নোয়াখালী শহর: বাংলাদেশের বিলুপ্ত শহর

নোয়াখালী শহর বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলায় অবস্থিত একটি বিলুপ্ত শহর। বিংশ শতকের

৫০ এর দশকে এটি নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। বাংলাদেশে নোয়াখালীই একমাত্র জেলা, যার জেলা শহরের নাম জেলার নামে নয়। নোয়াখালী’র জেলা শহরের নাম মাইজদী

নোয়াখালী শহরের ইতিহাস

নোয়াখালী জেলার পত্তন হয় ১৮২১ সালে। ব্রিটিশ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ ১৮২২ সালে নোয়াখালীর জন্যে একটি জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেটের পদ সৃষ্টি করে। একজন স্বতন্ত্র কালেকটর নিযুক্ত হয় ১৮৩০ সালে। জেলা হিসেবে নোয়াখালী পূর্ণ মর্যাদা লাভ করে ১৮৭৬ সালে। ঐ বছরেই নোয়াখালীতে একজন সেসন জজ ও সিভিল জজ নিয়োগ করা হয় এবং প্রথম পৌরসভা গঠিত হয়। সুধারাম মজুমদার নামে এক ব্যক্তির দানকৃত স্থানে শহরটি স্থাপিত হয়েছিল বলে প্রথম থেকেই এই শহর সুধারাম নামে পরিচিতি লাভ করে।

বিংশ শতকের চল্লিশের দশকে নোয়াখালী অনেক ছোট ছিলো। শহরটি আরো দক্ষিণে বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে গড়ে উঠেছিলো। কালক্রমে নদী ভাঙনের ফলে উত্তরে সরে আসে। নদী ভাঙনের ফলে কালক্রমে নোয়াখালীর মূল শহরটি উত্তরাংশ অর্থাৎ সোনাপুর হতে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

নোয়াখালী শহর নদীগর্ভে বিলুপ্তির কাজটি ত্বরান্বিত করে নোয়াখালী খাল। সাগরের প্রবল জোয়ার এই খালটির মধ্যদিয়ে এসে জেলার তীরবর্তী এলাকায় প্রচন্ডভাবে আঘাত হানতো। নদীর ভাঙন যখন নোয়াখালী শহরকে গ্রাস করতে উদ্যত ঠিক সে সময়ে দীর্ঘ প্রবাস জীবনযাপনের পর সুধারামে ফিরে এসেছিলেন খ্যাতনামা প্রকৌশলী ওবায়দুল্লাহ। নদীর ভাঙন থেকে নোয়াখালী শহরকে রক্ষার জন্য তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে দেন দরবার শুরু করেন। কিন্তু তৎকালীন সরকার বাঁধ দিয়ে শহর রক্ষা করা সম্ভব নয় বলে অভিমত প্রদান করলে প্রকৌশলী ওবায়দুল্লাহ নিজ উদ্যোগে ও অর্থব্যয়ে কয়েক হাজার শ্রমিকের সাহায্যে মন্তিয়ারঘোনার মুখে একটা বিরাট বাঁধ নির্মাণ করেন। ওবায়দুল্লাহর মৃত্যুর পর নানা কারণে সেই বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণের কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অচিরেই শহরটি মেঘনায় বিলীন হয়ে যায়। নদী ভাঙনের পর সোনাপুর থেকে দত্তের হাট পর্যন্ত পুরনো শহর তথা পৌরএলাকার ভগ্নাংশটুকুই অবশিষ্ট থাকে। কালিতারা বাজারের কাছে মিউনিসিপ্যালিটির যে শেষ লাইটপোস্ট ছিলো, ঠিক ওখানে গিয়েই নদীর ভাঙনটা বন্ধ হয়ে যায়। বিচ্ছিন্ন উপকূল হিসেবে সোনাপুর রক্ষা পেলো। আর মূল শহরটা শুধু পৌরসভা সীমারেখা বরাবর বিলুপ্ত হয়ে যায়।

১৯২২ থেকে ১৯৩২ এবং ১৯৪৮ থেকে পর্যায়ক্রমে মোট চারদফা ভাঙনের পর নোয়াখালী শহরটি হারিয়ে যায় ভূ-পৃষ্ঠ থেকে।

পুরনো শহর নদী গর্ভে বিলুপ্ত হওয়ার পর ১৯৫০ সালে জেলার সদর দপ্তর অস্থায়ীভাবে মাইজদীতে স্থানান্তর করা হয়। ক্রমান্বয়ে এখানে বসতি ও জনপদ গড়ে উঠে। ১৯৫৩ সালে শহরের পুরনো এলাকা কালিতারা, সোনাপুর ও মাইজদীসহ কাদির হানিফ ইউনিয়নের কয়েকটি মৌজা নিয়ে গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে নোয়াখালী পৌর এলাকা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সুদীর্ঘ প্রায় একযুগ পর্যন্ত মাইজদীকে নোয়াখালী জেলার সদরদপ্তর হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি বিতর্কিত অবস্থায় ছিলো। অবশেষে ১৯৬২ সালে মাইজদীকে নোয়াখালী জেলার স্থায়ী সদর দপ্তর হিসাবে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।

