যোনিস্রাব

যোনিস্রাব (ইংরেজি: Vaginal Discharge) হলো জল, কোষ ও ব্যাকটেরিয়ার মিশ্রন যা যোনিকে পিচ্ছিল করে ও জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। যোনি ও কারভিক্সের কোষগুলো অনর্গল এ মিশ্রনটি তৈরী করতে থাকে এবং যোনির মুখ দিয়ে বের হয়। সার্ভিক্স ও যোনির কোষসমূহ অনর্গল এমন মিশ্রন তৈরী করতে থাকে এবং যোনির মুখ দিয়ে তা বের হতে থাকে। এ মিশ্রনের গঠন, পরিমাণ ও মান এক বয়স থেকে অন্যবয়সে এবং একজন থেকে অন্যজনে আলাদা হয়। সাধারণ যোনিস্রাব পাতলা বা ঘন, পরিচ্ছন্ন বা শাদা রঙের মত হতে পারে। সাধারণ যোনিস্রাব পরিমাণে বেশি হতে পারে, তবে এর বিশেষ কোন গন্ধ নেই, এবং ব্যথা বা চুলকানির সাথে কোন সম্পর্ক নেই। যখন বেশিরভাগ স্রাবই শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ, কিছু স্রাব রোগসঞ্চার বা সংক্রমনের অংশ। যোনিস্রাবের পরিমানের পরিবর্তন বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন, যোনি ঈস্ট সংক্রমন, ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস, ও যৌনসংক্রামক রোগ। অস্বাভাবিক যোনিস্রাবের ধরন বিভিন্ন হতে পারে, স্বাভাবিক কিছু বৈশিষ্ট্য হলো, রঙের পরিবর্তন, খারাপ গন্ধ, চুলকানো, পোড়ভাব, তলপেটে ব্যথা,যৌনমিলনের সময় ব্যথা, ইত্যাদি।

যোনিস্রাব
যোনিস্রাব
মেডিকেল পরীক্ষার সময় সাধারণ যোনি ও সার্ভিক্স, যেখানে যোনি রস যোনির দেয়াল, সার্ভিক্স থেকে নিঃসৃত হচ্ছে।
বিশেষত্বপ্রসূতিবিজ্ঞান

স্বাভাবিক স্রাব

যোনিস্রাব 
Stretchy discharge around ovulation.
যোনিস্রাব 
Thick discharge around menstruation.

সাধারণ যোনিস্রাব সার্ভিকেল শ্লেষ্মা, যোনিরস, মৃত যোনি ও সার্ভিকেল কোষ ও ব্যাক্টেরিয়ার সমন্বয়ে তৈরী।

সার্ভিক্স গ্রন্থি থেকে তৈরী শ্লেষ্মা থেকেই যোনিস্রাবের অধিকাংশ তরল অংশ আসে। যোনি দেয়াল থেকে ট্রান্সুডেট, স্কিন ও বার্থোলিন গ্রন্থি থেকে বাকী অংশ আসে। কঠিন উপাদানগুলো যোনি দেয়াল ও সার্ভিক্সের উঁচু নিচু এপিথেলিয়াল কোষ ও যোনিতে থাকা কিছু ব্যাকটেরিয়া থেকে আসে। যোনিতে থাকা এসব ব্যাকটেরিয়া সাধারণত কোন রোগ ঘটায় না। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষ লেকটিক এসিড ও হায়ড্রোজেন পেরোক্সাইড উৎপাদনের মাধ্যমে কোন ব্যক্তিকে তারা অন্য সংক্রামক ও আক্রমণাত্মক ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে।

