শিশু নির্যাতন

শিশু নির্যাতন বা শিশুর প্রতি নির্দয় আচরণ হল বিশেষত বাবা-মা বা অন্য কোন অভিবাবক দ্বারা কোন শিশুর প্রতি শারীরিক, যৌন, বা মানসিক দুর্ব্যবহার করা বা শিশুকে অবহেলা করা। বাবা-মা বা অভিবাবক পর্যায়ের কারো কোন কার্য বা অসম্পুর্ণ কোন কার্য দ্বারা কোন শিশু সত্যিকারভাবে বা ধীরে ধীরে ক্ষতির সম্মুখীন হলে তা শিশু নির্যাতনের মধ্যে অর্ন্তভূক্ত হবে। সেটা হতে পারে বাড়িতে, কোন প্রতিষ্ঠানে, স্কুলে, কোন সম্প্রদায়ে যেখানে শিশুটি অবস্থান করে।

শিশু নির্যাতন এবং শিশুর প্রতি নির্দয় আচরণ উভয় শব্দই সমানভাবে ব্যবহৃত হয়, যদিও কিছু গবেষক এই দুই শব্দের পার্থক্য করেন। যেমন শিশুর প্রতি নির্দয় আচরণ শব্দটি তারা শিশুর প্রতি অবহেলা, শিশু পাচার এবং শোষন এগুলো বোঝাতে ব্যবহার করেন।

বিভিন্ন বিচার ব্যবস্থায় শিশু নির্যাতনের নিজস্ব সংজ্ঞায়ন করা হয়েছে যাতে করে নির্যাতিত শিশুটিকে পরিবার থেকে আলাদা করা যায় এবং নির্যাতনকারীকে আইনের আওতায় আনা যায়।

সংজ্ঞা

বিশেষজ্ঞদের মধ্যে শিশু নির্যাতনের সংজ্ঞায় কোন কোন বিষয়কে শিশু নির্যাতন বলা হবে তা নিয়ে ভিন্নতা দেখা যায়। এটা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শ্রেণী ও ইতিহাসেও পরিলক্ষিত হয়। সাহিত্যে শিশু নির্যাতন এবং শিশুর প্রতি নির্দয় আচরণকে পারস্পরিকভাবে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে।:১১ শিশুর প্রতি নির্দয় আচরণ একটি সামগ্রিক সংজ্ঞা যা দিয়ে শিশুর প্রতি সকল ধরনের নির্যাতন এবং অবহেলাকে বোঝায়। প্রচলিত সাংস্কৃতিক মুল্যবোধ শিশুর প্রতি দুর্ব্যবহারমুলক সংজ্ঞাকে প্রভাবিত করে। এই সমস্যাটি নিয়ে সমাজে যারা কাজ করেন যেমন শিশু নিরাপত্তা এজেন্সি, আইনি ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, সরকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, গবেষক ও উকিল ইত্যাদি তাদের মাঝেও শিশু নির্যাতনের সংজ্ঞা আলাদা আলাদা। যেহেতু এই সকল ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রের নিজস্ব সংজ্ঞা রয়েছে সেহেতু যোগাযোগের ক্ষেত্রে তা একটা বাধা হয়ে দাড়ায় যার ফলে শিশু নির্যাতন চিহ্নিত করা, মূল্যায়ন করা, অনুসরণ করা, সেবা দেয়া এবং শিশু নির্যাতন বন্ধ করা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।:

সাধারণভাবে, নির্যাতন বলতে বুঝায় স্বতস্ফুর্তভাবে ঐ সমস্ত কৃত কাজ যেখানে "অবহেলা" বলতে বুঝায় কেউ নিজেকে অন্যের কাছ থেকে সরিয়ে রাখাকে। শিশুর প্রতি নির্দয় আচরণের মধ্যে এই দুটো সংজ্ঞাই অর্ন্তভূক্ত যা কোন বাবা-মা বা অভিবাবক শিশুর প্রতি দেখালে শিশুর সত্যিকার ক্ষতি বা ক্ষতির সম্মুখিন হতে পারে। কিছু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং প্রণেতা "নির্যাতন" সংজ্ঞায় অবহেলাকেও যুক্ত করেন, যেখানে অন্যরা তা করে না; এর পেছনে কারণ হল যে ক্ষতিটা শিশুর হচ্ছে তা হয়ত অনিচ্ছাকৃত অথবা তত্ত্বাবধানকারী ব্যক্তি সমস্যার গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত নন। যা হয়ত সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের ফলে তৈরী হয়েছে যে শিশুকে কীভাবে বড় করতে হবে। শিশু নির্যাতন এবং অবহেলার বিলম্বিত পরিণতি বিশেষত মানসিক অবহেলা এবং নির্যাতনের বৈচিত্র্যও বিবেচ্য বিষয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) শিশু নির্যাতন এবং শিশুর প্রতি নির্দয় আচরণকে সংজ্ঞায়িত করেছে "সব ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, অবহেলা বা ঐ ধরনের কোন কাজ অথবা বাণিজ্যিক বা অন্য কোনভাবে শোষন করা ইত্যাদি যার ফলে কোন শিশুর বাস্তবিক শারীরিক ক্ষতি, জীবনের হুমকি, বেড়ে উঠা, মর্যাদা, দায়িত্ববোধ, বিশ্বাস বা ক্ষমতা ইত্যাদির ক্ষতি হয় বা ক্ষতির কোন আশঙ্কা থাকে তাকে শিশু নির্যাতন এবং শিশুর প্রতি নির্দয় আচরণ হিসেবে গন্য করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এবং প্রিভেনশন (সিডিসি) শিশুর প্রতি নির্দয় আচরণকে সংজ্ঞায়িত করেছে এভাবে, নির্যাতন হতে পারে তা শব্দ, কথা বা প্রত্যক্ষ কোন কর্ম যা শিশুর প্রতি হুমকি বা ক্ষতি করতে পারে। অন্যদিকে অবহেলার সংজ্ঞায় রাখা হয়েছে, কোন শিশুকে সাধারণ শারীরিক, মানসিক বা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা প্রদান করতে ব্যর্থ হলে এবং কোন প্রকার ক্ষতি থেকে শিশুকে রক্ষা করতে না পারাকে।:১১ যুক্তরাষ্ট্রের সরকার শিশু নির্যাতনকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে, কোন সাম্প্রতিক কর্ম বা বাবা-মা বা অভিবাবকের কোন অবহেলার ফলে যদি কোন শিশুর মৃত্যু হয়, কোন শারীরিক/ মানসিক ক্ষতি হয়, যৌন নির্যাতন বা শোষনের শিকার হয় অথবা কোন ভীষণ ক্ষতি হতে পারে এমন কোন কাজ করলে বা থামাতে ব্যর্থ হলে তা শিশু নির্যাতনের আওতায় গন্য হবে।

প্রকারভেদ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চার ধরনের শিশুর প্রতি নির্দয় আচরণকে ভাগ করেন: শারীরিক নির্যাতন; যৌন নির্যাতন; মানসিক নির্যাতন; এবং অবহেলা জনিত নির্যাতন

শারীরিক নির্যাতন

বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে কোন বিষয়গুলোকে শারীরিক নির্যাতন বলা হবে তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। শারীরিক নির্যাতন এককভাবে সংগঠিত হয় না বরং অন্য আচরণের সাথে যুক্ত হয়ে সংগঠিত হয়ে থাকে যেমন কতৃত্বমূলক নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে, চিন্তিত করে এমন কোন আচরণের ফলে এবং বাবা-মায়ের তরফ থেকে উষ্ণ সম্পর্কের অভাবে।

শিশুর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার উপর ইচ্ছাকৃত শারীরিক জোর খাটানো হলে তার ফলে কোন শারীরিক ক্ষতি, বেচে থাকার প্রতি হুমকি দেখা দিলে, বেড়ে ওঠার বা মর্যাদা হানি হলে বা হবার সম্ভাবনা থাকলে এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে শিশুকে আঘাত করা, পিটানো, লাথি মারা, ঝাকানো, কামড়ানো, গলা টিপে ধরা, দগ্ধ করা, পোড়ানো, বিষ প্রয়োগ করা এবং শ্বাসরোধ করা। শিশুর বিরুদ্ধে কৃত অত্যধিক শারীরিক নির্যাতনগুলোকে যে বস্তু দিয়ে শাস্তি দেয়া হয়েছে তা দ্বারা পরিমাপ করা হয়।

জোয়ান ডুরান্ট এবং রন এনসম লিখেছেন যে বেশির ভাগ শারীরিক নির্যাতন হল শারীরিক শাস্তি সেটা হতে পারে উদ্দেশ্যপূর্ণ, আচরণগত রীতি নীতি এবং তার প্রভাবে প্রভাবিত। শারীরিক নির্যাতন এবং শারীরিক শাস্তির সংজ্ঞা অংশত একই হওয়ায় দুটোর মধ্যে সূক্ষ্ম বা একেবারেই কোন পাথর্ক্য করা যায় না।. উদাহরণসরূপ, পাওলো সার্জিও পিনহিরো জাতিসংঘের সাধারণ স্টাডিতে শিশুর প্রতি নির্যাতন সম্পর্কে লিখেছেন:

শারীরিক শাস্তির মধ্যে অর্ন্তভুক্ত আছে শিশুকে হাত বা চাবুক, লাঠি, বেল্ট, জুতা, কাঠের চামচ ইত্যাদি দ্বারা আঘাত করা ('করাঘাত', 'থাপ্পড়', 'পাছায় চড় মারা')। কিন্তু এর মধ্যে আরো থাকতে পারে শিশুকে লাথি মারা, ঝাকানো, ছুড়ে মারা, ঘষানো, চিমটি কাটা, কামড়ানো, চুল টানা বা কানে চাপড় মারা, শিশুকে অস্বস্তিকর অবস্থানে থাকতে বাধ্য করা, পোড়ানো, ছ্যাকা দেয়া অথবা জোর পূর্বক কোন কিছু খেতে বাধ্য করা (উদাহরণসরূপ, সাবান দিয়ে শিশুর মুখ ধুতে বাধ্য করা বা ঝাল মশলা খেতে বাধ্য করা)।

বেশিরভাগ দেশেই যেখানে শিশু নির্যাতন আইন চালু আছে সেখানে ইচ্ছাকৃত মারাত্মক আঘাত প্রদান করা বা কোন কার্য যা শিশুকে অবশ্যই মারাত্মক আঘাত বা মৃত্যু ডেকে আনতে পারে এরূপ কার্যকে অবৈধ গন্য করা হয় [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এবং কালশিরে পড়া, গায়ে আচড় কাটা, পোড়া, ভাঙ্গা হাড়, ক্ষত ছাড়াও পুন পুন বিপত্তি ঘটানো এবং দুর্ব্যবহার করার ফলে কোন শারীরিক আঘাত পেলে তা নির্যাতন হিসেবে গন্য করা হবে। একাধিক আঘাত বা ভাঙ্গা যা সারছে বা সারার বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে এমন হলে তা নির্যাতনের প্রতি নির্দেশ করে এবং সন্দেহের উদ্রেক করে।

মনোবিজ্ঞানি এলিচ মিলার, তার শিশু নির্যাতন বিষয়ক বইয়ে উল্লেখ্য করেছেন যে, চটোপাঘাত, পেটানো, থাপ্পড় দেয়া ও অবমাননা ইত্যাদি সবই হল নির্যাতনের বিভিন্ন রূপ কারণ তা শিশুর মর্যাদাতে আঘাত করে ও শারীরিক আঘাত করে যদিও অনেক সময় তার প্রভাব তাৎক্ষনিকভাবে দেখা যায় না।

প্রায়শই, শিশু বয়সে নির্যাতন ভবিষ্যতে শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করে যাতে আছে পুনরায় ঐ ধরনের ঘটনার শিকার হওয়া, ব্যক্তিত্ব সমস্যা, পোষ্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস সমস্যা, সংযোগ সমস্যা, বিষাদ, মানসিক অবসাদ, আত্মহত্যার প্রবণতা, খাবার সমস্যা, বস্তু/পদার্থ দ্বারা নির্যাতন করা অথবা আগ্রাসনমুখী আচরণ করা। শিশুকালে বাড়িঘর না থাকাও শিশু নির্যাতনের একটি কারণ।

যৌন নির্যাতন

শিশু যৌন নির্যাতন হল এক প্রকারে শিশু নির্যাতন যেখানে কোন প্রাপ্তবয়স্ক বা বড় শিশুর দ্বারা কোন শিশু যৌনতামুলক আচরণের শিকার হয়। যৌন নির্যাতন বলতে বুঝায় কোন শিশুর যৌনতামুলক কাজে অংশগ্রহণ করা যার উদ্দেশ্য কোন ব্যক্তির শারীরিক সন্তুষ্টি লাভ বা বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়া। এই ধরনের যৌন নির্যাতনের মধ্যে রয়েছে কোন শিশুকে যৌনতামুলক কাজ করতে বলা বা চাপ দেওয়া, যৌনাঙ্গের প্রদর্শন করতে বলা বা বাধ্য করা, শিশুকে পর্নো দেখানো, কোন শিশুর সাথে সত্যিকার অর্থে যৌন সঙ্গির মত আচরণ করা, শিশুর যৌনাঙ্গ স্পর্ষ করা বা দেখা বা শিশু পর্নো তৈরী করা। শিশুদের যৌনতামুলক সেবা বিক্রয় করাকে সাধারণ কারাবরোধ নয় বরং শিশু নির্যাতন হিসেবে দেখা হয়।

শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার শিশুর যে সমস্ত ক্ষতির শিকার হয় তার মধ্যে আছে অপরাধবোধ এবং আত্ম নিন্দা, নির্যাতনের ঘটনা মনে পড়া, দুঃস্বপ্ন, অনিদ্রা, নির্যাতনে সংযুক্ত জিনিসপত্রের প্রতি ভীতি (যেমন বস্তু, গন্ধ, স্থান, হাসপাতালে গমন ইত্যাদি), আত্ম-শ্রদ্ধায় সমস্যা, যৌন অক্ষমতা, তীব্র ব্যাথা, আসক্তি, নিজেকে আঘাত করা, আত্ম হত্যার প্রবণতা, শারীরিক অসস্তির অভিযোগ, হতাশাবোধ, পোষ্ট ট্রমাটিক ডিসঅর্ডার, উদ্বিগ্নতা সহ, অন্যান্য মানসিক সমস্যা যেমন বর্ডারলাইন পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার এবং ডিসোসিয়েটিভ আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার, প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর পুনরায় উক্ত ঘটনা ঘটানো/ঘটনার শিকার হওয়ার প্রবণতা, বুলিমিয়া নার্ভোসা, এবং শিশুর শারীরিক আঘাতও হতে পারে অন্যান্য সমস্যারগুলোর একটি। যে সমস্ত শিশু যৌন হেনস্তা বা নির্যাতনের শিকার হয় তারা যৌন বাহিত রোগে আক্রান্ত হবার ঝুকিতে থাকে কারণ তাদের ঐ সমস্ত রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা তৈরি হয়নি এবং জোর পূর্বক যৌন মিলনের ফলে তাদের শ্লৈষিক ঝিল্লি ছেড়ার মত ক্ষতি হতে পারে। কম বয়সে যৌনতার শিকার হওয়াকে এইচআইভির মত রোগ ছড়ানোর ঝুকির সাথে বিবেচনা করা হয় কারণ যৌনতা সমন্ধে কম জ্ঞান, এইচআইভি'র দ্রুত বৃদ্ধি, যৌন মিলনের ঝুকিপূর্ন প্রয়োগ, কনডম ব্যবহার না করা, নিরাপদ যৌন মিলনের পন্থা না জানা, ঘন ঘন যৌন সঙ্গি বদল, অনেক বছর ধরে যৌন কর্মকান্ডে জড়িত থাকা।

আমেরিকায় প্রায় ১৫% থেকে ২৫% মহিলা এবং ৫% থেকে ১৫% পুরুষ শিশু অবস্থায় যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বেশিরভাগ যৌন নির্যাতনকারী নির্যাতনের শিকার ছেলে বা মেয়ের পূর্ব পরিচিত; প্রায় ৩০% শিশুর আত্মীয়, প্রায়শই সেটা ভাই, বোন, বাবা, মা, চাচা-চাচী, ফুফা-ফুফু, খালু-খালা অথবা চাচাতো, মামাতো, ফুফাত ভাই অথবা বোন; প্রায় ৬০% হল অন্য ভাবে পরিচিত লোকজন যেমন পারিবারিক বন্ধু, শিশু দেখাশোনাকারী, প্রতিবেশী। অপরিচিত লোক দ্বারা নির্যাতনের শিকার হওয়া শিশুর সংখ্যাও কম নয় প্রায় ১০%। তিনভাগের একভাগেরও বেশি ঘটনায় দেখা গেছে নির্যাতনকারীও আঠারোোো বছরের নিচে।

১৯৯৯ সালে বিবিসি প্রতিবেদন করে আরএএইচআই ফাউন্ডেশন কর্তৃক কৃত একটি জরিপের ওপর। তারা ভারতে যৌন নির্যাতনের উপর জরিপটি চালায় সেখানে প্রায় ৭৬% অংশগ্রহণকারী জানায় তারা শিশু অবস্থায় যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। যার ৪০% হল পারিবারিক সদস্য।

মানসিক নির্যাতন

শিশুর মানসিক নির্যাতন সমন্ধে বেশ কিছু সংজ্ঞা আছে:

  • ২০১৩ সালে, আমেরিকান মানসিক সংস্থা (এপিএ) শিশুর মানসিক নির্যাতনকে ডিএসএম-৫ হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করে, বর্ণনা করা হয় এভাবে "অনিচ্চাকৃত নয় এমন মৌখিক এবং অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে শিশুর বাবা-মা বা তত্ত্বাবধানকারী যদি মানসিকভাবে শিশুকে ক্ষতিগ্রস্তা করে বা ক্ষতি হবার সম্ভাবনা তৈরী করে তবে তা মানসিক নির্যাতন"
  • ১৯৯৫ সালে, এপিএসএসি সংজ্ঞায়িত করে এভাবে: ভীতি প্রদর্শন, বন্দি রাখা, শোষন করা, ভুল পদ প্রদর্শন, শিশুর আবেগীয় চাহিদার প্রতি নজর না দেয়া, অবজ্ঞা করলে বা অবহেলা করলে এবং কোন পুনপুন আচরণ, ঘটনার দ্বারা শিশুকে যদি এটা বোঝানো হয় যে সে মূল্যহীন, অদরকারী, ভালবাসার অযোগ্য, অপ্রত্যাশিত, বিপদগ্রস্থ অথবা অন্য কোন চাহিদা মেটানোর জন্যই শুধু মাত্র তৈরী তবে তা মানসিক নির্যাতন হবে।
  • আমেরিকায়, অঙ্গরাজ্য হিসেবে আইন ভিন্ন, কিন্তু বেশিরভাগেরই "মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত" হলে তার জন্য আইন আছে।
  • কেউ কেউ এই সব নির্যাতনকে সামাজিক ও মানসিক দোষ বলে মানেন। শিশু বেড়ে ওঠার সময় যে সমস্ত আচরণ করা হয় যেমন চিৎকার করে কথা বলা বা নির্দেশ দেওয়া, রুক্ষ মেজাজ দেখানো, অমনোযোগি হওয়া, কঠিন সমালোচনা এবং শিশুর ব্যক্তিত্বের উপর দোষারোপ করা। অন্যান্য উদাহরণের মধ্যে আছে নাম বিকৃত করে ডাকা, রসিকতা করা, নিচুভাব দেখানো, ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ভাংচুর করা, পোষা প্রাণী নির্যাতন বা হত্যা করা, অত্যধিক সমালোচনা, শিশুর কাছ থেকে সঠিক নয় এমন বা বেশি বেশি আশা করা, কথা বলা বন্ধ করা, এবং নিয়মিত লজ্জা দেওয়া বা দোষ দেখা ইত্যাদি।

২০১৪ সালে, এপিএ বক্তব্য দেয় যে:

  • "শিশু বয়সে মানসিক নির্যাতন শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের মতই ভয়াবহ"
  • "আমেরিকায় বার্ষিক প্রায় ৩ মিলিয়ন শিশু বিভিন্ন ধরনের মানসিক দুব্যবহারের শিকার হয়"
  • মানসিক নির্যাতন হল শিশুর জন্য সবচেয়ে দ্বন্ধতাপূর্ন এবং সর্বত প্রচলিত নির্যাতন এবং অবহেলা"
  • "এই গুরুত্ব হেতু শিশুর মানসিক নির্যাতন এবং এর ফলে সৃষ্ট নির্যাতিত শিশুর কথা বিবেচনা করে এই সমস্যাকে মানসিক স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবা প্রশিক্ষনের সর্বপ্রথম বিবেচ্য বিষয় হিসেবে দেখা উচিত।"

২০১৫ সালে, আরো গবেষণা ২০১৪ সালে এপিএ কর্তৃক কৃত এই বক্তব্যগুলোকে আরো সুনিশ্চিত করে।

মানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়া শিশু নির্যাতনকারীর থেকে দুরত্ব তৈরী করে, বিকৃত শব্দসমূহকে মনে ধারণ করে বা নির্যাতনকারীর সাথে ঝগড়া করে। মানসিক নির্যাতনের ফলে অস্বাভাবিক বা প্রতিবন্ধকতাপূর্ন জীবন হিসেবে শিশু বেড়ে ওঠে যাকে সংযোজন তত্ব বলে। যেখানে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি নিজেকে নির্যাতনের জন্য দোষারোপ করে, অসহায়ত্ব শিখে, এবং প্রতিবাদ না করার আচরণ করতে শিখে।

অবহেলা

শিশু অবহেলা হল কোন বাবা-মা বা অন্য কোন দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তির কর্তব্য পালন করতে ব্যর্থ হওয়া যেমন প্রয়োজনীয় খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য সেবা বা তত্বাবধানজনিত কাজে অবহেলা করা যার ফলে শিশুর স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও পরিপূর্ণ সুস্থতার ক্ষতি হয় বা হুমকি হয়ে দাড়ায়। অবহেলার মধ্যে আরো আছে শিশু তার চারপাশের মানুষের থেকে মনোযোগ না পাওয়া এবং শিশুর বাচার জন্য প্রয়োজনীয় ও সংযুক্ত অন্যান্য জিনিস না পাওয়া যেটা মনোযোগ, ভালবাসা ও যত্নের অভাবে হয়ে থাকে।

শিশু অবহেলার ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত কিছু বিষয়ের মধ্যে আছে শিশুটি ঘন ঘন স্কুলে অনুপস্থিত থাকছে, খাবার বা টাকা খোজা বা চুরি করা, স্বাস্থ্যজনিত সেবার অভাব ও দাতের অযত্ন, নিয়মিতই অপরিচ্ছন্ন থাকা এবং আবহাওয়া অনুযায়ী পোশাক পরিধান না করা। শিশু নিরাপত্তা সেবা প্রতিষ্ঠান রিপোট করে যে বিগত বছরগুলোতে অবহেলা হল শিশুদের প্রতি করা সাধারণ দুব্যর্বহারের একটি

অবহেলাপূর্ন কাজগুলোকে ছয়টি উপভাগে ভাগ করা যায়:

  • তত্বাবধানজনিত অবহেলা: বৈশিষ্ট্য হল বাবা-মা না থাকা যার ফলে শিশুর শারীরিক ক্ষতি, যৌন নিপিড়ন বা অপরাধে জড়িয়ে পড়া ইত্যাদি
  • শারীরিক অবহেলা: বৈশিষ্ট্যের আছে নূনতম শারীরিক প্রয়োজনগুলো মেটাতে না পারা যেমন নিরাপদ ও পরিষ্কার ঘর;
  • সাস্থ্যজনিত অবহেলা: শিশুকে সঠিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করতে না পারা;
  • মানসিক অবহেলা: যত্ন, উৎসাহ এবং সহায়তা প্রদান না করা;
  • শিক্ষাগত অবহেলা: স্কুলে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ দিতে না পারা। এবং
  • ত্যাগ করা: কোন শিশুকে দীর্ঘ সময়ের জন্য একা রেখে যাওয়া

অবহেলার শিকার শিশুর দেরীতে শারীরিক এবং মানসিক গঠন হয়, যার ফলে সাইকোপ্যাথোলজি এবং মস্তিষ্ক সংক্রান্ত কার্যাবলী যেমন ক্রিয়া, মনোযোগ, প্রক্রিয়াকরণ গতি, ভাষা, স্মরণক্ষমতা এবং সামাজিক গুনাবলী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গবেষণাকারীরা অনুসন্ধানের সময় দেখেছেন যে যেসব শিশু দুর্ব্যবহারের শিকার তারা প্রায়শই দত্তক নেয়া শিশু বা বাবা-মা ছাড়া অন্য কারো কাছে লালিত শিশু। তাদের মানসিক চিন্তা ও আচরণগুলো বাবা-মায়ের কাছে থাকা শিশুর মত হয় কারণ তারা চায় হারানো সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে এবং নিরাপদ সম্পর্ক তৈরি করতে। তারা নিজেরাই নিজেদের চারপাশ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে এবং অসামঞ্জস্য সম্পর্ক রাখে। এরকম শিশুরা তাদের প্রতিপালককে নিরাপত্তা প্রদানকারী হিসেবে দেখে না বরং বেড়ে ওঠার সাথে সাথে তাদের প্রতি আগ্রাসী ও অতিক্রিয়তা দেখিয়ে থাকে। এসব শিশু কোন দুব্যর্বহারকারীর সাথে মানিয়ে চলে নিজের ভেতরের অসস্তি বা আবেগ চাপা দিয়ে ফলে তারা অতি তৎপর কিন্তু আন্তরিকতাহীন, নিজ উদ্দেশ্য সাধনে তৎপর এবং কুটিল বৈশিষ্ট্য লাভ করে। যেসব শিশু ছোট অবস্থায় অবহেলার শিকার হয় তারা কারো সাথে সম্পর্ক করা এবং বজায় রাখাতে সমস্যায় পড়ে যেমন বন্ধুত্ব বা প্রেমময় সম্পর্কের ক্ষেত্রে।

পরিণতি

শিশু নির্যাতনের ফলে তাৎক্ষনিক শারীরিক ফলাফল দেখা দিতে পারে কিন্তু তা পোক্তভাবে বৃদ্ধির কে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এছাড়াও আরো অনেক মারাত্মক শারীরিক এবং মানসিক প্রভাব যেমন খারাপ স্বাস্থ্য, মারাত্মক শারীরিক হুমকির অবস্থা তৈরী হওয়া, স্বল্প জীবনকাল, শারীরিক আচরণ পরিবর্তন হওয়া ইত্যাদি

এমন দুব্যর্বহারের শিকার শিশু বড় হয়ে দুব্যর্বহারকারী প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে উঠে। ১৯৯১ সালের করা একটি রিপোর্টে দেখা যায় প্রায় ৯০ ভাগ প্রাপ্তবয়স্কই শিশু অবস্থায় দুব্যর্বহারের শিকার। প্রায় ৭ মিলিয়ন আমেরিকান বাচ্চা শিশু সেবা নিয়ে থাকে এবং বেশিরভাগ সময়ই সঠিক যত্ন নেয়া হয় না।

আবেগপ্রবণ

শিশু নির্যাতনের ফলে বিভিন্ন ধরনের আবেগীক প্রভাব দেখা যায়। যারা নিয়মিতই অবহেলার শিকার হয়, লজ্জা দেয়া হয়, ভয় দেখানো হয় এবং অবমানিত করা হয় তারা শারীরিকভাবে নির্যাতনের থেকেও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জয়ফুল হার্ট ফাউন্ডেশনের মতে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ তার পরিবার, যত্নকারী এবং সমাজের প্রভাবে প্রভাবিত হয়। নির্যাতনের শিকার শিশু বড় হয়ে অনিরাপদ বোধ করা, স্ব-উৎসাহের অভাবে, এবং উন্নয়নের অভাববোধ করে। অনেকে সহজে কাউকে বিশ্বাস করতে না পারা, সামাজিকতা বর্জন, স্কুলে সমস্যার শিকার হওয়া এবং সম্পর্ক গড়ে তোলার সমস্যায় ভুগেন।

