স্বত্ববিলোপ নীতি: শাসন প্রণালী

স্বত্ববিলোপ নীতি':- স্বতাবিলোপ নীতি হলো ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দ্বারা আরোপিত ভারতীয় রাজ্য আত্মসাৎ করার নীতি৷ ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দ অবধি এই নীতি কার্যকরী ছিলো৷ এই নীতি অনুসারে ভারতীয় উপমহাদেশের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কোন করদ অধিরাজ্যের রাজা যদি প্রজাবিদ্রোহ বা বিভিন্ন কারণে দ্বারা জর্জরিত তথা প্রকাশ্যে অপদার্থ প্রমাণিত হয় বা কোন দেশীয় অধিরাজ্যের রাজা যদি অপুত্রক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন, তবে সেই রাজ্য একটি ত্রুটিপূর্ণ সামন্ত রাজ্য হিসেবে ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থায় ব্রিটিশ ভারতের অধীনস্থ হবে এবং দেশীয় রাজ্যের মর্যাদা হারাবে। কোন দেশীয় রাজ্যের দীর্ঘমেয়াদি শাসন ব্যবস্থা উচ্ছেদ করার জন্যে পরবর্তীকালে এই নীতিতে অপুত্রক রাজার দত্তক পুত্র গ্রহণের অধিকারকেও খর্ব করা হয়। এর সাথে সাথে ব্রিটিশ কোম্পানি নিজেরাই কোন রাজা রাজ্যশাসনের জন্য কতটা কর্মদক্ষ সেই মানক নির্ধারণের ভূমিকাও গ্রহণ করা শুরু করেন। এই নীতি প্রণয়ন এবং তার প্রয়োগ বহু ভারতীয়দের কাছে অবৈধ এবং অনৈতিক বলে গণ্য হতো।

১৮৪৮ থেকে ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দ অবধি ভারতে নিযুক্ত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসিকে এই অবৈধ নীতি প্রণয়নের জন্য দায়ী করা হয়। যদিও এই শাসনব্যবস্থা ও নীতি প্রণয়ন পুরোপুরিভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির "কোর্ট অব দিরেক্টরস" দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো এবংলর্ড ডালহৌসি গভর্নর জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পূর্বে ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দ ও বহু দেশীয় রাজ্য কে ওই একই নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ডালহৌসি এই মনীতিটিকে প্রচণ্ড হিংসাত্মক এবং ব্যাপকভাবে প্রচলন করেন ফলে স্বত্ববিলোপ নীতি প্রচলনের জন্য সাধারণভাবে লর্ড ডালহৌসিকেই দায়ী করা হয়।

ইতিহাস

ভারতে কোম্পানি শাসন প্রতিষ্ঠা করার প্রথম পর্যায় থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশের একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলের উপর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিজেদের সার্বভৌম শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করে কোম্পানি ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে সাতারা, ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে জয়িতপুর এবং সম্বলপুর, ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে বাঘাত, ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে ছত্রিশগড়ের উদয়পুর, ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে ঝাঁসি ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে নাগপুর, ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে তোর এবং আর্কট প্রভৃতি রাজ্যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ঐতিহাসিকদের মতে ওই একই নীতি প্রয়োগ করে ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে অউধ রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যদিও লর্ড ডালহৌসি এই রাজ্যের শাসকের অপদার্থতা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করার মাধ্যমে প্রশাসনিকভাবে অদক্ষতা দাবি করে কোম্পানি প্রায় বার্ষিক চার মিলিয়ন পাউন্ড অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ে সক্ষম হন। তবে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে ছত্রিশগড়ের উদয়পুর রাজ্যে ব্রিটিশ কোম্পানি একটি স্থানীয় প্রশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি সাথে সাথে দেশীয় সৈন্যবল সহ ভারতীয় সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে একাধিক কারণে অসন্তোষ তৈরি হওয়া শুরু করে। এর ফলস্বরূপ বিভিন্ন জায়গার স্থানচ্যুত শাসক এবং তার সৈন্যদল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে একত্রিত হওয়া শুরু করে, যা ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহী বিদ্রোহের রূপ ধারণ করে। এই বিদ্রোহের পরেই ব্রিটিশ কোম্পানি ভারতে নতুন ভাইসরয় নিযুক্ত করেন, যিনি ১৮৫৮-৫৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতের ওপর থেকে এই স্বত্ববিলোপ নীতি প্রত্যাহার করে নেন।

লর্ড ডালহৌসির পূর্বেই ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে এই স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করে রানি চেন্নাম্মা দ্বারা শাসিত দেশীয় রাজ্য কিট্টুরকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এই কারণেই ১৮৪৮ লর্ড ডালহৌসি এই নীতি প্রবর্তন করেছেন কিনা এই বিষয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে, যদিও সর্বসম্মতিতে এটি বলা যায় যে লর্ড ডালহৌসি এটিকে জোরপূর্বক সরকারি নীতি ঘোষণা করেছিলেন। ওই সময় লর্ড ডালহৌসির স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করে দেশীয় রাজ্য আত্মসাতের ঘটনা স্থানীয় রাজাদের যথেষ্ট চিন্তার কারণ হয়েছিল।