পঞ্চাশের দশকে মূল নোয়াখালী মেঘনা আর সাগরে বিলিন হয়ে গেলে ব্রিটিশদের পরিকলপনায় নতুন করে এ শহরের পত্তন হয়। নোয়াখালী শহর যখন ভেঙ্গে যাচ্ছিলো তখন মাইজদী মৌজায় ধান ক্ষেত আর খোলা প্রান্তরে পুরাতন শহরের ভাঙ্গা অফিস আদালত গুলো এখানে এনে স্থাপন করা হয়। শহরের প্রাণ কেন্দ্রে প্রায় ষোলো একর জুড়ে কাটা হয় এক বিশাল দীঘি। লোক মুখে প্রচলিত হয় বড় দীঘি নামে। সে দীঘির চতুর্দিকে চক্রাকারে বানানো হয় ইট সুরকীর রাস্তা। সে রাস্তাকে ঘিরে বাংলো প্যাটার্ণে তৈরী হয় সরকারী সব দপ্তর। এই দীঘিটি ব্যবহৃত হতো মূলত: শহরে জলাধার হিসে্বে, দীঘিতে পাম্প লাগিয়ে বিভিন্ন সরকারি অফিস- আদালত এবং আবাসিক এলাকায় পানি-সরবরাহ করা হতো। পাশাপাশি দীঘিটি ছিলো নতুন গড়ে ওঠা শহুরেদের একমাত্র চিত্তাকর্ষণে স্থান।

বর্তমানে নদী আর কাছে নেই। চর পড়তে পড়তে দক্ষিণে সরে গেছে চল্লিশ কিলোমিটারের ও বেশি। নদীগর্ভ থেকে জেগে উঠেছে বিশাল চরাঞ্চল এবং সেখানে নতুন করে জনবসতি গড়ে উঠেছে।

তথ্যসূত্র

  • নোয়াখালী পৌরসভা পরিক্রমা: মোহাম্মদ শামছুল আলম
  • নোয়াখালীর ঐতিহাসিক ও ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য: সানাউল্লাহ নূরী
  • মেঘনা গর্ভে নোয়াখালীর প্রাচীন শহর: সালাদিন
  • স্মারকগ্রন্থ “নোয়াখালী": নোয়াখালী পৌরসভা
  • মাইজদী যখন নোয়াখালী, মাহমুদুল হক ফয়েজ

Tags:

নোয়াখালী জেলাবাংলাদেশ

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

সজনেহরপ্পাযিনাআইসোটোপ২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগআরবি বর্ণমালাএন্দ্রিক ফেলিপেচেক প্রজাতন্ত্রসোনালী ব্যাংক পিএলসিখেজুরবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মরত জেনারেলদের তালিকাআন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসুফিয়া কামালরাদারফোর্ড পরমাণু মডেলঅশোকপ্রধান পাতাসিঙ্গাপুরজাতীয় গণহত্যা স্মরণ দিবসবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধপলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমমধুমতি এক্সপ্রেসইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনচতুর্থ শিল্প বিপ্লবশিক্ষাচন্দ্রযান-৩ফুলপূরণবাচক সংখ্যা (ভাষাতত্ত্ব)মহাভারতকীর্তি আজাদইস্তেখারার নামাজমুঘল সাম্রাজ্যবিশেষণহার্দিক পাণ্ড্যদুরুদআমর ইবনে হিশামতাজমহল২৮ মার্চমাদার টেরিজাজাযাকাল্লাহদৈনিক ইত্তেফাক৬৯ (যৌনাসন)ভৌগোলিক নির্দেশকট্রাভিস হেডহিন্দুধর্মইতিহাসবাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাতথ্যছিয়াত্তরের মন্বন্তরপ্রেমব্যোমযাত্রীর ডায়রিকরস্পেন জাতীয় ফুটবল দলএম এ ওয়াজেদ মিয়াতাওরাতদেব (অভিনেতা)যাকাতকোষ (জীববিজ্ঞান)রক্তের গ্রুপমির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরশিয়া ইসলামঅভিষেক শর্মা (পাঞ্জাবের ক্রিকেটার)খালিদ বিন ওয়ালিদআসরের নামাজডাচ্-বাংলা ব্যাংক পিএলসিরামমোহন রায়বাংলাদেশ বিমান বাহিনীপুণ্য শুক্রবারসিদরাতুল মুনতাহাগাজওয়াতুল হিন্দপ্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারসমাজফরাসি বিপ্লবের পূর্বের অবস্থাইউরোপমহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রমুনাফিকভুটানসার্বিয়ানরেন্দ্র মোদী🡆 More