গজনি মিনার

গজনি মিনার মূলত মধ্য আফগানিস্তানের গজনি শহরে অবস্থিত দুটি অষ্টভুজ আকৃতির সুসম্পন্ন অলংকৃত মিনার। মিনার দুইটি দ্বাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে নির্মিত এবং বর্তমানে বাহরাম শাহের মসজিদের টিকে থাকা একমাত্র নিদর্শন। মিনার দুইটিকে তৎকালীন গজনভি রাজবংশের 'বিজয়ী' সম্রাজ্যের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। দুইটি মিনার ৬০০ মিটার (১৯৬৮ ফুট) দূরত্বের ব্যবধানে গজনী শহরের উত্তর-পূর্বদিকে একটি খোলা সমতল স্থানে সম্রাট তৃতীয় মাসুদের প্রাসাদের অবশিষ্টাংশের কাছে অবস্থিত।

গজনি মিনার
গজনি মিনার
সম্রাট তৃতীয় মাসুদ নির্মিত মিনারের পুনর্গঠিত স্থিরচিত্র। ১০৯৯ হতে ১১১৫ সালের মাঝে কোন একসময়ে নির্মিত মিনারটির বেলনাকৃতির উর্ধ-অর্ধাংশ ১৯০২ সালের ভূমিকম্পে ধসে যাওয়ার আগে ন্যুনতম ৪৪ মিটার লম্বা ছিল।
গজনি আফগানিস্তান-এ অবস্থিত
গজনি
গজনি
আফগানিস্তানে মিনার দুইটির অবস্থান
বিকল্প নামমাসুদ (৩য়) মিনার ও বাহরাম শাহ মিনার
অবস্থানগজনি, আফগানিস্তান
অঞ্চলগজনি প্রদেশ
স্থানাঙ্ক৩৩°৩৩′৫২.৪″ উত্তর ৬৮°২৬′০১.৮″ পূর্ব / ৩৩.৫৬৪৫৫৬° উত্তর ৬৮.৪৩৩৮৩৩° পূর্ব / 33.564556; 68.433833
ধরনমিনার
উচ্চতা২০ মিটার (৬৬ ফুট)
ইতিহাস
নির্মাতামাসুদ (৩য়), বাহরাম শাহ
উপাদানইট
প্রতিষ্ঠিত১২শ শতাব্দী
স্থান নোটসমূহ
অবস্থাসংকটাপন্ন

১৯০২ সালে ভূমিকম্পে মিনারদুটির বেলনাকৃতির উর্ধাংশ ধসে পরে, তার আগে এদের উচ্চতা ছিল ৪৪ মিটার। বর্তমানে মিনার দুইটি উচ্চতায় ২০ মিটার (৬৬ ফুট) লম্বা। পোড়ামাটির ইট দিয়ে নির্মিত মিনার দুইটি আফগানিস্তানের ইসলামি স্থাপত্যকলার অনন্য নিদর্শণ। মিনারগুলির পৃষ্ঠদেশ বিস্তারিত ও জটিল জ্যামিতিক নকশার টেরাকোটার মাধ্যমে গজনভি রাজবংশের বিভিন্ন শাসকদের নাম অলংকৃত হয়েছে। টেরাকোটা ছাড়াও কুফী লিপিতে কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের ক্যালিগ্রাফি দ্বারা সুন্দরভাবে সজ্জিত। ১৯৬০-এর দশকে, মিনারগুলিকে সংরক্ষণের প্রচেষ্টা স্বরূপ চূড়ায় টিনের শিট নির্মিত আচ্ছাদন লাগানো হয়।

