ইভান আলেক্সিয়েভিচ বুনিন (/ˈbuːniːn/; রুশ: Ива́н Алексе́евич Бу́нин, আ-ধ্ব-ব: (ⓘ); ২২ অক্টোবর ১৮৭০ – ৮ নভেম্বর ১৯৫৩) ছিলেন একজন রুশ লেখক। তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রথম রুশ লেখক। তিনি গদ্য ও কবিতা রচনায় ধ্রুপদী রুশ ঐতিহ্য ধারণের মাধ্যমে শৈল্পিকতায় অটল থাকার কারণে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। তার কবিতা ও গল্প রচনার বুনন, যা বুনিন ব্রোকেড নামে পরিচিত, ভাষার অন্যতম সমৃদ্ধ উপকরণ বলে বিবেচিত।
ইভান বুনিন | |
---|---|
স্থানীয় নাম | Ива́н Алексе́евич Бу́нин |
জন্ম | ভরোনেঝ, রুশ সাম্রাজ্য | ২২ অক্টোবর ১৮৭০
মৃত্যু | ৮ নভেম্বর ১৯৫৩ প্যারিস, ফ্রান্স | (বয়স ৮৩)
জাতীয়তা | রুশ |
ধরন | কল্পকাহিনী, কবিতা, স্মৃতিকথা, সমালোচনা, অনুবাদ |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | দিরিয়েভ্নিয়া ঝিজ্ন আর্সিনিয়েভ আকাইয়ান্নি দ্নি |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ১৯৩৩ পুশকিন পুরস্কার ১৯০৩, ১৯০৯ |
স্বাক্ষর | |
তার অন্যতম ছোটগল্পসমূহ হল দিরিয়েভ্নিয়া (১৯১০), সুখদোও (১৯১২), তার রচিত আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ঝিজ্ন আর্সিনিয়েভ (১৯৩৩, ১৯৩৯), ছোটগল্প সংকলন তোমনি এলিই (১৯৪৬), এবং তার ১৯১৭-১৮ সালের দিনলিপি আকাইয়ান্নি দ্নি (১৯২৬)। বুনিন কমিউনিস্ট বিরোধী শ্বেতাঙ্গ অভিবাসী, ইউরোপীয় সমালোচক এবং তার সমসাময়িক বহু লেখকদের কাজে পূজনীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তারা তাকে ল্যেভ তল্স্তোয় ও আন্তন চেখভের প্রতিষ্ঠা করা রুশ সাহিত্যে বাস্তবতার ধারার সত্যিকারের উত্তরাধিকারী বলে অভিহিত করেন।
ইভান বুনিন ১৮৭০ সালের ২২ অক্টোবর মধ্য রাশিয়ার ভরোনেঝ প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আলেক্সেই নিকোলায়েভিচ বুনিন (১৮২৭-১৯০৬) এবং মাতা লুদ্মিলা আলেক্সান্দ্রোভ্না বুনিনা (জন্মনাম চুবারভা, ১৯৩৫-১৯১০)। তিনি তার পিতামাতার তিন পুত্রের মধ্যে কনিষ্ঠতম। তার দুই বড় ভাই ইউলি ও ইয়েভজেনি এবং দুই ছোট বোন মাশা (মারিয়া বুনিনা-লাস্কার্ঝিয়েভ্স্কায়া, ১৮৭৩-১৯০৬) ও নান্দিয়া। নান্দিয়া অল্প বয়সেই মারা যায়। বুনিনের পূর্বপুরুষগণ পোলীয় ও তাতারসহ গ্রাম্য ভদ্রোচিত পরিবারের ছিলেন। তাদের মধ্যে আন্না বুনিনা (১৭৭৪-১৮২৯) এবং ভাসিলি ঝুকোভ্স্কি (১৭৮৩-১৮৫২) এর মত প্রসিদ্ধ কবিদের বংশধর হওয়ায় বুনিন গর্ববোধ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি তার আত্মজীবনীতে লিখেন:
