রামায়ণ নীল

হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণ অনুসারে নীল (সংস্কৃত ভাষার দেবনাগরী লিপিতে: नील), ছিলেন অগ্নির পুত্র, যার নামের আক্ষরিক অর্থ নীলবর্ণ। মহাকাব্য রামায়ণে স্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায় যে বিষ্ণুর অবতার, অযোধ্যার রাজা দশরথের জ্যেষ্ঠ পুত্র রাম পিতৃসত্য পালনার্থে বনবাস নিলে তার স্ত্রী সীতাকে লঙ্কাদ্বীপের রাক্ষস রাজা রাবণ অপহরণ করেন। সীতাকে অনুসন্ধানকালে বানররাজ সুগ্রীবের সাথে তার মিত্রতা হয় ও তিনি বানরদের সহায়তায় বানরসেনা তৈরী করেন। নীল ছিলেন এই বানরদলের গোষ্ঠীপ্রধান। তিনি ছিলেন কিষ্কিন্ধ্যার বানররাজ সুগ্রীবের বানরসেনার সর্বাধিনায়ক। রাম রাবণের যুদ্ধে রামের পক্ষে বানরসেনার সেনাধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন ও লঙ্কার রাজা রাবণের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নেওয়া একাধিক রাক্ষস নিধন করেন।

নীল
নীল
বালির চিত্রপটে নীল
প্রজাতিবানর

যদিও মূল রামায়ণ অনুসারে রামায়ণের মূখ্য চরিত্র রামের লঙ্কা গমনের সুবিধার জন্য সমুদ্রের ওপর নির্মিত ভারতের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রামেশ্বরম থেকে লঙ্কার (যা বর্তমানে শ্রীলঙ্কা রাষ্ট্র) মান্নার অবধি বিস্তৃত বিশাল একটি সেতু নির্মাণের অন্যতম পরিকল্পক ছিলেন বানর নল। একাধিক সংস্করণভেদে এই রামসেতু নির্মাণে রামের বানর সেনার অপর এক প্রযৌক্তিক বানর ও নলের ভ্রাতা হিসাবে নীলের নামও পাওয়া যায়।

পটভূমি

রামায়ণে বানর সেনাধ্যক্ষ নীলকে অগ্নিদেবের পুত্র হিসাবে বর্ণিত করা হয়েছে। রামের বানর সেনার মধ্যে তিনিই ছিলেন প্রথম উদ্দীপ্ত, খ্যাতিসম্পন্ন ও পরাক্রমশালী বানর। রামায়ণের মুখ্য চরিত্র রামের স্ত্রী সীতার লঙ্কার রাক্ষস রাজা রাবণের দ্বারা অপহরণের পর তাকে উদ্ধার করতে যারা সাহায্য করেছিলেন তাদের মধ্যে নীল ছিলেন অন্যতম উল্লেখযোগ্য। রামায়ণের বিভিন্ন সংস্করণ বিভিন্ন গল্পের মাধ্যমে নীলের চরিত্রের বিবরণ করেছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

সীতার অনুসন্ধান

রামায়ণে নীলকে বর্ণিত করা হয়েছে বানররাজ সুগ্রীবের আজ্ঞাবাহী অধস্তন এবং তার বানর সেনার সর্বাধিনায়ক হিসাবে। সুগ্রীব তার পরম মিত্র রামের অপহৃত স্ত্রী সীতাকে অনুসন্ধান করতে নীলকে আদেশ করেন যেন সে বানর রাজ্যের সমস্ত বানরকে একত্রিত করে। মহাকাব্যে বানররাজ্য কিষ্কিন্ধ্যা থেকে নির্দিষ্টভাবে দক্ষিণ পথগামী বানর দলটির নির্বাচিত দলপতি হিসাবে নীলের নাম রয়েছে। মহাভারতেও একাধিক পংক্তিতে সীতার অনুসন্ধানে নীলের অবদানের কথার উল্লেখ পাওয়া যায়।

রামায়ণে বানর সেনার মধ্যে যে চারজন বীর ভারতীয় মূল ভূখণ্ড থেকে এক লাফে অনায়াসে লঙ্কা অবধি পৌঁছানোর ক্ষমতা রাখে তাদের মধ্যে নীল ছিলেন অন্যতম। কাব্য প্রসঙ্গে শেষ পর্যন্ত রামভক্ত হনুমান এবং বানর সেনাধ্যক্ষ নীলই সীতার সন্ধানে লঙ্কা যেতে সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। লঙ্কা যাওয়ার জন্য বানররাজ সুগ্রীব নীলকে পর্যাপ্ত খাদ্য সহজলভ্য এমন একটি পথ নির্বাচন করতে বলেছিলেন। সুগ্রীব এবং নীল উভয়ই বানর সৈন্যের নির্দিষ্ট গতিবিধি নজর রাখা ও তাদের যাওয়ার সুগম্য পথ নির্বাচন করেছিলেন।

