লিংকিন পার্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের লস এঞ্জেলেস শহরে অবস্থিত রক ব্যান্ড। তাদের প্রথম অ্যালবাম হাইব্রিড থিওরি-র (২০০০) জন্য তারা নূমেটাল ধারার ব্যান্ডের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সর্বাধিক ব্যবসাসফল ব্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভ করেছে। হাইব্রিড থিওরি সারা পৃথিবীতে প্রায় ১৯ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে। ওয়ান ওকে রক লিংকিন পার্ক বর্তমানে ওয়ার্নার ব্রাদার্স রেকর্ডিং কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ। লিংকিন পার্ক ২০০০ সালে তাদের প্রথম অ্যালবাম হাইব্রিড থিওরির-র মাধ্যমে আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করে, এই অ্যালবামটিকে আমেরিকান রেকর্ডিং ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন ডায়মন্ড হিসেবে প্রত্যায়ন করে। এর পরবর্তী অ্যালবাম মিটিওরা ব্যান্ডটির সাফল্য অক্ষুণ্ণ রাখে এবং এটি বিলবোর্ড ২০০ চার্টে শীর্ষস্থান দখল করে। এছাড়া এই অ্যালবামের প্রচারে লিংকিন পার্ক ব্যাপক দাতব্য কার্যক্রম ও বিভিন্ন দেশে ট্যুরিং করে। ২০০৩ সালে এমটিভি২ লিংকিন পার্ককে মিউজিক ভিডিও যুগের ষষ্ঠ সেরা ব্যান্ডের স্বীকৃতি দেয় এবং নতুন শতাব্দীর তৃতীয় সেরা ব্যান্ড হিসেবে আখ্যায়িত করে।
লিঙ্কিন পার্ক | |
---|---|
প্রাথমিক তথ্য | |
উপনাম | জিরো (১৯৯৬–১৯৯৮) হাইব্রিড থিওরি (১৯৯৯) |
উদ্ভব | ক্যালিফোর্নিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
ধরন | নূ মেটাল, র্যাপ মেটাল, অল্টারনেটিভ মেটাল, অল্টারনেটিভ রক |
কার্যকাল | ১৯৯৬–২০১৭ |
লেবেল | ওয়ার্নার ব্রাদার্স, মেশিন শপ রেকর্ডিং |
সদস্য | চেস্টার বেনিংটন রব বাউর্ডন ব্র্যাড ডেলসন ডেভ ফারেল (ফোনিক্স) জোসেফ হান মাইক শিনোডা |
প্রাক্তন সদস্য | স্কট কোযিওল মার্ক ওয়েকফিল্ড |
ওয়েবসাইট | linkinpark |
লিঙ্কিন পার্ক তাদের প্রতিষ্ঠাকালীন সময় হতেই রেডিও-বান্ধব নূ মেটাল ও র্যাপ-রক গান করে আসছে। অবশ্য তারা ২০০৭ সালে প্রকাশিত মিনিটস্ টু মিডনাইট অ্যালবামে সঙ্গীতের অন্যান্য ধারার গানও করেছে। এই অ্যালবামটি প্রকাশ হবার প্রথম সপ্তাহেই বিলবোর্ড চার্টে শীর্ষস্থান দখল করে যা অন্য কোনো অ্যালবাম ঐ বছর করতে পারেনি। লিংকিন পার্ক বেশ কয়েকজন সঙ্গীতশিল্পীর সাথে গান করেছে, এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল র্যাপার জে-জেড। ব্যান্ডটি পৃথিবীব্যাপী ৫০ মিলিয়নেরও বেশি অ্যালবাম বিক্রি করেছে এবং দুইবার গ্র্যামি এ্যাওয়ার্ড জিতেছে।