আমি প্রাচীন ও অভিজাত পরিবার থেকে এসেছি, যে পরিবার থেকে রাশিয়ায় রাজনীতি ও শিল্পকলায় অনেক ভাল ব্যক্তিত্বও এসেছে, যাদের মধ্যে উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকের দুজন কবির নাম বিশেষভাবে উল্লেখ্য: আন্না বুনিনা ও ভাসিলি ঝুকোভ্স্কি, রুশ সাহিত্যের অন্যতম নাম, আথানাস বুনিন ও তুর্ক সাল্মার পুত্র।
১৯১৫ সালে তিনি রুশ ভদ্র সম্প্রদায়কে নিয়ে লেখা আর্মোরিয়াল বুক-এ লিখেন, "বুনিনরা সিমিয়ন বুনকভ্স্কির সরাসরি উত্তরসূরি। বুনকভ্স্কি পোল্যান্ড থেকে মস্কোর দ্বিতীয় ভাসিলির রাজসভায় আসা একজন অভিজাত ছিলেন। বুনিনের মতে চুবারভগণ, "তাদের পূর্বপুরুষগণ কস্ত্রোমা, মস্কোভ্স্কায়া অবলাস্ত, ওরিয়ল ও তাম্বভ্স্কায়া গুবের্নিয়ার জমিদার ছিল এই তথ্য ছাড়া নিজেদের সম্পর্কে খুব কম জানেন।" "ছেলেবেলা থেকে আমি এত স্বাধীনচেতা ছিলাম যে আমি আমার আভিজাত্য এবং এর সাথে যুক্ত অন্য কিছু হারানোর ব্যাপারে উদাসীন ছিলাম।"
বুনিনের শৈশব কাটে খুতরের বুতোর্কিতে এবং পরে ওজের্কিতে (ইয়েলেৎস কাউন্টি, লিপেৎস্কায়া ওবলাস্ত)। শৈশবে তার আশেপাশের মানুষগুলো ছিল বুদ্ধিদীপ্ত এবং স্নেহময়। বুনিন তার পিতা সম্পর্কে বলেন তিনি শারীরিক ও মানসিক উভয় দিক থেকেই খুব শক্ত মানুষ ছিলেন, এবং খিটখিটে স্বভাবের, জুয়ায় আসক্ত, আবেগপ্রবণ, উদার ও মঞ্চধর্মী বাকপটুতাসমৃদ্ধ এবং সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ছিলেন। বুনিন লিখেন, "ক্রিমিয় যুদ্ধের পূর্বে তিনি কখনো মদের স্বাদ গ্রহণ করেন নি, যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর তিনি খুবই মদ্যপ হয়ে পড়েন, যদিও কখনোই সাধারণ মদ্যপদের মত ছিলেন না।" তার মাতা লুদমিলা আলেক্সান্দ্রোভ্নার চরিত্র ছিল আরও চাতুর্যপূর্ণ ও দয়াশীল। এ সম্পর্কে বুনিন লিখেন, "তার পিতা ওয়ারশতে কয়েক বছর কাটান এবং সেখানে তিনি কিছু ইউরোপীয় বিষয় গ্রহণ করেন, যা তাকে তার সমসাময়িক স্থানীয় জমিদারদের থেকে আলাদা করতে সাহায্য করে।" লুদ্মিলাই বুনিনকে রুশ লোকাচারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। বুনিনের বড় দুই ভাইয়ের মধ্যে ইউলির গণিতে ও ইয়েভ্জেনির চিত্রাঙ্কনে আগ্রহ ছিল, তাদের মায়ের ভাষ্য অনুযায়ী, "ভানিয়া (ইভান) জন্মের মুহূর্ত থেকেই ভিন্ন ছিল... অন্য কেউ তার মত নয়।"