বাচ্চা এবং ছোট শিশুরা যারা স্কুলে যাওয়া শুরু করেনি এমন শিশুরা বড় শিশুর থেকে ভিন্নভাবে আচরণ করে থাকে যদি তারা নির্যাতনের শিকার হয়। এমন শিশুরা যদি মানসিকভাবে নির্যাতন বা অবহেলার শিকার হয় তবে তারা অপরিচিত ব্যক্তি বা যাদের তারা হয়ত বেশি সময় দেখে নি তাদের প্রতি মমতা দেখায় তারা আত্মবিশ্বাসহীন, উদ্বিগ্ন হয়, বাবা-মায়ের সাথে নিবিড় সম্পর্ক হয় না এবং অন্য শিশু বা প্রাণীদের প্রতি আগ্রাসী আচরণ দেখায় একই বয়সের শিশুদের প্রতি চিহ্নিত করা যায় এমন ভিন্ন আচরণ করে। বড় শিশুরা বাজে ভাষায় কথা বলে, নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে যুদ্ধ করে, বাবা-মায়ের থেকে সরিয়ে ফেলে, সামাজিকতা বর্জন করে এবং খুব কম বন্ধু বান্ধব থাকে।

শিশুরা রিএক্টিভ এটাচমেন্ট সমস্যায় ভুগতে পারে একে চিহ্নিত করা হয় বেড়ে ওঠার সময় অনুচিত সামাজিক সম্পর্ক ও বিশৃঙ্খলতা দিয়ে আর তা শুরুও হয় ৫ বছর বয়সের আগে। এই সমস্যা বেশিরভাগ সামাজিক অবস্থায় বিফল হওয়া বা রীতিমাফিক ক্রিয়ায় ব্যাঘাত করে। দীর্ঘ সময় ধরে কৃত আবেগীক নির্যাতনের ক্ষেত্রে এখনো কোন বিস্তৃত গবেষণা হয় নি কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় এর দীর্ঘ মেয়াদি ফলাফল রেকর্ড করা হচ্ছে। আবেগীক নির্যাতন হতাশা বৃদ্ধি, দুশ্চিন্তা এবং আন্তঃব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরীকে বাধাগ্রস্থ করে (Spertus, Wong, Halligan, & Seremetis, 2003) শিশু নির্যাতনের শিকার এবং অবহেলার শিকার শিশুরা কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে অপরাধ করে।

গৃহে নিগ্রহের ঘটনা ঘটলে শিশুরা নিগ্রহের প্রভাবে প্রভাবিত হয় যদিও তারা সরাসরি এর শিকার নয় তবুও এটা তাদের মনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এক গবেষণায় দেখা গেছে গৃহে নিগ্রহের প্রত্যক্ষকারী শিশু যার পরিমান প্রায় ৩৬.৮%, গুরুতর অপরাধ করে থাকে যেখানে নির্যাতনের সরাসরি শিকার শিশুদের পরিমান ৪৭.৫%। এসব শিশুরা আচরণগত ও মানসিক সমস্যার শিকার হয় যেমন হতাশা, খিটখিটে, উদ্বিগ্ন, পড়ালেখার সমস্যা এবং ভাষা সমস্যায় ভুগে।

সর্বতভাবে নির্যাতনের ফলে কোন শিশুর মানসিক ও শারীরিক দীর্ঘমেয়াদী বা স্বল্পমেয়াদী সমস্যা হতে পারে যা একটি শিশুর বেড়ে ওঠা এবং উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন হয়।

শারীরিক

শিশু নির্যাতন 
বাচ্চার পাজরের ফাটল হতে পারে শিশু নির্যাতনের লক্ষণ

কোন নির্যাতনের শারীরিক প্রভাব বা অবহেলার প্রভাব ছোট হতে পারে যেমন (আচড় বা কাটাছেড়া) অথবা মারাত্মক যেমন ভাঙ্গা হাড়, রক্তক্ষরণ এমনকি মৃত্যুও। কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক প্রভাব হয় স্বল্পস্থায়ী; কিন্তু শিশু যে মানসিক কষ্ট ভোগ করে তাও গণনায় ধরতে হবে। পাজরের ফাটল হওয়া শারীরিক নির্যাতনের সাথে দেখা যায় এবং যদি কোন শিশুর মধ্যে দেখা যায় তবে তা নির্যাতনের প্রতি নির্দেশক হতে পারে কিন্তু খুব কমই এমনটা পাওয়া যায়।

শিশু নির্যাতনের ও অবহেলার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের মধ্যে যেসব উপসর্গ দেখা যায় (শারীরিক স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধির ক্ষেত্রে):

  • শেকেন বেবি সিনড্রোম - শিশুকে ঝাকানো হল সাধারণ প্রকারের শিশু নির্যাতন যেটা প্রায়শই মস্তিষ্কের ক্ষতি করে (৮০% ) বা মৃত্যুও(৩০% )। ক্ষতিটা হয় ইন্ট্রাকর্নিয়াল হাইপারটেনশনের ফলে (কঙ্কালে চাপ দেয়ার ফলে) যাতে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ হয়, মেরুদন্ড ও ঘাড়ের ক্ষতি, এবং পাজর ও হাড়ে ফাটল ধরা ইত্যাদি।
  • বিকলাঙ্গ মস্তিষ্ক - দেখা গেছে শিশু নির্যাতন এবং অবহেলায় মস্তিষ্কের কোন বিশেষ অংশ সঠিকভাবে গঠন হয়নি বা ব্যবহার হয় না ফলে বিকলাঙ্গ মস্তিষ্কের সৃষ্টি হয়। মস্তিষ্কের এই সব পরিবর্তনের দীর্ঘ মেয়াদি ফলাফল বয়ে আনে যা দেখা যায় ভাষা দক্ষতা, শিক্ষাক্ষেত্রে এবং বোধের ক্ষমতায় ।
  • খারাপ স্বাস্থ্য - শিশুকালে কৃত দুব্যবহার মারাত্মক শারীরিক এবং মানসিক প্রভাব ফেলে , যাতে রয়েছে শিশুকালে অপরিণত স্বাস্থ্য, বয়সন্ধি অবস্থায় এবং প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিজনিত আচরণ ও স্বল্প জীবনকাল লাভ ইত্যাদি যেসব প্রাপ্তবয়স্ক শিশুকালে নির্যাতন বা অবহেলার শিকার হয়েছেন তারা জীবদ্দশায় চুলকানি, আথ্রাইটিস, এজমা, শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ, উচ্চ রক্ত চাপ, এবং আলসারের মত রোগে ভোগেন পরবর্তী জীবনে ক্যান্সারের মত রোগ তৈরি হবার ঝুঁকিসহ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারিতা কমে যাওয়া ইত্যাদি
  • শিশুকালে সহিংসতার শিকার হলে তা টেলোমার স্বল্পতা এবং টেলোমার হ্রাসজনিত কার্যের আংশকা তৈরি করে। টেলোমারের বৃদ্ধির ফলে জীবনকাল হ্রাস পেতে পারে যা ৭-১৫ বছরও হতে পারে।

প্রতিকুল শিশুকালের অভিজ্ঞতা পর্যবেক্ষণ

শিশু নির্যাতন 
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এবং প্রিভনশন অনুসারে শিশুকালে বৈরী অভিজ্ঞতা লাভের সম্ভাব্য পথের চিত্র যেমন নির্যাতন এবং অবহেলা যা স্বাস্থ্য এবং পরিপূর্ণরূপে জীবনভর ভাল থাকার পথে বাধা হতে পারে

প্রতিকুল শিশুকালের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা হল একটি দীর্ঘমেয়াদি অনুসন্ধান যা শিশুকাল ও প্রতিকুলতার মধ্যে চালানো হয় এতে অর্ন্তভুক্ত আছে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন এবং অবহেলা, ও পরবর্তী জীবনে স্বাস্থ্য সমস্যা। এই গবেষণার প্রাথমিক স্তর শুরু হয় ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৭ সালে সান ডিয়েগো, ক্যালিফোর্নিয়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই গবেষণার উল্লেখ্যযোগ্য দিকগুলোকে এভাবে তুলে ধরে:

প্রতিকুল শিশুকালের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনায় ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের প্রায় ১৭,৩০০ মধ্য বয়সি, মধ্যম আয়ের এবং বেশিরভাগ চাকরিজীবী অংশগ্রহন করেন ও বলেন যে, শিশুকালে কৃত দুব্যবহার এবং ঘরে কৃত ত্রুটিপূর্ণ আচরণ পরবর্তী জীবদ্দশায় প্রভাব বিস্তার করেছে। এমন সব মারাত্মক রোগ যেগুলো আমেরিকায় মৃত্যুর সাধারণ কারণ এবং বিকলাঙ্গতার কারণ। এই গবেষণায় শিশুকালে কৃত দুব্যবহার এবং ঘরে কৃত ত্রুটিপূর্ণ আচরণের দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল ও অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে যেমন: মানসিক, শারীরিক এবং যৌন নির্যাতন; মায়ের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক আচরণ; এবং পরিবারের সদস্য যা হয়ত নির্যাতনকারী, মানসিকভাবে অসুস্থ অথবা আত্মঘাতক অথবা জেল খেটেছেন এমন ব্যক্তি। প্রতিকুল অভিজ্ঞতা (যেমন শারীরিক এবং যৌন নির্যাতন শিশুকালে) এবং পরবর্তী জীবনে নিজে দাখিল করা রিপোর্ট যেমন সিগারেট পান, স্থুলতা, শারীরিক অকার্যকারিতা, মদ্যপান, নেশাজাতীয় নির্যাতন, হতাশা, আত্মহননের চেষ্টা, যৌন উশৃঙ্খলতা এবং যৌনবাহিত রোগ ইত্যাদির মধ্যে গুরুতর সম্পর্ক রয়েছে। অধিকন্তু, যেসব মানুষ শিশুকালে অধিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে রিপোর্ট করেছেন তারা অনেক বেশি স্বাস্থ্য ঝুকিগত আচরণ করেছেন, যা এই রিপোর্টের মতে একটি খাপ খাওয়ানোর চেষ্টার ফলে হয়েছে। একইভাবে, বেশি প্রতিকুল শিশুকালের অভিজ্ঞতার রিপোর্ট হয়েছে এমন ব্যক্তির দেখা গেছে হৃদরোগজনিত সমস্যা, ক্যান্সার, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, হাড়ে ফাটল, লিভারের রোগ এবং খারাপ স্বাস্থ্যের অধিকারী হন। সুতরাং শিশুর প্রতি দুব্যবহার এবং অন্যান্য প্রতিকূল শিশুকালের অভিজ্ঞতা হল স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ, রোগাক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুর কারণ। আর এটি নিয়মিত পরীক্ষায় ধরা যেতে পারে। যদিও এসিই'র করা গবেষণাটি শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের একটি রাজ্যে সীমাবদ্ধ তবুও এটা ধরে নেয়া যেতে পারে যে এই ধরনের প্রবণতা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন অর্থনৈতিক স্তরের মানুষের মধ্যে এবং সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে এমন জায়গায় রয়েছে।

প্রাপ্তবয়স্কদের উপর করা একটি দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় জানা গেছে শিশুকাল বৈরী অভিজ্ঞতার শিকার যেমন মৌখিক, শারীরিক এবং যৌন নির্যাতন, এছাড়াও অন্যান্য ধরনের শিশুকালের ট্রমার মধ্যে ২৫.৯% প্রাপ্তবয়স্ক মৌখিক নির্যাতনের শিকার, ১৪.৮% রিপোর্ট করেছেন শারীরিক নির্যাতন, এবং ১২.২% রিপোর্ট করেছেন যৌন নির্যাতন। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এবং প্রিভনশন এবং বিহেবরিয়া রিস্ক ফ্যক্টর সার্ভেলেন্স সিস্টেম এই সব তথ্য উপাত্ত প্রদান করে। শিশুকাল বৈরী অভিজ্ঞতা লাভের সাথে খারাপ স্বাস্থ্য লাভের সম্পর্ক রয়েছে যার ফলে ক্যান্সার, হার্ট এ্যাটাক, মানসিক রোগ, জীবনকাল কমে যাওয়া, নেশা এবং মদ্যপানের মাধ্যমে নিজেকে নির্যাতন করার প্রবণতা উল্লেখ্য। ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যে কৃত একটি নাম গোপনীয় জরিপে ছাত্ররা দেখে যে প্রায় ৬-৭% অষ্টম, দশম এবং দ্বাদশ শ্রেনীর সত্যিই আত্মহনন করতে চেয়েছিল। হতাশার রেট দ্বিগুনের চেয়েও বেশি। অন্যান্য ঝুকিগত আচরণের মাত্রাও ছিল বেশি। শিশু শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের সাথে আত্মহত্যার সম্পর্ক রয়েছে। আইনি এবং সাংস্কৃতিক কারণ ছাড়াও পিতা-মাতার থেকে আলাদা করা হবে এই আশঙ্কায় শিশুরা নির্যাতনের কথা প্রকাশ করে না বা রিপোর্ট করা হয় না।

শিশুকালে নির্যাতন নেশা ও মদ্যপানের অভ্যাশ গড়ার ঝুকি বাড়ায় কৈশর ও প্রাপ্তবয়স্ক লোকের মধ্যে। গবেষণায় দেখা গেছে যেকোন ধরনের শিশুকালীন নির্যাতনের ফলে মস্তিষ্কের পরিবর্তন সাধিত হয় আর তা কোন ব্যক্তিকে আসক্তিমুলক কাজের প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় ৯০০টি কোর্ট কেসের উপর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যেসব শিশু নির্যাতন, যৌন এবং শারীরিক নির্যাতন, পাশাপাশি রয়েছে অবহেলা করার মত মামলা সেইসব ব্যক্তিরা বর্তমানে মদ্যপানে আসক্ত। শিশুকালে নির্যাতনের ফলে কীভাবে আসক্তিমুলক কাজে জড়িয়ে পড়ে কোন ব্যক্তি তাই এই গবেষণার মূল বিষয়।

মানসিক

যে শিশুর অবহেলা বা শারীরিক নির্যাতনের ইতিহাস রয়েছে সেই শিশু মানসিক সমস্যায় পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে অথবা একটি ডিসঅর্গানাইজ এটাচমেন্ট ধরন গড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আরো বলতে গেলে, যে শিশু নির্যাতন অথবা অবহেলার শিকার সেই শিশু বয়সন্ধিকালেই আইনের হাতে আটক হবার সম্ভবনা ৫৯%, প্রাপ্তবয়স্ক ২৮%, এবং ৩০% অপরাধ করার ঝুকি তৈরি হয়।

