বৃহৎ সিস্টেম

বৃহৎ সিস্টেম বা তাপগতীয় সিস্টেম বলতে জ্যামিতিকভাবে পৃথক করা যায় এমন একটি পদার্থ-অংশকে বোঝায়,যার ধর্মগুলিকে তাপমাত্রা,চাপ,এনট্রপি,আভ্যন্তরীণ শক্তি,এনথ্যালপি,গিবস্ মুক্ত-শক্তি ইত্যাদির মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে বর্ণনা করা যায়। তাপগতিবিজ্ঞানের কেন্দ্রীয় ধারণা হল বৃহৎ সিস্টেম (macroscopic system)। সিস্টেমটি একটি নির্দিষ্ট জ্যামিতিক আকৃতিবিশিষ্ট আবরণী পর্দা বা প্রাচীর (boundary) দ্বারা তার পারিপার্শ্বিকের থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকে। অনেকসময় কোনো পৃথকীকরণ সীমানা নাও থাকতে পারে;বলা যেতে পারে,এইসমস্ত ক্ষেত্রে পৃথকীকরণ সীমানাটি অদৃশ্য।কোনো নির্দিষ্ট সিস্টেম বাদে মহাবিশ্বের বাকি অংশকে ওই সিস্টেমটির পরিবেশ (surroundings) বলা হয়। অর্থাৎ বলা যেতে পারে, সিস্টেম+পরিবেশ=মহাবিশ্ব( universe)। যদি সিস্টেমটি কোন অসীম, অনুত্তেজিত পরিবেশের সহাবস্থানে থাকে, তাহলে সেই পরিবেশকে রিজার্ভয়ার (reservoir) বলে।

বৃহৎ সিস্টেম
সিস্টেম,সীমানা,পরিবেশ আর মহাবিশ্ব

ভারসাম্যাবস্থায় সিস্টেমটিকে তাপমাত্রা,চাপআয়তন-এর মত কিছু পরিমাপযোগ্য বৈশিষ্ট্যের সাহায্যে বর্ণনা করা যায়। এগুলি তাপগতিবৈজ্ঞানিক চলক (thermodynamic variable) হিসেবে পরিচিত। এগুলি ছাড়াও আরও অনেক চলক,যেমন – ঘনত্ব, আপেক্ষিক গুরুত্ব,আপেক্ষিক তাপ,সংকোচনীয়তা,তাপীয় প্রসারাঙ্ক ইত্যাদি চিহ্নিত ও তুলনা করে কোন বস্তুর অবস্থা ও পরিবেশের সাথে বস্তুটির সম্পর্ক আরও পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশ করা যায়।

প্রকারভেদ

তাপগতীয় সিস্টেমগুলি প্রধানত তিন প্রকারের হয়:

  1. মুক্ত সিস্টেম
  2. বদ্ধ সিস্টেম
  3. নিঃসঙ্গ সিস্টেম
  • মুক্ত সিস্টেম বা উন্মুক্ত সিস্টেম: একটি উন্মুক্ত সিস্টেমের ক্ষেত্রে,সিস্টেম এবং পরিবেশের মধ্যে পদার্থ (ভর), কার্য এবং তাপের বিনিময় সম্ভবপর হয়। একটি খোলা বিকারের মধ্যে বিভিন্ন বিক্রিয়ক পদার্থ উপস্থিত থাকলে যে সিস্টেম গঠিত হয় তা মুক্ত সিস্টেমের একটি আদর্শ উদাহরণ।এখানে বিকারের বদ্ধতলগুলি সিস্টেম ও পরিবেশের মধ্যে বাস্তব সীমানা এবং বিকারের খোলা দিকটি সিস্টেম ও পারিপার্শ্বিকের মধ্যে কাল্পনিক বা অদৃশ্য সীমানা হিসাবে কাজ করে।এই কাল্পনিক সীমানাটি পদার্থ তথা ভরের আদানপ্রদানের জন্য অপরিহার্য,আর কাল্পনিক সীমানাটি সহ অন্যান্য বদ্ধ সীমানাগুলির মধ্য দিয়ে তাপ ও কার্যের পারস্পরিক বিনিময় ঘটে।মুক্ত সিস্টেম সাম্যাবস্থায় বিদ্যমান থাকতে পারে না।সাম্যাবস্থা থেকে থার্মোডায়নামিক সিস্টেমের বিচ্যুতি বর্ণনা করার জন্য প্রধান তাপগতীয় চলকগুলি ছাড়াও কতকগুলি অভ্যন্তরীণ চলরাশির একটি সেট চালু করা হয়েছে। ভারসাম্যাবস্থাই সর্বাপেক্ষা স্থিতিশীল বলে মনে করা হয়। এবং সেই কারণে অভ্যন্তরীণ চলরাশিগুলির মান এমন হতে হয়,যেন তা সিস্টেমটির সাম্যাবস্থা অর্জনের পক্ষে অনুকূল হয়।
বৃহৎ সিস্টেম 
মুক্ত সিস্টেম
  • বদ্ধ সিস্টেম বা আবদ্ধ সিস্টেম: এই ধরনের সিস্টেম পরিবেশের সঙ্গে ভরের আদানপ্রদানে অপারগ,তাই এক্ষেত্রে সিস্টেমের অন্তর্গত পদার্থের পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকে,কিন্তু তাপ এবং কার্য সিস্টেমের সীমানার মাধ্যমে বিনিময় করা যেতে পারে। একটি বদ্ধ সিস্টেম তাপ অথবা কার্য অথবা উভয়ই বিনিময় করতে পারবে কিনা,তা তার সীমানার প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল।