১৮৮৭ সালের মে মাসে বুনিনের প্রথম কবিতা দিরিভিন্স্কিয়ে নিশ্চিয়ে সেন্ট পিটার্সবার্গের সাহিত্য সাময়িকী রদিনায় প্রকাশিত হয়। ১৮৯১ সালে তার প্রথম ছোটগল্প দিরিভিন্স্কি এক্সিজ নিকোলাই মিখায়লভ্স্কি সম্পাদিত সাময়িকী রস্কোয়ে বোগাৎস্ত্ভোয় প্রকাশিত হয়। ১৮৮৯ সালের বসন্তে বুনিন খার্কভে তার ভাইয়ের নিকট চলে যান। সেখানে তিনি সরকারি কেরানি পদে যোগ দেন, পরে একটি স্থানীয় পত্রিকায় সহ-সম্পাদক, লাইব্রেরিয়ান, ও আদালতের পরিসংখ্যান রচয়িতা হিসেবে কাজ করেন। ১৮৮৯ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি ওরিয়লে স্থানীয় ওর্লভ্স্কি ভেসৎনিক পত্রিকায় যোগ দেন, প্রথমে সহ-সম্পাদক ও পরে দি ফেক্তো সম্পাদক হিসেবে। এই পত্রিকায় সম্পাদক থাকাকালীন তিনি তার ছোটগল্প, কবিতা ও সমালোচনাসমূহ এই পত্রিকায় সাহিত্য পাতায় প্রকাশের সুযোগ পান। এই পত্রিকায় কাজ করার সময় তার ভার্ভারা পাশ্চেঙ্কোর সাথে পরিচিত হয় এবং গভীরভাবে তার প্রেমে পড়েন। ১৯৮২ সালের আগস্ট মাসে তারা দুজন পলতাভায় চলে যান এবং ইউলি বুনিনের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। ইউলি তার ছোট ভাইকে ইভানকে স্থানীয় জেমস্ত্ভো প্রশাসনে একটি চাকরি জোগাড় করে দেন।
ইভান বুনিনের প্রথম কবিতার বই স্তিখৎভরিনিয়া. ১৮৮৭–১৮৯১ (রুশ: Стихотворения, বাংলা: কবিতা) ওরিয়ল থেকে ১৮৯১ সালে প্রকাশিত হয়। স্থানীয় পত্রিকায় পূর্বে প্রকাশিত তার নিবন্ধ, রচনা ও ছোটগল্পসমূহ সেন্ট পিটার্সবার্গের পাক্ষিক সমূহে প্রকাশিত হতে থাকে।
বুনিন ১৮৯৪ সালের প্রথম অর্ধেক ইউক্রেন ভ্রমণে কাটান। তিনি পরবর্তীতে এই ভ্রমণ সম্পর্কে লিখেন, "এই সময়ে আমি মালোরাশিয়া (ছোট রাশিয়া) এবং এর গ্রাম ও সোপানগুলো, এর মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া এবং ইউক্রেনীয় গান শোনার প্রেমে পড়ি, এই দেশটি খুব আত্মার সাথে সম্পর্কিত।"
১৮৯৫ ও ১৮৯৬ সাল তিনি মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গে কাটান। ১৮৯৭ সালে তার প্রথম ছোটগল্প সংকলন না ক্রায় সভেতা ই দ্রুগিয়া রাস্স্কাজে (রুশ: На край света и другие рассказы, বাংলা: পৃথিবীর শেষ প্রান্তে এবং অন্যান্য গল্প) প্রকাশিত হয় এবং পরের বছর তার দ্বিতীয় কবিতার বই পদ অৎক্রিতোম নিয়বম (রুশ: Под открытым небом, বাংলা: খোলা আকাশের নিচে, ১৮৯৮) প্রকাশিত হয়। ১৮৯৮ সালের জুন মাসে বুনিন ওদেসায় চলে যান। সেখানে তিনি দক্ষিণ রাশিয়ার চিত্রকরদের কমরাদেশিপের নৈকট্য লাভ করেন এবং ইয়েভ্জেনি বুকোভেৎস্কি ও পিওতর নিলুসের তার সাথে বন্ধুত্ব হয়।
