কেপ কোবরা: সরীসৃপের প্রজাতি

কেপ কোবরা (বৈজ্ঞানিক নাম: Naja nivea) এলাপিড পরিবারভুক্ত এক প্রজাতির বিষধর সাপ। এরা ইয়েলো কোবরা নামেও পরিচিত। এদের দৈর্ঘ্য মাঝারি মাপের এবং অতিমাত্রায় বিষধর। এই প্রজাতিভুক্ত কোবরারা দক্ষিণ আফ্রিকার বিস্তীর্ণ এবং বৈচিত্রপূর্ণ অঞ্চল জুড়ে বসবাস করে, যথা- শুষ্ক সাভানা অঞ্চলে, ফিনবোস গুল্মের ঝোপযুক্ত অঞ্চলে, উষ্ণ এবং শুষ্ক বুশভেল্ড অঞ্চলে, মরু এবং প্রায় মরু অঞ্চলে। এই কোবরা প্রজাতি দিনের বেলায় বিচরণ করে এবং এদের খাদ্যাভ্যাস সাধারনধর্মী। ইহারা বিভিন্ন প্রজাতির সাপকে শিকার করে এবং নানাপ্রকার পচাগলা মাংস খায়। কেপ কোবরা সর্প প্রজাতির প্রধান শত্রু হল শিকারি পাখী, হানি ব্যাজারস এবং বিভিন্ন প্রকারের বেজী। দক্ষিণ আফ্রিকাতে কেপ কোবরাকে 'গিল স্ল্যাভ' অথবা 'হলুদ সাপ' এবং 'ব্রুইনক্যাপেল' অথবা 'বাদামী কোবরা' নামেও ডাকা হয়। আফ্রিকান ভাষাভাষী দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষজন কেপ কোবরাকে 'কপার ক্যাপেল' অথবা 'কপার কোবরা' নামেও উল্লেখ করে প্রধানত এদের উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের বিভিন্নতার জন্য। এই প্রজাতির কোনো উপপ্রজাতির সন্ধান এখনো পাওয়া যায় নি।

কেপ কোবরা
(Cape cobra)
কেপ কোবরা: শব্দপ্রকরণ, শ্রেণিবিন্যাস, বর্ণনা
কেপ কোবরা
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: কর্ডাটা
উপপর্ব: Vertebrata
শ্রেণী: সরীসৃপ
বর্গ: Squamata
উপবর্গ: Serpentes
পরিবার: Elapidae
উপপরিবার: Elapinae
গণ: Naja
প্রজাতি: N. nivea
দ্বিপদী নাম
Naja nivea
(Linnaeus, 1758)
কেপ কোবরা: শব্দপ্রকরণ, শ্রেণিবিন্যাস, বর্ণনা
সবুজ অঞ্চলটি জুড়ে কেপ কোবরার বিস্তৃতি
প্রতিশব্দ

Coluber niveus Linnaeus, 1758
Vipera (Echidna) flava Merrem, 1820
Naja nivea Boie, 1827
Naja gutturalis Smith, 1838
Naja intermixta Duméril, Bibron & Duméril, 1854
Naja haje var. capensis Jan, 1863
Naia flava Boulenger, 1887
Naja flava Sternfeld, 1910
Naja nivea FitzSimons & Brain, 1958
Naja nivea Harding & Welch, 1980
Naja nivea Auerbach, 1987
Naja nivea Welch, 1994
Naja (Uraeus) nivea Wallach, 2009

শব্দপ্রকরণ

Naja nivea অথবা কেপ কোবরার বর্ণনা সর্বপ্রথম দেন সুইডিস প্রাণীবিদ কার্ল লাইনাস ১৭৫৮ সালে। এদের বর্গীয় নাম নাজা, সংস্কৃত শব্দ nāgá (नाग) অর্থাৎ কোবরার ল্যাটিনরূপ। nivea বিশেষণটি ল্যাটিন শব্দ nix অথবা nivis থেকে উদ্ভূত যার অর্থ "তুষার" অথবা "snow" অথবা niveus অর্থাৎ "snowy"। এদের নামের অর্থের সাথে তুষার এর কি যোগাযোগ তা বোঝা যায় না, তবে ইউরোপের শ্রেণিবিন্যাসকারী বিজ্ঞানীরা প্রথম যে কেপ কোবরার নমুনাটিকে সংরক্ষণ করেছিলেন সেটার রঙ ফ্যাকাশে বা শ্বেত বর্ণ হয়ে যাওয়াকে বোঝাতে তুষার এর উল্লেখ করা হয়েছে।