সাধারণ যোনিস্রাব সাধারণত পরিষ্কার, শাদা বা আবছায়া শাদা হয়ে থাকে। এ স্রাবের ঘনত্ব মেঘাচ্ছন্ন থেকে ঝাড়যুক্ত হতে পারে, গন্ধ একেবারে নাও থাকতে পারে বা থাকলেও খুব অল্প। যোনির একেবারে গভীরতম অংশে (পোস্টেরিওর ফরনিক্স) স্রাবের অধিকাংশ অংশ তৈরী হয় এবং অভিকর্ষ বলের প্রভাবে একদিনের মধ্যে তা বের হয়ে আসে। একজন সাধারণ প্রজনন ক্ষমতাসম্পন্ন মহিলা প্রতিদিন ১.৫ গ্রাম(আধ চামচ) যোনিস্রাব তৈরী করে।

যৌন উত্তেজনা ও মিলনের সময় যোনির চারপাশের ধমনী ফুলে উঠায় তরলের পরিমাণ বেড়ে যায়। ধমনীর এমন ফুলে উঠা যোনির দেয়ালগুলোতে ট্রান্সুডেটের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ট্রান্সুডেটের পিএইচ নিরপেক্ষ হওয়ায়, এর পরিমাণ বেড়ে যাওয়াতে যোনির পিএইচও আরও নিরপেক্ষ হয়ে যায়। বীর্যেরও প্রাথমিক পিএইচ থাকায়, এটি ৮ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে যোনির অম্লত্ব প্রশমিত করে রাখে।

একজন ব্যক্তি যখন যৌন ও প্রজনন উন্নয়নের ভিন্ন ভিন্ন ধাপের ভেতর দিয়ে যায় যোনিস্রাবের পরিমাণ ও ঘনত্বেরও সাথে সাথে পরিবর্তন হয়।  

নবজাতক

নবজাতক থাকা অবস্থায় জন্মের প্রথম কিছুদিন পর যোনিস্রাব ঘটে। এ সময়ের যোনিস্রাব সাদা বা শ্লেষ্মার মত দেখতে পরিচ্ছন্ন হতে পারে, বা রক্তিম হওয়াও স্বাভাবিক।

পেডিয়াট্রিক

বয়ঃসন্ধির পূর্বে মেয়েদের যোনি আরও পাতলা হয় এবং ভিন্ন ব্যাক্টেরিয়াল ফ্লোরা থাকে। রজোদর্শনারম্ভের পূর্বে মেয়েদের যোনিস্রাবের অম্লত্ব ৬-৮ হয়, অর্থাৎ নিরপেক্ষ থেকে ক্ষারীয়।  

বয়ঃসন্ধি

বয়ঃসন্ধির সময় ডিম্বাশয় সমূহ থেকে এস্ট্রোজেন হরমোন তৈরী শুরু হয়। এমনকি রজঃস্রাব শুরু হওয়ার আগেও(আদ্যঋতু শুরু ১২ মাস আগে, সাধারণত স্তন কুড়ি উন্নয়নের সময়)) যোনিস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং এর গঠন ও ঘনত্বে পরিবর্তন আসে। এস্ট্রোজেন যোনি কলাসমূহকে পরিপক্কতা দেয় এবং যোনির এপিথেলিয়াল কোষসমূহ দ্বারা গ্লাইকোজেনের বৃদ্ধির কারণও এস্ট্রোজেন। এমনকি এসময় যোনির অম্লত্ব ৩.৫ থেকে ৪.৭ এর মধ্যে থাকে।

রজঃস্রাব চক্র

রজঃস্রাব চক্র যত এগিয়ে যায়, যোনিস্রাবের পরিমাণ ও ধারাবাহিকতাও ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়। ঋতুস্রাব শেষের পরের দিনই, যোনিস্রাবের পরিমাণ একেবারে কমে যায়, এবং তা সাধারণত বৈশিষ্ট্যে আঠালো ও ঘন হয়। ডিম্বস্ফোটনের সময় ইস্ট্রোজেনের পরিমাণের বৃদ্ধি সাথে সাথে যোনিস্রাবের পরিমাণেও বৃদ্ধি ঘটায়। ডিম্বস্ফোটনের সময় স্রাবের পরিমাণ রজঃস্রাবের পর পর যে স্রাব হয়, তার তুলনায় প্রায় ৩০ গুণ বেশি হয়। এ সময় রজঃস্রাবের রঙ ও ঘনত্বও পরিবর্তিত হয়, স্থিতিস্থাপক ঘনত্বের সাথে সাথে তা আরও পরিচ্ছন্ন রঙের হয়ে উঠে। ডিম্বস্ফোটনের পর শরীরের প্রোজেস্টেরনের পরিমাণ কমে যায়, সাথে সাথে যোনিস্রাবের পরিমাণও কমে আসে। স্রাবের ঘনত্ব আবার বেড়ে যায় এ সময়, রঙও কিছুটা ঘোলাটে হয়ে আসে।

