স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বলতে সেই ধরনের খাদ্যাভ্যাসকে বোঝায় যা সামগ্রিকভাবে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে বা স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনে সহায়তা করে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস দেহে অত্যাবশ্যক পুষ্টি যেমন তরল, বৃহৎ পুষ্টি উপাদানসমূহ, অণু উপাদানসমূহ এবং পর্যাপ্ত খাদ্য শক্তির যোগান দেয়।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
শাক, কপি জাতীয় সবজি ও অন্যান্য সবজি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের উপাদান

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অপুষ্টি থেকে সুরক্ষা প্রদান করে, এবং অ-সংক্রামক রোগব্যাধি যেমন বহুমূত্র রোগ, হৃদরোগ, সন্ন্যাসরোগ বা স্ট্রোক ও কর্কটরোগ (ক্যানসার) প্রতিরোধে সাহায্য করে। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক কর্মকাণ্ডের অভাব বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য ঝুঁকির প্রধানতম দুই কারণ। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ জীবনের প্রথমভাগেই শুরু করতে হয়। শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে তার সুস্থ বিকাশ ঘটে, তার ধীশক্তির বিকাশ হয় এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সুবিধা যেমন মেদবহুল হবার এবং পরবর্তী জীবনে অ-সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি হ্রাস পায়।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে ফল, শাকসবজি, আছাঁটা শস্যদানা থাকে এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও মিষ্টকৃত পানীয় থাকে না বললেই চলে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের প্রয়োজনগুলি বিভিন্ন ধরনে উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীজ খাদ্য থেকে মেটানো যেতে পারে, তবে যারা পূর্ণ নিরামিষাশী খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করেন, তাদের জন্য ভিটামিন বি-১২ নামক খাদ্যপ্রাণের জন্য অ-প্রাণীজ উৎসের প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও সরকারী সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলি জনগণকে স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণের ব্যাপারে সচেতন করার উদ্দেশ্যে পুষ্টি নির্দেশিকা প্রকাশ করে থাকে। কোনও কোনও দেশে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের মোড়কে পুষ্টি তথ্যছক লাগানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যাতে ভোক্তারা স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে উপাদান বুঝে খাদ্য নির্বাচন করতে পারেন।

সুপারিশসমূহ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জনসমষ্টি ও ব্যক্তি পর্যায়ে নিম্নোক্ত পাঁচটি সুপারিশ প্রদান করেছে:

  1. দেহ যতটুকু ক্যালরির শক্তি খরচ করে, ঠিক ততটুকু বা তার কাছাকাছি সংখ্যক ক্যালরির খাদ্যশক্তিবিশিষ্ট খাদ্য গ্রহণ করে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা।
  2. স্নেহপদার্থ গ্রহণ সীমিত করা। দৈনন্দিন খাদ্যশক্তি বা ক্যালরির শতকরা ৩০ ভাগের বেশি স্নেহ পদার্থ থেকে আসা উচিত নয়। সম্পৃক্ত স্নেহ পদার্থের (যেগুলি চর্বিযুক্ত মাংস, মাখন, পাম তেল, নারিকেল তেল, ননী, পনির, ঘি ও পশুর চর্বিতে পাওয়া যায়) পরিবর্তে অসম্পৃক্ত স্নেহ পদার্থকে (যেগুলি মাছ, অ্যাভোকাডো ফল, বাদাম, সূর্যমুখী বীজ, সয়াবিন, ক্যানোলা ও জলপাই তেলে পাওয়া যায়) অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। সব ধরনের আন্তঃস্নেহ পদার্থ পরিহার করা উচিত। এগুলির মধ্যে আছে শিল্পজাত আন্তঃস্নেহ পদার্থ (যেগুলি উনুনে সেঁকা ও তেলে ভাজা খাদ্য, পূর্ব-মোড়ককৃত জলখাবার ও খাদ্য যেমন হিমায়িত পিৎজা, পাই, বিস্কুট বা কুকি, ওয়েফার, রান্নার তেল ও রুটির উপর মাখানোর খাদ্য) এবং রোমন্থনকারী পশুদের থেকে প্রাপ্ত আন্তঃস্নেহ পদার্থ (যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া ও উটের মাংস ও এদের দুগ্ধজাত দ্রব্য)। সামগ্রিক খাদ্যশক্তির ১০%-এর কম সম্পৃক্ত স্নেহপদার্থ ও ১%-এর কম আন্তঃস্নেহ পদার্থ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। বিশেষ করে শিল্পজাত আন্তঃস্নেহ পদার্থ স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস থেকে সম্পূর্ণ পরিহার করার সুপারিশ করা হয়েছে।
  3. প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০০ গ্রাম (প্রায় পাঁচ মুঠো) ফল ও শাকসবজি খাওয়া উচিত (আলু, মিষ্টি আলু, কাসাভা ও অন্যান্য শর্করাবহুল মূল এর মধ্যে পড়ে না)। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসে শিম জাতীয় খাদ্য, ডাল, আছাঁটা শস্যদানা (যেমন অপ্রক্রিয়াজাত ভুট্টা, যব, জোয়ার, জই ও লাল চাল) ও বাদাম-ও অন্তর্ভুক্ত।
  4. গৃহীত খাবারে সরল বা মুক্ত চিনির পরিমাণ খাদ্যশক্তির শতকরা ১০ ভাগের নিচে রাখা। একজন সুস্থ ওজনের প্রাপ্তবয়স্ক সাধারণত দিনে ২০০০ ক্যালরি খাদ্যশক্তি গ্রহণ করেন; সেই হিসেবে মুক্ত চিনির পরিমাণ ৫০ গ্রাম (প্রায় ১২ চা চামচ) থেকে বেশি হওয়া উচিত নয় (৫% বা ২৫ গ্রামের নিচে রাখলে আরও ভাল)। মুক্ত চিনি বলতে রাঁধুনি, ভোক্তা বা শিল্পোৎপাদক দ্বারা খাদ্যে বা পানীয়তে যোগকৃত অতিরিক্ত চিনির পাশাপাশি মধু, ফলের রস কিংবা ফলের রসের ঘনীভূত রূপে প্রাকৃতিকভাবে উপস্থিত চিনিকে বোঝানো হয়েছে।
  5. খাবারের সমস্ত উৎস থেকে লবণ কিংবা সোডিয়াম গ্রহণ সীমিত করা এবং লবণ আয়োডিনযুক্ত কি না তা নিশ্চিত করা। দৈনিক ৫ গ্রামের (এক চা-চামচ) কম লবণ গ্রহণ হৃৎসংবহনজনিত রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিবৃতি অনুযায়ী অপর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসবজি ও ফল খাদ্য হিসেবে গ্রহণ বিশ্বব্যাপী ২.৮৫% মৃত্যুর কারণ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অন্যান্য কিছু সুপারিশ হল:

