একটি রেকর্ড লেবেল বা রেকর্ড কোম্পানি হলো এমন ব্র্যান্ড বা ট্রেডমার্ক যা রেকর্ড সঙ্গীত এবং মিউজিক ভিডিওর বাজারজাতকরণে যুক্ত থাকে। মাঝে মাঝে রেকর্ড লেবেল একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হিসেবেও কাজ করে যার প্রধান কাজ ব্র্যান্ড বা ট্রেডমার্ক নিয়ন্ত্রণ করা, প্রোডাকশনকে গতিশীল রাখা, উৎপাদন, পরিবেশনা, বাজারজাতকরণ, সঙ্গীত এবং মিউজিক ভিডিওর কপিরাইট জারি করা। এছাড়া মেধা অন্বেষণ এবং নতুন প্রতিভার বিকাশের জন্য (আর্টিস্ট অ্যান্ড রেপর্টোয়া বা অ্যা অ্যান্ড আর) এবং সংগীতশিল্পী ও তাদের ম্যানেজারের সাথে চুক্তি বজায় রাখাও রেকর্ড লেবেলের দায়িত্ব। রেকর্ড লেবেল শব্দটি এসেছে ভিনাইল রেকর্ডের মধ্যে থাকা লেবেল থেকে যেখানে গানের তথ্যের সাথে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম লেখা থাকে।
মূলধারা সঙ্গীত ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে সংগীতশিল্পীরা সবসময় তাদের শ্রোতাদের কাছে পৌঁছতে, অ্যালবাম বাজারজাত করতে, মিউজিক স্ট্রিমিং সার্ভিস, রেডিও এবং টেলিভিশনে সঙ্গীত পরিবেশনা করার জন্য রেকর্ড লেবেলের উপর নির্ভরশীল থাকে। রেকর্ড লেবেল সংগীতশিল্পীদের জন্য পাবলিসিস্টের ব্যবস্থা করে যার কাজ শিল্পীদের ইতিবাচক মিডিয়া কভারেজ এবং পণ্যদ্রব্য দোকান এবং অন্যান্য মিডিয়া আউটলেটের মাধ্যমে প্রাপ্তিসাধ্য করা।
কিন্তু উল্লেখযোগ্য পরিমাণের শিল্পীরা অতিরিক্ত খরচ এড়াতে এবং নতুন শ্রোতাদের কাছে পৌঁছতে ইন্টারনেটের ব্যবহার করছে যার মধ্যে রয়েছে মিউজিক ভিডিওর ব্যবহার। একবিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে অ্যালবাম বিক্রির হ্রাসের সাথে অনলাইনে ফ্রি কনটেন্টের দ্রুত বৃদ্ধি ইন্ডাস্ট্রিকে নাটকীয়ভাবে বদলে দিয়েছে। এর ফলে রেকর্ড লেবেলকে আয়ের নতুন উৎস তৈরি করতে হয়েছে বিশেষ করে ‘‘৩৬০’’ ডিলের মাধ্যমে।
রেকর্ড লেবেল ছোট, স্থানীয় এবং ‘‘ইন্ডিপেনডেন্ট’’ (ইন্ডি) হতে পারে অথবা কোনো আন্তর্জাতিক মিডিয়া গ্রুপের অংশ হতে পারে। কিছু কিছু রেকর্ড লেবেল এর মাঝামাঝি হতে পারে। ২০১২ সাল অনুযায়ী তিনটি লেবেলকে “মেজর লেবেল” বলা যায় (ইউনিভার্সাল মিউজিক গ্রুপ, সনি মিউজিক এন্টারটেইনমেন্ট, এবং ওয়ার্নার মিউজিক গ্রুপ)। “সাবলেবেল” হলো এমন লেবেল যা একটি বড় লেবেলের অন্তর্ভুক্ত কিন্তু ব্যবসা করে ভিন্ন নামে।
যখন একটি লেবেল শুধুমাত্র একটি ট্রেডমার্ক বা ব্র্যান্ড তখন তাকে সাধারণত “ইমপ্রিন্ট” বলে। শব্দটি প্রকাশনা ব্যবসাতেও একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। মাঝে মাঝে ইমপ্রিন্টকে বাজারজাতকরণের সুবিধার্থে “প্রজেক্ট”, “ইউনিট” বা রেকর্ড লেবেল কোম্পানির “বিভাগ” বলা হয়, যদিও ইমপ্রিন্টের সাথে কোনো বাণিজ্যিক কাঠামোর কোনো সম্পর্ক নেই।