যুদ্ধক্ষেত্রে

রামায়ণ নীল 
কোম্পানী ধরনের পটে নীলের চিত্র

রাম-রাবণের যুদ্ধে রাবণ এবং তার রাক্ষস সৈন্যের বিরূদ্ধে রামের বানর সৈন্যের সেনাধ্যক্ষ হিসাবে নির্বাচিত হয়ে নলই তার বানরদলের পরিচালনা করেছিলেন। রামায়ণের সেনা সর্বাধিনায়ক নীলের সাথে রাক্ষস নিকুম্ভের দ্বন্দ্বের বিস্তারিত উল্লেখ পাওয়া যায়। রাক্ষস সৈন্য দ্বারা আহত হয়েও নীল নিকুম্ভের রথের চাকা তুলে সেই চাকা দিয়েই তাকে হত্যা করেন। নীল রাবণপুত্র প্রহস্তের সাথেও ভীষন যুদ্ধ করেছিলেন। রাক্ষস সৈন্যরা একযোগে বিভিন্ন দিক থেকে তার দিকে তীর নিক্ষেপ করলে পালাবার পথ খুঁজে না পেয়ে চোখ বুজে তিনি তা সহ্য করে নেন। পরে প্রহস্ত মুগুর নিয়ে তীব্রবেগে তার দিকে ধেয়ে এলে প্রত্যুত্তরে নল তার দিকে বড়ো পাথর ছুড়ে মারেন এবং পরে রথের চাকা নিক্ষেপ করলে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রহস্তের মৃত্যু হয়। নীল রাবণের রথের ওপর চড়ে বসে তাকেও যুদ্ধের আহ্বান করেন। নীল এবং হনুমান একসাথে রাবণপুত্র ত্রিশির ও মহোদরার বিরূদ্ধে যুদ্ধ করেন এবং পাথরের আঘাতে তাদের হত্যা করেন। মহাভারতে বর্ণিত আছে যে নীল প্রমথি নামে এক রাক্ষসকেও যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত করেন। কম্ব রামায়ণ অনুসারে অসচেতনভাবে রাবণের জ্যেষ্ঠ পুত্র মেঘনাদ নীলকে পরাজিত করেন।

নিজেকে অজেয় প্রমাণ করার জন্য নিজ গৃৃৃৃহে রাবণ একটি যজ্ঞের আয়োজন করলে নীলের পরিচালনায় বানরদল সেখানে উপস্থিত থেকে তার আহুতিতে বিঘ্ন ঘটায়। কৃত্তিবাসী রামায়ণে এই ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। কাহিনী অনুসারে নীল রাবণের মাথার ওপর উঠে প্রস্রাব করার মাধ্যমে রাবণকে অশুচি করে ও তার যজ্ঞ পণ্ড করে।

জৈন সংস্করণ

জৈন গ্রন্থ অনুসারে নল জৈনদীক্ষা গ্রহণ করেন এবং বর্তমান মহারাষ্ট্রে অবস্থিত মাঙ্গী-তুঙ্গীর নিকট মোক্ষ লাভ করেন।

তথ্যসূত্র

Tags:

রামায়ণ নীল পটভূমিরামায়ণ নীল সীতার অনুসন্ধানরামায়ণ নীল যুদ্ধক্ষেত্রেরামায়ণ নীল জৈন সংস্করণরামায়ণ নীল তথ্যসূত্ররামায়ণ নীলঅগ্নিঅযোধ্যাদশরথবিষ্ণুমহাকাব্যরাক্ষসরাবণরামসংস্কৃত ভাষাসীতাসুগ্রীবহিন্দু

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

পরীমনিসূরা কাফিরুনবাংলা ভাষাসনি মিউজিকঢাকা জেলাশর্করাগজখোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরপশ্চিমবঙ্গকোষ বিভাজনইন্সটাগ্রামঅতিপ্রাকৃত কাহিনীশাহ জাহানবান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলাএ. পি. জে. আবদুল কালামলাইকিরামআয়নিকরণ শক্তিনারায়ণগঞ্জ জেলামদিনামুজিবনগর সরকারমালয় ভাষাদীপু মনিচট্টগ্রামথাইরয়েড হরমোনজওহরলাল নেহেরুফুটবলগনোরিয়ানোয়াখালী জেলাহৃৎপিণ্ড২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপমূলদ সংখ্যাকানাডাসোনালী ব্যাংক লিমিটেডপদ্মা সেতুমাশাআল্লাহবাস্তব সংখ্যাচাঁদপুর জেলাআবু বকরস্টার জলসাআর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের ইতিহাসইয়াজুজ মাজুজদক্ষিণ এশিয়াহাদিসবাংলাদেশের একাডেমিক গ্রেডিং পদ্ধতিভূমি পরিমাপকনডমসোমালিয়াচৈতন্য মহাপ্রভুশিয়া ইসলামবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহআফতাব শিবদাসানিন্যাটোসালাতুত তাসবীহসূরা আরাফফেরদৌস আহমেদবাংলাদেশ ব্যাংকইংল্যান্ডমুহাম্মাদের স্ত্রীগণআশাপূর্ণা দেবীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরবাঘমিশরবেগম রোকেয়ামঙ্গল গ্রহ২০২২-এ ইউক্রেনে রুশ আক্রমণসাতই মার্চের ভাষণবহুমূত্ররোগমূত্রনালীর সংক্রমণলালবাগের কেল্লাবাংলাদেশের উপজেলাপুরুষাঙ্গের চুল অপসারণমালয়েশিয়াঅসমাপ্ত আত্মজীবনীস্বত্ববিলোপ নীতিনিরাপদ যৌনতাভুট্টারামায়ণ🡆 More