শ্রেণিবিন্যাস

কেপ কোবরা এলাপিড পরিবারের নাজা বর্গের অন্তর্ভুক্ত। Carl Linnaeus প্রথম Naja nivea এর বর্ণনা দেন ১৭৫৮ সালে। তিনি আসলে প্রথমে Coluber niveus এই দ্বিপদ নামটি দেন, কিন্তু প্রায় বছর দশেক পরে Josephus Nicolaus Laurenti এদের প্রকৃত কোবরা হিসাবে বর্ণনা করেন এবং নাজা নামে নথিভুক্ত করেন। ২০০৭ সালে Wüster et al. নাজা বর্গকে চারটি উপবর্গে অথবা উপগোত্রে বিভক্ত করেন। নানাবিধ করণের ভিত্তিতে; যথা রৈখিক চিত্র, অঙ্গসংস্থান বিদ্যা এবং পথ্য অথবা খাদ্য ইত্যাদি Naja nivea কে Uraeus উপবর্গের অন্তর্ভুক্ত করেন। এছাড়াও এই উপবর্গের অন্তর্ভুক্ত হল- ইজিপ্টিয়ান কোবরা

নিম্নে চিত্রিত ক্ল্যাডোগ্রাম বা শাখা বিন্যাস্টি বিভিন্ন নাজা বর্গভুক্ত সর্পপ্রজাতির শ্রেণিবিন্যাস ও সম্প্ররককে বিশ্লেষণ এবং প্রকাশ করে।

নাজা
(Naja|নাজা)

Naja (Naja) naja গোখরা

Naja (Naja) kaouthia মোনোক্লেড কোবরা

Naja (Naja) atra চাইনিজ কোবরা

Naja (Naja) mandalayensis মান্ডালায় স্পিটিং কোবরা

Naja (Naja) siamensis

Naja (Naja) sputatrix জাভান স্পিটিং কোবরা

(আফ্রোনাজা)

Naja (Afronaja) pallida রেড স্পিটিং কোবরা

Naja (Afronaja) nubiae নুবিয়ান স্পিটিং কোবরা

Naja (Afronaja) katiensis মালি কোবরা

Naja (Afronaja) nigricollis ব্ল্যাক নেকড স্পিটিং কোবরা

Naja (Afronaja) ashei জায়েন্ট স্পিটিং কোবরা / অ্যাসেস স্পিটিং কোবরা

Naja (Afronaja) mossambica মোজাম্বিকিউ স্পিটিং কোবরা

Naja (Afronaja) nigricincta জেব্রা স্পিটিং কোবরা

(বৌলেনগেরিনা)

Naja (Boulengerina) multifasciata বরোইং কোবরা

Naja (Boulengerina) christyi কঙ্গো ওয়াটার কোবরা

Naja (Boulengerina) annulata ব্যান্ডেড ওয়াটার কোবরা

Naja (Boulengerina) melanoleuca ফরেস্ট কোবরা

(ইউরাইউস)

Naja (Uraeus) nivea

Naja (Uraeus) senegalensis সেনেগালেস কোবরা

Naja (Uraeus) haje ইজিপ্টিয়ান কোবরা

Naja (Uraeus) arabica আরাবিয়ান কোবরা

Naja (Uraeus) annulifera স্নাউটেড কোবরা

Naja (Uraeus) anchietae অ্যানচিয়েটাস কোবরা

বর্ণনা

কেপ কোবরা মাঝারি দৈর্ঘ্যের সাপ। পূর্ণবয়স্ক নমুনাগুলি ১.২ থেকে ১.৪মিটার (৩.৯ থেকে ৪.৬ ফুট) পর্যন্ত লম্বা হয়। তবে এরা ১.৬মিটার(৫.২ ফুট) পর্যন্ত বেড়ে উঠতে পারে। পুরুষ সাপগুলি স্ত্রীদের তুলনায় সামান্য বড় হয়। কেপ কোবরা প্রজাতির দীর্ঘতম নমুনা হিসাবে যে সাপটি নথিভুক্ত রয়েছে সেটি পুরুষ,নামিবিয়ার (Aus, Namibia)থেকে প্রাপ্ত এবং ১.৮৭মিটার(৬.১ ফুট) দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট। De Hoop Nature Reserve থেকে প্রাপ্ত অপর একটি বিশাল নমুনা ১.৮৫ মিটার(৬.০৫ফুট) দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট।