  • নির্বাচিত খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যপ্রাণ (ভিটামিন) ও খনিজ আছে কি না, তা নিশ্চিত করা।
  • সরাসরি বিষাক্ত পদার্থ (যেমন ভারী ধাতু) ও কর্কটজ (ক্যান্সার রোগ উৎপাদক) পদার্থ (যেমন বেনজিন) পরিহার করা।
  • মানবদেহে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু (যেমন ই কোলাই, ফিতাকৃমির ডিম) দ্বারা সংক্রামিত খাদ্য পরিহার করা।
  • খাদ্যাভ্যাসে সম্পৃক্ত স্নেহ পদার্থগুলিকে বহু-অসম্পৃক্ত স্নেহ পদার্থ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা, যা হৃদধমনী রোগ ও মধুমেহ রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

আরও দেখুন

  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ পিরামিড
  • খাদ্যাভ্যাসসমূহের তালিকা
  • ভোজ
  • পুষ্টিবাদ
  • পুষ্টি মাপনী
  • পুষ্টিমূলক মর্যাদাক্রম পদ্ধতি
  • বৈশ্বিক খাদ্যাভ্যাস
  • খাদ্যস্থিত পুষ্টি উপাদানসমূহের সারণী
  • পুষ্টিছক

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস সুপারিশসমূহস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস আরও দেখুনস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তথ্যসূত্রস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বহিঃসংযোগস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসখাদ্য শক্তি

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

হিন্দুধর্মের ইতিহাসব্রহ্মপুত্র নদজিমেইললোহিত রক্তকণিকাব্রাজিলঅন্নপূর্ণা (দেবী)বিভিন্ন ধর্ম ও বিশ্বাসের তালিকাজৈন ধর্মবাংলাদেশের সংবিধানটেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাপর্যায় সারণী (লেখ্যরুপ)আলহামদুলিল্লাহরোমান সাম্রাজ্যবাংলা সাহিত্যের ইতিহাসতিমিপলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমপরিমাপ যন্ত্রের তালিকাবাল্যবিবাহচিকিৎসকপারদরুশ উইকিপিডিয়াবিবাহইব্রাহিম (নবী)বাংলাদেশ সরকারফিফা বিশ্বকাপ ফাইনালের তালিকাপুঁজিবাদলালবাগের কেল্লাবাঙালি হিন্দুদের পদবিসমূহবাংলাদেশের উপজেলার তালিকাচিঠিসিফিলিসঅতিপ্রাকৃত কাহিনীমাহিয়া মাহিইসলামে যৌনতাওমাননৈশকালীন নির্গমনজাতিসংঘযুক্তফ্রন্টনারায়ণগঞ্জ জেলাযিনাবাংলাদেশের উপজেলাত্রিভুজগৌতম বুদ্ধদৈনিক প্রথম আলোবাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসআব্দুল হামিদবাঙালি জাতিডিজেল গাছইহুদি ধর্মদেশ অনুযায়ী ইসলামনিউটনের গতিসূত্রসমূহসালমান শাহমারি অঁতোয়ানেতঢাকা জেলাভ্লাদিমির পুতিনযতিচিহ্নও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদপথের পাঁচালীবীর্যব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিহাদিসসুইজারল্যান্ডকিশোরগঞ্জ জেলাভুট্টাবাংলা ভাষাবাংলাদেশ ছাত্রলীগআবু হানিফাপাঞ্জাব, ভারতচাঁদফিলিস্তিনমহাস্থানগড়অকালবোধনকলি যুগএশিয়াভারতমঙ্গল গ্রহঅর্থনীতিআকাশ🡆 More