প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারীরা চারদিক হতে অভূতপূর্ব সংখ্যায় একত্রিত হয়েছিলেন। এই নারীদের বেশিরভাগ অংশকে ব্যাপক প্রসারিত যুদ্ধাস্ত্র কারখানায় নিযুক্ত পুরুষদের প্রতিস্থাপন করে কাজ করার জন্য অথবা বেসামরিক কর্ম বাহিনীতে প্রেরণ করা হয়েছিল। হাজার হাজার নারী সেনা সমর্থনে ভূমিকা রেখেছিল। কেউ কেউ যেমন নার্স হিসাবে যুদ্ধে অংশ নিলেও রাশিয়ায় অনেকে প্রত্যক্ষ যুদ্ধও দেখেছিলো।
১৯১৪ সালের জুলাইয়ের শেষের দিকে ভিয়েনার প্রেস অস্ট্রিয়ার প্রথম প্রধান মহিলা দল "ফ্রাউইনহিফস্যাকশিওন ভিন" একটি বার্তা প্রচার করে। বার্তাটিতে "অস্ট্রিয়ার নারীরা" জাতির প্রতি তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য এবং যুদ্ধে অংশ নিতে আবেদন করে। নারীরা এই সময়টিতে প্রয়োজনীয় বিপুল জনশক্তি সরবরাহ এবং সামাজিক শ্রেণির উপর নির্ভর করে কেউ কেউ অস্ট্রিয়াতে স্থানীয় সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে অংশ নেবে বলেও আশা করা হয়।
ভিক্টোরিয়া সাভস একজন সৈন্যর ছদ্মবেশে ইম্পেরিয়াল অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং ডলমিশিয়ান ফ্রন্টে তার বীরত্বের জন্য মেডেল ফর ব্রেভারি (অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি) পদক লাভ করেন।
ডরোথি লরেন্স, একজন ইংরেজ সাংবাদিক, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরুর দিকে থেকে সাংবাদিকতার জন্য একজন পুরুষ সৈনিক হিসাবে সাজ নেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রন্টলাইনে থাকা একমাত্র ইংরেজ নারী সৈনিক হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। তার পরবর্তী বইতে লরেন্স লিখেছিলেন তিনি ১9৯ টি টানেলিং সংস্থা, ৫১ তম বিভাগ, রয়্যাল ইঞ্জিনিয়ার্স (বিশেষজ্ঞ খনি-স্থাপনকারী সংস্থা, যা ফ্রন্ট লাইনের ৪০০ গজ (৩৭০ মি) মধ্যে চালিত হত) এর হয়েও কাজ করেছিলেন। তবে পরবর্তীতে ব্রিটিশ সেনা কর্তৃপক্ষ ও বিইএফের গোপন সংস্থার স্যার ওয়াল্টার কির্কের ফাইলে এবং চিঠিপ্ত্রে প্রমাণিত হয় যে, ডরোথি আসলে আসলে লিবার্টিতে এবং খন্দকের মধ্যে কাজ করছিলেন। কাজ এবং তার আসল পরিচয় গোপনের চাপে করার ফলে শীঘ্রই ডরোথি অতিরিক্ত ঠান্ডায় বাতজনিত রোগে আক্রান্ত হন, এবং মূর্ছা যান। ডাক্তারের তদন্তে নিজের লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ এবং সহকর্মী পুরুষ বন্ধুদের আসন্ন বিপদ আশঙ্কা করে দিন পর তিনি কমান্ডিং সারজেন্টের কাছে নিজের আসল পরিচয় দেন। তাকে তাৎক্ষণিকভাবে সামরিক গ্রেফতার করা হয় এবং তার অভিজ্ঞতা বাইরে প্রকাশ না করার কঠোর শর্তে পরবর্তীতে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়।
