জোশুয়া মার্শম্যান

জোশুয়া মার্শম্যান (জন্ম-২০ এপ্রিল,১৭৬৮- মৃত্যু- ৬ ডিসেম্বর, ১৮৩৭) ছিলেন ভারতের অবিভক্ত বঙ্গ রাজ্যে একজন খ্রিষ্টান ধর্মপ্রচারক। বিভিন্ন সমাজ সংস্কারমূলক কাজ ও রাজা রামমোহন রায় প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের সাথে বৈদগ্ধপূর্ণ বিতর্কে অংশগ্রহণকারী হিসেবে তার খ্যাতি আছে।

জোশুয়া মার্শম্যান
জোশুয়া মার্শম্যান
ভারতে খ্রিষ্টান মিশনারি
জন্ম২০ এপ্রিল ১৭৬৮
ওয়েস্টবারি লী, ইংল্যান্ড, যুক্তরাজ্য
মৃত্যু৬ ডিসেম্বর ১৮৩৭
দাম্পত্য সঙ্গীহ্যানা শেফার্ড
সন্তানজন ক্লার্ক মার্শম্যান

পরিবার

জোশুয়া মার্শম্যান ১৭৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ২০ এপ্রিল ইংল্যান্ডের ওয়েস্টবারি লী-তে জন্মগ্রহণ করেন। তার পারিবারিক ইতিহাস সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানা যায় না, শুধু এই তথ্যটুকু পাওয়া গেছে যে তার কোনো এক পূর্বপুরুষ সম্ভবত অলিভার ক্রমওয়েলের সেনাবাহিনীর একজন অফিসার ছিলেন এবং ইনি ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটেনে রাজতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর বিবেক দংশনের কারণে সমস্ত ঐহিক উচ্চাকাংক্ষা ত্যাগ করে স্বদেশের এক গ্রামে অল্প সম্বল নিয়ে শেষ জীবন অতিবাহিত করেন।

তার বাবা জন মার্শম্যান নাবিক ছিলেন এবং ক্যাপ্টেন বণ্ডের নেতৃত্বে কুইবেক অধিকারের যুদ্ধে সামিল হয়েছিলেন। এর কিছুদিন পরেই তিনি ইংল্যাণ্ডে ফিরে এসে ১৭৬৪ খ্রিষ্টাব্দে মারি কুজেনারকে বিয়ে করেন। মারি ছিলেন জন্মসূত্রে ফরাসি, তার পরিবার ফ্রান্সে নান্তেস অনুশাসন রদ হওয়ার পর ইংল্যাণ্ডে আশ্রয় নেন। বিয়ের পর জন উইল্টশায়ার জেলার ওয়েস্টবারি লী-তে তাঁতির কাজ নেন।

এই পেশায় জনের পসার ভালো হয়নি, ফলে তিনি ছেলে জোশুয়াকে গ্রামের স্কুলের বাইরে কোনো উচ্চতর শিক্ষা দিতে পারেননি।

প্রথম জীবন

১৭৯১ খ্রিষ্টাব্দে জোশুয়া ও হ্যানা মার্শম্যানের বিয়ে হয় এবং তারা ১৭৯৪ খ্রিঃ ব্রিস্টল শহরে বসবাস শুরু করেন। সেখানে ব্রোডমীড ব্যাপটিস্ট গির্জার সদস্য হিসেবে জোশুয়া মার্শম্যান ঐ গির্জার অধীনস্থ একটি অবৈতনিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। পাশাপাশি ব্রিস্টল ব্যাপটিস্ট কলেজে তিনি ছাত্র হিসেবেও যোগ দেন।

১৭৯৯ খ্রিঃ ২৭শে মে জোশুয়া, হ্যানা ও তাদের দুই সন্তান পোর্টসমাউথ বন্দর থেকে "ক্রাইটেরিয়ন" নামক জাহাজে চড়ে ভারত অভিমুখে যাত্রা করেন। পথে ফরাসি নৌবাহিনীর তরফ থেকে আক্রমণের সম্ভাবনা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি এবং মার্শম্যান পরিবার ১৩ই অক্টোবর কলকাতার কয়েক মাইল উত্তরে শ্রীরামপুরের ড্যানিশ উপনিবেশে নিরাপদে অবতরণ করেন।

শ্রীরামপুরে আসার পর মার্শম্যান দম্পতির আরও দশটি সন্তান হয়, যদিও তাদের পিতা মৃত্যুকালে বারো ভাইবোনের মাত্র পাঁচজনকেই জীবিত অবস্থায় দেখে যান। সর্বকনিষ্ঠ কন্যা হ্যানা হেনরি হ্যাভলককে বিয়ে করেন; হেনরি পরবর্তীকালে ব্রিটিশ ভারতে একজন সেনানায়কের পদ লাভ করেন। লণ্ডনের ট্রাফালগার স্কোয়ারে তার মূর্তি রয়েছে।