রেকর্ড কোম্পানী এবং সঙ্গীত প্রকাশক যারা বড় তিন লেবেলের নিয়ন্ত্রণাধীন না হয় তবে তাদেরকে সাধারণত ইন্ডিপেনডেন্ট (ইন্ডি) বলা হয় এমনকি তারা জটিল কাঠামোর বড় কর্পোরেশন হলেও। “ইন্ডি লেবেল” শব্দটি কখনও কখনও কেবলমাত্র সেইসব স্বাধীন লেবেলগুলিকে বোঝায় যার কর্পোরেট কাঠামো এবং আকারের ক্ষেত্রে স্বাধীনতার মানদণ্ড মেনে চলে, এবং কিছু লেবেলকে তাদের কর্পোরেট কাঠামো নির্বিশেষে ইন্ডি বিবেচনা করা হয় যারা মূলধারার বাইরের সঙ্গীত প্রকাশ করে।
ইন্ডিপেনডেন্ট লেবেল প্রায়ই শিল্পী বন্ধুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যদিও তারা আর্থিক ঝুঁকি কম নেয়, ইন্ডি লেবেলের বড় শিল্পীদের সাথে সাধারণত ৫০% লাভের অংশীদার চুক্তি হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
সঙ্গীত সংগ্রহকরা প্রায়ই একটি ইমপ্রিন্ট বা একটি অধস্তন লেবেল কোম্পানীকে (যেগুলো একটি গ্রুপের মধ্যে থাকে) উল্লেখ করার জন্য “সাবলেবেল” শব্দটি ব্যবহার করে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকে "ফোর্থ অ্যান্ড বি'ওয়ে" যুক্তরাজ্যের আইল্যান্ড রেকর্ডস লিমিটেডের মালিকানাধীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইল্যান্ড রেকর্ডস, ইনকর্পোরেটেডের অধীনস্থ শাখা দ্বারা পরিচালিত একটি ট্রেডমার্ক ব্র্যান্ড ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রিত একটি "ফোর্থ অ্যান্ড ব্রডওয়ে" রেকর্ডের কেন্দ্রের লেবেলটিতে সাধারণত "ফোর্থ অ্যান্ড বি'ওয়ে" লোগো থাকে এবং "ফোর্থ অ্যান্ড বি'ওয়ে™, একটি আইল্যান্ড রেকর্ডস, ইনকর্পোরেটেড কোম্পানি" লেখা থাকে। যেসব সংগ্রহক লেবেলকে ব্র্যান্ড হিসেবে বিবেচনা করে তারা বলে যে "ফোর্থ অ্যান্ড বি'ওয়ে" শুধু “আইল্যান্ড” বা “আইল্যান্ড রেকর্ডস” এর একটি সাবলেবেল বা ইমপ্রিন্ট। একইভাবে, যেসব সংগ্রহক কর্পোরেশন এবং ট্রেডমার্ককে সমতুল্য হিসাবে বিবেচনা করে তারা মনে করে “ফোর্থ অ্যান্ড বি'ওয়ে” “আইল্যান্ড রেকর্ডস লিমিটেড” এবং তার অধীনস্থ শাখা “আইল্যান্ড রেকর্ডস, ইনকর্পোরেটেড” উভয়ের একটি সাবলেবেল এবং/অথবা ইমপ্রিন্ট। তবে, এই ধরনের সংজ্ঞা জটিল হয়ে যায় ১৯৮৯ সালে (যখন আইল্যান্ডকে পলিগ্রামের কাছে বিক্রি করা হয়) এবং ১৯৯৮ সালে (যখন পলিগ্রাম ইউনিভার্সালের সাথে একীভূত হয়) সংঘটিত কোম্পানির একীভূতকরণের ফলে। আইল্যান্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য উভয় স্থানেই কর্পোরেশন হিসাবে নিবন্ধিত ছিল। কিন্তু নতুন কোম্পানীর গঠনের কারণে এর ব্র্যান্ডগুলির নিয়ন্ত্রণ একাধিকবার হাত পরিবর্তন হয়, যা কর্পোরেশনটির এর কোনো সাবলেবেলের “অভিভাবক প্রতিষ্ঠান” হিসেবে আলাদা গুরুত্ব কমিয়ে দেয়।
