অ্যাসপারগারের সংলক্ষণ

অ্যাসপারগারের সংলক্ষণ বলতে এক প্রকার আত্মসংবৃতি-কে বোঝায় যাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শৈশব এবং জীবনব্যাপী বিকাশ প্রক্রিয়ায় এক প্রকার ত্রুটি বা পার্থক্য ঘটে যার ফলে ব্যক্তি র সামাজিক আচরণ অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে। এই লক্ষণসমূহের ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি অলিখিত সামাজিক নিয়মাবলী বুঝতে পারেন না এবং মুখের ভাব-ভঙ্গির মাধ্যমে এবং শরীরী ভাষায় বোঝানো নির্দেশ বুঝতে পারেন না। এরা সাধারণত প্রবল উদ্দীপকের অনুভূতি সহ্য করতে পারে না এবং প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে পড়ে। সাধারণতঃ এই লক্ষণসমূহ বিশিষ্ট ব্যক্তি র ছবিতে চিন্তা করার ক্ষমতা প্রবল হয় এবং যুক্তিতর্ক করার ক্ষমতাও ভাল হয়। কিন্তু বাস্তব জীবনে চলবার জন্য প্রয়োজনীয় নানা দক্ষতার অভাব দেখা যায়। অ্যাসপারগারের সংলক্ষণকে সাধারণভাবে আত্মসংবৃতির অন্তর্গত বলে গণ্য করা হয়।

অ্যাসপারগারের সংলক্ষণ সমন্বিত ব্যক্তি র খুবই কম বয়স থেকে বিভিন্ন বস্তুকে সাজিয়ে নকশা কিংবা সারি তৈরি করার প্রবণতা ডেখা যায়।
অ্যাসপারগারের সংলক্ষণ সমন্বিত ব্যক্তির খুবই কম বয়স থেকে বিভিন্ন বস্তুকে সাজিয়ে নকশা কিংবা সারি তৈরি করার প্রবণতা দেখা যায়।

আত্মসংবৃতির প্রকাশ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন হারে ঘটে। আধুনিক গবেষণা মতে, প্রতি হাজারে ১-২ জন অটিজম এবং এক হাজারে ৬ জন এএসডি রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষ করে ১৯৮০ সালের পর থেকে আক্রান্ত হয়েছে জানা গেছে এমন রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। তবে এর পিছনে উন্নত রোগ নির্ণয় পদ্ধতি এবং সচেতনতা বৃদ্ধিই মূল কারণ বলে বিবেচিত হয়।সারা পৃথিবীতে কত মানুষ অ্যাসপারগারে ভুগছেন তার সমন্বিত পরিসংখ্যান নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের ২০১৪ সালের প্রাক্কলন অনুযায়ী প্রতি ৬৮জন নবজাতকের মধ্যে ১জন অ্যাসপারগার বিকলনে আক্রান্ত। এ প্রাক্কলন অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫ লক্ষ মানুষে অ্যাসপারগারের সংলক্ষণ রয়েছে।

১৯৪০-এর দশকে অ্যাসপারগারের সংলক্ষণ নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হলেও অনেক পরে ১৯৯০-এর দশকের মধ্যভাগের পূর্ব পর্যন্ত এ বিষয়টি যথাযথ গুরুত্ব লাভ করে নি। অ্যাসপারগারের সংলক্ষণ ১৯৪৪ থেকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করা হতো। ২০১৩ থেকে এটিকে অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার এর মধ্যে অঙ্গীভূত করা হয়েছে। অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার-এ আক্রান্তদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ অ্যাসপারগারের সংলক্ষণে ভুগছে।

শ্রেণিবিভাগ

অ্যাসপারগারের সংলক্ষণ যে অটিজমেরিই প্রকারভেদ সে বিষয়ে গবেষকেরা প্রায় সকলেই নিশ্চিত হলেও অ্যাসপারগারের সংলক্ষণকে অটিজম এর একটি সুনির্দিষ্ট প্রকারভেদ বলা চলে কি-না তা নিয়ে গবেষক দের মধ্যে প্রবল মতপার্থক্য রয়েছে। বিশেষতঃ "হাই ফাংশানিং অটিজম" এর সাথে অ্যাসপারগারের সংলক্ষণের প্রভেদসমূহ বাস্তবিক নাকি কেবল আপাতনিক তা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে প্রবল বিতর্ক রয়েছে।

বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণসমূহ

অ্যাসপারগারের সংলক্ষণ হল এক প্রকার জীবনব্যাপী ও পরিব্যাপক বিকাশমূলক বিকার (Pervasive developmental disorder) যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রত্যাশিত সামাজিক আচরণ করতে ব্যর্থ হয়, অন্যান্য ব্যক্তির মনোভাব (mentality), মানসিক অবস্থা (mood) এবং মতলব (intentions) বুঝতে অসমর্থ হয়। কোথায় এবং কার সঙ্গে কোন কথা কতটা কথা বলা উচিত কিংবা উচিত নয় এই ধরনের বোধ এর ঘাটতি দেখা যায়।

সামাজিক আচরণের সমস্যা

অ্যাসপারগারের সংলক্ষণবিশিষ্ট ব্যক্তি রা সঠিক বা প্রত্যাশিত সামাজিক আচরণ করতে ব্যর্থ হয়। অন্যের মনের অবস্থা বোঝার ক্ষমতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। অলিখিত সংযোগ পদ্ধতি যেরকম "চোখের উপর চোখ রেখে কথা বলা", মুখভঙ্গি, ও অন্যান্য শরীরী ভাষা ব্যবহার করতে অসুবিধা হয়। এরা সাধারণতঃ কথা বলার সময় অন্য ব্যক্তির চোখের দিকে তাকায় না, এবং চোখের দিকে তাকাতে বাধ্য করা হলে চিন্তা করা ও কথা বলায় অসুবিধা দেখা যায়।

যদিও এই প্রকার ব্যক্তি স্বাভাবিক ভাবে সামাজিক নিয়মকানুন বুঝতে অসমর্থ কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যাকরণের মত শিখিয়ে দিলে কিংবা গবেষণাগারে প্রাণী পর্যবেক্ষণের মত অন্যান্য সামাজিক মানুষকে প্রবল পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কিছু সামাজিক আচরণ রপ্ত করতে পারে। কিন্তু ও রকমভাবে বাধ্য করে শেখানো সামাজিক আচরণের মধ্যেও প্রকট অস্বাভাবিকতা এবং আড়ষ্টতা দেখা যায় যেমন একজন অ্যাসপারগার কে জোর করে চোখে চোখ রেখে কথা বলা শেখানো হলে সে কথা বলার সময় সারাক্ষণই অপর বক্তার চোখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতে পারে। বাস্তব পরিস্থিতির মধ্যে পড়লে এরা জোর করে শেখানো সামাজিক রীতিনীতি প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হতে পারে কিংবা অনিচ্ছাকৃত ভাবে ভুল জায়গায় ভুল সামাজিক রীতিনীতি প্রয়োগ করে-বসতে পারে। যদিও ব্যাতিক্রমহীন সুস্পষ্ট নিয়ম (যেরকম ট্রাফিক আইন) পালন করতে সাধারণত অসুবিধা হয়না, (বরং ক্ষেত্রবিশেষে এরা অত্যধিক নিয়মানুবর্তী হয় ও হয়ে থাকে); অসুবিধা হয় প্রত্যাশিত দেহভঙ্গি, প্রত্যাশিত জিনিসপত্র ধরার ভঙ্গি, ও অন্যান্য অজস্র অলিখিত সামাজিক নিয়ম মানতে।

