে ব্রেকিং কৌশলের সঙ্গে চারটি ইঞ্জিন চালু ও অবতরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল; এই সময়ে ল্যান্ডার চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে ৩০ কিলোমিটার উচ্চতায় ছিল। অবতরণ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বিক্রমের গতি ১,১৫০ মিটার প্রতি সেকেন্ডে কমিয়ে আনা হয়েছিল, এই সময়ে বিক্রম অবতরণ স্থল থেকে ২১ কিলোমিটার দূরত্বে ছিল। রাফ ব্রেকিং প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার ১১.৫ মিনিট পরে চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে ল্যান্ডার ৩০ কিলোমিটার থেকে কমিয়ে ৭.২ কিলোমিটার করা হয়েছিল, এই উচ্চতা প্রায় ১০ সেকেন্ডের জন্য বজায় রাখা হয়েছিল। তারপর আটটি ছোট থ্রাস্টার ব্যবহার করে ল্যান্ডার বিক্রম নিজেকে স্থিতিশীল করে এবং অবতরণ চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুভূমিক অবস্থান থেকে একটি উল্লম্ব অবস্থানে ঘোরানো হয়েছিল। তারপরে এটি তার চারটি ইঞ্জিনের মধ্যে দুটি ব্যবহার করে প্রায় ১৫০ মিটার (৪৯০ ফুট) উচ্চতায় পৌঁছেছিল; এটি সেখানে প্রায় ৩০ সেকেন্ডের জন্য ঘোরাফেরা করে।
ল্যান্ডার বিক্রম সন্ধ্যা ৬টা ২ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে অবতরণ করে, চূড়ান্ত পর্যায়ের এই অবতরণ প্রক্রিয়া ১৯ মিনিট ধরে চলেছিল। অবতরণ স্থলের চন্দ্র স্থানাঙ্ক ছিল ৬৯.৩৬৭৬২১° দক্ষিণ অক্ষাংশ ও ৩২.৩৪৮১২৬° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ।
সফল অবতরণের পরে, ল্যান্ডার বিক্রম থেকে র্যাম্পের মধ্যমে রোভার প্রজ্ঞান চন্দ্র পৃষ্ঠে অবতরণ করেছিল।
# | তারিখ/ সময় (ইউটিসি) | এলএএম বার্ন সময় | উচ্চতা অর্জন | প্রবণতা | কক্ষীয় পর্যায়কাল | তথ্যসূত্র | |
---|---|---|---|---|---|---|---|
অপভূ | পরভূ | ||||||
উৎক্ষেপণ | |||||||
১ | ১৪ জুলাই ২০২৩ | — | ৩৬,৫০০ কিমি (২২,৭০০ মা) | ১৭০ মা (২৭০ কিমি) | — | — | |
পৃথিবীকে আবর্তনকালে কক্ষপথ পরিবর্তন | |||||||
১ | ১৫ জুলাই ২০২৩ | — | ৪১,৭৬২ কিমি (২৫,৯৫০ মা) | ১৭৩ কিমি (১০৭ মা) | — | — | |
২ | ১৭ জুলাই ২০২৩ | — | ৪১,৬০৩ কিমি (২৫,৮৫১ মা) | ২২৬ কিমি (১৪০ মা) | — | — | |
৩ | ১৮ জুলাই ২০২৩ | — | ৫১,৪০০ কিমি (৩১,৯০০ মা) | ২২৮ কিমি (১৪২ মা) | — | — | |
৪ | ২০ জুলাই ২০২৩ | — | ৭১,৩৫১ কিমি (৪৪,৩৩৫ মা) | ২৩৩ কিমি (১৪৫ মা) | — | — | |
৫ | ২৫ জুলাই ২০২৩ | — | ১,২৭,৬০৯ কিমি (৭৯,২৯৩ মা) | ২৩৬ কিমি (১৪৭ মা) | — | — | |
ট্রান্স লুনার ইনজেকশন | |||||||
১ | ১ আগস্ট ২০২৩ | — | — | — | — | — | |
চাঁদকে আবর্তনকালে কক্ষপথ পরিবর্তন | |||||||
১ | ৫ আগস্ট ২০২৩ | ১,৮৩৫ সেকেন্ড (৩০.৫৮ মিনিট) | ১৮,০৭৪ কিমি (১১,২৩১ মা) | ১৬৪ কিমি (১০২ মা) | — | প্রায়. ২১ ঘণ্টা (১,৩০০ মিনিট) | |
২ | ৬ আগস্ট ২০২৩ | — | ৪,৩১৩ কিমি (২,৬৮০ মা) | ১৭০ কিমি (১১০ মা) | — | — | |
৩ | ৯ আগস্ট ২০২৩ | — | ১,৪৩৭ কিমি (৮৯৩ মা) | ১৭৪ কিমি (১০৮ মা) | — | — | |
৪ | ১৪ আগস্ট ২০২৩ | — | ১৭৭ কিমি (১১০ মা) | ১৫০ কিমি (৯৩ মা) | — | — | |
৫ | ১৬ আগস্ট ২০২৩ | — | ১৬৩ কিমি (১০১ মা) | ১৫৩ কিমি (৯৫ মা) | — | — | |
ল্যান্ডার ডিঅরবিট কৌশল | |||||||
১ | ১৮ আগস্ট ২০২৩ | — | ১৫৭ কিমি (৯৮ মা) | ১১৩ কিমি (৭০ মা) | — | — | |
২ | ১৯ আগস্ট ২০২৩ | ৬০ সেকেন্ড (১.০ মিনিট) | ১৩৪ কিমি (৮৩ মা) | ২৫ কিমি (১৬ মা) | — | — | |
অবতরণ | |||||||
২৩ আগস্ট ২০২৩ ৬:০২ | — | — | — | — | — | ||
রোভারের অবতরণ | |||||||
২৩ আগস্ট ২০২৩ | — | — | — | — | — |
~১০০ কিমি বাই ১০০ কিমি পরিমাপের কক্ষপথে স্থাপনের পরে প্রপালশান মডিউল ৩ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত কার্যক্রম সুনির্দিষ্ট ভাবে পরিচালনা করবে। ল্যান্ডার ও রোভার ১৪ দিন বা ১ চন্দ্র দিবস সমকাল পর্যন্ত সক্রিয় থাকবে, এবং নির্ধারিত কার্যক্রম সম্পাদনা করবে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে, ইসরো প্রকল্পটির প্রাথমিক অর্থায়নের জন্য অনুরোধ করে, যার পরিমাণ ₹৭৫ কোটি। এর মধ্যে মধ্যে ₹৬০ কোটি যন্ত্রপাতি, সরঞ্জামাদি ও অন্যান্য ব্যয়ের জন্য এবং বাকি ₹১৫ কোটি রাজস্ব ব্যয়ের জন্য চাওয়া হয়।
প্রকল্পের অস্তিত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করে ইসরো সভাপতি কে. সিভান জানান যে অভিযানে প্রায় ₹৬১৫ কোটির কাছাকাছি ব্যয় হবে।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article চন্দ্রযান-৩, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.