ভ্যানিটি লেবেল হলো এমন লেবেল যা দেখতে মনে হয় একটি শিল্পীর মালিকানাধীন বা নিয়ন্ত্রণাধীন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে একটি স্বাভাবিক শিল্পী/লেবেল সম্পর্ককে প্রতিনিধিত্ব করে। এমন ব্যবস্থায়, শিল্পী লেবেলের নাম ব্যতীত অন্য কোনো কিছু নিয়ন্ত্রণ করবে না, কিন্তু তার কাজের প্যাকেজিং-এর সময় সে অতিরিক্ত স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে। এমন লেবেলের একটি উদাহরণ হলো যুক্তরাজ্যের ফোনোগ্রাম ইনকর্পোরেটেডের অধীনের নিউট্রন লেবেল যা এবিসির মালিকানাধীন। এক সময় শিল্পী লিজি টিয়ার (এবিসির সাথে চুক্তির অধীনে) ইমপ্রিন্টে আসে, কিন্তু এটি প্রায় সম্পূর্ণরূপে এবিসির নিজস্ব সঙ্গীতের জন্য কাজ করে এবং এটি এখনও তাদের গানের পুনঃপ্রকাশের জন্য ব্যবহৃত হয় (যদিও ফোনেগ্রাম লেবেলের প্রকাশিত সমস্ত কাজের মালিক)।
তবে নির্দিষ্ট শিল্পীর প্রতি নিয়োজিত সব লেবেলের উৎপত্তি সম্পূর্ণ ভুয়া নয়। অনেক শিল্পী তাদের ক্যারিয়ারের শুরুতে তাদের নিজস্ব লেবেল তৈরি করেন যা পরে একটি বড় কোম্পানী কিনে নেয়। এই ক্ষেত্রে এটি কখনও কখনও শিল্পীকে অধিক স্বাধীনতা দিতে পারে যা তারা সরাসরি বড় লেবেলের সাথে স্বাক্ষরিত হলে পেত না। এই ধরনের লেবেল অনেক উদাহরণ আছে, যেমন “নাথিং রেকর্ডস”, যা নাইন ইঞ্চ নেইলসের ট্রেন্ট রেজনরের মালিকানাধীন; এবং “মর্নিং রেকর্ডস”, যা কপার টেম্পল ক্লোজের মালিকানাধীন, আরসিএ কর্তৃক কোম্পানিটি কেনার আগে যারা বহু বছর এক্সটেন্ডেড প্লে (ইপি) প্রকাশ করেছিল।
একটি লেবেল সাধারণত একটি শিল্পীর রেকর্ডিং বাজারজাতকরণের জন্য শিল্পীর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় যা পরিবর্তে শিল্পী রেকর্ডিং এর বিক্রয় মূল্যের উপর নির্ধারিত সম্মানী লাভ করে। চুক্তি স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে এবং এতে নির্দিষ্ট রেকর্ডিং এর সংখ্যা উল্লেখ থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে। প্রতিষ্ঠিত, সফল শিল্পীরা সাধারণত তাদের চুক্তির পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে চুক্তির শর্ত নিজেদের অনুকূল আনতে পারে। তবে প্রিন্সের ওয়ার্নার ব্রোস.-এর সাথে ১৯৯৪-১৯৯৬ সালব্যাপী বহুল প্রচারিত বিবাদ এর ব্যতিক্রমী উদাহরণ। এছাড়া ২০০০ সালের জুলাই মাসে রজার ম্যাকগুইনের যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কমিটির কাছে করা দাবি অনুযায়ী দ্য বার্ড তাদের জনপ্রিয় গান “মি. টাম্বোরিন ম্যান” এবং “টার্ন! টার্ন!, টার্ন!” এর জন্য কোনো সম্মানী লাভ করেনি।
