মিন্‌স্ক: বেলারুশের রাজধানী

মিন্‌স্ক (বেলারুশীয়: Мінск, আইপিএ: ; রুশ: Минск) বেলারুশর রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। এটি বেলারুশের উত্তর মধ্যভাগে একটি নিচু পাহাড়ি এলাকাতে, সভিসলখ নদীর তীরে ও রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে প্রায় ৬৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। এখানে প্রায় ২০ লক্ষ লোকের বাস।

মিন্‌স্ক
Мінск · Минск
রাজধানী শহর
মিন্‌স্ক: বেলারুশের রাজধানী
মিন্‌স্ক: বেলারুশের রাজধানী
মিন্‌স্ক: বেলারুশের রাজধানী
মিন্‌স্ক: বেলারুশের রাজধানী
মিন্‌স্ক: বেলারুশের রাজধানী
মিন্‌স্ক: বেলারুশের রাজধানী
উপরে থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে: মিন্‌স্ক ব্যবসায়িক জেলা (পোবেডিটেলি অ্যাভিনিউ), চার্চ অফ সেন্টস। পিটার এবং পল, রেলওয়ে স্টেশন স্কয়ার, রেড চার্চ, ন্যাশনাল অপেরা এবং ব্যালে থিয়েটার, এবং মিন্‌স্ক সিটি হল
মিন্‌স্কের পতাকা
পতাকা
মিন্‌স্কের প্রতীক
প্রতীক
মিন্‌স্ক বেলারুশ-এ অবস্থিত
মিন্‌স্ক
মিন্‌স্ক
মিন্‌স্ক ইউরোপ-এ অবস্থিত
মিন্‌স্ক
মিন্‌স্ক
Location within Belarus##Location within Europe
স্থানাঙ্ক: ৫৩°৫৪′ উত্তর ২৭°৩৪′ পূর্ব / ৫৩.৯০০° উত্তর ২৭.৫৬৭° পূর্ব / 53.900; 27.567
দেশমিন্‌স্ক: বেলারুশের রাজধানী বেলারুশ
Founded1067
সরকার
 • নগরপতিAnatoli Sivak
আয়তন
 • মোট৪০৯.৫ বর্গকিমি (১৫৮.১ বর্গমাইল)
উচ্চতা২৮০.৬ মিটার (৯২০.৬ ফুট)
জনসংখ্যা (২০১৮)
 • মোট১৯,৯৫,০০০ বৃদ্ধি
 • জনঘনত্ব৪,৮৪১/বর্গকিমি (১২,৫৪০/বর্গমাইল)
সময় অঞ্চলFET/MSK (ইউটিসি+৩)
ডাক সঙ্কেত220001-220141
এলাকা কোড+375 17
আইএসও ৩১৬৬ কোডBY-HM
লাইসেন্স প্লেট7
মাউসূ (২০১৭)0.824 – very high
ওয়েবসাইটwww.minsk.gov.by

মিনস্ক বেলারুশের বৃহত্তম নগরী। প্রশাসনিকভাবে এটি মিনস্ক ওবলাস্তের কেন্দ্র এবং সমগ্র বেলারুশ রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু। এটি একাধারে একটি শিল্পোৎপাদন ও পরিবহন কেন্দ্রও বটে। মিনস্কের অর্থনীতি মূলত একটি ভারী শিল্পখাত দ্বারা চালিত। এখানে যন্ত্রপাতি নির্মাণ এবং মোটরযান যেমন ট্রাক ও ট্রাকটর নির্মাণ নগরীর আয়ের প্রধান উৎস। এছাড়া মোটর, বেয়ারিং চাকা, যান্ত্রিক ও ইলেকট্রনীয় সরঞ্জাম, বেতার, টেলিভিশন, ফ্রিজ (শীতায়ক) ঘড়ি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, বস্ত্র, কাগজ ও আসবাবপত্রের কারখানা আছে।

মিনস্ক নগরীতে ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় আছে; বেলারুশের বিজ্ঞান অ্যাকাডেমিও এখানে অবস্থিত। আরও আছে চিকিৎসাবিজ্ঞানসহ অন্যান্য ক্ষেত্রের উপরে একাধিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আছে। একটি ধ্রুপদী সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়, অপেরা গীতিনাট্যশালা ও ধ্রুপদী ব্যালে নৃত্যের দলসহ একাধিক নাট্যশালা ও জাদুঘর শহরটির সাংস্কৃতিক জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে। ২০০৬ সালে বেলারুশের জাতীয় গ্রন্থাগারটিকে সম্প্রসারিত করে একটি দৃষ্টি আকর্ষক হীরকাকৃতির ভবনে পরিণত করা হয়, যা বর্তমানে নগরীটির অন্যতম প্রধান দর্শনীয় স্থান। নগরীতে একটি শীতকালীন ক্রীড়াকেন্দ্রও রয়েছে।

