ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান

ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদ্যা ছিল মেসোপটেমিয়ার ইতিহাসের আদিকালে, জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুসমূহ নিয়ে গবেষণা বা সেগুলো লিপিবদ্ধ করা (ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদ্যায় একটি ঐতিহাসিক ঘটনা)। এই নথিসমূহ সুমেরীয় মৃত্তিকা-ফলকে, কীলকাকার বর্ণমালায় (কিউনিয়াফর্ম, ইংরেজি: Cuneiform) খোদাইকৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, এর সময়কাল ছিল প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০-৩২০০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়ে।

ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান
A Babylonian tablet recording Halley's comet in 164 BC.

পৌরাণিক কাহিনীর সাথে সাথে, সুমেরীয়রা এক ধরনের জ্যোতির্বিদ্যা/ জ্যোতিঃশাস্ত্রের সূচনা করেছিল যার প্রভাব ছিল ব্যাবিলনীয় সংস্কৃতির ওপর। তার মধ্যে গ্রহ-সংক্রান্ত দেবতাগণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো।

ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদ্যার মনোযোগ দৃশ্যত জিক্‌পু নক্ষত্ররাজি নামক এক গুচ্ছ নক্ষত্রনক্ষত্রমণ্ডলের নকশার ওপরই ছিল। এই নকশাগুলো পূর্ববর্তী সময়ের নানা সূত্র থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। প্রাচীনতম তালিকা, Three Stars Each -এ আক্কাদীয়, আমুরু, ইলাম সহ অন্যান্য সাম্রাজ্যের সময়ের তারকাসমূহের উল্লেখ পাওয়া যায়।

ষাট-ভিত্তিক একটি সংখ্যা ব্যবস্থা, ষাটমূলক পদ্ধতি, ব্যবহার করা হত। এই পদ্ধতি অস্বাভাবিক রকমের বৃহৎ ও ক্ষুদ্র সংখ্যার হিসাব ও লিপিবদ্ধ করা সহজ করে দিয়েছিল। আধুনিক সময়ে কোন বৃত্তকে ৩৬০ ডিগ্রিতে ভাগ করা, প্রতিটিকে ৬০ মিনিটে ভাগ করার যে প্রথা, তা সুমেরীয়দের মাধ্যমেই শুরু হয়েছিল।

খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম ও অষ্টম শতাব্দীতে, ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদগণ জ্যোতির্বিদ্যায় একটি নতুন পরীক্ষালব্ধ পদ্ধতির প্রয়োগ করেছিলেন। তারা মহাবিশ্বের আদর্শ অবস্থার প্রেক্ষিতে, নিজেদের বিশ্বাসদর্শন নিয়ে গবেষণা এবং তার নথিভুক্তি শুরু করেন; তারা নিজেদের অনুমিত গ্রহ-সংক্রান্ত ব্যবস্থায় অভ্যন্তরীণ যুক্তি প্রয়োগ করতে শুরু করেন। জ্যোতির্বিদ্যা এবং বিজ্ঞানের দর্শনে এটা ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান, এবং আধুনিক কালের অনেক পণ্ডিত এই অভিনব পন্থাকে প্রথম বৈজ্ঞানিক বিপ্লব বলে আখ্যা দিয়েছেন। গ্রীক ও হেলেনীয় জ্যোতিঃশাস্ত্রে এই পন্থা অবলম্বন করে আরও বিকাশ সাধন করা হয়। চিরায়ত গ্রীকলাতিন সূত্রগুলো অহরহ মেসোপটেমিয়ার জ্যোতির্বিদদের ক্যালডীয় (বা ব্যাবিলনীয়, মূল শব্দ: Chaldeans), যাদেরকে জ্যোতিঃশাস্ত্র ও অন্যান্য অলৌকিক বিষয়ে অভিজ্ঞ যাজক-লিপিকার হিসেবে গণ্য করা হত।

ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদ্যার কেবল কিছু ভগ্নাবশেষই টিকে আছে, যার বড় অংশজুড়ে রয়েছে সমকালীন জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক দিনলিপি, পঞ্জিকা (ephemerides) ও কার্যপ্রণালির বিবরণ সংবলিত মৃত্তিকা-ফলক, এ কারণে ব্যাবিলনীয় গ্রহ তত্ত্ব সম্পর্কে বর্তমান জ্ঞানের পরিসরও অপূর্ণ অবস্থায় আছে। তারপরও, যে খণ্ডাংশগুলো টিকে আছে তা থেকে দেখা যায় যে, ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদ্যাই ছিল প্রথম "জ্যোতির্বিজ্ঞানের ঘটনাবলির নিখুঁত গাণিতিক বিবরণ দেওয়ার সফল প্রচেষ্টা", এবং "বৈজ্ঞানিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরবর্তী সকল প্রকরণে- হেলেনীয় বিশ্বে, ভারতে, ইসলামে এবং পশ্চিমে- ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদ্যার নিশ্চিত ও মৌলিক নির্ভরশীলতা বিদ্যমান ছিল।"

পাশ্চাত্যের জ্যোতির্বিদ্যার সূত্রপাত মেসোপটেমিয়ায় পাওয়া যায়, এবং অবিকল বিজ্ঞানের (exact sciences) ক্ষেত্রে সকল পশ্চিমা প্রচেষ্টাই, শেষ দিকের ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদগণের কাজ থেকে প্রত্যক্ষভাবে উদ্ভূত। সুমেরীয় জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কিত আধুনিক জ্ঞান পরোক্ষ, প্রায় ১২০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের প্রাচীনতম নক্ষত্র-তালিকার মাধ্যমে প্রাপ্ত। অনেক তারকার নাম যে সুমেরীয়তেও পাওয়া যায় তা আদি ব্রোঞ্জ যুগ পর্যন্ত ধারাবাহিকতার ইঙ্গিত দেয়।

পুরাতন ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদ্যা

ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান 
আমিসাদুক্বা'র ভেনাস মৃত্তিকা-ফলক

“পুরাতন” ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদ্যার প্রচলন ছিল প্রথম ব্যাবিলনীয় রাজবংশের সময়কাল ও তার পরে (আনুমানিক ১৮৩০ খ্রি.পূ.), এবং নব্য-ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্যের আগে।

ব্যাবিলনীয়রাই প্রথম ধরতে পেরেছিল যে, জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনাবলি পর্যায়বৃত্তিক এবং নিজেদের অনুমানে তারা গণিতের প্রয়োগ করেছিল। পুরনো ব্যাবিলনীয় যুগের মৃত্তিকাফলক থেকে, কোন সৌরবর্ষে দিবাকালের দৈর্ঘ্যের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গণিত প্রয়োগের নথি পাওয়া যায়। ব্যাবিলনীয়গণ কর্তৃক কয়েক শতাব্দিজুড়ে পরিলক্ষিত জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনাবলির বিবরণ পাওয়া যায় এনুমা আনু এনলিল নামে পরিচিত কিউনিয়াফর্ম মৃত্তিকাফলকে, যার ৬৩ নং ফলক আমিসাদুক্বা’র ভেনাস মৃত্তিকাফলক-ই হচ্ছে আমাদের অধিকৃত সর্বপ্রাচীন জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক নথি, যাতে প্রায় ২১ বছরজুড়ে শুক্র গ্রহের প্রথম ও শেষ দৃশ্যমান উদয়সমূহ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। গ্রহসংক্রান্ত ঘটনাবলিকে যে পর্যায়বৃত্তিক বলে মনে করা হতো, তার সবচেয়ে পুরনো দলিল এটি। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