তিন হাইস্কুল পড়ুয়া ছাত্র মাইক শিনোডা, ব্র্যাড ডেলসন এবং রব বাউর্ডন লিংকিন পার্ক প্রতিষ্ঠা করে। হাইস্কুল পাশ করার পর তারা সঙ্গীতের প্রতি আরো বেশি মনোনিবেশ করলো। এসময় তারা জো হান নাম, ডেভ ফিনিক্স এবং মার্ক ওয়েকফিল্ডকে ব্যান্ডে অন্তর্ভুক্ত করে। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে তাদের ব্যান্ডের নাম ছিল জিরো। প্রথমদিকে তাদের তেমন কোনো সঙ্গীত সরঞ্জাম ছিল না, ১৯৯৬ সালে তারা মাইক শিনোডার শোবার ঘরে এক ছোট স্টুডিওতে গান তৈরি করা শুরু করে। যখন তারা কোন রেকর্ডিং কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে পারল না তখন তারা ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল এবং হতাশ হল। ব্যর্থতা এবং অচলাবস্থার কারণে তখন ভোকাল ওয়েকফিল্ড ব্যান্ড ছেড়ে দেয়। ফোনিক্স ও স্ন্যাক্সও অন্য কোন ব্যান্ডে যোগ দেবার আশায় ব্যান্ড ত্যাগ করে।
ওয়েকফিল্ডের স্থানে অন্য কাউকে ভোকাল হিসেবে নিয়োগ দেবার জন্য জেরোর বেশ সময় লাগে। এসময় তারা অ্যারিজোনার ভোকাল চেস্টার বেনিংটনকে ব্যান্ডে নেয়। জমবা মিউজিকের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেফ ব্লু বেনিংটনকে জেরোর সন্ধান দেয় ১৯৯৯ সালে। বেনিংটন, যার পূর্বে নাম ছিল গ্রে ডেজ; অসাধারণ গান গাওয়ার অনন্য শৈলীর কারণে ভোকাল হিসেবে আবেদনকারীদের মধ্যে বিশিষ্ট হয়ে উঠে। এসময় ব্যান্ডটি জিরো হতে তাদের নাম পরিবর্তন করে রাখে হাইব্রিড থিওরি। শিনোডা এবং বেনিংটনের আসাধারণ সমন্বয়ের কারণে ব্যান্ডটি অচলাবস্থা থেকে জেগে উঠে এবং অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে। এই জাগরণের ফলে তারা তাদের ব্যান্ডের নাম হাইব্রিড থিওরি থেকে পরিবর্তন করে রাখে লিংকিন পার্ক। এসমস্ত পরিবর্তন সত্ত্বেও তারা কোন রেকর্ডিং কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে ব্যর্থ হয়। কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি সাথে চুক্তি করতে ব্যর্থ হয়ার পর তারা জেফ ব্লুর কাছে সাহায্যের আশায় যায়। পূর্ববর্তী তিনবার ব্যর্থতার পর জেফ ব্লু লিংকিন পার্ককে ১৯৯৯ সালে ওয়ার্নার ব্রাদার্সের সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে সাহায্য করে। পরের বছর লিংকিন পার্ক তাদের পক্ষে অভাবনীয় সাফল্য বয়ে আনা অ্যালবাম হাইব্রিড থিওরি প্রকাশ করে।
২০০০ সালের ৪ অক্টোবরে লিঙ্কিন পার্ক তাদের প্রথম অ্যালবাম হাইব্রিড থিওরি প্রকাশ করে। অ্যালবামটি লিংকিন পার্কর বিগত দশ বছরের সাধনার ফল, এটি সম্পাদিত হয় সঙ্গীত প্রযোজক ডন গিলমোর কর্তৃক। লিঙ্কিন পার্কর জন্য হাইব্রিড থিওরি ছিল একটি ব্যাপক সাফল্য। প্রকাশের প্রথম বছরেই এটির ৪.