শার্লক হোমস ২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি অ্যাকশন-রহস্য ধাঁচের চলচ্চিত্র। এটি স্যার আর্থার কোনান ডয়েল সৃষ্ট শার্লক হোমস চরিত্রের উপর ভিত্তি করে নির্মিত। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন গাই রিচি এবং প্রযোজনা করেছেন জোয়েল সিলভার, লিওনেল উইগ্রাম, সুসান ডাউনি ও ড্যান লিন। চলচ্চিত্রটির গল্প লেখেন লিওনেল উইগ্রাম ও মাইকেল রবার্ট জনসন আর এর চিত্রনাট্য তৈরি করেন মাইকেল রবার্ট জনসন, অ্যানথনি পেকহ্যাম ও সায়মন কিনবার্গ। এতে শার্লক হোমস চরিত্রে অভিনয় করেন রবার্ট ডাউনি জুনিয়র এবং ড.
জন ওয়াটসন">ড. জন ওয়াটসন চরিত্রে জ্যুড ল। ছবিটি ২০০৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ও ২৬ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগরীয় অঞ্চলে মুক্তি পায়।
শার্লক হোমস | |
---|---|
পরিচালক | গাই রিচি |
প্রযোজক | জোয়েল সিলভার লিওনেল উইগ্রাম সুজান ডাউনি ড্যান লিন |
চিত্রনাট্যকার | মাইকেল রবার্ট জনসন অ্যানথনি পেকহ্যাম সায়মন কিনবার্গ |
কাহিনিকার | লিওনেল উইগ্রাম মাইকেল রবার্ট জনসন |
উৎস | আর্থার কোনান ডয়েল নির্মিত শার্লক হোমস চরিত্র |
শ্রেষ্ঠাংশে | রবার্ট ডাউনি জুনিয়র জ্যুড ল র্যাচেল ম্যাকঅ্যাডাম্স মার্ক স্ট্রং এডি মার্সান |
সুরকার | হ্যান্স জিমার |
চিত্রগ্রাহক | ফিলিপ রুজলো |
সম্পাদক | জেমস হার্বার্ট |
প্রযোজনা কোম্পানি | সিলভার পিকচার্স ভিলেজ রোডশো পিকচার্স উইগ্রাম প্রোডাকশনস |
পরিবেশক | ওয়ার্নার ব্রস. পিকচার্স রোডশো এন্টারটেইনমেন্ট(অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড) |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ১২৮ মিনিট |
দেশ | যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্র |
ভাষা | ইংরেজি |
নির্মাণব্যয় | $ ৯০ মিলিয়ন |
আয় | $ ৫২৪ মিলিয়ন |
ছবিটির সিকুয়্যাল শার্লক হোমস: আ গেম অব শ্যাডোস ২০১১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে মুক্তি পায়।
চলচ্চিত্রটির ঘটনাপ্রবাহ চিত্রিত হয় ১৮৯১ সালের লন্ডনে। দেখা যায়, গোয়েন্দা শার্লক হোমস (রবার্ট ডাউনি জুনিয়র) এবং তার সহকারী ও কক্ষসঙ্গী ড. জন ওয়াটসন (জ্যুড ল), লর্ড ব্ল্যাকউড কর্তৃক একজন নারীকে হত্যা করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে। লর্ড ব্ল্যাকউড এর আগেও আরো পাঁচজন অল্পবয়স্কা নারীকে হত্যা করে। সে কালো জাদু করত এবং এসব নরবলি সেসব আচার-অনুষ্ঠানের অংশবিশেষ ছিল। পরিশেষে তারা ব্ল্যাকউডকে থামাতে সক্ষম হয়। এর মধ্যেই ইন্সপেক্টার লেসট্রেড (এডি মার্সান) ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং ব্ল্যাকউডকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে।
এরপর পেরিয়ে যায় তিন মাস। হোমসের আত্মকেন্দ্রিক আচরণ ও মারাত্মক কোকেন আসক্তি ওয়াটসনের চরম বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ওয়াটসন ম্যারি মরস্ট্যানকে বিয়ে করে ২২১বি বেকার স্ট্রীট ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এদিকে ব্ল্যাকউডের ফাঁসির আদেশ হয়। তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী হোমস তার সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে যায়। সেখানে ব্ল্যাকউড হোমসকে আরো তিনটি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সতর্ক করে যেগুলো পৃথিবীর ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিবে। পরবর্তীকালে ব্ল্যাকউডের ফাঁসি হয়। তার তিনদিন পরে পেশাদার