নিনিভা’র ধ্বংসাবশেষ থেকে শ্বেত প্রিজম বলে চিহ্নিত একটি বস্তু উদ্ধার করা হয়। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল যে, এতে কোন খেলার নিয়ম বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু পরবর্তীকালে এর মর্মোদ্ধার করা হলে জানা যায় যে, সেটি জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুসমূহনক্ষত্রমণ্ডলের গতিবিধির গণনায় একক-রূপান্তরক (unit converter) ছিল।

ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদগণ রাশিচক্রের প্রবর্তন করেন। নভোমণ্ডলকে ত্রিশ ডিগ্রির তিনটি সেটে বিভক্ত করে এবং প্রতিটি অংশে অন্তর্ভুক্ত নক্ষত্রমণ্ডল নিয়ে এগুলো গঠিত।

মূল.আপিন-এ তারকা ও নক্ষত্রমণ্ডলের তালিকা’র সাথে সাথে নক্ষত্র উদয় (heliacal rising), গ্রহসমূহের বিন্যাস, এবং জলঘড়ি, নমন, ছায়া ও ইন্টারক্যালেশন এর মাধ্যমে দিবাকালের দৈর্ঘ্য নির্ণয়ের উপায় বর্ণিত আছে।  ব্যাবিলনীয় জি.ইউ. বিবরণীতে তারকারাজিকে একটি বিনতি বৃত্ত বরাবর ‘রজ্জু’র ন্যায় বিন্যস্ত করা হয় এবং এভাবে ডান-দিকবর্তী আরোহণ বা সময় ব্যবধান পরিমাপ করা হয়।  গ্রহণের বাস্তব পর্যবেক্ষণের নথি পাওয়া যায় ডজনখানেক মেসোপটেমীয় কিউনিয়াফর্মে, যেগুলো মূলত ব্যাবিলনিয়া থেকেই দেখা।

গ্রহ-সংক্রান্ত তত্ত্ব

ব্যাবিলনীয়রাই প্রথম সভ্যতা যাদের গ্রহ সম্পর্কিত নিজস্ব কার্যকর তত্ত্ব ছিল। ব্যাবিলনের আমিসুদাক্বার শুক্র গ্রহের মৃত্তিকাফলক, যা খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতকের শুক্র গ্রহের গতিবিধির পর্যবেক্ষণ-তালিকার একটি প্রতিলিপি, এবং তা সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতক পর্যন্ত পুরনো। বর্তমানকালে যেটা পাশ্চাত্য জ্যোতিষশাস্ত্র বলে পরিচিত, তার ভিত্তি প্রস্তরও স্থাপন করেন ব্যাবিলনীয় জ্যোতিষীবৃন্দ। এনুমা আনু এনলিল, যা খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতকে নব্য-অ্যাসিরীয় যুগে রচিত, তাতে পূর্বলক্ষণের একটি তালিকা এবং গ্রহতাত্ত্বিক গতিবিধি সহ কতগুলো জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনাবলির সাথে এদের সম্পর্কের উল্লেখ আছে।

মহাবিশ্বতত্ত্ব

মেসোপটেমীয় ও অ্যাসিরীয়-ব্যাবিলনীয় সাহিত্যে, বিশেষ করে মেসোপটেমীয় ও ব্যাবিলনীয় পুরাণে উপস্থাপিত বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির তুলনায়, মহাবিশ্বতত্ত্ব এবং প্রাচীন ব্যাবিলনীয় জ্যোতিষী ও জ্যোতির্বিদগণের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে খুব সামান্যই জানা আছে। এর কারণ মূলত ব্যাবিলনীয় গ্রহতত্ত্ব সম্পর্কে জ্ঞানের ভগ্ন দশা, এবং তৎকালীন সময়ে মহাবিশ্বতত্ত্ব থেকে ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদ্যার পৃথক উপস্থিতি। তা সত্বেও, ব্যাবিলনীয় সাহিত্য ও পুরাণে মহাবিশ্বতত্ত্বের কিছু কিছু আলামত পাওয়া যায়।

ব্যাবিলনীয় মহাবিশ্বতত্ত্বে, পৃথিবী এবং নভোমণ্ডলকে একটি “পৃথিবী ও স্বর্গের (নভোমণ্ডলের) পরিধি” এবং “স্বর্গ ও পৃথিবীর সমগ্রতা”-এর সাপেক্ষে “অখণ্ড বিচরণস্থল, যা সম্ভবত গোলাকার” বলে বর্ণনা করা হতো। তাদের বৈশ্বিক-দর্শন আবার ঠিক ভূ-কেন্দ্রিকও ছিল না। ভূ-কেন্দ্রিকতার ধারণা, যেখানে পৃথিবীই হচ্ছে সমগ্র মহাবিশ্বের কেন্দ্র, এমন ধারণা তখনো ব্যাবিলনীয় মহাবিশ্বতত্ত্বে ছিল না, কিন্তু পরবর্তীকালে গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটলের স্বর্গের ওপরে গ্রন্থে প্রতিষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে, ব্যাবিলনীয় মহাবিশ্বতত্ত্বের প্রস্তাবনা অনুসারে, এই মহাবিশ্ব নভোমণ্ডলের সাথে একত্রে বৃত্তাকারভাবে আবর্তিত হয়, এবং পৃথিবীও অখণ্ড সমতুল্য হিসেবে তার সাথে যুক্ত। ব্যাবিলনীয়রা ও তাদের পূর্বসূরি সুমেরীয়রাও পৃথিবী ও নভোমণ্ডলের বহুত্বে বিশ্বাস করতো। এই ধারণাটি প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতাব্দিতে প্রাপ্ত সুমেরীয় মন্ত্রসমূহের সময় পর্যন্ত পুরনো, যেখানে সাত পৃথিবী ও সাত স্বর্গের উল্লেখ রয়েছে, যা সম্ভবত সাত প্রজন্মের দেবতাকুল কর্তৃক সৃষ্টির কালানুক্রমিক বিন্যাসের সাথে সংশ্লিষ্ট।

পূর্বাভাস

মেসোপটেমীয়দের একটা সাধারণ বিশ্বাস ছিল এই যে, দেবতাগণ ভবিষ্যৎ ঘটনা সম্পর্কে মানবজাতিকে ইঙ্গিত দিতে পারতেন এবং দিতেনও। এসব ইঙ্গিতগুলোকে পূর্বাভাস হিসেবে বিবেচনা করা হতো। মেসোপটেমীয়দের পূর্বাভাসে বিশ্বাস ছিল জ্যোতির্বিদ্যা ও তার পূর্বসূরি জ্যোতিষশাস্ত্রের সাথে জড়িত, কেননা ঐ সময়ে পূর্বাভাস জানার জন্য আকাশ পর্যবেক্ষণের প্রচলন ছিল। পূর্বাভাস পাওয়ার আরেকটি উপায় ছিল প্রাণিদের অন্ত্র (নাড়িভুঁড়ি) পর্যবেক্ষণ। পূর্বাভাস লাভের এই পদ্ধতি সৃষ্টিযোগ্য পূর্বাভাস হিসেবে শ্রেণিভুক্ত ছিল, যার অর্থ হচ্ছে এগুলো মানুষের দ্বারা সৃষ্টি করা সম্ভব ছিল, কিন্তু আসমানি পূর্বাভাস মানুষের ক্রিয়াকলাপ ব্যতিরেকেই সৃষ্টি হতো বলে সেগুলোকে অনেক বেশি শক্তিশালী বলে মনে করা হতো।