স্বেচ্ছাসেবী নারীরা পুরুষদের বেশ ধারণ না করেও সামরিক বাহিনীতে সেবা দিয়েছিল; যুদ্ধের শেষে প্রায় ৮০,০০০ জন নারী স্বেচ্ছাসেবকের নাম তালিকায় পাওয়া যায়। তারা বেশিরভাগই কুইন আলেকজান্দ্রা ইম্পেরিয়াল মিলিটারি নার্সিং সার্ভিসের নার্স ছিলেন (QAIMNS), ১৯০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ফার্স্ট এইড নার্সিং ইওমোনরি (FANY) বা "প্রিন্সেস রয়্যালস ভলান্টিয়ার কর্পস" ; ভলান্টারি এইড ডিটেচমেন্ট (VAD); এবং ১৯১৭ সালে কুইন মেরি আর্মি অক্সিলারি কর্পস (WAAC) প্রতিষ্ঠিত হওয়ারর পর সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। কুইন মেরি আর্মি অক্সিলারি কর্পস মোট চারটি বিভাগে বিভক্ত ছিলঃ রান্না; মেকানিকাল, কেরানী, এবং বিবিধ। বেশিরভাগ নারীই হোম ফ্রন্টে ছিলেন, তবে প্রায় ৯০০০ ফ্রান্সে কাজ করেছিলেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ান মহিলাদের ভূমিকা মূলত নার্সিং পরিষেবার মাঝে ছিল। ২১৩৯ অস্ট্রেলিয়ান নার্স প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সেবা প্রদান করেছিলেন। তাদের অবদান প্রাথমিকভাবে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ফলে পরবর্তীতে চিকিৎসা পেশায় মহিলাদের আরও সম্মান বৃদ্ধি পায়।
কিছু মহিলা ANZAC বিস্কুট তৈরি করতেন যা সৈন্যদের কাছে প্রেরণ করা হত। এই বিস্কুট বিশেষ রেসিপি ব্যবহার করে তৈরি করা হতো যেন শীতলসংরক্ষাণাগার বা রেফ্রিজারেটর ছাড়াও তা দীর্ঘ সময়ের জন্য খাওয়ার জন্য সংরক্ষণ করা যায়।
১৯১৪ সালের ডিসেম্বরে জুলিয়া গ্রেস ওয়েলস কানাডা প্ল্যান প্রকাশ করেন। এই প্রস্তাবনায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সমাধানে নিরপেক্ষ দেশগুলির বুদ্ধিজীবীদের সমন্বয়ে মধ্যস্থতা সম্মেলন করার প্রস্তাব দেয়া হয়। পরিকল্পনাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে উপস্থাপন করা হয়েছিল, তদকালীন রাষ্ট্রপতি উইলসনের আগ্রহ জাগানো সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে অংশগ্রহণের ফলে এই প্রস্তাবনা ব্যর্থ হয় ।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, বিদেশ ও হোম ফ্রন্টে ৩১৪১ জন নার্সকে ব্যতীত দিয়ে কানাডার সশস্ত্র বাহিনীতে কার্যত কোনও নারী উপস্থিতি ছিল না। এই নারীদের মধ্যে, ৩২৮ জন রাজা পঞ্চম জর্জ দ্বারা সম্মান পেয়েছিলেন, এবং ৪৬ জন তাদের দায়িত্ব পালনকালে জীবন দিয়েছিলেন। যুদ্ধ শুরু হলে লরা গ্যাম্বল কানাডিয়ান আর্মি মেডিকেল কর্পসে তালিকাভুক্ত হন। তার টরন্টোর হাসপাতালে কাজের অভিজ্ঞতা যুদ্ধের ময়দানে সম্পদতুল্য ছিলো। কানাডার নার্সরা মিত্র বাহিনীর একমাত্র নার্স হিসেবে অফিসার পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। গ্যাম্বলকে সম্ভাব্য রণকৌশল এবং কর্তব্যের প্রতি চূড়ান্ত নিষ্ঠার প্রদর্শনের জন্য "রয়্যাল রেড ক্রস, ২য় শ্রেণির পদক" প্রদান করা হয়েছিল। কানাডার নার্সদের জন্য একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে বাকিংহাম প্যালেসে তাকে এই পদকে ভূষিত করা হয়েছিল।
১৯১৭ সালে রাশিয়ান অস্থায়ী সরকার একমাত্র পর্যাপ্ত সংখ্যায় নারী সেনা মোতায়েন করেছিল। এর কয়েকটি " নারী ব্যাটালিয়নস " ভাল লড়াই করলেও, তাদের উপর প্রত্যাশিত আকাঙ্ক্ষার মূল্য দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। ফলে বছর শেষের আগে নারী ব্যাটালিয়নস ভেঙে ফেলা হয়। পরবর্তী রাশিয়ান গৃহযুদ্ধে বলশেভিকরাও নারী পদাতিক সৈন্যদের নিয়োগ দিতেন।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নারী, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.