অ্যাডিয়াবেটিক বা রুদ্ধতাপীয় সীমানা - এই সীমানা কোনো তাপ বিনিময় করার অনুমতি দেয় না।এক্ষেত্রে বদ্ধ সিস্টেমটিকে রুদ্ধতাপীয় সিস্টেম বলা হয়।

কঠোর বা অনমনীয় সীমানা - এই সীমানা কার্যের বিনিময়ে বাধা প্রদান করে।এক্ষেত্রে বদ্ধ সিস্টেমটিকে যান্ত্রিকভাবে বিচ্ছিন্ন সিস্টেম বলা হয়।

বদ্ধ সিস্টেমের উদাহরণ হলো একটি সিলিন্ডারে একটি পিস্টন দ্বারা সংকুচিত হওয়া তরল।এর আরেকটি ভালো উদাহরণ হলো বোমার ক্যালোরিমিটার,ইহা প্রকৃতপক্ষে একটি নির্দিষ্ট রাসায়নিক বিক্রিয়ার জ্বলন তাপ পরিমাপে ব্যবহৃত ধ্রুব-আয়তন ক্যালোরিমিটার।এই ব্যবস্থায় তড়িৎশক্তির স্থানান্তরনের মাধ্যমে তড়িৎস্ফুলিঙ্গ উৎপন্ন হয়,কিন্তু ভরের কোনোরূপ স্থানান্তর ঘটে না।

বৃহৎ সিস্টেম 
আবদ্ধ সিস্টেম
  • বিচ্ছিন্ন সিস্টেম বা নিঃসঙ্গ সিস্টেম: একটি বিচ্ছিন্ন সিস্টেম তার পরিবেশের সঙ্গে পদার্থ তথা ভর এবং কার্য কোনোটিরই আদানপ্রদান ঘটাতে পারে না।তাই যেকোনো নিঃসঙ্গ সিস্টেমের মোট ভর এবং শক্তি সর্বদাই ধ্রুবক হয়।সময়ের সাথে সাথে একটি বিচ্ছিন্ন সিস্টেম চাপ,তাপমাত্রা বা অন্যান্য ধর্মের পার্থক্যকে সামঞ্জস্য করে তাপগতীয় ভারসাম্যে পৌঁছোয়।সত্যিকারের বিচ্ছিন্ন তাপগতীয় সিস্টেম বাস্তবে বিদ্যমান নয় (সম্ভবত সমগ্র মহাবিশ্বের ব্যতীত),কারণ উদাহরণস্বরূপ,সমস্ত বাস্তব সিস্টেমেরই কিছু পরিমাণ ভর আছে এবং এর ফলে সিস্টেমগুলি অভিকর্ষ বলের প্রভাবে অভিকর্ষজ ত্বরণ সহ ভূপৃষ্ঠ অভিমুখে অগ্রসর হয়। সমগ্র মহাবিশ্বকে একটি বিচ্ছিন্ন সিস্টেম হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে,কারণ মনে করা হয় যে মহাবিশ্বের বাইরে পদার্থ এবং শক্তির স্থানান্তর হয় না।দেখা গিয়েছে,একটি বাস্তব সিস্টেম সীমাবদ্ধ (সম্ভবত খুব দীর্ঘ) সময়ের জন্য একটি বিচ্ছিন্ন সিস্টেমের অনুরূপ আচরণ করতে পারে।যদিও বিচ্ছিন্ন সিস্টেমের ধারণা প্রয়োগ করে বিজ্ঞানীরা অনেক জটিল বাস্তব সমস্যাকে অতি সহজভাবে ব্যাখ্যা করতে সমর্থ হয়েছেন। এছাড়া এটি একটি গ্রহণযোগ্য আদর্শ,যা নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক ঘটনাগুলির গাণিতিক মডেল নির্মাণে ব্যবহৃত হয়।
বৃহৎ সিস্টেম 
বিচ্ছিন্ন সিস্টেম

