ফিলিস্তিন মধ্যপ্রাচ্যের দক্ষিণাংশের একটি ভূখণ্ড, যা ভূমধ্যসাগর ও জর্ডান নদীর মাঝে অবস্থিত (যেখানে বর্তমান ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনী ভূখণ্ড অবস্থিত)। এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা এই তিন মহাদেশের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থানে রয়েছে ফিলিস্তিন। এটি ইসলাম ধর্ম ও খ্রিস্টধর্মের জন্মস্থান। ভৌগোলিক অবস্থান ও দুটি প্রধান ধর্মের সূতিকাগার হওয়ায় স্বভাবতই ফিলিস্তিন নামক ভূখণ্ডটির রয়েছে ধর্ম, সংস্কৃতি, বাণিজ্য ও রাজনীতির এক দীর্ঘ ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী ইতিহাস। আদিকাল থেকে আজ পর্যন্ত ফিলিস্তিনের এই সম্পূর্ণ ভূ-খণ্ড বা এর কোনো কোনো অংশ বিভিন্ন রকমের মানুষদের দ্বারা পরিচালিত ও শাসিত হয়ে আসছে। এদের মধ্যে আছে- কেনানীয়, আরামীয়, প্রাচীন মিশরীয়, ইসরায়েল বংশের ইহুদি, ব্যাবিলনীয়, পারস্য, প্রাচীন গ্রিক, রোমান, বাইজেন্টাইনীয়, প্রাথমিক যুগের মুসলিম খিলাফাত (যেমনঃ উমাইয়া, আব্বাসীয়, সেলজুক, ফাতিমি প্রভৃতি), খ্রিস্টান ক্রুসেডার বা ধর্মযোদ্ধাগণ, শেষের দিকের মুসলিম খিলাফাত (যেমনঃ আইয়ুবি, মামলুক, উসমানীয় সাম্রাজ্য প্রভৃতি), ব্রিটিশ, জর্ডানি (পশ্চিম তীর অংশটুকু), মিশরীয় (গাজা অঞ্চল), এবং হাল আমলের ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সহ এরকম বহু জাতি ও অঞ্চলের ব্যক্তি ও শাসকবর্গ। ফিলিস্তিনের অপরাপর নামগুলো হলোঃ কনান, জায়ন, ইসরায়েলের ভূমি, দক্ষিণ সিরিয়া, জুন্দ ফিলিস্তিন এবং পবিত্র ভূমি।
এই নিবন্ধটিকে উইকিপিডিয়ার জন্য মানসম্পন্ন অবস্থায় আনতে এর বিষয়বস্তু পুনর্বিন্যস্ত করা প্রয়োজন। (জানুয়ারি ২০১৮) |
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |
ফিলিস্তিন অঞ্চলটি পৃথিবীর প্রাচীন অঞ্চলগুলোর একটি যেখানে মানুষের বসবাস, কৃষিনির্ভর জনসমষ্টি এবং সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। ব্রোঞ্জ যুগের প্রথম ও মধ্যভাগে স্বাধীন কেনানীয় নগর-রাষ্ট্রগুলো গড়ে উঠেছিল এবং প্রাচীন মিশর, মেসোপটেমিয়া, ফোয়েনেশিয়া, মাইনোয়ান ক্রিট, এবং সিরিয়ায় গড়ে ওঠা সভ্যতা দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়েছিল।
আফ্রিকা থেকে লেভান্তে ২.৬ থেকে ২.৯ মিলিয়ন বছর আগে হোমোনাইডদের ছড়িয়ে পরার কমপক্ষে চারটি পর্ব সম্পর্কে জানা যায়, এগুলির প্রতিটি সংস্কৃতিগতভাবে পৃথক। ফিলিস্তিন অঞ্চলে প্রাচীনতম মানুষের প্রমাণ গালীলের সাগরের নিকটে উবেদিয়ায় পাওয়া গেছে। আফ্রিকার বাইরে কোথাও পাওয়া প্রাচীনতম পাথরের সরঞ্জামসমূহ হিসাবে ইরিনের কাছে ফ্লিন্ট সরঞ্জামের শিল্পকলা আবিষ্কার করা হয়েছে।
ফিলিস্তিন অঞ্চলে হিব্রুদের আগমন হয় ব্রোঞ্জ যুগে। তাদের আদিবাস ছিল আরব উপদ্বীপের মরুভূমিতে। বর্তমান ইসরাইলের অধিবাসীরা হচ্ছে হিব্রুদের বংশধর। ১৮০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আব্রাহামের (ইব্রাহীম আঃ) নেতৃত্বে এরা উত্তর-পশ্চিম মেসোপটেমিয়ায় বসতি গড়ে তোলে। আব্রাহামের পরে হিব্রুদের নেতা হন আব্রাহামের নাতি — যাকোব (ইয়াকুব আঃ)। ইয়াকুব (আঃ) হিব্রুদের ফিলিস্তিন অঞ্চলে নিয়ে আসেন এবং গড়ে তোলেন নতুন বসতি। ১৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে ফিলিস্তিনে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। জীবন বাঁচাতে অনেক হিব্রুই চলে আসে মিশরে। কিন্তু মিশরের ফারাওরা বন্দী করে তাদের। তারা ফারওয়ের দাসে পরিণত হয়।
অনেক বছর এরপর হিব্রুদের নতুন নেতা মুসার আগমন ঘটে। তিনি ১৩০০-১২৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যে ফারাও দ্বিতীয় রামেসিসের শাসন থেকে হিব্রুদের মুক্ত করেন এবং নিয়ে আসেন সিনাই উপদ্বীপে।
