নানুর গণহত্যার শিকারশেখ নিজামরসুল বক্সসবুর শেখশেখ সালামাতহরাই শেখসরণ মিটিসফিকুল শেখশেখ শফিকআশরাফ শেখসাইফুর শেখশেখ আলি হোসেন
নানুর হত্যাকাণ্ড ২০০০ সালের ২৭ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার নানুর থানা এলাকার সূচপুরে সংঘটিত এগারো জন ভূমিহীন ক্ষেতমজুর হত্যার একটি ঘটনা। স্থানীয় সিপিআই(এম) সদস্যরা এই হত্যাকাণ্ডের দায়ে অভিযুক্ত হন।
বীরভূম জেলার দক্ষিণ-পূর্ব ভাগে অজয় ও ময়ূরাক্ষীর মধ্যবর্তী পলিগঠিত সমভূমি অঞ্চলে নানুর অবস্থিত। এই অঞ্চলের গ্রীষ্মকাল (মার্চ-মে মাস) উষ্ণ ও শুষ্ক এবং এই অঞ্চলের ৭৮ % বৃষ্টিপাত হয় বর্ষাকালে (জুন-সেপ্টেম্বর মাস)। ঐতিহাসিক সূত্র থেকে জানা যায় ১৭৯৯ থেকে ১৮৫৫ সালের মধ্যবর্তী সময়ে এই অঞ্চল প্রায় তেরোবার ভয়ংকর খরার মুখে পড়ে। এর মধ্যে ১৮৩৬-৩৭ সালের খরাটি ছিল সর্বাপেক্ষা গুরুতর। এছাড়াও বেশ কয়েকবার এখানে বন্যাও হয়েছে। ২০০৪ সালের বন্যায় নানুর ও পার্শ্ববর্তী তিনটি ব্লকে ১৫,০০০ মানুষ ও ৭,০০০ মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২৪টি গ্রামাঞ্চল নিয়ে গঠিত নানুর ব্লক একটি অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া অঞ্চল। এখানে বহু মুসলমান ও তফসিলি জাতি ও উপজাতি কুটিরশিল্পী পরিবার বসবাস করে। সুযোগের অভাব ও উপেক্ষা এই মেধাসম্পন্ন শিল্পীগোষ্ঠীর জীবিকা উপার্জনের পথে প্রধান বাধা। এই কারণে অনেকেই তাদের পারিবারিক পেশা ত্যাগ করে শহরে চলে গিয়ে নানা পেশার কাজ গ্রহণ করছেন।
মনে করা হয় রাজনৈতিকভাবে নানুর বীরভূম জেলার সর্বাধিক অশান্ত অঞ্চল এবং এই অশান্তির মূলে রয়েছে মানুষের দীর্ঘকালীন দারিদ্র্য।
গণহত্যার অব্যবহিত পরেই সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ দাবি করেন নিহতেরা ডাকাত। কিছুদিন পরে সিপিআই(এম) নেতারা মেনে নেন যে নিহতেরা ক্ষেতমজুর। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের কর্মীদের জড়িয়ে থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে তারা এই ঘটনার কারণ হিসেবে জমিসংক্রান্ত বিবাদকে দায়ী করেন। এই অঞ্চলের সাংসদ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় (পরবর্তীকালে লোকসভার অধ্যক্ষ) নিহতদের ভাড়াটে গুন্ডা, ডাকাত ও কুখ্যাত সমাজবিরোধী হিসেবে বর্ণনা করেন। প্রবীন সিপিআই(এম) নেতা তথা দলের পলিটব্যুরো সদস্য অনিল বিশ্বাস (রাজনীতিবিদ) ও বিমান বসু নানুর হত্যাকাণ্ড এবং তৎপরবর্তী কয়েক সপ্তাহে সংঘটিত হিংসাত্মক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জীবনহানির নিন্দা করেন।
"দ্য হিন্দু" পত্রিকায় লেখা হয়: “On a long term, the killings, symbolizing the birth of a new theater of violence after Keshpur in district Midnapore - where deaths and maiming in political clashes have become a bizarre routine - constitute an extremely disturbing augury for the society in Bengal. The West Bengal Chief Minister, Mr. Jyoti Basu, said the Leftists should be tolerant towards their political rivals instead of being vindictive. He said at least 800 Left party workers had been killed in clashes with the supporters of the Trinamool-BJP combine. According to him, though the Leftists had the right to self-defense, they would restrain themselves even in the face of atrocities from the Trinamool-BJP supporters. ``But, when attacked, should we not retaliate?