ডিসঅর্গানাইজ এটাচমেন্ট বেড়ে ওঠার সময় বেশ কিছু সমস্যার সাথে জড়িত, সঙ্ঘচ্যুতির উপসর্গ, সেই সাথে উদ্ভিগ্নতা, হতাশা, এবং ঝোকের বশবর্তী কাজের উপসর্গ. ডান্তে চিচেটির একটি গবেষণায় পেয়েছেন ৮০% নির্যাতিত হওয়া এবং খারাপ ব্যবহার করা শিশুরা ডিসঅর্গানাইজড এটাচমেন্টের উপসর্গ দেখিয়েছে। যখন এসব শিশুরা (যারা পোষ্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার, সঙ্ঘচ্যুতির উপসর্গ, এবং শিশু নির্যাতনের অন্যান্য উপসর্গে ভুগেন) বড় হয়ে যখন বাবা-মা হয় তখন তারা তাদের বাচ্চাদের চাহিদা, নিয়মাত্মক দুর্দশার মুখোমুখি হতে বা সমাধান করতে সমস্যায় পড়েন, যে হয়ত শিশুর সামাজিক-মানসিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিপরীত ফল বয়ে আনে। অধিকন্তু, শিশুরা নিজের বা অন্যদের আবেগের প্রতি একনিষ্ঠ হতে পারে না ফলে তারা নিজেদের একা ভাবে এবং বন্ধু তৈরী করতে পারে না। এই সমস্ত অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও মানসিক-সামাজিক যোগাযোগ বা মিথস্ক্রিয়া সুফল বয়ে আনতে পারে, অন্তত কিছু ক্ষেত্রে, শিশুকালে নির্যাতিত বাবা-মা'রা নিজেদের সন্তানের মঙ্গলের কথা ভাবতে পারেন।

শিশুকালে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা পরবর্তী জীবনে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে পারেন। কেউ কেউ হয়ত তীব্র মাথা ব্যাথা, পেট ব্যাথা, শ্রোণী ব্যাথা অথবা মাংসপেশির ব্যাথায় ভুগেন কোন কারণ ছাড়াই। যদিও বেশিরভাগ শিশুকালে নির্যাতিতরা জানে অথবা বিশ্বাস করে যে তাদের নির্যাতন হল, অথবা হতে পারে প্রাপ্তবয়স্ক সময়ে বিভিন্ন সমস্যার কারণ (যাদের বেশিরভাগেরই নির্যাতনের ফলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হননি) তবুও তারা স্বাস্থ্যগত অন্য সমস্যার কারণে রোগনির্ণয় করেছেন শিশুকালে নির্যাতনের কারণে নয়। একটি দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় দেখা গেছে ৮০% নির্যাতিত লোক ২১ বছরের মধ্যে একটি মানসিক সমস্যায় পড়েন, যেমন হতাশা, উদ্বিগ্নতা, খাদ্যগ্রহণ সমস্যা, এবং আত্মহত্যার প্রবৃত্তি ইত্যাদি। একটি কানাডীয় হাসপাতাল দেখিয়েছেন যে ৩৬% এবং ৭৬% মহিলার মানসিক সমস্যার কারণ যৌন নির্যাতন, যার মধ্যে ৫৮% মহিলা ২৩% পুরুষ হল সিজোফ্রেনিয়া রোগী একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় আবিষ্কার হয়েছে যে মস্তিষ্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ গঠন মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সার্কিট শিশুকালে নির্যাতনের এবং অবহেলার ফলে বিরোধ ছাড়াই নিষ্পত্তি করে এবং পরবর্তী জীবনে হতাশামূলক উপসর্গের কারণ হয়।

ফ্রান্স জরিপ আইএনএসইই ২৭ জনের অসুস্থতার ঘটনা থেকে ২৩ জনের অসুস্থতা সম্পর্কে কৃত প্রশ্নমালা থেকে দেখা যায় যে, কিছু পরিসংখ্যানগত গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক পাওয়া গেছে পুনপুন অসুস্থ হওয়া এবং ১৮ বছরের আগে পারিবারিকভাবে শিশু মানসিক আঘাত পাওয়ার মধ্যে। ফ্রান্সের সমাজবিজ্ঞানী জর্জ মিনেহাম এই সম্পর্কটি খুজে বার করেন স্বাস্থ্যগত অসমানঞ্জস্যতা বিচার করে। এই সম্পর্ক দেখায় যে অসুস্থতায় অসমানঞ্জস্যতা এবং কষ্ট ভোগ করাটা শুধুমাত্র সামাজিকই নয়, এটা পরিবারেও রয়েছে, যেখানে এটি স্নেহ সম্পর্কীয় সমস্যার কম বা বেশির সাথে জড়িত যে সব শিশু শৈশবে আদরের অভাব, বাবা-মায়ের সাথে মতানৈক্য, বাবা-মায়ের দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত থাকা, অথবা বাবা-মায়ের কোন মারাত্মক অসুস্থতার ফলে দূরত্ব ইত্যাদি সমস্যার সম্মুখিন হয়েছেন তাদের করা রিপোর্ট অনুসারে।

অনেক শিশু যারা নির্যাতিত হয়েছে তা সে যে কোন প্রকারে হোক না কেন তাদের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যাগুলো হল: মানসিক চাপ, হতাশা, খাদ্য গ্রহণে অনিয়ম, ওসিডি, কাউকে আসক্তিতে সহায়তা করা, অথবা কোন মানুষের সাথে সম্পর্ক থাকা। তারা নিজেরাও শিশু নির্যাতনকারী হওয়ার কিছুটা আংশকা থাকে। আমেরিকায় ২০১৩ সালে, ২৯৪,০০০ শিশু নির্যাতন মামলার শুধুমাত্র ৮১১২৪টি কোন না কোন থেরাপি বা কাউন্সেলিং পেয়েছে। নির্যাতিত শিশুর চিকিৎসা হওয়া অতন্ত্য জরুরী।

অন্য দিকে কিছু শিশু বেড়ে ওঠে শিশু নির্যাতনের মধ্য দিয়ে, কিন্তু পরবর্তী জীবনে অপ্রত্যাশিতভাবে ভাল জীবনযাপন করে। এই সমস্ত শিশুকে ড্যান্ডিলায়ন শিশু, যা এসেছে ড্যান্ডিলায়ন যেভাবে যে কোন অবস্থার মধ্যেও বেড়ে উঠতে পারে তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। এই সব শিশুরা বা বর্তমানে বড়রা কীভাবে শিশু নির্যাতনের ফলাফল ও অন্যান্য প্রভাব মোকাবেলা করা যায় বা শিশু নির্যাতন বন্ধ করা যায় তা নিয়ে অনেক শোচ্চার।

কারণ

শিশু নির্যাতন একটি জটিল ইন্দ্রিয়গাহ্য বিষয় যাতে অনেকগুলো কারণ জড়িত প্রাপ্তবয়স্ক কোন ব্যক্তি কেন শিশুদের প্রতি হিংসাত্মক আচরণ করে তার একক কোন কারণ পাওয়া যায় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক শিশু নির্যাতন এবং অবহেলা বন্ধকারী সংস্থা (আইএসপিসিএএন) বেশ কিছু কারণ ব্যক্তি পর্যায়ে, তাদের সম্পর্কের পর্যায়ে, তাদের স্থানীয় কমিউনিটি পর্যায়ে এবং বড় পরিসরে সমাজে নির্ণয় করেছেন যা একত্রে শিশুর প্রতি অবহেলার দু্র্ব্যবহার কারণ। ব্যক্তি পর্যায়ে কিছু বিষয় যেমন বয়স, লিঙ্গ এবং ব্যক্তিগত ইতিহাস, সমাজের ক্ষেত্রে সংস্কৃতিক ধারা, আচার শিশুর প্রতি দু্র্ব্যবহার করতে উৎসাহিত করে যাতে শারীরিক শাস্তি প্রদান করতে বড়রা উৎসাহিত হয়। এর সাথে অর্থনৈতিক অসমানঞ্জস্যতা এবং সামাজিক নিরাপত্তার অভাবও জড়িত। আইএসপিসিএএন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উল্লেখ করেছে যে, শিশু দু্র্ব্যবহার কমাতে ঝুকিপূর্ন এসব আচরণ বুঝতে হলে জটিল এইসব আন্তঃপ্রভাবক বিষয়গুলোকে বিবেচনা করতে হবে।

আমেরিকার মনস্তত বিশ্লেষক এলিজাবেথ ইয়াং-ব্রুয়েল তার শিশু মতবাদে ব্যক্ত করেন যে শিশুদের প্রতি ক্ষতি ন্যায্য করা এবং গ্রহণ করার বিষয়টি শিশুদের বড়দের দাস মনোভাবের বিশ্বাসের কারণে হয় যার ফলে শিশুদের বিরুদ্ধে তা একটি সংস্কারে পরিণত হয়েছে। তিনি মত দেন যখন এটি সরাসরি শিশু দু্র্ব্যবহার কারণ নয়, তবুও এই সব কারণকে অনুসন্ধান করতে হবে যাতে করে এর গভীরে কি প্রণোদনা হিসেবে কাজ করে তা বোঝা যায় সেই সাথে সামাজিক ব্যর্থতাও খুজে বের করতে হবে যাতে শিশুর চাহিদা ও বেড়ে ওঠা সঠিকভাবে নিশ্চিত করা যায়।:৪–৬ আর্ন্তজাতিক শিশু অধিকার সংবাদপত্র যার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হলেন মাইকেল ফ্রিম্যান, অন্য মত প্রকাশ করে বলেন শিশু নির্যাতনের মূল কারণ শিশুদের বিরুদ্ধে সংস্কারের মধ্যেই বাস করে, বিশেষত যখন প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের অধিকার তুলনা করা হয় তখন দেখা যায় শিশুদের ক্ষেত্রে তা বড়দের মত সমান হয় না। তিনি লিখেন,"শিশু নির্যাতনের মূল বাবা-মায়ের মানসিক-শারীরিক অথবা সামাজিক-পারিপার্শ্বিক চাপ (যদিও তা পুরোপুরি অস্বীকার করা যায় না) ইত্যাদির মধ্যে নয়। এটার কারণ হল অসুস্থ সংস্কৃতি যা মানুষের মনকে প্রভাবিত করে শিশুকে সম্পদ, যৌন উদ্দীপক বস্তু হিসেবে দেখতে যার ফলে শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের হিংসাত্মক আচরণ এবং লালসার শিকার হচ্ছে।".

শিশু নির্যাতন 
ভারতের উড়িষ্যায় একটি মেয়েকে ধর্মীয় হিংসাত্মক আচরণ করে পোড়ানো হয়

যেসব বাবা-মায়েরা একে অপরকে শারীরিক নির্যাতন করে তারা অন্যদের তুলনায় বেশি শিশুদের নির্যাতন করে। যদিও এটা জানা কষ্টকর যে স্বামী স্ত্রী'র ঝগড়া শিশু নির্যাতনের একটি কারণ নাকি ঝগড়া এবং নির্যাতন দুটোই নির্যাতন উন্মুখ মানসিকতার ফসল। কোন কোন সময় বাবা-মায়েরা তাদের শিশুর কাছ থেকে আশা করে এমন কিছু যা শিশুর ক্ষমতার বাইরে। যখন শিশুদের ক্ষমতার বাইরে কোন কিছু বাবা-মা আশা করে যেমন এখনো স্কুলে যায় না এমন শিশুর কাছ থেকে নিজেকে দেখভাল করার আশা করা তখন শিশু তা করতে না পারলে হতাশ হয়ে পড়াটাকে শিশু নির্যাতনের কারণ হিসেবে দেখা হয়।

বেশিরভাগ শিশুর প্রতি শারীরিক হিংসাত্মক আচরণের কাজের পেছনে উদ্দেশ্য থাকে শাস্তি প্রদান করা। যুক্তরাষ্ট্রে, বাবা-মায়ের সাথে সাক্ষাৎকারকালীন সময়ে বাবা-মায়েরা বরেন যে, যেসব নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে তার তিনভাগের দু'ভাগই শিশুর আচরণ ঠিক করার জন্য শাস্তি দিতে গিয়ে হয়েছে। অন্য দিকে কানাডীয় একটি গবেষণায় দেখা গেছে তিন ভাগ কেসেই শারীরিক নির্যাতন হয়েছে শারীরিক শাস্তির জন্য। অন্য গবেষণায় দেখা গেছে শিশু এবং বাচ্চারা যারা বড়দের একের অধিকবার পিটুনি খেয়েছে তাদের আঘাত মারাত্মক অথবা তারা এমন আঘাত পেয়েছে যার জন্য মেডিকেল সেবা নিতে হয়েছে। এমন দুব্যবহারের কারণ হিসেবে দেখা যায় শিশুদের অবাধ্যতা ও অনিচ্ছা বা না মেনে নেওয়ার মনোভাব । সাধারণ শারীরিক শাস্তি হিসেবে যেসব শাস্তি পরে শিশু নির্যাতন হিসেবে গন্য করা হয়েছে তা বিশ্লেষণ করে দেখে গেছে বাবা-মায়েরা নিজেদের রাগ সামলাতে না পারায় অথবা নিজের শারীরিক শক্তি বুঝতে না পারা অথবা শিশুর শারীরিক অসুস্থতার কথা জানা না থাকায় তা মারাত্মক পর্যায়ে গড়ায়।

কিছু বিশেষজ্ঞ মতামত দেন যে সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের ফলে শারীরিক শাস্তি প্রদান শিশু নির্যাতনের আরেকটি কারণ এবং তা সমাধানে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

যেসব শিশু অপরিকল্পিত গর্ভধারনের কারণে হয়েছে তারা বেশিরভাগ সময় নির্যাতন অথবা অবহেলার শিকার হয়। অধিকন্তু, অপরিকল্পিত গর্ভধারন নির্যাতনমুখি বা খারাপ সম্পর্ক স্থাপনের ফলে হয়ে থাকে, এবং সেখানে গর্ভধারনের সময় শারীরিক হিংসাত্মক আচরণ সম্ভাবনা থাকে। They also result in poorer maternal mental health, এবং তা শিশু ও মায়ের মধ্যে সম্পর্ককে কমিয়ে দেয়।