কেপ কোবরার বর্ণের ভিন্নতা প্রচুর- এদের বর্ণবিন্যাস হলুদ থেকে সোনালী বাদামী থেকে কালচে বাদামী এমনকি কালো পর্যন্ত হয়। আবার এই সাপের গায়ের ডোরা এবং ছিট ছিট দাগও ভিন্ন ভিন্ন হয়- কালো থেলে ফ্যাকাশে রঙের ডোরা এবং ছিট ছিট দাগ দেখা যায়। যদিও বর্ণে এবং দেহের ডোরা অথবা ছোপ এর ভিন্নতা ভৌগোলিক ভাবে সম্পর্কিত তবুও একই ভৌগোলিক অবস্থানে সমস্ত প্রকার বর্ণভিন্নতা দেখতে পাওয়া ভীষণভাবে সম্ভব।

কমবয়সী নমুনাগুলির সাধারণত লক্ষনীয় ভাবে জলার অংশ কালো রঙের হয় এবং গলার এই কালো রঙ পেটের প্রায় এক ডজন আঁশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে নেমে আসতে দেখা যায়। কেপ কোবরা প্রজাতির গায়ের রঙ জীবদ্দশার প্রথম এক-দুই বছরে ফিকে হয়ে যায় এবং এই সময় অপ্রাপ্তবয়স্ক কেপ কোবরার সাথে রিংকালস স্পিটিং কোবরাকে সাধার মানুষ প্রায়শই গুলিয়ে ফেলেন।

আঁশের বিন্যাস
দেহের মধ্যভাগে পৃষ্ঠদেশ উদরদেশ সাবক্যাডুল (লেজের নিম্নদেশ) অয়ানাল প্লেট আপার ল্যাবিয়ালস (উপরের ঠোঁট বা চোয়াল) চোখের আপার ল্যাবিয়ালস অঞ্চল প্রি-অকুলারস (চোখের আগে) পোস্ট-অকুলারস (চোখের পরে) লোয়ার ল্যাবিয়ালস (নিচের চোয়াল) টেমপোরাল
২১ ১৯৫-২২৭ ৫০-৬৮ (যুগ্ম) একক ৩+৪ ৩ (৪ হতেও পারে) ৯ (৮-১০) ১+২ (পরিবর্তনশীল)

বিতরন এবং বাসস্থান

কেপ কোবরা দক্ষিণ আফ্রিকাজাত সর্প প্রজাতি। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিকাংশ স্থানেই প্রায়শই এদের দর্শন মেলে ;যেমন- ওয়েস্ট্ররান কেপ, নর্দান কেপ, ইস্ট্ররান কেপ, ফ্রি স্টেট এবং নর্থ ওয়েস্ট প্রভিন্স। এছাড়াও নামিবিয়ার দক্ষিণ অর্ধে, দক্ষিণ পশ্চিম বোস্তোয়ানা এবং পশ্চিম লেসোথো তেও এদের পাওয়া যায়।

যে কোনো আফ্রিকান কোবরা প্রজাতির তুলনায়, কেপ কোবরা প্রজাতি যদিও ক্ষুদ্রতর ভৌগোলিক সীমার মধ্যে আবদ্ধ, এদের বাসস্থান অনেক বৈচিত্রপূর্ণ এবং ভিন্নধর্মী। এই সর্পপ্রজাতির পছন্দের বাসস্থানগুলি হল- আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্তে ফিনবোস নামক একপ্রকার গাছপালা এবং ঝোপযুক্ত অঞ্চল, দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত উষ্ণ এবং শুষ্ক বুশভেল্ড অঞ্চল, কারো স্ক্রাবল্যান্ড, শুষ্ক সাভানা অঞ্চল এবং নামিব এবং কালাহারি মরু অঞ্চল। কখনো কখনো এদের তীক্ষ্ণদন্ত ইঁদুরের গর্তে, পরিত্যক্ত উইঢিপিতে, শুষ্ক অঞ্চলে, পাথরের খাঁজে বাস করতে দেখা যায়। নাতিশীতোষ্ণ এবং শুষ্ক কারোইড অঞ্চলে এদের দেখা মেলে, তবে এই জাতীয় অঞ্চলের নদী এবং ঝরনার ধারে যেখানে নালার মাধ্যমে জল ভালমতো প্রবেশ করে এবং ফাঁকা অঞ্চলে এদের প্রায়ই দেখা যায়।

