খাদ্য নিরাপত্তা

খাদ্য নিরাপত্তা (ইংরেজি: Food security)খাদ্য নিরাপত্তার অর্থ হলো অবাধ খাদ্য সরবরাহ এবং সারাবছর খাদ্যের পর্যাপ্ত প্রাপ্যতা ও মানুষের খাদ্য ভোগের অধিকার।এক কথায়,খাদ্যের লভ্যতা এবং মানুষের খাদ্য ব্যবহারের অধিকারকে বোঝায়। কোন বাসস্থানকে তখনই খাদ্য নিরাপদ বলে মনে করা হয়, যখন এর বাসিন্দারা ক্ষুধার্ত অবস্থায় বসবাস করেন না কিংবা খাদ্যাভাসে উপবাসের কোন আশঙ্কা করেন না।

খাদ্য নিরাপত্তা
বার্লির ক্ষেত

খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের জন্য তিনটি প্রধান বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়। প্রথমত:একটি পরিবার ও জাতির প্রয়োজনীয় খাদ্যের প্রাপ্যতা। দ্বিতীয়ত:স্থানভেদে বা ঋতুভেদে খাদ্য সরবরাহের যুক্তিসঙ্গত স্থায়িত্ব। তৃতীয়ত:নির্বিঘ্ন ও মানসম্মত পরিমাণ খাদ্য প্রত্যেক পরিবারের ভৌত,সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবাধ অধিকারের নিশ্চয়তা। খাদ্য নিরাপত্তা দু'ধরনের। যথা:১.গৃহগত, ২.জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা। গৃহে খাদ্য নিরাপত্তা হচ্ছে উন্নত পুষ্টি অবস্থা,যখন প্রত্যেক সদস্য পুষ্টিগত দিক থেকে নিরাপত্তা বোধ করে।পুষ্টি নিরাপত্তার শর্ত হচ্ছে- ১.পুষ্টিকর এবং নিরাপদ খাদ্যের প্রাপ্যতা। ২.পুষ্টিকর পর্যাপ্ত খাবার গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি এবং খাবার সংগ্রহের দক্ষতা বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান। ৩.স্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং স্বাস্থ্য সুবিধা বা খাদ্য গ্রহণের ফলে কার্যকর শরীর গঠনে ভূমিকা রাখে।

খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি গ্রাম ও শহরের ক্ষেত্রে ভিন্নতর হয়। গ্রামের পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি নির্ভর করে কিছু বিষয়ের উপর। ১.খাদ্য উৎপাদন। ২.বিক্রয়। ৩.বাজারজাতকরণ ৪.অর্থপ্রাপ্তি। অন্যদিকে,শহর ভিত্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় যে সব কারনে তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ১.পারিবারিক ব্যয়। ২.আয়। ৩.বাড়ি ভাড়া। ৪.খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি। ৫.বেকারত্ব। ৬.রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদি।

জাতীয় পর্যায়ে খাদ্য নিরাপত্তা বিভিন্ন অবস্থা দ্বারা প্রভাবিত হয়। যেমন:ঋতুভিত্তিক,পরিবেশগত,কৃষিজাত, রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রভৃতি কারণে বাজারে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত উর্ধ্বগতির কারণে খাদ্য অনিরাপত্তা দেখা দেয়।

ঋতুভিত্তিক:আমাদের দেশে খাদ্য চাহিদা ঋতুভিত্তিক খাদ্য উৎপাদন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।যে খাদ্যগুলো সারাবছর উৎপাদিত হয় সেই খাদ্যগুলোর চাহিদা কম হয়।অপরদিকে কোনো খাদ্য বছরের নির্দিষ্ট সময়ে পাওয়া যায়।যেমন: ঋতুভিত্তিক শাক-সবজি বিভিন্ন ডাল ইত্যাদি।এসব খাদ্যের উৎপাদন কম হলে চাহিদা অনুযায়ী প্রাপ্যতা হ্রাস পায়।যা জনগণের খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করে।

পরিবেশগত:পরিবেশগত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়।বন্যা,খরা,সাইক্লোন সহ বিভিন্ন দূর্যোগের ফলে খাদ্য উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে।খাদ্যের মজুদ মনে যায়।খাদ্য উৎপাদন কমে যায়,দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়।এধরণের খাদ্য ঘাটতির কারণে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা দেখা দেয়,যার ফলে খাদ্য অনিরাপত্তার সৃষ্টি হয়।

কৃষিজাত: অনেক সময় অঞ্চলভিত্তিক কৃষি ব্যাবস্থাপনা সেই অঞ্চলের জনসমষ্টির খাদ্যের পর্যাপ্ততা নিশ্চয়তা প্রদানে ব্যর্থ হয়।ফলে সেই অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকির স্বীকার হয়। তাই কৃষিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটাতে হবে।এছাড়াও যে অঞ্চলে যে সকল খাদ্য ফলন ভালো হয় সেই অঞ্চলে অঞ্চলভিত্তিক উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহণের ফলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ সম্ভব হবে।

বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮৫ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র‌্যের কারণে বহুদিন যাবৎ ক্ষুধার্ত। প্রায় ২০০ কোটি মানুষের বিভিন্ন মাত্রার দারিদ্র‌্যের কারণে খাদ্য নিরাপত্তা ছাড়াই বাস করছেন। (উৎস: বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, ২০০৩)। ২০০৭ সালের শেষ দিকে জৈবজ্বালানির জন্য বিশেষ কৃষিকাজের প্রসার, বিশ্ববাজারে খনিজ তেলের দামের উচ্চমূল্য, বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যার বৃদ্ধি, জলবায়ুর পরিবর্তন, আবাসিক প্রয়োজনে ও শিল্পকারখানার কারণে কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাস, এবং সম্প্রতি চীন ও ভারতে ভোক্তাদের চাহিদায় বৃদ্ধির ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বের বহু দেশে খাদ্য রায়ট হয়েছে।