শারীরিকভাবে সুস্থ শিশু চেয়ে আংশিক বা সম্পূর্ণ প্রতিবন্ধি শিশুকে বেশি নির্যাতন করা হয় এমন প্রমাণ সীমাবদ্ধ আকারে পাওয়া গেছে। শিশু নির্যাতনের একটি গবেষণায় দেখা যায় যে: শিশু নির্যাতনের ধরন, আকার শিশুর প্রতিবন্ধত্বের উপর নির্ভর করে সংঘঠিত হয়। এই গবেষণায় একটি প্রশ্নমালা নির্ধারণ করা হয় গবেষণার উদ্দ্যেশে যার বিষয় ছিল শিশু নির্যাতন। অংশগ্রহণকারীরা ছিল ৩১ জন প্রতিবন্ধি (১৫ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধি এবং ১৬ জন শ্রবণ প্রতিবন্ধি) এদের বতসোয়ানার একটি বিশেষ স্কুল থেকে বাছাই করা হয়। গবেষণায় পাওয়া যায় যে বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারী ঘরের কাজে অংশ নিত। তারা যৌন, শারীরিক এবং মানসিকভাবেও নির্যাতনের শিকার হন তাদের শিক্ষকদের দ্বারা।এই গবেষণায় বেরিয়ে আসে যে প্রতিবন্ধি শিশুরা স্কুলে নির্যাতিত হবার আশঙ্কা রয়েছে।

নেশাজাতীয় নির্যাতন শিশু নির্যাতনের মধ্যে অন্যতম। আমেরিকার একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে যেসব বাবা-মায়েরা বিভিন্ন বস্তু দিয়ে নিজেদের নির্যাতন করেন যেমন মদ, কোকেন, হিরোইন ইত্যাদি তারা শিশুদের বেশি দু্র্ব্যবহার করেন এবং আদালত প্রদত্ত নির্দেশ, সেবা এবং চিকিৎসা অমান্য করেন অন্য গবেষণায় পাওয়া গেছে শিশু দু্র্ব্যবহার ঘটনায় তিনভাগের দুইভাগ বা তারও বেশি বাবা-মায়েরা এরূপ সমস্যায় ভুগেন। এই গবেষণায় বিশেষভাবে মদ্যপান এবং শারীরিক নির্যাতন, এবং কোকেইন পান এবং যৌন নির্যাতন মধ্যে সম্পর্ক পাওয়া গেছে। নেশাজাতীয় দ্রব্য ব্যবহারের ফলে পরবর্তী সময়ে যে চাপ বা প্রভাব আসে তা বাবা-মায়ের আচরণগত পরিবর্তন করে কিছু আচরণ যা স্বাভাবিক অবস্থায় করেন না এমনটাও আসক্ত অবস্থায় দেখান। যদিও নির্যাতিত বুঝতে পারে না যে নির্যাতন খারাপ, তবুও মনে যে দ্বন্ধ সৃষ্টি হয় তা মারাত্মক হয়। ভেতরের রাগ বাইরে হতাশা হয়ে বেরিয়ে আসে। যখন শিশুটি ১৭/১৮ বছর হয় তখন সেই কষ্ট ভোলার জন্য পানাসক্ত এবং নেশায় আশক্ত হয়ে যায়। সেই ব্যক্তিটি যদি চাকরি না করে থাকে তবে নেশার টাকা জোগাতে অপরাধ কর্মে জড়াতে দ্বিধা করে না।

বেকারত্ব এবং অর্থকষ্ট শিশু নির্যাতন বাড়িয়ে তোলে। ২০০৯ সালে সিবিএস নিউজ রিপোর্ট করে যুক্তরাষ্ট্রে শিশু নির্যাতন ২০০০ সাল পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বেড়ে গেছে। এটি বাবার উদাহরণ টানে যেখানে তিনি কখনই শিশুর প্রাথমিক যত্নকারী ছিলেন না, তখন যেহেতু তিনি বেকার এবং শিশুর যত্নে অংশগ্রহণ করছেন তখন শিশুরা প্রায়শই আহত হচ্ছে।

বিশ্বব্যাপি

শিশু নির্যাতন হল একটি আন্তর্জাতিক বিষয়। দারিদ্রতা এবং নেশাদ্রব্য নির্যাতন হল বিশ্বব্যাপি সাধারণ সামাজিক সমস্যা এবং সেটা যে কোন জায়গাই হোক না কেন একই ধরনের ধারায় ঘটে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

যদিও বিষয়গুলো শিশু দু্র্ব্যবহারে আসে তবুও সাংস্কৃতিক ভিন্নতায় দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটে একটি শিশুর সাথে কীভাবে ব্যবহার করা হবে। কিছু কিছু দেশে লিঙ্গ সমতা শিশু বেড়ে ওঠায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। সোভিয়েত সময়ে, সাধারণ গৃহিনী এবং লিঙ্গ সমতায় বিশ্বাসী মহিলার মধ্যে বিরোধ ছিল। কিছু মহিলা তাদের মায়ের কাজ করতে চাপের মুখে পড়েছেন (কতৃত্ব ফলানোর ক্ষেত্রে) যেহেতু তারা নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে বেশি সময় ব্যয় করতেন। অনেকেই তাদের শিশুদের ব্যাপারে আরো কঠিন, সরাসরি নিয়মানুবর্তিতা প্রয়োগ, অতিনিরাপত্তা খুতখুতে হতে উৎসাহিত হন।

কমিউনিস্ট যুগের সমাপ্তির পরে, অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। বাবা-মায়ের কর্তব্য পালনের ধারায় অনেক খোলাখুলি আর মেনে নেয়ার ব্যাপার যোগ হয় এবং শিশুদের সাথে বন্ধন দৃঢ় হয়, শিশু নির্যাতন তখনও ছিল একটি মারাত্মক চিন্তার বিষয় হিসেবে। যদিও এটি এখন সহজেই চিহ্নিত করা যায় তবুও এটি পুরোপুরি কখনোই বন্ধ হয়নি। পিতা-মাতার নিয়ন্ত্রণমূলক মনোভাব, অর্থ কষ্ট, বেকারত্ব লাঘব হলেও নেশাজাতীয় দ্রব্যে ব্যবহার ফলত নির্যাতন এখনও পূর্ব ইউরোপে শিশু নির্যাতনের ক্ষেত্রে একটি বড় উপাদান।

একটি গবেষণা চালানো হয় যাতে বাল্টিক, পূর্ব ইউরোপের দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞরা ছিলেন তারা লাটভিয়া, লিথুনিয়া, মেসিডোনিয়া এবং মালডোবা ইত্যাদি দেশে শিশু নির্যাতনের কারণ পর্যালোচনা করেন। এ দেশগুলোতে যথাক্রমে ৩৩%, ৪২%, ১৮% এবং ৪৩% শিশু কমপক্ষে একটি শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের পাওয়া ফলাফলের মতে, বাবা-মায়ের চাকুরি করা বা বেকার থাকা, মদ্যপান, পারিবারিক আকার ইত্যাদির সাথে শিশু নির্যাতনের সম্পর্ক রয়েছে। চারটি দেশের মধ্যে তিনটি দেশেই বাবা-মায়ের বস্তুগত নির্যাতনের সাথে শিশু নির্যাতনের সম্পর্ক পাওয়া গেছে এবং যদিও খুব কম হার দেখাচ্ছে তবুও এটি চতুর্থ দেশেও পাওয়া গেছে। প্রত্যেকটি দেশেই দেখা গেছে বাড়ির বাইরে কাজ করেন না এমন পিতার উপস্থিতির সাথে শারীরিক অথবা মানসিক শিশু নির্যাতনের সম্পর্ক রয়েছে।

সাংস্কৃতিক এই পার্থক্য অনেক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পর্যালোচনা করা যায়। বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল সবদেশেই বাবা-মায়ের আচরণ একেক রকম। একটি সংস্কৃতিতে একটি আচরণ একেকভাবে গ্রহণ করা হয় এবং হয়ত অন্য সংস্কৃতিতে তা অগ্রহণযোগ্য। এক দেশে হয়ত যেটা স্বাভাবিক অন্য দেশে তা নির্যাতন বলে ধরা হয় এসবই ঐ দেশের সামাজিক রীতিনীতি।

এশিয়ার বাবা-মায়ের দৃষ্টিভঙ্গি বিশেষত আদর্শগত দৃষ্টিভঙ্গি আমেরিকানদের থেকে আলাদা। অনেকেই তাদের ঐতিহ্যগত সংস্কৃতিতে শারীরিক এবং আবেগের নৈকট্যকে জীবনভর বন্ধনের সিড়ি বলে মানেন আবার শিশুর প্রতি বাবা-মায়ের কতৃত্বপূর্ন আচরণ প্রতিষ্ঠা এবং শিশুকে নিয়মানুবর্তীতা শেখাতে শক্ত নিয়মকানুন মেনে চলার ঐতিহ্যগত রীতিনীতেতে জোর দেন। বাবা-মায়ের দ্বায়িত্বের পাশাপাশি নিয়মানুবর্তীতা শেখানোর প্রথা এশিয়ান সংস্কৃতিতে অতি সাধারণ যেমন চীন, ভারত, সিংগাপুর, ভিয়েতনাম এবং কোরিয়া। কিছু সংস্কৃতিতে, জোর করে বাবা-মায়ের কতৃত্ব করাকে শিশু নির্যাতন হিসেবে দেখা হয় কিন্তু অন্য সংস্কৃতিতে যেমন এশিয়ারগুলোয় এটিকে বাবা মায়ের সন্তানের প্রতি মনোযোগ হিসেবে দেখা হয়।

সংস্কৃতিতে এমন ভিন্নতার কারণে শিশু নির্যাতন যখন গবেষণা করা হয় তখন এসব বিষয় বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।

২০০৬ সালের হিসাব মোতাবেক, কঙ্গোর কিনশাসাতে ২৫০০০ থেকে ৫০০০০ হাজার শিশুকে ডাইনি শিশু হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে এবং তাদের বর্জন করা হয়েছে। মালাউইতে শিশুদেরকে ডাইনী আখ্যা দেয়া স্বাভাবিক ব্যাপার এবং অনেক শিশুকে বর্জন করা হয়, নির্যাতন করা হয় এবং শেষতক হত্যারও নজির আছে। নাইজেরিয়ায় আকওয়া ইবোম স্টেট এবং ক্রস রিভার স্টেটে প্রায় ১৫০০০ শিশুকে ডাইনী আখ্যায়িত করা হয়।

২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে, দক্ষিণ কোরিয়ায় জনসাধারনের প্রচার থেকে দেখা যায় শিশু নির্যাতন প্রায় ১৩% বেড়েছে গত বছরের তুলনায় এবং ৭৫% শিশুর বাবা-মা'ই হল আক্রমণকারী।

উন্মোচন এবং পরীক্ষা

শিশু নির্যাতন 
নির্যাতন প্রকাশ করার কাজে অনেক সময় পুতুলের সাহার্য নেয়া হয়।

যে শিশু এখনো স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে না তার ক্ষেত্রে যখন কোন আঘাত হয় (কোন অস্বাভাবিক জায়গায় বা একের অধিক আঘাত যা এখনো শুকায়নি এমন উপসর্গ) তাহলে তাকে শারীরিক নির্যাতন বলে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ রয়েছে

অনেক আইনেই, নির্যাতন যাকে সন্দেহ করা হচ্ছে কিন্তু প্রমাণ করা হয়নি এমন ঘটনাকে শিশু নিরাপত্তা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে জানানো হয যেমন যুক্তরাষ্ট্রের শিশু নিরাপত্তা সেবা, তার স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের (প্রাথমিক যত্ন প্রদানকারী এবং নার্স) সুপারিশ করে থাকে তারা যেন নির্যাতনের প্রাথমিক লক্ষণ প্রকাশ পেলে শিশুটিকে যেন তাৎক্ষনিক নিরাপত্তার দেয়া হয়। সন্দেহউদ্রেককারী নির্যাতনকারীর থেকে আলাদা কোন পরিবেশে নির্যাতিতকে সরানো হয় যাতে তার সাথে সাক্ষাৎকার ও পরীক্ষা করা যায়। যেসব গল্প মূল ঘটনার সাথে যুক্ত নয় তা এড়িয়া যাওয়া হয়। যেহেতু নির্যাতনের বর্ণনা মানসিক চাপের হতে পারে কখনো কখনো লজ্জাজনক। নির্যাতিত শিশুকে বারবার প্রেষনা দিতে হয় যে সে ঠিক কাজটিই করছে, সে খারাপ নয়, সে কোন খারাপ কাজ করে নি এবং নির্যাতনটি অবশ্যই তাদের দোষে ঘটে নি। পুতুলের সাহায্যে শিশুরা অনেক সময় কি ঘটেছে তা বর্ণনা করে থাকে। সন্দেহউদ্রেককারী নির্যাতনকারীর বেলায় সুপারিশ করা হয় কোন অপরিপক্ক সিদ্ধান্ত না নিতে, হুমকি না দেখাতে এবং নিজেরা কতটা বিস্মিত বা খারাপ বোধ করছে তা প্রকাশ না করতে যাতে করে তার কাছ থেকে তথ্য আদায় করা যায়।

মূল্যায়ন

শিশু নির্যাতন সম্পর্কে কাজ করার একটি অংশ হল মূল্যায়ন করা।

শিশু নিরাপত্তা কর্মীরা যখন পরিবারগুলোকে মূল্যায়ন করেন যা শিশু নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত তখন একটি বিশেষ প্রতিদন্ধীতার মুখে পড়েন। মূল্যায়ন করার সময় এসব ভুলগুলো হয়ে থাকে:

  • সঠিক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে ভুল করা যেমন
    • অবহেলা বা নির্যাতন কি আসলেই হচ্ছে;
    • হলে তা কেন;
    • শিশুর জন্য পরিবেশটি কেমন;
    • পরিবারকে সঠিক পথ দেখানোর পর তা কি বজায় থাকবে;
    • শিশুর দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তার জন্য কি করা প্রয়োজন?

