টনি লিউং চিউ-ওয়াই

টনি লিউং চিউ-ওয়াই ( : 梁朝偉, জন্ম 27 জুন 1962) একজন হংকং অভিনেতা এবং গায়ক। তিনি এশিয়ার অন্যতম সফল এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অভিনেতা, এবং TVB-এর পাঁচজন টাইগার জেনারেলের মধ্যে তাকে স্মল টাইগার হিসাবে নামকরণ করা হয়েছিল। তিনি ওং কার-ওয়াই-এর পরিচালিত চলচ্চিত্র ইন দ্য মুড ফর লাভে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল পুরস্কার সহ অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতেছেন।

টনি লিউং চিউ-ওয়াই
梁朝偉
টনি লিউং চিউ-ওয়াই
Leung at the 2013 Berlin Film Festival
জন্ম (1962-06-27) ২৭ জুন ১৯৬২ (বয়স ৬১)
জাতীয়তাহং কং
British National (Overseas)
পেশাঅভিনেতা, গায়ক
কর্মজীবন১৯৮২–বর্তমান
দাম্পত্য সঙ্গীসারিনা লাউ (বি. ২০০৮)

লিউং এর সাথে পরিচালক ওং কার-ওয়াইয়ের অনেক ভাল সম্পর্ক ছিল, তার সাথে তিনি চুংকিং এক্সপ্রেস (1994), হ্যাপি টুগেদার (1997), ইন দ্য মুড ফর লাভ (2000), (2004), গ্র্যান্ডমাস্টার (2013) সহ সাতটি ছবিতে কাজ করেছেন। তার তিনটি চলচ্চিত্র ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল গোল্ডেন লায়ন -তে বিজয়ী হয়েছে: অ্যাং লি পরিচালিত এ সিটি অফ স্যাডনেস (1989), সাইক্লো (1995) এবং লাস্ট, কশন (2007)।

লিউং একাডেমি পুরস্কার -মনোনীত ফিল্ম হিরো (2002), দ্য কাল্ট ক্লাসিক হার্ড বয়েলড (1992), এবং বক্স অফিস হিট করা চলচ্চিত্র ইনফার্নাল অ্যাফেয়ার্স (2002) এবং রেড ক্লিফ (2008) এও অভিনয় করেছেন। পরে তিনি মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্স ফিল্ম শাং-চি অ্যান্ড দ্য লিজেন্ড অফ দ্য টেন রিংস (2021) এ জু ওয়েনউউ চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে হলিউডে সুপরিচিত হন।

লিউং ৮০ দশকে নতুন অভিনেতা হয়েও প্রচুর পুরস্কার জিতেছেন। ইন দ্য মুড ফর লাভ চলচ্চিত্রের জন্য, লিউং কান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেতার পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি হংকং ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডে সাতবার বিজয়ী হয়ে এবং গোল্ডেন হর্স ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডে তিনবার বিজয়ী হয়ে, সেরা অভিনেতা বিভাগে সর্বাধিক পুরস্কারের রেকর্ডটি ধরে রেখেছেন।

শৈশব

শৈশবটা খুব সুখকর ছিল না তার। বড় হয়েছেন ৬০-এর দশকে, হংকংয়ে। তার বয়স যখন মাত্র ৬ বছর, তখন জুয়াড়ি বাবা পরিবারকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে অন্যত্র চলে যান। এর পূর্বেও তাকে নিয়মিত বাবা-মায়ের ঝগড়ার সাক্ষী হতে হয়। বাবার উপর ভরসা কখনোই না থাকলেও বাবা ছাড়া বড় হতে হবে এটা সম্ভবত টনি মেনে নিতে পারেননি। এটা ছিল তার জীবনের বড় একটা ধাক্কা, যার ফলস্বরূপ তিনি একদম বদলে যান। সবসময় দুষ্টুমিতে মেতে থাকা এক শিশু থেকে পরিণত হন একদম চুপচাপ স্বভাবের একজনে। স্কুলে কথাবার্তা বলাও একেবারে বন্ধ করে দেন। সেটা ক্ষোভে নাকি দুঃখে তা একমাত্র তিনিই জানেন।

টনিরা ছিলেন এক ভাই, এক বোন। বাবা চলে যাওয়ার পর, একা মায়ের নিরলস পরিশ্রমে বেড়ে ওঠেন তারা। পরে ২০০২ সালে তার হিরো নামক চলচ্চিত্র নির্মাণের সময় এক সাক্ষাৎকারে তাকে ‘হিরো’ শব্দের সংজ্ঞা দিতে বললে তিনি সহজ ভাষায় বলেন, ‘আমার মা’। তবে, মায়ের শত চেষ্টা সত্ত্বেও সংসারের টানাপোড়েনে তার পড়ালেখা খুব বেশিদূর এগোতে পারেনি।