দারিদ্র‌্য ও খাদ্য গ্রহণের হারের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক আছে। যেসব পরিবারের চরম দারিদ্র‌্য এড়ানোর সামর্থ্য আছে, তারা কদাচিৎ দীর্ঘস্থায়ী ক্ষুধার শিকার হয়। অন্যদিকে দরিদ্র পরিবারগুলি কেবল ক্ষুধার শিকারই নয়, খাদ্যস্বল্পতা ও দুর্ভিক্ষের সময় এরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

খাদ্য নিরাপত্তার প্রধান স্তম্ভসমূহ

WHO খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তিনটি প্রধান স্তম্ভ নির্ধারণ করেছে। এগুলো হলঃ খাদ্যের পর্যাপ্ততা, খাদ্যের সহজলভ্যতা এবং খাদ্যের ব্যবহার-অপব্যবহার। FAO চার নম্বর স্তম্ভটি যুক্ত করেছে। এটি হল স্থায়ীত্ব। অর্থাৎ অপর তিনটি স্তম্ভ সবসময় যেন স্থায়ী হয় সেদিকে খেয়াল রাখা। FAO-এর মতে খাদ্যের অনিরাপত্তার আর্থ- সামাজিক কারণগুলো হচ্ছে- ১.পরিবারের খাদ্য খাতে ব্যয়,ভূমিহীনতা,বেকারত্ব,অর্থাভাব। ২.কৃষিজাত দ্রব্যাদির উৎপাদন ও ফলন হ্রাস, অপর্যাপ্ত সেচ,সার,বীজ ইত্যাদি। ৩.উৎপাদিত দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণে ত্রুটি। ৪.খাদ্য শিকল এর বিভিন্ন পর্যায়ে ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থা। ৫.খাদ্যের গুদামজাতকরণ ও বাজারজাতকরণে ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থা। ৬.শহরায়ন,খাদ্য ক্রয়ে অক্ষমতা,মাথাপিছু খাদ্য পাওয়ার পরিমান ও প্রকৃতিকমে যাওয়া। ২০০৯ সালে ওয়ার্ল্ড সামিট বলেছে, "খাদ্য নিরাপত্তার প্রধান চারটি স্তম্ভ হচ্ছে পর্যাপ্ততা, সহজলভ্যতা, সদ্ব্যব্যবহার ও স্থায়ীত্ব।

খাদ্য নিরাপত্তা ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ

খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে খাদ্যকে জীবাণুমুক্ত করা,পরিপাকযোগ্য করা,শোষণযোগ্য করা,ক্ষতিকর উপাদান থেকে রক্ষা করা,গুণগত মান,স্থায়িত্বের পরিবর্তন ঘটিয়ে গ্রহণ উপযোগী করে তোলা,আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন ও সংরক্ষণ ইত্যাদি নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা উন্নয়ন সম্ভবপর হয়। তাই বলা যায়,খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করে।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

খাদ্য নিরাপত্তা র প্রধান স্তম্ভসমূহখাদ্য নিরাপত্তা ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণখাদ্য নিরাপত্তা তথ্যসূত্রখাদ্য নিরাপত্তা বহিঃসংযোগখাদ্য নিরাপত্তাইংরেজি ভাষা

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

গুগলপশ্চিমবঙ্গে ভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০১৯আলাওলমহাদেশম্যানচেস্টার সিটি ফুটবল ক্লাবরাহুল গান্ধীবাঙালি জাতিদ্বাদশ জাতীয় সংসদ সদস্যদের তালিকাপুলিশজনসংখ্যা অনুযায়ী সার্বভৌম রাষ্ট্র ও নির্ভরশীল অঞ্চলসমূহের তালিকাসুনামি০ (সংখ্যা)শিশ্ন বর্ধনজাতীয় স্মৃতিসৌধ২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগবাংলাদেশ সেনাবাহিনী২০২২ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জিম্বাবুয়ে সফরঅপারেটিং সিস্টেমবায়ুদূষণযৌনাসনমুহাম্মাদের স্ত্রীগণক্যামেরাঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরশাবনূরবাউল সঙ্গীতবেদবাংলাদেশের ইউনিয়নবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পদবিজাতীয় সংসদ ভবনঅপারেশন সার্চলাইটভাইরাসজন মিলটনপশ্চিমবঙ্গ বিধানসভাব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলবাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসসার্বিয়াপ্লাস্টিক দূষণসাদিয়া জাহান প্রভাজনি বেয়ারস্টোভূমিকম্পসাঁওতালভারতের জাতীয় পতাকাকোষ (জীববিজ্ঞান)রক্তশূন্যতামৌলিক বলবাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সাতই মার্চের ভাষণফরিদপুর জেলাবাংলাদেশ পুলিশমহাস্থানগড়সিলেট বিভাগবাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নশক্তিহিট স্ট্রোকবন্যা নিয়ন্ত্রণআকবরবাসকফুলডিপজলশিক্ষাবাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনকালিদাসকুমিল্লাবিশ্বের মানচিত্রসরকারি বাঙলা কলেজক্যান্সারযৌনসঙ্গমভোটউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়প্রিমিয়ার লিগবাংলা বাগধারার তালিকা২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ পরিসংখ্যানমুজিবনগর সরকারসাকিব আল হাসানশেখ হাসিনাহিন্দুধর্মইউটিউবডেঙ্গু জ্বর🡆 More