প্রতিরোধ

বাবা-মায়ের দক্ষতা উন্নয়নে একটি সহায়তাকারী দল গঠন করা এবং শিশুর পরিচর্যাকে পর্যবেক্ষণ করা। সামাজিক-কর্মী বা নার্সদের মাধ্যমে ভিজিট বাড়িয়ে শিশু ও শিশুকে লালনকারীদের অবস্থা সম্পর্কে জানা।

সহায়তাকারী দল এবং হোম নার্স ভিজিট দুটো পরস্পর নির্ভরশীল। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে এ দুটো একসাথে পরিচালনা করতে পারলে ফলাফল ভাল আসে।

শিশুদের স্কুলে ভাল স্পর্ষ ও খারাপ স্পর্ষ সম্পর্কে দলগতভাবে শিক্ষা দেয়া এবং শেখানোর মাধ্যমে ক্ষতিকর অবস্থাগুলো এড়ানো যায়। শিশু চিকিৎসকরা কোন শিশু যদি নির্যাতন বা দু্র্ব্যবহারের শিকার বা ঝুকিতে থাকে তা চিহ্নিত করতে পারে এবং সেটা সমাজসেবিকা বা কর্মীর সাথে যোগযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। শিশু নির্যাতন চিহ্নিত করতে ভিডিও কনফারেন্স পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে জরুরী এবং দূরবর্তী জায়গার ক্ষেত্রে। অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারন শিশু নির্যাতনের মাত্রা বাড়ায়, এবং বড় পরিবারে শিশু অবহেলার শিকার হয়। একটি গবেষণায় ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স বলে যে সামর্থ্যবান গর্ভাবস্থা সেবার মাধ্যমে শিশু নির্যাতন বন্ধের মূল তৈরী করা যেতে পারে। আমেরিকার সার্জন জেনারেল সি. এভেরট কুপের মতে "কার্যকরী শিশু নির্যাতন বন্ধের শুরুটা হল গর্ভধারনের পরিকল্পনা নেয়া।

১৯৮৩ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করে শিশু নির্যাতন নিরোধ মাস হিসেবে এপ্রিল মাসকে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সেই ধারা অব্যাহত রাখতে ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসকে শিশু নির্যাতন বন্ধের মাস ঘোষণা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সরকার শিশু-নির্যাতন বন্ধের একটি পথ তৈরী করে কমিউনিটি ভিত্তিক শিশু নির্যাতন এবং অবহেলা বন্ধের জন্য ভাতা প্রদানের মাধ্যমে।

শিশু নিরাপত্তার সামষ্টিক সম্পদ কখনো কখনো অপর্যাপ্ত হতে পারে। হোসিনের মতে (২০০৭), " শিশু নির্যাতনের শিকার হওয়া একটি বিবেচনা করার মত অংশ শিশু নিরাপত্তার আওতায় আসেনি।"

চিকিৎসা

বেশ কয়েকটি চিকিৎসা শিশু নির্যাতনের শিকার শিশুটির জন্য রয়েছে। যদিও নির্যাতিত শিশুটি সহজে নির্যাতনের বিষটি থেকে মুক্ত হয় না। কগনিটিভ বিহেভেরিয়াল থেরাপিটি প্রথম অবস্থায় বের করা হয় যৌন নির্যাতনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুকে সহায়তা করার জন্য কিন্তু বর্তমানে এই পদ্ধতি যে কোন প্রকার নির্যাতনের শিকার শিশুর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এটি নির্যাতনের সঙ্গে সম্পর্কিত উপসর্গগুলোকে উপশক করে যেমন পোষ্ট ট্রমাটিক ডিসঅর্ডার, ক্লিনিকাল ডিপ্রেশন এবং উদ্বেগ। এতে অন্যায় করেন নি এমন বাবা-মায়ের জন্য একটি ব্যবস্থা রয়েছে। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যৌন নির্যাতনের শিকার শিশু উন্নতি করছে অন্য যে কোন থেরাপির চেয়ে। যারা যৌন নির্যাতন ছাড়া অন্য ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে তথ্য অপ্রতুল।২০০৬-এর হিসাব অনুযায়ী. এইভাবে থেরাপির উদ্দেশ্য হল শিশুকে হঠাৎ করে নির্যাতনের ঘটনা মনে আসা, রাতে দুঃস্বপ্ন দেখা এবং অন্যান্য অভিজ্ঞতা ইত্যাদি থেকে শিশু মনকে ও চিন্তা ভাবনাকে সরিয়ে নিয়ে আসা। এর ফলে চারপাশের পরিবেশ দেখে, শুনে অথবা ঐ বিশেষ অবস্থার তুল্য কোন অবস্থার সৃষ্টি হলে শিশুর যাতে ভয়, রাগ, দুঃখবোধসহ অন্যান্য নেতিবাচক চিন্তা মন থেকে সরিয়ে ফেলা বা কমানো। অন্য কথায়, ব্যক্তিটির নির্যাতনের ঘটনার বা তদরূপ আবেগের প্রতি বিশেষ নিয়ন্ত্রণ লাভ করা।

নির্যাতনের উপর আলোকপাত করে কগনিটিভ বিহেভেরিয়াল থেরাপিটি তৈরি করা হয় সেই সব শিশুদের জন্য যারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এটি বাহ্যিক আচরণ এবং সামাজিক আচরণকে শক্তিশালী করার প্রতি গুরুত্ব দেয়। যারা এই অন্যায় করেছেন (বাবা-মা বা তত্বাবধানকারী ব্যক্তি) তাকেও এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে যুক্ত করা হয় যাতে তার লালন পালন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও বুঝতে শিখে। এটি একটি গবেষণালব্ধ তথ্য

যৌক্তিক কগনিটিভ আবেগিয় আচরণ থেরাপিতে দশটি আলাদা কিন্তু আন্ত-সম্পর্কযুক্ত ধাপ জড়িত। এগুলো আবার তিনভাগে বিভক্ত যেমন যৌক্তিক বা সমাধান ভিত্তিক, কগনিটিভ ইমোটিভ, এবং আচরণগত)। এগুলোর উদ্দেশ্য হল শিশুকে এবং তার তত্ত্বাবধানকারীকে ইতিবাচক আচরণগত পরিবর্তন আনতে, আন্তমানবিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং নিজেদের সম্পর্ক ও নিজেদের উপর আস্থা ও নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি। এগুলো হল ১) চিন্তা ভাবনা ও আচরণকে সাধারণ পর্যায়ে নিয়ে আসা, ২) ভাষার মূল্যায়ন করা, ৩) সমস্যামূলক কথাবার্তা থেকে মনোযোগ সরানো ৪) কখন সম্পর্কে সমস্যা হয় না তা বর্ণনা করা, ৫) কীভাবে পারিবারিক সদস্যদের সাথে সফলভাবে সম্পর্কগত আচরণ বৃদ্ধি করা যায় তাতে আলোকপাত করা; ৬) ভাল লাগে না এমন আবেগকে শিকার করা (যেমন, রাগ, দুঃখ, ভয়) নেতিবাচক মিথস্ক্রিয়ার ধরন, ৭) অবস্থার নিয়ন্ত্রণ এবং নেতিবাচক আবেগি আচরণের সংযুক্তি (বিপরীতমুখী চিন্তার ভূমিকা) ৮) আগে নির্যাতনের শিকার হওয়া শিশুকে নিজের ভেতরে তৈরী হওয়া নেতিবাচক চিন্তার মুখোমুখি হওয়া এবং তার ক্ষতিকর আবেগি দিক বের করা ৯) ইতিবাচক চিন্তাকে উৎসাহিত করা এবং আদর্শ হিসেবে স্থাপন করা এবং ১০) ভিন্ন ধরনের চিন্তা চেতনা এবং আচরণকে উৎসাহ যোগানো এবং পুরস্কৃত করা।

শিশু-বাবা মায়ের মিথস্ক্রিয়ার থেরাপি তৈরি করা হয় শিশু ও তত্বাবধানকারীর সম্পর্কে উন্নতি করার জন্য যা ঘরে হিংসাত্মক আচরণ পরবর্তী সময়ে করা হয়। এটি নির্যাতনের শিকার হওয়া শিশুরা যারা একেবারে বাচ্চা, স্কুলে যাওয়া শুরু করেনি এমন শিশুদের নির্যাতন পরবর্তী উপসর্গসমূহ যেমন পিটিএসডি, আগ্রাসী আচরণ, নির্দেশ না মানা এবং উদ্বেগের উৎস সম্পর্কে আলোকপাত করে। এটি দুটি গবেষণা দ্বারা সমর্থিত।

অন্য ধরনের চিকিৎসার মধ্যে আছে দলগত থেরাপি, খেলাধূলার থেরাপি এবং ছবি আকার থেরাপি। প্রত্যেক ধরনের চিকিৎসা ব্যবহার করা যায় শিশুটি কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা বিবেচনা করে। খেলার থেরাপি এবং ছবি আকার থেরাপি হল শিশুকে অন্য থেরাপি দেয়ার আগে প্রদত্ত থেরাপি যেখানে শিশুকে অানন্দময় অভিজ্ঞতা দেয়া হয় যেমন রং করা, আকা, ছবি আকা ইত্যাদি। শিশুটি যা আকছে তা হতে পারে শিশুটির মনের ভেতরে কি চলছে তার ছাপ যার সঙ্গে পরিবার, বন্ধু এবং আরো অনেক কিছু জড়িত থাকতে পারে। শিশুর আকা দেখে কোন বিশেষজ্ঞ শিশুটি সম্পর্কে আরো ভাল ধারণা লাভ করতে পারেন।

বিস্তার

গবেষণার বিষয় হিসেবে শিশু নির্যাতন একটি জটিল এবং কঠিন বিষয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দেশ অনুসারে শিশু দু্র্ব্যবহারের হারে পার্থক্য রয়েছে, যেহেতু সব দেশেই শিশু দু্র্ব্যবহারের সংজ্ঞা এক নয় এবং যে ধরনের গবেষণা করা হয় তাও এক নয়, সুযোগ এবং তথ্য সংগ্রহের মান ও জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা ক্ষেত্র বিশেষে কঠিন হয়। এছাড়া তত্ত্বাবধানকারীকে করা প্রশ্নগুলিও সঠিক হয় না। এসমস্ত সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও, আর্ন্তজাতিক গবেষণায় পাওয়া যায় যে তিন ভাগ বয়স্কই শিশু থাকা অবস্থায় শারীরিক নির্যাতনের অভিজ্ঞতা লাভ করেছে এবং ৫ জনের মধ্যে ১ জন নারী এবং ১৩ জনের মধ্যে ১ জন পুরুষ শিশুকালে যৌন নির্যাতনের শিকার হন। মানসিক নির্যাতন এবং অবহেলাও সাধারণ শিশুকালীন নির্যাতনের অভিজ্ঞতার মধ্যে পড়ে।

২০১৪-এর হিসাব অনুযায়ী, ১৫ বছরের নিচে ৪১০০০ শিশুই হত্যার শিকার হয় প্রতি বছর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বয়ান দেয় যে এই সংখ্যা সঠিক নয় একেবারেই কম, সত্যিকারের শিশু হত্যার পরিসংখ্যান জানা যায় না। শিশু হত্যার বা মারা যাবার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হয় শিশুর অবহেলা এবং দুর্ব্যবহার যার ফলে পড়ে যাওয়া, পুড়ে যাওয়া এবং ডুবে যাবার মত ঘটনা ঘটে। মেয়ে শিশুরা বিশেষভাবে যৌন হিংসাত্মক আচরণের ঝুকিতে থাকে, ব্যবসায় নিযুক্ত করা এবং নির্যাতনের শিকার হয় কোন অস্ত্র যুদ্ধের সময় এবং সমাশ্রয় পরিবেশে, তা হতে পারে যোদ্ধা, নিরাপত্তা রক্ষী, কমিউনিটির কোন সদস্য, সাহায্যকারী কর্মী অথবা অন্য কেউ

যুক্তরাষ্ট্র

জাতীয় গবেষণা কাউন্সিল ১৯৯৩ সালে লিখে "...প্রাপ্ত প্রমানাদি এই রায় দেয় যে শিশু নির্যাতন এবং অবহেলা হল যুক্তরাষ্ট্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ, এবং ব্যপকহারে বিস্তার হওয়া সমস্যা[...] শিশু নির্যাতন এবং অবহেলা শিশুকালে ঘটা অন্যান্য সমস্যার মধ্যে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ তারা সরাসরি শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে জড়িত"।:

২০১২ সালে, শিশু নিরাপত্তা সেবা প্রতিষ্ঠান অনুমান করে প্রায় ১০০০ শিশুর ৯ জন শিশুই যুক্তরাষ্ট্রে শিশু দু্র্ব্যবহারের শিকার। ৭৮ ভাগ অবহেলার শিকার। শারীরিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, এবং অন্য ধরনের দু্র্ব্যবহারের শিকার হওয়া শিশুর পরিমান ছিল কম যথাক্রমে ১৮%, ৯%, এবং ১১% ভাগ ("অন্য ধরনের নির্যাতন" হল মানসিক নির্যাতন, ড্রাগ নির্যাতন, এবং তত্বাবধানের সল্পতা)। শিশু নিরাপত্তা সেবার রিপোর্টটি হয়ত শিশু দু্র্ব্যবহারের শিকার হওয়া শিশুর সংখ্যা সঠিক ভাবে বলতে অক্ষম। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন একটি অন্য গবেষণায় বলে প্রতি চার জনে একজন শিশু দু্র্ব্যবহারের শিকার হয় তাদের জীবনে।

২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমেরিকান পাবলিক হেলথ এসোসিয়েশন ওয়াশিংট বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা প্রকাশকরে সেখানে ৩৭ শতাংশ আমেরিকান শিশু শিশুকালে বা ১৮ বছরের আগে শিশু নিরাপত্তা সেবার তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন ( আফ্রো-আমেরিকানের ক্ষেত্রে তা ৫৩%)।

ডেভিড ফিনকেলহর শিশু দু্র্ব্যবহারের রিপোর্টগুলোর রেকর্ড জমা করেছেন ১৯৯০ সাল থেকে ২০১০ পর্যন্ত। তিনি বলেন যে ১৯৯২ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত যৌন নির্যাতনের হার ৬২% শতাংশ কমে এসেছে। ১৯৯২ থেকে দীর্ঘ-মেয়াদি শারীরিক নির্যাতনের হারও নেমে এসেছে ৫৬% শতাংশে। যৌন নির্যাতন কমার প্রবণতা বর্তমানে দীর্ঘ-মেয়াদি ইতিবাচক প্রবণতাকে সমর্থন করে। তিনি বলেন: "এটি দুভার্গ্যজনক যে শিশু দু্র্ব্যবহারের প্রবণতার তথ্য ভালভাবে প্রকাশিত হয় না এবং সর্বস্তরে পৌছায় না। জনসাধারণের নীতি স্থাপনে দীর্ঘ মেয়াদি যৌন এবং শারীরিক নির্যাতনের নিহিতার্থ গুরুত্বপূর্ণ"

