ওঁ: হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মের প্রতীক

ওঁ বা ওঁ-কার (বাংলা উচ্চারণ: , ⓘ; দেবনাগরী: ॐ) হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈনধর্মের পবিত্রতম ও সর্বজনীন প্রতীক, পবিত্র শব্দ বা মন্ত্র। এটি হিন্দু দর্শনের সর্বোচ্চ ঈশ্বর পরম ব্রহ্মের বাচক। এই ধর্মের প্রতিটি সম্প্রদায় ও উপসম্প্রদায়ের নিকটেই এটি পবিত্র বলে গণ্য।

ওঁ: ব্যুৎপত্তি, গুরুত্ব ও ব্যাখ্যা, ব্যবহার
বাংলা লিপিতে ওঁ-কার।

স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, ওঁ-কার "সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের প্রতীক, ঈশ্বরেরও প্রতীক।" রামকৃষ্ণ পরমহংস বলেছেন, "...ওঁ হইতে ‘ওঁ শিব’, ‘ওঁ কালী’, ‘ওঁ কৃষ্ণ হয়েছেন।" ওঁ-কার বৌদ্ধ ও জৈনদেরও একটি পবিত্র প্রতীক। শিখ সম্প্রদায়ও এটিকে সম্মান করেন। এই প্রতীকের দেবনাগরী রূপ ॐ, চীনা রূপ 唵, এবং তিব্বতীয় রূপ ༀ। এটি ওঙ্কার, প্রণব বা ত্র্যক্ষর নামেও পরিচিত।

ব্যুৎপত্তি

ওঁ শব্দটি সংস্কৃত ‘অব’ ধাতু থেকে উৎপন্ন, যা একাধারে ১৯টি ভিন্ন ভিন্ন অর্থে প্রযোজ্য। এই ব্যুৎপত্তি অনুযায়ী ওঁ-কার এমন এক শক্তি যা সর্বজ্ঞ, সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের শাসনকর্তা, অমঙ্গল থেকে রক্ষাকর্তা, ভক্তবাঞ্ছাপূর্ণকারী, অজ্ঞাননাশক ও জ্ঞানপ্রদাতা। ওঁ-কারকে ত্র্যক্ষরও বলা হয়, কারণ ওঁ তিনটি মাত্রাযুক্ত – "-কার", "উ-কার" ও "ম-কার"। "অ-কার", "আপ্তি" বা "আদিমত্ত্ব" অর্থাৎ প্রারম্ভের প্রতীক। "উ-কার" "উৎকর্ষ" বা "অভেদত্ব"-এর প্রতীক। "ম-কার", "মিতি" বা "অপীতি" অর্থাৎ লয়ের প্রতীক। অন্য ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয় সংঘটনকারী ঈশ্বরের প্রতীক।

"প্রণব" শব্দের আক্ষরিক অর্থ, "যা উচ্চারণ করে স্তব করা হয়"। এর অপর অর্থ, "যা চিরনূতন"।

গুরুত্ব ও ব্যাখ্যা

ওঁ-কার ঈশ্বরের সকল নামের প্রতিনিধিস্বরূপ ও তার শ্রেষ্ঠ নাম। বেদ, উপনিষদ, গীতা ও অন্যান্য হিন্দুশাস্ত্রে সর্বত্রই ওঁ-কারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। অথর্ববেদের গোপথব্রাহ্মণের একটি কাহিনি অনুসারে দেবরাজ ইন্দ্র ওঁ-কারের সহায়তায় দৈত্যদের পরাস্ত করেন। এই কাহিনির অন্তর্নিহিত অর্থ, ওঁ-কারের বারংবার উচ্চারণে মানুষ তার পাশব প্রবৃত্তি জয় করতে সমর্থ হয়। কঠোপনিষদ মতে, ওঁ-কার পরব্রহ্ম। মুণ্ডক উপনিষদে ওঁ-কার অবলম্বনে ঈশ্বরোপাসনার কথা বলা হয়েছে। শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন, তিনি সকল অক্ষরের মধ্যে ওঁ-কার। মৃত্যুকালে ওঁ-কারের উচ্চারণে পরম সত্য লাভ হয়। পতঞ্জলির যোগসূত্র-এ ওঁ-কারকে ঈশ্বরের প্রতীক বলে বর্ণিত হয়েছে এবং বলা হয়েছে, ওঁ-কারের স্মরণ ও উচ্চারণে সমাধি লাভ করা যায়।