অ্যাসপারগারের সংলক্ষণে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অনেক সময় আক্রমণাত্মক বলে মনে করা হয়ে থাকে; কিন্তু গবেষণায় প্রতীয়মান হয় অ্যাসপারগারের সংলক্ষণে আক্রান্ত মানুষ সাধারণত অন্যকে আক্রমণ করে না, বরং অন্যের সামাজিক অত্যাচার সহ্য করে থাকে।

অ্যাসপারগারের সংলক্ষণবিশিষ্ট ব্যক্তিরা সাধারণত খুব কম বয়স থেকেই সামাজিক অনুষ্ঠানে (social gathering) যেতে চায়না এবং সামাজিক ক্রীড়ায় অংশ নিতে চায় না। বন্ধুবান্ধব তৈরি করতে চায় না। কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা যায় এদের বন্ধুদের সাথে মেশার ক্ষমতা ও চাহিদা দুটিই থাকে, কিন্তু অন্যান্য সমবয়সী সাথীরা এদেরকে ক্রমাগত ভুল বোঝার ফলে, নির্যাতন (bullying) করার ফলে, কিংবা জটিল সামাজিক রীতিনীতি ব্যবহার করার ফলে, এবং অ্যাসপারগার শিশুর বিরল বিষয়ে আকর্ষণকে সাথীরা ক্রমাগত উপেক্ষা কিংবা অসম্মান করার ফলে অ্যাসপারগার সংলক্ষণবিশিষ্ট শিশুরা আরও প্রবলভাবে নিজেকে গুটিয়ে নেয় এবং আশপাশের মানুষজনের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অ্যাসপারগারের সংলক্ষণবিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাধারণত সমাজের বা জনগোষ্ঠীর প্রতি আতঙ্ক ও জনবহূল স্থানের প্রতি আতঙ্ক দেখা যায়। সামাজিক দেওয়া-নেওয়ার রীতি বা give-and-take mechanic বুঝতেও অ্যাসপারগার ব্যক্তি দের সমস্যা হয়। প্রত্যাশিত সামাজিক আচরণ না করতে পারার ফলে অপাতদৃষ্টি তে আত্মসম্মান-বোধ-হীন বলে মনে হতে পারে, এবং অনিচ্ছাকৃত ভুল অবস্থানভঙ্গি বা ভুল শরীরী ভাষা ব্যবহার অপর ব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ ও ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করে।

ভাষাগত সমস্যা

অন্যান্য বহু প্রকার অটিজম এর চেয়ে অ্যাসপারগারের প্রধানতম প্রভেদ হল এক্ষেত্রে ভাষাগত সমস্যা সবসময় সহজে লক্ষ্য করা যায় না, এবং কথা বলতে শুরু করার বয়স ও অস্বাভাবিক হয় না। কিন্তু ভাষা শোনা ও ব্যবহার করায় সাধারণতঃ অন্যান্য সাধারণ মানুষের চাইতে বিরাট পার্থক্য থাকে। একটি জিনিস বা ধারণা কে বোঝানোর জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বর্ণনা প্রদান করা (verbosity), অত্যন্ত বিশদ বর্ণনা ব্যবহার করে কথা বলা, অত্যন্ত বিশদ বর্ণনা না পেলে অপরের কথার সঠিক অর্থ বুঝবার সমস্যা, কথা বলার ছন্দে বৈচিত্র্যের অভাব, স্বর-প্রাবল্যের ভুল প্রয়োগ, "অত্যন্ত পোশাকি" (pedantic) কিংবা "অদ্ভুতুড়ে" (Idiosyncratic) ধরনের কথা বলার ধরন লক্ষ্য করা যায়। এরা অনেক সময় স্বগতোক্তি করে থাকে বা অন্যের প্রত্যুত্তরের অপেক্ষা না করে কথা চালিয়ে যেতে থাকে। এদের সাধারণতঃ অপরের অত্যন্ত সাধারণ কথাবার্তার অন্তর্নিহিত অর্থ বা ভাবার্থ বা মর্মার্থ বুঝতে অসুবিধা হয়। সাধারণতঃ এদের বাক্যলাপে উপমা এবং রূপকের অনুপস্থিতি দেখা যায়, কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে এরা এমন সব উপমা ও রূপক ব্যবহার করে যেগুলোর অর্থ কেবল তারা নিজেরাই বুঝতে পারে, সাধারণতঃ synaesthesia র জন্য এরকম হয়ে থাকে)। এছাড়া একটি কথার উচ্চারণ শুনে আওয়াজ টি থেকে সঠিক শব্দাংশ নিরূপণ (auditory processing) এ সমস্যা থাকতে পারে। অ্যাসপারগার ব্যক্তি সমূহ খুব কম কথা বলতে পারেন বা খুব বেশি কথা বলতে পারেন। কিন্তু প্রায়শই এঁরা পছন্দমাফিক-ব্যক্তি র সাথে কথা বলার বা না-বলার প্রবণতা (selective mutism) দেখান (যেরকম, হয়ত একটি অ্যাসপারগার শিশু তার মা-বাবার সঙ্গে কথা বলতে চায় না, কিন্তু হয়ত পাড়ার একটা দাদার কাছে সারাক্ষণ বকবক করে।) এরা সাধারণতঃ "কথাবার্তা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কথা" ব্যবহার করেন না, এবং অপরের কথাবার্তার মধ্যে কোনটি গুরুত্বপূর্ণ কথা এবং কোনটি কেবলমাত্র কথা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কথা, এবং কোনটি ই বা সৌজন্য বিনিময়ের জন্য কথা, কোনটি আদর, কোনটি শাসন, কোনটি ব্যাঙ্গও তা এরা বুঝতে পারেন না। ফলে সাধারণ কথাবার্তা (যেমন "কি করছেন? খাচ্ছেন?") এর ফলে এরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়তে পারেন এবং প্রত্যুত্তরে এরা রূঢ় জবাব দিতে পারেন ( যেরকম "কেন? আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না যে আমি ভাত, ডাল এবং তরকারি খাচ্ছি?")। এরা সাধারণতঃ অপরের থেকে স্পষ্ট প্রশ্ন, নির্দেশ কিংবা বিবৃতি আশা করেন এবং অপরকে অতি স্পষ্ট ভাষায় প্রশ্ন, নির্দেশ কিংবা বিবৃতি প্রদান করেন (যেরকম "স্যার, এখনই আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান, আর তিনঘণ্টার মধ্যে আসবেন না, এটা আমার একা থাকার দৈনিক সময়।") । একইভাবে বক্তা যদি এদের বলেন "আমি তৃষ্ণার্ত", এরা হয়ত বুঝতে পারবেন না যে বক্তা আসলে বলতে চাইছেন "আমি তৃষ্ণার্ত সুতরাং আমাকে একগ্লাস পানি দাও", ফলে প্রবল সাহায্য করবার মানসিকতা এবং ইচ্ছা থাকা সত্বেও হয়ত সঠিক সাহায্য এরা করতে পারবেন না। আবার এই একই ভুল বারবার করে শিক্ষা পেতে পেতে হয়ত অপরিচিত লোককে অযাচিত সাহায্য করে রাগিয়ে ফেলতে পারে। আবার এরা যখন শুধু একমুখী বিবৃতি বা বিবরণ দিছছেন (যেরকম "আমি তিন শতাংশ তৃষ্ণার্ত ও পাঁচ শতাংশ বিষাদগ্রস্ত") তখন অযাচিত সাহায্য করলে বা পাল্টা প্রত্যুত্তর দিলে এরা বিভ্রান্ত ও রাগ করতে পারেন। এরকম কথাবার্তা প্রয়োগের জন্য এদের অনেক সময় দুর্বিনীত, অভব্য এবং অহংকারী বলে ভুল করা হয়ে থাকে। আবার সব কথার আক্ষরিক অর্থটি খেয়াল করার জন্য সহপাঠী রা বা সহকর্মীরা ভাবতে পারেন অ্যাসপারগার ব্যক্তিটি হয়ত মজা করছেন। সাধারণতঃ ব্যাকরণ বোধ অতীব প্রখর হওয়ায়, শব্দ ও শব্দার্থ সংক্রান্ত জ্ঞান ভালো হওয়ায়, সঠিক বানান ব্যবহার সহ লিখিত বা মুখের ভাষার প্রতি ভালো দখল থাকায়, অত্যন্ত শালীন এবং গালি-বর্জিত কথাবার্তা ব্যবহার করায় (আসলে গালাগাল হল কিছু উপমা কিংবা একটি গোষ্ঠীর মধ্যে সীমিত সঙ্কেতবাক্য যার গুরুত্ব অটিস্টিক ব্যক্তিরা প্রায়শই বোঝেন না), কোন কোন ক্ষেত্রে কথার পিঠে কথা সাজিয়ে খেলা করায়; বাইরে থেকে বোঝাই যায় না যে আক্রান্ত ব্যক্তি আসলে ভাষা-সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছেন। এইজাতীয় ভাষা-সংক্রান্ত সমস্যা আবার ব্যক্তিভেদে হুবহু একরকম নাও হতে পারে।