লেসোথো তে দেখা গেছে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৫০০মিটার (৮২০০ফুট) পর্যন্ত উচ্চতায়ও এদের উপস্থিতি রয়েছে। ফ্রি স্টেট প্রভিন্স এবং উচ্চ ঘাস জমিতে, কেপ অঞ্চলের পাথুরে পাহাড়ি অঞ্চলে এবং এদের ভৌগোলিক সীমার অন্তর্গত মরু এবং মরুধর্মী অঞ্চলেও এদের দেখতে পাওয়া যায়। কেপ কোবরা প্রজাতির সাপেরা গ্রামাঞ্চলে, সল্প উন্নত শহরতলি অঞ্চলে হানা দেয় যেখানে দিনের বেলার প্রবল উত্তাপ এড়াতে এবং তীক্ষ্ণ দন্ত প্রাণী শিকার করার উদ্দেশ্যে এরা ঘরবাড়ীতে প্রবেশ করে, এর ফলে এরা মানুষের সরাসরি সংস্রবে চলে আসে।

তথ্যসূত্র

Tags:

কেপ কোবরা শব্দপ্রকরণকেপ কোবরা শ্রেণিবিন্যাসকেপ কোবরা বর্ণনাকেপ কোবরা বিতরন এবং বাসস্থানকেপ কোবরা তথ্যসূত্রকেপ কোবরা

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়যৌন প্রবেশক্রিয়াদারাজসময়রেখাঅতিপ্রাকৃত কাহিনীকলমদোয়া কুনুতমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়প্রথম উসমানহস্তমৈথুনের ইতিহাসভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহতুরস্কআবদুর রব সেরনিয়াবাতলোহাবর্ডার গার্ড বাংলাদেশখালিদ বিন ওয়ালিদরাষ্ট্রব্রাজিলবিটিএসক্লিওপেট্রাআকবরঅকাল বীর্যপাতইন্দিরা গান্ধীস্মার্ট বাংলাদেশনেমেসিস (নুরুল মোমেনের নাটক)শামীম শিকদারকুরাসাও জাতীয় ফুটবল দলমরক্কো জাতীয় ফুটবল দলতক্ষকদক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলামিয়োসিসবাংলাদেশী টাকাণত্ব বিধান ও ষত্ব বিধানবেগম রোকেয়াকুরাসাওসূরা আর-রাহমানসতীদাহনৈশকালীন নির্গমনডিজিটাল বাংলাদেশরাসায়নিক বিক্রিয়াচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কম্পিউটার কিবোর্ডশয়তানমানব মস্তিষ্করাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়পহেলা বৈশাখমানব শিশ্নের আকারবাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরদের তালিকাশ্রীকৃষ্ণকীর্তনবাঘসজনেরাদারফোর্ড পরমাণু মডেলমাতৃভাষীর সংখ্যা অনুসারে ভাষাসমূহের তালিকাফোরাতপূরণবাচক সংখ্যা (ভাষাতত্ত্ব)মুহাম্মদ ইউনূসতাজবিদকাবাআন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসরক্তের গ্রুপম্যালেরিয়ামানব দেহফরাসি বিপ্লবদুরুদকনডমসুনামগঞ্জ জেলাদক্ষিণ এশিয়ামারবার্গ ফাইলকানাডাচিঠিপল্লী সঞ্চয় ব্যাংককুরআনের ইতিহাসমসজিদে নববীযৌনসঙ্গমডেভিড অ্যালেনবাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের তালিকাহাইড্রোজেন🡆 More