একটি চুক্তি শিল্পীকে রেকর্ড সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দেয় অথবা রেকর্ড লেবেলকে শিল্পীর রেকর্ড তৈরির অধিকার দেয়। যেসব শিল্পীর রেকর্ড তৈরির অভিজ্ঞতা নেই তাদের জন্য লেবেল প্রযোজক, রেকর্ডিং স্টুডিও, অতিরিক্ত শিল্পী, গান বাছাই করে থাকে এবং রেকর্ডিং সেশনের আউটপুট পর্যবেক্ষণ করে। প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের জন্য একটি লেবেল সাধারণত রেকর্ডিং প্রক্রিয়ার সাথে কম জড়িত থাকে।
রেকর্ড লেবেল এবং শিল্পীর মধ্যে সম্পর্ক জটিল হতে পারে। অনেক শিল্পীর অ্যালবামকে লেবেল প্রকাশের আগে বিভিন্নভাবে বদলিয়েছে বা সেন্সর করেছে; এর মধ্যে গান সম্পাদনা করা, আর্টওয়ার্ক বা শিরোনাম পরিবর্তন করা অন্যতম। সাধারণত রেকর্ড লেবেলের এরকম করার কারণ তারা বিশ্বাস করে যে পরিবর্তনগুলো অ্যালবাম বিক্রি বৃদ্ধি করবে। রেকর্ড লেবেলের সিদ্ধান্ত প্রায়ই বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে সঠিক মনে হয়, কিন্তু এটি সাধারণত শিল্পীদের হতাশ করে কারণ তাদের মতে এরকম সিদ্ধান্ত তাদের শিল্পের মান হ্রাস করে বা শিল্পকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে।
রেকর্ডিং ইন্ডাস্ট্রির প্রথম দিকে কোন শিল্পীর সাফল্যের জন্য রেকর্ডিং লেবেলগুলির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কোন নতুন শিল্পী বা ব্যান্ডের প্রথম লক্ষ্য ছিল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি চুক্তি স্বাক্ষর করা। ১৯৪০, ১৯৫০, এবং ১৯৬০-এর দশকে অনেক শিল্পী রেকর্ড কোম্পানীর সাথে চুক্তিতে স্বাক্ষর করার জন্য এতটাই বেপরোয়া ছিল যে, তারা অনেক সময় এমন চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল যেখানে শিল্পীরা তাদের রেকর্ডিংয়ের অধিকারগুলি রেকর্ড লেবেলের কাছে চিরস্থায়ীভাবে বিক্রি করে দিয়েছিল। শিল্পীরা সাধারণত চুক্তির শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা করার জন্য এন্টারটেইনমেন্ট আইনজীবীদের নিয়োগ করেন।