ডগলাস জে. বেশারব, শিশু নির্যাতন এবং অবহেলার ইউ.এস. সেন্টারে প্রথম পরিচালক, বলেন " বর্তমানে যে সকল আইন আছে তা অস্পষ্ট এবং একেবারেই বিস্তৃত" এবং শিশু নিরাপত্তা সেবা ও শিশু বিশেষজ্ঞের মধ্যে ঐক্যমতের অভাব রয়েছে নির্যাতন এবং অবহেলা বলতে কি বুঝায়।" সুসান ওর, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য দপ্তরের শিশু বুরোর প্রধান এবং শিশুর জন্য সেবা দপ্তর ও পরিবারের প্রধান (২০০১-২০০৭), বলেন "শিশু নির্যাতন এবং অবহেলা হিসেবে বর্তমানে যা ধরা হয় তা সরকারের পরাধীকার চর্চাকে প্রশংসার যোগ্য করে না"

একটি শিশু নির্যাতন মারাত্মক হয় যখন কোন শিশুর এতে মৃত্যু হয় অথবা যখন নির্যাতন অথবা অবহেলা যদি শিশু মৃত্যুর কারণ হয়। যুক্তরাষ্ট্রে, ১.৭৩০ শিশু ২০০৮ সালে মারা যায় যার সাথে নির্যাতনের বিষয়টি জড়িত ছিল; এটি ১০০,০০০ শিশুতে ২ জন হারে ঘটেছে। যেসব অবস্থা শিশুর জন্য মঙ্গল নয় তার মধ্যে আছে ঘন ঘন বাসা পাল্টানো, বেকারত্ব এবং পরিবারের সদস্য নয় এমন কেউ যদি পরিবারে বাস করে। শিশু নির্যাতনের মারাত্মক ফলাফল এড়াতে আমেরিকায় বেশকিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে যেমন সেফ হেভেন ল, শিশুর মারাত্মক অবস্থার পর্যালোচনা দল, তদন্তকারীর জন্য প্রশিক্ষন, শেকেন বেবি সিনড্রোম বন্ধ করার প্রোগ্রাম, এবং শিশু নির্যাতন মৃত্যু আইন যা শিশুকে কঠিন বাক্য না বলার আইন জারি করে।

আইনি সিদ্ধান্তে (শিশু কাস্টডি বিষয়ে) দেখা গেছে যে বাবা-মা'রা বাসায় সঠিকভাবে জাতীয় মান অনুযায়ী ভাষার প্রয়োগ করতে পারে না যা এক ধরনের শিশু নির্যাতন এমন রায় দিয়েছে একজন বিচারক।

সমাজ এবং সংস্কৃতি

ইতিহাস

পুরো ইতিহাস জুড়ে বিভিন্ন সময়ে শিশু নির্যাতন অথবা শিশু দু্র্ব্যবহারের শিকার হচ্ছে এমন সূত্র পাওয়া যায়, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এই ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে শুরু করেন ১৯৬০ দশকে। ১৯৬২ সালে প্রকাশিত একটি আর্টিকেল "বার্টারড শিশু উপসর্গ" যা শিশু বিশেষজ্ঞ মনোবিজ্ঞানী সি. হেনরি কেম্প প্রকাশ করেন। এই বিষয়টিকে শিশু দু্র্ব্যবহার সম্পর্কে সর্তকতা ও সচেতনতার প্রতি গুরুত্ব দেবার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে গণনা করা হয়। এই লেখাটি প্রকাশের আগে, শিশুর আঘাত পাওয়া যার ফলে হাড়ে চিড় ধরতে পারে এমন বিষয়কে ইচ্ছাকৃত ট্রমা হিসেবে ধরা হত না। তার পরিবর্তে, শরীর বিশেষজ্ঞরা একে হাড়ের রোগ বা মেনে নেওয়া যায় এমন অজুহাত হিসেবে দেখত যেমন পড়ে যাওয়া বা প্রতিবেশী শিশুদের সাথে ঝগড়া ইত্যাদি হিসেবে দেখত।:১০০–১০৩

উনবিংশ শতাব্দি জুড়ে ১৯৭০ দশক পর্যন্ত, কিছু পশ্চাত্য দেশে নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠির শিশুদেরকে তাদের পরিবার ও সম্প্রদায় থেকে আলাদা করা হত, একাজটি করত রাষ্ট্র এবং চার্চ কর্তৃপক্ষ। তারা তাদের অন্য সমাজ গোষ্ঠির অর্ন্তভূক্ত হতে বাধ্য করত। এমন নীতিতে অর্ন্তভূক্ত ছিল স্টোলেন জেনারেশন (অস্ট্রেলিয়ার আদিজাতি এবং টোরেস স্ট্রেইট ইজlএন্ডারস শিশুরা) এবং কানাডার ইন্ডিয়ান রেসিডেন্সিয়াল স্কুল ব্যবস্থা (কানাডার ফার্স্ট নেশন, মেটিস এবং ইনুইট), এমন শিশুরা প্রায়শই মারত্মক নির্যাতনের শিকার হত।

যুক্তরাষ্ট্রে শিশু নির্যাতন এবং অবহেলার বিষয়টি পাঠ্য বিষয় হিসেবে আসে ১৯৭০ দশকের শুরুতে। এলিজাবেথ ইয়ং-ব্রুহল এটি এখনো বজায় রেখেছেন যদিও শিশু প্রবক্তা ও শিশুদের রক্ষার আগ্রহ অনেক বেড়েছে। শিশুদের "নির্যাতিত" এবং "অ-নির্যাতন" দলে ভাগ করায় একটি অদৃশ্য বিভক্তি তৈরী হয়েছে যা শিশু অধিকার বিষয়টির ধারনাকে সীমিত করে ফেলেছে শুধুমাত্র দুব্যর্বহার থেকে রক্ষা অর্থে, এবং সাধারণভাবে শিশুরা সমাজে যেভাবে বৈষম্যের শিকার হয় তা তদন্তের পথ ব্যহত হয়েছে। ইয়ংয়ের মতে অন্য একটি প্রভাব হল শিশুরা নির্যাতনকে কীভাবে নিচ্ছে এবং বড়রা তাদের সাথে যেভাবে আচরণ করে তার প্রতি তারা কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে। তিনি লিখেন কোন সমাজে শিশুদের মধ্যে যদি বড়দের কাছে নিকৃষ্টরূপে থাকতে হয় এই বিশ্বাস জন্মায় তখন সব শিশুই নির্যাতনের ভুক্তভোগী হয়।:১৫–১৬

শিশু শ্রমিক

শিশু শ্রমিক বলতে বুঝায় কোন শিশুকে শিশুকালের সময় অতিবাহিত হবার পূর্বে কোন কাজে নিযুক্ত করা যা তাদের নিত্য স্কুলে যোগদানের পথে অন্তরায়, মানসিক, শারীরিক, সামাজিক অথবা নৈতিকতার জন্য বিপদজনক এবং ক্ষতিকর। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা এই ধরনের শ্রমিককে শোষন বলে বিবেচনা করে এবং শিশু নির্যাতন বলে মানেন। শিশু শ্রমিক সেই সমস্ত পেশাকে বুঝায় যেটা শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের পথে বাধা হয়ে দাড়ায় (হতে পারে তা চাকরির পদ্ধতির কারণে বা সঠিক নিয়ন্ত্রণের কারণে) এবং যা বয়স অনুযায়ী নয় এবং যেখানে সঠিক দিকনির্দেশকের প্রয়োজন হয় এমন কাজে যদি কোন শিশু ব্যবহৃত হয় তবে তা শিশু শ্রমিকের পর্যায়ে পড়বে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মতে বৈশ্বিকভাবে, প্রায় ২১৫ মিলিয়ন শিশু কাজ করে তার মধ্যে আবার অনেকে পূর্ণ সময় কাজ করে। এদের অনেকেই স্কুলে যায় না, সঠিক পুষ্টি পায় না এবং খেলাধূলার পর্যাপ্ত সময় পায় না। তাদের অর্ধেকের বেশি অতি খারাপ ধরনের শিশু শ্রমিক হিসেবে কাজ করে, যেমন শিশু দেহব্যবসা, মাদক পাচার, সমরাস্ত্রের যুদ্ধক্ষেত্র এবং অন্যান্য বিপদজনক পরিবেশে শিশুদেরকে শিশু শ্রম থেকে বাচাবার জন্য অনেক পন্থা রয়েছে, যেমন সর্বনিম্ন বয়সের নীতি, ১৯৭৩ এবং খারাপ ধরনের শিশু শ্রমিক নীতিমালা।

জননাঙ্গ বিকৃতকরণ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী নারী জননাঙ্গের অল্প বা পুরোটাই কেটে ফেলা বা চিকিৎসা ব্যতিত অন্য কোন কারণে ক্ষতি করা বা আঘাত করা হলে তাকে জননাঙ্গ বিকৃত বলে ধরা হবে। আফ্রিকার ২৮টি দেশে এটা প্রধানত ঘটে থাকে এবং এশিয়ার কিছু অংশেসহ মধ্য প্রাচ্যেও এটি ঘটে থাকে। এটি ভৌগোলিকভাবে আফ্রিকার পূর্ব থেকে পশ্চিমে, সোমালিয়া থেকে সেনেগালে হয়ে থাকে, এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে - মিশর থেকে তানজিনিয়ায় হয়। ছোট শিশু থেকে ১৫ বছর বয়সের শিশুদের মধ্যে এটা করা হয়। চারভাগে একে ভাগ করা যায় যার মধ্যে তৃতীয়টি সবচেয়ে মারাত্মক একে ইনফিবিউলেশন বলা হয়। বিকৃতকরণের ফলে শারীরিক, মানসিক এবং যৌন সমস্যা দেখা দেয় এবং শিশু জন্মদানের সময় ভীষন সমস্যা দেখা দেয় পশ্চিমের দেশগুলোতে এই ধরনের কাজ অবৈধ এবং একে এক ধরনের শিশু নির্যাতন হিসেবে ধরা হয়। যেসব দেশ ইস্তাম্বুল চুক্তিতে সমর্থন করেছেন সেটি ইউরোপের প্রথম নারীর প্রতি হিংসাত্মক আচরণ এবং বাড়িতে হওয়া হিংসাত্মক আচরণ বন্ধের প্রথম পদক্ষেপ এবং এই নীতি অনুযায়ী জননাঙ্গ বিকৃতকরণ হল একটি অপরাধ। অস্ট্রেলিয়ায় সব অঙ্গরাষ্ট্রই জননাঙ্গের বিকৃত করণকে নিষিদ্ধ এবং বেআইনি ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৯৬ সাল থেকে ১৮ বছরের নিচে কাউকে জননাঙ্গ বিকৃতকরণ নিষিদ্ধ ও বেআইনি

শিশুকে ডাইনী অভিযোগে হিংসাত্মক আচরণ

পৃথিবীর অনেক দেশে এমনকি শিক্ষিত দেশেও প্রথাগত বিশ্বাস রয়েছে শিশুরা ডাইনী বা যাদু টোনা বা বান ইত্যাদি জানে বা করে। এটি বিশেষত আফ্রিকায় বেশি হয়ে থাকে। আফ্রিকায় শিশুর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজর কেড়েছে একবিংশ শতাব্দির প্রথম দিকে। এমন অভিযোগের শিশুরা সাধারণত এতিম, পথ শিশু, আলবিনো বা যাদের চুল, চামড়া, চোখের রং স্বাভাবিকের চেয়ে অন্য রকম হয় এমন শিশু, বিকলাঙ্গ শিশু, যেসব শিশু অস্বাভাবিকভাবে বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী, যেসব শিশু পূর্নাঙ্গতা লাভের পূর্বেই জন্মেছে বা জন্মলাভ করেছে ভিন্ন রকম পজিশানে এবং জমজ। আফ্রিকায় এরকম অভিযোগে অভিযুক্তরা বিপদের মধ্যে থাকে কারণ ডাইনীদের সাংস্কৃতিকভাবে দুষ্টের চিহ্ন হিসেবে ধরা হয় এবং তারা নাকি সমস্ত রোগ শোক ডেকে আনে। ফলত, যাদের এমনটা ভাবা হয় তারা প্রায়শই শাস্তি, নির্যাতন, একঘরে করাসহ এমনকি হত্যাও করা হয়।

ইউনিসেফ, ইউএনএইচসিআর, সেভ দ্য চিলড্রেন এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ রিপোর্টে আফ্রিকান শিশুর প্রতি ডাইনি অভিযোগে হিংসাত্মক আচরণ এবং নির্যাতনের বিষয় উঠে এসেছে। ২০১০ সালে ইউনিসেফ রিপোর্ট করে যে শিশুরা এমনকি আট বছরের শিশুকে পোড়ানো, পেটানো এবং হত্যাও করা হয়েছে ডাইনি বা যাদু জানে এমন অপরাধে। রিপোর্টে উল্লেখ্য যে শিশুর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ সাম্প্রতিক সাধারণত আগে মহিলা ও বৃদ্ধদের এমন অভিযোগে অভিযুক্ত করা হত। ইউনিসেফ আরো যোগ করে যে শিশুরা এমন ঝুকিতে পড়ে শহরাঞ্চলেও এবং সামাজিক সমস্যা যা যুদ্ধ থেকে সৃস্টি হয়।

দক্ষিণ ইথিওপিয়ায়, শারীরিক অস্বাভাবিকত্ব প্রাপ্ত শিশুদের প্রথাগতভাবে অশুদ্ধ বা মিনজি খেতাব দেয়া হয়। মিনজিদের ভাবা হয় তারা অন্যদের উপর দুষ্ট দৃষ্টি, প্রভাব বিস্তার করতে পারে তাই যেসব শিশু বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মায় তাদের সঠিকভাবে কবরও দেয়া হয় না।