তাপগতীয় সাম্যাবস্থা

তাপগতীয় ভারসাম্যে,একটি সিস্টেমের তাপগতীয় চলকগুলি সময়ের সঙ্গে অপরিবর্তিত থাকে।সাম্যাবস্থায় কোনো সিস্টেম বা ব্যবস্থার সকল বিন্দুতে প্রধান তাপগতীয় স্থানাঙ্ক বা চলকত্রয় অর্থাৎ চাপ (p), আয়তন (V) এবং তাপমাত্রা (T)-এর মান সমান হয়।সাম্যাবস্থায় বিরাজ করা সিস্টেমগুলি ভারসাম্যে নেই এমন সিস্টেমগুলির তুলনায় বোঝার পক্ষে অনেক সহজ।কিছু ক্ষেত্রে,একটি তাপগতীয় প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করার সময় ধরে নেওয়া হয় যে প্রক্রিয়াটির প্রতিটি অন্তর্বর্তী রাষ্ট্র সাম্যাবস্থাতে অবস্থান করছে।এই বিশ্লেষণ যথেষ্ট সহজ।

বিচ্ছিন্ন সিস্টেমগুলিকে ধারাবাহিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গিয়েছে,এদের ক্ষেত্রে সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে অন্তর্বর্তী অসাম্যগুলি ক্রমশ পুনর্বিন্যাসিত হতে থাকে এবং স্থিতিশীল অবস্থার দিকে অগ্রগতি হয়।ধীরে ধীরে সিস্টেমের সকল বিন্দুতে চাপ আর তাপমাত্রা সমান হয়,অর্থাৎ বিচ্ছিন্ন সিস্টেমটি সাম্যাবস্থা অর্জন করে।

পৃথকীকরণ সীমানা

কোনো সিস্টেম একটি নির্দিষ্ট জ্যামিতিক আকৃতিবিশিষ্ট দৃশ্যমান বা অদৃশ্য আবরণ দ্বারা ওর পরিবেশের থেকে পৃথকীকৃত থাকে,এই আবরণটিকে পৃথকীকরণ প্রাচীর বা পৃথকীকরণ সীমানা বলা হয়।বলা যেতে পারে,এই পৃথকীকরণ সীমানাই কোনো সিস্টেম ও তার পরিবেশের মধ্যে যোগসূত্র।

যে ধরনের সীমানা দিয়ে সিস্টেম ও পরিবেশের মধ্যে যে ধরনের বিনিময় হয়
সীমানার প্রকৃতি বিনিময়যোগ্যতা
ভর কার্য তাপ
কেবল পদার্থ বিনিময়কারী বৃহৎ সিস্টেম Y বৃহৎ সিস্টেম N বৃহৎ সিস্টেম N
কেবল শক্তি বিনিময়কারী বৃহৎ সিস্টেম N বৃহৎ সিস্টেম Y বৃহৎ সিস্টেম Y
অ্যাডিয়াবেটিক বৃহৎ সিস্টেম N বৃহৎ সিস্টেম Y বৃহৎ সিস্টেম N
অ্যাডায়নামিক বৃহৎ সিস্টেম N বৃহৎ সিস্টেম N বৃহৎ সিস্টেম Y
বিচ্ছিন্ন বা নিঃসঙ্গ বৃহৎ সিস্টেম N বৃহৎ সিস্টেম N বৃহৎ সিস্টেম N