চোর ও হোমসের অতীত প্রতিপক্ষ আইরিন অ্যাডলার (র্যাচেল ম্যাকঅ্যাডাম্স) তার সঙ্গে দেখা করতে আসে। সে লিউক রিঅর্ডান নামের একজন নিখোঁজ ব্যক্তিকে খোঁজার জন্য হোমসকে বলে। অ্যাডলার চলে যাবার পর হোমস তার পিছু নেয়। অ্যাডলার একটি ঘোড়ার গাড়িতে তার গোপন নিয়োগকর্তার সাথে দেখা করে। লোকটি তাকে জানায় যে রিওর্ডান হল ব্ল্যাকউডের পরিকল্পনা সফল হওয়ার মূল চাবিকাঠি। হোমস শুধু এটুকু বুঝতে পারে যে এই লোকটি একজন অধ্যাপক এবং অ্যাডলারকে ভয় দেখিয়ে সে তাকে কাজে লাগিয়েছে।
এদিকে ব্ল্যাকউডের সমাধি ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল, সমাধিটি ভেতর থেকে কেউ ধ্বংস করেছে। সমাধিতে ব্ল্যাকউডের বদলে রিঅর্ডানকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। আর একজন গোরখোদক আবার লর্ড ব্ল্যাকউডকে সমাধি থেকে বের হয়ে আসতে দেখেছে। এ ধরনের ভূতুড়ে কারবার জনমনে যথেষ্ট ভীতির সৃষ্টি করে। হোমস ও ওয়াটসন রিঅর্ডানের লাশ পরীক্ষা করে কিছু সূত্র পায়। সেই সূত্র অনুযায়ী তারা তার বাসস্থান খুঁজে বের করে। সেখানে গিয়ে তারা দেখতে পায়, রিঅর্ডান বিজ্ঞান ও জাদুর মিশেল ঘটিয়ে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিল। এদিকে ব্ল্যাকউডের লোকেরা রিঅর্ডানের বাড়ি ধ্বংস করার জন্য এলে, হোমসদের সঙ্গে তাদের হাতাহাতি হয়। হোমস ও ওয়াটসন হাতাহাতি থেকে উদ্ধার পাওয়ার পর, হোমসকে গোপনে টেম্পল অব দ্য ফোর অর্ডারসে নিয়ে যাওয়া হয়। টেম্পল অব দ্য ফোর অর্ডারস একটি গুপ্ত ভাতৃসংঘ যার সদস্যরা হলেন রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ। সেখানে যাওয়ার পর ভাতৃসংঘের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ - প্রধান বিচারপতি স্যার থমাস রদেরাম (জেমস ফক্স), মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্ট্যানডিশ (উইলিয়াম হোপ) ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী লর্ড কাওয়ার্ড (হ্যান্স ম্যাথিসন), হোমসের কাছে ব্ল্যাকউডকে থামানোর ব্যাপারে সাহায্য চায়। তারা আরো জানায় যে ব্ল্যাকউড এই ভাতৃসংঘেরই অন্যতম সদস্য ছিল। হোমস স্যার থমাস রদেরাম এর সঙ্গে ব্ল্যাকউডের শারীরিক মিল দেখতে পেয়ে বুঝতে পারে যে ব্ল্যাকউড তার সন্তান ছিল। পরবর্তীকালে, ব্ল্যাকউড স্যার থমাস ও রাষ্ট্রদূত স্ট্যানডিশকে মেরে ফেলে। তার মেরে ফেলার প্রক্রিয়া আপাতভাবে অলৌকিক বলেই মনে হয়। তাদের দুজনকে সরিয়ে দেওয়ার পর সে আর লর্ড কাওয়ার্ড ভাতৃসংঘের পূর্ণ কর্তৃত্ব নিয়ে নেয়। লর্ড কাওয়ার্ড আগে থেকেই ব্ল্যাকউডের সঙ্গে ছিল। তারা পরিকল্পনা করে যে ব্রিটিশ সরকারকে হটিয়ে তারা ক্ষমতা দখল করবে। তারপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ একে একে গোটা পৃথিবীই নিজেদের করায়ত্বে আনবে। এদিকে ব্ল্যাকউড হোমসকে টোপ দিয়ে একটি গুদামঘরে নিয়ে আসে। হোমস সেখানে ওয়াটসন সমেত গিয়ে অ্যাডলারকে শিকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় দেখতে পায়। তারা কোনরকমে অ্যাডলারকে উদ্ধার করে। কিন্তু ব্ল্যাকউডের রাখা বোমায় ওয়াটসন মারাত্মকভাবে আহত হয়। এরই মধ্যে লর্ড কাওয়ার্ড হোমসের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে।