বাইবেল অনুবাদ

তার বিশিষ্ট বন্ধু ও সহকর্মী উইলিয়াম কেরির মতোই মার্শম্যানও একজন মেধাবী ও বিদ্বান ব্যক্তি ছিলেন। মার্শম্যান ও কেরি যুগ্মভাবে বাইবেল গ্রন্থটি অনেকগুলো ভারতীয় ভাষায় অনুবাদ করেন এবং ধ্রুপদী ভারতীয় সাহিত্যের প্রচুর বই ইংরেজিতে অনুবাদ করেন।

এই সময়ে মার্শম্যান বাইবেলের একটি চীনা অনুবাদও সম্পন্ন করেন এবং প্রথম ভারতীয় সংবাদপত্রগুলোর উন্নতিতেও বিশেষ ভূমিকা নেন। শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন নতুন পদ্ধতির উদ্ভাবনের একজন উৎসাহী সমর্থক ছিলেন তিনি, এবং স্থানীয় অধিবাসীদের স্কুলে তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন, যদিও তৎকালীন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক কর্তৃপক্ষের সমর্থন ক্রমশ ইংরেজি ভাষায় শিক্ষাদানের দিকে ঝুঁকছিল।

শ্রীরামপুর কলেজ প্রতিষ্ঠা

জোশুয়া মার্শম্যান 
জোশুয়া মার্শম্যান ব্যবহৃত চেয়ার, শ্রীরামপুর কলেজ।

১৮১৮ খ্রিঃ ৫ই জুলাই উইলিয়াম কেরি, জোশুয়া মার্শম্যান এবং উইলিয়াম ওয়ার্ড (ধর্মপ্রচারক দলের আরও একজন সদস্য) একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। এই বিবৃতিতে "প্রাচ্য সাহিত্য ও পাশ্চাত্য বিজ্ঞান বিষয়ে এশীয়, খ্রিষ্টান এবং অন্যান্য যুবকদের শিক্ষাদানের জন্য একটি নতুন কলেজ" প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিল। বিবৃতিটির লেখক ছিলেন মার্শম্যান স্বয়ং। এই বিবৃতির উপর ভিত্তি করেই শ্রীরামপুর কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়, যা আজও সক্রিয় আছে।

কলেজে অর্থ সরবরাহ প্রায়ই যথেষ্ট হত না। বিশেষ করে এক সময় কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অর্থের অপব্যবহারের মিথ্যা অভিযোগ ওঠার ফলে ওয়ার্ডের মধ্যস্থতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত অর্থ সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এই সময়ে কেরি লেখেন, "ডঃ মার্শম্যান আমার মতোই গরীব, আর য়ুরোপে কয়েকজন দুঃস্থ আত্মীয়ের সাহায্যের জন্য ন্যূনতম অর্থ পাঠানোও আমার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ছে। আমি অনেক সম্পত্তির মালিক হতে পারতাম, কিন্তু অন্ন-বস্ত্রের বাইরে সমস্ত কিছুই ধর্মপ্রচারণার কাজে দান করে দিয়েছি, আর ডঃ মার্শম্যানও তাই করেছেন, আর শ্রীযুক্ত ওয়ার্ডও তাই করেছেন।"

কেরির সন্তানদের প্রতিপালন

১৮০০ খ্রিঃ কেরির সাথে মার্শম্যানের প্রথম সাক্ষাতের সময় কেরির চার ছেলের বয়স ছিল ৪, ৭, ১২ ও ১৫ বছর। কেরি তার পুত্রসন্তানদের নিতান্ত অবহেলায় রাখতেন দেখে মার্শম্যান ব্যথিত হন। তারা ছিল অমার্জিত, বিশৃঙ্খল, এমনকি অশিক্ষিত। কেরি যখন তার বাগান পরিচর্যা করতেন, নানা ধর্মপ্রচারণা কাজে ব্যস্ত থাকতেন বা ফোর্ট উইলিয়ামে পড়াতে কলকাতায় যেতেন, তখন মার্শম্যান, তার স্ত্রী হ্যানা ও উইলিয়াম ওয়ার্ড ছেলেগুলির দেখাশোনা করতে থাকেন। তাদের অভিভাবকত্বের সার্থকতার প্রমাণস্বরূপ কেরির চার ছেলের প্রত্যেকেই পরবর্তী জীবনে প্রতিষ্ঠিত হন।