শিখন সমস্যা

অ্যাসপারগার ব্যক্তির শিখন-এর সমস্যা থাকতে পারে তা অনেক সময় বাইরে থেকে বোঝা যায় না। অ্যাসপারগার ব্যক্তির সাধারণতঃ সুনির্দিষ্ট কিছু কাজ কিংবা বিষয়ে প্রবল আকর্ষণ থাকতে পারে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রখর ও দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিশক্তি থাকতে পারে। যেরকম কোন একজন অ্যাসপারগার শিশুর ক্যামেরা মডেল এর সম্পর্কে আগ্রহ থাকলে সে হয়ত অগুনতি ক্যামেরার মডেল নাম্বার এবং বিবরণ সহজেই শিখে ফেলতে পারে। কিন্তু অন্য অনেক সাধারণ কাজ এরা করে উঠতে পারে না। এই ভালো এবং খারাপ দক্ষতার ক্ষেত্র গুলি বিভিন্ন অ্যাসপারগার ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন হয়। এরা সাধারণতঃ অত্যন্ত অগোছালো হন এবং কাজকর্মে সাধারণতঃ নিপুণতার অভাব ও হাতের দক্ষতার অভাব দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রেই প্রেরক বা চেষ্টীয় দক্ষতা (motor skills) এর অভাব থাকে (যেরকমটা বাইসাইকেল চালানো কিংবা কিছু জিনিসের ভারসাম্য বজায় রেখে এক-জায়গা থেকে আর এক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয়) যা শিশুকাল ব্যাপী হতে পারে থেকে শুরু করে সারা জীবনব্যাপী স্থায়ী হতে পারে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে অ-নিপুণ চলাফেরা (clumsy movement) বাইরে থেকে দেখেও বোঝা যায়। পরিবেশ বা জীবনযাত্রার পদ্ধতি বা পড়াশোনার পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটানো হলে অ্যাসপারগার ব্যক্তির প্রবল সমস্যা হয় সেই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে, এবং অ্যাসপারগার আক্রান্ত শিক্ষার্থীর বিকাশও গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অ্যাসপারগার ব্যক্তির তাৎক্ষণিক স্মৃতির (Working memory) প্রকট অভাব থাকতে পারে (আরও দেখুনঃ Autism and working memory) ওয়ার্কিং মেমরির কয়েকটি উদাহরণ হল কয়েকটি সংখ্যা বা শব্দ কে উলটো দিক থেকে বলা, দৈনন্দিন দোকান-বাজারের হিসেবপাতি, রাস্তার বিবরণ শুনে রাস্তা খুঁজে বের করা, রেলগাড়ির তালিকা থেকে সঠিক রেলগাড়ি খুঁজে বের করা, রেলগাড়ির ঘোষণাগুলির ভিতর থেকে সঠিক ঘোষণাটির ওপর মনোযোগ নিবেশ করা, অন্য বক্তার কথা একবার মাত্র শুনে পুরো বাক্য মনে রেখে একবারে তার অর্থ বুঝতে পারা ইত্যাদি। দৈনন্দিন সাধারণ জীবনযাত্রায় যেখানে এইজাতীয় দক্ষতাগুলি দরকার সেখানে অ্যাসপারগার ব্যক্তিকে প্রবল দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে যেতে হতে পারে অথবা এই ধরনের কাজগুলি করা প্রায় অসম্ভব ও হতে পারে। এছাড়াও যেসব দৈনন্দিন কাজে কতগুলি ছোটো ছোটো কাজকে নির্দিষ্ট সময়ে সঠিক ক্রমানুসারে করতে হয় (অর্থাৎ (task switching) করতে হয়) সেই সব কাজে অ্যাসপারগার ব্যক্তির প্রবল অসুবিধা হতে পারে। অটিজম এর অন্যান্য প্রকারভেদ এর মতই অ্যাসপারগার ব্যক্তির, কর্মস্থলে সহকর্মীদের মুখ চিনতে অসুবিধা হতে পারে। এছাড়াও দৈনন্দিন কাজের পরিকল্পনা বা সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার রুটিন তৈরিতেও সমস্যা থাকতে পারে। । এছাড়াও একাধিক কাজ একসাথে করতে (multitasking) এবং দলবদ্ধ ভাবে কাজ (teamwork) করতে প্রবল অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারে।

