ওং কার-ওয়াই (চীনা: 王家衛;জন্ম ১৭ জুলাই ১৯৫৮) হলেন একজন হংকং ভিত্তিক চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, ও প্রযোজক। তিনি হংকং দ্বিতীয় তরঙ্গের সাথে জড়িত এবং তার দৃশ্যায়নে পটুতা ও ভিন্নতার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রসিদ্ধ। তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রসমূহ হল ওয়াংজিয়াও কামেন (১৯৮৮), আফেই ঝেংঝুয়ান (১৯৯০), দং শিয়ে শি দু (১৯৯৪), চুংকিং সেনলিন (১৯৯৪) এবং দুওলুও তিয়ানশি (১৯৯৫)। তার পরিচালিত হুয়াইয়াং নিয়ানহুয়া (২০০০) তাকে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি এনে দেয়।
ওং কার-ওয়াই | |
---|---|
王家衛 | |
জন্ম | |
পেশা |
|
কর্মজীবন | ১৯৮২–বর্তমান |
পুরস্কার | পূর্ণ তালিকা |
ওং কার-ওয়াই | |||||||||||
ঐতিহ্যবাহী চীনা | 王家衛 | ||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
সরলীকৃত চীনা | 王家卫 | ||||||||||
|
কার-ওয়াইয়ের চলচ্চিত্র বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় তার প্রধান চরিত্রগুলো প্রণয় আকাঙ্ক্ষী কিন্তু তাদের পর্দায় জীবন ও দৃশ্যের পরিমাণ স্বল্প। এই বিষয়টিকে অসম্পূর্ণ, নিগূঢ়, প্রাণবন্ত, এবং উজ্জ্বল চিত্র ধারণ বলে উল্লেখ করা হয়।
ওং কার-ওয়াই ১৯৫৮ সালের ১৭ জুলাই সাংহাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা একজন নাবিক এবং মাতা একজন গৃহিণী। তিনি তার তিন ভাইবোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। যখন ওংয়ের বয়স পাঁচ, চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লব শুরু হতে থাকে এবং তার পিতামাতা তাকে নিয়ে ব্রিটিশদের অধীন হংকংয়ে চলে যায়। তার বড় দুজনকে পরে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল এবং তার পিতা সেখানে একটি নাইট ক্লাবে কাজ পান। নতুন শহরে একা ও শুধু মান্দারিন ভাষা জানা ওং বাকিদের থেকে আলাদা হয়ে পড়েছিল। পরে তিনি ক্যান্টনিজ ও ইংরেজি শিখা শুরু করেন এবং কৈশোরে আসার পরই তিনি এই ভাষাগুলোতে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন।
যৌবনকালে ওংয়ের মা তাকে প্রায়ই চলচ্চিত্র দেখতে নিয়ে যেতেন এবং বহু ধরনের চলচ্চিত্র দেখান। তিনি পরে বলেন, "শৈশবে আমার একমাত্র শখ ছিল চলচ্চিত্র দেখা।" স্কুলে তিনি গ্রাফিক ডিজাইন বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন, এবং ১৯৮০ সালে হংকং পলিটেকনিক থেকে এই বিষয়ে ডিপ্লোমা লাভ করেন। সেখান থেকে পাস করার পর ওং টিভিবি টেলিভিশন নেটওয়ার্ক থেকে প্রশিক্ষণ কোর্স গ্রহণ করেন এবং সেখানে তিনি মিডিয়ায় নির্মাণ প্রক্রিয়া শিখেন।
পরবর্তীতে তিনি চিত্রনাট্যকার হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। প্রথমে তিনি টেলিভিশন ধারাবাহিক ও সোপ অপেরায় কাজ করেন। তার প্রথম কাজ ছিল ডোন্ট লুক নাউ (১৯৮১)। তিনি পরে চলচ্চিত্রের জন্য পাণ্ডুলিপি রচনা শুরু করেন। তিনি একটি দলের অংশ হয়ে প্রণয়মূলক, হাস্যরসাত্মক, থ্রিলার ও অপরাধসহ বিভিন্ন ধরনের কাজে অবদান রাখেন। এই কাজগুলোতে ওংয়ের খুব বেশি আগ্রহ ছিল না, যাকে চলচ্চিত্র বিষয়ক পণ্ডিত গ্যারি বেটিনসন "প্রায়ই বিচ্যুত ও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিন্যস্ত" বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু তিনি ১৯৮০ এর দশকে চলচ্চিত্রের জন্য চিত্রনাট্য লিখতে শুরু করেন এবং তার এই সময়ের চলচ্চিত্রসমূহ হল জাস্ট ফর ফান (১৯৮৩), রোসা (১৯৮৬), এবং দ্য হন্টেড কপ শপ অব হররস (১৯৮৭)। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে তিনি দশটি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য রচনা করেন, কিন্তু তিনি দাবী করেন তিনি এই সময়ে আরও পঞ্চাশটি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখেছেন যেসব চলচ্চিত্রে তার নাম উল্লেখ করা হয় নি। ওং পরিচালক প্যাট্রিক ট্যামের সাথে মারপিঠধর্মী ফাইনাল ভিক্টরি (১৯৮৭) চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য রচনায় দুই বছর সময় ব্যয় করেন এবং এর জন্য তিনি ৭ম হংকং চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার বিভাগে মনোনয়ন লাভ করেন।