তবে সৃষ্টিযোগ্য বা অযোগ্য- উভয় প্রকার পূর্বাভাসই, দেবতাদের প্রেরিত বার্তা হিসেবে দেখা হতো। শুধুমাত্র দেবতা-প্রেরিত বলেই যে তাদের নিয়তি চূড়ান্ত হয়ে গেছে, মেসোপটেমীয়রা তেমনটাও বিশ্বাস করতো না, পূর্বাভাস এড়ানো যায় বলেই ঐ সময়ে তাদের বিশ্বাস ছিল। গাণিতিক পরিভাষায়, মেসোপটেমীয়রা পূর্বাভাসকে দেখতো এভাবে: “যদি হয়, তাহলে ঘটবে”, যেখানে “ক” হচ্ছে প্রোটেসিস (protasis) এবং “খ” হচ্ছে অ্যাপোডোসিস (apodosis)।[পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন] পূর্বাভাসের সাথে মেসোপটেমীয়দের সম্পর্ক দেখা যায় পূর্বাভাস সংকলনে, যা ২য় শতাব্দির গোড়া থেকে রচিত একটি ব্যাবিলনীয় বিবরণী। এটাই আমাদের কাছে থাকা প্রাথমিক সূত্র যা থেকে জানা যায় যে, ব্যাবিলনীয়রা পূর্বাভাসগুলোকে প্রতিরোধযোগ্য বলেই দেখতো। কুলক্ষণ বিতাড়ণের জন্য সুমেরীয়দের মন্ত্রসমূহ, বা “নাম-বুর-বি”-এর উল্লেখও রয়েছে এই লেখায়। এই শব্দটি পরবর্তীকালে “নামবুরবু” হিসেবে আক্কাদীয়দের দ্বারা গৃহীত হয়, যার মোটামুটি অর্থ দাঁড়ায় “[কুলক্ষণ] বিতাড়ণ”। পূর্বাভাসগুলো দেবতা ইআ এর তরফ থেকে পাঠানো হতো বলেই বিশ্বাস ছিল। পূর্বাভাসের তীব্রতার ক্ষেত্রে, গ্রহণকে (eclipses) দেখা হতো সবচেয়ে ভয়ংকর হিসেবে।

এনুমা আনু এনলিল একটি কিউনিয়াফর্ম মৃত্তিকাফলকের একটি সিরিজ, যেখানে ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদগণ কর্তৃক পরিলক্ষিত বিভিন্ন আসমানি পূর্বাভাস সম্পর্কে অন্তর্জ্ঞান লাভ করা যায়। জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুসমূহ যেমন- সূর্য ও চাঁদকে, পূর্বাভাস হিসেবে উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা দেও্য়া হতো। ২৫০০-৬৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে, নিনিভা এবং ব্যাবিলনের প্রতিবেদন থেকে, মেসোপটেমীয়দের পর্যবেক্ষণ করা চান্দ্র-পূর্বাভাসগুলো দেখা যায়। “যখন চাঁদ অদৃশ্য হয়ে যায়, ধরায় শনি নেমে আসে। যখন চাঁদ তার অবস্থান থেকে হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যায়, তখন গ্রহণ ঘটে”।

অ্যাস্ট্রোলেইব

অ্যাস্ট্রোলেইব (পরবর্তীকালে উদ্ভাবিত একই নামের জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক পরিমাপ যন্ত্রের সাথে বিভ্রান্তি অনুচিত) হচ্ছে পুরাতন ব্যাবিলনীয় রাজ্যের সময়কালে রচিত প্রাচীনতম কিউনিয়াফর্ম ফলকের মধ্যে একটি, যেখানে জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক আলোচনা নথিভুক্ত রয়েছে। এটা কোন বর্ষের মাসগুলোর সাথে সংযুক্ত ছত্রিশটি তারকার একটি তালিকা। এগুলো সাধারণত ১৮০০-১১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে লিখিত বলে মনে করা হয়। কোন সম্পূর্ণ লেখা পাওয়া না গেলেও, ব্রিটিশ যাদুঘরে সংরক্ষিত লেখাগুলো থেকে পিঞ্চেস একটি আধুনিক সংকলন রচনা করেন, যেটি ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী ইতিহাসবিদগণ চমৎকার একটি সংকলন বলে বিবেচনা করেন। অ্যাস্ট্রোলেইব সম্পর্কিত আরও দুটি উল্লেখযোগ্য লেখা হচ্ছে ব্রাসেলস এবং বার্লিন সংকলন। সেগুলোতে পিঞ্চেসের সংকলনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়, তবে পরস্পর ভিন্ন কিছু তথ্যও তাতে অন্তর্ভুক্ত আছে।

যে ছত্রিশটি তারকা নিয়ে অ্যাস্ট্রোলেইব গঠিত, ধারণা করা হয় যে তার উদ্ভব ঘটেছে তিনটি মেসোপটেমীয় নগর-রাষ্ট্র, ইলাম, আক্কাদ, এবং আমুরু থেকে। এই নগর-রাষ্ট্রগুলো কর্তৃক অনুসৃত ও সম্ভবত চিত্রিত তারকাগুলো আর অ্যাস্ট্রোলেইবে উল্লিখিত তারকারাজি অভিন্ন। প্রতিটি অঞ্চল বারোটি তারকার একটি জোটকে অনুসরণ করতো, যা একত্রে অ্যাস্ট্রোলেইবের ছত্রিশটি তারকার সমান। প্রতিটি অঞ্চলের বারোটি তারকা আবার বছরের মাসগুলোর সাথে সংগতিপূর্ণ। কিউনিয়াফর্ম “কে ২৫০” এবং “কে ৮০৬৭” নামক দুটি বৃহৎ তারকা-সারণিতে এই দাবির স্বপক্ষে তথ্য পাওয়া যায়। হাম্মুরাবি’র আমলে এই পৃথক তিনটি লেখা একত্রে সংকলিত হয়। এই সংকলনের কারণে মূল রচনা তিনটির সাথে সম্পর্ক দুর্বল হওয়ার সাথে সাথে জ্যোতির্বিদ্যায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রচলন ঘটতে শুরু করে। এই তিনটি অঞ্চলের রীতিকে ইআ, আনু এবং এনলিল এর পথ অনুসারে করা বিন্যাস থেকে, জ্যোতির্বিদ্যায় বিজ্ঞানের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়, যা মূল.আপিন এ অন্তর্ভুক্ত ও বর্ণিত রয়েছে।

মূল.আপিন

মূল.আপিন হচ্ছে দুটি কিউনিয়াফর্ম মৃত্তিকাফলকের (ফলক ১ এবং ফলক ২) একটি সংকলন, যেখানে ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদ্যার বিভিন্ন দিক যেমন- জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুসমূহের গতিবিধি, এবং অয়ন ও গ্রহণসমূহের বিবরণ নথিভুক্ত রয়েছে। প্রতিটি ফলক আবার সারণি নামক ক্ষুদ্রতর কতগুলো অংশে বিভক্ত। এগুলো মোটামুটি অ্যাস্ট্রোলেইব ও এনুমা আনু এনলিল এর সময়কালেই রচিত, যার প্রমাণ পাওয়া যায় এদের একই বিষয়বস্তু, গাণিতিক নীতি, এবং ঘটনাবলি থেকে।