বিশেষ সামর্থ্য

অ্যাসপারগারের সংলক্ষণ 
অ্যাসপারগারের সংলক্ষণবিশিষ্ট শিক্ষার্থী অতি অল্পসংখ্যক বিষয়ের প্রতি প্রবল আগ্রহী হতে পারে এবং একই ধরনের কাজ করে যেতে বারংবারপারে; যেমন চিত্রে দেখানো বালকটি কেবল আণবিক মডেল নিয়ে নাড়াচাড়া করে।

অ্যাসপারগারের সংলক্ষণ সমন্বিত ব্যক্তির কয়েকটি মাত্র নির্দিষ্ট বিষয়ে, কিংবা অনেকগুলি বিষয়ের কয়েকটিমাত্র অংশে অগাধ পাণ্ডিত্য থাকতে পারে এবং প্রবল তথ্য বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা ও যুক্তিতর্ক করার দক্ষতা থাকতে পারে। অ্যাসপারগার ব্যক্তিরা সাধারণতঃ ছবিতে চিন্তা করে, এবং অনেক ক্ষেত্রেই ভালো ছবি আঁকে। অ্যাসপারগার ব্যক্তিরা সাধারণতঃ খুব সহজেই জটিল ত্রিমাত্রিক বস্তু কল্পনা ও নির্মাণ করতে পারে এবং বিভিন্ন দিক থেকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বস্তুটিকে কেমন দেখতে লাগবে তা সহজেই এঁকে দিতে পারে। অ্যাসপারগার ব্যক্তিরা সাধারণতঃ কোনও না কোনও বিন্যাস-অনুধাবণ বা নক্সা শনাক্তকরণের (pattern recognition) কাজে বিপুল দক্ষতা বহন করে, যদিও মুখ শনাক্তকরণ ও সামাজিক আচরণ অনুধাবণের মত দৈনন্দিন নক্সা শনাক্তকরণের (pattern recognition) কাজে এরা দুর্বল বা একেবারে অসমর্থ হয়।

কোন কোনও অ্যাসপারগার/ অন্য অটিজম ব্যক্তি গণিতের কোনও শাখায় বিশেষতঃ জ্যামিতি ও বীজগণিতে বিশেষ পারদর্শিতা দেখিয়ে থাকে। কোন কোনও অ্যাসপারগার/ অন্য অটিজম ব্যক্তি কিছু ক্ষেত্রে মনে মনে বিরাট অঙ্ক কসবার ক্ষমতা থাকে বা অগণিত জিনিসের সম্পর্কে অগণিত তথ্য মুহূর্তে মনে করবার ক্ষমতা থাকে বা বিরাট বড়ো একটা দৃশ্যকে মাত্র খানিকক্ষণ দেখে স্মৃতি থেকে হুবহু এঁকে ফেলার ক্ষমতা থাকে। এজাতীয় বিপুল দক্ষতা কে সাধারণভাবে Savant syndrome বলা হয়। তবে এই সমস্ত Savant দক্ষতা সব- অটিজম এর ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়না বা প্রকাশ পায়না। বরং অনেক অ্যাসপারগার ও অটিজম ব্যক্তি এইজাতীয় কাজকর্মে খুবই অসুবিধা বোধ করে। অ্যাসপারগার ব্যক্তিসমূহ প্রায়শই বিজ্ঞান-বিষয়ে উপলব্ধি করায় বিশেষ দক্ষ হয় এবং যান্ত্রিক (concrete) পদ্ধতিতে চিন্তা করে। তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে দর্শনশাস্ত্রের বিমূর্ত (abstract) চিন্তায় ও বিশেষ পারদর্শিতা দেখায়। আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রে অ্যাসপারগার ব্যক্তির মনোনিবেশ ক্ষমতা ভালো হলেও কোনও একটি বিষয়বস্তু তে নিমগ্ন (hyperfocussed) হয়ে পড়ে ও অপর একটি বিষয়ে প্রদত্ত কাজকর্মে মনোনিবেশ পরিবর্তন করতে অসুবিধ বোধ করে এবং প্রচুর সময় নেয় যতক্ষণ না আবার দ্বিতীয় বিষয়টিতে নিমগ্ন (hyperfocussed) হতে পারছে ততক্ষণ।

অন্যান্য লক্ষণসমূহঃ

পুনঃপৌনিক (repeatitive) এবং একঘেয়ে রকমের (stereotypy) নড়াচড়া; যেরকম চেয়ার এ একইভাবে বসে থেকে একইদিকে ধরাবাঁধা ছন্দে দেহকান্ড বা পা দোলানো, অন্যান্য অনেক প্রকার অটিজম এর মত ই অ্যাসপারজার এর ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করা যায়। (এইপ্রকার গতিবিধি, অন্য আর একপ্রকার দ্রুত ও তাৎক্ষণিক অঙ্গভঙ্গি (Tick মুদ্রাদোষ) এর চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা।)। আবার নড়াচড়ার অত্যন্ত অভাব থাকতে পারে যেটাকে অনেকসময় সমাজের চোখে জড়ভরত বলে কটূক্তি করা হয়। এছাড়া একঘেয়ে বা বৈচিত্র্যহীন (monotonous) জীবনযাপন করতে পছন্দ করা, ধরাবাঁধা অপরিবর্তনীয় রুটিন এ দিনাতিপাত করা, রোজই একই ধরনের (ritualistic) কাজকর্ম করা (যেরকম প্রতিদিন বিদ্যালয় থেকে ফিরে বিদ্যালয় জুতো-জামা পরেই ঠিক তিনঘণ্টা বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা, কিংবা রাতে শুতে যাবার আগে ঠিক আধ ঘণ্টা আলপনা তৈরি করা, কিংবা শোবার সময় প্রতিদিন মাথার উপর বালিশ চাপা দেওয়া ইত্যাদি)। এইসব রুটিন কাজকর্মে বদল ঘটানোর কোনও চেষ্টা করলে অ্যাসপারজার ব্যক্তি অত্যন্ত অসুবিধার মধ্যে পড়তে পারে বা অস্বস্তি বোধ করতে পারে বা বিরক্ত ও ক্রুদ্ধ বোধ করতে পারে।