ডালহৌসিপূর্ব স্বত্ববিলোপ নীতি

লর্ড ডালহৌসি ভারতীয় দেশীয় রাজ্যগুলি দ্রুত আত্মসাতের জন্য বলপূর্বক স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করলেও এই নীতি একা তাঁর উদ্ভাবন ছিলো না। প্রশাসনিক তথ্য-প্রমাণ অনুসারে ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দ থেকেই ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পরিচালকবর্গ এই নীতি ধীরগতিতে আরোপ করা শুরু করেন। স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করে কোম্পানি‌ ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে কচ্ছের মাণ্ডবী, ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে কোলাবা এবং জালোন ও ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে সুরাট রাজ্য দখল করেন।

নীতি প্রয়োগে বিলুপ্ত দেশীয় রাজ্য

দেশীয় রাজ্য নীতি প্রয়োগ বর্ষ
অনুগুল ১৮৪৮
আর্কট ১৮৫৫
বান্দা ১৮৫৮
গুলের ১৮১৩
জয়ন্তীয়া ১৮০৩
জয়িতপুর ১৮৪৯
জালোন ১৮৪০
জসোয়াঁ ১৮৪৯
ঝাঁসি ১৮৫৪
কাছাড়ি ১৮৩০
কাংড়া ১৮৪৬
কণ্ণনূর ১৮১৯
কিট্টুর ১৮২৪
কুর্গ ১৮৩৪
কালিকট ১৮০৬
কুলু ১৮৪৬
কর্নুল ১৮৩৯
কুটলেহার ১৮২৫
মাকরাই ১৮৯০
নাগপুর ১৮৫৪
নরগুন্দ ১৮৫৮
পাঞ্জাব ১৮৪৯
রামগড় ১৮৫৮
সম্বলপুর ১৮৪৯
সাতারা ১৮৪৮
সুরাট ১৮৪২
সিবা ১৮৪৯
তাঞ্জোর ১৮৫৫
তুলসীপুর ১৮৫৪
উদয়পুর (ছত্রিশগড়) ১৮৫৪

তথ্যসূত্র

Tags:

স্বত্ববিলোপ নীতি ইতিহাসস্বত্ববিলোপ নীতি ডালহৌসিপূর্ব স্বত্ববিলোপ নীতি নীতি প্রয়োগে বিলুপ্ত দেশীয় রাজ্যস্বত্ববিলোপ নীতি তথ্যসূত্রস্বত্ববিলোপ নীতিউইকিপিডিয়া:তথ্যসূত্র প্রয়োজনদেশীয় রাজ্যব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিব্রিটিশ ভারতভারতভারতীয় অধিরাজ্যভারতীয় উপমহাদেশ

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় (বাংলাদেশ)কবিতাজীবনানন্দ দাশউপসর্গ (ব্যাকরণ)বারো ভূঁইয়াজাতীয় সংসদ ভবনবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকা১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনঅপারেটিং সিস্টেমইরানমেঘনাদবধ কাব্যভারতের জাতীয় পতাকামান্নাপানি দূষণদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপৃথিবীর ইতিহাসশাকিব খানবাংলাদেশের নদীর তালিকামাইটোকন্ড্রিয়াফুটবলরাজ্যসভাপেপসিপায়ুসঙ্গমমুহাম্মাদের সন্তানগণকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাত্রিভুজপ্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণপশ্চিমবঙ্গে ভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকান্তনগর মন্দিরগণতন্ত্রবাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শকবিশ্বায়নবিভিন্ন দেশের মুদ্রাপ্রথম উসমানহযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগ্রামীণফোনআবু মুসলিমস্বাধীনতা দিবস (ভারত)হাদিসহারুনুর রশিদমূত্রনালীর সংক্রমণগজনভি রাজবংশইংরেজি ভাষামাব্যাকটেরিয়াইন্দোনেশিয়াভারতের জনপরিসংখ্যানবেনজীর আহমেদব্রহ্মপুত্র নদতামান্না ভাটিয়াবাংলা স্বরবর্ণজরায়ুলাইসিয়ামআসসালামু আলাইকুমতাপমাত্রাসাকিব আল হাসানগ্রীষ্মঅপু বিশ্বাসবাংলা সাহিত্যের ইতিহাসজিয়াউর রহমাননিউমোনিয়াআয়তন অনুযায়ী এশিয়ার দেশসমূহের তালিকাডায়াজিপামঅণুজীবজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়রাষ্ট্রপশ্চিমবঙ্গকুবেরশচীন তেন্ডুলকরভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনশিল্প বিপ্লবহৃৎপিণ্ডব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলারক্তের গ্রুপজলবায়ু🡆 More