পচাব্দী গাজী

পচাব্দী গাজী সুন্দরবন অঞ্চলের কিংবদন্তি শিকারি। তিনি সুন্দরবন এলাকায় প্রচুর মানুষখেকো বাঘ শিকার করেছেন।

আব্দুল হামিদ গাজী (পচাব্দী গাজী)
জন্ম
আব্দুল হামিদ গাজী।

১৯২৫ (আনুমানিক)
সোরা গ্রাম, (অধুনা গাবুরা ইউনিয়ন, শ্যামনগর উপজেলা, সাতক্ষীরা জেলা)
মৃত্যু১৯৯৭ খ্রীস্টাব্দ
পেশাশিকারি

জন্ম, বংশ পরিচয় ও মৃত্যু

পচাব্দী গাজীর পুরো নাম আব্দুল হামিদ গাজী। পিতা মেহের গাজী, পিতামহ ইসমাইল গাজী এবং দুই পিতৃব্যও ছিলেন খ্যাতনামা শিকারী। তিনি ১৯২৪ সালে, সাতক্ষীরা জেলাশ্যামনগর উপজেলাগাবুরা ইউনিয়নের সোরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পচাব্দী গাজী ১৯৯৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

কর্মজীবন

সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় জন্মগ্রহণ করায় বন্যজীবন ছিল পচাব্দী গাজীর জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। শিকারের জন্য উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি লাভ করেন পিতার ডাবল বেরেল মাজল-লোডিং বন্দুকটি। ১৯৪১ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে খুলনা জেলাপাইকগাছা থানার ‘গোলখালির সন্ত্রাস’ নামে পরিচিত একটি বাঘ হত্যা করার মাধ্যমে পচাব্দী গাজীর শিকারী জীবন শুরু হয়। শুধুমাত্র জীবন রক্ষার প্রয়োজনেই তিনি পুরনো আমলের একটি বন্দুক নিয়ে হিংস্র প্রাণীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতেন অসীম সাহস, ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তা নিয়ে। প্রথম প্রথম তিনি বনবিভাগের রেঞ্জারের সহযোগী হিসেবে শিকার করতেন। পশুশিকারে তার বুদ্ধিমত্তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লে তৎকালীন বনকর্মকর্তার উদ্যোগে ১৯৫৫ সালে তিনি বনবিভাগের অধীনে বনপ্রহরীর কাজে যোগদান করেন। এ কাজে যোগদানের পরপরই শুরু হয় দুর্ধর্ষ বাঘের সঙ্গে তার বিচিত্র লড়াইয়ের লোমহর্ষক জীবনের এক নতুন অধ্যায়। সুন্দরবনের বাওয়ালি, মউয়াল, মাঝি ও জেলেদের জীবনরক্ষায় পচাব্দী গাজী অবতীর্ণ হন মুক্তিদাতার ভূমিকায় এবং রক্ষা করেন অজস্র শ্রমিকের প্রাণ। তার এই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ১৯৬৮ সালে তাকে ‘সনদ-ই-খেদমত’ জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত করে।

পচাব্দী গাজীর বাঘ শিকার করার কৌশল ছিল অন্যদের থেকে স্বতন্ত্র। বাঘকে বশীভূত করার উদ্দেশ্যে তিনি অলৌকিক পদ্ধতির পরিবর্তে আত্মোদ্ভাবিত বিভিন্ন কৌশল, গভীর ধীশক্তি ও প্রযুক্তির আশ্রয় নিতেন। তিনি পাগমার্ক দেখে বাঘের আকৃতি অনুধাবন করতে পারতেন। তাছাড়া পদচ্ছাপ দেখে পশুর শ্রেণি এবং তার গতিবিধি নির্ণয়েও তিনি দক্ষ ছিলেন। বাঘের গতিবিধি চিহ্নিতকরণে তিনি কখনও দিন-রাত পর্যবেক্ষণে থাকতেন। তিনি নিরস্ত্র অবস্থায়ও হিংস্র প্রাণীদের সঙ্গে লড়েছেন। বাঘিনীর ডাক, গাছ কাটার শব্দ কিংবা পাতা সংগ্রহের শব্দ নকল করে তিনি বাঘকে প্রলুব্ধ করতেন। জঙ্গলে কল পেতে কিংবা ১৫ হাত উঁচু মাচান তৈরি করেও তিনি শিকার করতেন। শরৎ, হেমন্ত ও বসন্তের পূর্ণিমা-অমাবস্যা হচ্ছে বাঘের প্রজনন সময়। স্থানীয় ভাষায় একে বলে ‘স্যাঁড়াসাঁড়ির কোটাল’। এ সময় পচাব্দী গাজী বাঘিনীর ডাক নকল করে পাগলপ্রায় মিলনোন্মত্ত বাঘকে হত্যা করতেন।