অ্যাসপারজার ব্যক্তিরা সাধারণতঃ বহিঃস্থ উদ্দীপক এর প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল হন যেরকম এরা সাধারণতঃ জোরালো শব্দ সহ্য করতে পারেন না এবং একটুতেই চমকে যান। (আবার বিপরীতে, কোনও কোনও অ্যাসপারজার ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রবল শব্দের প্রতি অসংবেদনশিলতা ও লক্ষ্য করা যায়।) শব্দ-সংবেদী অ্যাসপারজারদের ক্ষেত্রে জোর শব্দ যেমন রেলগাড়ির আওয়াজ ও হর্ন, পুলিশ, দমকল ও অ্যামবুল্যানসের হুটার, যানবাহনের শব্দ, সহপাঠীদের হইচই, জনতার কোলাহল, ঘড়ির ঘণ্টাধ্বনি, পারিবারিক ঝগড়া ও চেঁচামেচি ইত্যাদির খুব খারাপ প্রভাব দেখা যায়। পটকা ও বোমার আওয়াজে এরা অসুস্থ ও উন্মত্তের মত প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে পড়তে পারেন, যাকে জনসমাজ সহজেই কেবল ভয় বা আতঙ্ক বলে ভুল করে থাকে। অধিক সংবেদনশীল দের ক্ষেত্রে অতি সামান্য আওয়াজ এর ফলেও উৎকট প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রবল স্পর্শ-সংবেদনশীলতা দেখা যায়, এবং শরীরের বিশেষ বিশেষ স্থানে (যেমন মাথা, কাঁধে বা ঘাড় ইত্যাদিতে) কেউ হাত রাখলে এরা হতচকিত বা রেগে যেতে পারেন বা ব্যাথা অনুভব করতে পারেন। Sensory overload হলে, যেমন একসাথে অনেকগুলি সংবেদন চলে এলে এরা সবগুলো পৃথক (ফিল্টার) করতে ব্যর্থ হন ফলে হতবুদ্ধি (confused)ও হতাশ (frustrated) হয়ে পড়েন এবং প্রতিক্রিয়াশীল ও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে কটুগন্ধের প্রতিও প্রবল সংবেদনশীলতা দেখা যায়। অ্যাসপারজার ব্যক্তিদের মনোভাব চেপে রাখার ক্ষমতা বা নিজের প্রতিক্রিয়া কে দমন করবার (response inhibition বা self control) ক্ষমতা কম বা অনুপস্থিত হতে পারে; ফলে প্রবল Sensory overload চলে এলে হতবুদ্ধি হয়ে পড়ার ফলস্বরূপ এরা আক্রমণ করে বসতে পারেন বা ঊর্ধ্বতনঃ ব্যক্তির (authoritative personnel) উপরেও চেঁচামেচি বা মারধোর করে বসতে পারেন। sensory overload এর কারণে সামান্য শরীর-খারাপ কিংবা ছোটখাটো চোট-আঘাত এর প্রভাবেই খারাপভাবে কর্ম সম্পন্ন করতে পারেন।

বাস্তব জীবনে দৈনন্দিন কাজকর্ম করার অসুবিধা

অন্যান্য বিভাগ গুলি তে সংশ্লিষ্ট দক্ষতার অভাব কীভাবে আক্রান্ত ব্যক্তির বাস্তব জীবনকে কীভাবে প্রভাবিত করে তা সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা অধ্যায় গুলিতে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু ওগুলি ছাড়াও অন্যান্য কারণে অ্যাসপারগার ব্যক্তিকে নানাপ্রকার লাঞ্ছনা ও হয়রানির শিকার হতে হয়। একটি অন্যতম সমস্যা হলো এরূপ ব্যক্তিরা সাধারণত: নিজে অত্যধিক নীতিপরায়ন হলেও অন্য কুমতলব সম্পন্ন লোকজন অনেক সময় এদের প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হয় এবং বোকা বানানোর চেষ্টা করে বা ঠকিয়ে দেয় বা ফায়দা তোলে বা কুপথে টেনে আনার প্রচেষ্টা চালায়। অ্যাসপারগার ব্যক্তি প্রায়শই উৎপীড়ণ বা পিছনে লাগা (bullying) ও আবেগীয়-ব্ল্যাকমেইলিং এর শিকার হন। সচরাচর কর্মক্ষেত্রে উপযুক্ত কিন্তু কঠিন কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়না এবং অনেকসময় সহপাঠী বা সহকর্মীরা এদের কথা বিশ্বাস করতে চান না। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সহকর্মীরা এদেরকে ঘৃণা করেন কিংবা ভয় পান, এবং কাজ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ব্যাপারসমূহ জানান না। অনেক সময় শিক্ষকরা অ্যাসপারগার আচরণ সমন্বিত শিক্ষার্থীকে ভুল বোঝেন এবং এদেরকে অলস, ভীরু, ফাঁকিবাজ ও অনিয়মিত বলে মনে করেন, যদিও তা সঠিক নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে শিক্ষকরা অ্যাসপারগার শিক্ষার্থীকে অন্যান্য স্বাভাবিক শিক্ষার্থীর থেকে পৃথক করে দেন এবং শেষ বেঞ্চে বসিয়ে দেন যেখানে এরা কোনও পড়া বুঝতে পারেনা এবং সহপাঠীদের দ্বারা আরও বেশি নির্যাতনের শিকার হয়। পরীক্ষকরা অনেক সময় চোখে চোখ রাখার মাধ্যমে সংযোগ এর অভাবকে আত্মবিশ্বাস এর অভাব, অমনোযোগিতা, অসহযোগিতা এবং মিথ্যাবাদী ইত্যাদি ভেবে থাকেন। অলিখিত যোগাযোগ পদ্ধতি যেমন শরীরী ভাষা, ঈসারা ও মুখের অভিব্যক্তি বুঝতে না পারার কারণে এদেরকে অনেক সময় নির্দয়, অভব্য এবং অশ্রদ্ধাশীল বলে ভেবে নেওয়া হয়। এছাড়া আদব-কায়দা ও শরীরী ভাষায় শিক্ষক কে বা ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিকে শ্রদ্ধা ও ভক্তি প্রকাশ না করতে পারার ফলে অবচেতন জনমানসে এইরূপ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমা হয়। অ্যাসপারগার শিক্ষার্থী সাধারণত ক্লাস চলাকালীন খুব সমস্যা ভোগ করেনা, কিন্তু বিরতিকালীন সময়ে এরা নানা সমস্যা ও বিপদের সম্মুখীন হয়। ক্লাসঘরে কোলাহল বা ওয়ার্কিং মেমরি সমস্যার বা ইকোল্যালিয়া বা অন্য কোনও সমস্যার জন্য অ্যাসপারগার শিক্ষার্থী বারবার পাঠদানে ছেদ ঘটাতে পারে যা সামাজিক ভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ এর চেষ্টা বলে ভুল ধারণা করা হয়। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক অ্যাসপারগার বিবাহ সঙ্গী খোঁজার ব্যাপারে অনাগ্রহী হতে পারেন এবং জোর করে বিয়ে দেওয়ার ফল খুবই খারাপ হতে পারে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক অ্যাসপারগার ও তার বিবাহ সঙ্গী পরস্পরকে সঠিক ভাবে না বুঝতে পারলে প্রবল গণ্ডগোল সৃষ্টি হয়ে থাকে বলে জানা যায়; এবং পরস্পরকে সময় দেওয়ার অভাব ও অতি প্রকট হতে পারে।