মিনস্কের অনেক ভবনই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী কালের সোভিয়েত স্থাপত্যশৈলীর নকশা অনুসারে কংক্রিটের তৈরি, দানবাকার ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বহীন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পুরাতন প্রায় সব ভবনই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, এদের গুটিকয়েক এখনও টিকে আছে ও নগরীটির অতীতের সাক্ষ্য বহন করছে; এগুলির মধ্যে বের্নাদিন খ্রিস্টান মঠ ও ১৭শ শতকে নির্মিত মারিনস্কি মহাগির্জা উল্লেখ্য।

ঐতিহাসিক লিখিত বিবরণে মিনস্ক লোকালয়টির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১০৬৭ সালের একটি নথিতে। সেসময় এটি কিয়েভ ও পোলাতস্ক নগরীর মধ্যকার উত্তর-দক্ষিণ পথের উপরে অবস্থিত একটি দুর্গ শহর ছিল। আদিতে এটি পোলাতস্ক রাজপুত্রশাসিত অঞ্চলের অংশ হলেও পরবর্তীতে ১১০১ খ্রিস্টাব্দে এটি স্বতন্ত্র মিনস্ক রাজপুত্রশাসিত অঞ্চলের রাজধানীতে পরিণত হয়। এর পরে প্রায় তিন শতাব্দী ধরে নগরীটি উন্নতি লাভ করে একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হয়। মিনস্ক যখন ধীরে ধীরে মধ্য ইউরোপের একটি গুরুত্বপূর্ণ নগরীতে পরিণত হচ্ছিল, তখন এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুইটি প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির মধ্যে লড়াই চলছিল। ১৪শ শতকে বেলারুশ লিথুয়ানিয়ার অধীন হয়ে পড়লে মিন্‌স্ক নগরীও লিথুয়ানীয় নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ১৫০৫ সালে ক্রিমেয়ার তাতার জাতির লোকেরা শহরটির ক্ষতিসাধন করে। ১৫৬৯ খ্রিস্টাব্দে লিথুয়ানিয়া ও পোল্যান্ড ঐক্যবদ্ধ হলে মিন্‌স্ক নগরীটি পোলীয় আধিপত্য বলয়ে প্রবেশ করে এবং ১৭৯৩ সাল পর্যন্ত এটি পোলীয় নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। ঐ বছর পোল্যান্ডের দ্বিতীয় বিভাজনের ফলশ্রুতিস্বরূপ নগরীটিকে রাশিয়ার অঙ্গীভূত করে নেওয়া হয়। ফ্রান্সের সম্রাট নেপোলিয়নের সেনাবাহিনী ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে মিন্‌স্ক নগরীর ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে, কিন্তু পরে নগরীটিকে পুনরায় গড়ে তোলা হয়। ১৮৭০-এর দশকে মস্কো-ওয়ারশ' এবং লিয়েপাজা-রমনি রেলপথের সুবাদে মিনস্ক নগরীটি পুনরায় সমৃদ্ধির মুখ দেখতে শুরু করে।