সংসারের হাল ধরতে তাই টনি স্কুল ছেড়ে এক রেস্তোরাঁয় কাজ শুরু করেন। কিন্ত, তার নিজের ভবিষ্যত বলেও তো একটা বিষয় রয়েছে। রেস্তোরাঁর সামান্য বেতনে তো সংসারই ঠিকমতো চলে না। তখন তার বয়স মাত্র ১৬। হঠাৎ একদিন ভাগ্যক্রমে দেখা হয় শাওলিন সকারখ্যাত তারকা স্টিফেন চাওয়ের সাথে। এবং তারা একে ওপরের বন্ধু হয়ে যায়। অবশ্য তখন স্টিফেন চাও-ও বেকার ছিলেন। চাওয়ের অনুপ্রেরণায় তিনি একটি অডিশন দিতে রাজি হলেন, অডিশন দিয়ে অভিনয়ের জন্য নির্বাচিতও হয়ে গেলেন।

উত্থান

অডিশন দিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পর ছোটখাট অনুষ্ঠানে কাজ করতে করতে সুযোগ পেয়ে গেলেন হংকংয়ের ছোটপর্দার স্বর্গ টিভিবি-তে। টিভিবি-কে বলা হয় হংকং সিনেমার অ্যাকাডেমি। হংকং-এর প্রায় সকল অভিনেতাই টিভিবি থেকে ইন্ডাস্ট্রিতে উঠে এসেছেন। টিভিবি থেকে যারা আসেন তাদের অভিনয়ও দারুণ হয়, কারণ টিভিবিতে তখন শুধু আজকালকার মতো তথাকথিত ‘ফ্লাওয়ার বয়েজ’দের নিয়ে নাটক হতো না। তখন টিভিবিতে একইসাথে মানসম্মত নাটক হতো, আবার নতুনদের অভিনয়ও শেখানো হতো। টিভিবিতে অভিনয় করতে করতে টনি লিউং চিউ-ওয়াই বনে যান সেখানকার সবচেয়ে জনপ্রিয় মুখদের একজন। এরপর অন্য সবার মতো টিভিবি থেকে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আসেন টনি। এসেই যে রাজত্ব করতে শুরু করেন, তা নয়। শুরুতে পার্শ্ব-অভিনেতার ভূমিকায় কাজ করতে লাগলেন। এখানেও বাজিমাত। ‘পিপল’স হিরো’ ও ‘মাই হার্ট ইজ দ্যাট ইটার্নাল রোজ’-এ অভিনয়ের জন্য যথাক্রমে ১৯৮৮ এবং ১৯৯০ সালে জিতে নেন হংকংয়ের অস্কার খ্যাত হংকং ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডসে সেরা পার্শ্ব-অভিনেতার পুরস্কার।

চলচ্চিত্র জীবন

টনি তার ক্যারিয়ারে একাধারে মেইনস্ট্রিম ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ইন্ডি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে এসেছেন। হংকং সিনেমা যখন সাফল্যের চূড়ায়, প্রতি বছরে সেখানে প্রায় ২০০টির মতো চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে, তখন একজন তারকা হিসেবে আবির্ভূত হন তিনি। ১ বছরে ৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, এরকম নজিরও রয়েছে তার। চরিত্রের প্রয়োজনে হয়েছেন প্রণয়কাতর পাণিপ্রার্থী থেকে শুরু করে পুলিশ, গুণ্ডা, সাংবাদিক, লেখক, কবি, আলোকচিত্রকর, খুনি, ও ভিক্ষু। তার অমায়িক বৈশিষ্ট্যগুলো রোমান্টিক ধারার জন্য একজন নিখুঁত অভিনয়কারী বানালেও, তিনি সেগুলো আড়াল করে একইসাথে হিংস্র, বর্বর চরিত্রেও অভিনয়ে পটু। যেকোনো চরিত্রের জন্য নিজেকে তৈরি করতে প্রতিদিন তিনি চল্লিশ-পঞ্চাশবারের মতো সেই চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট পড়েন, এমন অধ্যবসায়ী এক অভিনেতা তিনি ।

“আমি একজন অভিনেতা হতে চাই, মানুষজনের শ্রদ্ধার পাত্র কিংবা একজন তারকা হতে চাই না, শুধু একজন সাধারণ অভিনেতা হিসেবেই থাকতে চাই।”

টনি লিউং চিউ-ওয়াই 
Leung's hand print and autograph at the Avenue of Stars in Hong Kong