ইন্টারনেটের অগ্রগতির ফলে লেবেলগুলির ভূমিকা খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে, কারণ শিল্পীরা ওয়েব রেডিও, পিয়ার টু পিয়ার ফাইল শেয়ারিং যেমন বিটটরেন্ট এবং অন্যান্য পরিষেবার মাধ্যমে তাদের সঙ্গীতকে বিনামূল্যে অথবা খুব অল্প মূল্যে বিতরণ করতে পারে। প্রতিষ্ঠিত শিল্পী যেমন নাইন ইঞ্চ নেইলস, যাদের ক্যারিয়ার মেজর লেবেল দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাদের মেজর লেবেল চুক্তি শেষ করার ঘোষণা দেয়। এর কারণ হিসেবে তারা রেকর্ডিং ইন্ডাস্ট্রির অসহযোগী প্রকৃতি এইসব নতুন প্রবণতার সাথে একত্রিত হয়ে সঙ্গীতশিল্পী, ভক্ত এবং ইন্ডাস্ট্রিকে একসাথে আঘাত করছে। নাইন ইঞ্চ নেইলস পরবর্তিতে মেজর লেবেলের সাথে পুনরায় কাজ করা শুরু করে কারণ তাদের আন্তর্জাতিক বিপণন এবং প্রচারণার জন্য মেজর রেকর্ড লেবেল প্রয়োজন। একইভাবে রেডিওহেড ইএমআইয়ের সাথে তাদের চুক্তি শেষ হওয়ার জন্য অনুরূপ অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে এবং তাদের অ্যালবাম “ইন রেইনবোস” পে হোয়াট ইউ ক্যান বিক্রয় মডেল হিসেবে অনলাইন ডাউনলোডের জন্য উপলব্ধ হয়। কিন্তু তারাও পরবর্তিতে প্রচলিত মুক্তির জন্য লেবেলে ফিরে আসে। গবেষণা দেখায় যে রেকর্ড লেবেলগুলো এখনও বিতরণের বেশিরভাগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে।
কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের মতো প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে ফাইল শেয়ারিং এবং ডিরেক্ট-টু-ফ্যান ডিজিটাল ডিস্ট্রিবিউশন বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাম্প্রতিক বছরে সঙ্গীত বিক্রয় হ্রাসের কারণে লেবেল এবং প্রতিষ্ঠানদের তাদের কৌশল এবং শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করার উপায় পরিবর্তন করতে হয়েছে। শিল্পীদের সাথে “মাল্টিপল রাইটস” (একাধিক অধিকার) অথবা “৩৬০ ডিল” নামের নতুন ধরনের চুক্তি করা হচ্ছে। এই ধরনের চুক্তি লেবেলগুলোকে শিল্পীদের ট্যুর, মার্চেন্ডাইজ এবং এন্ডোর্সমেন্টের অধিকার এবং অংশ দেয়। এই ধরনের অধিকারের বিনিময়ে লেবেল শিল্পীদের অধিক পরিমাণে অগ্রিম সম্মানী, শিল্পীদের বিকাশে অধিক সময় এবং সিডি বিক্রির অধিক লভ্যাংশ প্রদান করে। এই ৩৬০ ডিলগুলি সবচেয়ে বেশি কার্যকর যখন শিল্পীটি আগে থেকেই জনপ্রিয় হয় এবং তার একটি অনুগত ভক্তকুল রয়েছে। এই কারণে লেবেলগুলি এখন শিল্পীদের ডেভেলপমেন্টে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে কারণ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এই ধরনের চ্যক্তির চাবিকাঠি। প্যারামোর, মাইনো এমনকি ম্যাডোনার মত বেশকিছু শিল্পী এই ধরনের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।