ইতিহাস

গজনি মিনার 
জেমস অ্যাটকিনসনের চিত্রকর্ম- "গজনির দুর্গনগরী ও মিনারদ্বয়", ১৮৩৯

দ্বাদশ শতাব্দীতে নির্মিত মিনারদ্বয় গজনি শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত স্মৃতিস্তম্ভ এবং পরাক্রমশালী গজনভি সাম্রাজ্যের সময় নির্মিত স্থাপনাগুলির সর্বশেষ নিদর্শণ। মিনার দুটির নাম, নির্মাণকালীন শাসক, যথা: মাসুদ তৃতীয় (১০৯৯–১১১৫) ও বাহরাম শাহ (১১১৮–১১৫৭)-এর নাম অনুসারে মানার-ই-মাসুদ (তৃতীয় মাসুদ মিনার) এবং মানার-ই-বাহরাম শাহ (বাহরাম শাহ মিনার) রাখা হয়েছে। মিনারগুলি গজনভি সম্রাজ্যের সাফল্যের প্রতীক হিসেবে 'বিজয় মিনার' নামেও পরিচিত। সম্রাট মাসুদ ও তার ছেলে সম্রাট বাহরাম শাহ'র পৃথক শাসনামলে বানানো। নির্মাণ সময়কাল অজানা। মিনার দুটির অষ্টভুজ আকৃতির নিম্নাংশের উপরে বেলনাকৃতির অর্ধাংশ ছিল। ১৯০২ সালের ভূমিকম্পে এই বেলনাকৃতির অংশগুলি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। সময়ের আবর্তে ক্ষয় হচ্ছে। ঐ ভূমিকম্পে মাসুদ তৃতীয় মিনার নিচের অংশ কিছুটা ধ্বংস হয়। ১৮৮০ সালের একটি স্থিরচিত্রে মাসুদ মিনারের উপরের অংশ দেখা যায়। মিনার দুটির পাদদেশে ও আশেপাশের প্রাপ্ত ধ্বংসাবশেষের স্তুপ থেকে চিহ্নিত করা যায় যে, স্থাপনাগুলি গজনি বাহরাম শাহ মসজিদের অংশ ছিল। মিনারগুলি আফগানিস্তানের জামের ঘুরিদ মিনার এবং ভারতের দিল্লির কুতুব মিনারের মতো পরবর্তী স্মৃতিসৌধগুলির জন্য স্থাপত্য মডেল এবং অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করেছিল।

চিত্রশালা

সম্রাট মাসুদের মিনার

সম্রাট তৃতীয় মাসুদের আমলে নির্মিত মিনাররের স্থাপত্যশৈলী অপেক্ষাকৃত জটিল, এখানে বিভিন্ন ধরনের অলংকরণ করা হয়েছে। টিকে থাকা অংশে আটটি আলংকারিক বন্ধনী আছে। শীর্ষ তিনটি বন্ধনীতে (৬, ৭ ও ৮) একটি গিঁটযুক্ত কুফি শিলালিপি রয়েছে, যা তারকা নির্দেশিত সীমানাযুক্ত। নীচের, বন্ধনীগুলি আটটি বর্গাকার বা আয়তক্ষেত্রাকার প্যানেল দ্বারা গঠিত, প্রতিটি আট- কোনা বিশিষ্ট তারার নকশায় বাহিরে বিস্তৃত। কেন্দ্রীয় বন্ধনী (৩) ইট এবং পোড়ামাটিতে বসানো তির্যক কুফিক রচনা রয়েছে, যেখানে তৃতীয় মাসুদের নাম এবং উপাধি, সাথে মহানবী, চার খলিফা, ইমাম হাসান ও হুসেনের নাম মুদ্রিত। কুফিলিপির ৩ নং বন্ধনীর উপরে ও নীচের (২ ও ৪) বন্ধনীতে বড় ফুলের নকশাসহ প্যানেল আছে। ১ ও ৫ নং বন্ধনীতে জ্যামিতিক মোটিফের নকশা দিয়ে সজ্জিত। নীচের চারটি প্যানেল একটি অবিচ্ছিন্ন ব্যান্ডের সাথে সীমানাযুক্ত, যাতে একটি ফুলের পটভূমিতে কুরআনের সুরা আল-ফাত মুদ্রিত। ইটের মিনারের কোণগুলি ত্রিভুজাকার ইটের পলেস্তরা দিয়ে মজবুত করা হয়েছে।

বাহরাম শাহের মিনার

বাহরাম শাহের মিনার
(১৯০২ সালের আগে ও পরে)
১৮৩৯ সালে উর্ধাংশসহ বাহরাম শাহের মিনার
২০১১ সালে বাহরাম শাহের মিনার বর্তমান নিম্নাংশ
১৯০২ সালে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আগে সাধারণত ৪৪ মিটার উচ্চ ছিল।