ব্যবহার

ধর্মীয় চিহ্ন হলেও ব্যবহারিক জীবনে ওঁ-কারের প্রয়োগ আরও ব্যাপক। প্রত্যেকটি মন্ত্র ওঁ-কার দিয়ে শুরু হয়। চিঠিপত্রের শুরুতেও কেউ কেউ ওঁ-কার লিখে থাকেন। মন্দির, ঠাকুরঘর প্রভৃতি ধর্মীয় স্থানের প্রতীকচিহ্ন রূপেও ওঁ-কার ব্যবহৃত হয়। আজকাল ট্যাটু হিসাবেও এটি জনপ্রিয়। এছাড়া যোগাসনেও ওঁ বা ওম শব্দ ব্যবহার করা হয়।

পাদটীকা

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

Tags:

ওঁ ব্যুৎপত্তিওঁ গুরুত্ব ও ব্যাখ্যাওঁ ব্যবহারওঁ পাদটীকাওঁ আরও দেখুনওঁ বহিঃসংযোগওঁচিত্র:LL-Q9610 (ben)-Titodutta-ওঁ.wavদেবনাগরীসাহায্য:আধ্বব/বাংলাহিন্দু দর্শনহিন্দু ধর্ম

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

রাজশাহীদি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশবাংলাদেশের অর্থনীতিকাজলরেখাসংযুক্ত আরব আমিরাতকারককাজী নজরুল ইসলামের রচনাবলিকিরগিজস্তানবাগদাদ অবরোধ (১২৫৮)শর্করাবাংলাদেশের ব্যাংকসমূহের তালিকামাযহাবআবু মুসলিমতাহসান রহমান খানবাগদাদব্যাংকগাঁজা (মাদক)২০২২ ফিফা বিশ্বকাপজার্মানিজাপানবৌদ্ধধর্মআবদুল মোনেমবাস্তুতন্ত্রজানাজার নামাজবেনজীর আহমেদইউক্রেনে রুশ আক্রমণ (২০২২-বর্তমান)ঢাকামালদ্বীপবীর্যবাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলস্নায়ুযুদ্ধফরিদপুর জেলামহাভারতরশ্মিকা মন্দানাকুমিল্লা জেলাচ্যাটজিপিটিভারতে নির্বাচনজলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় (বাংলাদেশ)ইউক্রেননিজামিয়া মাদ্রাসামুসাবাংলাদেশের উপজেলাঅরিজিৎ সিংউজবেকিস্তানশিয়া ইসলামের ইতিহাসআমওজোন স্তরমুহাম্মাদের সন্তানগণমোবাইল ফোনবাংলাদেশের সিটি কর্পোরেশনের তালিকাইবনে বতুতামুঘল সাম্রাজ্যরামপ্রসাদ সেনলোকসভাভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনসাহারা মরুভূমিবাংলাদেশের বিমানবন্দরের তালিকাবাংলাদেশ সেনাবাহিনীভগবদ্গীতারাশিয়াকুষ্টিয়া জেলাআস-সাফাহহোমিওপ্যাথিইংরেজি ভাষাঊষা (পৌরাণিক চরিত্র)মৌলিক পদার্থমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ২০২৪হজ্জইন্দোনেশিয়ামোশাররফ করিমজীবনানন্দ দাশভূমি পরিমাপআসামখলিফাদের তালিকাবাংলাদেশী অভিনেত্রীদের তালিকাআরব্য রজনীকোকা-কোলাবাবর🡆 More