একটি শিল্পীর কাছে দেয়া আটলান্টিক রেকর্ডসের একটি প্রকৃত ৩৬০ ডিল দেখলে বোঝা যায় যে চুক্তির কাঠামোয় ভিন্নতা রয়েছে। আটলান্টিকের নথি অনুযায়ী শিল্পীকে স্বাক্ষর করার জন্য একটি নগদ অগ্রিম দেওয়া হয় এবং খরচ তোলার পরে বিক্রির লভ্যাংশ প্রদান করা হয়। তবে শিল্পীর প্রথম অ্যালবামটি প্রকাশের পরে লেবেলটি সমস্ত ট্যুর, মার্চেন্ডাইজ, এন্ডোর্সমেন্ট এবং ফ্যান-ক্লাব ফির মোট আয়ের ৩০ শতাংশের বিনিময়ে অতিরিক্ত ২,০০,০০০ ডলারের বিকল্প রয়েছে। এছাড়া আটলান্টিকের শিল্পীর ট্যুরের সময়সূচী অনুমোদনের এবং নির্দিষ্ট ট্যুরের ও মার্চেন্ডাইজ বিক্রির কর্মচারীদের বেতন নির্ধারণের ক্ষমতা থাকবে। কিন্তু লেবেলটি অ্যালবাম থেকে যতটুকু লাভ হয় তার ৩০ শতাংশ সম্মানী শিল্পীকে প্রদান করে যা ইন্ডাস্ট্রির স্বাভাবিক ১৫ শতাংশ সম্মানী থেকে বেশি।
১৯৭০ এবং ১৯৮০ এর দশকে চলা একত্রীকরণের কারণে প্রায় সব বড় রেকর্ড লেবেলেগুলোকে গুটিকয়েক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি মালিকানা অর্জন করে। তখনো সিডি গুটিকয়েক স্থান থেকে উৎপাদিত হতো এবং বিক্রির একটি বড় অংশ “বড় তিন” রেকর্ড লেবেলের কাছে চলে যেত।
১৯৯০ এর দশকে হোম স্টুডিও, রেকর্ডিং প্রযুক্তির সহজলভ্যতা এবং ইন্টারনেটের কারণে ইন্ডিপেনডেন্ট লেবেল ধীরে ধীরে প্রচলিত হতে লাগলো। প্রায়ই ইন্ডিপেনডেন্ট লেবেল শিল্পী মালিকানাধীন (যদিও সবসময় না) যার প্রধান উদ্দেশ্য শিল্পীর রেকর্ডের মানের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা। ইন্ডিপেনডেন্ট লেবেলে বড় লেবেলের মতো সুযোগ-সুবিধা থাকে না এবং এ কারণে ইন্ডিপেনডেন্ট লেবেল মার্কেট শেয়ারের ক্ষেত্রে বড় লেবেলের থেকে পিছিয়ে থাকে। প্রায়ই ইন্ডিপেনডেন্ট শিল্পীরা বড় লেবেলগুলোর তুলনায় কম খরচে রেকর্ডিং করে ব্যবসা সফল হয়। কখনো কখনো খুব অল্প বিক্রি সত্ত্বেও তারা প্রাথমিক আগাম সম্মানীর খরচ তুলে নিতে সক্ষম হয়।
ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ইন্ডিপেনডেন্ট লেবেলে পাড়ি জমান। এর ফলে নাম প্রচারণার পাশাপাশি নিজের সঙ্গীতের উপর নিয়ন্ত্রণ পাওয়া যায় যেখানে অধিক সম্মানীর অংশ থাকে। ডলি পার্টন, প্রিন্স, আইমি মান, পাবলিক এনিমি বিকেব্রাভো (কুয়া এন্ড রাফি)সহ বহু শিল্পী এই রকম কাজ করেছে। ঐতিহাসিকভাবে, এই পদ্ধতিতে শুরু হওয়া কোম্পানিগুলো বড় লেবেলগুলির সাথে পুনরায় একীভূত হয়ে গেছে (দুটি উদাহরণ মার্কিন গায়ক ফ্রাঙ্ক সিনাত্রার “রিপ্রাইজ রেকর্ডস” যা বেশ কিছু সময় ধরে ওয়ার্নার মিউজিক গ্রুপের মালিকানাধীন এবং সঙ্গীতশিল্পী হার্ব আলপার্টের “এ এন্ড এম রেকর্ডস” যা বর্তমানে ইউনিভার্সাল মিউজিক গ্রুপের মালিকানাধীন)। একইভাবে, ম্যাডোনার “ম্যাভরিক রেকর্ডস” (যা ম্যাডোনা তার ম্যানেজার এবং অন্য অংশীদারের সাথে শুরু করেছিলেন) ওয়ার্নার মিউজিকের নিয়ন্ত্রণে আসে যখন ম্যাডোনা কোম্পানিতে থাকা নিজের শেয়ারের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেন।