ফলক ১ থেকে প্রাপ্ত তথ্য আর অ্যাস্ট্রোলেইব বি এ ধারণকৃত তথ্য প্রায় একই রকম, ফলক ১ ও অ্যাস্ট্রোলেইব বি এর তথ্যের সাদৃশ্য থেকে বোঝা যায় যে, এর লেখকেরা অন্তত কিছু কিছু তথ্যের জন্য একই উৎস থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। এই ফলকে ছয়টি তারকা-সারণি রয়েছে, যার সাথে তিনটি ব্যাবিলনীয় তারকা-পথ ইআ, আনু, এবং এনলিল এ চিত্রিত ষাটটি নক্ষত্রপুঞ্জের সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়াও আনু এবং এনলিল এ এমন কিছু পথ রয়েছে, যা অ্যাস্ট্রোলেইব বি-তে পাওয়া যায় না।

পঞ্জিকা, গণিত, এবং জ্যোতির্বিদ্যার মধ্যে সংযোগ

সূর্য, চাঁদ, এবং অন্যান্য জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুসমূহের অনুসন্ধান মেসোপটেমীয় সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করেছিল। নভোমণ্ডল নিয়ে গবেষণা থেকে এসব সমাজে পঞ্জিকা এবং উচ্চতর গণিতের বিকাশ ঘটে। অবশ্য জটিল বৈশ্বিকভাবে সমাজ ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে প্রথম পঞ্জিকা তৈরি করা জাতি ব্যাবিলনীয়রা নয়, উত্তর আফ্রিকার কাছে মিশরীয়রা নিজস্ব একটি পঞ্জিকা তৈরি করেছিল। মিশরীয় পঞ্জিকা ছিল সৌর-ভিত্তিক, যেখানে ব্যাবিলনীয় পঞ্জিকা ছিল চান্দ্র-ভিত্তিক। কোন কোন ইতিহাসবিদ কর্তৃক উল্লিখিত, দুটি পঞ্জিকার মধ্যে সম্ভাব্য একটি মিল হচ্ছে, মিশরীয়দের দ্বারা উদ্ভাবনের পর ব্যাবিলনীয়গণ কর্তৃক একটি ত্রুটিপূর্ণ অধিবর্ষ পদ্ধতি অধিগ্রহণ। বর্তমানকালের অধিবর্ষের সাথে ব্যাবিলনীয়দের অধিবর্ষের কোন সাদৃশ্য নেই। তাদের পদ্ধতিতে বর্ধনশীল মৌসুমের সাথে আরও ভালোভাবে সামঞ্জস্য রক্ষার জন্য ত্রয়োদশ একটি মাস যুক্ত করা হতো।

নতুন ধরনের গণিতের বিকাশের দায়িত্ব ছিল ব্যাবিলনীয় পুরোহিতগণের ওপর এবং তারা এটা করতেন জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুসমূহের গতিবিধি আরও সুচারুরুপে নির্ণয়ের জন্য। এমনই একজন পুরোহিত, নাবু-রিমান্নি ছিলেন প্রথম নথিভুক্ত ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদ। তিনি চন্দ্র-দেবতার পুরোহিত ছিলেন এবং চন্দ্রগ্রহণের গণনা-সারণি রচনাসহ অন্যান্য বিস্তারিত গাণিতিক হিসাব-নিকাশের কৃতিত্ব তাকেই দেওয়া হয়। এই সারণিগুলো সতের বা আঠারটি সারণিতে বিন্যস্ত, যেখানে গ্রহসমূহ এবং চাঁদের আবর্তন বেগ নথিভুক্ত রয়েছে। পরে সেলুসিড রাজবংশের সময়কালীন জ্যোতির্বিদগণ কর্তৃক তার কাজগুলো পুনঃনিরীক্ষা করা হয়।

নব্য-ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদ্যা

নব্য-ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদ্যা বলতে নব্য-ব্যাবিলনীয়, আখিমেনিদ, সেলুসিদ, এবং পার্থীয়ান যুগের ক্যালডীয় জ্যোতির্বিদগণ কর্তৃক রচিত জ্যোতির্বিদ্যাকেই নির্দেশ করে। নাবোনাসার (৭৪৭-৭৩৪ খ্রি.পূ.) এর রাজত্বকালে ব্যাবিলনীয় পর্যবেক্ষণের মান ও সংখ্যা উভয়ই উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। উদাহরণস্বরূপ, ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক দিনলিপিতে অশুভ ঘটনাবলির যে নিয়মতান্ত্রিক নথি এ সময় থেকে চালু হয় তার কারণে, ১৮-বছর পর পর পুনরাবৃত্তিমূলক চন্দ্রগ্রহণের সারোস চক্র আবিষ্কার করা সম্ভব হয়। গ্রিক-মিশরীয় জ্যোতির্বিদ টলেমি পরবর্তীকালে নাবোনাসারের রাজত্বকাল ব্যবহার করে কোন যুগের সূচনাকাল সংশোধন করেছিলেন, কারণ তার মতে প্রাচীনতম ব্যবহারযোগ্য পর্যবেক্ষণের সূচনা ঐ সময় থেকেই।

ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদ্যার বিকাশের শেষ ধাপ ছিল সেলুসিড সাম্রাজ্যের সময়কালে (৩২৩-৬০ খ্রি.পূ.)। খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকে, জ্যোতির্বিদগণ “লক্ষ্য-বর্ষ পাঠ” ব্যবহার শুরু করেছিলেন, গ্রহসমূহের গতি পূর্বানুমানের জন্য। এই লেখাগুলোতে প্রতিটি গ্রহের জন্য অশুভ ঘটনাবলির পুনরাবৃত্তি অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে অতীত পর্যবেক্ষণসমূহের সংকলন ছিল। প্রায় একই সময়ে, বা তার কিছু পরে, জ্যোতির্বিদগণ গাণিতিক মডেল গঠন করেন যেন ঐ ঘটনাগুলোকে অতীতের বিবরণীর সাহায্য ছাড়াই সরাসরি অনুমান করা যায়।

পাটীগণিতীয় এবং জ্যামিতিক পদ্ধতিসমূহ

যদিও ব্যাবিলনীয় গ্রহতত্ত্ব সম্পর্কে অবশিষ্ট দলিলাদির অভাব রয়েছে, তাও দেখা যায় যে ক্যালডীয় জ্যোতির্বিদেরা তত্ত্ব নিয়ে নয়, বরং এফিমেরিস (জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুসমূহের অবস্থানসূচক দিনলিপি) নিয়েই বেশি আগ্রহী ছিলেন। অধিকাংশ ব্যাবিলনীয় গ্রহতাত্ত্বিক মডেলই কঠোরভাবে পরীক্ষালব্ধ ও পাটীগাণিতীয় বলে মনে করা হতো, এবং সচরাচর জ্যামিতি, মহাবিশ্বতত্ত্ব কিংবা পরবর্তীকালের হেলেনীয় মডেলের মতন অনুমানভিত্তিক দর্শন তাতে অন্তর্ভুক্ত ছিল না, যদিও ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদগণ আদি মহাবিশ্বের আদর্শ প্রকৃতির আলোচনার ক্ষেত্রে দর্শন নিয়ে আগ্রহী ছিলেন। তাৎপর্যপূর্ণ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনাবলির সময় ও স্থান গণনার জন্য ব্যাবিলনীয় রচনাবলিতে পাটীগণিতীয় পদ্ধতিসমূহের বর্ণনা এবং এফিমেরিসে তার প্রয়োগ রয়েছে। পূর্বে অপ্রকাশিত, ৩৫০ থেকে ৫০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দকালীন, ব্রিটিশ যাদুঘরের কিউনিয়াফর্ম ফলকের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায় যে, ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদগণ কখনো কখনো জ্যামিতিক পদ্ধতিও ব্যবহার করতেন, যা অক্সফোর্ড ক্যালকুলেটরের পূর্বেই কল্পিত একটি পদ্ধতি, যা কোন বিমূর্ত গাণিতিক স্থানে কালানুক্রমে বৃহস্পতি’র গতি বর্ণনা করে থাকে।