পচাব্দী গাজীর বাঘ শিকারের আরও দুটি পদ্ধতি হলো ‘গাছাল’ ও ‘মাঠাল’। গাছাল হলো গাছে চড়ে শিকার, আর মাঠাল হলো জঙ্গলের ভিতর চলতে চলতে শিকার। মাঠাল পদ্ধতিতে শিকার করে তিনি একটি দো-নলা বন্দুক পুরস্কার পান। সাতক্ষীরা বা বুড়ি গোয়ালিনী ফরেস্ট রেঞ্জে ‘আঠারোবেকি’ এলাকায় ‘টোপ’ পদ্ধতিতে তিনি যে বাঘটি হত্যা করেন সেটি ছিল সুন্দরবনের শিকারের ইতিহাসে দীর্ঘতম বাঘ প্রায় ১২ ফুট দীর্ঘ। এরপর ‘তালপট্টির সন্ত্রাস’ নামে খ্যাত বাঘ শিকার ছিল পচাব্দী গাজীর জীবনের ৫৭তম ও শেষ শিকার। তার পিতা মেহের গাজী ৫০টি বাঘ শিকার করার গৌরব অর্জন করেছিলেন। পুত্র তার চেয়ে সাতটি বেশি মেরে বাঘ শিকারের ইতিহাসে এক কিংবদন্তিতে পরিণত হন। তাছাড়া তিনি তদানিন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ও জার্মান চ্যাঞ্চেলরের সুন্দরবন পরিদর্শনে গাইড হিসেবে কাজ করেন এবং পুরস্কৃত হন। এছাড়াও নেপালের রাজা মহেন্দ্র, তার ছেলে বীরেন্দ্র, বাংলার সে সময়কার গভর্নর মোনায়েম খান প্রমুখ উচ্চপদস্থ ব্যক্তির গাইড ও সহযোগী শিকারি হিসেবেও পচাব্দী দায়িত্ব পালন করেন।

অন্যান্য

পচাব্দীর বাবা ও দাদা দুজনই বাঘের আক্রমণে নিহত হন। মেহের গাজী "শিঙ্গের গোলখালীর" মানুষখেকো মারতে যেয়ে আহত হন ও পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এ ঘটনায় পচাব্দী গাজীর চাচা নিজামদী গাজিও আহত হন ও পঙ্গুত্ব বরণ করেন। তিনি পরবর্তীতে সুপতির মানুষখেকো মারতে যেয়ে গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। গোলখালীর ও সুপতির দুটো মানুষখেকোই পরবর্তীকালে পচাব্দী গাজীর হাতে মারা পড়ে।

পচাব্দী গাজী মোট ৫৭টি বাঘ শিকার করেন। তারমধ্যে আন্তত ২৩ টি ছিল মানুষখেকো বাঘ। পচাব্দী গাজীর শিকারকৃত উল্লেখযোগ্য কিছু মানুষখেকো বাঘ হলঃ

  • সুপতির মানুষখেকো বাঘ।
  • গোলখালীর মানুষখেকো বাঘ।
  • দুবলার চরের মানুষখেকো বাঘ।
  • লক্ষীখালের মানুষখেকো বাঘ।
  • আঠারোবেকীর মানুষখেকো বাঘ।
  • তালপাটির মানুষখেকো বাঘ।
  • লতাবেকী-ইলশামারীর বাঘ।

তথ্যসূত্র

Tags:

পচাব্দী গাজী জন্ম, বংশ পরিচয় ও মৃত্যুপচাব্দী গাজী কর্মজীবনপচাব্দী গাজী অন্যান্যপচাব্দী গাজী তথ্যসূত্রপচাব্দী গাজীবাঘমানুষখেকোসুন্দরবন

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

তাহসান রহমান খানএশিয়ামেঘনা বিভাগবাংলা সাহিত্যইসরায়েল–হামাস যুদ্ধদি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকাআরবি বর্ণমালানাদিয়া আহমেদজান্নাতঘূর্ণিঝড়মুর্শিদাবাদ জেলাপশ্চিমবঙ্গের জেলাঐশ্বর্যা রাইক্রিকেটলিঙ্গ উত্থান ত্রুটিঅষ্টাঙ্গিক মার্গবক্সারের যুদ্ধভরিরাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড স্কুল এন্ড কলেজবিশেষ শাখা (বাংলাদেশ পুলিশ)মানব দেহআল্লাহঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনমানবজমিন (পত্রিকা)ইন্দোনেশিয়াবাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলমুতাওয়াক্কিলবাংলা বাগধারার তালিকাগ্রীষ্মশ্রীকৃষ্ণকীর্তনবিরাট কোহলিপশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীদের তালিকাশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়বাংলা লিপিগুগলবাল্যবিবাহইসরায়েলআন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসুফিয়া কামালবাঙালি সাহিত্যিকদের তালিকা (কালানুক্রমিক)ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগঊষা (পৌরাণিক চরিত্র)ঢাকা মেট্রোরেলরক্তশূন্যতারবীন্দ্রনাথ ঠাকুরনিরো২০২২–২৩ নিউজিল্যান্ড পুরুষ ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর (এপ্রিল ২০২৩)শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়কক্সবাজারবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধসহীহ বুখারীদিল্লী সালতানাতবীর শ্রেষ্ঠপুলিশদর্শনকুয়েতপুরুষে পুরুষে যৌনতাভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪বাংলাদেশী টাকাসালমান বিন আবদুল আজিজমুমতাজ মহলদেশ অনুযায়ী ইসলামভারতের জাতীয় পতাকাইসলামবাংলাদেশের জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার তালিকাবাংলাদেশ নৌবাহিনীতুরস্কখাদ্যরাশিয়াশুক্র গ্রহখুলনা জেলাপশ্চিমবঙ্গের নদনদীর তালিকামুদ্রাউমাইয়া খিলাফতজি২০নেপোলিয়ন বোনাপার্টআসিয়ান🡆 More