বুনিনের প্রথম প্রেম ছিল ইয়েলেৎসে তার সহপাঠী ভার্ভারা পাশ্চেঙ্কো। পাশ্চেঙ্কো ছিলেন একজন ডাক্তার ও অভিনেত্রীর কন্যা। ১৮৮৯ সালে বুনিন তার প্রেমে পড়েন এবং ১৮৯২ সালে ওরিয়লে চাকরির জন্য যান। তাদের সম্পর্ক অনেক দিক থেকে ঝামেলাপূর্ণ ছিল, বুনিনের দরিদ্র অবস্থার জন্য মেয়েটির বাবা তাকে অপছন্দ করত, ভার্ভারা নিজেও নিশ্চিত ছিল না যে সে বুনিনকে বিয়ে করবে কিনা, এবং বুনিন নিজেও অনিশ্চিত ছিলেন যে তাকে বিয়ে করা ঠিক হবে কিনা। তারা দুজন পলতাভা চলে যান এবং ইউলি বুনিনের বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। কিন্তু ১৮৯২ সালের মধ্যে তাদের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে, পাশ্চেঙ্কো ইউলিকে এক চিঠিতে জানান যে তাদের মধ্যে সারাক্ষণ ঝগড়া লেগে থাকে এবং এই সম্পর্ক শেষ করতে সাহায্য করার জন্য অনুনয় করেন। ১৮৯৪ সালে পাশ্চেঙ্কো বুনিনের কাছের বন্ধু অভিনেতা ও লেখক এ.এন. বিবিকভকে বিয়ে করলে তাদের সম্পর্কে ছেদ ঘটে। বুনিন মনে করেন তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে, এবং কিছু সময়ের জন্য তার পরিবার তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন এই ভয়ে ছিল।
১৮৯৮ সালের গ্রীষ্মে এ. এম. ফেদোরভের সাথে থাকাকালীন গ্রিক সমাজ-গণতান্ত্রিক কর্মী ও ওদেসা ভিত্তিক পত্রিকা ইউঝ্নোই অবোজ্রেনিয়ের প্রকাশক ও সম্পাদক এন. পি. ৎসাকনির সাথে বুনিনের পরিচয় হয়। এই পত্রিকায় লেখার আমন্ত্রণ পাওয়ার পর বুনিন ৎসাকনি পরিবারে নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন এবং ৎসাকনির ১৮ বছর বয়সী কন্যা আন্না (১৮৯৭-১৯৬৩) এর প্রেমে পড়েন। ১৮৯৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তারা বিয়ে করেন কিন্তু ১৮৯৯ সালের মধ্যে তাদের বিচ্ছেদ চূড়ান্ত হয়। ১৯০০ সালে তার বিচ্ছেদকালে আন্না অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। এই বছর ৩০ আগস্ট ওদেসায় তার পুত্র নিকোলাই জন্মগ্রহণ করে। ছেলেটি ১৯০৫ সালের ১৬ জানুয়ারি জ্বর, হাম ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে।
বুনিনের দ্বিতীয় স্ত্রী ভেরা মুরোমৎসেভা (১৮৮১-১৯৬১) ছিলেন উচ্চ পদস্থ রাজনীতিবিদ সের্গেই মুরোমৎসেভের ভাইঝি। লেখিকা ইয়েকাতেরিনা লোপাতিনার মাধ্যমে তাদের প্রথম পরিচয় হয়, কিন্তু ১৯০৬ সালের নভেম্বর মাসে লেখক বরিস জাইৎসেভের বাড়িতে তাদের পরিচয় গভীর সম্পর্কে গড়ায় যা বুনিনের শেষ দিন পর্যন্ত ছিল। ৎসাকনির সাথে বিচ্ছেদের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর বুনিন ও মুরোমৎসেভা ১৯২২ সালে বিয়ে করেন। দশক পরে ভেরা মুরোমৎসেভা লাইফ অব বুনিন বই লিখে খ্যাতি লাভ করেন।
টেমপ্লেট:ইভান বুনিন
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article ইভান বুনিন, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.