গ্রিক জ্যোতির্বিদ্যা, যা সৃষ্টিতত্ত্বের ওপর নির্ভরশীল ছিল, তার সাথে বিসদৃশভাবে, ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদ্যা সৃষ্টিতত্ত্ব থেকে স্বাধীন ছিল। যেখানে গ্রিক জ্যোতির্বিদগণ “সুষম গতিতে ঘূর্ণনশীল বৃত্ত বা গোলকের পক্ষপাতী” ছিলেন, ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদগণের মধ্যে এমন কোন পক্ষপাত ছিল না, যাদের কাছে সুষম বৃত্তাকার গতি কখনোই গ্রহের কক্ষপথের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল না। জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুসমূহ বৃত্তাকার গতিতে, অথবা কোন জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক গোলক বরাবর চলমান, এমন কোন তথ্য-প্রমাণ ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে ছিল না।

এ সময়ে ক্যালডীয় জ্যোতির্বিদগণের অবদানের মধ্যে রয়েছে গ্রহণ চক্র এবং সারোস চক্র আবিষ্কার, এবং অসংখ্য সঠিক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ। যেমন- তারা পর্যবেক্ষণ করেছিল যে এক্লিপটিক বরাবর সূর্যের গতি সুষম নয়, যদিও তারা এর কারণ সম্পর্কে অবগত ছিল না; এটা এখন জানা আছে যে, এমনটা ঘটে সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষপথের কারণে, যেখানে পৃথিবী সূর্যের নিকটবর্তী পেরিহেলিয়ন দিয়ে আবর্তনের সময় দ্রুততরভাবে এবং দূরবর্তী অ্যাফেলিয়ন দিয়ে আবর্তনের সময় তুলনামূলকভাবে ধীরগতিতে চলে।

ক্যালডীয় জ্যোতির্বিদগণের মধ্যে যারা এই মডেল অনুসরণ করতেন তাদের মধ্যে রয়েছেন নাবুরিমান্নু (জীবনকাল ৬ষ্ঠ-৩য় খ্রি.পূ.), কিদিন্নু (মৃত্যু ৩৩০ খ্রি.পূ.), বেরোসাস (৩য় শতক খ্রি.পূ.), এবং সুদিনেস (জীবনকাল ২৪০ খ্রি.পূ.)। গ্রিক জ্যোতির্বিদ হিপারকাস এবং মিশরীয় জ্যোতির্বিদ টলেমিসহ অন্যান্য হেলেনীয় জ্যোতির্বিদদের ওপর এদের অনেক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

সূর্যকেন্দ্রিক জ্যোতির্বিদ্যা

ক্যালডীয় জ্যোতির্বিদদের গ্রহতাত্ত্বিক মডেলগুলোর মধ্যে কেবল হেলেনীয় যুগের সেলুসিয়া’র (জন্ম ১৯০ খ্রি.পূ.) সেলুকাসের মডেলটিই টিকে আছে, যিনি সামোসের অ্যারিস্টার্কাস এর সূর্যকেন্দ্রিক মডেলের সমর্থক ছিলেন। প্লুটার্ক, এইশাস্ম স্ট্রাবো, এবং মুহাম্মাদ ইবনে জাকারিয়া আল-রাজি এর লেখা থেকে সেলুকাস সম্পর্কে জানা যায়। গ্রিক ভূগোলবিদ স্ট্রাবো, সেলুকাসকে সবচেয়ে প্রভাবশালী চার জ্যোতির্বিদের একজন বলে উল্লেখ করেন, যিনি টাইগ্রিসের তীরে হেলেনীয় সেলুসিয়া থেকে, কিদেনাস (কিদিন্নু), নাবুরিয়ানোস (নাবুরিমান্নু), এবং সুদিনেস এর সাথে এসেছিলেন। তাদের কাজগুলো প্রথমে আক্কাদীয় ভাষায় লিখিত ছিল এবং পরে গ্রিক ভাষায় অনূদিত হয়। সেলুকাস অবশ্য এদের মধ্যে অনন্য ছিলেন এই হিসেবে যে, তিনিই একমাত্র অ্যারিস্টার্কাসের সূর্যকেন্দ্রিক তত্ত্বের সমর্থক ছিলেন, যেখানে পৃথিবী নিজ অক্ষের চারদিকে ঘূর্ণনশীল এবং তা আবার সূর্যের চারদিকে আবর্তনশীল বলে প্রস্তাব করা হয়। প্লুটার্কের মতে, সেলুকাস যুক্তির মাধ্যমে সূর্যকেন্দ্রিক ব্যবস্থা প্রমাণও করেছিলেন, যদিও কী ধরনের যুক্তি ব্যবহার করেছিলেন তা জানা যায়নি।

লুসিও রুসো’র মতে, তার যুক্তিতর্ক সম্ভবত জোয়ার-ভাঁটা সংক্রান্ত ছিল। সেলুকাস সঠিকভাবেই তত্ত্ব দাঁড় করান যে, জোয়ার-ভাঁটা হয় চাঁদের কারণে, যদিও তার বিশ্বাস ছিল যে এই মিথষ্ক্রিয়ায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলেরও ভূমিকা আছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, জোয়ারের সময় এবং তীব্রতা বিশ্বের বিভিন্ন অংশে ভিন্ন ভিন্ন হয়। স্ট্রাবো’র মতে, সেলুকাসই ছিলেন প্রথম যিনি উল্লেখ করেন যে, চাঁদের আকর্ষণের কারণেই জোয়ার-ভাঁটা হয়, চাঁদের সাথে সূর্যের আপেক্ষিক অবস্থানের ওপর এর তীব্রতা নির্ভর করে।

বার্টেল লিনডার্ট ভন ডার ভার্ডেন এর মতে, সম্ভবত সূর্যকেন্দ্রিক তত্ত্বের জ্যামিতিক মডেলের ধ্রুবকগুলোর মান নির্ণয়ের মাধ্যমে এবং এই মডেল ব্যবহার করে গ্রহের অবস্থান নির্ণয়ের পদ্ধতি গঠন করে, সেলুকাস এই তত্ত্বটি প্রমাণ করেছিলেন। যেহেতু তিনি হিপার্কাসের সমসাময়িক ছিলেন, তিনি ঐ সময়ে প্রচলিত ত্রিকোণমিতিক পদ্ধতিও ব্যবহার করে থাকতে পারেন।