কিছু ইন্ডিপেনডেন্ট লেবেল যথেষ্ট সফল হয়ে ওঠে যে মেজর রেকর্ড কোম্পানিগুলি লেবেলটির সঙ্গীত বিতরণ করার জন্য চুক্তি করে বা কিছু ক্ষেত্রে লেবেলটি সম্পূর্ণরূপে ক্রয় করে।
পাঙ্ক রক সঙ্গীতের “ডিআইওয়াই” (ডু ইট ইউরসেলফ) নীতি আত্ম প্রকাশ এবং স্ব-বিতরণের জন্য ব্যান্ডগুলোকে উৎসাহ দেয়। ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি পাঙ্ক রক সঙ্গীতের প্রথম ওয়েভের পরে শুরু হওয়া রক ব্যান্ডগুলিকে সাইন করার জন্য প্রধান লেবেলগুলির অনাগ্রহতার কারণে এই প্রবণতা ৮০-এর দশকের সালের শুরু থেকে অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল। এই লেবেলগুলি খ্যাতি আছে প্রচণ্ডভাবে আপোসহীন হওয়ার এবং বিশেষ করে বড় রেকর্ড লেবেলগুলির সাথে সম্পূর্ণ সহযোগিতা বিমুখতার জন্য। ডু ইট ইউরসেলফ মনোভাবের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং প্রভাবশালী লেবেলগুলির মধ্যে একটি হলো “এসএসটি রেকর্ডস”, যা ব্ল্যাক ফ্ল্যাগ ব্যান্ড দ্বারা তৈরি। কোন লেবেল তাদের গান প্রকাশ করতে চায়নি। তাই তারা নিজস্ব লেবেল তৈরি করে যা শুধু নিজেদের জন্য নয় বরং পুরো দেশের অন্যান্য প্রভাবশালী আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ডের কাজও প্রকাশ করে। ডিসকর্ডের ইয়ান ম্যাকাইকে “ডিআইওয়াই” সম্প্রদায়ের সাফল্যের একটি আদর্শ উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, যে বারো জনের কম কর্মী নিয়ে ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে টিকে আছে।
ইন্টারনেট এখন সঙ্গীত প্রাপ্তির জন্য একটি কার্যকর উৎস হওয়ায় নেটলেবেলের আবির্ভাব হয়েছে। নেট লেবেলের নীতির উপর নির্ভর করে যে শিল্পীদের কাছ থেকে সংগীতের ফাইলগুলি বিনামূল্যে অথবা পেপ্যাল বা অন্য অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে নির্দিষ্ট একটি ফি প্রদানের মাধ্যমে ডাউনলোড করা যেতে পারে। এছাড়া কিছু লেবেল সরাসরি ডাউনলোডের পাশাপাশি হার্ড কপি সিডিও বিক্রি করে। ডিজিটাল লেবেলগুলি 'নেট' লেবেলের সর্বাধুনিক সংস্করণ। যেখানে 'নেট' লেবেল একটি বিনামূল্যের সাইট হিসাবে শুরু হয়েছিল, ডিজিটাল লেবেল মেজর রেকর্ড লেবেলের সাথে সমান তালে প্রতিযোগিতা করছে।
নতুন শতাব্দীতে ওপেন সোর্স বা ওপেন-কনটেন্ট রেকর্ড লেবেলের যাত্রা শুরু হয়। এটি ফ্রি সফটওয়্যার এবং ওপেন সোর্স আন্দোলন এবং জিএনইউ/লিনাক্সের সাফল্যের দ্বারা অনুপ্রাণিত।