গর্ভাবস্থা

গর্ভাবস্থায় শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় যোনিস্রাবও বেড়ে যায়। এ স্রাব সাধারণত শাদা বা হালকা ধূসর হয়ে থাকে এবং এর টক জাতীয় একটা গন্ধ থাকতে পারে। গর্ভাবস্থায় সাধারণে স্রাবে কোন রক্ত থাকে না।

মেনোপজ

মেনোপজের সাথে ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ কমে যায়, যোনিস্রাবের পরিমাণ প্রাক-কৈশোরের অবস্থায় এসে যায়।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

শ্রেণীবিন্যাস
বহিঃস্থ তথ্যসংস্থান
  • মেডলাইনপ্লাস: 003158

Tags:

যোনিস্রাব স্বাভাবিক স্রাবযোনিস্রাব আরও দেখুনযোনিস্রাব তথ্যসূত্রযোনিস্রাব বহিঃসংযোগযোনিস্রাবইংরেজি ভাষাকোষব্যাকটেরিয়াব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

২০২৪ কোপা আমেরিকাবাংলাদেশের জাতীয় পতাকাজান্নাতুল ফেরদৌস পিয়াবৃত্তবাংলাদেশের সর্বাধিক ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রসমূহের তালিকাহাদিসজাতিসংঘকৃষ্ণচূড়াবাংলাদেশের সংবিধানহরে কৃষ্ণ (মন্ত্র)ভূমি পরিমাপঘনীভবনলিঙ্গ উত্থান ত্রুটিসূর্যবাংলাদেশের উপজেলার তালিকা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপকম্পিউটার কিবোর্ডরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলভিসানারায়ণগঞ্জ জেলাবাঙালি জাতিঘোড়াআলী খামেনেয়ীকাতারজাকির নায়েকসহজ পাঠ (বই)জাতিসংঘের মহাসচিবব্যবস্থাপনাশেখ মুজিবুর রহমানউমাইয়া খিলাফতবিজ্ঞাপনআমলাতন্ত্রসালমান শাহইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজিআকিজ গ্রুপদ্বাদশ জাতীয় সংসদ সদস্যদের তালিকাহানিফ সংকেতগাঁজা (মাদক)ধরিত্রী দিবসসানি লিওনরশিদ চৌধুরীঢাকা মেট্রোরেলের স্টেশনের তালিকাসোনালী ব্যাংক পিএলসিমোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকাঠগোলাপবাংলাদেশের ব্যাংকসমূহের তালিকানামাজের নিয়মাবলীবিটিএসহৃৎপিণ্ডগোলাপগ্রামীণ ব্যাংকপানিপথের তৃতীয় যুদ্ধসমাজকর্মউপন্যাসবাংলাদেশ পুলিশরাজস্থান রয়্যালসবাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ভূগোলপশ্চিমবঙ্গে ভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪ইব্রাহিম (নবী)ফরাসি বিপ্লবযুক্তরাজ্যইসলামরক্তশূন্যতাআল হিলাল সৌদি ফুটবল ক্লাবআলোক বর্ষহযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরশেষের কবিতাজিএসটি ভর্তি পরীক্ষামনোবিজ্ঞানময়মনসিংহকলকাতা নাইট রাইডার্সকুমিল্লা জেলালগইনপেশাব্রিটিশ রাজের ইতিহাসটেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাজীবমণ্ডল🡆 More