সিনাই উপদ্বীপে স্থানান্তরিত হওয়ার পর প্রথমে কেনান অঞ্চলের অধিবাসী, পরে পলেষ্টীয় নামের এক যোদ্ধাজাতি হিব্রুদের আক্রমণ করে এবং দেশছাড়া করে দেয়। সবশেষে ১০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে হিব্রু নেতা দায়ূদ বা দাউদ (আঃ) হিব্রুদের আবার সংগঠিত করেন। তিনি জেরুজালেম নগরী গড়ে তোলেন এবং ফিলিস্তিনিদের সেখান থেকে বিতাড়িত করেন। এরপর লেভান্ত অঞ্চলে হিব্রুদের একটি শক্তিশালী রাজ্য গড়ে ওঠে, যা ইস্রায়েল ও যিহূদা যুক্তরাজ্য নামে পরিচিত। দায়ূদের পুত্র শলোমন এই রাজ্যটিকে আরও বিস্তৃত ও শক্তিশালী করেন। ৯৬০ খ্রীস্টপূর্বাব্দের দিকে এটি দ্বিবিভক্ত হয়ে ইস্রায়েল রাজ্য ও যিহূদা রাজ্য নামে দুইটি আলাদা রাজ্য গড়ে তোলে।
৭০০-৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মাঝে ফিলিস্তিন নব্য-অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে। অ্যাসিরীয়ার সম্রাট নেবুচাদনেজার জেরুজালেমে ব্যপক হত্যাযজ্ঞ চালায় এবং বহু হিব্রুদের ক্রিতদাস বানিয়ে ব্যাবিলনে নিয়ে যায় এবং ৫০০ খ্রীস্টপূর্ব পর্যন্ত তাদের আটকে রাখেন। ইতিহাসে এই ঘটনাটি "ব্যাবিলনীয় বন্দিদশা" নামে পরিচিত।
৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে পারস্যের হাখমানেশি সাম্রাজ্যের সম্রাট মহান কুরুশ অ্যাসিরীয়দের পরাজিত করে মেসোপটেমিয়া অঞ্চল জয় করেন। তিনি "ব্যাবিলনীয় বন্দিদশা" থেকে হিব্রুদের মুক্ত করেন ও ফিলিস্তিন অঞ্চলে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেন। হিব্রুরা এসময় হাখমানেশি সাম্রাজ্যের অধীনে থেকেই স্বাধীনভাবে ফিলিস্তিন শাসন করতো। এ সময় পারসীয়দের সংস্পর্শে এসে হিব্রু সংস্কৃতিতে বড় রকমের পরিবর্তন আসে।
খ্রিস্টপূর্ব ৬৪ খ্রিস্টাব্দে রোমান জেনারেল পম্পে সিরিয়া জয় করেন এবং জেরুসালেমে হাসমোনীয় গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করেন, দ্বিতীয় হিরকানাসকে প্রধান পুরোহিত হিসাবে পুনঃস্থাপন করেন ও ফিলিস্তিন অঞ্চলকে রোমান সামন্ত রাজ্যতে পরিণত করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৪৭ খ্রিস্টাব্দে আলেকজান্দ্রিয়া অবরোধের সময় দ্বিতীয় হিরকানাস প্রেরিত ৩,০০০ জন ইহুদি সেনা জুলিয়াস সিজার ও তাঁর পরামর্শদাতা ক্লিওপেট্রার প্রাণ হরণ করে এবং অ্যান্টিপেটারের নির্দেশে, যার বংশধর সিজারকে যিহূদিয়া বা প্রাচীন ফিলিস্তিনের রাজা করেন।
তখন যুদ্ধ জয়ে ফিলিস্তিনদের সহযোগিতা পাওয়ার আশায় ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড বেলফোর যুদ্ধে জয়ী হলে এই ভূমিতে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হবে বলে আশ্বাস দেন৷ যা ইতিহাসে "বেলফোর ঘোষণা" হিসেবে পরিচিত৷ যেহেতু ফিলিস্তিন অঞ্চলে আরবীয়রা ছিল ইহুদিদের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি, সেহেতু ঘোষণাটি তাদের অনুকূল বলেই ধরে নেয় স্থানীয় আরবীয়রা।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনের প্রয়োজনে দুর্লভ বোমা তৈরির উপকরণ কৃত্রিম ফসফরাস তৈরি করতে সক্ষম হন ইহুদি বিজ্ঞানী ড. হেইস বাইজম্যান৷ ফলে আনন্দিত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জানতে চাইলেন কী ধরনের পুরস্কার তিনি চান? উত্তর ছিল- "অর্থ নয়, আমার স্বজাতির জন্য এক টুকরো ভূমি আর তা হবে ফিলিস্তিন৷"[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ফলে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডটি ইহুদিদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেয় ব্রিটেন৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ জয়ের পর ব্রিটেন স্বাধীনতা দেয়ার অঙ্গীকারে ১৯১৮ সাল থেকে ৩০ বছর দেশটিকে নিজেদের অধীন রাখে৷ মূলত এই সময়টিই ফিলিস্তিনকে আরব-শূন্য (বিশেষত মুসলিম-শূন্য) করার জন্য কাজে লাগায় ইঙ্গ-মার্কিন শক্তি৷
