পচন নিবারক

পচন নিবারক বলতে এমন কিছু সক্রিয় রাসায়নিক যৌগকে বোঝায় যেগুলি নিরাপদে ত্বকে বা সজীব দেহকলার পৃষ্ঠতলে (যেমন মিউকাসময় পৃষ্ঠতল) অবস্থিত জীবাণুদের ধ্বংস করতে পারে বা সেগুলির বৃদ্ধি ব্যাহত করতে পারে, যাতে রোগসৃষ্টিকারী জীবাণুর কারণে সৃষ্ট রোগ সংক্রমণ এবং পচন নিবারণ বা প্রতিরোধ করা যায়। পচন নিবারক পদার্থগুলি সংক্রমণ নিবারক হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। অনেক সময় দেহের অভ্যন্তরে অন্ত্র বা মূত্রথলিতে জীবাণু সংক্রমণ সারানোর জন্য বিশেষ ধরনের পচন নিবারক ব্যবহার করা হয়। পচন নিবারকগুলি এক ধরনের জীবনাশক ও জীবাণু নিরোধক। এগুলি জীবাণুদের কোষপ্রাচীরের ক্ষতিসাধন করে এগুলিকে মেরে ফেলে বা প্রতিরোধ করে। পচন নিবারককে ইংরেজি পরিভাষায় অ্যান্টিসেপ্টিক (Antiseptic) বলা হয়।

পচন নিবারক
পচন নিবারক পভিডোন-আয়োডিন ত্বকে প্রয়োগ করা হচ্ছে।
পচন নিবারক
পচন নিবারক ইথাইল অ্যালকোহল বা ইথানলের দ্রবণের (৭০%) বোতল

পচন নিবারকগুলি শিল্পকারখানাতে ব্যবহারযোগ্য পণ্য এবং গৃহস্থালি পণ্য হিসেবে বাজারে পাওয়া যায়। শিল্পকারখানাতে ব্যবহার্য পচন নিবারকগুলিতে সক্রিয় রাসায়নিক পদার্থের ঘনত্ব অনেক বেশি থাকে, তাই এগুলি অধিকতর বিষাক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ত্বকে ব্যবহার্য পচন নিবারকগুলি অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও নিরাপদ, এগুলি দেহকলার ক্ষতি করতে পারে না। তবে ব্যবহারযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে ব্যবহার করলে এগুলি বিপজ্জনক এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

ঐতিহ্যগতভাবে অ্যালকোহলের দ্রবণ (যেমন ৭০% ইথাইল অ্যালকোহল, মিথাইল অ্যালকোহল বা আইসো-প্রোপানল) পচন নিবারক হিসেবে ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্লোরহেক্সিডিন বা আয়োডিন জাতীয় হ্যালোজেন যৌগের ব্যবহার বেশি (যেমন আয়োডিন টিংচার)। এছাড়া হাইড্রোজেন পারক্সাইডও পচন নিবারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংক্রমণ নিবারকের মধ্যে আছে সেট্রিমাইড, পারদের বাইক্লোরাইড, বোরিক অ্যাসিড, হাইপোক্লোরাইট, মার্কিউরোক্রোম, পভিডোন-আয়োডিন এবং মার্থিয়োলেট। এছাড়া প্রাকৃতিক পচন নিবারক যেমন স্যাংকুইনারিন দাঁতের মাজন বা টুথপেস্টে ব্যবহার করা হয়।

ইংরেজ শল্যচিকিৎসক জোসেফ লিস্টার ১৮৬৭ সালে চিকিৎসাক্ষেত্রে পচন নিবারকের ব্যবহার প্রচলন করেন। লিস্টার জার্মান শরীরতত্ত্ববিদ টেওডোর শভান এবং ফরাসি জৈবরসায়নবিদ লুই পাস্তরের গবেষণালব্ধ ফলাফলের উপরে কাজ করেন এবং এই কাজের উপর ভিত্তি করে শল্যচিকিৎসাজনিত ও দুর্ঘটনাজনিত আঘাতের ক্ষতগুলিকে কার্বলিক অ্যাসিড তথা ফেনলের দ্রবণ দিয়ে পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত করেন। এছাড়া তিনি শল্যযন্ত্রপাতিগুলিকেও ফেনল দিয়ে পরিষ্কার করতেন। তিনি ফেনলের একটি স্প্রে-ও উদ্ভাবন করেন যা শল্যচিকিৎসা কক্ষ ও রোগীর চিকিৎসা-পরিবর্তী আরোগ্যলাভ কক্ষে বাতাসে ছিটিয়ে দেয়া হত। এর ফলে ৫ বছরের ব্যবধানে অঙ্গকর্তনমূলক গুরুতর শল্যচিকিৎসাতে মৃত্যুর হার প্রায় ৫০ শতাংশ থেকে মাত্র প্রায় ১২ শতাংশে নেমে আসে। তবে কার্বলিক অ্যাসিড বা ফেনল বেশি বিষাক্ত বলে এটি আর ব্যবহার করা হয় না।

তথ্যসূত্র

Tags:

জীবাণু নিরোধকত্বকদেহকলারাসায়নিক যৌগরোগসংক্রমণ নিবারক

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

শাহ জাহানণত্ব বিধান ও ষত্ব বিধানবেগম রোকেয়াবাগদাদবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিপথের পাঁচালীইউক্রেন৬৯ (যৌনাসন)হামবাবরএ. পি. জে. আবদুল কালামবাংলা সাহিত্যবাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়প্রিয়তমাঘূর্ণিঝড়আলিচৈতন্য মহাপ্রভুউদ্ভিদকোষবইভারতের প্রধানমন্ত্রীদের তালিকাসন্ধিমাহরামঅভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়মোশাররফ করিমসহীহ বুখারীকরোনাভাইরাসসুনামগঞ্জ জেলাবাংলাদেশের জাতীয় পতাকাসুকান্ত ভট্টাচার্যআব্বাসীয় খিলাফতপ্রাকৃতিক সম্পদকাঠগোলাপঅস্ট্রেলিয়ামুসাঅসমাপ্ত আত্মজীবনীচট্টগ্রাম জেলাযোগাযোগশিয়া ইসলামথ্যালাসেমিয়াশব্দ (ব্যাকরণ)মূত্রনালীর সংক্রমণইহুদিবাংলাদেশের জেলারেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাইসলামি সহযোগিতা সংস্থাউসমানীয় সাম্রাজ্যবাংলাদেশের বিমানবন্দরের তালিকারাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড স্কুল এন্ড কলেজবাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডফুসফুসরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকৃত্তিবাসী রামায়ণবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পদবিনাদিয়া আহমেদনূর জাহানহিন্দুধর্মকারাগারের রোজনামচাহযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়আতিকুল ইসলাম (মেয়র)ভারতের জাতীয় পতাকাএম. জাহিদ হাসানসূরা ফালাকনিউমোনিয়াকুষ্টিয়া জেলাসত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রশুক্রাণু২৬ এপ্রিলকালেমাসালমান বিন আবদুল আজিজএইচআইভিবাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবমিমি চক্রবর্তীপ্লাস্টিক দূষণআকিজ গ্রুপকক্সবাজারদুর্গাপূজামানবজমিন (পত্রিকা)🡆 More