৮ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয় যা অ্যালবামটিকে ২০০১ সালের সবচেয়ে সফল অ্যালবামের স্বীকৃতি দেয়। এই অ্যালবামের "ক্রাউলিং" এবং "ওয়ান স্টেপ ক্লোজার" গান দুটি লিংকিন পার্ককে ঐ বছরের রেডিও প্লে-লিস্টের অন্যতম সফল অল্টারনেটিভ রক ব্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এছাড়া অ্যালবামটির অন্যান্য গান বিভিন্ন সিনেমা যেমন- ড্রাকুলা ২০০০, লিটেল নিকি, ভ্যালেনটাইনে প্রদর্শিত হয়। হাইব্রিড থিওরি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের সেরা হার্ডরক শিল্পীর পুরস্কার জিতে এবং অন্য দুই পুরস্কার, গ্র্যামি এ্যাওয়ার্ড: সেরা নতুন শিল্পী ও সেরা রক অ্যালবামের মনোয়ন পায়। এমটিভি লিঙ্কিন পার্ককে বেস্ট রক ভিডিও এবং বেস্ট ডিরেকশন অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে তাদের "ইন দ্যি এন্ড" গানের মিউজিক ভিডিও-এর জন্য। হাইব্রিড থিওরি লিঙ্কিন পার্ককে গ্র্যামি এ্যাওয়ার্ড এনে দেয় সেরা হার্ড রক পারফরম্যান্স এর জন্য যা ব্যান্ডের সাফল্য ও খ্যাতিকে এক উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যায়।
এসময় লিংকিন পার্ক বিভিন্ন কনসার্টে অনেক বিখ্যাত ব্যান্ড ও শিল্পীদের সাথে গান করার আমন্ত্রণ পায়। এছাড়া লিংকিন পার্ক নিজেরাই প্রজেক্ট রেভোলুশন নামে একটি সঙ্গীত সফরের আয়োজন করে যেখানে বেশ কয়েকজন উল্লেখযোগ্য শিল্পীও গান করে। এক বছরের মধ্যে লিংকিন পার্ক ৩২০ এরও বেশি কনসার্টে গান করে। এত কম সময়ের মধ্যে লব্ধ অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা লিংকিন পার্ক তাদের প্রথম ডিভিডি, ফ্র্যাট পার্টি অ্যাট দ্য প্যাঙ্কেক ফেস্টিভল এ লিপিবদ্ধ করে, এটি ২০০১ সালের নভেম্বরে প্রকাশ পায়। সাবেক বেজ গিটারিস্ট ফোনিক্স এসময় আবার ব্যান্ডে যোগ দেয় এবং লিংকিন পার্ক রিএনিমেশন নামে একটি রিমিক্স প্রকাশ করে। ২০০২ সালে জুলাইয়ের ৩০ তারিখে এই অ্যালবামটি প্রকাশিত হয়। রিএনিমেশন বিলবোর্ডে দ্বিতীয় স্থান দখল করে এবং প্রথম সপ্তাহেই প্রায় ২৭০,০০০ সংখ্যক কপি বিক্রি হয়। হাইব্রিড থিওরি'ও RIAA'র সেরা ১০০ অ্যালবাম এর মধ্যে রয়েছে।
হাইব্রিড থিওরি এবং রিএনিমেশনের ব্যাপক সাফল্যের পর লিঙ্কিন পার্ক অনেকটা সময় ব্যয় করে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে সফর করে। এসময় তারা নতুন কিছু গানের সরঞ্জাম দিয়ে গান করে, সফরের সময় বাসে অবসর সময়েও তারা গান করে। লিংকিন পার্ক ঘোষণা দেয় যে ২০০২ সালের ডিসেম্বরে তারা তাদের নতুন অ্যালবাম প্রকাশ করতে যাচ্ছে যার নাম গ্রীসের পাহাড়ি অঞ্চল মীটিওরা-এর নামে রাখা হবে। এই অ্যালবামে তারা নূ মেটাল এবং র্যাপকোর ধরনের গানের বাইরেও অন্যান্য ধারার গান অন্তর্ভুক্ত করে। এখানে জাপানের এক বিশেষ বাশির কাজও রয়েছে। লিঙ্কিন পার্কর এই অ্যালবামটি প্রকাশিত হয় ২০০৩ সালের ২৫শে মার্চ এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এটি যুক্তরাষ্ট্রে এবং যুক্ত্রাজ্যে ১ নং এবং অস্ট্রেলিয়ায় ২ নং শীর্ষে অবস্থান করে এবং বিশ্ব্যব্যাপী স্বীকৃতি পায়।