১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে বা তারও আগে থেকেই মার্ক্সবাদী রাজনৈতিক দলগুলি মিনস্ক নগরীতে সংগঠিত হতে শুরু করে। ১৯০৫ সালে রুশ বিপ্লবের সূত্রপাত হলে নগরীটি আদর্শবাদী আন্দোলনের একটি কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ১৯১৮ সালের নভেম্বর মাসে জার্মানির পরাজয়ের পরে সোভিয়েত রুশ সেনাবাহিনী বেলারুশের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয়। ১৯১৮ সালে দেশটি স্বল্প সময়ের জন্য একটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু ১৯১৯ সালে সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ মিনস্ক নগরীকে নব্যগঠিত বেলারুশীয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী হিসেবে মনোনীত করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন পর্বে জার্মানরা বেলারুশ দখল করলে মিন্‌স্ক আরেক দফা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ১৯৪১ থেকে ১৯৪৪ সালের মধ্যে জার্মান সেনারা নগরীর প্রায় সমস্ত ইহুদী বাসিন্দাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এসে সোভিয়েত সেনারা নগরীটিকে মুক্ত করে। জার্মানরা বিতাড়িত হবার আগেই রুশ-জার্মান যুদ্ধের পরিণতিতে শহরের সিংহভাগই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী দিনগুলিকে সোভিয়েত নেতৃত্বের অধীনে মিন্‌স্ক একটি ভারী শিল্পকেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং নগরীর কলেবর আবার বৃদ্ধি পায়। নগরীর পুনর্নিমাণ প্রকল্পের অংশ হিসেবে অনেক উদ্যান, প্রশস্ত রাজপথ ও বিশাল বিশাল অ্যাপার্টমেন্ট বা পৃথকাবাসনবিশিষ্ট বহুতল বাসভবনের সমষ্টি নির্মাণ করা হয়। ১৯৫৯ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত গ্রাম থেকে শহরাভিমুখী কর্মসন্ধানী মানুষের স্রোতের কারণে মিন্‌স্কের জনসংখ্যা তিনগুণ বৃদ্ধি পায় (৫ লক্ষ থেকে ১৬ লক্ষ)।

১৯৮০-র দশকের শেষদিকে কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ও নিম্ন মজুরির কারণে বেলারুশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হয়ে পড়ে। সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রগুলির ঐক্য ধ্বসে পড়লে একটি কেন্দ্রীভূত অর্থনীতি থেকে বাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় উত্তরণের জন্য প্রচেষ্টা শুরু হয়। কিন্তু এই রূপান্তর সম্পূর্ণ সফল হয়নি। ১৯৯১ সালে মিনস্ক স্বাধীন বেলারুশের রাজধানীতে পরিণত হয়। এরপর বেলারুশ প্রাক্তন সোভিয়েত দেশগুলি নিয়ে গঠিত স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের কমনওয়েলথ সংস্থায় যোগদান করে; মিনস্ক নগরীতে এই নতুন সংস্থার প্রধান কার্যালয়টিকে স্থাপন করা হয়।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

বেলারুশবেলারুশীয় ভাষামস্কোরাজধানীরাশিয়ারুশ ভাষা

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

ব্যাংকঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সজনেইসলামইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়নিউটনের গতিসূত্রসমূহওজোন স্তরসমাজবিজ্ঞানমলাশয়ের ক্যান্সারমাহরামবাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শকদুর্নীতিকোষ (জীববিজ্ঞান)রাষ্ট্রবিজ্ঞানসমাজকর্মসূর্যগ্রহণখাদ্যসিরাজউদ্দৌলান্যাটোআল-মামুনজনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় (বাংলাদেশ)তামিম বিন হামাদ আলে সানিবিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সগুপ্ত সাম্রাজ্যসৈয়দ সায়েদুল হক সুমনআশারায়ে মুবাশশারামেটা প্ল্যাটফর্মসকালেমাসিঙ্গাপুরবাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সদস্যদের তালিকাবিশ্ব বই দিবসপানিপথের প্রথম যুদ্ধরাঙ্গামাটি জেলাময়ূরী (অভিনেত্রী)অমর্ত্য সেনবাংলাদেশের সংবিধানের সংশোধনীসমূহ২০২২–২৩ নিউজিল্যান্ড পুরুষ ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর (ডিসেম্বর ২০২২)বাস্তুতন্ত্রবাংলাদেশের কোম্পানির তালিকাব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাজাতীয় স্মৃতিসৌধদ্বাদশ জাতীয় সংসদ সদস্যদের তালিকারবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন (১৮৬১–১৯০১)উত্তম কুমারের চলচ্চিত্রের তালিকামেয়েবাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলদুর্নীতি দমন কমিশন (বাংলাদেশ)শব্দদূষণকলাতরমুজবেনজীর আহমেদরক্তশূন্যতাবাংলাদেশী টাকাইহুদি ধর্মইহুদিবিসিএস পরীক্ষাকরোনাভাইরাসদি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশমানিক বন্দ্যোপাধ্যায়শিখধর্মবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টকুরআনের সূরাসমূহের তালিকাগোপাল ভাঁড়বাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রমম্যালেরিয়ারংপুরসাপসতীদাহমাহিয়া মাহিমৌলিক পদার্থের তালিকাপ্লাস্টিক দূষণধানতাসনিয়া ফারিণহারুন-অর-রশিদ (পুলিশ কর্মকর্তা)অমর সিং চমকিলাবাংলাদেশের জাতীয় পতাকাদুরুদবাল্যবিবাহ🡆 More