২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে কিছু সঙ্গীত প্রকাশনা সংস্থা এমন কাজ করা শুরু করে যা ঐতিহ্যগতভাবে লেবেলের দ্বারা করা হতো। উদাহরণস্বরূপ, সনি/এটিভি মিউজিক প্রকাশনা সংস্থাটি একটি যথাযথ লেবেলের সাথে চুক্তির জন্য অপেক্ষা করার পরিবর্তে সনি পরিবারের মধ্যে তার সংযোগ ব্যবহার করে সনি-মালিকানাধীন একটি ইমপ্রিন্টের অধীনে এলিয়ট ইয়ামিনের প্রথম অ্যালবাম উৎপাদন, রেকর্ড, বিতরণ এবং প্রচারণা করে।
রেকর্ড লেবেলগুলো সাধারণত "মিউজিক গ্রুপ" নামক একটি কর্পোরেট ছাতা সংস্থার নিয়ন্ত্রণে থাকে। একটি মিউজিক গ্রুপ সাধারণত একটি আন্তর্জাতিক "হোল্ডিং কোম্পানি" সংস্থার দ্বারা মালিকানাধীন, যার প্রায়ই অন্যান্য অ-সঙ্গীত বিভাগ হিসাবে রয়েছে। একটি মিউজিক গ্রুপ সঙ্গীত প্রকাশনা কোম্পানি, রেকর্ড (শব্দ রেকর্ডিং) নির্মাতা, রেকর্ড পরিবেশক, এবং রেকর্ড লেবেল নিয়ে গঠিত। এছাড়া রেকর্ড কোম্পানি (নির্মাতা, পরিবেশক এবং লেবেল) একটি "রেকর্ড গ্রুপ" গঠন করতে পারে যা পরিবর্তে একটি মিউজিক গ্রুপ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। একটি মিউজিক গ্রুপ বা রেকর্ড গ্রুপের সংগ্রাহক সংস্থাগুলিকে কখনও কখনও গ্রুপের "বিভাগ" হিসেবে বিক্রি করা হয়।
১৯৮৮ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ছয়টি বড় রেকর্ড লেবেল ছিল, যা “বিগ সিক্স” নামে পরিচিত ছিল:
পলিগ্রাম ১৯৯৯ সালে ইউএমজির সাথে একত্রিত হয়, যার ফলে বাকিদের বিগ ফাইভ বলে ডাকা হতো।
২০০৪ সালে সনি এবং বিএমজি যৌথ উদ্যোগের ফলে সনি বিএমজি লেবেল তৈরি হয় (যা ২০০৮ সালের একত্রীকরণের পর সনি মিউজিক এন্টারটেইনমেন্ট নামকরণ করা হয়)। ২০০৭ সালে অবশিষ্ট চারটি কোম্পানি, যা বিগ ফোর নামে পরিচিত, বিশ্ব সঙ্গীত বাজারের ৭০% এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গীত বাজারের ৮০% নিয়ন্ত্রণ করতো।
২০১২ সালে ইএমআই-এর মালিকানাধীন কোম্পানি সিটিগ্রুপ এর প্রধান বিভাগগুলোকে আলাদাভাবে বিক্রি করে: ইএমআই-এর রেকর্ডেড মিউজিক বিভাগের বেশিরভাগ ইউএমজির সাথে একত্রীত হয়, ইএমআই মিউজিক পাবলিশিং সনি/এটিভি মিউজিক পাবলিশিং-এর সাথে একত্রীত হয় এবং ইএমআই-এর পার্লোফোন ও ভার্জিন ক্লাসিকস জুলাই ২০১৩ সালে ওয়ার্নার মিউজিক গ্রুপের সাথে একত্রীত হয়। ফলসরূপ বিগ থ্রি নামক তিনটি লেবেল অবশিষ্ট থাকে:
সাদা লেবেল
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article রেকর্ড লেবেল, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.