প্রথম সপ্তাহেই মীটিওরা ৮,০০,০০০ কপির বেশি বিক্রি হয় এবং ঐ সময়ে বিলবোর্ড চার্টে অ্যালবামটি সবচেয়ে বেশি বিক্রিত অ্যালবামের খেতাব অর্জন করে। অ্যালবামের “সামহোয়্যার আই বিলং”, “ব্রেকিং দ্যা হ্যাবিট”, “ফেইন্ট” এবং “নাম্ব” গানগুলো রেডিওতে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে। ২০০৩ সালের অক্টোবরের মধ্যে অ্যালবামটির প্রায় তিন মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়। এই সাফল্য লিংকিন পার্ক আরেকটি প্রজেক্ট রেভোলুশন করতে উদ্বুদ্ধ করে যেখানে মাডভেইন, ব্লিন্ডসাইড এবং একজিবিট সহ অন্যান্য ব্যান্ড এবং শিল্পীরাও গান করে। তাছাড়া মেটালিকা লিলিংকিন পার্ক আমন্ত্রণ জানায় সামার স্যানিটেরিয়াম ট্যুর ২০০৩ এ গান করার, যেখানে অনেক বহুল পরিচিত ব্যান্ড যেমন লিম্প বিজকিট, মাডভেইন, ডেফটোন্স্ অংশগ্রহণ করে। এই সফরকালে টেক্সাসে তাদের করা গান নিয়ে লিঙ্কিন পার্ক"লাইভ ইন টেক্সাস" নামে একটি অ্যালবাম এবং ডিভিডি প্রকাশ করে। ২০০৪ সালের প্রথম দিকে মীটিওরা ওয়্যার্ল্ড ট্যুর নামে তারা সঙ্গীতের একটি বিশ্বভ্রমণ শুরু করে। তাদের এ ভ্রমণের সঙ্গী ব্যান্ড হিসেবে ছিল হুবাস্টাঙ্ক, পি.ও.ডি., স্টোরি অফ দ্যা ইয়ার, এবং পিয়া
মীটিওরা লিঙ্কিন পার্ককে বেশ কয়েকটি ভিন্ন পুরস্কার এবং সম্মান এনে দেয়। ব্যান্ডটি তাদের "সামহোয়্যার আই বিলং" গানটির জন্য এমটিভির সেরা রক ভিডিও পুরস্কার অর্জন করে এবং দর্শকদের পছন্দের ভিত্তিতে "ভিউয়ার্স চয়েস" ক্যাটাগরিতে পুরস্কার অর্জন করে "ব্রেকিং দ্যা হ্যাবিট" গানটির জন্য। এছাড়াও লিংকিন পার্ক ২০০৪ সালে রেডিও মিউজিক অ্যাওয়ার্ড-এ বর্ষসেরা আর্টিস্ট" এবং "নাম্ব" গানটির জন্য "বর্ষসেরা গান"-এর পুরস্কার জেতার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি অর্জন করে। যদিও মীটিওরা অ্যালবামটি হাইব্রিড থিওরির মত এতটা সাফল্য অর্জন করতে পারেনি, তবুও ২০০৩ সালে এটি যুক্তরাষ্ট্রের ৩য় সর্বচ্চো বিক্রীত অ্যালবাম হিসেবে স্থান করে নেয়। ২০০৪ সালের প্রথম কয়েক মাস তারা সঙ্গীতে বিশ্ব্যভ্রমণ করে কাটায়, প্রথমে তাদের "তৃতীয় প্রজেক্ট রেভোলুশন ট্যুর" এবং পরে ইউরোপীয় বিভিন্ন কন্সার্টের মাধ্যমে। একই সময়ে ব্যান্ডটির "ওয়ার্নার ব্রোস. রেকর্ডস"-এর সাথে সম্পর্কের দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে বিভিন্ন ফিন্যান্সিয়াল বিষয়ের জন্য। দীর্ঘ কয়েক মাসের দ্বন্দ্বের পর অবশেষে ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তারা পুনরায় একটি ডীল্ করে।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article লিঙ্কিন পার্ক, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.