জোশুয়া মার্শম্যান 
জোশুয়া মার্শম্যানের সমাধিফলক

উত্তরাধিকার

জোশুয়ার ছেলে জন ক্লার্ক মার্শম্যান পরবর্তীকালে শ্রীরামপুর কলেজের ধর্মপ্রচারণা কর্মকাণ্ডে বিশিষ্ট ভূমিকা নেন। এছাড়া তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা ভাষার অনুবাদের কাজেও যুক্ত ছিলেন। তার প্রকাশিত নাগরিক আইনের নির্দেশিকাটি মেকলের কাজের আগে পর্যন্ত ভারতীয় আইনের প্রধান নথি হিসেবে ব্যবহৃত হত। জন ১৮৪২ খ্রিঃ ভারতের ইতিহাসের একটি বইও লিখেছিলেন। তার লেখা বই কেরি, মার্শম্যান অ্যাণ্ড ওয়ার্ড -এ জন মার্শম্যান বলেন যে তার পিতা মৃত্যুকাল অবধি নিজের অর্থের প্রায় চার লক্ষ পাউণ্ড ভারতে ধর্মপ্রচারণা কাজে খরচ করে গিয়েছিলেন।

মৃত্যু

জোশুয়া মার্শম্যান ১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর হুগলির শ্রীরামপুরে মারা যান।

কীর্তি

সাধারণ তথ্যসূত্র

  • জে. সি. মার্শম্যান - কেরি, মার্শম্যান অ্যাণ্ড ওয়ার্ড (১৮৬৪)
  • জন ক্লার্ক মার্শম্যান (১৮৫৯)। "দ্য লাইফ অ্যাণ্ড টাইমস্ অফ কেরি, মার্শম্যান অ্যাণ্ড ওয়ার্ড"। I ও II। 
  • সুনীল কুমার চ্যাটার্জী (২০০১)। "জন ক্লার্ক মার্শম্যান (ভারতের এক বিশ্বস্ত বন্ধু)" (২য় সংস্করণ)। 
  • শ্রীরামপুর কলেজ সংসদ (২০০৬)। "দ্য স্টোরি অফ শ্রীরামপুর অ্যাণ্ড ইট্ স্ কলেজ" (৪র্থ সংস্করণ)। 

বহিঃসংযোগ

Tags:

জোশুয়া মার্শম্যান পরিবারজোশুয়া মার্শম্যান প্রথম জীবনজোশুয়া মার্শম্যান বাইবেল অনুবাদজোশুয়া মার্শম্যান শ্রীরামপুর কলেজ প্রতিষ্ঠাজোশুয়া মার্শম্যান কেরির সন্তানদের প্রতিপালনজোশুয়া মার্শম্যান উত্তরাধিকারজোশুয়া মার্শম্যান মৃত্যুজোশুয়া মার্শম্যান কীর্তিজোশুয়া মার্শম্যান সাধারণ তথ্যসূত্রজোশুয়া মার্শম্যান বহিঃসংযোগজোশুয়া মার্শম্যানধর্মপ্রচারকভারতরামমোহন রায়

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

পথের পাঁচালীপূর্ণ সংখ্যাযতিচিহ্নজয়নগর লোকসভা কেন্দ্রএম এ ওয়াজেদ মিয়াপদ্মা নদীপ্রধান পাতাচাঁদআবুল কাশেম ফজলুল হকবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মরত জেনারেলদের তালিকাবাংলার নবজাগরণফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংমিল্ফআসরের নামাজআহসান হাবীব (কার্টুনিস্ট)ষাট গম্বুজ মসজিদসাতই মার্চের ভাষণপাবনা জেলাইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগপ্রধান ধর্মাবলম্বী গোষ্ঠীসমূহভৌগোলিক নির্দেশকশবে কদরআন্তর্জাতিক টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকাকুড়িগ্রাম জেলাগাঁজাপদার্থবিজ্ঞানআব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলীবাংলা ব্যঞ্জনবর্ণকোষ নিউক্লিয়াসহুমায়ূন আহমেদআমার দেখা নয়াচীনভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ২০২৩মুনাফিকজিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুকভাষা আন্দোলন দিবসতিতুমীরতিলক বর্মাঅ্যান্টিবায়োটিকরমজানইসলামের নবি ও রাসুলমুহাম্মদ ইউনূসদ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনবঙ্গবন্ধু-১এইচআইভিদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধরামমোহন রায়চন্দ্রযান-৩পারমাণবিক ভরের ভিত্তিতে মৌলসমূহের তালিকামুজিবনগরব্রিটিশ রাজের ইতিহাসবিমল করমুহাম্মাদআফ্রিকাএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বঙ্গভঙ্গ (১৯০৫)শীলা আহমেদজীবনানন্দ দাশস্ক্যাবিসবাংলাদেশের জাতীয় পতাকাযশোর জেলাআবদুল হামিদ খান ভাসানীইসলামে বিবাহবাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীচোখজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়তেজস্ক্রিয়তাবাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলউদ্ভিদকোষবেদআরবি ভাষাপহেলা বৈশাখপিঁয়াজহিন্দুধর্মপূর্ণিমা (অভিনেত্রী)চীনমোবাইল ফোনসূরা নাসরইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি🡆 More