নামের ব্যুৎপত্তি এবং ইতিহাস

অস্ট্রীয় শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ হ্যান্স অ্যাসপারগার এর নাম থেকে এই লক্ষণসমূহের নামকরণ হয়েছে কারণ ডাঃ অ্যাসপারগার এর গবেষণাপত্রে সুনির্দিষ্ট ভাবে এই লক্ষণ সমূহের বিবরণ প্রকাশিত হয়। কিন্তু মূলতঃ দুইটি কারণে এই নামকরণ সমালোচিত হয়। প্রথমত অ্যাসপারজার লক্ষণসমষ্টির সাথে অন্যান্য মৃদু অটিজম এর পার্থক্য নিয়ে বিতর্ক আছে এবং পরবর্তীকালের গবেষণায় দেখা যায় বহু ব্যক্তির ক্ষেত্রে অ্যাসপারজার ও অন্যান্য মৃদু অটিজম (যেরকম হাই-ফাংশনিং অটিজম) এর মিশ্র লক্ষণ দেখা যায়, অর্থাৎ দেখা যায় অ্যাসপারজারের কোনও কোনও লক্ষণ অনুপস্থিত কিন্তু তৎপরিবর্তে অন্য কোনও ধরনের অটিজম এর কোনও কোনও লক্ষণ উপস্থিত। যদিও অ্যাসপারজার লক্ষণসমষ্টির সমাপতন কে একেবারে নস্যাৎ করা যায়নি। এইসকল বিতর্কের কারণে DSM-5 নির্দেশাবলী তে মৃদু অটিজম এর সূক্ষ্ম ভাগগুলি তুলে দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় বিতর্কটিও গবেষণা স্তরে, ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় ডাঃ হ্যান্স অ্যাসপারগার এর নাম নাৎসি সুপ্রজনন(Eugenics) হত্যাকাণ্ড (Euthanasia) এর সাথে জড়িত। এই তথ্য সংবাদমাধ্যম এ আসার পর বহু অ্যাসপারগার ব্যক্তি ও সাধারণ ব্যক্তিরা অসম্মানিত বোধ করেছেন এবং অ্যাসপারজার লক্ষণসমষ্টির নতুন নামকরণ দাবি করেছেন।

জৈবনিক ও স্নায়বিক-জৈবনিক ভিত্তি

অ্যাসপারগারের সংলক্ষণ 
"ফাংশনাল" এম আর আই পদ্ধতিতে একটি প্রদত্ত টাস্ক করার সময় মস্তিষ্কের সক্রিয়তম (অধিক বিপাকক্রিয়ারত) অংশগুলিকে চিহ্নিত করা যায়। একটি মোটর টাস্ক এ স্বাভাবিক গ্রুপ এর অংশগ্রহণ কারী দের সক্রিয়ন অংশের গড় কে (নীল রঙ চিহ্নিত) একটি অটিজম গ্রুপ এর অংশগ্রহণ কারী দের সক্রিয়ন অংশের গড় (হলুদ রঙ চিহ্নিত) এর সাথে তুলনা করা হয়েছে।

অ্যাসপারজার বৈশিষ্ট্যসমূহের জৈবনিক ও স্নায়বিক-জৈবনিক ভিত্তি সম্পর্কে এখনও যথেষ্ট জানা যাছছে না। তবে এটি প্রধানত জিনঘটিত বা বংশানুক্রমিক ফেনোটাইপ বলে মনে করা হয়, তবে এর অন্যান্য কারণ যেমন এপিজেনেটিক কারণ আছে বলে মনে করা হয়। পরিবেশগত কারণ, বিশেষতঃ গর্ভস্থ ভ্রূণ বড় হবার সময় ভ্রূণের ওপর পরিবেশগত, হরমোন-গত এবং ভুল ঔষধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ফলে এরূপ অবস্থা তৈরি হতে পারে বলে মনে করা হয়।

এছাড়া শারীরস্থানবিদ্যা (অ্যানাটমি) এবং কলাস্থানিক গঠনবিদ্যা (হিস্টোলজি ও সাইটো-আরকিটেকচার) এর পরিপ্রেক্ষিতে গবেষকরা মনে করেন মস্তিষ্কের ভাঁজ ও গঠনে সামান্য পার্থক্যের কারণে, অথবা শ্বেতবস্তুর পরিমাণ কম থাকার জন্য মস্তিষ্কের পৃথক কাজ করার কেন্দ্রগুলির পারস্পরিক যোগাযোগ দুর্বল কিংবা ভিন্ন প্রকৃতির হওয়ার কারণে, কিংবা ধূসর-বস্তু র বিতরণ (distribution) এর বিন্যাস (patterning) ভিন্ন প্রকৃতির হওয়ার কারণে, কিংবা মধ্যমস্তিষ্ক বা পশ্চাৎমস্তিষ্কের বা মস্তিষ্কের অন্য কোনও অংশ যেরকম প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স বা অরবীটো-ফ্রন্টাল কর্টেক্স ইত্যাদিতে কোনও মৃদু সমস্যা থাকার ফলে এরকমটা হতে পারে। যদিও এই জাতীয় প্রভেদ যেকোনো দু জন সাধারণ সামাজিক মানুষের মধ্যেও থাকতে পারে। তাই গঠনগত পার্থক্যই এই সমস্যার ভিত্তি কি না, তাই নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। আর একটি তত্ত্ব অনুযায়ী, মিরর নিউরোন সিস্টেম অর্থাৎ আচরণ ও ক্রিয়াকলাপ নকল করবার স্নায়ু-বর্তনী দুর্বল হওয়ার কারণে এইসকল সমস্যা সৃষ্টি হয়

শারীরবিদ্যার গবেষণায় দেখা যায় একই কাজের জন্য একজন সামাজিক ব্যক্তি এবং একজন অটিস্টিক বা অ্যাসপারজার ব্যক্তি, মস্তিষ্কের পৃথক অঞ্চল কে ব্যবহার করে থাকেন। যদিও এই জাতীয় প্রভেদ যেকোনো দু জন অটিস্টিক ব্যক্তির ক্ষেত্রে পৃথক হয় এবং এই জাতীয় প্রভেদ যেকোনো দু জন সাধারণ সামাজিক মানুষের মধ্যেও থাকতে পারে। এই পার্থক্যগুলি অনেকটা আঙ্গুলের ছাপের পার্থক্যের সাথে তুলনীয় ।