শিশু পাচার

শিশু নির্যাতন 
১৯৯০ সালে এল সালভাদরে একটি শিশু যোদ্ধা

শিশু পাচার হল কোন শিশুকে নিজ উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে ভাড়া করা, বহন করা, স্থানান্তর করা, লুকিয়ে রাখা অথবা গ্রহণ করা। শিশুদেরকে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে পাচার করা হয় যেমন বাণিজ্যিক যৌন কাজে ব্যবহারের জন্য, শ্রমের কাজের জন্য, উটের জকি হিসেবে ব্যবহারের জন্য, ঘরের কাজের জন্য, মাদক দ্রব্য পাচারের জন্য, যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য, বেআইনি পালক শিশু হিসেবে ব্যবহারের জন্য অথবা ভিক্ষার উদ্দেশ্যে। প্রতি বছর কি পরিমান শিশু সত্যিকার অর্থে পাচার হয় তার সঠিক হিসাব জানা কষ্টকর, প্রাথমিকভাবে যার কারণ হল বেআইনিভাবে ও লুকিয়ে তা করা হয়। আইএলও ধারণা করেছে যে ১.২ মিলিয়ন শিশু প্রতি বছর পাচার হয়।

সুইজারল্যান্ডে ১৮৫০ দশক থেকে বিংশ শতাব্দির মধ্যভাগ পর্যন্ত, ১০০ হাজারেরও বেশি শিশুকে তাদের বাবা-মা'র কাছ থেকে আলাদা করা হয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এবং বিভিন্ন খামারে কাজ করতে, নতুন অন্য কোন পরিবারের সাথে থাকতে পাঠানো হয়। এসব শিশু আসলে একক অভিভাবক বা গরিব বাবা-মায়ের শিশু ছিল এবং তাদের ফ্রি শ্রমিক হিসেবে চাষীরা ব্যবহার করত। এদের বলা হত চুক্তিভিত্তিক শিশু বা ভারদিংগকিন্ডার

এরকম শিশু বিক্রি ও অপহরণ বা ধরে নিয়ে যাবার আরো ঘটনা হল বিংশ শতকের হারিয়ে যাওয়া ফ্রাংকোইজম শিশুর ঘটনা (স্পেনে]) এবং মাদারস অব দ্যা প্লাজা ডি মায়োতে শিশু অদৃশ্য হবার ঘটনা (আর্জেন্টিনা)।

বাল্য বিবাহ

বাল্য বিবাহ হল দুজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক লোকের মধ্যে বিবাহ অথবা কোন প্রাপ্ত বয়স্কের সাথে কোন শিশুর বিবাহ যেখানে প্রায়ই দেখা যায় শিশুটি বয়সন্ধিকাল পেরোয়নি এমন। বাল্য বিবাহ পৃথিবীর অনেক জায়গায়ই সাধারণ ঘটনা, বিশেষত এশিয়া এবং আফ্রিকায়। যেহেতু ১৮ বছরের নিচে কোন ব্যক্তি বিয়েতে পূর্ন সম্মতি দিতে পারে না সেহেতু বাল্য বিবাহকে বলা হয় জোরপূর্বক বিবাহ। এরূপ বিবাহে শিশু নির্যাতনে গুরুতর আশঙ্কা থাকে। অনেক দেশেই এমন আচরণ আইনানুগ এবং এমনকি যেখানে এরূপ বিবাহ নিষিদ্ধ সেখানেও এর কোন প্রয়োগ নেই

ভারতে সবচেয়ে বেশি বাল্য বিবাহ হয় প্রায় ৪০% সারা বিশ্বের তুলনায়। সবচেয়ে বেশি বাল্য বিবাহ হয় এমন দেশ হল: নাইজার (৭৫%), মধ্য আফ্রিকান রিপাবলিক এবং চাদ (৬৮%), এবং বাংলাদেশ (৬৬%)।

নৈতিকতা

শিশু নির্যাতনের সাথে সম্পৃক্ত শিশুর তত্ত্ববধানকারীর সাথে বংশগত সম্পর্ক থাকায় তত্ত্বাবধানকারীর অধিকার বিষয়টি একটি জোরালো নৈতিক উভয় সংকট দ্বন্ধের জন্ম দেয় বিশেষত যেখানে চিকিৎসার বিষয়টি সামনে আসে। যুক্তরাষ্ট্রে, ২০০৮ সালে নিউ হ্যাম্পসায়ারের একটি কেসে এন্ড্রু বেডনার এই বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আর্কষন করেন যেখানে আইন ও নৈতিকতার সংঘর্ষ তৈরী হচ্ছে। বেডনারকে তার বাচ্চা শিশুটিকে জোরালোভাবে আহত করার অভিযোগ তোলা হয়, শিশুটিকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হবে কি না তার অধিকার নিয়ে মামলা করা হয়। শিশুটি বাচলে বেন্ডার হত্যা মামলার থেকে বেচে যাবে যা একটি মোটিভ তৈরি করে বেডনারের জন্য যাতে সে শিশুর সুরক্ষায় একটি সিদ্ধান্ত দিতে পারে বাইয়োইথিসিস্ট জ্যাকব এম. এপিল এবং থ্যাডিউস ম্যাসন পোপ সম্প্রতি বির্তক করেছেন দুটি আলাদা লেখায় এই নিয়ে যে নিউ হ্যাম্পসায়ার কেসের মত কোন ব্যাপারে এই সিদ্ধান্তে আসতে বাধ্য করে যে অভিযুক্ত তত্ত্ববধানকারীর স্থলে অন্য কোন সিদ্ধান্ত প্রদানকারীর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

শিশু নির্যাতনের সাথে গোপনীয়তার নৈতিকতার বিষয়টি জড়িত, যেহেতু নির্যাতনের শিকার শিশুটি শারীরিক অথবা মানসিকভাবে নির্যাতনে বিষযটি কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করতে পারে না। অনেক বিচার ব্যবস্থায় এবং পেশাজীবিরা গোপনীয়তার সাধারণ মানদন্ডের ছাড়ে এবং আইনি অধিকার বিধান রেখেছেন শিশু নির্যাতনের ক্ষেত্রে। চিকিৎসকরা (ডাক্তার, থেরাপি প্রদানকারী এবং অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্য কর্মীরা) কোন ব্যক্তিগত তথ্য ফাস করতে পারে না ঐ নির্যাতিত ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া (শিশুর ক্ষেত্রে বাবা-মার কাছে)। এই কর্তব্য পালনের ফলে শিশুদেরকে সাধারণ ক্ষতির মুখ থেকে তারাও সরাতে পারে না যেহেতু তারা দায়বদ্ধ তথ্য না ফাস করাতে। অন্যদিকে গোপনীয়তার এই নীতি কাজ করবে না যখন কোন চিকিৎসক পুরোপুরি নিশ্চিত হবেন যে শিশুটি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে সেক্ষেত্রে তিনি নিকটস্থ শিশু নিরাপত্তা সেবায় রিপোর্ট করবেন॥ এই নীতির ফলে পেশাজীবিরা গোপনীয়তার নীতি ভাঙ্গতে পারেন এবং কোন শিশুর বাবা-মা, তত্ত্ববধানকারীর মানা সত্ত্বেও তিনি এই রিপোর্ট করতে পারেন। ফিজিশিয়ান-রোগীর মধ্যেও শিশু নির্যাতনের ক্ষেত্রে এই নীতি বহাল থাকবে। কোন মেডিকেল পেশাজীবিকে ডাকা হতে পারে কোর্টে যাতে সে প্রমাণাদীর পক্ষে রিপোর্ট করতে পারে যদিও অনেক সময় পরিবার, বাবা-মা তা চান না। পশ্চিমাঞ্চলীয় কিছু দেশে শিশু নির্যাতনের এমন নীতির কারণে সমালোচনা করা হয়েছে এবং পারিবারিক বিষয় ফাস হবার কথা উদ্ভেগ সহকারে জানানো হয়েছে এবং নারীবাদি লোকেরা একে দুর্বল মহিলা বা শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মত দিয়েছেন। ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠকে অসমভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে এমন অভিযোগও উঠেছে।

সংগঠন

যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয়, অঙ্গরাষ্ট্রীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে সংগঠন রয়েছে যারা শিশু নির্যাতন এবং অবহেলা বন্ধে নেতৃত্বদান করেন। ন্যাশনাল এ্যালায়েন্স অব চিলড্রেন্স ট্রাস্ট ফান্ডস এবং প্রিভেন্ট চাইল্ড এবিউজ আমেরিকা দুটি জাতীয় পর্যায়ের সংস্থা যারা শিশু সুরক্ষায় কাজ করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

শিশু নির্যাতনের অনেক তদন্ত স্থানীয়ভাবে শিশু এডভোকেসি সেন্টার'র মাধ্যমে করা হয়, এটি শুরু হয়েছিল ২৫ বছর আগে। এ্যালবামার হান্টসভিলে ডিস্ট্রিক্ট এটর্নি রবার্ট "বাড" ক্রেমার বিভিন্ন আইনি সংস্থার দলের সাথে মিলিত হয়ে শিশু নির্যাতন সম্পর্কতি কেসগুলো কীভাবে দ্রুত এবং দক্ষভাবে সম্পন্ন করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করেন যাতে করে শিশুকে এমন আঘাত থেকে রক্ষা করা যায় এবং অপরাধ মজবুতভাবে প্রমাণ করা যায়। এসব শিশু উকিল সংগঠনকে সিএসি হিসেবে জানা যায়, তারা জাতীয় শিশু এ্যালায়েন্সের নীতি পালন করে।

অন্য সংস্থাগুলো বিশেষ নির্যাতন বন্ধে কৌশল প্রয়োগ করে। ন্যাশনাল সেন্টার অন শেকেন বেবি সিনড্রোম কাজ করে শুধুমাত্র শেকেন বেবি সিনড্রোমের ব্যাপারে। ম্যান্ডেটেড রিপোর্টার প্রশিক্ষন দেয়া হয় শিশু নির্যাতন চলছে এমন কেসের ক্ষেত্রে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

ন্যাশনাল ইন্সটিটিউন অব চাইল্ড হেলথ এবং হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট, একটি বড় সংস্থা কিন্তু শিশু নির্যাতন শিকার শিশুকে তার শাখাগুলোর মাধ্যমে সেবা দেয়। শিশু উন্নয়ন এবং আচরণ শাখার মাধ্যমে এনআইসিএইডি সচেতনতা বাড়ায় এবং এ সম্পর্কিত গবেষণা প্রকল্পগুলোকে আর্থিক সহায়তা করে যাতে করে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি শিশু নির্যাতন এবং অবহেলার প্রভাব বোঝা যায়। ১৯৮৪ সাল থেকে জাতীয় শিশু নির্যাতন বন্ধের মাস হিসেবে প্রতি বছর এপ্রিল মাস পালন করে এছাড়াও বিভিন্ন প্রোগ্রামের আয়োজন করে। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] যুক্তরাষ্ট্র চিলড্রেন বিউরো এপ্রিল মাসের কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিয়ে থাকে যাতে রয়েছে শিশু নির্যাতন এবং অবহেলার পরিসংখ্যান প্রকাশ, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, এবং নির্যাতন বন্ধ কার্যক্রমের জন্য অর্থ সংগ্রহ এবং নির্যাতনের শিকার শিশুর চিকিৎসা। ব্যুরোটি নীল ফিতার প্রচারাভিযান চালায় যাতে লোকেরা নীল ফিতা পরে যোগদান করে এতে নির্যাতনের ফলে মারা যাওয়া শিশুর কথা স্মরণ করা হয় এবং সেই সব সংস্থা ও মানুষের কথা উঠে আসে যারা নির্যাতন বন্ধে অগ্রগামী ভূমিকা রেখেছেন।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

Tags:

শিশু নির্যাতন সংজ্ঞাশিশু নির্যাতন প্রকারভেদশিশু নির্যাতন পরিণতিশিশু নির্যাতন কারণশিশু নির্যাতন উন্মোচন এবং পরীক্ষাশিশু নির্যাতন মূল্যায়নশিশু নির্যাতন প্রতিরোধশিশু নির্যাতন চিকিৎসাশিশু নির্যাতন বিস্তারশিশু নির্যাতন সমাজ এবং সংস্কৃতিশিশু নির্যাতন নৈতিকতাশিশু নির্যাতন সংগঠনশিশু নির্যাতন আরও দেখুনশিশু নির্যাতন তথ্যসূত্রশিশু নির্যাতন আরও পড়ুনশিশু নির্যাতন বহিঃসংযোগশিশু নির্যাতনশিশু যৌন নির্যাতন

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

নিউটনের গতিসূত্রসমূহবাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়হরে কৃষ্ণ (মন্ত্র)গঙ্গা নদীবাংলাদেশের সিটি কর্পোরেশনের তালিকাঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কম্পিউটার কিবোর্ডচেন্নাই সুপার কিংসএ. পি. জে. আবদুল কালামবেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশবাংলাদেশ সেনাবাহিনীসিফিলিসবইকিশোরগঞ্জ জেলাকক্সবাজারইতিহাসআসমানী কিতাবশিবশিব নারায়ণ দাসরক্তশূন্যতাভারতের রাষ্ট্রপতিদের তালিকাঅশ্বত্থকাজলরেখাদুর্গাপূজাবিরসা দাশগুপ্তবাংলাদেশের পোস্ট কোডের তালিকাইতালিদুবাইবাংলাদেশের পৌরসভার তালিকাবাংলাদেশের জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার তালিকাউমাইয়া খিলাফতপশ্চিমবঙ্গের নদনদীর তালিকাবিদ্যাপতিআইসোটোপআল-আকসা মসজিদঅন্ধকূপ হত্যাহারুন-অর-রশিদ (পুলিশ কর্মকর্তা)মীর জাফর আলী খানপ্রথম মালিক শাহইসলামের ইতিহাসজার্মানিঅষ্টাঙ্গিক মার্গগ্রামীণ ব্যাংকহুনাইন ইবনে ইসহাকলোহিত রক্তকণিকাপহেলা বৈশাখবাংলাদেশআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপইমাম বুখারীসূরা ইয়াসীনপলাশীর যুদ্ধবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহই-মেইলবাণাসুর২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপঅমর সিং চমকিলাইসনা আশারিয়াশিয়া ইসলামঋতুমেষ রাশি (জ্যোতিষ শাস্ত্র)দীপু মনিপেশাসুদীপ মুখোপাধ্যায়যোহরের নামাজবৈষ্ণব পদাবলিবিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবসতাপ সঞ্চালনঢাকা মেট্রোরেলসুলতান সুলাইমানতরমুজকাঠগোলাপবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকারামমোহন রায়বৃষ্টিবারমাকিবাংলাদেশের জনমিতি২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপহিট স্ট্রোক🡆 More