খ্যাতি কিংবা অর্থের লোভ তাকে কোনোদিন গ্রাস করতে পারেনি। তাই তো অন্য এশীয় অভিনেতারা যেখানে হলিউডে এসে সচরাচর এশীয়দের নিচু করে দেখানো ভূমিকাগুলোয় অভিনয় করেন, সেখানে তিনি এশীয়দের নিচু করে দেখায় এমন যেকোনো চরিত্রে অভিনয় করতে একেবারে নারাজ। সেজন্য স্টুডিওগুলো তাকে যত মোটা অঙ্কের প্রলোভনই দেখাক না কেন। তাই তো ২০০৫ সালে একজন আমেরিকান এজেন্টের সাথে চুক্তিবদ্ধ হলেও দীর্ঘ ১৫ বছর পর ‘শ্যাং চি এন্ড দ্য লিজেন্ড অভ দ্য টেন রিংস’-এ অভিনয়ের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো হলিউডে পদার্পণ করেন তিনি।

ব্যক্তিগত জীবন

টনি লিউং চিউ-ওয়াই জীবনের সংগ্রাম থেকে শুরু করে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সংগ্রাম কোনো কিছুতেই হারেননি। তিনি সবসময়ই জিতে এসেছেন, তবে সেটা বিনয়ের সাথে। সেই ১৯৮৯ সালে সারিনা লাউয়ের সাথে প্রেম, ২০২১ সালে এসেও তারা একসাথে। ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে একসাথে। মাঝে সারিনা লাউয়ের অপহরণ, আপত্তিকর ছবি প্রকাশ হওয়া, এগুলোকেও জয় করে জীবনযাপন করেছেন টনি, কিন্তু তারপরেও কোনো একটা কিছু এখনও তাকে তাড়া করে বেড়ায়। এখনও তিনি বলেন, জীবন থেকে অনেক কিছু পাওয়ার ছিল তার, কিন্তু জীবন তাকে সেটা দেয়নি।

টনি লিউং চিউ-ওয়াই 
সারিনা লাউ

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

টনি লিউং চিউ-ওয়াই শৈশবটনি লিউং চিউ-ওয়াই উত্থানটনি লিউং চিউ-ওয়াই চলচ্চিত্র জীবনটনি লিউং চিউ-ওয়াই ব্যক্তিগত জীবনটনি লিউং চিউ-ওয়াই তথ্যসূত্রটনি লিউং চিউ-ওয়াই বহিঃসংযোগটনি লিউং চিউ-ওয়াইকান চলচ্চিত্র উৎসব

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

জসীম উদ্‌দীনআফ্রিকাগান বাংলামিয়োসিসসুকুমার রায়পারমাণবিক ভরের ভিত্তিতে মৌলসমূহের তালিকারাজশাহী বিভাগফিদিয়া এবং কাফফারানরসিংদী জেলাবাংলার নবজাগরণবাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলগুপ্ত সাম্রাজ্যইলমুদ্দিনমাহদীরাবণরুশ উইকিপিডিয়াজান্নাতওজোন স্তরনেলসন ম্যান্ডেলাক্রিস্তিয়ানো রোনালদোএম এ ওয়াজেদ মিয়াসূরাবৃহস্পতি গ্রহকানাডাপদার্থবিজ্ঞানমুহাম্মাদইউক্রেনহজ্জবাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনদুর্গাইসলাম ও অন্যান্য ধর্মদিনাজপুর জেলাকৃষ্ণবাংলাদেশের ইউনিয়ননেপোলিয়ন বোনাপার্ট২৯ মার্চস্বামী বিবেকানন্দযৌন প্রবেশক্রিয়াআবুল কাশেম ফজলুল হককলি যুগপথের পাঁচালীবাংলা ব্যঞ্জনবর্ণগোত্র (হিন্দুধর্ম)উদ্ভিদকোষইউসুফফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংফেরেশতাবাংলাদেশের সংবিধানের সংশোধনীসমূহবাস্তুতন্ত্রবাংলাদেশের নদীর তালিকাফুটিরমাপদ চৌধুরীসংযুক্ত আরব আমিরাতপুরুষাঙ্গের চুল অপসারণব্রিটিশ রাজের ইতিহাসহ্যাশট্যাগচেঙ্গিজ খানমিয়ানমারবাংলাদেশের জেলাআংকর বাটআশাপূর্ণা দেবীরাশিয়ায় ইসলামবাংলাদেশের পোস্ট কোডের তালিকাআর্জেন্টিনাবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানগাঁজা (মাদক)পিপীলিকা (অনুসন্ধান ইঞ্জিন)বীরাঙ্গনাসাইবার অপরাধঈদুল ফিতরবর্ডার গার্ড বাংলাদেশইব্রাহিম (নবী)সময়রেখাবাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষচাকমাটাইফয়েড জ্বরঅ্যালবাম🡆 More