লক্ষণসমূহ নিরূপণ

প্রাথমিক ভাবে কম বয়সে সমস্যাগুলি বুঝতে পারলে শিশুর বিকাশে সাহায্য করা যেতে পারে। অনেক বড় বয়সে এই সমস্যাগুলি ধরা পড়লে বিকাশে বিশেষ সাহায্য করা যায়না, কিন্তু আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারকে প্রশিক্ষণ, অনুশীলন ও বিজ্ঞানসম্মত পরামর্শদান ও আলোচনা (কাউন্সেলিং) যেমন কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপী র মাধ্যমে বাস্তব পরিস্থিতি তে লঢ়াই করতে সাহায্য করা যায়। প্রাথমিক ভাবে, বাবা-মা, পরিবার-পরিজন, কিংবা বিদ্যালয়ের কোনও সংবেদনশীল শিক্ষকরা সমস্যাটির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেন এবং কোনও অটিজম বিশেষজ্ঞ র কাছে পাঠাতে পারেন। এরপর সাধারণ কথাবার্তা, ইন্টারভিউ এবং বিভিন্ন মনঃসমীক্ষণ পরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যাগুলির প্রকৃতি ও পরিধি নিরূপণ করা হয় ।

রোগনির্ণয়ে ত্রুটি (Misdiagnosis) এবং চিকিৎসায় ত্রুটি (Mistreatment)

অটিজম ও অ্যাসপারগার সচেতনতার অভাবের ফলে, এবং এই ধরনের লক্ষণসমূহের বিরলতা ও অস্পষ্টতার ফলে; আক্রান্ত ব্যক্তি, তার পরিজন, শিক্ষকমণ্ডলী, ডাক্তার, মনঃচিকিৎসক এবং মনোবিদ- প্রায় প্রত্যেকেই কোনও না কোনও ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন। মৃদু অটিজম ও অ্যাসপারগার সচেতনতা একটি অত্যন্তই নতুন এবং আধুনিক বিষয় যা এখনও অনেকাংশে গবেষণা স্তরে রয়েছে এবং বিশেষ করে কোনও কোনও স্থানে অটিজম ও অ্যাসপারগার সচেতনতার অভাব এতই প্রকট যে অনেক বিশেষজ্ঞঃ মনঃচিকিৎসক এবং মনোবিদই মৃদু অটিজম এর বিষয়টি সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল নন। এছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তির শৈশবের বিশদ তথ্য অনেক সময় পাওয়াই যায় না কিংবা লভ্য হলেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয় না, এবং আক্রান্ত ব্যক্তির পরবর্তী আচরণ অন্য পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যাওয়ার ফলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মূল লক্ষণসমূহ আপাতভাবে পরিবর্তিত দেখায়। অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেই জানেন না তার সমস্যাটা কোথায়, যেমন হয়ত একজন NVLD ব্যক্তি কখনও জানতেনই না যে একটি কথোপকথন এর অধিকাংশটা জুড়ে থাকে মুখাবয়ব, অভিব্যক্তি ও অলিখিত ভাষা, যা তিনি বুঝতে পারেননি এতদিন; ফলস্বরূপ এই ব্যক্তি হয়ত মনঃচিকিৎসক এর কাছে গেলেন দুশ্চিন্তা, ক্লান্তি অথবা কোনও সাম্প্রতিক ভুল বোঝাবুঝির ঘটনা নিয়ে। এক্ষেত্রে একজন মনঃচিকিৎসক এর কাছে এটা কল্পনা করাই কষ্টকর হতে পারে, যে কতদিন ধরে কীভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একইভাবে অ্যাসপারগার ব্যক্তির বিশেষ দক্ষতাগুলিও কখনও অনাবিষ্কৃত থাকতে পারে। এছাড়া সচরাচর একটি দুরুহতম পরিস্থিতি দেখা দেয় যখন অনেক অভিভাবকও তার সন্তানকে বোঝার চেষ্টা করেননা এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করাকে লজ্জাজনক বা অপমানজনক বলে ভ্রম করেন। এছাড়া অ্যাসপারগার এর সাথে সাধারণতওঃ অন্যান্য শারীরিক ও স্নায়বিক (Neurosis) অসুস্থতার সমাপতন (Co-morbidity) থাকে যেরকম অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার, নানাপ্রকার উদ্বেগ (উৎকণ্ঠা), আশঙ্কা, দুশ্চিন্তা, উত্তেজনা, মধ্যরাতের অনিদ্রা, বিষাদ, মনোদৈহিক অসুস্থতা, প্রবল মানসিক আত্মদংশন ও আত্মহত্যা-প্রবণতা ইত্যাদি। অনেকক্ষেত্রে এই সমাপতিত উপসর্গ গুলি আসলে বাস্তব জীবনের দীর্ঘ লঢ়াই এর ফল। কিছু ক্ষেত্রে মূল লক্ষণসমষ্টিকে গুরুত্ব বা স্বীকৃতি না দিয়ে এই সমাপতিত উপসর্গগুলিকে প্রচুর ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয় যাতে বিরূপ ফল পাওয়া যেতে পারে। আবার বিপরীতপ্রান্তে অমনোযোগ-অতিচঞ্চলতা ব্যাধি বা এডিএইচডি, কিংবা প্রতিভাবান (gifted/ talented) অথচ সামাজিক শিশুকে কিংবা কমবুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি কে অ্যাসপারগারের সংলক্ষণ বলে ভ্রম হতে পারে, এবং এইসমস্ত অবস্থার প্রভেদ অস্পষ্টও হতে পারে।

চিকিৎসা এবং সহায়তা

অ্যাসপারগারের সংলক্ষণের প্রধান চিকিৎসা হল উপযুক্ত শান্তিপূর্ণ সমানুভূতিশীল পরিবেশ এবং বিজ্ঞানসম্মত ও উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করে দেওয়া। অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ-বিদ্যালয়ে পাঠাতে হতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশেষ-বিদ্যালয়ে অ্যাসপারগার শিক্ষার্থীর কৌতূহল মেটানোর মতো পরিকাঠামো, বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার ও বিষয়-বিশেষজ্ঞ শিক্ষক এর অভাব থাকে। অপরদিকে সাধারণ বিদ্যালয়ের পরিবেশ অত্যন্ত সমানুভুতি-বিহীন হয় যেখানে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে অতি দ্রুতবেগে পড়াশোনা ও উন্নতি সাধন করে দ্যাখাতে হয় , এবং সাধারণ বিদ্যালয়ে একসাথে অনেক রকম বিশয় নিয়ে পড়াশোনা করতে করতে বিশেষ দক্ষতার জায়গাগুলো অনভ্যস্ত হয়ে পড়ে এবং প্রতিনিয়তঃ রূপক ভাষার মর্মোদ্ধার করতে হয়। এছাড়া সাধারণ বিদ্যালয়ে খেলাচ্ছলে পড়াশোনা শেখানর অভাব থাকে। ফলে অ্যাসপারগার শিক্ষার্থীর জন্য সাধারণ বিদ্যালয় ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বিদ্যালয় দুই জায়গাতেই মানিয়ে নিতে অসুবিধা হয়। বর্তমানে এই সমস্যার সমাধান মিলছে না।