সিপিআই(এম) নানুরের ঘটনাটিকে কৃষক ও ভূম্যধিকারীদের মধ্যে জমি পুনর্দখলের লড়াই হিসেবে বর্ণনা করে।
২০০৫ সালের ১২ মে নানুর হত্যাকাণ্ডের প্রধান সাক্ষী আব্দুল খালেক ও তাঁর দেহরক্ষী দুষ্কৃতীদের আক্রমণে আহত হন। অভিযোগ ওঠে সিপিআই(এম) সদস্যদের বিরুদ্ধে। পরদিন এই ঘটনার দায়ে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানায়, ধৃতদের রাজনৈতিক আনুগত্যের বিষয়টি প্রমাণসাপেক্ষ। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা ধৃতদের সঙ্গে সিপিআই(এম)-এর “ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের” কথা জানান।
দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকায় একটি সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, “The sole purpose in attacking the prime witness in the gruesome Nanoor massacre of July 2000 in which 11 Trinamul Congress supporters were slaughtered by armed CPI(M) cadres was to shield those responsible and abort their trial, by hook or by crook. The irony is that although five years have elapsed since the occurrence of the horrendous killings by the Marxists, the trial of their 79 accused comrades has not yet begun. Repeated postponement of hearing (at least seven in the last two years) because of failure of the accused to turn up in court has made the outcome uncertain.”
নানুর গণহত্যা মামলার শুনানি শুরু হওয়ার অব্যবহিত পূর্বে সিপিআই (এম) ক্যাডারদের বিরুদ্ধে ওই অঞ্চলে সন্ত্রাস সৃষ্টি ও সাক্ষীদের ক্রমাগত ভয় দেখানোর অভিযোগ ওঠে। তৃণমূল কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল “নানুর গণহত্যা মামলা শুরুর পূর্বে সিপিআই(এম) কর্তৃক গ্রামবাসীদের ভয় দেখানোর পদ্ধতিটি পর্যবেক্ষণ করতে” নানুরে আসেন। তারা জানান, “গ্রামে কয়েকটি পুলিশ ক্যাম্প বসানো হলেও সিপিআই(এম) এখনও এই অঞ্চল নিজেদের দখলে রেখেছে।”
২০০৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে নানুর গণহত্যার দুই প্রধান অভিযুক্ত নিত্যনারায়ন চট্টোপাধ্যায় ও মণিরুজ্জামানকে সিপিআই (এম) প্রার্থীপদ দান করে। এই গণহত্যার তদন্তের কোনো মীমাংসা হয়নি। ২০০৪ সালে কলকাতা হাইকোর্ট নানুর গণহত্যা মামলায় দীর্ঘসূত্রিতার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তীব্র নিন্দা করেন।
দায়রা আদালত ২০১০ সালে নানুর হত্যাকাণ্ড মামলার রায় দেয়, যেখানে ৪৪ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ৪৪ জনের মধ্যে চারজন সিপিআই(এম) সদস্য এবং ৪০ জন সিপিআই(এম) সমর্থক ছিল।
নানুর একসময় বীরভূম জেলায় সিপিআই(এম)-এর শক্ত ঘাঁটি বিবেচিত হলেও নানুর গণহত্যার পর পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন ঘটে। তৃণমূল কংগ্রেস এই অঞ্চলে নিজেদের মাটি শক্ত করতে শুরু করে। ২০০৩ সালে সিপিআই(এম) তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ভোটারদের সন্ত্রস্ত করার অভিযোগ এনে নানুর ব্লকের থুপসারা পঞ্চায়েত এলাকার ১৯টির মধ্যে ১৭টি বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানায়।
বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেস ২৭ জুলাই তারিখটিকে নানুর দিবস হিসেবে পালন করে থাকে।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article নানুর হত্যাকাণ্ড, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.