কোন আসল বা গ্রিক-অনূদিত সংস্করণই টিকে নেই, যদিও তার কাজের কিছু বিক্ষিপ্ত অংশ আরবি অনুবাদে টিকে আছে, যেটা পরবর্তীকালে পারস্যের দার্শনিক মুহাম্মাদ ইবনে জাকারিয়া আল-রাজি’র (৮৬৫-৯২৫) দ্বারা উদ্ধৃত হয়।

হেলেনীয় জ্যোতির্বিদ্যায় ব্যাবিলনীয় প্রভাব

প্রাচীন গ্রিক ও হেলেনীয় লেখকদের (যার মধ্যে গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ এবং ভূগোলবিদগণ অন্তর্ভুক্ত) অনেক কাজই বর্তমান কাল পর্যন্ত সংরক্ষিত আছে, অথবা তাদের কাজ ও চিন্তাধারার কিছু দিক পরবর্তীকালে তথ্যসূত্র হিসেবে রক্ষিত আছে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে পূর্বতন প্রাচীন নিকট প্রাচ্য সভ্যতার, বিশেষ করে ব্যাবিলনিয়ার অবদান, বহুকাল ধরেই বিস্মৃত ছিল। ঊনবিংশ শতকের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলো আবিষ্কারের পর থেকে, মৃত্তিকাফলকে লিখিত কিউনিয়াফর্ম পাওয়া গেছে, যার কিছু কিছু জ্যোতির্বিদ্যার সাথে সংশ্লিষ্ট। সবচেয়ে পরিচিত জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ফলকগুলোর বর্ণনা করেছেন আব্রাহাম স্যাক্স এবং পরে অটো নয়গেবাওয়ার কর্তৃক Astronomical Cuneiform Texts (ACT)- এ প্রকাশিত হয়। জ্যোতির্বিদ্যার বিভিন্ন দিক যেমন- নমন (gnomon) এবং একটি দিন, বারো ঘণ্টার দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে যাওয়া- এগুলো গ্রিকরা ব্যাবিলনীয়দের কাছ থেকেই শিখেছিল বলে হেরোডোটাস উল্লেখ করেন। অন্যান্য সূত্রে পাওয়া যায় যে, গ্রিক পারডেম, যা কোন বর্ষের দিনসূচক ৩৬৫-৩৬৬টি খোদাইকৃত গর্তবিশিষ্ট একটি পাথর, তার ধারণাও ব্যাবিলনীয়দের থেকে পাওয়া।

ব্যাবিলনীয় সভ্যতার পুনরাবিষ্কারের সময় থেকে অনুমান করা হয় যে, চিরায়ত, হেলেনীয় এবং ক্যালডীয় জ্যোতির্বিদ্যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে তথ্য বিনিময় বিদ্যমান ছিল। ধার করা তথ্যের সবচেয়ে ভালো প্রমাণ হচ্ছে হিপার্কাসের (খ্রি.পূ ২য় শতক) এবং ক্লদিয়াস টলেমি’র (২য় শতক) লেখা থেকে।

আদি প্রভাব

ব্যাবিলনীয় লিপি থেকেই মেটোনিক চক্র সম্পর্কে গ্রিকরা শিখেছিল বলে কোন কোন পণ্ডিত মনে করেন। অ্যাথেন্স এর মেটন, যিনি খ্রিস্ট পূর্ব ৫ম শতকের একজন গ্রিক জ্যোতির্বিদ ছিলেন, যিনি ১৯ সৌরবর্ষ প্রায় ২৩৫ চান্দ্রমাসের সমান- এর ভিত্তিতে একটি চান্দ্র-সৌর পঞ্জিকা তৈরি করেন, এই সম্পর্কটিও সম্ভবত ব্যাবিলনীয়দের জানা ছিল।

খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দিতে, নিডিওস এর ইউডোক্সোস স্থায়ী তারকাদের ওপর একটি বই লেখেন। তার বর্ণিত অনেকগুলো নক্ষত্রপুঞ্জ, বিশেষত রাশিচক্রের ১২টি চিহ্ন ব্যাবিলনীয়দের সাথে সাদৃশ্য প্রকাশ করে। পরের শতকে সামোস এর অ্যারিস্টার্কাস একটি সারোস চক্র নামক একটি গ্রহণ চক্র ব্যবহার করে বছরের দৈর্ঘ্য নির্ণয় করেন। তা সত্বেও, গ্রিক এবং ক্যালডীয়দের মধ্যে আদিকালে তথ্য বিনিময় চালু ছিল- এটা বেশ দুর্বল অনুমান; সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতকের শেষভাগে, আলেক্সান্দার দ্য গ্রেট পারস্যজুড়ে তার সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার পর, এদের মধ্যে আরও জোরালোভাবে তথ্য বিনিময় প্রচলিত ছিল।

হিপার্কাস ও টলেমি’র ওপর প্রভাব

১৯০০ সালে ফ্রাঞ্জ হাভিয়ের কুগ্লার দেখান যে, টলেমি তার Almagest IV.2 গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, হিপার্কাস, “ক্যালডীয়দের ” এবং তার নিজের পর্যবেক্ষণের তুলনা করে, চাঁদের পর্যায়কালের মানের উন্নতিসাধন করেছিলেন, যা “আরও প্রাচীন জ্যোতির্বিদদের” কাছ থেকে হিপার্কাস জেনেছিলেন। তবে কুগ্লার আবিষ্কার করেন যে, টলেমি হিপার্কাসের নামে যে পর্যায়কালের উল্লেখ করেন, তা ব্যাবিলনীয় এফিমেরিসে আগেই ব্যবহৃত হয়েছিল, বিশেষুত বর্তমানকালে “ব্যবস্থা বি” বলে পরিচিত রচনা সংকলনে (কখনো কখনো এর কৃতিত্ব কিদিন্নুকে দেওয়া হয়)। আপাতভাবে, হিপার্কাস তার নতুন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কেবল ঐ পর্যায়কালগুলোর বৈধতা নিশ্চিত করেছিলেন, যা তিনি ক্যালডীয়দের কাছ থেকে শিখেছিলেন। এই নির্দিষ্ট বিষয়ে ব্যাবিলনীয় তত্ত্ব সম্পর্কে পরবর্তীকালীন গ্রিক জ্ঞান নিশ্চিত করা হয় ২য় শতকের প্যাপিরাস এর মাধ্যমে, যার মধ্যে ঐ একই “ব্যবস্থা বি” ব্যবহার করে চাঁদের জন্য, এক কলামে ৩২ লাইনের হিসাব-নিকাশ রয়েছে, তবে তা প্যাপিরাসের ওপর গ্রিক ভাষায় লেখা, কিউনিয়াফর্ম লিপিতে মৃত্তিকাফলকের ওপর লিখিত নয়।

এটা স্পষ্ট যে হিপার্কাস (এবং তার পরে টলেমি) এর কাছে বহু শতাব্দিজুড়ে গ্রহণ পর্যবেক্ষণের পূর্ণ তালিকা ছিল। খুব সম্ভবত এগুলো “দিনলিপি” মৃত্তিকাফলক থেকে সংকলন করা হয়েছিল: এগুলো হচ্ছে ক্যালডীয়দের সকল প্রাসঙ্গিক প্রাত্যহিক পর্যবেক্ষণের বিবরণ সংবলিত মৃত্তিকা-ফলক। সংরক্ষিত দৃষ্টান্তগুলো খ্রিস্টপূর্ব ৬৫২ অব্দ থেকে ১৩০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পুরনো, কিন্তু এই নথিগুলো সম্ভবত ব্যাবিলনীয় রাজা নাবোনাসারের শাসনকাল অব্দি পুরনো: টলেমি তার কালপঞ্জি শুরু করেন নাবোনাসারের প্রথম বর্ষে, মিশরীয় পঞ্জিকার প্রথম দিন থেকে; অর্থাৎ ২৬ ফেব্রুয়ারি ৭৪৭ খ্রি.পূ.।