চিকিৎসার একটি দিক হল অতি অবশ্যই অ্যাসপারগারের সংলক্ষণে আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারকে প্রশিক্ষণ, অনুশীলন ও বিজ্ঞানসম্মত পরামর্শদান ও আলোচনা (কাউন্সেলিং) যেমন সংজ্ঞানাত্মক আচরণমূলক চিকিৎসার (কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি) মাধ্যমে বাস্তব পরিস্থিতিতে লড়াই করতে সাহায্য করা। এ ছাড়া কোনও কোনও মনোচিকিৎসক মনে করেন কিছু মৃদু মাত্রার ওষুধ প্রয়োগ করে স্নায়ু-প্রেরকের ভারসাম্য ফিরিয়ে এনে উত্তেজনা প্রশমন, সাইকোটিক ও নিউরোটিক আচরণের নিয়ন্ত্রণ ও অবসেসিভ কমপালসিভ আচরণের নিয়ন্ত্রণ এর প্রয়োজনীয়তা আছে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার ধারণা

রাস্তাঘাট, যানবাহন ও কর্মস্থলে মানচিত্র, দিকনির্দেশ ও অন্যান্য সুবিধার প্রয়োজনীয়তা

এ ধরনের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব

পৃথিবীর ইতিহাসে নাম উল্লিখিত আছে এরকম অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিতব কে অ্যাসপারজার বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন বলে চিহ্নিত করা গেছে, যাদের একটা বড়ো অংশই প্রাচীন সময়ের । বহু ক্ষেত্রেই এঁরা বিজ্ঞানী, দার্শনিক, গণিতজ্ঞ কিংবা যন্ত্রবিদ। কিন্তু অন্যান্য নানা পেশা যেরকম চিত্রকর, ভাস্কর, কারিগর, মিস্ত্রি, সাহিত্যিক, সঙ্গীতজ্ঞ এমনকি ক্রীড়াবিদ ও যুদ্ধবিমান পরিচালক ও হতে পারেন। বিজ্ঞানী নিউটন, আইনস্টাইন, লিয়নারদো দ্য ভিঞ্চি, চার্লস ডারউইন এবং সঙ্গীতজ্ঞ উলফগ্যাং আমিদিউস মোজার্ট কে অ্যাসপারজার বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। আবার এরকম মানুষরাই উপযুক্ত সহায়তা ও প্রশিক্ষণ না পেলে ব্যর্থতা ও বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যেতে পারেন অতি সহজেই। বিজ্ঞানী সীমন ব্যারন কোহেন এর ভাষায়, অ্যাসপারগার লক্ষণযুক্ত ব্যক্তির বিশদ পর্যবেক্ষণ করবার দক্ষতাগুলি দৈনন্দিন সামাজিক জীবনে কোনও কাজে আসে না, কিন্তু যখন জগতটা হয় গণিত, যন্ত্রগণক-বিদ্যা, নথিবদ্ধকরণ, সঙ্গীত, ভাষাতত্ব, যন্ত্রবিদ্যা কিংবা বিজ্ঞান এর; উপযুক্ত সহায়তা পেলে অ্যাসপারগার ব্যক্তিরা সেই জগতে সফল হয়ে ওঠার ক্ষমতা বহন করে।

সামাজিক অবস্থান

অ্যাসপারগারের সংলক্ষণ 

বিতর্ক

আরও দেখুন

আরো পড়ুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

https://www.autism.org.uk/about/what-is/asperger.aspx

Tags:

অ্যাসপারগারের সংলক্ষণ শ্রেণিবিভাগঅ্যাসপারগারের সংলক্ষণ বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণসমূহঅ্যাসপারগারের সংলক্ষণ নামের ব্যুৎপত্তি এবং ইতিহাসঅ্যাসপারগারের সংলক্ষণ জৈবনিক ও স্নায়বিক-জৈবনিক ভিত্তিঅ্যাসপারগারের সংলক্ষণ লক্ষণসমূহ নিরূপণঅ্যাসপারগারের সংলক্ষণ চিকিৎসা এবং সহায়তাঅ্যাসপারগারের সংলক্ষণ এ ধরনের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বঅ্যাসপারগারের সংলক্ষণ সামাজিক অবস্থানঅ্যাসপারগারের সংলক্ষণ বিতর্কঅ্যাসপারগারের সংলক্ষণ আরও দেখুনঅ্যাসপারগারের সংলক্ষণ আরো পড়ুনঅ্যাসপারগারের সংলক্ষণ তথ্যসূত্রঅ্যাসপারগারের সংলক্ষণ বহিঃসংযোগঅ্যাসপারগারের সংলক্ষণআত্মসংবৃতি

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

লগইননিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রমার্কসবাদমহাদেশ অনুযায়ী সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং নির্ভরশীল অঞ্চলসমূহের তালিকাবাংলা লিপিসেজদার আয়াতশবে কদর২৭ মার্চপর্যায় সারণী (লেখ্যরুপ)আহসান মঞ্জিলমৌলসমূহের ইলেকট্রন বিন্যাস (উপাত্ত পাতা)লাহোর প্রস্তাবধানআবুল আ'লা মওদুদীআমাশয়পৃথিবীমাইকেল মধুসূদন দত্তভারতের প্রধানমন্ত্রীদের তালিকাসজনেপশ্চিমবঙ্গের জেলাজন্ডিসদুর্গাপূজাপলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমপানিচেক প্রজাতন্ত্রপ্রোফেসর শঙ্কুতেজস্ক্রিয়তাগ্রাহামের সূত্রবিতর নামাজশুক্রাণুবিকাশশাকিব খান১ (সংখ্যা)খুলনাওয়াজ মাহফিলবুধ গ্রহবৃষ্টিএপেক্সমুকেশ আম্বানিনরেন্দ্র মোদীওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবওয়েব ব্রাউজারলুয়ান্ডাবলজেলা প্রশাসকইউরোপপায়ুসঙ্গমবাংলাদেশের জেলাবাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলরাদারফোর্ড পরমাণু মডেলঐশ্বর্যা রাইছিয়াত্তরের মন্বন্তরকুষ্টিয়া জেলাজামালপুর জেলামার্কিন যুক্তরাষ্ট্রউত্তম কুমারইসলামের ইতিহাসকোষ নিউক্লিয়াসবাংলা স্বরবর্ণচর্যাপদট্রাভিস হেডহৃৎপিণ্ডদৈনিক ইত্তেফাকত্বরণ২০২৪ কোপা আমেরিকাআবু বকরপ্রীতি জিনতামালদ্বীপহামমুহাম্মাদের বংশধারামালাউইদ্বিতীয় মুরাদজিয়াউর রহমানপ্রথম উসমানরাগ (সংগীত)মৌলিক সংখ্যাবর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্র🡆 More