হোমস আত্মগোপন করে ব্ল্যাকউডের তন্ত্র-মন্ত্র ও হত্যার ধরনের যোগসূত্র খুঁজে বের করে। সেখান থেকে সে সিদ্ধান্তে আসে যে ব্ল্যাকউডের পরবর্তী আক্রমণ পার্লামেন্টে হবে। হোমস অত্যন্ত চাতুরীতার সাথে লর্ড কাওয়ার্ডের কাছ থেকে জেনে নেয় যে তারা পার্লামেন্টের সদস্যদের মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেছে। পরবর্তীতে হোমস, ওয়াটসন ও অ্যাডলার ওয়েস্টমিন্স্টার প্রাসাদের নিচে রিঅর্ডানের বানানো একটি যন্ত্র দেখতে পায়। এই যন্ত্রটি এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যে এর দ্বারা নিঃসরিত বিষাক্ত সায়ানাইড গ্যাস লর্ড ব্ল্যাকউডের লোক ব্যতীত পার্লামেন্ট কক্ষের সকল সদস্যকে মেরে ফেলবে। ব্ল্যাকউড আগে থেকেই তার দলের লোকদেরকে এই গ্যাসের প্রতিষেধক সেবন করিয়েছিল। ব্ল্যাকউড পার্লামেন্ট কক্ষে প্রবেশ করে ঘোষণা দেয় যে শীঘ্রই তার সমর্থক ব্যতীত সকলেই মারা যাবে। এদিকে হোমস ও ওয়াটসন ব্ল্যাকউডের অন্যান্য লোকদের সাথে মারামারিতে লিপ্ত হয়। এরই ফাঁকে অ্যাডলার যন্ত্রটির সায়ানাইড ভর্তি ধারকটি নিয়ে পালায়। হোমস তা দেখে তার পিছু নেয়। এদিকে যথাসময়ে গ্যাস নিঃসরণ না হওয়ায়, ব্ল্যাকউড ও কাওয়ার্ড বুঝতে পারে যে তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। তাই তারা পালিয়ে যেতে চায়। কিন্তু ব্ল্যাকউড পালাতে সক্ষম হলেও, কাওয়ার্ড ধরা পড়ে যায়। হোমস ও ব্ল্যাকউড এবার পরস্পরের মুখোমুখি হয়। মারামারির এক পর্যায়ে হোমস কৌশলে ব্ল্যাকউডকে টেম্স নদীর উপরের সেতুতে শিকল ও দড়ি দ্বারা আটকিয়ে ফেলে। এসময় হোমস বলে যে ব্ল্যাকউডের কোন কাজকর্মই অলৌকিক ছিল না। বরং সেগুলোর পেছনে ছিল বিজ্ঞানের সুনিপুণ কলাকৌশল। এরপরে আরো কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির পরে, ব্ল্যাকউডের গলায় দুর্ঘটনাক্রমে শিকলের ফাঁস আটকে যায় আর সেতু থেকে পড়ে যেয়ে চূড়ান্তভাবে মারা যায়।
অ্যাডলার হোমসকে সবকিছু খুলে বলে যে তাকে অধ্যাপক মরিয়ার্টি কাজে লাগিয়েছিল। সে হোমসকে সতর্ক করে দেয় যে মরিয়ার্টি হোমসের মতই ধূর্ত কিন্তু খুবই কূটকৌশলী লোক। ওয়াটসন ২২১বি বেকার স্ট্রীট ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় পুলিশের লোক হোমস ও ওয়াটসনের কাছে আসে। পুলিশ তাদের জানায় যে সেদিন ব্ল্যাকউডের যন্ত্রের পাশে একজন মৃত পুলিশ অফিসারকে পাওয়া গেছে। অ্যাডলার ও ব্ল্যাকউড যখন মুখোমুখি সংঘর্ষে ব্যস্ত ছিল, সেই সুযোগে মরিয়ার্টি যন্ত্রটির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে পালিয়ে যায়। হোমস নতুন রহস্য সমাধানে কাজে লেগে পড়ে।
যদিও শার্লক হোমস চলচ্চিত্রটি ২০০৯ সালের নভেম্বরে মুক্তি পাবার কথা ছিল, কিন্তু ১৪ ডিসেম্বর, ২০০৯ তারিখে লন্ডনে এর ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর এটি বিশ্বব্যাপী মুক্তি পায় আর ২৬ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডে। এর আগে অবশ্য ১০ ডিসেম্বর, ২০০৯ তারিখে একটি দাতব্য কাজের জন্য তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বেলজিয়ামে চলচ্চিত্রটির একটি অগ্রিম প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
২০১০ সালের ৩০ মার্চ শার্লক হোমস ডিভিডি এবং ব্লু-রে/ডিভিডি/ডিজিটাল আকারে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আসে। তখন থেকে এটি ডিভিডি বিক্রয় বাবদ মোট $৪,৪৯,০৮,৩৩৬ আয় করেছে।
ছবিটির সিকুয়্যাল শার্লক হোমসঃ এ গেম অব শ্যাডোস ২০১১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে মুক্তি পায়। প্রথম চলচ্চিত্রের মতই শার্লক হোমস চরিত্রে রবার্ট ডাউনি জুনিয়র এবং ড. জন ওয়াটসন চরিত্রে জ্যুড ল অভিনয় করেন।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article শার্লক হোমস (২০০৯-এর চলচ্চিত্র), which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.