অবিন্যস্ত তথ্যাবলি ব্যবহার করা নিশ্চয়ই কঠিন ছিল, এবং ক্যালডীয়রা যে নিজেরাই তার সারাংশগুলোর সংকলন তৈরি করেছিল, যেমন- সকল পর্যবেক্ষণকৃত গ্রহণসমূহ (কিছু কিছু ফলকে একটি সারোস চক্র সম্পন্নকারী সময়কালে সকল গ্রহণের তালিকা পাওয়া গেছে), তাতে কোন সন্দেহ নেই। এটা তাদেরকে কোন ঘটনার পুনরাবৃত্তি শনাক্ত করতে সহায়তা করতো। অন্যান্যের মধ্যে ব্যবস্থা বি (cf. Almagest IV.2)-তে ব্যবহৃত:

  • ২২৩ (সিনোডিক) মাস = ২৩৯ অনিয়ত প্রত্যাবর্তন (অনিয়ত মাস) = অক্ষাংশে ২৪২ প্রত্যাবর্তন (ড্রাকোনীয় মাস)। এটা এখন জানা আছে কেননা, গ্রহণের পূর্বাভাসের জন্য সারোস চক্র খুবই কার্যকরী।
  • ২৫১ (সিনোডিক) মাস = ২৬৯ অনিয়ত প্রত্যাবর্তন
  • ৫৪৫৮ (সিনোডিক) মাস = অক্ষাংশে ৫৯২৩ প্রত্যাবর্তন
  • ১ সিনোডিক মাস = ২৯; ৩১:৫০:০৮:২০ দিন (ষাটমূলক; দশমিকে ২৯.৫৩০৫৯৪১৩... দিন = ২৯ দিন ১২ ঘণ্টা ৪৪ মিনিট ৩ সেকেন্ড)

ব্যাবিলনীয়রা সকল সময়কালই সিনোডিক মাসের মাধ্যমে প্রকাশ করেছিল, তারা একটি চান্দ্র-সৌর পঞ্জিকা ব্যবহার করতো বলেই সম্ভবত এমনটা করেছিল। বার্ষিক ঘটনাবলির সাথে বেশ কতগুলো সম্পর্কের কারণে বর্ষ-দৈর্ঘ্যের ভিন্ন ভিন্ন মান পাওয়া গিয়েছিল।

অনুরূপভাবে, গ্রহসমূহের পর্যায়কাল সম্বন্ধেও এমন কিছু সম্পর্ক জানা ছিল। টলেমি তার Almagest IX.3 গ্রন্থে যে কৃতিত্ব হিপার্কাসকে দিয়েছিলেন, যেগুলো আসলে তার আগেই ব্যাবিলনীয়রা পূর্বাভাসের জন্য ব্যবহার করতো, যা ব্যাবিলনীয় ফলকগুলোতে পাওয়া গেছে।

হিপার্কাসের অন্যান্য যে কাজগুলোতে ব্যাবিলনীয়দের ছাপ পাওয়া যায় সেগুলো হচ্ছে:

  • কোন বৃত্তকে ৬০ মিনিট-চাপ বিশিষ্ট ৩৬০ ডিগ্রিতে বিভক্ত করা প্রথম গ্রিক ব্যক্তি।
  • সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ষাটমূলক সংখ্যা পদ্ধতির প্রথম ব্যবহার
  • pechus (“cubit”) এককের প্রথম ব্যবহার, যা প্রায় ২° বা ২.৫° এর সমান।
  • ২৪৮ দিন = ৯ অনিয়ত মাস, এই সংক্ষিপ্ত সময়কালের ব্যবহার।

যোগাযোগের মাধ্যম

আলেক্সান্দার দ্য গ্রেট এর বিজয়ের (৩৩১ খ্রি.পূ.) কিছু পরই সম্ভবত এই সকল তথ্য গ্রিকদের কাছে স্থানান্তরিত হয়। সনাতন দার্শনিক সিমপ্লিকাসের (৬ষ্ঠ শতকের শুরুতে) মতানুসারে, আলেক্সান্দার তার কাহিনীকার অলিন্থিস এর ক্যালিস্থিনিস এর তত্ত্বাবধানে শকল ঐতিহাসিক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক নথি অনুবাদের নির্দেশ দেন, যিনি সেগুলো তার চাচা অ্যারিস্টটল এর কাছে পাঠান। এটা উল্লকেহ্য যে, সিমপ্লিকাস যদিও অনেক পরের দিকে উৎস, তবুও তার ভাষ্য নির্ভরযোগ্য হতে পারে। তিনি সাসানিদ (পারস্যীয়) দরবারে কিছু সময় নির্বাস্ন কাটিয়েছিলেন, এবং পাশ্চাত্যে হারিয়ে যাওয়া বেশ কিছু উৎসের সন্ধান পেয়েছিলেন।  এটা লক্ষণীয় যে, তিনি tèresis (বাংলা: পাহারা) নামে একটি শিরোনামের উল্লেখ করেছিলেন, যেটা কোন ঐতিহাসিক কাজের নাম হিসেবে বেশ অদ্ভুত, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটা ব্যাবিলনীয় শিরোনাম massartu এর একটি গ্রহণযোগ্য অনুবাদ যার অর্থ “পাহারা” হয়, আবার “পর্যবেক্ষণ করা”-ও হয়। যাই হোক, প্রায় একই সময়ে অ্যারিস্টটলের ছাত্র সিযিকাস এর ক্যালিপাস, তার ৭৬-বছরব্যাপী চক্রের প্রবর্তন করেন যেটা ১৯-বছরব্যাপী মেটোনিক চক্রের উন্নয়ন সাধন করে। তিনি প্রথম চক্রের প্রথম বর্ষ, ২৮ জুন ৩৩০ খ্রি.পূ. (পূর্বানুমিত জুলিয়ান তারিখ) উত্তরায়ণের দিন থেকে শুরু করেন, কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব ৩৩১ অব্দের শরতে আলেক্সান্দারের চূড়ান্ত গগামিলা’র যুদ্ধের পরে, তিনি প্রথম চান্দ্র মাস থেকে গণনা করেছেন বলে দেখা যায়। সুতরাং, ক্যালিপাস তারা উপাত্ত ব্যাবিলনীয় উৎস থেকে সংগ্রহ করে থাকতে পারেন, এবং তার পঞ্জিকাটিও কিদিন্নু কর্তৃক আগেই প্রচলিত হয়ে থাকতে পারে। এছাড়াও বেরোসাস নামক ব্যাবিলনীয় এক পুরোহিত ২৮১ খ্রি.পূ. এর দিকে, নতুন শাসক প্রথম অ্যান্টিওকাস এর জন্য, ব্যাবিলনিয়ার (আসলে পৌরাণিক) ইতিহাস নিয়ে গ্রিক ভাষায় Babyloniaca নামক একটি বই লিখেছিলেন; বলা হয়ে থাকে তিনি পরবর্তীকালে গ্রিক কস (Kos) দ্বীপে, জ্যোতিষশাস্ত্রীয় একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। গ্রিকদের জ্যোতির্বিদ্যা/ জ্যোতিষশাস্ত্র শেখানোর আরেকজন প্রার্থী ছিলেন সুদিনেস, যিনি খ্রি.পূ. ৩য় শতকের শেষ দিকে প্রথম অ্যাটালাস এর দরবারে ছিলেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