পরিবেশ

সিস্টেমটি মহাবিশ্বের অধ্যয়নরত অংশ,এটি ছাড়া মহাবিশ্বের বাকি অংশকে ওই নির্দিষ্ট সিস্টেমের পরিবেশ বলা হয়।স্থিতিশীল পরিবেশ রিজার্ভয়ার নামে পরিচিত।সিস্টেমের ধরন অনুসারে,এটি ভর,শক্তি (তাপ এবং কার্য সহ),ভরবেগ,আধান বা অন্যান্য সংরক্ষণশীল বৈশিষ্ট্যগুলির বিনিময়ের মাধ্যমে সিস্টেমের সাথে আন্তঃক্রিয়ায় লিপ্ত হতে পারে।সাধারণভাবে একটি সিস্টেমের বিশ্লেষণে পরিবেশকে অগ্রাহ্য করা হয়,কেবল এই মিথস্ক্রিয়াগুলি ব্যতীত।

আরও পড়ুন

তথ্যসূত্র

Tags:

বৃহৎ সিস্টেম প্রকারভেদবৃহৎ সিস্টেম তাপগতীয় সাম্যাবস্থাবৃহৎ সিস্টেম পৃথকীকরণ সীমানাবৃহৎ সিস্টেম পরিবেশবৃহৎ সিস্টেম আরও পড়ুনবৃহৎ সিস্টেম তথ্যসূত্রবৃহৎ সিস্টেমএনট্রপিচাপতাপগতিবিজ্ঞানতাপমাত্রাপরিবেশমহাবিশ্ব

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

কুরআনের সূরাসমূহের তালিকাবাঙালি হিন্দু বিবাহদুবাইআফ্রিকাবঙ্গবন্ধু-১নেপালযৌনাসনশেখ হাসিনাইসরায়েল–হামাস যুদ্ধবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ণত্ব বিধান ও ষত্ব বিধান২০২৩–২৪ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগইতালিসাহাবিদের তালিকাসোনালী ব্যাংক পিএলসিলালবাগের কেল্লালোহিত রক্তকণিকাইসরায়েলজনসংখ্যা অনুযায়ী সার্বভৌম রাষ্ট্র ও নির্ভরশীল অঞ্চলসমূহের তালিকাঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েশিবসার্বজনীন পেনশনবাংলাদেশ আওয়ামী লীগমসজিদে হারামকোষ (জীববিজ্ঞান)কিশোরগঞ্জ জেলাস্বাধীনতাসিন্ধু সভ্যতাস্ক্যাবিসবাংলাদেশের জাতীয় পতাকাসুন্দরবনবাংলাদেশের নদীবন্দরের তালিকাঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরটেলিটকফুসফুসস্বাস্থ্যের অধিকারশিশ্ন বর্ধনরোজাদ্বৈত শাসন ব্যবস্থাচাঁদতাজউদ্দীন আহমদই-মেইলগীতাঞ্জলিচাকমাহেইনরিখ ক্লাসেনশাকিব খানজাতীয় স্মৃতিসৌধইসলামের নবি ও রাসুল২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগরশ্মিকা মন্দানাওয়েব ব্রাউজারধর্মপ্রধান পাতাকুলম্বের সূত্রতৃণমূল কংগ্রেসশ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়গারোগ্রাহামের সূত্রইসলাম ও হস্তমৈথুনসূরা ইখলাসসৌদি আরবনাটকমাযহাবশিয়া ইসলামবঙ্গভঙ্গ (১৯০৫)প্রথম উসমানবাংলাদেশের জেলারবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন (১৮৬১–১৯০১)জাযাকাল্লাহময়মনসিংহকার্তিক (দেবতা)বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলআন্তর্জাতিক টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকাএপেক্সআবদুল হামিদ খান ভাসানীদোলযাত্রাসাইপ্রাসগরুবাংলাদেশের সংবিধান🡆 More