১৯৮৭ সালে হংকং চলচ্চিত্র শিল্প এর সর্বোচ্চ শিখরে ওঠে আসে এবং ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়। এই সাফল্য ধরে রাখতে নতুন চলচ্চিত্র নির্মাতার প্রয়োজন দেখা দেয়। ওংয়ের চলচ্চিত্র শিল্পের অনেকের সাথে যোগাযোগ ছিল এবং একটি নতুন স্বাধীন কোম্পানি ইন গিয়ার থেকে তার চলচ্চিত্র আসার আমন্ত্রণ আসে এবং তার নিজের চলচ্চিত্র পরিচালনার সুযোগ দেওয়া হয়। জন ওর ইংচিয়ং বেনসো ব্যবসাসফল হলে, সেই সময়ে গ্যাংস্টার ঘরানার চলচ্চিত্র খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, এবং ওং এই ধারার সাথে তাল মিলানোর সিদ্ধান্ত নেন। বিশেষ করে, হংকংয়ের অন্যান্য অপরাধধর্মী চলচ্চিত্রের মত তিনি যুব গ্যাংস্টার চলচ্চিত্রের দিকে নজর দেন। ওয়াংজিয়াও কামেন চলচ্চিত্রের গল্পে দেখা যায় এক গ্যাংস্টার যুবক তার বান্ধবীকে ঝামেলা থেকে মুক্ত রাখতে চায়।
ওং তার প্রিয় পরিচালকদের ব্যাপারে কথা বলার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক, কিন্তু তিনি বলেন যে তিনি শৈশব থেকে হংকংয়ের সকল ধরনের চলচ্চিত্র এবং ইউরোপীয় আর্ট হাউজ চলচ্চিত্রসমূহ দেখতেন। কিন্তু এগুলো তার নামের সাথে লেগে ছিল না এবং তিনি এগুলোর পাশাপাশি বাইরের অন্যান্য চলচ্চিত্র দ্বারা প্রভাবিত হন। ওংয়ের সাথে কিছু আন্তর্জাতিক নাম জড়িত এবং তারা হলেন মার্টিন স্কোরসেজি, মিকেলাঞ্জেলো আন্তোনিওনি, আলফ্রেড হিচকক ও বেরনার্দো বেরতোলুচ্চি। তার প্রিয় কয়েকজন সমসাময়িক পরিচালক হলেন স্কোরসেজি, ক্রিস্টোফার নোলান ও কোয়েন্টিন টারান্টিনো। তাকে প্রায়শই ফরাসি নব্য তরঙ্গ যুগের পরিচালক জঁ-লুক গদারের সাথে তুলনা করা হয়। ওংয়ের পরিচালনায় প্রভাব ছিল তার সহযোগী পরিচালক প্যাট্রিক ট্যামের। ট্যাম তার পরামর্শক ও তাকে রঙের ব্যবহারে অনুপ্রাণিত করেন।
ওং চিরাচরিত রীতির বাইরে গিয়ে আর্ট হাউজ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য পরিচিত। স্টিফেন তেও তার এই চলচ্চিত্র নির্মাণের ধরনকে "একাধিক গল্পের সমন্বয়ে প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ ভাণ্ডার, অভিব্যক্তি, অর্থ ও পরিচয়ের উৎস: রঙ ও পরিচয়ের বহুরূপ দর্শন" বলে বিবৃত করেন। কাঠামোগতভাবে ওংয়ের চলচ্চিত্রসমূহ সরল রৈখিক বর্ণনাসহ বিখণ্ডিত, এবং প্রায়ই গল্পগুলো একটি আরেকটির সাথে সম্পর্কযুক্ত। সমালোচকেরা তার চলচ্চিত্রের গল্পের কমতি খুঁজে পান, যেমন তাই বুর বলেন, "বর্ণনাধর্মী বা কাব্যিক অর্থের সমকেন্দ্রী বৃত্তের মত পরিচালক সরল রৈখিক গল্প রচনা করেন না এবং তার গল্প একটি আরেকটিকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে।" একই ভাবে পিটার ব্রুনেট বলেন যে ওং "বর্ণনাধর্মী কাঠামোর চাইতে অডিও ও ভিজুয়ালের দিকে বেশি গুরুত্ব দেন।" ওং এ ব্যাপারে মন্তব্য করেন যে, "আমার যুক্তিতে গল্প রয়েছে।"
বছর | চলচ্চিত্রের শিরোনাম | উল্লেখ | টীকা | ||
---|---|---|---|---|---|
পরিচালক | প্রযোজক | লেখক | |||
১৯৮৮ | ওয়াংজিয়াও কামেন | হ্যাঁ | হ্যাঁ | ||
১৯৯০ | আফেই ঝেংঝুয়ান | হ্যাঁ | হ্যাঁ | ||
১৯৯৪ | দং শিয়ে শি দু | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | |
১৯৯৪ | চুংকিং সেনলিন | হ্যাঁ | হ্যাঁ | ||
১৯৯৫ | দুওলুও তিয়ানশি | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | |
২০০০ | হুয়াইয়াং নিয়ানহুয়া | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | |
২০০৪ | ২০৪৬ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | |
২০০৭ | লানমেই ঝি ইয়ে | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | |
২০১৩ | ইদাই জংশি | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ |
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article ওং কার-ওয়াই, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.