ইতিহাসবেত্তাগণ প্রমাণ পেয়েছেন যে, ৫ম শতকের শেষভাগে ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদ্যা, জ্যোতির্বিদ, এবং জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ধারণাগুলো সম্পর্কে অ্যাথেন্সের জানা ছিল; এটা জেনোফেন এর নথিতে, সক্রেটিস তার ছাত্রদেরকে রাতের আকাশে তারা দেখে সময় বলতে পারার জন্য জ্যোতির্বিদ্যা অধ্যয়ন করতে বলতেন- এর মাধ্যমে জানা যায়। এই দক্ষতাটির উদ্ধৃতি মেলে আরাটোস এর কবিতায়, যেখানে রাশিচক্রের চিহ্ন থেকে রাতের সময় বলার কথা বর্ণিত হয়েছে।

যেটাই হোক না কেন, জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বিবরণের অনুবাদের জন্য কিউনিয়াফর্ম লিপি, এর ভাষা ও পদ্ধতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের প্রয়োজন ছিল, সেটা কোন অজ্ঞাত ক্যালডীয় ব্যক্তির করা বলে মনে করাই যুক্তিযুক্ত। এখন, ব্যাবিলনীয়রা তাদের পর্যবেক্ষণগুলো চান্দ্র-সৌর পঞ্জিকা অনুসারে লিপিবদ্ধ করতো, যেখানে মাস ও বছরের দৈর্ঘ্যের ভিন্নতা ছিল (যথাক্রমে ২৯ বা ৩০ দিন; ১২ বা ১৩ মাস)। ঐ সময়ে তারা কোন নিয়মিত পঞ্জিকা (যেমন- মেটোনিক চক্রভিত্তিক) ব্যবহার করতো না, বরং নতুন চাঁদ দেখার ভিত্তিতে নতুন মাস শুরু করতো। এ কারণে বিভিন্ন ঘটনার মধ্যকার সময় ব্যবধান নির্ণয় করা বেশ দূরূহ ছিল। হিপার্কাস যেটা করে থাকতে পারেন তা হচ্ছে, এই সব নথিকে মিশরীয় পঞ্জিকায় রূপান্তরিত করেছেন, যেটা ৩৬৫ দিনের একটা স্থায়ী বর্ষ (৩০ দিনবিশিষ্ট ১২টি মাস এবং ৫টি অতিরিক্ত দিন) ব্যবহৃত হতো: এতে করে সময় ব্যবধান গণনা সহজতর হয়ে যায়। টলেমি তার শকল পর্যবেক্ষণ এই পঞ্জিকা অনুসারেই করেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, “তিনি (হিপার্কাস) সর্বসাকল্যে সকল গ্রহ-সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ আরও উপযোগীভাবে সাজিয়ে একটি সংকলন তৈরি করেছিলেন” (Almagest IX.2)। প্লিনি গ্রহণের পূর্বাভাস সম্পর্কে বলেন, “তাদের (থ্যালিসের) সময়কালের পরে, উভয় তারকার (সূর্য এবং চাঁদ) গতিপথের ৬০০ বছরের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন হিপার্কাস, ...” (Naturalis Historia II.IX(53))। হিপার্কাস ৬০০ বছরের জন্য সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন বলে এখানে ইঙ্গিত করা হলেও, যে বিশাল পরিমাণে হিসাব-নিকাশ তার জন্য দরকার হতো, তাতে এমনটা হওয়া সম্ভবপর ছিল বলে মনে হয় না। বরং, হিপার্কাস নাবোনাসারের সময়কাল থেকে নিজের সময়কাল পর্যন্ত সকল গ্রহণের তালিকা তৈরি করে থাকতে পারেন।

আরো দেখুন

  • ব্যাবিলনীয় জ্যোতিষশাস্ত্র
  • ব্যাবিলনীয় পঞ্জিকা
  • ব্যাবিলনীয় গণিত
  • ব্যাবিলনীয় তারকা সারণি
  • জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাস (মেসোপটেমিয়া অংশে)।
  • মূল.আপিন
  • মিশরীয় জ্যোতির্বিদ্যা
  • সুমেরীয় জ্যোতির্বিদ্যা
  • অলমেকান জ্যোতির্বিদ্যা
  • মায়ান জ্যোতির্বিদ্যা
  • প্লায়াডিজ
  • আমিসাদুক্বার ভেনাস মৃত্তিকাফলক

তথ্যসূত্র

Tags:

ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান পুরাতন ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদ্যাব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান নব্য-ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদ্যাব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান হেলেনীয় জ্যোতির্বিদ্যায় ব্যাবিলনীয় প্রভাবব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান আরো দেখুনব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান তথ্যসূত্রব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানইংরেজি ভাষাকিউনিফর্মজ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুমৃত্তিকা ফলকমেসোপটেমিয়াসুমের

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

মিয়ানমারমুসাবিজ্ঞানআশালতা সেনগুপ্ত (প্রমিলা)জলাতংকমৈমনসিংহ গীতিকাস্বাস্থ্যের উপর তামাকের প্রভাবসৌরজগৎথ্যালাসেমিয়াবাংলাদেশের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাডিএনএসাঁওতালআল মনসুরচন্দ্রযান-৩দুবাইসূর্যসুদীপ মুখোপাধ্যায়পেশাহাদিসত্রিভুজসুফিয়া কামালচৈতন্য মহাপ্রভু২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপভারতের ইতিহাসইবনে সিনাসত্যজিৎ রায়চুম্বকভারতের রাষ্ট্রপতিদের তালিকাপলাশীর যুদ্ধফরাসি বিপ্লববৃষ্টিচিয়া বীজইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়বাংলা সাহিত্যখিলাফতবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মরত জেনারেলদের তালিকাস্বরধ্বনিগর্ভধারণউদ্ভিদজ্বীন জাতিভারতের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০মুর্শিদাবাদ জেলাডায়াজিপামমহাস্থানগড়রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন (১৮৬১–১৯০১)কম্পিউটার কিবোর্ডসাজেক উপত্যকাহৃৎপিণ্ডআকিজ গ্রুপবাংলাদেশ আনসারসুকুমার রায়বাংলাদেশের জাতিগোষ্ঠীনাদিয়া আহমেদব্যক্তিনিষ্ঠতাসিন্ধু সভ্যতাশিবা শানুখুলনা জেলাকালেমাবিন্দুবাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসরাজশাহী বিভাগবঙ্গবন্ধু-১প্রেমালুজাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দাইন্দোনেশিয়াবক্সারের যুদ্ধউজবেকিস্তানক্রিয়েটিনিনআরসি কোলাতানজিন তিশাগঙ্গা নদীবাংলাদেশের পোস্ট কোডের তালিকাভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহযোগাসনশীর্ষে নারী (যৌনাসন)আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসমৌলিক পদার্থের তালিকা🡆 More