১৯২০ সালে জাতিপুঞ্জ ঘোষণার মাধ্যমে ব্রিটিশরা ম্যান্ডেটরি প্যালেস্টাইন প্রতিষ্ঠা করে। ব্রিটিশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দলে দলে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে জড়ো হতে থাকে, যাকে আলিয়াহ বলা হয়। অতঃপর ব্রিটিশ সরকার একদিকে ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তিন উন্মুক্ত করে দেয়, অন্যদিকে ব্রিটিশ বাহিনীর সহযোগিতায় ইহুদি মিলিশিয়ারা (আধা-সামরিক বাহিনী সদৃশ) ফিলিস্তিনদের বিতাড়িত করে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করার জন্য গড়ে তুলতে থাকে৷ তার মধ্যে তিনটি প্রধান সংগঠন ছিল হাগানাহ, ইরগুন ও স্ট্যার্ন গ্যাং যারা হত্যা, সন্ত্রাস, ধর্ষণ আর ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টির মাধ্যমে ফিলিস্তিনদের বাধ্য করে ফিলিস্তিন ছেড়ে চলে যেতে৷ সংগঠনগুলোর গণহত্যার কথা যখন আন্তর্জাতিকভাবে প্রচারিত হচ্ছিল তখন পরিস্থিতকে নিজেদের অনুকূলে আনার জন্য গুপ্ত সংগঠন হাগানাহ বেছে নেয় আত্মহনন পন্থা৷ ১৯৪০ সালে এসএস প্যাট্রিয়া নামক একটি জাহাজকে হাইফা বন্দরে তারা উড়িয়ে দিয়ে ২৭৬ জন ইহুদিকে হত্যা করে৷ ১৯৪২ সালে আরেকটি জাহাজকে উড়িয়ে দিয়ে ৭৬৯ জন ইহুদিকে হত্যা করে৷ উভয় জাহাজে করে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে আসছিল আর ব্রিটিশরা সামরিক কৌশলগত কারণে জাহাজ দুটিকে ফিলিস্তিনের বন্দরে ভিড়তে দিচ্ছিল না৷ হাগানাহ এভাবে ইহুদিদের হত্যা করে বিশ্ব জনমতকে নিজেদের পক্ষে আনার চেষ্টা করে৷ পাশাপাশি ইহুদিদের বসতি স্থাপন ও আরবদের উচ্ছেদকরণ চলতে থাকে খুব দ্রুত৷ এর ফলে ২০ লাখ বসতির মধ্যে বহিরাগত ইহুদির সংখ্যা বেড়ে দাড়ায় ৫ লাখ ৪০ হাজার৷ এ সময়ই ১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইঙ্গ-মার্কিন চাপে জাতিসংঘে ভোট গ্রহণ করা হয়, তাতে ৩৩টি রাষ্ট্র ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে, ১৩টি বিপক্ষে এবং ১০টি ভোট প্রদানে বিরত থাকে৷ প্রস্তাব অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ হয়েও ইহুদিরা পেল ভূমির ৫৭% আর ফিলিস্তিনীরা পেল ৪৩% তবে প্রস্তাবিত ইহুদি রাষ্ট্রটির উত্তর-পশ্চিম সীমানা ছিল অনির্ধারিত ফলে ভবিষ্যতে ইহুদিরা সীমানা বাড়াতে পারে৷ এভাবে ইহুদিদের কাঙ্ক্ষিত ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত হয়ে পড়ে।
ফিলিস্তিন অঞ্চলের কার্যত মালিকানা লাভের পর ইহুদি বসতি বাড়ানোর লক্ষ্যে এবং ফিলিস্তিনদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশে রাতে তাদের ফোন লাইন, বিদ্যুৎ লাইন কাটা, বাড়িঘরে হ্যান্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ, জোর করে জমি দখল এবং বিভিন্নভাবে নারী নির্যাতনের মতো কাজে জড়িয়ে পড়লো স্থানীয় ও বহিরাগত ইহুদি ও সরকারের মদদপুষ্ট সেনাবাহিনী৷ ফলে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি আরব দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
এরপরই ১৯৪৮ সালের ১২ মে রাত ১২টা এক মিনিটে ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষণা করে ইহুদি জায়নবাদীরা, যাদের প্রধান ছিলেন দাভিদ বেন গুরিয়ন (পরবর্তীতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী)৷ ১০ মিনিটের ভেতর যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, অতঃপর সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ব্রিটেন স্বীকৃতি দেয়।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article ফিলিস্তিনের ইতিহাস, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.