বাহরাম শাহ'র মিনার তার বাবা মাসুদের তৈরী মিনার হতে অনুপ্রাণীত।এটী প্রথম মিনার তৈরীর কয়েক দশক পরে নির্মিত, স্থাপত্যশৈলী কিছুটা সাধারণ। শঙ্কুযুক্ত টিনের ছাদ দিয়ে বর্তমান মিনারকে রক্ষা করা হয়েছে। বর্তমান মিনারটি অষ্টকৌনিক তারার উলম্ব স্থাপনা সম্মুখভাগটি আয়তাকার ক্ষেত্রগুলিতে বিভক্ত যেখানে জিগ-জ্যাগ প্যাটার্নে সাজানো ইটের কারুকার্য রয়েছে। শীর্ষে একটি প্রশস্ত বন্ধনীতে কুফি ও নশক লিপির একটি প্রশস্ত শিলালিপি রয়েছে।

সুরক্ষা ও নিরাপত্তা

মিনারগুলি ভালভাবে সংরক্ষিত ও সুরক্ষিত নয়। দুইটি মিনারই জলবায়ুগত অবক্ষয়ের শিকার এবং আফগানিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। মিনার গুলির উপরিভাগের জটিল জ্যামিতিক নিদর্শন এবং কুরআনের আয়াত সংবলিত শিলালিপি বৃষ্টি এবং তুষারপাতের কারণে দ্রুত ক্ষয় হচ্ছে। এছাড়াও নিকটবর্তী রাস্তার ধুলা ও নিয়মিত বন্যার পানি মিনার দুইটির ভিত্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ক্ষয়রোধে মিনারগুলির নতুন ছাদের প্রয়োজন।মিনারদ্বয়ের ভাঙন রোধের জন্য মৌলিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই।

তথ্যসূত্র

Tags:

গজনি মিনার ইতিহাসগজনি মিনার চিত্রশালাগজনি মিনার সুরক্ষা ও নিরাপত্তাগজনি মিনার তথ্যসূত্রগজনি মিনারআফগানিস্তানগজনভি রাজবংশগজনিমিনার

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

সুনামগঞ্জ জেলাজনসংখ্যা অনুযায়ী সার্বভৌম রাষ্ট্র ও নির্ভরশীল অঞ্চলসমূহের তালিকাবাংলাদেশের একাডেমিক গ্রেডিং পদ্ধতিমিশররবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্মওয়ালাইকুমুস-সালাম২০২২ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জিম্বাবুয়ে সফরআরবি বর্ণমালানরসিংদী জেলাআর্জেন্টিনা–ব্রাজিল ফুটবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাবাংলার ইতিহাসসিফিলিসনিজামিয়ানিউটনের গতিসূত্রসমূহইসলামের ইতিহাসদোয়া কুনুতশ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজসমূহের তালিকাকবিতাবর্তমান (দৈনিক পত্রিকা)শেখঅভিস্রবণসালমান শাহরেওয়ামিলক্যান্সাররবীন্দ্রনাথ ঠাকুররক্তভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনবাংলাদেশ নৌবাহিনীবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিনোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকাবিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমকৃত্তিবাসী রামায়ণসম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মরত জেনারেলদের তালিকাউপসর্গ (ব্যাকরণ)চীনজসীম উদ্‌দীনউৎপাদন ব্যয় হিসাববিজ্ঞানপ্রাকৃতিক দুর্যোগআশালতা সেনগুপ্ত (প্রমিলা)মানব শিশ্নের আকারকক্সবাজারভারত বিভাজনহিন্দুধর্মের ইতিহাসবিশেষ্যইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগআস-সাফাহনাহরাওয়ানের যুদ্ধম্যানচেস্টার সিটি ফুটবল ক্লাববাংলা ভাষাসূর্যজিয়াউর রহমানইউরোহুমায়ূন আহমেদঢাকাআবহাওয়াকুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টমাইটোসিসনামাজপর্নোগ্রাফিশ্রীকৃষ্ণকীর্তনসানরাইজার্স হায়দ্রাবাদযুক্তফ্রন্টকিশোর কুমারবাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের বিচারকবৃন্দদৈনিক ইত্তেফাকনাদিয়া আহমেদক্লিওপেট্রা২০২২–২৩ নিউজিল্যান্ড পুরুষ ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর (ডিসেম্বর ২০২২)রানা প্লাজা ধসবিশেষ শাখা (বাংলাদেশ পুলিশ)পাট্টা ও কবুলিয়াতহুনাইন ইবনে ইসহাকপূর্ণিমা (অভিনেত্রী)🡆 More